রংধনুর_আকাশ #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ পর্ব-৩৭

0
436

#রংধনুর_আকাশ
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-৩৭

৬০।
আরিয়া ফেরদৌস আজ প্রহরকে দুপুরে বাসায় আসতে বলেছেন। যেহেতু মারিয়ার সামনে এইচ.এস.সি পরীক্ষা, তাই এখন সে মোটামুটি পড়াশুনা নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। কিন্তু পড়াশোনার ফাঁকে তো একটু ভালো মুহূর্তও প্রয়োজন। যেই মুহূর্ত মনকে ফুরফুরে রাখবে। তাই আরিয়া ভেবেছেন, মারিয়া ও প্রহর যদি একা কিছুক্ষণ সময় কাটায়, তাহলে মারিয়ার মন কিছুটা হালকা হবে। তবে মারিয়া এখনো জানে না যে প্রহর আজ বাসায় আসবে। সে গত দুই রাত জেগে পড়াশুনা করেছে, তাই এখন বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।

এদিকে মেয়ের জামাই আসবে তাই আরিয়া ফেরদৌস বিভিন্ন পদের খাবার তৈরি করছেন। পাশাপাশি সূচনাও শাশুড়ীকে সাহায্য করছে। মাহাথির আজ অফিসে জরুরি কাজ থাকায়, তার বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাবে। তবে মাফিন আজ অফিসে যায় নি। সে সারারাত বন্ধুর বাসায় বসে খেলা দেখে, ভোরে বাসায় ফিরেছে। আর সেও এখন ঘুমোচ্ছে।

কলিংবেলের শব্দ শুনেই মহুয়া দরজা খুলে দেখলো, প্রহর এসেছে। প্রহর মহুয়াকে দেখেই মুচকি হাসলো। মহুয়া প্রহরকে সালাম দিয়ে বাসায় আসতে বললো। প্রহর ঘরে ঢুকেই মহুয়ার হাতে কিছু মিষ্টির প্যাকেট ধরিয়ে দিলো। আর মহুয়াও চুপচাপ প্যাকেটগুলো নিয়ে কিছু না বলেই চলে গেলো। প্রহর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে এদিক-ওদিক তাকিয়ে নিজ থেকেই বসার ঘরে গিয়ে বসলো। প্রায় দশমিনিট পর আরিয়া ফেরদৌস বসার ঘরে এলেন। প্রহর শাশুড়ীকে দেখে সালাম দিলো। আরিয়া ফেরদৌস সালামের উত্তর নিয়ে বললেন,
“কিছু মনে করো না প্রহর, একটু দেরী হয়ে গেলো।”

“না, না সমস্যা নেই।”

“আসলে মারিয়া ঘুমোচ্ছে। কাল সারারাত পড়াশুনা করেছে তো! তুমি আসবে তা মারিয়া এখনো জানে না। জানলে পড়াশুনা না করে সারাদিন আয়নার সামনে বসে থাকতো।”

প্রহর কথাটি শুনে হালকা হাসলো আর বলল,
“ভাইয়াদের দেখছি না?”

“মাহাথির অফিসে জরুরি কাজ আছে। ও আসতে পারবে না। আর মাফিন ওর ঘরে ঘুমোচ্ছে। কাল সারারাত বসে খেলা দেখেছে তো, তাই। আচ্ছা, তুমি বসো। আমি ওদের ডেকে দিচ্ছি।”

আরিয়া ফেরদৌস উঠে চলে গেলেন। তারপর মহুয়াকে বললেন, মাফিন ও মারিয়াকে ডেকে দিতে। কিন্তু মারিয়াকে তো ধাক্কা দিয়েও উঠানো যাচ্ছে না। আর এদিকে মাফিনকে ঘুম থেকে ডাকার সাহস মহুয়ার নেই। এর আগেও সে একবার মাফিনকে ঘুম থেকে ডেকেছিল, বিনিময়ে মাফিন তাকে এক ধমক দিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়েছিল।

