#রংধনুর_আকাশ
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
পর্ব-২২
৪১।
আজ হুট করেই কি ভেবে মিসেস মাসুমা আকতার মারিয়ার কলেজে চলে গেলেন। তিনি অনেক দিন ধরেই ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার জন্য ছটফট করছিলেন। কিন্তু এতোদিন প্রহর কোনো মেয়েই পছন্দ করছিলো না। তবে শেষমেশ প্রহরের কলেজ পড়ুয়া মেয়েই পছন্দ হলো। মিসেস মাসুমা আকতার মেয়ের ছবি দেখে যতোটাই না খুশি হয়েছিলেন, ততোটাই দমে গিয়েছিলেন মেয়ের বয়স শুনে। তার সরকারী চাকুরীজীবি ছেলের জন্য তিনি কলেজ পড়ুয়া মেয়ে চান নি। তিনি চেয়েছিলেন ছেলের বউয়ের অন্তত অনার্স পাশটা হোক। কিন্তু ছেলের তো সেই একটা মেয়েই পছন্দ হয়েছে।
কলেজের গেইট দিয়ে ঢুকতে ঢুকতেই তিনি চিন্তা করছেন, তার এক মেয়ে সামলাতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে, এখন আরেকটা বাচ্চা মেয়েকে পুত্রবধূ করে ঘরে তুললে, তাকে কিভাবে সামলাবেন!
পরক্ষণেই বিড়বিড় করে বললেন,
“সমস্যা নেই। এই বাচ্চা মেয়েটাই তো সারাজীবন আমার সাথে থাকবে। প্রিয়া তো একদিন বিয়ে করে শ্বশুড়বাড়ি চলে যাবে।”
মাসুমা আকতার এসব ভাবতে ভাবতেই আনমনে হাসলেন আর বললেন,
“এখনো বিয়েই তো ঠিক হয় নি৷ আর এদিকে বউ ঘরে তোলার আগেই আমি স্বপ্ন দেখছি।”
মাসুমা আকতার এদিক ওদিক তাকিয়ে মহুয়ার বান্দরবানে বই হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই ছবিটির দিকে তাকালেন। তারপর একজনকে জিজ্ঞেস করলেন,
“আচ্ছা, বাবা, এই মেয়েটাকে দেখেছো?”
ছেলেটা মাসুমা আকতারের হাতে থাকা ছবিটি ভালোভাবে দেখে বলল,
“ইনি তো আমাদের সিনিয়র আপু।”
“তুমি মেয়েটাকে চেনো?”
“হ্যাঁ, তাকে তো সবাই চেনে। আমাদের কলেজের জনপ্রিয় মুখ, মারিয়া নাওয়াল।”
“জনপ্রিয়? কিভাবে জনপ্রিয় হলো, একটু বলবে?”
“আন্টি, এই আপু, নাচ-গান, আবৃত্তি সবই পারে। কলেজের দায়িত্বগুলোও সব তার হাতেই থাকে। এক কথায় অলরাউন্ডার। আর তার চলাফেরা তো মন্ত্রীদের মতো। আপুকে উঠতে বসতে তোয়াজ করতে হয়। কলেজের ছেলেগুলো আপুকে প্রচন্ড ভয় পায়। একদিন তো এই আপুটা একটা ছেলেকে কষে চড় লাগিয়ে দিয়েছিলো, আর এরপর ছেলেটা এক মাস কলেজে আসে নি।”
মাসুমা আকতার উদ্বিগ্ন কন্ঠে ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলেন,
“কেন চড় লাগিয়েছিলো?”
ছেলেটি হেসে বলল,
“সেই ছেলেটি অনেকদিন ধরেই স্কুলের একটি মেয়ের সাথে প্রেম করছিলো। তারপর আবার আরেকটি মেয়ের সাথে..”
