ইস্ক,১৩,১৪

0
660

#ইস্ক,১৩,১৪
#সাদিয়া

১৩
নিজের অনুভূতির কথা গুলি ঘুছিয়ে তিতিলের সামনে তুলে না ধরা কি দোষ নাকি দুই বছর আগের ঘটনাটা? ইয়াদ আজ স্পষ্ট বুঝতে পারছে সে অন্যায় করেছে। উচিৎ ছিল এই বিষয়ে আগে কথা বলার। সে যদি নাই থাকতে চাইত আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া। কিন্তু নিজের অনুভূতির কাছে আজ হেরে বসেছে ছেলেটা। সম্পূর্ণ নিস্ব হয়ে আছে সে।
“রাগ শয়তানের নিখুঁত এক খেলা। শয়তান তখন বান্দার মনে এমন প্ররোচনা দেয় তখন নিজের সব কাজই ঠিক মনে হয়। অথচ সে সম্পূর্ণ ভুল পথে থাকে তখন। কিন্তু সবসময় মনে করে না সে যা করছে করেছে সব ঠিক।”
তার মা তাকে না জানিয়ে বিয়ে ঠিক করেছিল। এমনকি বিয়ের দিনও সে জানত না তার বিয়ে। গ্রামে গিয়ে শুনন বিয়ের কারণে তাকে আসতে হয়েছে। তখন অমত করলেও রেহেলা বেগম রাগারাগি করেন বলে সে রাজি হয়ে যায়। কিন্তু সবার উপর তার জিদ বসে। বিদেশ চলে যায় রাগের কারণে। তার মনে হয়েছিল তার দিক থেকে সে ঠিক। একবার তার বিয়ে নিয়ে মা তাকে বলতে পারত। না করা হ্যাঁ বলা পরের বিষয়। সেদিন রাগ করাটা তার বোকামি আর ভুল ছিল আজ অনুধাবন করেছে। রাগের বশে করা কাজ সর্বদা ভুল হয়। তিতিলের প্রতি অনুভূতি গুলি চাইলেও সে অস্বীকার করতে পারবে না। এগুলি এক বিন্দু মিথ্যে নয় তার। আনমনে চোখ দিয়ে আবার পানি গড়িয়ে পরল ইয়াদের। ভেতরটায় যেন ঘূর্ণিঝড় সব তছনছ করে দিচ্ছে। দাঁতে দাঁত চেঁপে চোখ বুজে হাত মুষ্টিবদ্ধ রেখে নিজের কষ্ট কমানোর বৃথা চেষ্টায় পড়ে আছে ইয়াদ।

তিতিলের ভেতরটা ফাকা ফাকা লাগছে। নিজেকে পাথর লাগছে। ধুপ করে বিছানার উপর বসে পড়ল শূন্যে তাকিয়ে। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে এই মুহূর্তে। ঠোঁট কাঁপছে তিতিলের। কানের পর্দায় ইয়াদের বলা কথা গুলি ঝনঝন হয়ে বাজতে শুরু করেছে অনবরত। বোধশক্তি শূন্য এখন। চোখ দিয়ে শুধু আবেগ কষ্ট মিশ্রিত পানি পড়ছে তিতিলের।

—-
রাত তখন শেষের দিকে। একটু পর ভোরের আলো ফুটবে। ইয়াদের দুই চোখের পাতা আজ এক হয় নি। চোখ বন্ধ করলেই কান্নাভরা তিতিলের মুখ উঠে আসছে। ভেতরটা তখন জ্বালা শুরু করে। তার জন্যে মেয়েটা হয়তো কেঁদে কেঁদে অভিমানের পাহাড় বানিয়েছে। কিন্তু তার চিন্তার বিষয় হলো সেই পাহাড় টপকে তিতিলের সংস্পর্শ পাওয়া নিয়ে। বুকে সাথে চেঁপে ধরে বহুক্ষণ অনুভূতির জগতে খেলা করা নিয়ে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইয়াদ ব্যালকুনি থেকে ঘরে ঢুকল।

