#বৃষ্টির_রাতে
#রূবাইবা_মেহউইশ
(২০)
“এটাই তো বারো নম্বর বাড়ি ? বাড়ির নম্বর তো নেই দেখছি গেইটের পাশে।”
তাসিনের এমন প্রশ্নে রিকশাওয়ালা বিরক্ত হলো খুব।
“কয় বার এক কথা কইবেন ভাই এইডাই সেই বিল্ডিং।”
ভাড়া মিটিয়ে একবার বিল্ডিংয়ের উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে নিলো। পাঁচতলা একটা সাধারণ খুব বড় বিল্ডিং। গেইট দেখে মনে হচ্ছে ভেতরেও জায়গা অনেক কিন্তু কথা হলো তাকে যার রিসিভ করার কথা ছিল সেই ব্যক্তি সকাল থেকেই ফোন তুলছে না। সারারাত জার্নি শেষে ভেবেছিল গন্তব্যে পৌঁছে একটা লম্বা ঘুম দিবে তার আর হলো না। সকাল বাজে নয়টা লোকটা ঘুমিয়ে থাকলেও এতক্ষণে নিশ্চয়ই জেগে যাওয়ার কথা! ফোনে কাঙ্খিত ব্যক্তিটিকে না পেয়ে বাধ্য হয়েই বসকে ফোন করে এক্সাক্ট লোকেশন জেনে নিজেই রিকশা করে চলে এসেছে তাসিন। এখন গেইটে ধাক্কা দিয়ে বুঝলো গেইটের ওপাশে দারোয়ান নেই৷ অথচ বড় এক কোম্পানির গেস্ট অফিসারস বিল্ডিংয়ের এই দশা থাকার কথা নয়। অন্তত যে ক’মাস ধরে সে চট্টগ্রামের অফিসটাতে আছে তাতে এমন অনেক ব্যপারই সে জেনেছে। মিনিট কয়েক গেইটে ধাক্কাধাক্কির পর টের পেল কেউ একজন গেইটের কাছে আসছে। স্থির হয়ে এবার অপেক্ষা করতেই ওপাশের ব্যক্তিটি গেইটের ছোট দরজাটা খুলে জিজ্ঞেস করলো কাকে চাই? তাসিন ছোট করে নিজের নাম এবং আসার কারণ জানাতেই লোকটা হায় হায় করে উঠলো। বলল, শফিক সাহেব তো সেই ভোরে তাকে আনতে গিয়েছিলো কিন্তু না পেয়ে ফিরে এসেছে। এরপর শফিক সাহেব বাজারে জন্য চলে গেছেন হয়ত ফোনটা সাথে নেননি। তাসিনের আপাতত এ বিষয়ে আর কিছু শুনতে ইচ্ছে করছে না বলে তার রুমে যেতে চাইলো। দারোয়ান নিজেই তাকে নিয়ে উঠে গেল তিন তলার ডানদিকের ফ্ল্যাটে। তাসিন লক্ষ্য করেছিলো নিচ তলাটা একটা গ্যারেজ সেখানে একটা গাড়ি আছে তবে গ্যারেজটা বিশাল বড়। মনে মনে ভাবলো সে কি নিজের গাড়িটা নিয়ে আসলে পারতো না! তিন তলার যে এপারমেন্টে তারা ঢুকলো সেটিও বিশাল সাইজের। মেইন ডোর দিয়ে ঢুকতেই প্রথমে চোখে পড়ে অনেকটা খোলা জায়গা যেমনটা ফ্ল্যাটগুলোতে ড্রয়িংরুমের জন্য করা হয় তেমন। মনে মনে সে বেশ খুশিই হলো এত বড় ফ্ল্যাট দেখে। তখনো সে জানতো না চমকটা এখনও বাকি। পুরো খালি জায়গাটুকগ থেকে চোখ সরাতেই আবার চোখে পড়লো বড় একটা ডাইনিং টেবিল আর তার পাশেই রান্নাঘর। আর সামনের দিকে চারটা দরজা। মনে মনে ভেবে নিলো একটা বাথরুম বাকি তিনটা কি বেডরুম! তার ভাবনার ঘোর ভাঙলো দারোয়ানের ডাকে, “স্যার আসেন এইপাশের দুই রুমে তো দুই স্যার আগেই ঢুইকা গেছে খালি আছে এইপাশের দুইটা। আপনের রুমের নাম্বার কত?”
