রংধনুর_আকাশ #লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ বোনাস পর্ব

0
420

#রংধনুর_আকাশ
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
বোনাস পর্ব

৬৬।
আজ আরিয়া ফেরদৌস অফিস থেকে ছুটি নিয়েছেন। সকালে উঠেই তিনি নিজ হাতে সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে রেখেছেন। এরপর সবাইকে ডায়নিংয়ে খেতে ডাকলেন। এদিকে মাফিনের বুক ঢিপঢিপ করছে। সে কিভাবে মাকে আটকাবে বুঝতে পারছে না। সে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললো, কিছু একটা বলতে। মারিয়াও মাফিনকে আশ্বস্ত করলো। এরপর মহুয়াকে কনুইয়ের গুঁতো দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“এখন শুরু করবি, নাকি নাস্তা খাওয়ার পর?”

মহুয়া ভীত চোখে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,
“মা যদি আমার মিথ্যেটা ধরে ফেলে তখন?”

“চিন্তা করিস না। আমি বাঁচাব তোকে।”

মহুয়া মুখ বাঁকিয়ে বলল,
“আসছে আমাকে বাঁচাতে! তোকে সহ ধোলাই করবে।”

“তখন সব দোষ ভাইয়ার উপর চাপিয়ে দিয়ে আমরা পালিয়ে যাবো।”

মহুয়া মারিয়ার কথা শুনে মুখ চেপে হাসলো। আর বলল,
“তখন ভাইয়ার বিয়ের শপিং করা শেষ!”

“এখানেও সুযোগ আছে!”

“কি সুযোগ?”

“বড় ভাইয়া মাকে শান্ত করাবে। চিন্তা করিস না, আমাদের উপর যদি বৃষ্টি নামে, মেজ ভাইয়ার উপর বয়ে যাবে ঝড়ো হাওয়া, আর বড় ভাইয়ার উপর নেমে আসবে ১নং বিপদ সংকেত। আর দেখা যাবে সূচনা ভাবী মায়ের সেই গতিবিধি পালটে দেবে।”

“মারু, তুই কিসের সাথে কি তুলনা করছিস!”

আরিয়া ফেরদৌস দুই বোনকে ফিসফিস করতে দেখে গম্ভীরমুখে বললেন,
“আমি তোমাদের তৃতীয় পক্ষের সামনে ফিসফিসিয়ে কথা বলতে নিষেধ করেছিলাম।”

মহুয়া ভীত কন্ঠে বললো, “সরি, মা।”

মারিয়া মাফিনের দিকে তাকাতেই মাফিন চোখ গরম করে তার দিকে তাকালো। আর মনে মনে বললো,
“এই দুইটা ফাজিল পরিস্থিতির অবনতি ঘটাবে মনে হচ্ছে। এখন আমি যদি স্বস্তিকার কথাটা রাখতে না পারি, ও মনে করবে আমি ভিতু, আমার মাকে কিছু বলার সাহস নেই। আর যদি বলার পর, মা নিষেধ করে দেয়, তখন আমি নিশ্চিত একটা ঝামেলা বাঁধিয়ে দেবো। আর আমি চাই না, আমার বিয়ের সময় কোনো ঝামেলা আসুক। এখন শুধু ভালোই ভালোই সব হয়ে যাক।”

হঠাৎ মহুয়া আরিয়া ফেরদৌসকে বলল,
“মা অনেক দিন ধরে আমার চোখে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। অনেকক্ষণ ধরে কোনো কিছুর দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি না। আর ইদানীং মাথাটাও খুব ব্যথা করে।”

আরিয়া ফেরদৌস ব্যস্ত কন্ঠে বললেন,
“আমাকে আগে বলো নি কেন?”

“তুমি তো অফিসে থাকো, তাই আর বলা হয় নি।”

“আমি কি অফিস থেকে বাসায় ফিরি না নাকি!”

“তখন আর মনে থাকে না। আসলে বলবো বলবো করে আর বলা হয় নি। সামনে তো ভাইয়ার বিয়ে আমি ভাবছি, আজই যদি ডাক্তার দেখানো যেতো।”

“কিন্তু আজ তো স্বস্তিকাকে নিয়ে বিয়ের কেনাকাটা করতে যাওয়ার কথা।”

আরিয়া ফেরদৌস মাহাথির দিকে তাকাতেই মাহাথি বলল,
“মা আজ অফিসে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। আমি পারবো না হয়তো। আর সূচনার শরীর ভালো না, তাই আজ ও ছুটি নিয়েছে।”

আরিয়া ফেরদৌস কিছু একটা ভেবে বললেন,
“ডাক্তারের সিরিয়াল নেওয়া হয় নি। আমাকে আগে জানালে সকালেই নিয়ে নিতাম৷ এখন গেলে অনেক দেরী হয়ে যাবে।”

মারিয়া ব্যস্ত হয়ে বলল,
“মা মহুয়াকে আজই নিয়ে যাও, ও কাল রাতে মাথা ব্যথার জন্য বই পড়তে পারছিল না।”

“তখনই বললে হতো।”

“তখন তুমি মাত্র এসেছ, তাই আর জানাই নি।”

