ইস্ক,১১,১২

0
521

#ইস্ক,১১,১২
#সাদিয়া

১১
ভরদুপুরের রোদ মাথায় এসে লাগছে। তপ্ত হাওয়া চারিদিকে বইছে। এই গরমে তিতিল রান্নাঘরে রান্না করছে। শরীর ঘামে অনেকখানি ভিজে গেছে কাপড়। মুখে ঘামের কণা গুলি বিন্দু বিন্দু হয়ে জায়গা দখল করেছে। ভেতর থেকে গরম লাগছে তিতিলের। ফ্রিজ থেকে পানি খেয়ে পিছন ঘুরতেই দেখতে পেল ইয়াদ কে। তার মুখে এখনো পানিটা রয়ে গেছে। ইয়াদ নেশাক্ত চোখে তাকিয়েছে তার দিকে। কোমরে ওড়না পেঁচানো, চুল গুলি উপরে কাকরা দিয়ে বাঁধা সামনের কিছু চুল এলোমেলো হয়ে রয়েছে। ইয়াদের যেটায় চোখ বেশি পড়েছে তা ওই ঘামযুক্ত মুখ। মুখ তখনো লাড্ডুর মতো ফুলে ছিল মেয়ের। ইয়াদ মুচকি হেসে ফেলল। তিতিল ঢোক গিলল। ঠোঁট উল্টে চুলার কাছে গেল।

ইয়াদ আর রেহেলা বেগম সোফায় এসে বসেছেন। গরমে নাজেহাল অবস্থা মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। রেহেলা বেগম বললেন,
“ইয়াদ ফ্রিজ থেকে একটু ঠান্ডা পানি আন বাবা। কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে গরমে। আল্লাহ মরার পর কি করে সহ্য করব এত গরম যখন সূর্য থাকবে মাথার উপরে।”

ইয়াদ এগিয়ে গেল কিচেনের দিকে। ঘাড় ঘুরিয়ে দেখল তিতিল কে। তিতিল একবার তাকিয়ে আবার রান্নায় চোখ দিয়ে তরকারি নাড়তে লাগল। ইয়াদ ফ্রিজ থেকে পানি নামালে তিতিল নিজের জায়গায় দাঁড়িয়েই বলল,
“আম্মা আপনাকে কি শরবত করে দিব?”

তিতিলের ব্যস্ততার কারণে তিনি বলেন নি। কিন্তু শরবতটা খেলে আত্মা জুড়াত উনার। বললেন,
“দিলে ভালো হয়রে মা।”

“আপনি বসেন আমি করে নিয়ে আসছি।”

ইয়াদ ফিসফিস করে বলল,
“তোমার হাতের ঠান্ডা শরবত খেয়ে আমার মন কেও তৃপ্ত করো প্রিয়।”
মুখ ভেংচে তিতিল ফ্রিজ থেকে পানি আর লেবু নিল। ইয়াদ মুচকি হেসে চলে গেছে ড্রয়িংরুমে।

“আন্টি দেখো তরকারি টা যেন লেগে না যায়। নাড়াচাড়া দিও।” ফরিদা আন্টি কে এ কথা বলে তিতিল শরবত বানাতে চলে গেল।

নরমাল ফ্রিজের পানির সাথে তিতিল অনেকটা লেবুর রস নিয়েছে। বেশি গরমে লেবুর শরবত টাই ভালো লাগবে। অল্প চিনি আর বক্স থেকে টেস্টিস্যালাইন নিল সে। গরমে শরীরের ক্লান্ত ভাব টাও এতে দূর হয়ে যাবে। আবার খেতেও ভালো লাগবে।

“কি খাচ্ছো তোমরা?”

“গরম গরম চা খাচ্ছি খাবি?”

“এই গরমে তোমরা চা খাচ্ছো ভাইয়া?”

“কোথায় গরম? ঠান্ডায় ভাসছি আমরা।”

হিমা ভাইয়ের কথার মানে বুঝে ঠোঁট মুচড়াল। তিতিল কে বলল,
“তিতিল আপু কি বানাচ্ছো? লাচ্চি?”

