হলিডে #পর্ব_৫_ও_৬

0
412

#হলিডে
#পর্ব_৫_ও_৬

#পর্ব_৫

নীরা বসে আছে ঢাকার নামীদামী এক শপিংমলের কফিহাউসে। সাততলার এই কফি হাউসটা দারুণ সুন্দর। জানালার কাঁচ গলে ঢাকার রাতের রাস্তা দেখতে বেশ চমৎকার লাগছে। গাড়ির বাতিগুলো কেমন লাইন ধরে নিয়ম মেনে যেন জ্বলছে। গাঢ় সন্ধ্যার এমন সময়টা এখানে বসে বাইরে তাকালে মন একদম ভালো হয়ে যায়।
অথচ নীরার সামনে বসা মানুষটা তার মনের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।
নীরা এক দৃষ্টিতে বাইরে তাকিয়ে আছে।
গা গুলানো ভাব হচ্ছে তার।
—দেখো, বেশি কিছু তো আর তোমার কাছে চাওয়া হচ্ছে না। শুধু শ্যূটিং টাইমটার ফাঁকে ফাঁকে উনার সাথে একটু মিষ্টি করে কথা বলা। ফরেন ট্যূরগুলোতেও কিন্তু তোমাকে পে করা হবে। তোমার ছবিগুলো দেখেই কিন্তু প্রডিউসার সাহেব এক বাক্য সব বাজেটে রেডী। বুঝতে পারছো তো, তোমায় কত পছন্দ হয়েছে। আর ডি. এস প্রডাকশনের একটা ছবি মানে ব্লকবাস্টার। আমরা পথ থেকে তুলে এনে নায়িকা দাঁড় করাই। এর আগে দেখো সামীরা মেয়েটা কোথায় ছিল? খেতে পেতো না, থাকার জায়গা ছিল না। আর এখন?? শুধু তাঁর হ্যান্ড পার্সটার দামই সাত লাখ টাকা।
নীরা কি বলবে বুঝতে পারছে না। একটা মোটামোটি নামীদামী লোক এমন ভালো একটা জায়গায় নিয়ে এসে এত কুৎসিত একটা প্রস্তাব দেবে, ভাবা যায়?মডেল, হিরোইন এই শব্দগুলোকে এই কিছু মানুষগুলো নষ্টামির চূড়ায় নিয়ে গেছে।
নীরা কফিতে একটা চুমুক দিয়েই মুখ কুঁচকালো। ইশ্ কি তেতো! পেটের ভেতর কলিজা পর্যন্ত মোচড় দিচ্ছে।
—দেখুন, আমি আমার সবটুকু শ্রম দিয়ে খাটবো।মন দিয়ে কাজ করবার মতো একটা স্কোপ দরকার আমার। আমি আসলে মুভির জন্য এখনই রেডী না।আমি টুকটাক টিভিসি করতে চাই অথবা র্যাম্প ওয়াক।
—দেখো নীরা তোমাকে কিন্তু আমরা খোঁজ লাগিয়ে বের করেছি। শুধু যদি একটা হ্যাঁ বলো, তুলে দিবো যাস্ট। তোমার অসুস্থ ভাই, চিকিৎসার খরচ সব ব্যবস্থা হয়ে যাবে। এত ভাবাভাবির কি আছে? প্রডিউসার সাহেব বয়স্ক একজন লোক, কিইবা আর তোমাকে জ্বালাবে বলো? বুড়ো বয়সের একটু উশখুশ আর কি! তুমিও উপর উপর আঁচ কাটিয়ে এলে।

