#রংধনুর_আকাশ
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-৩৮
৬১।
মাহাথির অফিস থেকে ফিরতে ফিরতে রাত ন’টা বেজে গেলো। ঘরে এসে এদিক-ওদিক তাকিয়ে সে সূচনাকে খুঁজতে লাগলো। এদিকে সূচনা বারান্দায় বসে গুনগুনিয়ে গান করছে। মাহাথি শব্দ শুনে বারান্দায় এসে বলল,
“এখানে কি করছো? খেয়েছো?”
সূচনা কোনো উত্তর দিলো না। সে গান গেয়ে যাচ্ছে।
“আমার আছে একটা গল্প পুরনো
আর আছে একটা গান
যা শুনতে তোমার সময় নেই কোন
ছিল না ইচ্ছে কখনও..
এভাবেই সব হারায় আর ফিরে আসে না
নিজেকে ছুড়ে দেই বৃষ্টিতে
বৃষ্টি ধুয়ে দেয় কান্না জল যা তোমায় নিয়ে
বৃষ্টি দেয় বিদায় দুঃখ যা আজ আমায় ঘিরে।
.
আমায় জড়াও এই রাতের জাদুতে
জীবন আজ শুধু নিঃশ্বাসে
দিও না যেতে আমি বৃষ্টি দেখতে চাই
ভালবাসা চাই শুরু থেকে
এভাবেই সব হারায় আর ফিরে আসে না
নিজেকে ছুড়ে দেই বৃষ্টিতে
বৃষ্টি ধুয়ে দেয় কান্না জল যা তোমায় নিয়ে
বৃষ্টি দেয় বিদায় দুঃখ যা আজ আমায় ঘিরে।”
মাহাথি চুপচাপ দাঁড়িয়ে সূচনার গান শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলো। এদিকে গান শেষ করে সূচনা ঘরে চলে এলো। মাহাথি তার পিছু পিছু এসে বলল,
“কিছু হয়েছে?”
সূচনা এবারও কোনো উত্তর দিলো না। সে অনর্থক ঘর গোছাতে লাগলো। মাহাথি সূচনার হাত ধরে তাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলল,
“গোছানো কাজ আবার করছো কেন? কি হয়েছে বলো? কেউ কিছু বলেছে?”
সূচনা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“আমাকে কেউ কিছুই বলে না। আমি খুবই ভাগ্যবতী। কিছু বলা তো দূরের কথা, কথা বলারও কেউ নেই।”
“মানে? বুঝলাম না!”
সূচনা কোমড়ে দুই হাত রেখে বলল,
“না, তুমি তো বুঝবে না! আচ্ছা আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দাও। তুমি আমাকে বুড়ো বয়সে বিয়ে করলে কেন? বলো?”
“বুড়ো বয়সে তো বিয়ে করি নি। আমি কি এখনো বুড়ো হয়েছি নাকি? কি যা তা বলছো?”
“নয়তো, কি! তুমি বুড়োই হয়ে গেছো। বিয়ের আগে তুমি আমাকে কতো স্বপ্ন দেখিয়েছিলে, আর বলেছিলে সূচনা, আমার টুকটুকি, আমরা ষাটের পরও স্বপ্ন দেখবো। আর তুমি কি করছো? প্রতিদিন অফিস থেকে দেরীতে বাসায় আসো। এসে খেয়ে-দেয়ে আবার ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়ো। আবার এদিকে সকালে উঠে নাস্তাটা খেয়েই লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যাও। এভাবেই কি চলতে থাকবে? আমাদের তো একটু হলেও ভিন্ন কিছু করা উচিত। আর করার ইচ্ছে না থাকলে, মিথ্যে বলেছিলে কেন?”
মাহাথি হালকা হেসে আহ্লাদী কন্ঠে বলল,
“তাহলে এই জন্য আমার টুকটুকির মন খারাপ!”
“প্লিজ, মাহা, তুমি এভাবে আহ্লাদ করে আমাকে পটাতে পারবে না। আর আমি এতো সহজে পটবো না। অনেক পটেছি, আর না।”
“আচ্ছা, আচ্ছা, এখন আমি কি করবো, বলো?”
