#বৃষ্টির_রাতে
#রূবাইবা_মেহউইশ
(২২)
হোস্টেলের সামনেই একটা কৃষ্ণচূড়া গাছ আছে খুব বড়৷ সে গাছটার ডালপালা জুড়ে সর্বক্ষণ কিচিরমিচির থাকে কিছু পাখির৷ আশেপাশে আরো কিছু রাধাচূড়া আর জারুল গাছ আছে কিন্তু কেন জানি পাখিগুলো সারাটা সময় শুধু এই কৃষ্ণচূড়া গাছটাতেই আনন্দ উৎসব করে। এমনিতে সবসময় সুপ্রভার ঘুম সঠিক সময়ে না ভাঙলেও আজ ভাঙলো। ঘুম থেকে জেগে সেই যে বিছানায় বসে জানালা দিয়ে সেই গাছটার দিকে চেয়ে আছে যেন সেখানে কোন গুরুত্বপূর্ণ কিছু চলছে তার দেখার মত৷ আদৌ সেখানে দেখার কিছুই নেই এই সিজনে ফুলও ফোটে না আর না গাছের পাখিগুলো ঠিকঠাক চোখে পড়ছে। তবুও দৃষ্টি উদাসী হয়ে সেদিকেই নিবদ্ধ অথচ মনে মনে আওড়াচ্ছে কালকের ঘটে যাওয়া সবটা। সৌহার্দ্যের সম্পর্কে যা শুনেছে সবটা মিথ্যে এজন্য না হয় পুরনো বন্ধুত্ব পুনরায় বহাল রাখা যায় কিন্তু সৌহার্দ্যের সাথে বন্ধুত্বটা কি রাখা ঠিক হবে? সে অলরেডি বিয়ের প্রস্তাব বড়দার কাছে একবার রেখেছে সেটার ঝামেলাই এখনো মিটেনি। তারওপর তার অনুভূতির খোলাসাও হয়ে গেছে সে এখন শুধু বন্ধু নয় আরো বেশি কিছু চায় সুপ্রভার কাছে। একটু গভীরভাবে ভাবলে বোঝা যায় সৌহার্দ্য আজ না হয় কাল আরো আগাতে চাইবে একটুখানি প্রশ্রয় পেলে৷ প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠেই গোসলে যায় সুপ্রভা তাই আজও এলোমেলো ভাবনার মাঝে কাপড় নিয়ে চলে গেল গোসলে। গোসল শেষে যখন সে রুমে আসলো তখন ফোন হাতে নিতেই মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। এখন মাত্র ভোর ছয়টা বাজে আর ও এত সকালেই গোসল সেরে চলে এলো! মুড তার এখন খুব বেশি খারাপ নেই ভাবতে ভাবতেই আবার মনে পড়লো কাল রাতে কি তাসিন তার মেসেজের রিপ্লাই দিয়েছিলো! দ্রুত সে মেসেজ অপশন ওপেন করলো আর তা করতেই বুকের ভেতর হৃৎপিন্ডটা বুঝি একটুখানি লাফিয়ে উঠলো। রিপ্লাই এসেছে এবং তা খুব ফাজলামোর সাথেই এসেছে।
” আমি কেন কল করবো ঝড় তুফানকে!”
