#হলিডে
#পর্ব_২১_ও_২২
#পর্ব_২১
নীরা পুরো অফিসটাতে চোখ বুলালো। ব্যাকওয়ালটা পুরোটা জুড়ে বেশ কয়েকটা বন্দুকের ছবি। লায়ন শেইপের দেয়াল ঘড়ি, জায়ান্ট স্ক্রিন!
আসবাবের মাঝে আছে টেবিল-চেয়ার, একপাশে একটা বিশাল সোফার সেট। বাঁ-দিকের কর্নারে বড় সেকশান টেবিলে প্রজেক্টর, তিনটা কম্পিউটার , একটা ল্যাপটপ আর একটা ফাইল রাখার র্যাক।টেবিলের উপররে একটা মিনি সেলফে পাঁচ-ছয়টা মোবাইল ফোন। এত ফোন দিয়ে করেটা কি?
একপাশের পুরো দেয়াল জুড়ে তামিমের বিভিন্ন সময়ের পুরষ্কার নেওয়ার ছবি। প্রেসিডেন্ট, প্রাইম মিনিস্টার, আরো কত বিদেশিদের হাত থেকে পুরষ্কার নিচ্ছে। আশ্চর্য লোক! এত এত পুরষ্কার যে পেলো অথচ তাঁর মাথাভর্তি গোবর! সে কিনা নীরার পেছনে ঘুরে মরছে? হুঁহ…
তামিমের নিজের কাজের টেবিলটাতে বিভিন্ন কাঁচের তৈরি উচু উচু দালানের ফরমেটে মিনিয়েচার করা শো পিস। কি কাটখোট্টা লোক বাবা! একটা ফ্লাওয়ার ভাস তো রাখতে পারে টেবিলটাতে। এরপর নীরা যখন আসবে মনে করে একটা ফ্লাওয়ার ভাস নিয়ে আসবে। টেবিলের একদম মাথায়, টু পার্টের একটা ফটো ফ্রেমের একটাতে বন্দুকের ছবি, অন্যটাতে বন্দুক হাত তিনি দাঁড়িয়ে! নীরা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বন্দুক বদ একটা!
নীরা তামিমের অফিসে এসেছে দশমিনিট হলো। এসে শুনেছে, তামিম ওয়াশরুমে। এতক্ষণ ওয়াশরুমে করছেটা কি? ঘুমিয়ে পড়েছে? নীরা কি ওয়াশরুমে গিয়ে দেখে আসবে একবার! হুহ… যাওয়া যাবে না। দেখা যাবে একটা হেঁচকা টান মেরে নীরাকে ওয়াশরুমে ঢুকিয়ে নিয়েছে। তারচেয়ে বরং অপেক্ষা করা যাক!
নীরা কথাগুলো মনে মনে আবার গুছিয়ে নিতে লাগলো, একদম মাথা গরম করা যাবে না। ঠান্ডা মাথায় কথা বলে ম্যানেজ করতে হবে। কথার শুরুটা হবে বুদ্ধি দিয়ে। যেই চালাক… দেখা যাবে কথার ফাঁদে ফেলে আটকে দেবে বিয়ের দিনকার মতো!
সুন্দর করে বুঝিয়ে বলতে হবে এত তাড়াহুড়োর কিছু নেই, এখন আমাদের বাড়ি এসে থাকা যাবে না। দুজনেরই কিছু সময় দরকার। নীরা মোটেও তামিমের যোগ্য নয়। তার জীবনে অনেক ঝামেলা আছে, অনেক। এই বিয়ে নিয়ে এত সিরিয়াসলি এখনি শুরু করতে হবে না। উল্টাপাল্টা সিদ্ধান্ত চলবে না। জীবন এত সোজা নয়, রূপকথা নয়। সময় নিয়ে এখানে ভাবতে হয়, তারপর সিদ্ধান্ত। আর টাকার ব্যাপার তো; সব নীরা শোধ করে দেবে। একসময় ঠিক শোধ করে দেবে। আজকাল ধার তো পাওয়া যায় না এমনি এমনি, ক্যাজায় ফেলে নিতে হয়। নীরার মডেলিং লাইফ সবে শুরু, কি হয় দেখা যাক্…..
তারপরও যদি ফর দ্য টাইম বিয়িং সব ঠিক থাকে, তখন ভাবা যাবে। এখন সব বদ মতলব বাদ দিয়ে দুজনেরই কাজে মনোযোগী হওয়া দরকার। বলা তো যায় না, কখন কি হয়ে যায়? নীরা শাড়ির কুচিটা ঠিক করে নিলো। আজ সে পরিপাটি হয়ে কথা বলবে, মানুষটাকে পাগলামির কোনো সুযোগ দেবে না।দুজনের মধ্যে শান্তিচুক্তি হবে, নো ধান্ধাবাজি!