নীরা বাইরে থেকে চোখ সরিয়ে এবার রেস্টুরেন্টের ভেতরে তাকালো। সামনের লোকটার দিকে তাকাতে পর্যন্ত ঘেন্না হচ্ছে। একি? দু টেবিল সামনেই সেই হলুদ শার্টের লোকটা ওয়েটারের সাথে কথা বলছে। ও মাই গড! নীরাকে দেখে ফেলেনি তো? সেই দৌড়ানীর কথা যদি… ওহ্ ওহ্ এক্ষুণি এখান থেকে বেরোনো উচিত।
—দেখুন সালাম ভাই, আমি আপনাকে পরে ফোনে ডিসিশান জানিয়ে দিবো। আমাকে যেতে হচ্ছে। একটা কাজ আছে আমার।
তড়িঘড়ি করে নীরা একছুটে ব্যাগটা নিয়ে বেরিয়ে এলো। পিছনে কি একবার দেখবে? ওহো.. সেই লোক তো পিছন পিছনই আসছে। তবে কি ফলো করছে নীরাকে? করুক। নীরা সোজা সামনে হেঁটে যাবে আর তাকাবে না। নীরা দ্রুত পা চালাতে লাগলো। একটা পরিচিত মুখ যদি আশেপাশে পাওয়া যেত! উফ্!
সামনে এটা কে? এদিকেই তো আসছে। সেই হাতকাটা লোকটা! ইয়েস। নীরাকে কি চিনতে পারবে? নীরা দ্রুত পা চালালো। এক ঝটকায় তামিমের হাতটা টেনে ধরে উল্টো পথে ঘুরিয়ে নিয়ে বললো,
—শশশশশশশসসসস.. একদম পেছনে তাকাবেন না! আমাকে এই মল থেকে একটু এক্সিট করিয়ে দিন। প্লিজ, প্লিজ… প্লিজ… পায়ে ধরি! আমাকে চিনতে পেরেছেন তো? আমি সেই মেয়েটা, ওই যে যার উল্টো পায়জামা পরা ছিল… আপনাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম।
নীরা সর্বশক্তি দিয়ে তামিমকে টেনে ধরে ছুটতে লাগলো। তামিম পেছনে তাকিয়ে হাত ইশারায় হারুনকে থামতে বললো।
—ও ইয়েস ইয়েস.. আপনিই তো… এখন কি হলো??আবার কি পায়জামা উল্টো পরেছেন?
—ধুরররর… পেছনে একটা লোক আছে, মেরুন শার্ট; খুব টেকনিক্যালি তাকাবেন।
তামিম পেছন ঘুরে তাকালো। মেরুনে শার্ট পরনে হারুন হতভম্ব মুখে হা করে তাকিয়ে আছে। তাঁর মুখের হা বলছে এই শপিংমলের সব সে গিলে নেবে।
—উফ্ এতক্ষণ তাকাবেন না। দেখতে পেয়েছেন?
—হ্যাঁ হ্যাঁ, ওই যে সাথে সাদা প্যান্ট!
—হ্যাঁ ওটাই। হাদার মতো মুখ। এই লোকটা একটা ডেঞ্জারাস চিজ, বুঝলেন?
—তাই নাকি? বলেন কি?
তামিম হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইলো।
—আরে হাত টানাটানি করবেন না। আপনার হাত তো আমি খেয়ে ফেলবো না। স্বর্ণের হাত নাকি যে নিয়ে পালিয়ে যাবো? আরেকবার তাকিয়ে দেখুন তো, লোকটা কি আসছে?
তামিম তাকালো। অসহায় চোখে তাকিয়ে হারুন স্থির দাঁড়িয়ে মাথা চুলকাচ্ছে। তামিম মৃদু হাসলো।
তারপর টেনশান ভরা গলায় বললো,
—ও হ্যাঁ লোকটা তো এদিকেই আসছে। কারণ কি বলুন তো? আপনার জন্যই কি?
নীরা আরো শক্ত করে চেপে ধরলো তামিমের হাতটা,
—আরে ওই লোকটা একটা বাংলা খবিশ! মেয়েদের দালাল; আমায় তো ওর বসের জন্য ভাড়া করতে এসেছিল। আমি একটা ছোট্টখাট্টো পাব্লিক ধোলাই দিয়ে বিদেয় করেছি!
বলতে বলতে লিফটের ভেতরে এসে নীরা একটা লম্বা শ্বাস ছাড়লো।
—আপনাকে ভাড়া করতে! বলেন কি?
—আর বলবেন না ভাই, এই দুনিয়ার সব ব্যাটাই বুঝলেন একেকটা দালাল। আমি ফিল্মের একজনের সাথে এখানে কথা বলতে এলাম, সেও দালাল। তারপর দেখি এই দালালটাও আমাকে ফলো করে করে চলে এসেছে। এই হাঁদামুখো লোকটা তো সেদিন তিন ঘন্টা ধরে বসে থেকেছে ও’র বসের জন্য! কেমন ধারার বস বুঝেন, তিন তিনটে ধেঁড়ে লোক পাঠিয়ে দিলো একটা মেয়ে তুলে আনতে! আরে বাবা, মেয়ে কি অত সোজা জিনিস নাকি? যে দেখবি, পছন্দ করবি আর তুলে নিবি! মেয়ে মোটেও অত সোজা ব্যাপার নয়!
—তাহলে মেয়ে কিরকম ব্যাপার?
—অনেক জটিল ব্যাপার। এই যেমন আমিই ধরুন, এই দেখুন..
বলে নীরা ব্যাগ থেকে ছোট্ট একটা শিশি বের করলো।
—-এটা সালফিউরিক এসিড। আমি সবসময় সাথে রাখি। ধরুন, কখনো যদি কোনো শালা তুলেও নিয়ে যায়, ধস্তা ধস্তিতে যদি একান্তই না পেরে উঠি, তাহলে মূল পর্বে গিয়ে আস্তে করে এসিড ঢেলে দিবো। জায়গামতো.. ব্যস.. খাল্লাস!
নীরা হাত দিয়ে কোপানোর ভঙ্গি করলো।
—এটা কোথায় ঢালবেন?
—আরে বুঝলেন না? নীরা ডান চোখটা টিপলো।
—রাস্তাঘাটে ব্যবসা করি, বুঝলেন ভাই। এইসব জিনিস রাখতে হয় সাথে! আজকাল মানুষের চেহারা দেখেও তো বুঝা যায় না, ভালো না মন্দ! দেখবেন সাদা শার্ট কালো প্যান্টের ভদ্রলোক। আপনি দেখে ভাবলেন, ফ্রেশ ম্যান হয়তোবা শিক্ষক মানুষ ।পরে দেখা যাবে ফিসফিসিয়ে বলছে, কত রেট? ছিঃ!
মল থেকে বেরিয়ে নীরা রিকোয়েস্টের মত করে বললো,
—-আপনার কাছ থেকে একটা উপকার পেলাম। চলুন এক কাপ চা অন্তত খাবেন, চলুন।
—আমি চা খাই না।
—চা না খেলে সিঙ্গারা খাবেন। চলুন।