মাসুমা আকতার গালে হাত দিয়ে বললেন,
“কলেজের বাচ্চাগুলো এতো পেকে গেছে? আমাদের সময়ে কলেজে শুধু পড়াশোনায় হতো।”
ছেলেটি মাসুমা আকতারকে বললেন,
“আচ্ছা আন্টি, আমি যাই। আমার ক্লাস আছে।”
মাসুমা ছেলেটির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
“আচ্ছা, যাও বাবা। মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করবে।”
ছেলেটি চলে যাওয়ার পর মাসুমা আকতার মনে মনে সন্তুষ্ট হলেন, এই ভেবে যে তার হবু বউ মা ওতোটাও বাচ্চা মেয়ে নয়। যেই মেয়ে একটা ছেলেকে সৎ পথে আনার জন্য শাসন করেছে। সেই মেয়ে নিজেও অবশ্যই ভালো মনের হবে।
এসব ভাবতে ভাবতেই মাসুমা আকতার নিজের নাম শুনে ঘাড় ঘুরিয়ে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের সহপাঠী সাবিলাকে দেখে চমকে উঠলেন।
সাবিলা মাসুমার কাছে এসে বললেন,
“মাসুমা তুই? কেমন আছিস? কতো বছর পর দেখা হলো।”
মাসুমা সাবিলার হাত ধরে বললেন,
“আমি ভালো আছি। সাবিলা, তোর তো অনেক পরিবর্তন হয়েছে।”
“হ্যাঁ, বয়স হচ্ছে তো। কিন্তু তুই সেই আগের মতোই আছিস।”
মাসুমা আকতার হাসলেন, আর বললেন,
“তোর ঘর-সংসার কেমন চলছে?”
“অনেক ভালো। চারটা ছেলে আছে।”
“চারটা ছেলে! মাশাল্লাহ।”
“মেয়ে চেয়েছিলাম একটা। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা ছেলেই দিয়েছেন। এখন দুইজনের জন্য বউ এনেছি। বাকী দুইজন এখনো পড়াশোনা করছে। আর তোর কি অবস্থা?”
“আমার এক ছেলে, এক মেয়ে। এখন ছেলের জন্য বউ খুঁজতে এলাম।”
কথাটি বলেই মাসুমা আকতার হাসলেন। সাথে সাবিলাও হেসে বললেন,
“আমাদের কলেজে তোর ছেলের বউ! কলেজ সেকশনে তো অবিবাহিত কেউ নেই। তুই কি স্কুল সেকশনের কথা বলছিস?”
“কেন তোদের কলেজের সব শিক্ষার্থীদেরই কি বিয়ে হয়ে গেছে?”
“শিক্ষার্থী? কি বলিস? আমি তো ভাবলাম, তুই টিচারদের কথা বলছিস। তাই বললাম, স্কুল সেকশনে সদ্য অনার্স পাশ করা অনেক মেয়েই শিক্ষিকা হিসেবে ঢুকেছে।”
“আমি তোদের কলেজের একটা মেয়েকেই খুঁজছি।”
“তোর ছেলে কি করে?”
“সরকারী কর্মকর্তা।”
“আর তুই কলেজের মেয়ে খুঁজছিস কেন? মেয়ে বেশি ছোট হয়ে যাবে না?”
“সাবিলা, আমিও তো তাই ভাবছিলাম। কিন্তু ছেলের যে পছন্দ হয়ে গেছে সেই মেয়েকে। আমার একমাত্র ছেলের পছন্দ কি ফেলে দেওয়া যায়? তবে আমি বউমাকে পড়াশোনা করাবো।”
“আচ্ছা মেয়েটা কে? হয়তো চিনতেও পারি।”
মাসুমা আকতার ছবি দেখিয়ে বললেন,
“এ-ই সেই মেয়ে।”
সাবিলা ভালোভাবে ছবি দেখে বললেন,
“মারিয়ার মতোই তো লাগছে।”
মাসুমা আকতার হেসে বললেন,
“হ্যাঁ, মেয়ের নাম মারিয়াই।”
সাবিলা অবাক কন্ঠে বললেন,
“মারিয়া নাওয়াল?”
“হ্যাঁ। মেয়েটা কেমন? লক্ষ্মী হবে তো?”
“আরেহ, কিসের লক্ষ্মী! সারাদিন ফাজলামো করে। পড়াশোনার আশেপাশেও নেই।”
“কি বলিস? একটা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলাম, সে যে বললো অলরাউন্ডার।”
“আরেহ, পড়াশোনা ছাড়া সবদিক দিয়েই অলরাউন্ডার।”
“পড়াশোনায় ভালো না?”
“ওতোটাও খারাপ না। তবে সারাদিন কলেজে এসে ঘুরবে, একটা ক্লাসও করবে না। আবার এদিকে কিভাবে যেন পরীক্ষায় পাশও করে ফেলে।”
“কলেজে এসে খারাপ কিছু করে না তো!”
“আরেহ না, ওই দিক থেকে ঠিক আছে। মেয়েটা মনের দিক থেকে অনেক ভালো, ওই একটু চঞ্চল স্বভাবের আর কি।”
মাসুমা আকতার মনে মনে বললেন,
“আমি যতোদূর জানি প্রহর তো শান্তশিষ্ট মেয়েই পছন্দ করতো। তাহলে হঠাৎ ওর চঞ্চল মেয়ে কিভাবে পছন্দ হয়ে গেলো?”