হারুন সাহেব চা নিয়ে এসেছেন। নীরা বিরক্ত গলায় জিজ্ঞেস করলো,
—আপনার স্যার কি ওয়াশরুমে আছেন নাকি ভেন্টিলেটার দিয়ে বেরিয়ে গেছেন? আমার তো ধারণা আপনার স্যারকে আপনি পালিয়ে যেতে রাস্তা করে দিয়েছেন।
—একি বলছেন মা? আমি কেন এরকম করবো?
ওয়াশরুমে স্যারের একটু বেশি সময় লাগে।
—কি করেন তিনি সেখানে? গবেষণা? ওয়াশরুম রিসার্চ? নোবেল পাওয়ার চেষ্টা?
—আসলে স্যার হাইজিনকে বেশি প্রায়োরিটি দেন। হি লাইকস টু স্টে ফ্রেশ এন্ড ক্লিন এভরিটাইম!
—আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন? আমরা যারা বেশিক্ষণ ওয়াশরুমে থাকি না, তারা সবাই আনহাইজেনিক?
—না না একদম না মা। আপনি কিন্তু শুধু শুধু রাগ করছেন মা।
নীরার রাগে টেবিলের কাঁচে দুম করে কিল মারতে ইচ্ছা করছে। বুইড়া ধারি একটা লোক, মা মা বলে ঘ্যাঁনঘ্যাঁন করে কান ঝালাপালা করে দিচ্ছে.. উফ্!
—কথায় কথায় মা ডেকে কি আপনার ধর্মরক্ষা করতে হবে? মা ডাকবার বুদ্ধি নিশ্চয় আপনার স্যারের মাথা থেকেই এসেছে, তাই না? আপনার স্যারকে ডাকুন, জিজ্ঞেস করি আমাকে তিনি কেন বিশ্বজননী বানিয়েছেন? তাঁর কি ইচ্ছে? আমি বিশ্বমাতা হলেই কি উনি বিশ্বপিতা বনে যাবেন?
যান ডেকে আনুন।
হারুন অতি উৎসাহে ওয়াশরুমের দিকে গেল এবং সাথে সাথে ফিরে এসে হাসিমুখে বললো,
—নীরা মা গো, স্যার আসছেন। এর মাঝে আপনি চা খেয়ে নিন।
নীরা রক্তচক্ষু করে হারুনের দিকে তাকালো, হারুন সাথে সাথে দৃষ্টি এড়িয়ে বেরিয়ে গেল।
তামিম আবার নিজেকে ভালো করে আয়নায় দেখলো। সকালেই শেভ করেছে। উফ্ চুলটা ঠিক আছে তো… একটু স্প্রে করে নিলে ভালো হতো। শার্টটা সকালে গায়ে দিয়েছে, ঘাম হয়নি অবশ্য; তাও তামিম কলারটা শুঁকলো।
এই প্রথম বউ এসেছে অফিসে! হান্ড্রেড পার্সেন্ট ওকে থাকা দরকার। নীরা কেন এসেছে? সকালে ঘুম ভেঙ্গে কি নীরার মনে হয়েছে, তাঁর স্বামীর মুখ দেখা দরকার? নাকি টাকা দরকার? নাকি বিয়ে থেকে মুক্তি নিতে?
মুক্তি সে তো কিছুতেই নীরাকে দেবে না। কিছুতেই না, মরে গেলেও না!
তামিম ওয়াশরুমের দরজা একটু ফাঁক করে উঁকি দিলো, নীরা খুব মনোযোগ দিয়ে দেয়ালঘড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। সে চমৎকার একটি নীল জামদানি পরে এসেছে। বাহ্! মুখের সাথে চুলের হাতখোঁপাটা কি সুন্দর মানিয়ে গেছে। আঁচলটা আজও ভীষণ বাড়তি, তবে আজ হাতভর্তি নীল চুড়ি। আচ্ছা, কানে গলায় গয়নাগাটি তো কিছুই পরলো না। এত এত টাকার গয়না, সব দিয়ে দিলো ভাবীকে… এই জীবনে তামিমকে লুটেপুটে বোধহয় নিঃস্ব করে দেবে।
কি জানি একটা গান ছিল, আমি নিঃস্ব হয়ে যাবো, জানো না….
যখন তোমাকে পাবো না….
একটু পার্থক্য অবশ্য আছে, এখানে পেয়ে নিঃস্ব।
নীরার চোখ স্থির এখনো ঘড়ির দিকে। ওহ… উনি অপেক্ষার সময় গুণছেন। একটু পেছন ফিরে তাকাবে তো, এই ডার্ক মেরুন শার্টে নিজের বরকে কত হ্যান্ডসাম লাগছে দেখবে তো!