“তোর ভাবি শরবত বানাচ্ছে।”

হিমা কে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে কপাল কুঁচকাল ইয়াদ। তিতিলের দিকে চেয়ে দেখল তিতিল শরবত রেখে তার দিকে গোল চোখে তাকিয়ে আছে। ইয়াদ পাশ ফিরে মায়ের মুখ দেখল। তিনি এতক্ষণ মুচকি হাসছিলেন ছেলের তাকানো দেখে এবার শব্দ করে হাসলেন। হিমাও নীরবে হাসছে। তিতিল বেশ লজ্জার মুখে পড়ে গেছে। লোক টা তাকে পদে পদে এমন বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিচ্ছে।

ইয়াদ হাসার চেষ্টা করল মায়ের দিকে তাকিয়ে। তারপর মাথা চুলকালো। ইনাও দুপুরে খাওয়ার জন্যে চলে এসে।
“কিছু কি হয়েছে? সবাই এখানে যে।”

“কি হবে আপু? সবাই তিতিল আপুর লেবুর স্পেশাল শরবত খাওয়ার জন্যে বসে আছে।”

“তাহলে তো ভালোই হবে।”

“আজ এত তাড়াতাড়ি চলে এলি যে?” বললেন রেহেলা বেগম।

“যা গরম। আর টিকে থাকা যায় না।”

“ঠিকি বলেছিস। তিতিল তোর হলো?”

“হ্যাঁ আম্মা হয়ে গেছে।”

তিতিল শরবত নিয়ে ড্রয়িংরুমে গেল। সবাই কে দেওয়ার পর গ্লাস নিয়ে ইয়াদের কাছে গেলে। মিষ্টি করে হাসল ইয়াদ। তিতিল সবটা আবেগ ঝেড়ে দিয়ে সে হাসির দিকে তাকালো এক পলক। সময় দীর্ঘস্থায়ী করার পূর্বেই চোখ নামিয়ে নিল সে।
তীক্ষ্ণ চোখে তাদের দেখল ইনা। হঠাৎ তার মা বলে উঠলেন
“কি রে ইনা? শরবত হাতে কি ভাবছিস?”

বলে চেয়েও ইনা কথা ঘুরিয়ে বলল “কিছু না মা খাও।”

শরবত খেয়ে সবাই বেশ প্রশংসা করা তিতিলে।

“তোমার হাতের ওই শরবত তো আমি কনকনে ঠান্ডাতেও খেতে পারব তিতিল। তবুও হৃদয়ে আমার উষ্ণই থাকবে ততক্ষণ যতক্ষণ তোমাকে জয় করতে না পারি।”

“কিরে ইয়াদ কি বিড়বিড় করছিস?”

ঘোর কাটল তার। জবাব দিল,
“কিছু না মা। আমার একটা কথা ছিল।”

“কি কথা?”

“…

“কিরে ভাই বল।”

“আমি ভেবেছি আজ ডিনার টা বাহিরে করব।”

“বাহিরে মানে?” কপাল কুঁচকে বললেন রেহেলা বেগম।

“কোনো একটা রেস্টুরেন্টে।”
ইয়াদ কথা শেষ করতেই হিমা লাফিয়ে উঠল। চঞ্চলতায় ভরপুর এই মেয়েটা বাহিরে খাওয়ার কথা উঠলেই হাতে চাঁদ সূর্য পেয়ে বসে।

“সত্যি ভাইয়া? আজ তুমি আমাদের রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবে?”

ইয়াদ তিতিলের দিকে তাকিয়ে বলল,
“হ্যাঁ সবাই যাবে।”

“ইয়ে কি মজা।”

ইনা বলল,
“তোর টাকার ট্রিট?”

“হ্যাঁ আপু।”

সে আবার জিজ্ঞেস করল,
“কি উপলক্ষে?”

ইয়াদ তিতিলের দিকে তাকল। তিতিল উত্তর শুনার জন্যে তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। চোখে চোখ পরতেই মুখের গঠন কঠিন করে ইনার দিকে তাকাল।

“ব্যস এমনি। সবাই রাতে তৈরি থেকো।”

তিতিল একটু চুপ থেকে বলল,
“আম্মা আমি কোথাও যাবো না।”

“কেন রে তিতিল? সবাই মিলে যাবো ভালোই লাগবে।”

“এমনি যাবো না আম্মা। আর আমার শরীর টাও ভালো লাগছে না।”

“তোমাকে একা রেখে যাবো কি করে আমরা?”