তিতিল তখন বিছানায় কাত হয়েছে। সবে মনে হয় মেয়েটার চোখ লেগে এসেছে। ইয়াদ লক্ষ্য করল মেয়েটার চোখের কোণায় পানি শুকিয়ে আছে। ইয়াদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ওই মুখ পানে। ভেতরে কেমন শীতল হাওয়া বইতে শুরু করেছে। ইয়াদ হাটু গেড়ে নিচে বসল। তিতিলের চুল গুলি কপাল থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল,
“আমি সরি প্রিয়। এতটা কষ্ট আমার থেকে পাওয়ার জন্যে আমি ক্ষমাপ্রার্থী তোমার কাছে তিতিল। আমার দূরে থাকা নিয়ে যতটা কষ্ট তোমার পেতে হয়েছে আমার স্পর্শে তার চেয়ে বেশি সুখানুভব করাবে ইয়াদ।”

আদরের হাত মাথায় রাখল তিতিলের। চোখ বন্ধ করে কান্না আটকাল সে।

ঘুম থেকে উঠে দেখে তিতিল ঘরে কেউ নেই। সে জানে এই সময় ইয়াদ ছাদে জিম করছে। রাতের কথা মনে হতেই তিতিলের খারাপ লাগল। ইয়াদ কে একবার দেখতে মনটা হিসপিস করছে। তিতিল বিছানা ছেড়ে গুটি পায়ে ছাদে গেল। সিঁড়ির শেষ মাথায় এসে আর এগুলো না সে। দেখতে পেল ইয়াদ পানি দিচ্ছে তার ফুল গাছ গুলিতে। বেশ অবাক হয়েছে তিতিল। হাল্কা আকাশি কালার একটা টিশার্ট পড়া ইয়াদের। এশ কালার টাউজারের সাথে লোকটাকে বেশ লাগছে। হাল্কা আকাশি আসমানের সাথে ইয়াদের একদম মানিয়েছে। ইয়াদ পানি দেওয়া রেখে দাঁড়াল। পিছন ফিরে তাকিয়ে না দেখেই বলল,
“শুভ সকাল প্রিয়।”

বিস্ময়ের আসমানে এসে উঠেছে তিতিল। এটা কি করে সম্ভব তা চিন্তা করছে। লোকটা তাকে দেখলেও না তবুও বলে দিল। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে লোকটার দিকে। ইয়াদ আবার পানি দিতে লাগল। একবার তার দিকে ফিরলোও না।

তিতিলের দিকে এবার ফিরে বলল,
“অনুভব বুঝো তিতিল? যে অনুভূতি কে ঘিরে থাকে আষ্টেপৃষ্ঠে তাকে অনুভব করতে এক মুহূর্ত লাগে না জানো এটা?”

“….

ইয়াদ তাকে কি বুঝাতে চাইছে তা বুঝতে সময় লাগেনি বেশি। অবাক চোখে তাকিয়ে রয়েছে মানুষটার দিকে। মুগ্ধতা আর মায়া কেন ঝাঁকে ঝাঁকে মনের বাগানে এসে উড়ছে তার?

ইয়াদ গাছে পানি দিতে দিতে বলল,
“তোমার গাছ গুলিতে পানি দিচ্ছি লাভের আশায়। গাছে ফুল ফুটার মতো আমার ফুলও যদি তোমার মাঝে ফুটিয়ে তুলতে পারি।”
মায়ায় হাবুডুবু খাচ্ছে তিতিল। ওখানে আর না দাঁড়িয়ে চুপচাপ নিচে চলে গেল সে। ভেতরটা কেমন করছে। লোকটা কেন তাকে অনুভূতি তে ঘিরে নিচ্ছে এভাবে? কি করে ছাড়াবে তখন সেই মায়ার জাল?

ইয়াদ স্মিত হাসল। কি কোমল সেই হাসির রেখা! লম্বা নিশ্বাস ফেলে আকাশে তাকাল। আকাশ কত বিশাল। সবাই কে নিজের মাঝে কিভাবে ধারণ করে হাসছে সে। কিন্তু তবুও তো আকাশেরও মন খারাপ হয়। বর্ষণ হয়ে কাঁদে সেও!