তামিম বেরিয়ে এলো। শুকনো গলায় বললো,
—চা খাওনি কেন নীরা? ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
নীরা তামিমের দিকে ঘুড়ে তাকালো এবং সাথে সাথেই আবার মুখ ঘুরিয়ে নিলো। এটা কি দেখলো সে?তামিমের প্যান্টের জিপ খোলা। অল্প খোলা না, হাঁ করে খোলা। আরে বাবা এত ফিটিং প্যান্ট পরার দরকারটা কি? মানুষটা ইচ্ছে করেই কাজটা করেছে তো, নীরাকে ট্রাপে ফেলার চেষ্টা। ঠিক আছে করুক। নীরা একদম ফলো করবে না। বুঝতেই দেবে না। নীরা নিজেকে স্বাভাবিক রাখার জন্য লম্বা করে দুটো শ্বাস নিলো। এত কেন ভয় করছে? এত লজ্জা করছে কেন? তামিমের সাথে এটা তো তার প্রথম দেখা নয়।তাহলে? বিয়ে নামক জিনিসটা কি তার মাঝে কোনো অনুভূতি তৈরি করে দিয়েছে? বিয়ের কি অনুভূতি তৈরি করার কোনো পাওয়ার আছে বা অদৃশ্য কার্যশক্তি।
নীরা শক্ত করে হাত মুঠো করে নিয়ে শাড়ির আঁচলটা টেনে ধরলো।
—ঠিক আছে তুমি যখন চা খাবে না, আমিই খাই।
তামিম চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে নীরার কাছাকাছি দাঁড়িয়ে পা দিয়ে চেয়ারটা টানলো। নীরার যতটুকু শক্তি দিয়ে চিৎকার করা সম্ভব ততটুকু জোড়ে বললো,
—একদম চেয়ারে বসবেন না, এখানে বসতে পারবেন না। আমি বলছি তো বসবেন না।
তামিম বসতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো,
—আমার অফিস, আমি কেন বসবো না? আশ্চর্য! এত চেঁচানোর কি আছে? চেয়ারেই তো বসছি বাবা, তোমার কোলে তো নয়। আমি একশবার চেয়ারে বসবো।
তামিম বসতে যাবার আগেই নীরা চেয়ারটা সরিয়ে দিলো,
—মানে আমি বলছি, আমার সব কথা আপনাকে দাঁড়িয়ে শুনতে হবে। আমি দাঁড়িয়ে কথা বলছি তো আপনি কেন বসবেন?
নীরা আবার তাকালো। উফ্ বারবার চোখ চলে যাচ্ছে। একদম তাকানো যাবে না। লোকটা ইচ্ছে করেই নীরাকে দেখাতে চাইছে। কিন্তু নীরা তো এত সহজে ধরা দেবে না। চেয়ারে বসে গেলে কেলেংকারি ঘটে যাবে, জিপ আরো হাঁ করে খুলবে।
বি কনফিডেন্ট নীরা, স্পিক আউট…
—আপনি লাবণী ভাবীকে কি বলেছেন? আপনি কি ভাবেন সব এত সোজা? আপনি যা ভাবছেন, তা হবে না। আপনার আমার থেকে পারমিশন নেওয়ার দরকার ছিল। এত সাহস কি করে হয় আপনার?
—আমি কি ভেবেছি, সেটা তুমি কিভাবে জানলে নীরা? কি কারণে এত রেগে রেগে কথা বলছো? আর এরকম আমাকে চোখ দেখিয়ে আছো যে, কি করেছি আমি?
তামিম চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে চেয়ারে বসে পড়লো। উফ্ যা ভেবেছিলো তাই। হাসপাতাল আরো খুলে গেছে, এবার পেশেন্ট বেরিয়ে পড়লেই না হয়!
নীরা চোখ সরিয়ে নিলো, শুধু মাত্র এই কারণে তার কথার শুরুতে এলোমেলো লেগে গেছে। এখন
একদম তামিমের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবে সে, একদম… আই টু আই কন্ট্যাক্ট!
—ওকে কাম টু দ্য পয়েন্ট! আপনি লাবণী ভাবীকে ভুলিয়ে ভালিয়ে রাজি করিয়েছেন, তিনি এখন আপনার জন্য ঘর রেডী করছেন। আপনি নাকি আমাদের বাড়ি গিয়ে থাকবেন?
—যাক বাবা, আমার কি দোষ? তিনিই তো বললেন, আমি কি উনার কথা ফেলতে পারি?
—বললেন মানে? উনাকে আপনি পুতুপুত কথা বলে পটিয়েছেন। সোজা কথায় আসুন, আপনি আমাদের ওখানে গিয়ে থাকতে পারবেন না। ব্যস… ব্যস ব্যস…
নীরা আবার তাকালো এবং একটু পিছু সরলো। কথা শেষ করে তাড়াতাড়ি চলে যেতে হবে, বারবার ভুল হচ্ছে…..
—অামি সেঁধে থাকতে যাচ্ছি না নীরা, আমার বোনের বিয়ে। হিসেবে আমি কনেপক্ষ! কনেপক্ষকে কনের বাড়িতে থাকতে হয়। দিস ইজ এ রুলস অফ ইউনিভার্স! যেমন স্বামী-স্ত্রী একসাথে থাকে এটাও একটা রুলস।
লোকটা খালি অকারণে কথা বাড়াবেই। নীরার মেজাজ চটে গেল। সে এগিয়ে এলো। প্রায় ছুটে গেল তামিমের দিকে। চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,
—আমাকে রুলস দেখাতে আসবেন না, একদম না! খবরদার না.. ইউনিভার্সের সব রুলই কি আপনি মেনে চলেন? চলেন না। তাহলে? আর তাছাড়া
আপনি কনেপক্ষ না। কথা শেষ! ক্লিয়ার?