ইনার কথায় তিতিল জবাব দিল,
“কিছু হবে না আপু তোমরা যাও।”

হিমা বলল,
“কেন যাবে না আপু? তুমিও চলো না।”

“আমি যাবো না। তোমরা যাও হিমা।”

ইয়াদ শক্ত কন্ঠে বলল,
“সবাই এত করে বলার পরও কি তুমি শুনবে না তিতিল?”

সে জবাব দিল না ইয়াদের কথায়। শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
“আম্মা আমার মনে হয় আপনার ছেলের এই টুকও খেয়াল নেই আজ একটু বেশি গরম। এই অবস্থায় বাহিরের খাবার শরীর কে আরো খারাপ করতে পারে। আজ না গেলেই ভালো হয়।”

সবাই কিছুক্ষণ চুপ থাকল। রেহেলা বেগম বললেন,
“তিতিল ঠিক কথাই বলছে আজ না কাল সবাই মিলে যাবো।”

ইনাও রাজি হলো এতে। হিমা আর ইয়াদের মুখ শুকিয়ে গেছে। হিমা মন খারাপ করে উপরে চলে গেল। তিতিল চুপচাদ দাঁড়িয়ে ভাবতে বসেছে,
“আজ তো বললাম শরীর খারাপ। কাল কি বলে আটকাব? দূর একটা কিছু বলে সামলে নিব না হয়।”

ইনা ফ্রেশ হওয়ার জন্যে উপরে গেল। ধীর পায়ে রেহেলা বেগমও গেলেন গোসল করতে। ছেলে নিচে এনেছিল বলে এসেছেন। নয়তো উপরেই থাকতেন তিনি। আর উপরে যে গরম! সবাই চলে গেলে ড্রয়িংরুমে তিতিল আর ইয়াদ। ইয়াদ বসে আছে সোফায় আর তিতিল কি যেন ভাবছে।

“এটা একদম ঠিক হয়নি।”

তিতিল তাকাল ইয়াদের দিকে। ইয়াদের মুখের গতি দেখে হাসি পাচ্ছে তার বড্ড। ঠোঁট চেঁপে রেখেছে চেষ্টায়।

“ইচ্ছা করছে তোমায় এখন এই রোদে নিয়ে হাটাই।”

তিতিলের আরো হাসি পেল। হাসি চেঁপে রাখতে না পেরে তিতিল রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেল। যাওয়ার আগেই পিছন ফিরে তাকাল একবার। ঠোঁট টিপে হেসে আবার ঘুরে গেল সে। আহাম্মক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ইয়াদ। মাথায় কিছু আসছেই না ওইটুক একটা মেয়ে তাকে নির্বোধ বানিয়ে চলে গেল। মুখ খানিক হা হয়ে আছে ইয়াদের। চোখে বিস্ময় উবছে পড়ছে।

—-
রাতের খাওয়া দাওয়া করে তিতিল বাকি কাজ সেরে নিল। ইয়াদ তখন ফ্রিজ থেকে পানির বোতল নিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেছে। তিতিল কপাল কুঁচকে তাকিয়ে ছিল ওর দিকে। কেমন করে তাকচ্ছিল তার দিকে। ঠোঁট উল্টে মুখ ভেংচে তিতিল বাকি তরকারি নরমালে রেখে দিল। মাঝ রাতে তার বড্ড খিদে লাগে। তখন বিস্কিট খেলে গ্যাস হয়। মিষ্টি জিনিসটা তার ছোটবেলা থেকেই ভালো লাগে। আবার ফ্রিজ খুলে মিষ্টি দেখে মুচকি হাসল তিতিল। দুইটা সন্দেশ, একটা মিষ্টি আর ফ্রিজের পানি নিয়ে তিতিল ঘরে গেল। এইটুকতেই পেট ভরে যাবে তার। খিদে থাকলে তার ঘুম হয় না একদম।

হেসে তিতিল ঘরে গেল। হন্তদন্ত হয়ে দরজা বন্ধ করে পিছন ফিরতেই তিতিল চমকে গেল। শুকনো ঢোক গিলে তিতিল বিস্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিষ্পল চোখে।

চলবে♥

#ইস্ক
#সাদিয়া

১২
লোকটা তার সামনে এলেই হৃদপিন্ডের স্পন্দন বেড়ে যায় কেমন। কাঁপন ধরে শরীরে। ভেতরে সহস্র অনুভূতি গুলি এলোমেলো হয়ে খেলতে শুরু করে। ইয়াদ কে বিছানায় আধোশোয়া অবস্থায় দেখে আবারো শুকনো ঢোক গিলে নিল তিতিল। ভেতরটা পানির পিপাসায় চৌচির হয়ে আছে। কথায় আছে “যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়।”
তিতিল কে অবাক করা চোখে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইয়াদ মুচকি হাসল। কপাল কুঁচকে এসেছে এতে।
“আপনি এখানে কেন?”