এই মুহূর্তে তামিমের চা খাওয়া সম্ভব না। সে এসেছে প্রাইম মিনিস্টারের মেয়ের সাথে। পুরো ছয়জনের একটা টিমের সিকিউরিটি নিয়ে। প্রাইম মিনিস্টারের মেয়ে শপিং শেষ করে কফি খাবে, তারপর আবার অন্য একটা মলে যাবে। শপিং শেষে সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখবে। হারুন কফিশপে টেবিল বুক করেছে কিনা কে জানে? একটা ফোন করে দেখা দরকার। নীরা মেয়েটা রাস্তার ওপাশে গিয়েছে সিঙ্গারা কিনতে, সাদা লিকুইড টাইপ কিছু দেখিয়ে হাত ইশারায় ডেকে কিছু জিজ্ঞেস করছে। তামিম সেটা শুনতে পেলো না। হারুন আসছে, তামিম হাত ইশারায় আবার থামতে বললো। নীরা মেয়েটা দেখলে সর্বনাশের আর শেষ থাকবে না। সালফিউরিক এসিডের সবটুকু ব্যবহার করে ছাড়বে।
তামিম মোবাইল ডায়াল করলো।
—হ্যালো হারুন, ম্যাডাম কোথায়?
—স্যার ম্যাডাম কফি শপে, আপনাকে ডাকছেন।
—বলো যে আমি ওয়াশরুমে আছি। তুমি ম্যাডামকে ছেড়ে এলে কেন? বাকিরা সব পজিশন মতো আছে তো?
—জি স্যার! ম্যাডামের কফি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তিনি অপেক্ষা করছেন আপনার জন্য। আমাকে পাঠালেন। উনি আপনাকে ছাড়া কফি খাবেন না বলছেন।
সিঙ্গারা হাতে নীরা আসছে।
—হারুন, প্লিজ হারি আপ এন্ড গো। তুমি ম্যাডামের আশেপাশে থাকো। আসছি আমি। গো… আমি আসছি।
তামিম দ্রুত ফোন কেটে দিলো।

দূরে দাঁড়িয়ে হারুন স্পষ্ট দেখলো, তাঁর অতি প্রিয় তামিম স্যার নীরা নামক অগ্নিগুলি মেয়েটার সাথে হাসিমুখে সিঙ্গারা খাচ্ছেন। এই মেয়েটা সেদিন হারুনকে কি মারটাই না দিয়েছিলো! স্যার এটা করতে পারছেন? কষ্টে হারুনের চোখে পানি এসে গেল। পৃথিবীটা এত নিষ্ঠুর কেন?