সূচনা অভিমানী কন্ঠে বললো,
“কি করবে জানো না? এটাও আমি শিখিয়ে দেবো? দেখো, মারিয়ার মাত্রই আক্দ হয়েছে, অথচ সে তার বরকে নিয়ে মধুচন্দ্রিমা থেকে এসেছে। এদিকে গতকাল মারিয়াকে বলতে শুনেছি, সে নাকি পরীক্ষার পর এবার কাশ্মির যাবে। আর তুমি বসে থাকো বাসায়! ছুটির দিন বেলা বারোটা পর্যন্ত ঘুমাবে, উঠে নামাজ পড়তে যাবে, এসে ভাত খেয়ে আবার ঘুমাবে। এভাবেই তুমি সময় কাটিয়ে দিচ্ছো। তোমার সামনে যে জলজ্যান্ত একটা বউ আছে দেখছো না? তাকে নিয়ে কি একটু বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই? দেখা যাবে, তোমার ছোট ভাই বিয়ে করে বউকে নিয়ে পাঁচ-ছয় বার হানিমুন করে ফেলবে, আর তুমি তখনও অফিসে যাবা- আসবা, আর এসে নাক ডেকে ঘুমাবা।”
মাহাথি সূচনার হাত ধরে বলল,
“বউ, তুমি রাগ করছো কেন?”
সূচনা মাহাথির হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“ডায়নিংয়ে খাবার দিচ্ছি। খেতে আসো। আর এরপর খেয়ে আবার ধপাস করে শুয়ে পড়িও। আবার পরের দিন তো তোমাকে লাফিয়ে লাফিয়ে অফিসে যেতে হবে, তাই না?”
কথাটি বলে সূচনা চলে গেলো। এদিকে মাহাথি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছে,
“সূচনা তো মারাত্মক রেগে আছে! এভাবে তো আজ রাতে ঘুমোতেই পারবো না। দেখা যাবে, এর আগের বারের মতো রাগ দেখিয়ে পুরো বিছানা দখল করে ঘুমোবে, আর আমার জন্য একটুখানি জায়গা রাখবে। আজই টুকটুকির রাগ ভাঙাতে হবে। কিন্তু কিভাবে?”
মাহাথি এবার কিছু একটা ভেবে মোবাইলটা বের করে একটা চেয়ার টেনে বসলো। এরপর গুগলে সার্চ দিলো, ‘হাউ টু ইম্প্রেস ইউর ওয়াইফ কুইকলি।”
সাথে সাথেই কিছু তালিকা চলে এলো। মাহাথি এসব পড়ে কিছু বুদ্ধি নিলো। এরপর সে ফ্রেশ হয়ে রাতের খাবার খেয়ে নিলো। খাওয়ার পর সে বাইরে বের হতে যাবে, তখনই আরিয়া এসে জিজ্ঞেস করলেন,
“মাহাথি, তুমি আবার কোথায় যাচ্ছো?”
“মা, একটু বাইরে হাঁটতে যাচ্ছি।”
সূচনা মাহাথিকে বাইরে যেতে দেখে বিড়বিড় করে বললো,
“হাঁটতেও যাবে, অথচ রান্নাঘরে বাসন পরিষ্কার করার সময় পাশেও দাঁড়াবে না।”
এদিকে সূচনা রান্নাঘরে এসে দেখলো মারিয়া চুলার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মারিয়াকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, সূচনা বলল,
“তুমি এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?”
মারিয়া সূচনার কাছে এসে তার হাত ধরে বলল,
“ভাবী, তোমার চুলায় রান্না করতে ভয় লাগে না?”
সূচনা অবাক কন্ঠে বললো,
“ভয় কেন লাগবে?”
মারিয়া ভীত কন্ঠে বললো,
“যদি আগুন হাতে লেগে যায়?”
“এসব ভাবলে তো হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে হবে। আর সতর্কতার সাথে কাজ করলে আগুন কেন হাতে লাগবে?”
“আমার ভয় লাগছে খুব!”
“তাহলে তুমি এসো না এখানে।”
“না, ভাবী। এখন তো আমার বিয়ে হয়ে গেছে। আমাকে তো রান্না করতে হবে, তাই না? মহুয়া তো সব পারে। আমিই কিছু পারি না। আমাকে শিখিয়ে দেবে?”