“তুমি এখানে তাই।”

“….

“চলো।”

“কোথায়?”

“গেলেই দেখতে পাবে।”

“দেখার দরকার নেই আমার কিছু। আপনি যান।”

“….

“কি হলো যান?”

“তুমি যেমন টা বলবে।”

ইয়াদ চুপচাপ দরজার কাছে এসে খুলল। একপা দরজার ভেতরে অন্য পা বাহিরে ফেলতেই তিতিল দরজা লাগাতে গেল। তিতিলের দুর্ভাগ্য দরজা লাগানোর আগে আবার ইয়াদ হাত দিয়ে আটকাল তা। তার দিকে খানিক ঝুঁকে বলল,
“আমি কি একা যাবো?”

ইয়াদকে বেশ পছন্দ হলেও তার হেলাফেলা ভাব তিতিল কেন যেন নিতে পারে না। চোখ মুখ শক্ত করে বলল,
“একাই যাবেন আর যান।”

ইয়াদ আবার ভেতরে ঢুকল। কোমর পেঁচিয়ে তিতিল কে নিজের সাথে চেঁপে ধরল। তিতিল নিজেকে ছাড়াতে নাড়াচাড়া শুরু করে দিয়েছে।
“পাখির বাচ্চার মতো ছটফট না করে একটু শান্ত হও না প্রিয়।”

“ছাড়ুন আমাকে।”

“ওয়েট।”

তিতিল কে ছেড়ে দিল সে। তিতিল পা পিছিয়ে যেতে চাইলে তার আগে ইয়াদ তাকে কোলে তুলে নিল। এবার তিতিল গলা কাটা মুরগির মতো দাপাতে লাগল। ইয়াদ মুচকি হেসে বলল,
“মেয়ে বেশি ছটফট করবে তো ধপাস করে নিচে ফেলে দিব।”

“দিন না করেছে কে? ছাড়ুন আমাকে।”

“এই তুমি কি পুতুল?”

লাফানো রেখে তিতিল অবাক হয়ে তাকাল ইয়াদের দিকে।
“নাকি তুলো দিয়ে গড়া? এত পাতলা কেন তুমি? কিছু নিয়েছি কিনা সেটাই তো বুঝতে পারছি না। যাক এখন থেকে তোমাকে কোলে নিয়ে এক্সারসাইজ করা যাবে। আচ্ছা ৪০ কেজি হবে তো?”

তিতিলের রাগ হলো। দাঁত কিটে হাত পা ছুড়তে লাগল আবার ছুটার জন্যে।

ইয়াদ একদম নিজের রুমে গিয়ে থামল। তিতিল কে কোল থেকে নামিয়ে দিয়ে গিয়ে দরজা লক করল। রাগে তিতিল বলল,
“আপনি আমাকে এখানে আনলেন কেন?”

“….

“চুপ করে থাকবেন না বলুন।”

“থাকার জন্যে এনেছি।”

“আমি এখানে থাকতে চাই না।”

“কারণ জানতে চাই।”

“কোনো কারন নেই। আমাকে যেতে দিন।”

“সবকিছুরই কারণ থাকে। সো বলো।”

“আপনি সবটাই জানেন।”

“কি জানি বলো?”

তিতিলের এবার খুব রাগ হতে লাগল। জোর গলায় চোখ বন্ধ করে বলল,
“আমাকে এখান থেকে যেতে দিন।”

কিছুক্ষণ ঘরটা শুনশান নীরব ছিল। তিতিল যখন বুঝতে পারল এতটাও জোরে কথা বলা ঠিক নয় তখন নিস্তেজ গলায় বলল,
“দেখুন আপনি..”

তিতিল কে থামিয়ে দিয়ে ইয়াদ শান্ত গলায় বলল,
“তিতিল এই ঘরে থাকতে তোমার প্রবলেম কি?”