প্রাইম মিনিস্টারের মেয়ের নাম নাফিসা নূর। পড়াশোনা করছে ইউএসএ তে। বছরে দুবার স্টাডি লিভে দেশে আসে। তামিম এই জব জয়েন করার পর, নাফিসা দেশে আসলেই তামিমের ডিউটি শুরু হয়ে যায়। তামিমের ক্ষীণ সন্দেহ নাফিসা দেশে এলেই ইচ্ছে করেই তামিমকে ডিউটিতে ডাকে। এই নাফিসা মেয়েটার হাবভাব তামিমের কাছে মোটেও ভালো লাগছে না। আজ নাফিসা ডার্ক গ্রিন শাড়ীর সাথে একটা স্লিভলেস ব্লাউজ পরেছে। এই পর্যন্ত অন্তত তিনবার তামিমকে জিজ্ঞেস করেছে,
—মি. তামিম আমায় কেমন লাগছে?
জবাবে তামিম হ্যাঁ না কিছুই বলেনি শুধু ভদ্রতার হাসি হেসেছে।
এই মুহূর্তে নাফিসা কফিতে চুমুক দিতে দিতে নাক চুলকাচ্ছে। তামিমের বিরক্তিতে গা জ্বলে যাচ্ছে। নীরার দেওয়া মাঠা জিনিসটা সে খেতে পারছে না।পকেট থেকে মাঠার বোতল বের করলেই হয়তো নাফিসা চোখ কপালে তুলে বলবে, এটা কি? আমায় দিন তো.. আই ওয়ান্ট টু টেস্ট ইট।
—মি.তামিম আপনার হাইট যেন কত?
তামিম আচমকা প্রশ্নে থতমত খেয়ে গেল।
—জি, জি, সিক্স থ্রি।
—এই মাপের শার্ট প্যান্ট মার্কেটে এভেইলএবল তো?
—ইয়ে মানে, একটু খোঁজাখুঁজি করতে হয় আর কি!
—আপনার কি রং পছন্দ বলুন তো?
এরকম প্রশ্নে তামিম হঠাৎ বিভ্রান্তিতে পড়ে গেল। আসলেই তো তামিমের কি রং পছন্দ? কোনোদিন সে ভেবে দেখেনি। তামিম আপন মনে বিড়বিড় করতে লাগলো… কি রং? কি রং?
—-হ্যালো, আনসার মি। প্রশ্নটা বুঝেন নি? মানে পোশাকে আপনার কি রং পছন্দ?
—ম্যাম আমার মাঠার রং পছন্দ।
কথাটা বলেই তামিম জিভ কাটলো। বিরাট বোকামি হয়েছে।
—হোয়াট ইজ মাঠা?
তামিম পকেট থেকে মাঠার বোতল বের করে নাফিসার সামনে ধরলো।
—ওহ্… হোয়াট ইজ দিস? ইজ ইট এ ড্রিংক? আই ওয়ান্না টেস্ট ইট… প্লিজ গিভ মি।
তামিম বিরস মুখে নাফিসার হাতে মাঠার বোতলটা এগিয়ে দিলো।
নাফিসা এক চুমুক খেয়েই বললো,
—ওয়াও ইটস সুপারভ! এটা কোথায় পেলেন?
তামিম জবাব দিলো না।
নাফিসা উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললো,
—চলুন মি. তামিম, আপনার জন্য মাঠার রংয়ের কিছু পোশাক কেনা যাক!

তামিমের ফোনে মেসেজ এসেছে। ম্যাসেজ পাঠিয়েছে নাফিসা। আশ্চর্য মেয়ে সামনে বসেই এসএমএস দিচ্ছে!
Mr. Tamim, I feel like I’am getting lost. Why?
মেসেজটা পড়েই তামিম সাথে সাথেই উঠে দাঁড়ালো। এসির মধ্যেও তামিমের শরীর ঘামছে। আজ কি গরম বেশি নাকি?

#পর্ব_৬

নীরাকে দেখেই সোবহান সাহেব উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন,
—তোর ফিরতে এত দেরি হলো যে? রনি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে একসাথে খাবে বলে।
নীরা জবাব না দিয়ে হাসলো। সিঙ্গারা খেয়ে তার পেট মোচড় দিচ্ছে। বাসি ছিল নাকি কে জানে?
—ছেলেটা প্রায়ই এটা সেটা নিয়ে আসে, তোর জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে। তোকে কত পছন্দ করে বুঝতে পারছিস? শফিকের ঝামেলা শুরুর দিন থেকেই কিন্তু ও’র সব বন্ধুরা ওকে ছেড়ে গেছে। একমাত্র রনিই সেই প্রথম দিনের মতো করে সম্পর্ক বজায় রেখেছে। আমার কি মনে হয় জানিস, ওর এ বাড়িতে আসার একমাত্র কারণ তুই! বেচারা মুখ ফুটে বলতে পারছে না। আজ দেখ সেই কখন থেকে বসে আছে।
—উনি মোটেও আমার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে না বাবা। উনার এই বাড়িতে আসলে বসে থাকতে ভালো লাগে। আসলে এই বাড়িটাকে উনি ভীষণ পছন্দ করেন!
—তুই বলতে চাচ্ছিস একটা ডাক্তারি পড়া ছেলে এই বাড়িতে শুধু শুধু এসে বসে থাকে?
—আমি কিছুই বলতে চাচ্ছি না বাবা। তারচেয়ে বরং রনি ভাইকে ডাকো। উনাকেই জিজ্ঞেস করে ফেলি, উনি কেন এ বাড়িতে আসেন? এই বাড়িতে কোন সাত রাজার ধন আছে যে, দুদিন পরপর এতগুলো বাজার নিয়ে আসতে হবে? সোজা যদি জবাব না দেয়, নাক বরাবর দুই ঘুষি দিয়ে জিজ্ঞেস করবো। আমি যদি হাতদুটো পেছনে নিয়ে শক্ত করে ধরি, তুমি ঘুষিটা মারতে পারবে না বাবা?
সোবহান সাহেব খুকখুক করে কাশলেন। মেয়েটার মুখে কিচ্ছু আটকায় না। শফিকের মতো মাথাটা না আবার যায়?
সোবহান সাহেব হাসিহাসি মুখ করে বললেন,
—তুই ফ্রেশ হয়ে আয়।সবাই একসাথে খাবো।
—আমার কিন্তু আধঘন্টা সময় লাগবে।
—যা…