“অবশ্যই শিখিয়ে দেবো। কিন্তু সামনে তোমার পরীক্ষা। তাই আপতত পড়াশুনায় মনোযোগ দাও।”
“না, ভাবী। এসবে অনেক দেরী আছে। কিন্তু রান্না শেখার সময় এখনই। অন্তত হালিম রান্নাটা শিখিয়ে দাও না, প্লিজ!”
“এতো রাতে? কাল বিকেলে শিখিয়ে দেবো। ঠিক আছে?”
মারিয়া খুশি হয়ে বলল,
“আচ্ছা, ভাবী। ধন্যবাদ।”
এরপর মারিয়া রুমে এসে দেখলো, মহুয়া এক পাশে চুপ করে বসে আছে। মারিয়া মহুয়াকে দেখে মনে মনে ভাবলো,
“আমি কি মহুয়াকে অনেক বেশি বলে ফেলেছি? না, না ঠিকই বলেছি। কেনই বা বেশি হবে। প্রহর আমার বর। প্রহরের সম্পূর্ণ মনোযোগ আমার উপরই তো থাকবে। অথচ ও আজ মহুয়াকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল। একটু কড়া ভাষায় না বললে, মহুয়া হয়তো বিষয়টা খেয়াল করতো না। এখন ও বুঝেছে। ও আর আমার বরের আশেপাশে যাবে না।”
মারিয়া মহুয়ার পাশে বসে বলল,
“রাগ করিস না, চান্দু। আমার আসলে ভালো লাগে নি ওসব।”
মহুয়া কিছু না বলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। আর মারিয়া চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়লো। মহুয়ার হাতে ফোন। এই ফোনটি মহুয়া আর মারিয়া দু’জনই ব্যবহার করে। এতোদিন ঘুমানোর আগে তাদের ফোনটি আরিয়াকে জমা দিয়ে দিতে হতো। কিন্তু মারিয়ার বিয়ের পর থেকে ফোনটি রাতেও তাদের সঙ্গী হয়। ফোনটির ওয়ালে মারিয়া ও মহুয়ার ছবি। ছবিটির দিকে তাকিয়ে মহুয়া মনে মনে বললো,
“মারু, বিয়ের পর তুই অনেক পাল্টে গিয়েছিস। তুই হয়তো এই প্রথম আমার সাথে ওমন করে কথা বলেছিস। তোর এখন প্রহর ভাইয়া আছেন। তাই হয়তো বুঝতে পারছিস না যে তোর কথাগুলো আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। আজ আমি প্রথম তোর চোখে আমার প্রতি ঘৃণা দেখেছি। অথচ সেই চোখ দুটিতে এতোদিন ভালোবাসা ছিল। তুই কেন আমাকে সন্দেহ করছিস, মারু?”
মহুয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
“শুনেছি, মেয়েরা যা বুঝে, একজন স্ত্রী, তার চেয়ে বেশি তার স্বামীকে বুঝে। তাহলে কি মারিয়ার সন্দেহ ঠিক? প্রহর ভাইয়াকে কি সত্যি আমাকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছিলো? কিন্তু কেন?”
মহুয়ার মনে মনে একটা ভালো লাগা সৃষ্টি হচ্ছে। সে এই ভালো লাগাটা বুঝতে পারার সাথে সাথেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে বলল,
“প্রহর ভাইয়া আমাকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, এটাতে আমার এতো ভালো লাগছে কেন? ছি! ছি! আমি অনেক খারাপ হয়ে যাচ্ছি। আমার চিন্তাভাবনা অনেক নোংরা হয়ে যাচ্ছে। আমি এখন থেকে প্রহর ভাইয়া থেকে দূরত্ব রেখে চলবো।”
অন্যদিকে প্রহর বিছানায় শুয়ে আনমনে হাসছে। আজ সে তার মায়াবিনীর সাথে অনেক কথা বলেছে। মায়াবিনী সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনেছে। এতোটুকুতেই সে সন্তুষ্ট। এবার হয়তো মায়াবিনী প্রতিদিন তার কল্পনায় আসবে।
একটা মানুষকে প্রথম দেখলে হয়তো আংশিক অনুভূতি সৃষ্টি হয়, আর বারবার দেখলে অনুভূতিটা গাঢ় হতে থাকে। কিন্তু এবার তো সে মায়াবিনীকে জানতে শুরু করেছে। এখন এই মায়া যদি ভালোবাসায় পরিনত হয়ে যায়, তাহলে তো তার পক্ষে মারিয়ার সাথে সংসার করা সম্ভব হবে না। তাহলে কি সে এখন মারিয়াকে ছেড়ে দেবে? কিন্তু এসব অনেক জটিল কাজ। একটা ভদ্র পরিবারের ছেলে হয়ে, সে এমন কাজ করতে পারবে না। কিন্তু এই অনুভূতিকে যে কোনোভাবেই আটকানো যাচ্ছে না!