এ কেমন মেসেজ লোকটার! সে আগেও খেয়াল করেছিলো তাসিন তাকে ঝড়, তুফান বলে সম্মোধন করেছে ফাজিল লোক একটা! মিটিমিটি হেসে সেও আবার মেসেজের জবাব লিখলো, “ওহ আচ্ছা তাহলে হয়ত কল লিস্টের নম্বরটা কোন জ্বীনের হবে।”
মেসেজটা সেন্ড করে সুপ্রভা ফোনটা রেখে বই নিয়ে বসলো। সামনেই পরীক্ষা অথচ এদিক ওদিকের চক্করে পড়াশোনাকে বিদায় দিয়ে বসে আছে সে। এখন আর মনটাকে ঘুরে বেড়াতে দেওয়া যাবে না। বইয়ে মুখ গুঁজে রইলো নিঃশব্দে।
সকালের রোদটা এখনো তেমন উত্তাপ ছড়াচ্ছে না। তবুও বেলকনির দরজা খোলা থাকায় সেদিক দিয়ে উঁকি মেরে আছে৷ যেন তাসিনের অন্ধকার ঘরটা আলোকিত করে তাকে মিষ্টি করে বলছে, “সুপ্রভাত মহাশয় এবার উঠে পড়ুন।”
গাঢ় নিদ্রা ভঙ্গে একটুও খারাপ লাগছে না তাসিনের কিন্তু হঠাৎ ঘরের আলোটা চোখের পাতায় ভারী ভারী লাগছে৷ বালিশের পাশ থেকে ফোনটা নিয়ে এক চোখ খুলে সময় দেখলো তাসিন৷ সাড়ে ছয়টা বাজে তারমানে এখন না উঠলেও চলবে৷ কিন্তু চোখের পর্দায় সময়ের সাথে আরো একটা কিছু চোখে পড়ায় ঘুমটা কর্পূরের মতো উড়ে গেল। ‘নিউ মেসেজ ফ্রম তুফান ‘ দেখতেই একটা উত্তেজনা অনুভব করলো তাসিন। কিন্তু কেন! এর জবাবটা সে কিছুতেই সাজাতে পারছিলো না তবুও ঠোঁটে হাসি টেনে মেসেজটা ওপেন করলো৷ ‘জ্বীন!’
মেয়েটা তাকে জ্বীন বলে সম্মোধন করছে? এবার জবাবে কি লেখা যায় এই ঝড় তুফানকে ভেবে পেলো না তাসিন কিন্তু ইচ্ছে করছে কিছু একটা লিখতে৷ কি লিখবে অনেক ভেবেও উত্তর সাজাতে না পেরে ফোনটা রেখে দিলো। প্রথমেই উঠে চলে গেল বেলকোনিতে। এত সকালে কি এক কাপ কফি পাওয়া যাবে! মনে হয় না রুলস রেগুলেশনের মধ্যে ম্যানেজার সাহেব সকালের ড্রিংক নিয়ে কিছুই বলেনি। তবে চিন্তা নেই তাসিন তার চা আর কফি সরঞ্জাম তো সঙ্গেই এনেছে৷ ঝটপট তোয়ালে নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেল তাসিন। ব্রাশ করে, গোসল সেরে তবেই বের হলো। ততক্ষণে ঘড়ির কাটা সাতটা পেরিয়ে গেছে। অফিসে থাকতে হবে নয়টায় এবং নাশতা সাড়ে আটটায় এমনটাই বলেছে শফিক সাহেব৷ এরই মাঝে হাবীব চাচা এসে একবার দরজায় কড়া নেড়ে গেছেন। ভালোই হলো পুরনো এই একজন মানুষ পেয়ে। মানুষটা শুধু পরিচিতই নয় আপনও বটে! তাসিন সময় দেখে এক মগ কফি বানিয়ে বেলকোনিতে দাঁড়ালো ফোনটা নিয়ে। উদ্দেশ্য ছিলো কফিটা শেষ করতে করতেই সুপ্রভাকে কিছু একটা লিখবে কিন্তু তার আগেই তার ফোনটা বেজে উঠলো। অচেনা নম্বর দেখে ভ্রু কুঁচকে কিছু সময় তাকিয়ে রইলো। কফিতে একটা চুমুক দিয়েই তার প্রথম যার কথা মনে হলো তাকে ভেবেই কুঞ্চন ভ্রু সোজা হয়ে গেল। ইচ্ছে করেই আর ফোনটা না তুলে অফিসের জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো। কফিটা আর শেষ হলো না সে নাশতা করতে চলে গেল। অফিসে যেতে যেতে একই নম্বর থেকে আরো দু বার কল এলো এবং তাসিন ভাবলো কলটা দশটার পর আর আসবে না। আবারও যদি আসে তবে নিশ্চয়ই দুপুর দুটোর পর