সোবহান সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে মমতাসুলভ হাসি হাসলেন। তাঁর মন আজ অনেক ভালো। রনি আজ সবার জন্য শপিং করে এনেছে। তাঁর জন্য এনেছে পাঞ্জাবী পায়জামা, নীরার মায়ের জন্য শাড়ি, নীরার জন্য জামা, লাবণীর জন্য শাড়ি, আর শফিকের জন্য টি-শার্ট! ছেলেটা টিউশন পড়িয়ে এ মাসে যা পেয়েছে সব খরচ। ছেলেটার মন আছে বলতে হবে। একটা জিনিসও কমদামী নয়। স্বামী হিসেবে খরুচে ছেলেরা বেশ ভালো হয়। এরা বউকেও সবসময় খুশিমতো খরচ করতে দেয়। যার খরচ করার হাত থাকে, তাঁর কামাই করারও চেষ্টা থাকে। এরকম ছেলের ঘরে নীরা সুখেই থাকবে। সোবহান সাহেব নিশ্চিন্ত হয়ে লম্বা একটা শ্বাস ফেললেন। মেয়েটার ভাগ্য আছে বলতে হবে। ডাক্তার ছেলে, তার উপর মনটা দেখো কত নরম। যাবার সময় যতবার সোবহান সাহেবের সাথে দেখা হয়, ততবার কদমবুসি করে। একদম যেন নিজের ছেলে। সোবহান সাহেবের চোখ ভিজে এলো। তাঁর নিজের তেমন জমানো টাকা পয়সা নেই, তবু এখন থেকে তিনি কিছুটা জমাবেন। নীরার বিয়ের সময় ছেলেটাকে একটা দামী কিছু উপহার দিবেন। যতই হোক, ডাক্তার পাত্র; পাঁচজনে দেখবার মতো তো কিছু দেওয়া দরকার!