তারপর তিনি আবার সাবিলাকে বললেন,
“আচ্ছা, মেয়ের সাথে একবার দেখা করিয়ে দে তো।”
“এই মাত্র তাদের ক্লাস থেকে বের হলাম। দুই দিন ধরে কলেজে আসে নি। শুনলাম তার বড় ভাইয়ের বিয়ে হয়েছে। তাই হয়তো ছুটিতে আছে।”
“আচ্ছা, শোন। তুই মেয়ের পরিবারের সাথে একটু কথা বলে দেখ। উপকার হবে অনেক।”
“আচ্ছা, বলবো। আর ওর মাকে আমি চিনি। আরিয়া ফেরদৌস, নামকরা ফ্যাশন ডিজাইনার। চট্টগ্রামে তার অনেক দোকান আছে। ভদ্র মহিলা কিন্তু অনেক বোল্ড পারসোনালিটির। অল্প বয়সে মেয়ে বিয়ে দেওয়ার মতো মন-মানসিকতা তার নেই।”
“আর মেয়ের বাবা কি করে?”
“ওরা তো বাবার সাথে থাকে না। শুনেছি অনেক বছর আগেই ওর বাবা-মার ডিভোর্স হয়ে গেছে। তবে ওই ব্যাপারে আমি ওতো ভালোভাবে জানি না।”
কথাটি শুনে মাসুমা আকতারের মুখটা অন্ধকার হয়ে গেলো। তিনি মলিন মুখে ঘরে ফিরে এলেন।
৪২।
স্বস্তিকা মাফিনের পথ আটকে দাঁড়িয়ে রইলো। আর মাফিন পকেটে হাত ঢুকিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।
স্বস্তিকা ক্ষুব্ধ কন্ঠে বললো,
“আপনি আমাকে এভাবে অবহেলা কেন করছেন?”
মাফিন বিরক্তির সুরে বলল,
“তোমার অদ্ভুত কথাবার্তাগুলো আমার মোটেও শুনতে ইচ্ছে করছে না।”
“আমি কি এমন অদ্ভুত কথা বলেছি?”
“এসব বাদ দাও। আগে বলো, আমার অফিসের ঠিকানা কিভাবে পেয়েছো?”
“আম্মিজান দিয়েছেন। আচ্ছা, আমি শুনলাম, মারিয়ার জন্য ছেলে দেখছে।”
মাফিন ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“তোমাকে কে বলেছে?”
“আন্টিই তো আজ ফোন দিয়ে বললো, মারিয়ার জন্য ছেলে খুঁজছে। আর আম্মিজানকে জানালো ভালো ছেলে খুঁজে পেলে জানাতে।”
মাফিন চলে যেতে নেবে তখনই স্বস্তিকা আবার মাফিনের পথ আটকে ধরে বলল,
“আমি এক্ষুণি চলে যাবো। আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।”
“কি প্রশ্ন? তাড়াতাড়ি করো।”
“আপনার কি এই বিয়েতে মত নেই? আপনি কি অন্য কাউকে ভালোবাসেন?”
মাফিন শান্ত কন্ঠে বললো,
“আমার এই বিয়েতে নয়, কোনো বিয়েতেই মত ছিলো না। বরং আমার এই মুহূর্তে বিয়ে করারও কোনো ইচ্ছে নেই।”
স্বস্তিকা মলিন মুখে মাফিনের দিকে তাকিয়ে রইলো। মাফিন আবার বলল,
“আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হলো, না। আমি কাউকেই ভালোবাসি না। আমার প্রেমের সম্পর্ক থাকলে, আমি কি ডোরেমনকে বিয়ে করার জন্য হ্যাঁ বলতাম?”
স্বস্তিকা কথাটি শুনে মনে মনে হাসলো। কিন্তু মুখে মলিনতা রেখে বলল,
“আমি একটু খাটো, তাই আপনি আমাকে ডোরেমন বলেন, তাই না?”