৬২।
রান্নাঘর গুছিয়ে সূচনা ঘরে ঢুকেই থমকে গেলো। পুরো ঘর মোম দিয়ে সাজানো। সূচনা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। তার ঠোঁটে হাসির রেখা। সে সামনে তাকিয়ে দেখলো, মাহাথি বেডের উপর ফুল ছিটিয়ে দিচ্ছে। সূচনা অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো, “মাহা!”
মাহাথি হাত থেকে ফুলদানিটা টেবিলের উপর রেখে বলল,
“এসব তোমার জন্যই।”
সূচনা ফুলদানিটির দিকে একনজর তাকিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,
“এতো রাতে তুমি ফুল কোথায় পেয়েছো?”
মাহাথি ইশারায় ফুলদানিটি দেখিয়ে দিলো। সূচনা বেড থেকে ফুলগুলো হাতে নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“এসব আমার জন্য?”
মাহাথি আমতা-আমতা করে বললো,
“তুমি রেগে যাচ্ছো কেন? আর এসব কৃত্রিম ফুল দিয়ে কি করবে বলো? কিছুদিন পর পর ময়লা হবে, আর এরপর ধুয়েমুছে পরিষ্কার করতে হবে। এছাড়া এসব কোনো কাজের না। তাছাড়া বাসায় এমন কৃত্রিম ফুল অনেক আছে। আর এতো রাতে ফুল কোথায় পাবো? আর ছাদেও উঠেছিলাম, কিন্তু গাছে ওতো ফুল ধরে নি। আর মা বলেছিল, রাতে ফুল ছেঁড়া ভালো না। তাই ভেবেছি, অন্য দম্পতিরা না হয়, তাজা ফুল দিয়ে বাসর সাজায়, কিন্তু মাহা তো তার টুকটুকির জন্য ভিন্ন কিছু করবে। তাই কৃত্রিম ফুলগুলো কেটে তোমার জন্য বাসর সাজালাম।”
সূচনা মুখ ফুলিয়ে বিছানায় বসলো। এবার মাহাথি হাঁটু ভাঁজ করে বসে সূচনার দিকে একটি প্যাকেট এগিয়ে দিলো। সূচনা প্যাকেটটি মুখ চেপে হাসলো। আর বলল,
“তুমি এসব কবে কিনেছো? আর এসবের কি দরকার ছিল? শুধু শুধুই খরচ। ”
কথাগুলো বলতে বলতেই প্যাকেট খুলে সূচনা স্তব্ধ হয় গেলো। আর চেঁচিয়ে বললো,
“মাহা! এসবের মানে কি?”
মাহাথি চোখ বন্ধ করে বলল,
“কেন তোমার পছন্দ হয় নি?”
“এটা তো পুরোনো শাড়ি!”
“হ্যাঁ, কিন্তু তুমি মনে মনে ভাববে, এই শাড়িটা আজই কিনেছি। আর এতো রাতে শাড়ি কোথা থেকে কিনবো বলো? তাই এখন মনে করো, এটাই তোমার উপহার।”
“রাখো, তোমার উপহার! পুরোনো শাড়ি প্যাকেটে মুড়িয়ে দিতে আজ প্রথম দেখলাম, আর এখন নাকি মনে করবো এটা নতুন শাড়ি!”
“তুমিই তো বলেছো, জীবনে কোনো ফ্যান্টাসি করতে পারলে না। তাই এখন এটাই আমাদের ফ্যান্টাসি ওয়ার্ল্ড। এখানে সবকিছুই ধরি বা মনে করি।”
“কিন্তু আমার দৃষ্টিতে..”