তামিম অনুরোধের গলায় বললো,
—ম্যাম, আপনি বরং কাল নুন শো তে মুভিটা দেখুন। রাতের শো শেষ করে ফিরতে ফিরতে বেশি দেরি হয়ে যাবে। তাছাড়া শপিং টপিং করে আপনি আজ টায়ার্ডও বরং। শো এনজয় করতে পারবেন না।
—মি. তামিম, আপনি কি আমার টায়ার্ডনেস নিয়ে বেশি চিন্তিত নাকি নিজের বাড়ি ফেরা নিয়ে? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, ইউ আর নট ইনজয়িং মাই কম্পেনি। এম আই রাইট?
তামিম জবাব দিলো না। এই মেয়ে মুভি দেখা মিস করবে না। শো শুরু হতে এখনো বিশ মিনিট বাকী। এই বিশমিনিটে আরাম করে দুটো সিগারেট খাওয়া যাবে। পেটটাও পাঁক দিচ্ছে। ওয়াশরুম যাওয়া দরকার। হারুনকে সাথে নিয়ে একটু ঘুরে আসা দরকার। মেয়েটার সাথে বেকার ঘুরে ঘুরে মাথা জ্যাম হয়ে গেছে।
তামিম হাত ইশারায় হারুনকে ডাকলো, হারুন সেটা দেখেও না দেখার ভান করলো। নীরা চলে যাবার পর থেকেই তামিম একটা অদ্ভূত ব্যাপার লক্ষ্য করছে, তা হলো হারুন বিশেষ কোনো কথা বলছে না। তামিম কিছু জিজ্ঞেস করলে হ্যাঁ/না জবাব দিচ্ছে। মোবাইলে কল করলে রিসিভ না করে, দৌড়ে এসে সামনে হাজির হচ্ছে। হারুনের হয়েছেটা কি?
—ম্যাডাম, আমি একটু আসছি। হারুন আছে যদি কিছু লাগে তো ওকে বলবেন।
—মি.তামিম, এক্ষুণি আপনি কোথাও যেতে পারবেন না। আপনাকে সাথে নিয়ে আমি মুভিটা দেখবো।মুভিটা দেখার আগে এই মুভি বিষয়ে আমি অনুমান করে কিছু সিন বলবো আপনাকে, আপনি মিলিয়ে দেখবেন ঠিক হয় কিনা। আমি কিন্তু মুভিটা দেখিনি, বুঝলেন।
তামিম হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
—অনুমান করে আগে থেকেই কিছু বলার ক্ষমতাটা আমার কেমন ইমপ্রুভ করছে দেখি। আগেরবারও তো আমি আপনাকে দুটো জিনিস আগে থেকেই বলে দিয়েছিলাম, মনে আছে?
এবারও তামিম হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো। আগেরবারে কোন ঘটনা বলেছিলো তামিমের মনে নেই। এখন নাফিসা জিজ্ঞেস করলে বিপদ! তামিম মনে করার চেষ্টা করলো।
সিঙ্গারার ঝাঁঝে বাজে রকম ঢেকুর আসছে পেট থেকে। তামিম অনেক কষ্টে সেটা চেপে রাখছে। একটা সফট ড্রিংক খাওয়া দরকার। নাফিসা সিন বলে বলে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে। সিঙ্গারার সাথে পেঁয়াজ খাওয়া একদম ঠিক হয়নি, মুখে পেঁয়াজ পেঁয়াজ স্মেল এসে গেছে। নাফিসা মেয়েটা কথা বলার সময় মাঝে মাঝে একদম ঝুঁকে কাছে চলে আসছে। পেঁয়াজের গন্ধ যদি টের পায়!
তামিম চিন্তিত ভঙ্গিতে মুখে হাত রেখে মুখটা ঢাকলো।

রাতের খাবারের পর নীরা বেশ ঘটা করে সবার সামনেই বললো,
—ভাবী, তুমি কি দু-কাপ চা পাঠাবে আমার ঘরে? আমি রনি ভাই’র সাথে গল্প করবো। ভালো করে অনেকদিন আমাদের কথা হয় না।
সোবহান সাহেব মনে মনে বেশ আনন্দ পেলেন।যাক্… মেয়েটা এতক্ষণে ছেলেটার মন বুঝলো।
লাবণী বিরক্তিভরা গলায় বললো,
—গল্প করো তো এখানে নিচের ঘরেই করো না, আবার উপরে চা কেন? উপরের ঘরে চা নিয়ে যাওয়া আরেক ঝামেলা।
—আচ্ছা থাক, চা লাগবেনা।
সোবহান সাহেব ব্যস্ত হয়ে বললেন,
—তোরা ঘরে যা নীরা, আমি তোর মা’কে বলছি চা দিয়ে আসবে।
লাবণী উৎসুক গলায় বললো,
—তোদের গল্পে আমি কি জয়েন করতে পরি?
নীরা শক্ত কণ্ঠে বললো,
—না। এটা আমার আর রনি ভাইয়ের প্রাইভেট কথা।
রনি ইতস্তত ভঙ্গিতে বললো,
—-অনেক লেট হয়ে গেছে নীরা, গেট বন্ধ করে দেবে। আজ যাই বরং।
—দিলে দিবে রনি ভাই। গিয়ে যদি দেখেন গেট বন্ধ আপনি স্ট্রেইট বেক করে আমাদের বাড়ি চলে আসবেন। চলুন…..