সারাটা দিন আজ অস্থির কেটেছে তিতিলের শুধু ইয়াদের কথা ভেবে। মনটা শুধু খচখচ করেছে লোকটার সাথে মানিয়ে নেওয়ার। কিন্তু মানিয়ে যে নিবে কি করে? সে তো আর লোকটার মনের খবর জানে না। লোকটা তো তাকে সরাসরি কিছু বলেও নি এমন কিছু নিয়ে। তবে কি করে সে মন কে মানিয়ে নিবে? যাকে ভালোবাসে তার থেকে দূরে যাওয়ার ইচ্ছা মনে কেউ এমনি পোষণ করে রাখে না আর চায়ও না। কিন্তু তার ভাগ্যটাই এমন। যাকে ভালোবাসে তাকে হারানোর ভয় তো তার নিশ্চিত। কিন্তু ইয়াদের কথা গুলির মানে খুব গভীর হয়। কথায় মাঝেও সে কথা লুকিয়ে রাখে। এটা কি তার নিজ থেকেই বুঝে নিতে হবে? নাকি.. কেউ যদি তাকে ভালেবাসে তবে নিজে বলবে। বুঝে কেন নিতে হবে? ভালোবাসলে তো এমনিতেই বলা যায়। তবে ইয়াদ কেন..

“প্লিজ রেডি হয়ে থেকো।”

চমকে গেল তিতিল। তাকিয়ে ইয়াদ কে দেখে ভাবনা থামিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়াল।

“শুনছো তিতিল?”

“….

“চাইলে জোর করতে পারি কিন্তু করতে চাইছি না। জোর করে দৈহিক উপস্থিতি পাওয়া যায় তবে মনের নয়। আমি মনের উপস্থিতি চাই।”

লোকটার ওমন কথায় তিতিল যে আরো দূর্বল হয়ে পড়ে সেটা কি সে জানে?

“সত্যি বলতে আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি শুধুমাত্র তোমার জন্যে। চেয়েছিলাম তোমাকে সাথে নিয়ে কিছুটা সময় অতিবাহিত করব। কিন্তু তুমি সেটা না চাইলে আর কি করা? তুমি না থাকলে এটা তেমন আমার মনে অনুভূতি সৃষ্টি করবে না। আশা করি সব ভুলে আমার দিকটা একটু দেখবে।”

তার বলার মাঝে তিতিল হু না কিছুই বলল না। ইয়াদ নিজের মতো করে চলে যাচ্ছে। দরজার কাছে গিয়ে সে থমকে দাঁড়াল। তিতিল তখন শক্ত মুখে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। ইয়াদ তার দিকে ফিরে বেদনাময় হেসে কোমল কন্ঠে বলল,
“তিতিল আমি তোমাকে ডিভোর্স দেওয়ার জন্যে আসিনি দেশে। এমনিতেই দেশে আসতাম অফিসের কাজে। আপু বলেছিল ওটার কথা আমি জবাব দেই নি। তাই বলে এই নয় ডিভোর্স দিতে বিদেশ থেকে ছুটে এসেছি।”
ইয়াদ আর কিছু বলল না। চলে গেল।

তিতিল তখন ওখানে দাঁড়িয়ে ছিল স্থির হয়ে। গলা মোমে যেন আরেক ধাপ আগুন পড়ল। লোকটার প্রতি এত দূর্বলতা তাকে বিপদে নিয়ে যাচ্ছে না তো? কিন্তু লোকটার মায়ায় যে সে অনেক আগেই পড়ে বসে আছে।

ইনার মনে সন্দেহ হতে লাগল। কোনটা ঠিক হবে সে বুঝতে পারছে না। এটা ফেলে রাখার মতোও নয়। এ বিষয় যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিদ্ধান্ত নিতে হবে। মায়ের কথায় তিতিলের রুমেই আসছিল সে। ইয়াদ কে ভেতরে কথা বলতে দেখে দরজায় দাঁড়িয়েছিল। শেষের কিছু কথা শুনে তার সংশয় হতে লাগল। চিন্তিত মুখে সে তিতিলের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

—-
“তিতিল আপু, তিতিল আপু।”

“হুম।”

“এই তিতিল আপু। কি পরবে তুমি?”

“….

“ও আপু বলো না।”

“কিসের কথা বলছো?”