সূচনাকে থামিয়ে দিয়ে মাহাথি বলল,
“তুমিই বলেছিলে, নতুন শাড়ির প্রয়োজন নেই। আবার এখন এটা নিয়ে ঝগড়া করছো।”
সূচনা দাঁতে দাঁত চেপে বসে রইলো। মাহাথি বলল,
“যাও ফ্রেশ হয়ে শাড়িটা পরে এসো।”
সূচনা ফ্রেশ হয়ে শাড়ি পরে বের হয়ে দেখলো মাহাথি দুটো হেডফোন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সূচনা এগিয়ে এসে বলল,
“এখন এটা বলো না যে, মনে করো এই হেডফোন দুটির একটি চুলের মালা, আরেকটি গলার হার।”
মাহাথি হেসে বলল, “আরেহ না।”
মাহাথি সূচনার কানে হেডফোন গুঁজে দিয়ে বলল,
“বাইরে যাতে গানের শব্দ না যায়, তাই অনেক যুদ্ধ করেই মাফিন থেকে নিয়ে এলাম। ও তো ওর হেডফোন কাউকে দিতেই চায় না।”
এরপর মাহাথি হেডফোন দু’টি ব্লুটুথ দিয়ে সংযুক্ত করে গান ছেড়ে দিলো। কানে বাজছে, ‘তাকে অল্প কাছে ডাকছি’ গানটি।
মাহাথি আর সূচনা এবার একসাথে নাচবে। কিন্তু যেই না মাহাথি সূচনাকে ঘুরিয়ে আনতে যাবে, মাহাথির আঙ্গুলটা সূচনার হাত থেকে ফসকে গেলো আর সাথে সাথেই সূচনা পিছলে পড়ে যেতে নিলে মাহাথি সূচনাকে ধরে ফেলল।
মাহাথি বলল, “ঠিক আছো?”
সূচনা রাগী কন্ঠে বললো,
“তোমার পা লেগে আমার শাড়ির কুঁচি আলগা হয়ে গেছে। ঠিকভাবে নাচতেও জানো না?”
“তুমিও তো জানো না। হাত ফসকেই পড়ে যাচ্ছিলে। ভাগ্যিস ধরলাম।”
সূচনা ভেংচি কেটে বলল,
“তুমি জানলেই তো আমি জানতাম। আমার তো তুমিই একমাত্র প্রেমিক ছিলে।”
মাহাথি সূচনাকে দাঁড় করাবে তখনই সূচনার আলগা হয়ে যাওয়া কুঁচির উপর পা পড়তেই মাহাথি সূচনাকে নিয়েই এবার পিছলে বেডের উপর ধপাস করে পড়লো। মাহাথি মাথা তুলে সূচনার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ভিডিওতে দেখলাম, ওরা কতো সুন্দর নাচলো। আর আমি শুধু তোমাকে নিয়ে আছাড় খেলাম।”
সূচনা হেসে বলল,
“ভাগ্যিস আছাড় খেয়ে বেডেই পড়েছি। মেঝেতে পড়লে আমি তোমার রোমান্টিক অনুভূতির বারোটা বাজাতাম।”
“আমার কিন্তু এখনো প্রেম-প্রেম অনুভূতি হচ্ছে।”
সূচনা বেডের উপর পড়ে থাকা কৃত্রিম ফুলগুলো মাহাথির দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল,
“নাও, কৃত্রিম ফুলের সাথেই প্রেম করো।”
মাহাথি সূচনার হাত ধরে বলল,
“কৃত্রিম ফুলের কি দরকার যদি আমার কাছে ফুলি থাকে।”
সূচনা ভ্রূ কুঁচকে বলল, “ফুলি আবার কি?”
“তুমি আমার ফুলি।”
“ইস, মাহা। তুমি এসব উদ্ভট নাম আমাকে দিও না তো! ফুলি কোনো নাম হলো?”
“তুমি এই মাসে আমার ফুলি হয়েই থাকবে। অনেকদিন তো টুকটুকি হয়েই ছিলে।”
এভাবেই কেটে গেলো ফুলি আর মাহার নতুন বাসর রাত।
চলবে-