নীরা ঘরে এসেই রনির আনা জামার প্যাকেটটা খুললো।
—বাহ্ চমৎকার তো! ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি পছন্দ করে কিনলেন?
—হুঁ ওই আর কি! ছেলে মানুষ মেয়েদের পোশাক এত বেছে নিতে পারে না সহজে। এক ফ্রেন্ড ছিল সেই চুজ করেছে সব।
—আপনি দাঁড়িয়ে কেন? রনি ভাই, বসুন না।
রনি বসলো, গুটিসুটি মেরে। নীরা কি সিরিয়াস টাইপ কিছু বলবে? কোনো জটিল আলোচনা নয়তো?
—নিন চা নিন।
রনি হাত বাড়িয়ে চায়ের কাপটা নিলো। তাঁর বুক ধরফর করছে।
চায়ে চুমুক দিতে দিতে নীরা হাসিমুখে বললো,
—মাত্র একজন বিশেষ মানুষকে উপহার দিতে গিয়ে আপনার সবার জন্য উপহার কিনতে হলো। এই যে, মাসের শুরুতেই সব খরচ হয়ে গেল, বাকি মাস চলবেন কিভাবে?
—আরে ধুর! তেমন একটা খরচ হয়নি। তোমাদের পছন্দ হয়েছে এই বেশ। বিশেষ করে শফিক তো দেখলাম টি-শার্ট পরে বসেই টিভি দেখছে।
—হুঁ। আচ্ছা রনি ভাই, বলুন তো মেয়ে হিসেবে আমি কেমন? বোকা নাকি চালাক? নাকি মাঝামাঝি? দেখুন, আপনি একজন হবু ডাক্তার; ভুল উত্তর দিলে কিন্তু চলবে না।
রনি বিভ্রান্তিতে পরে গেল। নীরা আসলে কি বলতে চাইছে? প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে কোথায় নিয়ে যেতে চাচ্ছে?
—কি হলো, বলুন?
—আমি আসলে সেরকম সিরিয়াসলি চিন্তা করে দেখিনি। তবে বোকা যে নও সেটা আমি মোটামুটি নিশ্চিত।
—আরেকটু সোজা করে দিই। একটা গল্প বলি আমাদের পরিবারের। তাহলে বোধহয় আপনার আনসার দিতে সহজ হবে। যেমন ধরুন, আমার লাবণী ভাবীর যেদিন বিয়ে হলো, সেদিন তাঁর জন্মদিন ছিল। অর্থাৎ ভাবীর ম্যারেজ ডে আর বার্থ ডে একই দিনে। এই খবরটা ভাবী কাউকে বলেননি।শুধু ভাইয়া ব্যাপারটা জানতেন। ভাইয়া মারা যাবার পর হলো কি, সবাই ভাইয়ার ম্যারেজ ডে ভুলে গেল।শুধু মনে রাখা হলো ভাইয়ার মৃত্যুর দিন। সাথে সাথে ভুলা হয়ে গেল ভাবীর জন্মদিনও। মৃত স্বামীর শোক নিয়ে যেমন বিবাহবার্ষিকী পালন করা যায় না, তেমনি মনের আনন্দে জন্মদিনও করা যায় না। বিধবা ছেলের বউ জন্মদিন পালন করবে, সেটা কোনো শ্বশুড়বাড়িই এলাউ করবে না। অথচ ভাইয়া বেঁচে থাকলে এই দিনটাই হতো ভাবীর জন্য দ্বিগুণ আনন্দের। ঠিক কি না?
রনি ঘামছে, তাঁর হাতের চায়ের কাপ কাঁপছে। থরথর করে কাঁপছে। নীরা রনির হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে রাখলো।
—পানি খাবেন রনি ভাই।
রনি জোরে জোরে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
নীরা পানির গ্লাসটা এগিয়ে দিতে দিতে বললো,
—আমার যদি ভুল না হয়, আজ ভাবীর জন্মদিন এবং বিবাহের ও দিন। তাই না রনি ভাই? ভাবীকে একটা উপহার দিতে গিয়েই আপনি আজ এতগুলো টাকা নষ্ট করলেন।
রনি এক নিঃশ্বাসে গ্লাসের পুরোটা পানি শেষ করে নিলো।
—আজ ভাবীর জন্য একটা বিশেষ দিন অথচ এই দিনেও সে মুখ ফুটে কিছু বলতে পারে না। আপনি সেটা মনে রেখেছেন।
—দেখো নীরা, আমি আসলে তেমন কোনো ইনটেনশন থেকে…
—রনি ভাই, একটা মজার কথা কি জানেন? ভাইয়া মারা যাবার পর ভাবী কিন্তু চাইলেই বাপের বাড়ি গিয়ে থাকতে পারতেন, কিন্তু তিনি গেলেন না। আমরা কিন্তু কেউ জোর করিনি একবারও থাকার জন্য। তবুও ভাবী রয়ে গেলেন। তাঁর মনে বদ্ধমূল ধারণা ছিল, তিনি চলে গেলে এ সংসার জলে ভেসে যাবে। বিশেষ করে শফিক ভাইয়া আর আমি। আমাদের তো সৎ মা, যদি কষ্ট দেয়! এই টানাপোড়নের সংসারে দাঁত চেপে রয়ে গেলেন। আমার এই চমৎকার ভাবীটির জীবনে আনন্দের সময় খুব কম.. আজ আপনি তাকে আনন্দ দিয়েছেন; এজন্য ধন্যবাদ।
রনি কাঁদছে। একটু পরপর তাঁর হেঁচকির মতো উঠছে।