“প্রবলেম আছে। যেতে দিন।”

ইয়াদ ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে তিতিলের দিকে। ইয়াদ কে এভাবে দেখে তিতিলের বড্ড কষ্ট লাগছে। নিজেকে সামলাতে পারছে না। কি করা উচিৎ তাও বুঝতে পারছে না। মন আর বিবেক দ্বিধাধন্ধে আছে। দাঁত চেঁপে তিতিল নিজেকে শক্ত করার চেষ্টা করল।

“আমরা এক ঘরে থাকলে মা খুশি হবে। আর…”

তিতিল এবার তাচ্ছিল্যের সুরে হাসল। বলল,
“আম্মার খুশি?”

“….

“কোথায় ছিল আপনার মায়ের খুশি তখন যখন নিজের পছন্দে ছেলে কে বিয়ে করাল অথচ ছেলে দুই দিন যেতে না যেতেই বিদেশ চলে গিয়েছিল বউ রেখে?”

“….

“কোথায় ছিল তখন খুশি? এখন কথা বলুন। আপনি তো আমার মুখটাও না দেখে চলে গিয়েছিলেন। দুই বছর পর ডিভোর্সের জন্যে ফিরে কেন এমন করছেন আমার সাথে?”

ইয়াদ শান্ত গলায় বলল,
“আমি এখানে ডিভোর্সের জন্যে আসি না।”

“অথচ ঠিকি ওখানে দুই বছর আরাম আয়েশ থেকেছেন। যাকে বিয়ে করে গিয়েছিলেন একবার তার খুঁজ নিয়েছিলেন? আরে আপনার তো মনেই ছিল না বিয়ের কথা। ঠিক বলছি না?”

ইয়াদের বলার মতো কিছু নেই। মাথা নুয়ে অপরাধী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিতিলের সামনে।

“আমি যা বলছি ঠিকি বলছি। আপনি তো ওখানে মেয়েদের সাথে ভালোই করে সময় কাটিয়েছেন। আর এখানে বিয়ের নামে একটা মেয়েকে যে বেঁধে রেখেছিলেন তার কথা তো মনে ছিল না।”

“আমি ওরকম ছেলে নই তিতিল।”

“জানি আপনি ওরকম নয়। কিন্তু আমার কি দোষ ছিল? কেন দুইটা বছর অপেক্ষা করালেন আমায়?”

ইয়াদ তিতিলের চোখের দিকে তাকাল। তিতিলের চোখ গুলি তখন লাল হয়ে আছে। পানি গাল বেয়ে গলায় এসে পড়ছে। ভেতরটা কেঁপে উঠল তার। গলায় শক্ত কিছু অনুভব করছে সে। কষ্ট কি তার গলায় এসে কান্না হয়ে চেঁপেছে?

“আমাকে আপনি দুইটা বছর কষ্ট দিয়েছেন প্রতিটা সময় প্রতিটা মুহূর্ত। সদ্য বিয়ে হওয়া একটা কিশোরী কে বিরহের চাদরে আপনি মুড়িয়ে দিয়েছেন যেখান ভালোবাসার সাগরে ভাসার কথা ছিল আমার।”

“….
ইয়াদের বড্ড অপরাধী বোধ লাগছে। এভাবে আগে কখনো না ভাবলেও তিতিলের কথা গুলি বুকে বাণের মতো লাগছিল। বুকটায় কেমন ওজন পাথর চেঁপে বসেছে। ঢোক গিলতেও বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে ইয়াদ। চোখ গুলি লাল হয়ে উঠেছে তার।

“দুই বছর পর কেন আমার প্রতি এতটা দরদ বেড়ে গেল আপনার? আমার সৌন্দর্য দেখে নাকি দেহের জন্যে?”

দুনিয়ার সবচেয়ে নিচু মানুষ মনে হচ্ছে নিজের কাছে ইয়াদের এই মুহূর্তে। চোখ বন্ধ করে নিয়েছে সে। যেন কেউ এক দলা থুথু ছিটিয়ে দিয়েছে তার উপর। তাকাতে পর্যন্ত পারছে না ছেলেটা। ঘৃণায় দলা পাকিয়ে গেছে একদম।

“আজ আমাকে যদি অসুন্দর দেখতেন, কালো দেখতেন তখন কি করতেন আপনি? ছেড়ে দিতেন না? এক মুহূর্ত সহ্য করতেন আমাকে?”