দুই রুমের লোক এসে গেছে বাকি আর দুই রুম তার মানে কি এখানে চারটাই রুম তাহলে বাথরুমটা আবার কোথায়! চমক ভাঙছে না তার মনে মনে একটা না একটা ভেবেই চলছে সে। ফোন হাতে চেক করলো বসের দেওয়া হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজখানা। তিনতলার চৌদ্দ নম্বর রুম – গেস্ট নেম তাসিন মেহতাব। সে দেখলো দক্ষিণ দিকের কর্নারের ঘরটাই চৌদ্দ নম্বর। দারোয়ান রান্নাঘরের দরজার সামনে লাগানো একটা ছোট পেরেক মত কিছুতে চাবির রিং ঝোলানো তাতে আবার মার্ক করা রুম নম্বর। তাসিনের হাতে চাবিটা দিয়ে দ্রুত নিচে চলে গেল দারোয়ান। শুনশান ফ্ল্যাটটাতে সে একদম একা কিছু সময় ভূতগ্রস্তের মত চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। এই প্রথমবার বাড়ি থেকে দূর না না চেনা, আপন মানুষগুলো থেকে দূর এসেছে। আজ ভোর পর্যন্তও তার কোনরকম খারাপ লাগা ছিলো না এই নিয়ে কিন্তু এই মুহুর্তে ঝুপ করেই যেন এক আকাশ খারাপ লাগা নেমে এলো মনের ভেতর। ধীরে পায়ে নিজের রুমের দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকতেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো তার। এ কি অবস্থা! এই ঘর তো তাদের বাড়ির স্টোরঘরের চেয়েও ছোট। দমবন্ধকর অবস্থা ঘরে বিছানার পাশে একটা ছোট্ট জানালা আবার এইটুকু ঘরে আরও দুটো দরজা দেখে তাজ্জব বনে গেল। হাসফাস করতে করতে সে দুটো দরজাই খুলল৷ আহা! একটু শান্তি পেল প্রথম দরজাটা খুলেই। চমৎকার ছোট্ট এক টুকরো বারান্দা। দ্বিতীয় দরজা খুলে শান্তিটা আরেকটু বেশিই বেড়ে গেল তার। ছোটখাটো একটা ঝকঝকে বাথরুম। যদিও ছোট তবুও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এই বাথরুমটাই হলো সবচেয়ে প্রশান্তির জায়গা৷ দুনিয়ার সব সুখ ত্যাগেই আর প্রথম ত্যাগের জায়গা মানুষের বোধহয় বাথরুমই৷ এবার আর খারাপলাগাটা আগের মতো নেই। ঝটপট ব্যাগটা বিছানায় ফেলে ব্যাগ খুলে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বের করলো। ভাগ্যিস মা জোর করে একটা বিছানার চাদর দিয়েছিলো তাই প্রথম কাজ বিছানায় সেটায় বিছিয়ে নেওয়া। কিন্তু তার আগে হাত মুখ ধোয়াটা আবশ্যক তাই পরনের শার্ট খুলে মুখ হাত ধুয়ে নিলো। দ্রুত হাতে চাদরটা বের করে তার খাট বা ছোট্ট সিঙ্গেল চৌকি বিশেষটাতে বিছিয়ে নিলো৷ খেয়াল করলো না চাদরটা কতখানে এলোমেলো হয়ে আছে সে শুধু ঝট করে গা ছেড়ে দিলো বিছানায়। মাত্র