—বাবা যেদিন প্রথম ভাবীকে দেখতে যান, ভাবীকে দেখে তাঁর এতই পছন্দ হলো যে তিনি ভাবীকে হাত জোর করে বলেছিলেন, মাগো তুমি কথা দাও আমার ছেলেকেই বিয়ে করবে।
রনি নিজেকে সামলালো,
—নীরা, তিনি এখনো সেরকমভাবেই কিন্তু ভালোবাসেন তোমার ভাবীকে। এখনো উনার সেইরকম পছন্দ।
—হুঁ। ভাইয়া মারা যাবার তিনমাস পর স্বামী মৃত্যু শোকে না খেয়ে দুর্বলতায়, প্রচন্ড অসুস্থতায় আর টেনশানে ভাবীর বাচ্চাটা এবোর্ট করে গেল। একদিকে স্বামী শোক, একদিকে সন্তান হারাবার শোক। শফিক ভাইয়ারও ঝামেলা চলছে তখন। বাবা দুদিক সামলাতে গিয়ে ভিখিরি অবস্থা। পুরো পরিবারের এমন কঠিন সময়ে আমি কিছুই করতে পারতাম না।মামলায় জর্জরিত ভাই, হাসপাতালে অসুস্থ ভাবী, টাকা নেই; কি যে ভয়ানক অবস্থা! জানেন, তখন আমি কি করতাম? ভাবী ঘুমিয়ে পড়লে প্রতিরাতে হাসপাতাল প্যাসেজে আমি আরাম করে পা ছড়িয়ে বসতাম। হাউমাউ করে কাঁদতাম। মনে হতো, কাঁদলে হয়তো ভাইয়া ফেরত আসবে; ভাবীকে সামলাবে। হয়তোবা… হয়তোবা… টাকা খসে পড়বে আকাশ থেকে, শফিক ভাইয়ার মামলা শেষ হবে!
—নীরা, বাজে সময়গুলো মনে করছো কেন? এগুলো ভুলে যেতে হয়! এখন দেখো, সব ভালোর দিকেই যাচ্ছে। লাবণী নিজেকে সামলে উঠেছে, তোমার বাবাও তাঁর পুত্রবধুকে ভালোবাসছেন। শুধু শফিককে নিয়ে…
—আমার কি মনে হয় জানেন? আমার সেই কান্না বৃথা যায়নি, ভাইয়ার বদলে ভাবীর জীবনে আপনি এসেছেন। কিন্তু কি জানেন রনি ভাই, যে বাড়ির দুটি ছেলের একটি ছেলে দুর্ঘটনায় মারা গেছে, অন্য ছেলেটি মানসিক ভারসাম্যহীন, সেই বাড়ির পক্ষে মৃত ছেলের শোক সামাল দিয়ে ছেলের বউয়ের বিয়ে দেয়া এত সহজ ব্যাপার নয় নিশ্চয়! বাবার মনের জোর কিন্তু অতটা প্রবল নয়। তবে আমি আপ্রান চেষ্টা করবো।
—লাবণীকে আমার চাই না নীরা, ও তোমাদের ভাবী হয়েই থাকুক। এখানেই বাস করুক। আমি কিছু চাই না। আমি কিছু চাই না, শুধু ও ভালো থাকুক।
—রনি ভাই, আমার যদি ক্ষমতা থাকতো আমি এক্ষুণি ভাবীকে আপনার হাতে তুলে দিতাম। বলতাম, নিয়ে যান। নৌকায় বসে বাদাম খাবার খুব শখ আমার ভাবীর, আপনি এই শখটা পূরণ করুন তো! কিন্তু, আমার ক্ষমতা খুব সামান্য। তবে আপনার ভালোবাসা অসামান্য। কাঁদবেন না রনি ভাই। আমার বিশ্বাস, সৃষ্টিকর্তা আপনার এই অসামান্য ভালোবাসাকে ছোট হতে দেবেন না।
রনি শার্টের হাতায় চোখ মুছতে মুছতে বললো,
—নীরা, আমাকে ভুল বুঝো নি তো?
—ভুল বুঝার তো কিছু নেই রনি ভাই। ভালোবাসার মত চমৎকার একটি ব্যাপারে ভুল বুঝাটা অন্যায়। আপনার চোখে আমি ভাবীর জন্য সেই স্নিগ্ধ ভালোবাসাটুকু দেখতে পাই, যেটা আমি ভাইয়ার চোখে দেখেছি। এখন আপনি যান তো রনি ভাই, আরেকটু বসে থাকলে আমি এবার সত্যি সত্যি হাউমাউ করে কেঁদে ফেলবো। ভাইয়ার কথা মনে পড়ছে খুব।
নীরা ঠোট কামড়ে ধরলো।

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে রনির মনে হলো, নীরার মতো ভালো মেয়ে পৃথিবীতে আর একটাও নেই, একটাও নেই…

(চলবে)

#তৃধা_আনিকা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here