এদিকে মাফিন মনে মনে খুশি হলো। তার দুই বোন, ভাই আর ভাবী তার জন্য কতো সুন্দর করেই না অজুহাত দিয়ে যাচ্ছে। আর সবার অভিনয় দেখে মাফিনের হাসিও পাচ্ছে। সূচনা মুখটা এমন করে রেখেছে যেন সত্যিই তার শরীর ভেঙে যাচ্ছে। এদিকে মাহাথির হুড়োহুড়ি দেখে মনে হচ্ছে আজ তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। আর মহুয়া তো এই প্রথম কোনো মিথ্যে অভিনয় করছে। তবুও কতোটা নিখুঁত।

আরিয়া ফেরদৌস এবার বললেন,
“আচ্ছা, আমি মহুয়াকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাই। মাফিন, তুমি না হয় মারিয়াকে নিয়েই যাবে।”

মারিয়া মাথা নেড়ে বললো,
“আচ্ছা, আমি যাবো।”

মাফিন কথাটি শুনে চোখ বড় বড় করে মারিয়ার দিকে তাকালো। এরপর নাস্তা খাওয়ার পর মাফিন মারিয়াকে বলল,
“তুই সত্যিই যাবি?”

“হ্যাঁ যাবো। কিন্তু তোমার সাথে না।”

“তাহলে?”

“এখন যেহেতু আমি তোমার সাহায্য করেছি, এবার তুমি আমার সাহায্য করো।”

“কি করতে হবে?”

“প্রহরকে ফোন করে বলো, আমাকে নিয়ে যেতে। আমরা একসাথে বের হবো, কিন্তু আলাদা থাকবো। তুমি ভাবীকে নিয়ে শপিং করবে, আর আমি প্রহরকে নিয়ে ঘুরবো।”

মাফিনের বুদ্ধিটা পছন্দ হলো। সে প্রহরকে ফোন করে নির্দিষ্ট জায়গায় আসতে বললো। প্রহরও আর না করতে পারলো না।

এদিকে স্বস্তিকা মাফিনের হাত ধরে ঘুরছে। আজ প্রথম তার খুব ভালো লাগছে। স্বামীর হাত ধরে ঘোরার হয়তো আলাদা আনন্দ আছে। সেই আনন্দটাই স্বস্তিকার ভেতরে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। তারা মোটামুটি অনেকগুলো দোকান ঘোরার পর বিয়ে পরবর্তী অনুষ্ঠানের জন্য কিছু শাড়ি পছন্দ করলো। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, যেই শাড়ি মাফিনের পছন্দ হয়, তা স্বস্তিকার ভালো লাগে না। আর যেসব শাড়ি স্বস্তিকার পছন্দ হয়, তা মাফিনের পছন্দ হয় না। এভাবে দু’জনের মধ্যে ছোটোখাটো একটা ঝগড়া লেগে গেলো। আর সেই সুযোগ নিলো বুদ্ধিমান চোর। সে মাফিনের মানিব্যাগটা নিয়ে পালিয়ে গেল। ঝগড়া শেষে মাফিন একটা শাড়ি পছন্দ করে যেই না টাকা দিতে যাবে, সে দেখলো তার মানিব্যাগ নেই। সে চোখ বড় বড় করে স্বস্তিকার দিকে তাকিয়ে রইলো। স্বস্তিকা ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”

মাফিন কাঁপা কন্ঠে বললো,
“আমার মানিব্যাগ পাচ্ছি না।”

মাফিন কোথাও তার মানিব্যাগটা না পেয়ে বুঝলো সেটা চুরি হয়ে গেছে। সে স্বস্তিকার হাত ধরে তাকে দোকানের বাইরে টেনে নিয়ে এলো আর রাগী কন্ঠে বলল,
“সব তোমার জন্য হয়েছে। একটা মেয়ে এতো ক্যাচাল কিভাবে করে!”

স্বস্তিকা মুখ ফুলিয়ে বলল,
“আমার পছন্দের শাড়িটা কিনলে আজ এমন হতো না।”

মাফিন চেঁচিয়ে বললো,
“তোমার পছন্দের শাড়ি রাখো তুমি। মানিব্যাগে আমার বিশ হাজার টাকা ছিল।”

“এতো কম?”

“তোমার কম মনে হচ্ছে?”

“বিশ হাজার টাকায় তো আপনি বিয়ের বাজার করতে পারবেন না।”

“তুমি এই মুহূর্তে এসব অদ্ভুত কথাবার্তা বলছো? আমার টাকা চুরি হয়ে গেছে। আমি কি করবো এখন?”

“সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে দেখুন।”

মাফিন কিছুক্ষণ দোকানের বাইরে চুপচাপ বসে ছিল, তারপর বলল,
“বাসায় যাও।”

“মানে? মাত্র বিশ হাজার টাকার জন্য আপনি এভাবে শপিং না করে আমাকে খালি হাতে পাঠিয়ে দেবেন? একটা শাড়ি কেনার টাকাও কি নেই?”

“তুমি কি পাগল? আমার মন-মেজাজ ঠিক নেই, আর তুমি এসব কি অদ্ভুত কথাবার্তা বলছ?”

স্বস্তিকাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মাফিন তাকে গাড়িতে তুলে দিয়ে রাস্তায় হাঁটতে লাগলো। আর ভাবল,
“মাকে মিথ্যে বলার শাস্তি হয়ে গেছে। আজ মাকে একপ্রকার ঠকিয়েছি। এই শাস্তি আমার প্রাপ্য ছিল।”

চলবে-

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here