ইয়াদ তাকাল তিতিলের দিকে। চোখের পাতা কাঁপছে তার।

“চুপ করে আছেন কেন? বলুন আমি সত্যি বলছি কিনা।”

ইয়াদ লাল লাল চোখ নিয়ে তিতিলের বাহু চেঁপে নিজের কাছে আনল। তিতিল তাকাল তার দিকে। টকটকে লাল চোখ গুলি দেখে আতকে উঠল তিতিল। কপাল কুঁচকে তাকিয়ে রয়েছে চোখগুলির দিকে। সরু লাল লাল রগ গুলিও যেন ভেসে উঠেছে ইয়াদের। ঠোঁট কাঁপতে লাগল ইয়াদের। এলোমেলো চোখে তিতিলের দিকে তাকাল। কাঁপা ঠোঁট আর ঘোর লাগানো কন্ঠে বলল,
“আমরা সবাই সৌন্দর্যের পাগল। তবে কারো চোখের সৌন্দর্য ভিন্ন রকম হয়। একেক জনের চোখে একেক ধরনের মানুষের সৌন্দর্যের মুগ্ধতা থাকে। সত্য এটাই ৯৮% মানুষই সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে একটা মানুষের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তাই বলে এই নয় যে সৌন্দর্যের কারণেই এমনটা হয় কিংবা দেহের। ভালোলাগা থেকেই শুরু হয়ে ভালোবাসা হয় এতে অস্বীকার করার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। কেউ যদি বলে আমি সৌন্দর্য নয় মানুষ দেখে ভালোবাসি তবে ওটা নিহাতি তার মুখোশের আড়ালে ভালো মানুষি কিংবা বোকামি। এই ভালোলাগা একসময় সমুদ্রের গভীরের চেয়েও বিশাল অনুভূতি সৃষ্টি করে একটা মানুষের অন্য একটা মানুষের প্রতি। আর সেই অনুভূতি গুলি তখন তাকে জানান দেয় হ্যাঁ ওই মানুষটাই তোমার। তুমি ওকেই চাও। তখন ওটাকেই মানুষ ভালোবাসা বলে দাবী করে। তবে শুরু ওই মুগ্ধতা থেকে হয়। অনুভূতির ঘরে তখন ভালোবাসা ঠাই মেরে বসে তিতিল।”

কাঁপা ঠোঁট গুলি নিয়ে ইয়াদ এখন তিতিলের দুই গালের পাশে হাত রাখল। তিতিল তখনো মুগ্ধতা নিয়ে মানুষটাকে দেখছে। এই মানুষটাকে নিয়ে অনুভূতির কি শেষ আছে তার? একদিনও তো বাদ নেই যে সে এই লোকের আশা স্বপ্ন করেনি। একটা বার লোকটার আলিঙ্গন পাওয়া প্রয়াস করা হয়নি। এমন তো একটা দিনও নেই তিতিলের। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে তার।

“তিতিল তোমাকে আমি পছন্দ করি এটা সত্যি। তাই বলে যে..”
ইয়াদে গলা ধরে আসছে এবার। লাল লাল চোখ গুলি দিয়ে এবার টুপ করে পানি পড়েই গেল। বুকটা একদম কেঁপে উঠেছে তিতিলের ওই একবিন্দু চোখের পানি দেখে।
ইয়াদ সাথে সাথে তিতিল কে ছেড়ে দিয়ে উল্টো পিঠে দাঁড়াল। নিজেকে সংযত করার চেষ্টা করে বৃদ্ধাঙ্গুলি দিয়ে চোখের পানিটা মুছে নিল। কান্নাভরা কন্ঠ নিয়ে ধীরেধীরে বলল,
“বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ো। আমি না সোফায় থাকব। তাতেও তোমার প্রবলেম হলে ব্যালকুনিতে কাটিয়ে দিতে পারব। রাত জেগো না শুয়ে পড়ো।”

কথাটা শেষ করে এক সেকেন্ড ইয়াদ ওখানে দাঁড়ায় নি। যতদ্রুত সম্ভব সে জায়গা ত্যাগ করে ব্যালকুনিতে স্থান নিল।

চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here