মহুয়া রান্নাঘরে এসে বলল,
“মা, মারিয়া ঘুম থেকে উঠছে না। আর ভাইয়ার ঘুম সম্পূর্ণ না হলে, ভাইয়া তো পুরো ঘর মাথায় তুলবে। তাই আমি ভাইয়াকে ডাকতে পারবো না। ডাকতে গেলে আবার দুলাভাইয়ের সামনে বকাঝকা করে, আমার মান-সম্মান শেষ করে দেবে।”

আরিয়া ফেরদৌস কিছুক্ষণ ভেবে বললেন,
“তাহলে তুই-ই যা।”

“না, আমার লজ্জা করছে।”

আরিয়া সূচনার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“এই মেয়ে বলে কি?”

তারপর মহুয়ার দিকে তাকিয়ে আবার বললেন,
“লজ্জা কেন করবে? প্রহর তো তোর দুলাভাই। আমরা আমাদের দুলাভাইদের সাথে কতো গল্প করেছি। আর তোর লজ্জা করছে?”

মায়ের কথা শুনে মহুয়া একপ্রকার বাধ্য হয়েই বসার ঘরে গিয়ে বসলো। প্রহর মহুয়াকে দেখে কিছুটা নড়েচড়ে বসলো। মহুয়া বলল,
“মারিয়া ঘুম থেকে উঠছে না।”

প্রহর বলল, “ওহ, আচ্ছা। সমস্যা নেই। ও ঘুমাক।”

এরপর তারা কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলো। প্রহর বুঝতে পারলো, মহুয়া নিজ থেকে একটা কথাও বলবে না। তাই সে নিজেই মহুয়াকে এটা-সেটা জিজ্ঞেস করতে লাগলো। এরইমধ্যে আধাঘন্টা পার হয়ে গেলো। আর তাদের কথোপকথনও খুব জমে উঠলো। হুট করে কখন যে মহুয়ার জড়তা কেটে গেলো, তা সে বুঝতেও পারলো না। এখন মহুয়ার মাঝে কোনো ইতস্ততভাব নেই। যেন অনেকদিন পর সে মনের কথা বলার মতো সঙ্গী পেয়েছে। আর মহুয়া কিছু বলার আগেই সেই সঙ্গীটিও বুঝে ফেলছে মহুয়া কি বলতে চায়।

তারা হেসে হেসেই গল্প করছিল। তাদের গল্পের মূল বিষয় হলো, এতোদিন তারা কি কি বই পড়েছে, কোন বইটি কেমন লেগেছে, আর বইয়ের সাথে বাস্তবতার কি মিল দেখেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। তাদের গল্পের ফাঁকে কোনো বিরাম নেই। যেন ঘন্টার পর ঘন্টা এভাবেই কাটিয়ে দিলেও বিরক্তি আসবে না। কিন্তু তাদের এই গল্পের মাঝখানে হঠাৎ মারিয়া চলে এলো।

মারিয়া ঘুম থেকে উঠেই জানতে পারলো প্রহর এসেছে। এই কথা শুনে সে আর দেরী না করে, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলো, আর আলমারি খুলে সবচেয়ে সুন্দর জামাটি পরে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ালো। তারপর কিছু একটা ভেবে মুচকি হেসে ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক দিয়ে বসার ঘরে এসে দেখলো, প্রহর মহুয়ার সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। প্রহরকে এভাবে হাসতে দেখেই মারিয়ার চোখেমুখে অভিমান ভীড় করলো। এদিকে প্রহর আর মহুয়া, মারিয়াকে খেয়ালই করে নি। তাই মারিয়াও আর তাদের সামনে না গিয়ে পর্দার আড়ালে সরে দাঁড়িয়ে তাদের কথা শোনার চেষ্টা করতে লাগলো। প্রহর মহুয়াকে বলল,
“তুমি আসলেই খুব সুন্দর করে কথা বলো। তুমি বড় হয়ে ভালোই বক্তা হবে।”