কয়েক সেকেন্ড আর তাতেই শিয়রের কাছের জানালাটা দিয়ে জাপটে আসা এক ঝাক গরম বাতাসে তার স্বস্তি উড়ে গেল। ফ্ল্যাটের দরজাটা তো খোলা সেটা কি সে লাগিয়ে আসবে! আবার মনে পড়লো ফ্ল্যাটে নতুন মানুষজন তারা এখানে কি কোন পরিচারিকা হিসেবে কেউ নেই? নিয়ম-কানুন বলেও তো কিছু আছে সেসব কে জানাবে তাকে বা তাদের। আবার বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো৷ ব্যাগ থেকে একটা টিশার্ট বের করে গায়ে দিলো। পুরো রুমটাতে একটা খাট বাদে খাটের কার্নিশে আরেকটা ছোট্ট টেবিল এছাড়া আর কিচ্ছু নেই। কাপড়চোপড় রাখার মত একটা ড্রয়ার বা হ্যাঙ্গার কিছু দরকার। নিজের টুকটাক জিনিসপত্র রাখা নিয়ে চিন্তা নেই আপাতত সেই ছোট টেবিলটাতেই চলবে। ফোনটা হাতেই সে রুম থেকে বের হয়ে গেল৷ যে করেই হোক শফিক নামের লোকটাকে খুঁজে বের করতে হবে আপাতত এটাই তার মূল কাজ।
হোস্টেলে ফিরে টানা দু ঘন্টা আবারও ঘুমিয়েছে সুপ্রভা। তার মন ভালো নেই আবার অনেকটা ভালোও। মন ভালো না কারণ আসার সময় মায়ের ওপর রাগ থাকায় বড়দার সাথেও কথা বলেনি এখন বড়দার জন্যই খারাপ লাগছে এদিকে ফোনটাও ফেলে এসেছে। মেহরিন থাকলে না হয় একটা কল করে নিতো। আর মন ভালোও আছে কিছুটা ভোরের মুহূর্তগুলো মনে করে। তাসিনকে সে ইচ্ছে করেই সত্যিটা বলেনি। বাস গন্তব্যে পৌঁছানোর অনেক আগেই তার ঘুম ভেঙেছিল। ঘুম ভাঙতেই প্রথমে চমকে উঠে ভেবেছিলো আঁধারে হয়ত ভুলভাল দেখছে কিন্তু তার ভুল ভেঙেছে রাস্তার পাশের এক নিয়ন আলো তাসিনের মুখের ওপর পড়তেই। চলন্ত বাসে রাস্তার পাশের বাতির আলোগুলো জানালা টপকে হুট করেই মুখের ওপর পরে আবার সরে যাচ্ছে পেছনে। মাত্র সেকেন্ডের পরা আলোয় তাসিনের মুখটা চিনতে তার একটুও ভুল হয়নি। বাস তখন চলছিলো এই শহরেরই পথ ধরে। আফসোস হয়েছিলো খুব ঘুমটা তার কেন আরো আগে ভাঙেনি! তাসিনকে দেখেছে তাকে, খেয়াল করেছিলো একটিবার! ভাবতেই মনে হলো লোকটা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছে তাইতো এমন নিশ্চিন্তে মাথা এলিয়ে দিয়েছে তার দিকে৷ নির্লজ্জ লোক ইচ্ছে করেই এভাবে ঘুমে ঢলে পড়েছে নয়ত প্রথমবার তো এভাবে আসেনি। তখন তো কত সাবধানতার সাথে গা বাঁচিয়ে বসেছিল এমনকি চোখ লাগতেও তার সতর্কতা ছিলো। সে নিজেই উল্টো তাসিনের বুকে পড়ে ঘুমিয়েছিল অনেকটা পথ। মনে পড়তেই এবার লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে। সেই ভোরে কি এক ঘোরে