নীরা একবারে তামিমের চোখের দিকে ডিরেক্ট তাকিয়ে আছে। তার চোখ দিয়ে যেন আগুন বেরোচ্ছে।
তামিম চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। চায়ের কাপটা টেবিলে রাখলো। একটু এগিয়ে এলো নীরার দিকে। নীরা একটু পেছন সরলো, তামিম আরেকটু এগিয়ে এলো। নীরা আরেকটু পেছন সরলো… তামিম এগোচ্ছে…..
নীরা গলার স্বর দৃঢ় রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে।
—আপনি কি ভাবেন? আপনি সবসময়ই আমাকে প্যাঁচে ফেলবেন আর প্যাঁচে ফেলে স্বার্থ আদায় করে নেবেন। হবে না, একদম হবে না!
তামিম এবার আরো এগোলো, নীরার পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। নীরা দু-হাতে ঠেলে ধরলো তামিমকে।
তামিম যেন সেটা বুঝলোই না।
নীরা হাত সরিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো,
পেট চ্যাপ্টা হয়ে যাচ্ছে তার!
—আমি কি স্বার্থ আদায় করবো, হু? বলো। ক্লিয়ার হয়নি! বলো….
—আছে, আপনার স্বার্থ আছে। আমি জানি।
নাহলে আমাদের বাড়ি গিয়ে থাকতে চাইছেন কেন? এটা আপনার ফন্দি!
—কিসের ফন্দি? বলো…. বলো….
নীরা জবাব দিলো না। তামিম বাঁ-হাতে নীরার পেটে খামচি মেরে ধরেছে। নীরা আবার দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কি বলতে এসেছিলো আর কি ঘটে গেল? সব হয়েছে ঐ চেইন খোলার জন্য! আরে বাবা এত খামচি দিয়ে ধরার কি আছে? টিভি সিনেমা কি দেখে না মানুষটা? পেটে হাত রাখতে হয় কোমল করে। আর উনি মাংস তুলে নিয়ে বিক্রি করে দেবে অবস্থা। তামিম পেট থেকে হাত ছাড়িয়ে এবার কোমর পেঁচিয়ে ধরলো নীরার।
—আমি ও বাড়িতে থাকবো বলে তুমি কেন এত রিয়েক্ট করছো নীরা? তুমি কি চাইছো আমি যাতে ঘরজামাই না হই? তুমি এসে থাকতে চাও আমার কাছে?
নীরা এবারও জবাব দিলো না। তামিমের নিঃশ্বাস পড়ছে তার গালে। বাঁ-হাতে তামিম নীরার কোমরে শাড়ির গুঁজাটা টেনে ধরেছে শক্ত করে। নীরা দু-হাতে শুধু তামিমের ডান হাতটা ঠেলে ধরে আছে। এত শক্তি একটা লোকের কি করে হয়? দানব!
—আমার পেট চ্যাপটা করে দিচ্ছেন, ব্যথা পাচ্ছি আমি। সরুন।
তামিম সরলো না, আরো ঘনিষ্ঠ হলো।
—আচ্ছা, বাই এনি চান্স তুমি কি আমাকে ভয় পাও নীরা?
নীরা চোখ খুললো এবার। তামিম নাক দিয়ে নীরার নাক চেপে ধরে আছে। মুখটা এত কাছে চোখের পাপড়ি পর্যন্ত গুণা যাচ্ছে। নীরার হঠাৎ মনে হলো, তামিমের চোখ দুটো ভীষণ সুন্দর! ভীষণ… দূর থেকে বুঝা যায় না।
—আমি শ্বাস বন্ধ হয়ে মরে গেলে খুশি তো? নাক সরান, এত ধার কেন নাক? কেটে গেছে বোধহয় আমার! উফ্…
—ধমক ধামক দিয়ে মারামারি করবে বলে এসেছো, মারামারি করো নীরা। এত সরুন সরুন করছো কেন? যত খুশি মারো আমাকে।
নীরা হাল ছেড়ে দিলো, যা খুশি করুক লোকটা। সে কিচ্ছু বলবে না। এখানে সেঁধে আসার চূড়ান্ত শিক্ষা হয়েছে। এই লোকটা যে রমজান ডাকু তার বুঝা উচিত ছিল। এ’র কাছাকাছি আসলেই কিভাবে যেন নীরার ছক পাল্টে যায়, সব গোলমাল পাকিয়ে খিচুড়ি! সেই প্রথম দিন থেকে… হুহ..
নীরা বিড়বিড় করে বললো,
—পেটে ব্যথা পাচ্ছি, হাতে ব্যাথা পাচ্ছি, কোমরেও ব্যথা পাচ্ছি… কত ব্যথা দিবেন বলুন তো? কি চান? কি চাই আপনার?