“ড্রেসের কথারে বাবা।”

“ও।”

“বলো না কি পরে যাবে?”

“ভালো লাগছে না আমার হিমা।”

“তা বললে হবে না আপু মা পই পই করে বলেছে যেতে।”
তিতিল উত্তর না দিয়ে হিমার দিকে তাকাল শান্ত দৃষ্টিতে।

“এখন বলো কি পরে যাবে?”

“কাপড় ছাড়া তো আর যেতে পারব না একটা হলেই হবে।”

তার কথা শুনে হিমা কিছুক্ষণ হাসল।

“কি এমন বললাম বলো তো?”

“কিছু না। আমি ভেবেছিলাম তুমি আর আমি এক কালার ড্রেস পরব।”

“….

“কি কালার পরা যায় বলো তো?”

“একটা হলেই হলো।”

“আরে কি তখন থেকে একটা হলেই হলো বলতে শুরু করেছো?”

“….

“সেদিন না মেরুন কালার একটা জামা কিনে আনলে? ওটা পরবে?”

“আচ্ছা।”

“না হলে ওই হলুদ কালার টা।”

“হিমা একটা পরবই তো। পরলেই হলো।”

হিমা বিরক্ত নিয়ে বলল,
“দূর তোমার তো দেখি যাওয়ার ইচ্ছাই নেই। তুমি কাপড় না টাওয়াল পেঁচিয়ে বসে থাকো ঘরে।”

“আচ্ছা।”

“কি?”

তিতিল তাকাল হিমার দিকে। হিমা রাগে এবার চলেই গেছে। কি করবে সে? ইয়াদের কথা মাথায় এমন করে ঢুকে গেছে এখন অন্য কিছুতে আর মন বসছে না।

চলবে♥
(আশা করব গঠনমূলক মন্তব্য করার)

#ইস্ক
#সাদিয়া

১৪
তিতিল চিৎকার করে ডাকছে। কিন্তু কেউ কাছে নেই এগিয়ে যাওয়ার। বড্ড বিরক্ত আর অসহায় লাগছে নিজেকে। ঘর থেকে বেরও হতে পারবে না এই অবস্থায়। চোখ মুখ এক করে রেখেছে সে। হিমা আপু কেউ নেই হয়তো সাজে ব্যস্ত।
ইয়াদ তিতিলের রুমেই আসছিল। ওর চিৎকার শুনে ভরকে গেল ছেলেটা। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গেল সে।

দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকল। তিতিল দরজায় তাকিয়ে ইয়াদ কে দেখে আতকে উঠল। স্নিগ্ধ চোখে ইয়াদ কে একবার দেখল। পিত কালার কোটপ্যান্ট পরেছে ছেলেটা। ভেতরে সাদা শার্ট। সুঠাম দেহে যা মনকাড়া লাগছে তিতিলের বলে বুঝানো যাবে না। ক্লিন সেপে জামকালো ঠোঁট গুলিতে মুখ একদম ভেসে উঠছে। চুল গুলি স্পাইক করে রাখাতে আরো দারুণ রকম লাগছিল ইয়াদ কে। ছানাবড়া হয়ে আসছে চোখ সাথে ভয়ও চেঁপেছে। ঢোক গিলে পিঠ আড়াল করে দাঁড়াল সে। আয়নার সামনে দিব্বি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইয়াদ অবাক হয়।
“এভাবে ডাকছিলে কেন?”

“….

“কি হলো?”

“কি কিছু না।”

“মেয়ে ভয় পেয়ে গেছিলাম।”

“….
তিতিল জোর করে হাসার চেষ্টা করল। ইয়াদ ঠোঁট বাকিয়ে বলল,

“যেভাবে ডাকছিলে মনে হচ্ছিল আমি বাদে কেউ রুমে চলে এসেছিল তোমার।”

মুখ কালো করে দিয়ে বলল,
“কি বলছেন এসব?”

“ডাকছিলে কেন?”

“….

“বলো?”

“এ এমনি। হিমা কোথায়?”

“মনে হয় রেডি হচ্ছে।”

“ও।”

ইয়াদ খেয়াল করল ডান হাত তিতিলের পেছনে। কেমন সাপের মতো বেঁকেবেঁকে উঠছে। সে জিজ্ঞেস করল?”