যেন পেয়ে বসেছিল তাকে৷ আর আজ হলো তার উল্টোটা। এই লজ্জাময় পরিস্থিতির স্মৃতিচারণ করতেই মনটা ভালো হয়ে গেছে। ঝটপট এবার বিছানা ছেড়ে নিজেকে একটু গুছিয়ে নিলো। আজ তো ক্লাস করবে না কিন্তু বিকেলে একটু লাইব্রেরিতে যেতে হবে৷ কিছু নোটস কালেক্ট আর পড়াশোনাও করবে সেখানে বসেই। সকালের নাশতা করা হয়নি আজ তাই হয়ত খিদেটাও পেয়ে বসেছে খুব৷ কিন্তু এ সময়ে তো হোস্টেলে নাশতার জন্য মুখও খোলা যাবে না। দ্রুত হাতে ড্রয়ার খুলে একটা ড্রেস বের করে নিলো সুপ্রভা। সাদা আর আকাশ নীলের কম্বিনেশনে সুতি একটা সেলোয়ার-কামিজ। ওড়নাটা শিফনেরম ধ্যে সম্পূর্ণ নীল আর তার মাঝে ছোট ছোট সাদা ফুলের নকশা। তড়িঘড়ি জামাটা পরে চুল আঁচড়ে নিলো সুপ্রভা। চমৎকার একটি বয়েস স্টাইলের মোটা ঘড়ি আছে তার সেটাও পরে নিলো বা হাতে। কান দুটো দুল ছাড়াই রইলো শুধু একটা নীল রঙের ছোট্ট একটা টিপ আর ঠোঁটে হালকা রঙের লিপস্টিক লাগিয়ে পার্স হাতে বেরিয়ে পড়লো হোস্টেল থেকে৷ ভাবতে লাগলো নাশতা হিসেবে তার এখন কোন খাবারটা প্রয়োজন? এসিডিটির জন্য তেলে ভাজা খাবারগুলোকে মাথায় আনলো না কিন্তু তার জিভ সর্বদা বাহিরে এলেই হয় তৈলাক্ত অথবা চিজ, ইস্ট রিলেটেড খাবারগুলোই খোঁজে শুধু৷ কিন্তু এই দুটোই তার ক্ষতি করে খুব৷ আজকাল মুখে একনি জাতীয় সমস্যাগুলো প্রায়ই দেখা দেয় সে ভয়েই ইস্ট জাতীয় খাবার গুলো ইগনোর করা দরকার। কিন্তু প্রতিবারই জিভের কাছে হার মানে। আজ আর কিছুতেই হার মানবে না ভেবে নিলো। পরিচিত এক রেস্টুরেন্টে ঢুকে অর্ডার দিলো স্যুপ। এই প্রথম বোধহয় সে সকালের নাশতা হিসেবে এমন কোন খাবার চুজ করলো যা সে কখনো অসুস্থ হলেও খায় না। মন আর জিভের বিরুদ্ধে গিয়ে মস্তিককে খুশি করার আপ্রাণ চেষ্টায় সে স্যুপের অপেক্ষা করতে লাগলো। মিনিট সাতেকের মাঝেই তার প্রণ স্যুপ হাজির। কিছুটা সময় স্যুপের দিকে চেয়ে চোখ মুখ বিকৃত করেই বিসমিল্লাহ বলে মুখে দিলো আর ঠিক তখনি তার কানে ভেসে এলো খুব পরিচিত একটা কণ্ঠ।
এক ঘন্টা ধরে ফ্ল্যাটের খোলা জায়গায় পায়চারী করতে করতে তাসিন যখন খুব ক্লান্ত তখন এসে উপস্থিত হলো কেয়ার টেকার শফিক সাহেব। সাদা রঙের শার্ট আর সাদা লুঙ্গি পরা মুখে একমুঠো দাঁড়ি আর মাথায় টুপি পরিহিত ভদ্রলোক আচমকাই ফ্ল্যাটে ঢুকে সালাম দিলেন লম্বা করে। সালাম শুনে চকিতে তাকালো তাসিন আর তখনই ভদ্রলোক হাসি মুখে বললেন, “আপনিই তাসিন স্যার?”