তামিম নীরার চুলের খোঁপাটা খুলে দিতে দিতে ফিসফিস করে বললো,
—কি চাই বলবো নীরা? সত্যি বলবো?
নীরার শরীর কেঁপে উঠলো, বুক ধরফর আরো বেড়ে গেল। কথার প্যাঁচে আবার পড়তে যাচ্ছে সে। তামিম কিছু বলতে যাচ্ছিলো, নীরা তামিমের ঠোঁটে শক্ত করে নিজের ঠোঁট চেঁপে ধরলো। এই লোককে কিচ্ছু বলতে দেয়াই বিপদ! যেরকম ঠোঁটকাটা! নিশ্চিত মহামারীটাইপ কিছু বলে ফেলবে। নীরা ঠিক ফেঁসে যাবে আবার। নীরার ঠোঁট চেপে ধরার
সুযোগের চূড়ান্ত ব্যবহার করলো তামিম।
নীরা মনে মনে বললো, তবু এটুকুতেই থেমে থাকো জল্লাদ ভাই…. তাও চাওয়ার কথা বলো না।প্লিজ…
হারুন নক করছে দরজায়!
—স্যার হেলথ মিনিস্ট্রি থেকে ফোন করছে আপনাকে, ফোন ধরছেন না যে! স্বাস্থ্য সচিব আমার ফোনে লাইনে আছেন। স্যার, এটা ইমার্জেন্সি।
তামিমের অমনোযোগিতার এই সুযোগে নীরা এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিলো নিজেকে। শাড়ি পরে আসার চরম শিক্ষা হয়েছে! পেট খামচে রাক্ষসটা চামড়া তুলে নিয়েছে নাকি, এত জ্বলছে কেন?
তামিম দরজার কাছে যাওয়ার আগেই নীরা ছুটে গিয়ে প্রায় জাপটে ধরলো তামিমকে,
—প্যান্টের চেইন খুলে আছে, লাগান আগে। সব দেখা যাচ্ছে। এজন্যই বসতে মানা করছিলাম তখন।
তামিম নিজের প্যান্টের দিকে তাকালো, তারপর
দাঁত বের করে হেসে বললো,
—আর ধুত, কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না। নিচে শর্টস আছে তো। আন্ডারওয়ারটাই স্কিন কালার। দেখো বিশ্বাস না হলে, এই যে দেখো নীরা। চেক ইট।
তামিম জিপটা ধরে নীরার দিকে এগিয়ে গেল,
—দেখো আন্ডারওয়ারটাই ন্যূড কালার। লা রিভে থেকে কেনা, সেভেন হান্ড্রেড এন্ড টেন টাকা প্রাইস। বুঝলে নীরা আমি আবার এইসব ব্যাপারে খুব কেয়ারফুল। ছোটবেলা থেকেই লাজুক তো আমি।
নীরার ইচ্ছে করলো গলা চেপে ধরে তামিমের।
এত নির্লজ্জ মানুষ হয় কি করে?
নিজেকে সামলে নীরা কোনোমতে বললো,
—আপনার পায়ে ধরি, আপনার এত লজ্জা সামলে রাখুন। এত লাজুক হয়ে কিভাবে চলবেন? প্লিজ
আপনার লজ্জা দেখে আমারই ভীষণ লজ্জা লাগছে।
—উফ্। নীরা, তোমার কাছে কিসের লজ্জা? তুমি তো আমার নিজের মানুষ! তবে একটা ব্যাপারে কিন্তু আজ আমার সত্যিই অনেক লজ্জা করেছে, তুমি যেভাবে ঠোঁটে চুমু খেলে না! সত্যি বলছি আমি লজ্জা পেয়ে গেছিলাম।
নীরা মনে মনে বললো, ওলে আমার লজ্জা বাবুরে!
শালা পারলে তো, ***বাবা হয়ে যায়; উনার কি লজ্জা!
কিন্তু মুখে বললো,
—আপনার মতো লাজুক মানুষেরা আছে বলেই তো লজ্জারা বেঁচে আছে।
হারুন আবার নক করলো দরজায়! তামিম বিরক্ত গলায় বললো,
—ব্যাড টাইমিং। হারুন সাহেবকে নিয়ে আর পারা গেল না। উফ্…
#পর্ব_২২
তামিম ফোন হাতে করে বাইরে চলে গেল। ভেতরে এসে হারুন সন্ধিগ্ধ চোখে নীরার দিকে তাকালো। মেয়েটা স্যারের কাছে আরো কিছু দাবি করেনি তো? আরো টাকাপয়সা, আরো গয়নাগাটি? স্যারের বাসার অংশ কি চেয়েছে?
নীরা ব্যাগটা কাঁধে নিতে নিতে বললো,
—আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? তাকানোর ভাব দেখে মনে হচ্ছে, আমি মানুষ না এটম বোমা বনে গেছি; আমার কোনো তার কেটে ডিফিউজ করবেন। সেটাই কি খুঁজছেন?