আসবে। আর যদি না আসে তাহলে বোঝা যাবে তার সন্দেহ ভুল। নতুন অফিস, নতুন জায়গা বলে প্রথম দিন একটু আগেই গেল তাসিন আর হাবীব চাচা। সকালের রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় পরিবর্তন হলো দুপুরের মধ্যেই। লাঞ্চের পর আবারও মনে পড়লো সুপ্রভাকে রিপ্লাই করা হলো না। অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ায় হয়তোবা এখন আর সুপ্রভার মেসেজের রেশ ধরে রিপ্লাই দিতে ইচ্ছে হলো না। তাই খুব সাধারণভাবেই কিছু লিখতে চাইলো। অফিস ক্যান্টিনে জানালার পাশের এক চেয়ারে বসে কফি অর্ডার দিলো। মেঘাচ্ছন্ন আকাশটার দিকে তাকিয়ে মনে হলো মেয়েটাকে লেখার মত কিছুই পাচ্ছে না সে। মেসেজ অপশনে দুটো শব্দ লিখে সেন্ড করে দিলো ততক্ষণে কফি চলে এসেছে। আজকের দিনটা তার পানসে হয়ে আছে অফিসে আসার পর থেকে। এখানে নতুনদের সাথে পরিচিত হওয়ার মধ্যে কোন এক্সাইটমেন্ট নেই। এখানে সবাই যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে। কারো হাতে দুটো বাক্য বিনিময় মানেও সময় নষ্ট মনে হয়। ভদ্রতাসূচক কিছু লিখিত শব্দের বাইরে কেউ কোন কথা বলতে আগ্রহী নয় অথচ কাল সন্ধ্যের সেই এপার্টমেন্টের গ্যারেজের দৃশ্যটা সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিলো। অফিসের বাইরে সবাই সবার কত আপন আর কত ঘনিষ্ঠ! কফি শেষ করে বসা থেকে উঠতেই ফোনের স্ক্রীনে দেখা গেল সুপ্রভার রিপ্লাই।
ক্লাস শেষে বেরিয়ে লাইব্রেরির দিকে যাচ্ছিলো সুপ্রভা। গতকালের ঘটনার পর মেহরিনের আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি৷ আজ ভার্সিটিতে এসে চোখে চোখে খুঁজেছে সে অনেকবার না তো ক্লাসে ছিলো আর না ক্যাম্পাসে কোথাও। আনমনা হয়েই সে লাইব্রেরিতে ঢুকছিল ঠিক সে মুহূর্তেই মেসেজের টোন কানে এলো। লাইব্রেরিয়ান শ্যামল তখন তার পাশ দিয়েই ভেতরে যাচ্ছিল আওয়াজটা তিনিও শুনলেন। সাথে সাথেই তাকে সতর্ক করলেন, “ফোন সাইলেন্ট না করেই ঢুকছো মেয়ে!”
সুপ্রভা মাথা দোলালো মুখেও বলল ভুল হয়ে গেছে। সে আর লাইব্রেরিতে না ঢুকে একটু সরে দাঁড়ালো। ফোন হাতে নিয়ে চেক করলো তাসিন লিখেছে, “কেমন আছো?”
এত সাধারণ একটা প্রশ্ন কখনও তাসিন করতে পারে এটা যেন বিশ্বাস হলো না ঠিক৷ বার দুয়েক আবারও মেসেজটা পড়ে সে লিখলো, “তা জেনে আপনার কাজ?”
তাসিন তার ডেস্কে গিয়ে বসতেই রিপ্লাইটা পেল। সেও আবার কিছু লিখতে শুরু করলো তখনি কলটা এলো সেই অচেনা নম্বর থেকে। এবার রিসিভ করলো, কানে ধরে হ্যালোও বলল৷ কিন্তু সে যা ভেবেছিল তাই হলো। কয়েক সেকেন্ড পর কলটা কেটে গেল কোন কথা ছাড়াই৷ এবার তার একটু রাগ হলো। রাগটাকে পাশে রেখেই সুপ্রভাকে জবাব দিলো, “ঝড় তুফান কখনো সহজ হবে সেটা ভাবাই আমার বোকামি ছিলো।”
সুপ্রভা মেসেজটা পেয়ে হাসতে লাগলো। তারও জানা তাসিন ঝড় তুফান বলে তাকে সম্মোধন করে। হাসতে হাসতেই আবারও লিখলো, “আপনি নিজেকে বোকা বলতে চাইছেন? সিরিয়াসলি!”