মহুয়া হেসে বলল,
“বক্তা হওয়ার মতো সাহস আমার নেই। আমি তো কারো সামনে গুছিয়েই কথা বলতে পারি না।”

“আমার সামনে তো ঠিকই বলতে পারছো। থাক সমস্যা নেই। আমি শিখিয়ে দেবো তোমাকে। তখন সবার সাথেই গুছিয়ে কথা বলতে পারবে।”

মারিয়া পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলল,
“মহুয়া তো কোনো ছেলের সাথেই কথা বলতে চায় না, তাহলে আমার বরের সাথে এভাবে কেন কথা বলছে? আর প্রহর তো আমার সাথেই ঠিকভাবে কথা বলে নি। তাহলে মহুয়ার সাথে এখন এভাবে কেন কথা বলছে?”

মারিয়া এবার নিজেকে স্বাভাবিক করে তাদের সামনে এসে দাঁড়ালো। মারিয়াকে দেখে প্রহর চমকে উঠলো। তার মনে হচ্ছে, এতোক্ষণ সে সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলো, আর মারিয়া আসায় সেই স্বপ্ন ভেঙে গেলো। মারিয়া এসে সোজা প্রহরের পাশে বসে পড়লো। প্রহর হালকা হেসে বলল,
“কেমন আছো, মারিয়া?”

মারিয়া মুচকি হেসে বললো,
“একদমই ভালো ছিলাম না। সারাদিন পড়া, পড়া আর পড়া। তবে এখন আপনাকে দেখে অনেক ভালো লাগছে।”

প্রহর হাসলো। হঠাৎ মহুয়া বলল,
“আচ্ছা, আমি আসছি।”

মহুয়া চলে যাওয়ার পর প্রহর আবার চুপচাপ বসে রইলো। মারিয়া প্রহরের পাশে বসে ভাবতে লাগলো,
“মহুয়ার সাথে তো উনি এতোক্ষণ কথা বলছিলো। তাহলে আমি আসার পর আবার চুপ হয়ে গেলেন কেন?”

মারিয়া প্রহরকে বলল, “আপনি কিছু বলবেন না?”

প্রহর মারিয়ার দিকে ঝুঁকে বলল,
“তা কি অবস্থা তোমার?”

মারিয়া একটু অভিমানী কন্ঠে বললো,
“দেখতেই তো পারছেন। আবার জিজ্ঞেস করছেন কেন?”

মারিয়া এবার মনে মনে বলল,
“ঘুরেফিরে একটাই প্রশ্ন, কি অবস্থা? কেমন আছো? উনার কি আর প্রশ্ন নেই?”

এদিকে মারিয়ার উত্তর শুনে প্রহর কিছুটা বিরক্ত হলো। সে ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“এভাবে কথা বলছো কেন?”

“আমি এভাবেই কথা বলবো।”

মারিয়া কথাটি বলেই অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। সে ভেবেছে, প্রহর তার অভিমান বুঝতে পারবে। কিন্তু উলটো প্রহরই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে। মারিয়া যখন দেখলো, প্রহর তার রাগ ভাঙাচ্ছে না, তখন সে নিজেই প্রহরের অনেক কাছে চলে এলো। প্রহর মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কি করছো তুমি?”

মারিয়া কোনো উত্তর না দিয়ে প্রহরকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমি আপনাকে অনেক মিস করেছি।”

প্রহর মারিয়ার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বলল,
“কি করছো তুমি এসব? হঠাৎ কেউ চলে এলে, কি মনে করবে? মারিয়া ছাড়ো। প্লিজ।”

মারিয়া মুখ বাঁকিয়ে প্রহরকে ছেড়ে দিয়ে বলল,
“আমার আর এখানে ভালো লাগছে না।”

প্রহর ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “কেন?”