হারুন চমকে উঠে দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বললো,
—নীরা মা যে কি বলেন না! আপনাকে বোমা ভাবার কি আছে? আপনি হলেন গিয়ে, আমার মেয়ে! মেয়েকে পৃথিবীর কোনো বাবা বোমা ভাবতে পারে??
—শুনুন, এরকম ন্যাঁকা ন্যাঁকা কথা ফারদার আর বলবেন না। আর হ্যাঁ, আপনার স্যারকে বলে দেবেন একদম স্পষ্ট করে বলে দেবেন যে আমাদের বাড়িতে থাকা যাবে না।
—কিন্তু আমি তো অলরেডী স্যারের কিছু জিনিসপত্র কিনে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাছাড়া আপনার বাবা বারবার করে বললেন, বিয়ের দিনে লাবণী মায়ের মাথার উপরে হাত রাখার মতো কেউ হলো এবার। স্যার যাতে অতি শীঘ্রই চলে যান সেখানে।
—বাবাকেও হাত করা হয়ে গেছে, বাহ্। আপনিই সব করছেন। দানের গুটি, তাই না?
—না মা, আমি কেন? আমি কিছুই করিনি। দেখেন নীরা মা…. আমি হলাম গিয়ে আপনার উকিল বাবা। আমাকে কেন শত্রু ভাবেন? আমি তো একতরফা আপনার দিকে।
—তাহলে আপনি একটা কাজ করুন, আপনার স্যারের মাথা থেকে ভুত তাড়ান। উনার থাকার ডিসিশন ক্যানসেল করুন। বুঝিয়ে সুঝিয়ে থামান উনাকে।
তামিম ফিরে এসেছে। হারুনের দিকে ফোন বাড়িয়ে দিতে দিতে বললো,
—হারুন সাহেব আপনি কি আমার বিরুদ্ধে কাল্টি করছেন বা কোনো ষড়যন্ত্র?
—জি না স্যার, একদম না স্যার। আমি তো আসলে নীরা মা’কে বুঝিয়ে বলছিলাম আর কি।
নীরা কঠিন গলায় বললো,
—হারুন সাহেব, আমাকে বুঝানোর কি আছে বলুন তো? আপনি এখানে আসুন, এই চেয়ারে ঠান্ডা হয়ে বসে আমার কথা শুনুন। আপনার স্যারকে স্পষ্ট করে বুঝান, তিনি যেটা চাইছেন সেটা সম্পূর্ণ রকমে অসম্ভব!
তামিম এগিয়ে এলো হারুন সাহেবের দিকে,
—আপনি এদিকে আসুন হারুন সাহেব, এখানে এসে আমার কথা শুনুন। আপনার মেয়েকে আমি ধর্মমতে বিয়ে করেছি। দেনমোহর পরিশোধ করেছি। এখন আমি আমার বউ চাই। বউয়ের ভালোবাসা চাই! এটা তো আমার অধিকার, তাই না?
হারুন হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে বললো,
—জি স্যার, একদম স্যার।
নীরা হারুন সাহেবের হাত ধরে টান দিলো,
—আপনি না আমার বাবা? আপনাকে আমার কথা শুনতে হবে। উনার কথায় হ্যাঁ হ্যাঁ করবেন না।
আপনাকে বসতে বলেছি না, বসুন। আপনার স্যার আমাকে নিয়ে যেই গেইমটা খেলছেন, তা কিন্তু একেবারেই ঠিক হচ্ছে না।
তামিম হারুনের হাত ধরে হেঁচকা টানে উঠিয়ে দিলো,
—আপনি আমার অফিসের লোক, বসে বসে এ’র কথা কেন শুনছেন? একদম এখানে দাঁড়ান, ভালো করে বুঝে নিন। আপনার মেয়ে আমার সাথে সেই শুরু থেকে ঝামেলা করছে। তাকে স্পষ্ট করে বলে দিন, সম্পর্কের হিসাবে ওটা আমার শ্বশুরবাড়ি। আমি সেখানে থাকতেই পারি… একশোবার পারি, হাজারবার পারি।
তামিমের কথা শেষ হলো না, নীরা মাঝখানে আবার হারুনের হাত ধরে টান দিলো।
—বসুন এখানে, কথা শুনুন আমার। ওই ব্যাটার তালে তাল দিবেন না। বসুন…
—বসছি মা, বসছি মা
বলে হারুন চেয়ারে বসে পড়লো।
—কথায় কথায় আপনার স্যারকে সম্পর্কের ব্যাখ্যা বলতে না করুন। একপাল পুলিশ নিয়ে বিয়ে করে আবার শ্বশুরবাড়ি?