কথাটা কানে বাজলো খুব তাসিনের। তার বাবার বয়সী একজন লোক তাকে স্যার বলে সম্মোধন করছে তা যেন অশোভন কোন ব্যাপার মনে হলো। চট্টগ্রামের অফিসেও আছে দু একজন মুরব্বি যারা তার নিচের পদে আছেন। কিন্তু তারা স্যার বলার পর তাসিনের কখনো এমন লাগেনি। সে একটু হেসে বলল, “জ্বী আমিই তাসিন। সকালে আপনাকে আমি অনেকবার ফোন করেছিলাম কিন্তু ফোনটা মেয়ের কাছে ছিলো সে কল দেখেও কিছু বলেনি স্যার। এজন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত স্যার প্লিজ কমপ্লেন করবেন না এটা নিয়ে। পরবর্তীতে আর কখনো এমন কোন অভিযোগের সুযোগ দিবো না।”
লোকটার হাসি মুখ হঠাৎ করেই যেন মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আঁধার কালোয় ঢেকে গেল। অপ্রস্তুত বোধ করতে লাগলো সে লেকটির এমন আকুতিমাখা স্বর শুনে৷ আবার মনে হলো লোকটির কথাবার্তার ধরণ যথেষ্ট স্মার্ট আর মুখস্ত ডায়লগ বলে মনে হচ্ছে । কেমন যেন একটু বিভ্রান্তি খেলে গেল তার চেহারায় তাই আপাতত সে কথা সংক্ষেপে শেষ করতে চাইলো।
“আচ্ছা সেসব থাক আমি কোন অভিযোগ করবো না অফিসে৷ আমি এখানকার নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানতে চাচ্ছিলাম৷ মানে থাকার ব্যবস্থা তো দেখলাম কিন্তু খাওয়ার ব্যবস্থাও এখানেই হওয়ার কথা বলেছে আমাকে।”
গম্ভীর আর কিছুটা ভারী সুরেই বলল তাসিন কথাগুলে। সামনের ব্যক্তিটিকে সে একটু ভালো করে বুঝতে চেষ্টা করছে। লোকটি তটস্থ জবাব দিলো, “আমি এই বিল্ডিংয়ের দ্বায়িত্বে আছি মানে প্রত্যেক ফ্লোরের আটজন করে চার ফ্লোরে মোট বত্রিশ জন অফিসারের সকল প্রয়োজন আমাকেই দেখতেই হয় আর বাজার ব্যবস্থাও আমি করি। আর সবার রান্নার দ্বায়িত্বে তিনজন লোক আছে৷ নির্দিষ্ট সময়ে খাবার যার যার ফ্ল্যাটে ডাইনিং টেবিলে দেওয়া থাকে৷ ওই যে টেবিল দেখছেন সেটাতে আপনাদের চারজনের খাবার সময়মত দেওয়া থাকবে। আর এছাড়া কোন প্রয়োজন থাকলে স্যার সেটা আমাকে জানাবেন।”
লোকটার কথা শুনতে শুনতে তাসিনের মনে হচ্ছিলো সে বুঝি কোন কলেজ কিংবা ভার্সিটি স্টুডেন্ড। হোস্টেলে এসেছে থাকতে আর এই লোকটা সেই হোস্টেলের সব বিষয়ে তদারকি করার জন্য আছেন৷ তার ধারণা ছিলো এই প্রমোশনভিত্তিক ট্রান্সফারে হয়তো মাত্র আট দশজন লোক থাকবে কিন্তু না এটাতো দেখছি বিশাল ব্যাপারসেপার। হাবিব চাচা তাহলে ঠিকই বলেছেন এটা অফিসের মাত্র কয়েকদিনের কাজ নয় এমনটা সারাবছর চলে। আর তাতে বোধহয় সব ব্রাঞ্চ থেকেই বাছাইকৃত আর প্রমোশনড অফিসারগুলোই আসে। তার অবশ্য একা থাকার ব্যাপারটা ছাড়া আর কোন সমস্যা নেই এখানে। শফিক সাহেব চলে যাচ্ছিলেন কিন্তু ফিরে এসে আবার বললেন, “ফ্ল্যাটের মেইন দরজা লক করা যেন না হয় ভেতর থেকে। প্রত্যেকে তাদের নিজস্ব রুমগুলো লক করবে শুধু। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে তাসিন রুমে ফিরে গেল। দরজাটা বন্ধ করে এবার চোখ বুঁজে পড়ে রইলো ঘুমের আশায়। বাইরে প্রচণ্ড গরম আর সেই গরমের উত্তাপ তার জানালার ফাঁক গলে সোজা পড়ছে বিছানাটাতে। তাই আবার শোয়া থেকে উঠে জানালাটা বন্ধ করে দিলো। পকেট থেকে ফোনটা বের করে কললিস্টে নজর বুলালো। মাকে সকালেই ফোন করিয়ে জানিয়েছিল তার পৌঁছানোর খবরটা কিন্তু মামীকে ফোন করা হয়নি। তাই আপাতত মামীকে একবার কল করা জরুরি মনে করে ডায়াল করলো মামীর নম্বরে৷ কল বাজার হয়তো তিন সেকেন্ডও পার হয়নি ওপাশ থেকে রিসিভ হয়ে গেল, ” ফোন কি হাতে নিয়েই বসে ছিলেন মামী?” হাসছে তাসিন।
“তো কি করবো ফাজিল ছেলে! সকাল কখন হয়েছে আর তুই মাত্র ফোন করলি৷ পৌঁছে তো গিয়েছিস ভোরেই নিজের মাকে ফোন করে ঠিকই জানিয়েছিস আর মামী পর বলে তাকে এখন ফোন করছিস।”
তাসিন বুঝতে পারলো মামী এখন একটু রেগে আছে তাই একটু মজা করে নিলো, “মায়ের চেয়ে কি মেয়ে বড়! আগে মাকে জানিয়েছি এবার মেয়েকে জানাতে ফোন করেছি।”
“এই তুই আমাকে মেয়ে বলবি না৷ আমি তোর কেউ নই তোরা সবগুলো হা’রামি। কাছে থাকলেই আদিখ্যেতা দূরে গেলে তো একটাও মনে রাখিস না আমারে। হুদাই আমি একেকটারে আব্বা বলে ডাকি একটাও মূল্য দিস না আমার।”
তাসিন বুঝলো মামি সত্যিই কষ্ট পেয়েছে। এই মানুষটা বাড়ির প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েকে প্রচণ্ডরকম ভালোবাসেন। কখনো তফাৎ করেন না দেবর, ননদের ছেলে মেয়ে আর নিজের ছেলে মেয়ের মাঝে৷ সে আরেকটু আদুরে গলায় বলল, “এখন কি বাপে কান ধরে মাফ চাইবে? আমার সামনে কিন্তু অফিসের লোকজন আছে মেয়ে বললে এখনই কান ধরে উঠবস করবো।”
“হয়েছে হয়েছে আর ঢং দেখাইতে হবে না আব্বাজান৷ তা থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা কেমন সকালে নাশতা করছিস?”
“হ্যাঁ মামী নাশতা করেই এসে উঠছি রুমে৷ আর থাকার ব্যবস্থা ভালোই খাওয়ারটা দুপুরের সময় জানতে পারবো।”
মামী আর তাসিনের এমন আরো কিছুক্ষণ কথা হলো। মামিরও যে তার মায়ের মতোই তাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে তা বুঝতে কষ্ট হয়নি তাসিনের। কিন্তু করার কিছু নেই। জীবনে কিছু কিছু সুযোগ এলে হাতছাড়া করতে নেই অন্তত ক্যারিয়ার সম্পর্কিত দারুণ কোন সুযোগ হলে তো একদমই না। ফোনটা হাতেই ছিলো তার কললিস্টেই নজর ঘুরছে এখনো। একটাবার কি ঝড় তুফানকেও কল করবে! ভাবনা মাথায় আসতেই বেশি সময় নেয়নি আর। সত্যিই ডায়াল করলো সুপ্রভার নাম্বারে এবং কলটা বেজে শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহুর্তেই রিসভ হলো, “হ্যালো।”
চলবে
(খুব সম্ভব কিছু বানান ভুল আছে। এডিট করার সময় পাইনি তাই এভাবেই পোস্ট করলাম। ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)