তাসিন ডেস্কে বসে কম্পিউটার অন করেছে৷ এখন আর ফোনের নজর রাখা সম্ভব নয় তাই ফোনটা সাইলেন্ট করে পাশেই রেখে কাজে মন দিলো। সুপ্রভাও কয়েক মিনিট অপেক্ষার পর রিপ্লাই না পেয়ে লাইব্রেরিতে প্রবেশ করলো৷ টানা দু ঘন্টা পড়াশোনা করে বেরিয়ে পড়লো হোস্টেলের উদ্দেশ্যে। মেঘমালা এখন বৃষ্টি হয়ে ঝিরিঝিরি শব্দে ঝরা শুরু করেছে৷ বাতাসে হিম শীতলতা। বিকেলের শুরু অথচ পথঘাট কেমন সকালের মত মনে হচ্ছে সুপ্রভার। ব্যাগে তার বরাবরই একটা ছাতা থাকে তবে সেটা বৃষ্টির জন্য নয় বরং রোদ বাঁচিয়ে চলার জন্যই৷ বৃষ্টি পেলে সে ভিজতে ভালোবাসে। আজও ব্যতিক্রম নয়। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভিজলে সাইনাস এর ব্যথাটা নিয়েই যা চিন্তা। তীব্র বর্ষনে ভিজেও মাথাব্যথা দেখা দেয় না অথচ হালকা বৃষ্টির ছাঁট মাথায় লাগলেই ব্যথাটা জাঁকিয়ে আসে যেন কত ভালোবেসে আলিঙ্গনে আবদ্ধ করে। কিন্তু আজ আর মাথাব্যথার চিন্তা করতে ইচ্ছে হলো না কারণটা কি! কারণ যাইহোক লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে সোজা বেরিয়ে গেল হোস্টেলের উদ্দেশ্যে। রিকশা নিয়ে গেলে পাঁচ কি সাত মিনিটেই যাওয়া যায় কিন্তু তেমন করলে বৃষ্টিতে ভেজার স্বাদটুকু নেওয়া হবে না ভেবে হেঁটেই রওনা হলো৷ পাঁচ মিনিটের রাস্তা হেঁটে পনেরো মিনিট পর যখন হোস্টেলে ফিরলো তখন আবার একটা মেসেজ এলো ফোনে। রুমে ঢুকে গোসলে গেলেই ভালো হতো কিন্তু তা করার চেয়ে ফোনটাই যেন বেশি টানছিলো তাকে৷ ব্যাগ থেকে সেলফোনটা নিয়ে মেসেজ চেক করলো, “আমি বোকা নই সেটাই বলেছি। তোমার মত ঝড় তুফানের সেসব বোঝার ক্ষমতা নেই।”
এটাই লিখেছে তাসিন তা দেখে হাসি পেল খুব সুপ্রভার। লোকটা বাঁকা কথা খুব বলতে পারে তাতে নিঃসন্দেহ সে। কি লেখা যায় ভাবতে ভাবতেই মনে পড়লো তাসিন এখন ঢাকায়।
“আপনার বাঁকা কথা শুনে আকাশ কান্না করছে দেখেন।”
তাসিনের ব্রেক টাইম চলছিলো৷ দুপুরে কফি খেয়েছিল তাই এসময়ে আর কফি নয় পিয়নকে এক কাপ চায়ের কথা বলে চেয়ারে গা এলিয়ে মেসেজ লিখছে। পরনের স্কাই ব্লু শার্টের সুন্দর ইন করাটা এখন আর সুন্দর নেই। সারাদিনের কর্মব্যস্তায় কখন যে গুটিয়ে রাখা স্লিভ ঘামে একটু একটু ভিজে উঠেছে। এসি চলছে তবুও পিঢ আর বুকের কাছটায় ছিটেফোঁটা ঘাম স্পষ্ট। কপালের চুল গুলো আঙ্গুলের ডগায় আঁচড়ে নিয়ে সে আবারও টাইপ করলো, “আকাশ তো কাঁদছে না আনন্দ করছে। পানিবিলাস করছে আজ এক ঝড় তুফানকে আজ ঘুমন্ত দেখে।”
খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো সুপ্রভা। আজ সে কোমরবেঁধে ঝগড়া করছে না বলে কি লোকটা তাকে ঘুমন্ত ভাবছে! এবার আর তৎক্ষনাৎ কিছুই টাইপ করলো না সুপ্রভা৷ কেন জানি মনে হলো এই আলাপটা জিইয়ে রাখা যাক আরো কিছু সময়৷ রাতে না হয় দিবে পরের জবাবটা! কেন এমন ইচ্ছে হলো কে জানে তবুও কিছুতেই এখন আর সে জবাব দিলো না। তাসিনও পুনরায় কাজে মনোনিবেশ করলো। কাজের ফাঁকে দু বার সেই অচেনা নম্বর থেকে কল এলো। তাসিন তা দেখেও দেখলো না যেন। রাতে রুমে ফিরে ফ্রেশ হয়েই সে বাড়িতে ফোন করলো। মায়ের সাথে কথা বলার পরপরই ফোন করলো মামীকে৷ অনেকটা সময় নিয়ে ফোনকল গুলো সেরে আবার মেসেঞ্জারে ঢুকে বন্ধুদের সাথেও চলল গল্প আড্ডা। আজ অনেকদিন পর আইডির পার্শ্বচিত্রে ছবি বদল করলো সে। কক্সবাজারে তোলা একটা ছবি খুঁজে বেছে আপডেট দিলো। ছবিটাতে তার পরনে থ্রি কোয়ার্টার জিন্স, গায়ে কালো টি শার্ট আর কালো রেব্যানের সানগ্লাস। সমুদ্রের দিকে পিঠ থাকায় মনে হচ্ছে সমুদ্রের ফেনিল ঢেউ আছড়ে তার পিঠে পড়ছে আর মাথার দিকে নীল আসমান যার চারপাশে অসংখ্য সাদা মেঘের ছড়াছড়ি। আর একটু মনোযোগে খেয়াল করলে দেখা যায় তার ঠিক পেছনে দুটো হাত ছড়িয়ে রেখেছে কেউ। যেন ফেনিল ঢেউয়ের সামনে দাঁড়িয়ে কেউ তাকে পেছন থেকে জাপটে ধরতেই দু হাত ছড়িয়েছে। ছবিটি আপডেট দেওয়ার মিনিট পাঁচেক পরেই প্রথম যে কমেন্ট নোটিফিকেশনটি এলো তা সত্যিই আনএক্সপেক্টেড ছিলো তাসিনের জন্য। চোখের ভুল কিনা ভাবতেই তাসিন চোখ দুটো কচলে আবারও দেখলো, নাহ্ নাম তো এটাই ‘মেহউইশ রায়হান!’
“পেছনে কি করে অক্টোপাস হাত ছড়িয়েছে!” এমনটাই মেহউইশের কমেন্ট আর এতেই একসাথে দুটো ঝটকা লাগলো তাসিনের। প্রথমটা মেহউইশ কমেন্ট করেছে বলে আর দ্বিতীয়টি তার পেছনে সত্যিই কারো হাত দেখে। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকতে থাকতে অবশেষে বুঝতে পারলো হাতটির মালিক আর অন্য কেউ নয় স্বয়ং ঝড় তুফান ছিলো৷ আর মেহউইশকে সে আইডিতে এড করেছিলো কক্সবাজার থেকে আসার আগের দিন৷ অনেকটা কথাবার্তায় গল্প করতে করতেই এড করা হয়েছিলো কিন্তু কখনোই মেহউইশ কিংবা সে কেউ কারো আইডিতে কমেন্ট তো দূর রিয়াক্টও দেয়নি৷ আজকের পোস্টটি তার জন্য আরো কিছু চমক এনে দিলো৷ হতে পারে রিশাদ সাহেব জেলাস হয়েই অথবা স্ত্রীর পিছু পিছুই এসে হাজির হলো তার পোস্টে। হাসি পেল তাসিনের এই ভেবে, রিশাদের মত কাঠখোট্টা লোকটাও বউকে নিয়ে কতো বেশি পজেসিভ আর দুশ্চিন্তাময় থাকে! কিন্তু এই রাতের আঁধারে বেলকোনিতে বসে ফোন ঘাটতে ঘাটতে আশ্চর্যজনক ভাবেই সে অনুভব করলো এই মুহুর্তে সে বিশেষ একটি মেসেজের কমতি অনুভব করছে৷ মনে মনে চেয়ে বসলো এই আলো আঁধারিময় বেলকোনিতে বসে সে আরেকটি মেসেজ পড়তে এবং নিজেও কিছু বলতে। তার চাওয়া পূরণ হলো সত্যিই একটি মেসেজ এলো তবে তা কাঙ্ক্ষিত নয় অনাকাঙ্ক্ষিত এক নম্বর থেকে৷
চলবে