তামিম হারুনকে উঠিয়ে দিলো আবার,
—বসে বসে এর কথা শুনতে মানা করেছি না? দাঁড়ান… এদিকে আসুন।
হারুন চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে পড়লো।
নীরা আরো ক্ষেপে গিয়ে বললো,
—উনার কথায় দাঁড়িয়ে পড়লেন কেন, বসুন। বাবা হয়ে মেয়ের কথার দাম দিচ্ছেন না, কেমন বাবা আপনি? বসুন এখানে।
হারুন অসহায় মুখ করে বসলো আবার।
—আপনি আবার বসেছেন হারুন সাহেব! আমার আন্ডারে চাকরি করে এই মেয়ের কথায় বসে পড়েছেন? দাঁড়ান, এক্ষুণি দাঁড়ান।
হারুন জি স্যার জি স্যার বলে দাঁড়িয়ে পড়লো।
নীরা এবার মুখে কিছু বললো না, হারুন সাহেবের কাঁধ চেপে ধরে বসিয়ে দিলো।
তামিম দু-হাত ঝাঁকি দিয়ে হারুনকে আবার দাঁড় করালো। নীরা আবার বসিয়ে দিলো। তামিম হেঁচকা টানে হারুনকে আবার দাঁড় করিয়ে দিলো। নীরা আবার বসিয়ে দিলো। তামিম এবার হারুনের কলার ধরে দাঁড় করালো, নীরা বেচারার শার্ট ধরে টেনে আবার বসিয়ে দিলো।
হারুনের রাগে মাথার চুল ছিঁড়ে নিতে মন চাইছে। দাঁড়ান আর বসুন করে করে এরা তো মেরে ফেলবে হারুনকে। আল্লাহর নামে একটা দৌড় দিয়ে পালাতে হবে এখান থেকে। এবারে তামিম হারুনকে দাঁড় করিয়ে দিতেই সজোড়ে “বিসমিল্লাহ” বলে চিৎকার দিয়ে হারুন দৌড়ে বেরিয়ে গেল।
—হারুন সাহেব দৌড় মারলো কেন?
—আমি কি করে বলবো? তোমার বাবা, তুমি জানো।
—আপনার অ্যাসিট্যান্ট কথার মাঝখানে উঠে দৌড় মারবে সেটা আপনি জানবেন না?
—না জানবো না। সে আগে এরকম করেনি।
নীরা এবারে তামিমের কলার ধরে টেনে চেয়ারে বসিয়ে দিলো। মুখটা একদম তামিমের মুখের কাছে এনে বললো,
—কান খুলে শুনে রাখুন, আপনি আমাদের বাড়ি গিয়ে থাকবেন না; এটাই বলতে এসেছি আমি। আপনার আর কোনো চোরাই প্ল্যান আমি সাকসেসফুল হতে দিবো না। ব্যস.. বুঝেছেন?
—ঠিক বুঝিনি, মানে আর একটু বাকী। সেভেন্টি পার্সেন্ট বুঝা যাচ্ছে।
নীরা আরেকটু এগিয়ে এলো। মুখটা তামিমের দিকে আর বাড়ালো,
—আমি কিন্তু সোজা মেয়ে না। আমার আসল রূপ যদি আপনাকে দেখাই, আপনি কাঁপতে কাঁপতে হার্ট ফেইল করে মারা যাবেন। তাই আমি যা বলছি, মাথায় রাখুন।
তামিম গলার স্বর নামিয়ে ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলায় বললো,
—নীরা এত কাছে থেকে তুমি যে আমার চোখের কাছে নিচু হয়েছো, আমি তোমার আসল রূপ দেখতে পাচ্ছি। ডানপাশে একটা ছোট্ট লাল তিল…
তামিমের কথা শেষ হবার আগেই নীরা নিজের দিকে তাকালো এবং ঝট করে তামিমের কলার ছেড়ে দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। উফ্….. লোকটা তার সব দেখে নিয়েছে!
তামিম হা করে বসে আছে, নীরা দ্রুত বেরিয়ে গেল।
তামিমের অফিস থেকে বেরিয়ে নীরার রিকশা নিতে ইচ্ছে করলো না, সে হেঁটেই বাড়ি ফিরবে আজ।
কিচ্ছু ভালো লাগছে না তার! এই তামিম মানুষটা তার জীবনে আসবার পর থেকে সব গ্রাফ পাল্টে গেছে। আগেও তো কলেজেও অনেকে প্রপোজ করেছে, পরে তো এমন নক করেনি। এত জ্বালায়নি। এই মানুষটা এমন কেন লেগে আছে? এমন কেন করছে? এমন তো নয় যে, এদেশে নীরার চেয়ে সুন্দরী মেয়ে নেই? এত হ্যান্ডসাম একটা লোক, এত হাই প্রোফাইল জব তাঁর, তাহলে নীরাকে কেন? কি জন্য? এত জোর করে নীরাকে তাও নীরা কেন মানুষটাকে কঠিন শাস্তি দিতে পারে না। কেন? কোথাও কি নীরাও দুর্বল হয়ে পড়ছে? তার নিজের মনও কি কাতর হয়ে পড়ছে?