“জানি না।”

প্রহর আবার চুপ করে রইলো। মারিয়া এবার প্রহরের গাল টেনে ধরে বলল,
“আমাকে কখন আপনার সাথে নিয়ে যাবেন?”

প্রহর মারিয়ার হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
“কেউ দেখলে কি বলবে? এমন করছো কেন তুমি? একটু সুন্দর করে বসো।”

“আমি আবার অসুন্দর করে কখন বসলাম?”

প্রহর কোনো উত্তর না দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। মারিয়া আবার বলল,
“বলছেন না কেন?”

প্রহর ভ্রূ কুঁচকে বলল, “কি বলবো?”

“আমাকে আপনার বউ করে আপনার বাসায় কবে নিয়ে যাচ্ছেন?”

“এসব তো তোমার পরীক্ষার পর হবে।”

“না, আমি এখনি বিয়ে করবো।”

“বিয়ে তো হয়েই গেছে। শুধু আনুষ্ঠানিকতা বাকী।”

“ওইটাই করবো।”

“হঠাৎ এই কথা কেন বলছো?”

“কেন বলবো না বলুন? আপনি আমার বিয়ে করা বর, অথচ আমার বর আমার সাথে একটুও কথা বলে না। চুপচাপ থাকে। তাই ভাবছি, একদম আপনার সাথে চলে যাবো। তখন কথা না বললেও সমস্যা নেই। চোখে চোখে তো রাখা যাবে।”

কথাটি বলেই মারিয়া ভ্রূ নাচালো। কিন্তু প্রহর কিছুই বললো না। হঠাৎ মহুয়া এসে নাস্তার ট্রে টেবিলের উপর রেখে বলল,
“ভাইয়া, নাস্তাটা করে নিন।”

প্রহর মুচকি হেসে মহুয়াকে বলল,
“আচ্ছা, তুমি বসো।”

মহুয়া সোফায় বসার পর প্রহর বলল,
“এগুলো তুমি বানিয়েছো?”

মহুয়া বলল,
“না, না, এগুলো ভাবী বানিয়েছেন।”

“ওহ, তুমি নাস্তা বানাতে পারো না?”

“হ্যাঁ, পারি। কিন্তু অতিথিদের জন্য কখনো বানাই নি। মা বানাতে দেয় নি। যদি উল্টোপাল্টা হয়ে যায়?”

“ওহ আচ্ছা।”

মারিয়া তাদের কথোপকথন শুনে মনে মনে বলল,
“প্রহর তো আমাকে একবারো জিজ্ঞেস করে নি, আমি কি কি বানাতে পারি, তাহলে মহুয়াকে কেন জিজ্ঞেস করলো? হ্যাঁ, আমি হয়তো কিছু বানাতে পারি না। কিন্তু প্রহর তো অন্তত জিজ্ঞেস করতে পারতো। তখন না হয় বলতাম, পারি না। কিন্তু সেটাও তো করলো না।”

মারিয়া এবার তাদের কথার মাঝখানেই বলে উঠল,
“মা বাসায় না থাকলে, মহুয়া রান্নাঘরেই ঘুরঘুর করে। কিন্তু আমি তো রান্নাঘরে ভালোভাবে দাঁড়াতেই পারি না। এতো গরম রান্নাঘরে! তাই আমি এখনো কিছুই বানাতে পারি না। এমনকি আমার আইডিয়াও নেই। তবে এখন আমি শিখে নেবো, কেমন?”

তারপর মহুয়ার দিকে তাকিয়ে সে আবার বলল,
“চান্দু, তুই আমাকে শিখিয়ে দিস, ঠিক আছে?”

মহুয়া হেসে বলল,
“ঠিক আছে। ভাইয়া তো হালিম বেশি পছন্দ করে, আর হালিম রান্না করা অনেক সোজা। আমি তোকে ওইটাই প্রথমে শিখিয়ে দেবো।”

মারিয়া মনে মনে বলল,
“প্রহর হালিম পছন্দ করে। অথচ আমিই জানি না। কিন্তু মহুয়া কিভাবে জানলো?”