“কি হয়েছে পিছনে?”

তিতিল চটজলদি জবাব দিল,
“কিছু না তো।”

“আমার মনে হচ্ছে তুমি আনইজি ফিল করছো। কিছু হয়েছে কি?”

“একদমই না” বলে তিতিল আবারো হাসার চেষ্টা করল।

“দেখি” বলে ইয়াদ এগিয়ে আসতেই তিতিল চিৎকার করে উঠল। পা থামিয়ে দিয়ে ইয়াল ভ্রু কুঁচকাল। জিজ্ঞেস করল,

“সত্যি করে বলো তো কি হয়েছে তিতিল?”

“কিছু হয়নি আপনি এখন যান।”

ইয়াদের এবার স্পষ্ট তিতিলের কিছু একটা হয়েছে তবে বলতে চাইছে না। কিছু না বলে ইয়াদ এগিয়ে গেল তিতিলের সামনে। দাঁত কিটে দুই হাত দিয়ে থামাল তিতিল।
“বললাম না আপনি যান।”

“কি হয়েছে তোমার সেটা বলো।”

“কিছুই না। যান তো।”

আচমকা ইয়াদ তাকে বাহু ধরে পিছন ঘুরাল। সঙ্গেসঙ্গে চমকে গেল ইয়াদ। সারাটা শরীর কেমন শিউড়ে উঠেছে তার। লোমকূপ গুলি সজাগ হয়ে গিয়েছে শরীরের। বুকের স্পন্দন বাড়তে লাগল ক্রশম। পুরো পিঠ যেন উন্মুক্ত। ইয়াদের যে কারণে শিহরণ লাগছে বারংবার তা হলো সাদা ধবধবে পিঠে মেরুদণ্ডের বা পাশে পর পর দুইটা কালো তিল দেখে। একটা একটু ছোট অন্যটা খানিক বড় টাইপে। ছোটটা বেশ কালো কিচকিচে আর হাল্কা বড় টা গাঢ় ধোঁয়াটে। ইয়াদের শরীরে আবার যেন কিছু একটা দৌড়ে গেল। আয়নায় সে তিতিলের দিকে তাকাল। মেয়েটা লজ্জায় চোখ মুখ গুটিয়ে নিয়েছে। ইয়াদ এক গালে হাসল। বাহু ধরে আবার তিতিল কে কাছে টেনে নিল। তার বুকের সাথে লেগে আছে যেন তিতিলের কোমল পিঠ। আয়নায় তিতিলের দিকে তাকিয়ে আস্তে করে জামার চেইনটা লাগিয়ে দিতে শুরু করেছে সে। তার স্পর্শে যে তিতিল বারবার কেঁপে উঠছে তা সে ভালো করেই অনুধাবন করতে পারছে। তিতিলের কাঁপন আর চোখ বন্ধ করা মুখশ্রী যে তাকে উন্মাদ করে দিচ্ছে তা কি করে বলবে মেয়েটাকে? চেইন লাগানো শেষে ইয়াদ তিতিলের কানের কাছে মুখ নিল। ফিসফিস কন্ঠে বলল,
“জামার চেইন লাগাতে হিমা আর আপু কে না ডেকে একবার ডাকতে ইয়াদ কে। ছুটে চলে আসত সব ছেড়ে। আর যাই হোক ওই শুভ্র কোমল পিঠের স্পর্শ আর ঘোর লাগিয়ে দেওয়া বুকে টর্নেডো সৃষ্টি করা কালো তিল গুলি দেখা হতো।”

ইয়াদ একটু দূরে গিয়ে তিতিলের কানে ফু দিতেই এলোমেলো রেশমি চুল গুলি কানের পাশ থেকে গিয়ে মুখে পড়েছে। তাকিয়ে দেখল চোখ বন্ধ করা মুখে ছোট চুল গুলি তে তিতিল কে ভয়ংকরী রূপসী লাগছিল। ইয়াদ মুচকি হাসল। সবসময় চুল সরিয়ে দিলেও এখন চুল গুলিতেই যেন মুখের আঁচ দ্বিগুণ লাগছে। ইয়াদ তিতিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসতে হাসতে চলে গেল।