শফিক ভাইয়ার মতো কি নীরার জীবনে কিছু ঘটতে যাচ্ছে? নীরা কিছুতেই তা হতে দেবে না। তার কোনো দরকার নেই ভালোবাসার…. কোনো দরকার নেই।
—-নীরা…. নীরা…. ওই নীরা……
শফিক প্রায় হাঁপাতে হাঁপাতে এসে নীরার পাশে থামলো।
—কিরে? এতক্ষণ ধরে ডাকছি, শুনছিস না যে? কি এমন মগ্ন হয়ে ভাবছিস বলতো?
—ওহ তুমি এখানে কেন ভাইয়া? ফোন করতে পারতে তো?
—কয়বার ফোন করেছি; মোবাইল বের করে দ্যাখ! তেইশবার কল দিয়েছি। পরে ভাবীকে কল দিয়ে জানতে পারলাম তুই এদিকে আসবি বলে নাকি বের হয়েছিস।
নীরা মোবাইল বের করতে ব্যাগে হাত দিবার আগেই শফিক নীরার হাত ঝট করে ধরে নিয়ে বললো,
—একটা জরুরি কাজ আছে চল্। বিয়েতে আমার একজন অতিথি আসবে, তাঁর জন্য একটা উপহার কিনবো… চল্…
নীরা হাঁটা বন্ধ করে দাঁড়িয়ে পড়লো।
—তোমার অতিথি?
শফিক লাজুকভাবে মাথা নিচু করে হাসলো!
—বিশেষ অতিথি নাকি? কে সেটা?
শফিক জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে আবারও হাসলো।
—প্রাইম মিনিস্টারের মেয়ে?
শফিক হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো।
নীরা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
—বিয়েতে আসবে বলেছে তোমাকে?
—আসবে বলেনি, আমি ইনভাইট করেছি। আমি জানি, তিনি আসবেন।
কথাটা বলেই শফিক ঘড়ি দেখলো,
—আমার হাতে সময় খুব অল্প। একটু বেরোনো মানে, পড়াশোনার বিরাট লস! তাড়াতাড়ি চল্। তোর সাথে টাকা আছে তো?
—আছে। কোথায় যাবে বলো? বসুন্ধরা না যমুনায়?
প্রাইম মিনিস্টারের মেয়ে বলে কথা! যেন তেন উপহার তো আর দেওয়া যাবে না। রিকশা ডাকি….
নীরার রিকশা ডাকতে হলো না। মিসেস সেলিনা এসে হুট করে গাড়ি থামিয়েছেন,
—এই নীরা…. নীরা.. কই যাচ্ছো ভাইবোনে?
নীরা জবাব দেওয়ার আগে শফিক বললো,
—এই তো বিয়ের কেনাকাটা আন্টি।
সেলিনা অত্যন্ত ব্যস্তভাবে গাড়ি থেকে নামলেন। তার হাতে একটি খুনতি…..
—নীরা মা, খবর জানো? আমার তো বিরাট সর্বনাশ হয়ে গেছে। ফকিরনি মেয়েটা নাকি আমার ছেলের অফিসে এসেছে। আমার গোয়েন্দা খবর দিলো। খবর পেয়ে খুনতি গরম করে ছুটে এলাম, পথে আসতে আসতে খুনতি ঠান্ডা হয়ে গেছে। আবার ফিরে গিয়ে গরম করে আনলাম। এখন দেখো আবার ঠান্ডা। কি করি বলো তো?
নীরা জবাব দিলো না। এই ভদ্রমহিলার তো মাথা সম্পূর্নরূপে গেছে দেখছি।
শফিক আগ্রহের সাথে বললো,
—আন্টি, খুনতি দিয়ে দাগটা বেশি নিষ্ঠুরতা হয়ে যাচ্ছে। আপনি বরং এক কাজ করুন। একটা কাঁচি রাখুন ব্যাগে, সামনে পেলেই মাথার একগাছি চুল কেটে নিবেন। নো ভায়োলেন্স। শাস্তিও হলো।
কিরে নীরা তোর ব্যাগে কাঁচি আছে না? থাকলে উনাকে দে…. উপকার কর।
সেলিনার কাছে শফিকের আইডিয়া বেশ পছন্দ হলো। তিনি অতি উৎসাহের সাথে বললেন,
—দাও, নীরা কাঁচিটা দাও। তাড়াতাড়ি…. ফকিরনীর মাথা যদি আমি ন্যারা না করতে পারি, আমার নাম সেলিনা না।
নীরা বিরস মুখে ব্যাগ থেকে কাঁচি বের করে দিলো। সেলিনা হেসে বললেন,
—নীরা তোমরা বরং আমার গাড়িটা নিয়ে যাও। বিয়ের শপিং তো, চৌদ্দ ঝামেলা। গাড়ি ছাড়া আরাম পাবে না। আমি ড্রাইভারকে বলে দিচ্ছি। আমার ছেলের অফিস এখান থেকে কাছেই, ওয়াকিং ডিসটেন্স! আমি হেঁটেই চলে যাবো।
সেলিনা নীরার হাতে খুনতি দিয়ে মহাউৎসাহে কাঁচি নিয়ে ছুটলেন। শফিক হাসছে, শব্দ করে হাসছে….
(চলবে)
#তৃধা_আনিকা