“শুধু খাটো না, মোটুও।”
স্বস্তিকা মলিন মুখে বলল,
“এভাবে কাউকে বলা উচিত নয়। সবাই তো আর পারফেক্ট হয় না। আমি যেমনই হই, আমাকে আমার বাবা-মা, আত্মীয়-স্বজন সবাই অনেক ভালোবাসে। আপনার যদি মনে হয়, আমি আপনার জন্য উপযুক্ত নই, তাহলে আমাকে জানিয়ে দিন। বিয়ে তো একবারই করবো। তাই আমি চাই না, এমন কেউ আমাকে বিয়ে করুক, যে আমাকে তার উপযুক্ত মনে করে না।”
স্বস্তিকার কথা শুনে মাফিন তার গালে হাত রেখে বলল,
“আই এম সরি। আমি তো তোমাকে কখনোই বলি নি, তুমি আমার উপযুক্ত নও! আমি তো তোমাকে আদর করে ডোরেমন বলি।”
মাফিনের স্পর্শ পেয়ে স্বস্তিকা কেঁপে উঠলো। স্বস্তিকার ইতস্ততভাব দেখে মাফিন হাত সরিয়ে বলল,
“সরি, সরি। আমাদের তো এখনো আক্দই হয় নি।”
স্বস্তিকা মনে মনে বলল,
“আমি এখন আপনাকে কিভাবে বলবো যে আমার আপনার এই স্পর্শটা অনেক ভালো লেগেছে? মাফিন, যেদিন আমাদের এনগেজমেন্ট হয়েছিল, আমি সেদিনই মন থেকে মেনে নিয়েছি, আপনি আমার বর হবেন। এখন এই বিয়েটা ভেঙে গেলে, আমার অনেক খারাপ লাগবে। আমাদের পরিচয়টাও খুব বেশিদিন আগে হয় নি। তাই হয়তো আমরা একে অপরকে ভালোভাবে বুঝতে পারছি না। আর ভালোবাসাটা ওভাবে সৃষ্টিও হয় নি। কিন্তু ধীরে ধীরে আপনার প্রতি মায়া বাড়ছে। তাই এই সম্পর্ক ভেঙে গেলে, আমি হয়তো অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়বো।”
মাফিন তুড়ি বাজিয়ে বলল, “কি ভাবছো?”
স্বস্তিকা বলল,
“আমি চাই, আমাদের আক্দটা আমার পরীক্ষার আগেই হয়ে যাক।”
“এতো তাড়াহুড়োর কি আছে?”
স্বস্তিকা এবার মনে মনে বলল,
“তাড়াহুড়ো না করলে যদি আবার হারিয়ে ফেলি।”
“কি হলো? চুপ করে আছো যে!”
“এভাবে দেখা করা আর কথা বলা তো সম্ভব নয়। আব্বা অনুমতি দেবেন না। আর আজ আম্মিজানকে অনেক কষ্টে রাজী করিয়েছি। আব্বা জানলে তো আমাকে অনেক বকবেন। তাই, বিয়ে করে ফেললে আমি যখন তখন আপনার সাথে দেখা করতে পারবো।”
“বিয়ে করলে তো তুমি আমাদের বাসায় থাকবে। আবার আলাদাভাবে দেখা করতে হবে কেন?”
“পরীক্ষা পর্যন্ত তো আব্বার বাসায় থাকবো।”
“ঠিক আছে তো। পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করো কয়েক মাস।”
“না, অপেক্ষা করবো কেন? ছেলে যেহেতু ঠিক করা আছে, অপেক্ষা করে লাভ কি? আর ততোদিনে আমরা একজন আরেকজনকে আরেকটু জানলাম।”
মাফিন মুচকি হেসে বলল,
“এটাই কি তাহলে বরের সাথে প্রেম করার নিনজা টেকনিক? বিয়েও করবে, আবার আব্বার বাসায়ও থেকে যাবে।”
স্বস্তিকা মুচকি হাসলো। মাফিন একটা রিকশা ডেকে স্বস্তিকাকে বলল,
“যাও, এখন বাসায় যাও। তোমার আব্বা জানলে, কিন্তু বকবে।”
স্বস্তিকা রিকশায় উঠে বিড়বিড় করে বলল,
“আমি বুঝি না উনার সমস্যা কোথায়? মানুষ সুযোগ পেলে হবু বউয়ের সাথে সময় কাটাতে চায়। আর তিনি যতোবারই আমাকে দেখেন, যাও যাও বলে দূরে সরিয়ে দেন। ধার্মিক মন-মানসিকতা হলে বুঝতাম, হয়তো পাপ হবে তাই দূরে দূরে থাকতে চাইছে। কিন্তু সেই মন-মানসিকতাও তো তার মধ্যে নেই।”
রিকশা চলে যাওয়ার পর মাফিন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“যদিও মেয়েদের অভিমান ভাঙানো সবচেয়ে সহজ কাজ। কারণ মিষ্টি কথায় তারা গলে যায়। কিন্তু সেই মেয়েদেরই প্যাঁচালো প্রশ্নের জবাব দেওয়া সবচেয়ে কঠিনতম কাজ। কারণ সোজা উত্তরে এরা সন্তুষ্ট হয় না।”
চলবে—