এভাবে মারিয়ার সামনে প্রহর মহুয়ার সাথে বিভিন্ন বিষয়েই কথা বলছে, অথচ মারিয়ার সাথে কোনো কথায় বলছে না। বরং মারিয়াই নিজ থেকেই তাদের কথার মাঝখানে টুকটাক কথা বলছে। বিষয়টা প্রহর আর মহুয়া বুঝতেই পারি নি। কিন্তু যে উপেক্ষিত হচ্ছে, সে মানুষটি ঠিকই বুঝে গেছে। তাই সে সোফা ছেড়ে উঠে বলল,
“তোমরা গল্প করো। আমি আসছি।”

মারিয়া নিজের ঘরে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর ঠোঁটের লিপস্টিক মুছে সাথে সাথেই জামা পাল্টে বাসার জামা পরে নিলো। তারপর ফোন হাতে নিয়ে বিছানায় ধপ করে শুয়ে পড়লো। কিছুক্ষণ পর মহুয়া ঘরে এসে বলল,
“মারু, ভাইয়াকে একা বসিয়ে রেখে তুই এখানে কি করছিস?”

মারিয়া মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“একা কেন থাকবে? তুই তো আছিস।”

“আরেহ, উনি তো তোর সাথে দেখা করতে এসেছে।”

“আমার তো মনে হচ্ছে তোর সাথে গল্প করতে এসেছে।”

মহুয়া দরজা বন্ধ করে মারিয়ার পাশে বসে বলল,
“কি যা তা বলছিস, মারিয়া?”

“যা তা বলছি না। ঠিক কথায় বলছি। তোর কি মনে হয় নি আমার বর আমার চেয়ে তোকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছিলো?”

“আমার এমন কিছুই মনে হয় নি। তুই উনার বউ। তোকে গুরুত্ব না দিয়ে আমাকে কেন দেবে? আজ আমার সাথে উনার প্রথম কথা হয়েছে, তাই হয়তো একটু বেশি কথা বলেছি মনে হচ্ছে।”

“আজ প্রথম কথা হয়েছে, আর আজই তার পছন্দ জেনে ফেলেছিস?”

“প্রসঙ্গক্রমে এই কথা উঠেছিল।”

“তাহলে আমার সাথে কেন এমন প্রসঙ্গে কথা উঠে নি?”

মহুয়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,
“প্লিজ বোন, তুই নেগেটিভ কিছু ভাবিস না।”

“সবকিছুই নেগেটিভ হচ্ছে, আর আমি নেগেটিভ ভাবলে দোষ?”

“ঢুকতেই তো দেখলাম, ভাইয়া তোর হাত ধরে ছিল। তোদের মধ্যে তো সব ঠিকই আছে, তাহলে নেগেটিভ ভাবছিস কেন?”

মারিয়া রাগী কন্ঠে বললো,
“কি বলতে চাইছিস তুই, হ্যাঁ? উনি আমার হাত ধরবে এটাই তো স্বাভাবিক। উনি আমার বর। তোর বর না যে তোর হাত ধরবে।”

মহুয়া অবাক দৃষ্টিতে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই প্রথম মারিয়া তার সাথে এভাবে কথা বলছে। কিন্তু কেন? মারিয়া কি তাহলে প্রহরকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে?

এদিকে মারিয়া মনে মনে বলল,
“উনি আমার হাত ধরে নি। আমিই জোর করে উনার হাত ধরেছি। তাহলে কি সত্যিই আমাদের মধ্যে কিছুই স্বাভাবিক নেই? উনি কি আমাকে পছন্দ করেন না? কিন্তু আমার অপরাধটা কি? কেন আমাকে পছন্দ করবে না? উনি তো দেখেশুনেই আমাকে বিয়ে করেছেন?”