তিতিল পাথর হয়ে একেবারে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের পাতা নড়ছে না তার। শরীরের হাড় পর্যন্ত হীম হয়ে অবশ লাগছে। ইয়াদের ফিসফিসানো কথা আর শিউড়ে উঠা স্পর্শ তাকে অসাড় করে দিচ্ছে ক্রমশ। এই অনুভূতির পাখি গুলি ডানা ঝাপটিয়ে উন্মাদের মতো উড়ছে কেন বুঝা হয়ে উঠছে না তার।

ইনা হিমা সবাই নিচে গিয়ে তিতিল কে ডাকছে। তিতিল এতক্ষণ আয়নার সামনে বসে ছিল স্তব্ধ হয়ে। ডাক যখন পড়ল তখন সে চোখ কাজল দিয়ে এঁকে দিচ্ছিল। ঠোঁটে গাঢ় লাল লিপস্টিক টা হাল্কা দিয়ে ওড়না ঠিক করতে করতে নিচে নামল।

ইয়াদ বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে ছিল। আগে খেয়াল না করলেও এবার চোখের কোণায় লেগে গেছে এই দৃশ্য।টকটকে লাল একটা থ্রীপিজ পরেছে তিতিল। চোখে গাঢ় কাজল আর ঠোঁটে লিপস্টিক ছাড়া কিছুই নেই। চুল গুলি সামনে এসে ঠাই নিয়েছে। তিতিল কে এই মুহূর্তে ইয়াদের মোহনীয় অপ্সরী বাদে কিছু লাগছে না। চোখের পাতায় ওই মুখশ্রী এঁটে গেছে পুরোপুরি। ধুকধুক ধুকধুক আওয়াজ হচ্ছে বুকের ভেতর থেকে। ইয়াদের মুহূর্ত টা মুখরিত করে তুলছে সব মিলিয়ে। তিতিল নিচে নামল একবার তাকাল ইয়াদের দিকে। কিন্তু ইয়াদের ওমন নেশা মাখা চাউনি দেখে চোখ নামিয়ে দিতে বাধ্য হলো মেয়েটা।

রেহেলা বেগম এগিয়ে গেলেন তিতিলের দিকে। ইনা একবার তিতিলের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসল। পরক্ষণে ইয়াদের দিকে নজর গেল তার। ইয়াদের ওমন চাউনি দেখে মুখ অদ্ভুত রকম হয়ে এসেছে। মুখে চিন্তা স্পষ্ট।

“তিতিল মা তোকে তো আজ অনেক সুন্দর লাগছে। মাশাল্লা কারো নজর না লাগুক।”

তিতিল মুচকি হাসল।
“তিতিল আপু সত্যি তোমাকে একদম জোস লাগছে।”

তিতিল হিমার দিকে তাকাল। পরনে তার মেরুন কালার ড্রেস। তিতিল নম্র গলায় বলল,
“হিমা আমি মেরুন কালার জামাটা পরেছিলাম কিন্তু ওটা অনেক টাইট হয়ে গিয়েছে। অস্বস্তি লাগছিল বলে খুলে ফেলেছি।”

“বাদ দাও তো আপু। লালেই তোমাকে পুরো লাল লাগছে।”

ইনা হেসে বলল,
“তিতিল সত্যিই তোমাকে অনেক কিউট লাগছে। কি বলিস ভাই?”

সবার নজর ইয়াদের দিকে। সে চুপচাপ ছিল এতক্ষণ। কারো কথা কর্ণগোচর হয়েছে কিনা তাতে যথেষ্ট শঙ্কা আছে। সে তো মুগ্ধতা নিয়ে তার মনের কোণায় যত্ন করে রাখা রমনী কে দেখতে ব্যস্ত। তিতিল তাকাল ইয়াদের দিকে। ইয়াদের ওমন চোখের পাতা না ফেলা চাউনি দেখে লজ্জাময় ঠোঁট টিপে হাসল অল্প। নির্মল সুখানুভবের কোমল সুর ইয়াদকে ভালোবাসার রাজ্যে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here