মহুয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“আই এম সরি, মারিয়া। আমার ভাইয়ার সাথে ওভাবে কথা বলা উচিত হয় নি। আই প্রমিজ, আমি আর উনার সাথে কখনোই কথা বলবো না। তবুও তুই আমার সাথে এভাবে কথা বলিস না। শুধু শুধু ভুলভাল সন্দেহের কারণে আমি তোকে হারাতে চাই না। মারিয়া, সরি।”

মারিয়া মহুয়াকে সরিয়ে দিয়ে বলল,
“তুই আপতত আমাকে একা থাকতে দে। এখন যা এখান থেকে।”

মহুয়া রুম থেকে বের হতে যাবে তখনই মারিয়া বলে উঠলো,
“তুই কিন্তু প্রমিজ করেছিস আর প্রহরের সাথে কথা বলবি না। এখন প্রমিজটা মনে রাখিস কিন্তু।”

মহুয়া এক দৃষ্টিতে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। তার মনের মধ্যে এক অদ্ভুত যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়েছে। এই যন্ত্রণা কি মারিয়া তার সাথে রাগ করে আছে তাই, নাকি প্রহরের সাথে আর কথা বলতে পারবে না তাই?

দুপুরে আরিয়া ফেরদৌস, সূচনা, মাফিন, প্রহর আর মারিয়া খাবারের টেবিলে এসে বসলো। মারিয়া চুপচাপ খেয়ে যাচ্ছে। আর মহুয়া পরে খাবে বলে আর ডায়নিংয়ে আসে নি।

এদিকে দুপুরে খাওয়ার পর মারিয়া ও প্রহরকে রুম ছেড়ে দিয়ে মহুয়া চুপচাপ বেরিয়ে পড়লো। আর প্রহর বুঝতে পারলো, দুই বোনের মধ্যে কোনো ঝামেলা হয়েছে।
প্রহর মারিয়াকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবে, তখনই মারিয়ার ফোন বেজে উঠলো। মারিয়া ফোন হাতে নিয়ে দেখলো নিবিড়ের কল এসেছে। সে মনে মনে ভাবল,
“নিবিড় হঠাৎ কেন ফোন করেছে?”

সে এবার একনজর প্রহরের দিকে তাকিয়ে ভাবলো,
“তখন তো তুমি মিঞা আমার সামনে আমার বোনের সাথে পাকনামো করছিলে। এখন আমি তোমার সামনে আমার বন্ধুর সাথে পাকনামো করবো। তখন বুঝবে ছ্যাকা খেলে কেমন অনুভূত হয়।”

মারিয়া কল রিসিভ করেই নিবিড়ের সাথে রসিয়ে কথা বলতে লাগলো। ফোনের ওপাশে নিবিড় তো অবাক। সে মনে মনে ভাবল,
“তুই তো থেকে হুট করে তুমি কখন হলাম?”

নিবিড় শান্ত কন্ঠে বললো,
“তোমার কি শরীর খারাপ? পাগল টাগল হয়ে গেলে নাকি?”

মারিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“তুমি কি যে বলো না! বিয়ে হয়ে গেছে আমার! এখন আর ওভাবে প্রশংসা করো না তো।”

“আমি আবার কখন প্রশংসা করলাম? নেশা করেছো নাকি?”

“আচ্ছা, তুমি একটু বেশিই বলে ফেলেছ আজ। কালকে কলেজে দেখা হবে। তারপর না হয় তোমাকে বাকিটা বুঝিয়ে দেবো।”

“কি বুঝিয়ে দেবে?”

“বিক্রিয়া? রাসায়নিক বিক্রিয়ার অধ্যায়টি বুঝিয়ে দেবো।”

মারিয়া বিড়বিড় করে বলল,
“তোকে আমি মেরে জীবাশ্ম জ্বালানী বানাবো।”

চলবে–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here