রজনী #শারমিন আঁচল নিপা #পর্ব- ৬

0
331

#রজনী
#শারমিন আঁচল নিপা
#পর্ব- ৬

সেই বাচ্চাটা আয়েশার মুখ চেপে ধরে গলাটা ঝাপঁটে ধরে ঝুলে আছে। আয়েশা দম নিতে পারছে না। তার দম ভারী হতে লাগল। চোখের কোণে অশ্রু ফোটা পরিলক্ষিত হলো। এদিকে তূর্ণা স্তবির হয়ে গেল। কী থেকে কী করবে বুঝে উঠতে পারছে না। ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। আয়েশার ভয়ে বুক কাঁপছে।।শরীরটা তার অসাড় হয়ে যাচ্ছে। বরফের মতো হয়ে হিম হয়ে যাচ্ছে। হাত, পা চাইলেও নড়াতে পারছে না। তবুও সমস্ত শক্তি খাটিয়ে হাতটা উঠিয়ে মুখে চেপে রাখা বাচ্চাটার হাত ধরে সরিয়ে চেঁচিয়ে বলল

– তূর্ণা কিছু একটা কর। এভাবে হিম হয়ে দাঁড়িয়ে থাকিস না। বাচ্চাটাকে সরা আমার ঘাড়ের উপর থেকে। আমি একা পারছি না।

তূর্ণার যেন সম্ভিত আসলো। বরফ হওয়া শরীরটা আয়েশার কথা শুনে হালকা সচল হতে লাগল। নিজেকে বেশ সামলে বাচ্চাটাকে ধরল। আয়েশাও সমস্ত শক্তি খাটিয়ে বাচ্চাটাকে ধরে দূরে আঁচড়ে ফেলল। বাচ্চাটা পেছন পেছন গড়িয়ে আসতে লাগল তাদের। আর তারা দুজনও দৌড়াতে লাগল। কোন পথে যাচ্ছে তাদের কোনো খেয়াল নেই। পা দুটো আর চলছে না। দুজনেই হাঁপিয়ে বসে পড়ল। পেছন দিকে খেয়াল করে দেখল বাচ্চাটা আর নেই। নিজেদের মধ্যেই যেন স্বস্তি ফিরে পাচ্ছিল দুজন। আশপাশ তকিয়ে দুজনেই বেশ আশ্চর্য হলো। এটা কোথায়? তারা এ কোন জায়গায় আসলো! এ জায়গা তো এর আগে আশেপাশে কখনও দেখে নি। চারপাশে ভাঙা ইটের দেয়াল বিদ্যমান। এর ভেতরে একটা ইটের স্তূপ টিলার মতো হয়ে আছে।

– আয়েশা এর আগে কি, এমন কিছু কোথাও দেখেছিস? এটা কোন জায়গায় আসলাম আমরা?

– আমিও বুঝতে পারছি না। আমি তো কখনও এ এলাকায় এমন কিছু দেখেনি। ছোট থেকে এ এলাকায় থাকি।

– নিশ্চয় কোনো ভৌতিক বাড়ি। হয়তো রাতে জেগে উঠে আবার দিনে হাওয়া হয়ে যায়। এমনও হতে পারে এ বাড়িকে ঘিরেই রহস্য আছে। আমরা সবসময় যা দেখি তার আড়ালে অনেক কিছুই হয় যা আমাদের জানা নেই। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। এ দেয়ালের ভেতর কী একবার যাব নাকি উল্টো পথ ধরব।

– ভয় তো লাগছেই। দুজন মেয়ে এমন জায়গায় ভয় লাগারেই কথা। বিপদ আপদ বলে আসে না। তবে এ জায়গাটা যেহেতু হুট করেই গড়ে উঠেছে সুতরাং এখানে লাফাঙ্গা ছেলে থাকবে না। মাঝে মাঝে ভূতের ভয় থেকে মানুষকে ভয় বেশি হয়। একটু ভেতরে গিয়েই দেখি। হয়তো কিছু ক্লো পাওয়া যাবে।

– তুই বললে যেতে মানা নেই। রহস্যের পেছনে যখন ছুটছি তখন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া বেমানান না।

দুজনেই দেয়ালের একপাশ দিয়ে ভেতরে ঢুকল। ভেতরে ঢুকতেই জায়গাটার পরিবর্তন চক্ষুগোচর হলো তাদের। চারপাশ আলোয় ঝলমল করে উঠতে লাগল। ভাঙা সেই ইটের স্তূপ থেকে একটা মহল হয়ে গেল। মনে হচ্ছে কোনো রাজার রাজত্বে তারা দুজন। ঘর থেকে নুপুরের আওয়াজ আসছে। আয়েশার কানে আসতেই সে একটা ঘোরে চলে গেল। নিজেকে সামলে উঠতে পারছে না। দৃষ্টি সামনে রেখে শুধু এগুতো লাগল। আয়েশার এ পরিবর্তনে তূর্ণা কিছুটা ভীত হয়ে গেলেও নিজেকে সামলে নিয়ে তার পেছন পেছন যেতে লাগল। মহলের ভেতরে আয়েশার অনেক তৈল চিত্র দেখে তূর্ণা অবাক হয়ে গেল। সে ভাবতে লাগল তাহলে এ ঘটনার পেছনে আয়েশার কোনো সংযোগ রয়েছে না তো! এদিকে আয়েশাও চারপাশ খেয়াল করতে লাগল আর বিস্মিত হতে লাগল। সবকিছু তার বেশ চেনা। কিন্তু কেন চেনা তার কারণ সে পাচ্ছে না। এমন সময় একটা বাজ পাখি এসে আয়েশার চুলের এক কোণ টেনে ছিঁড়ে নিয়ে গেল। সাথে সাথে তার মনে হলো কিছু একটা তার ভেতর প্রবেশ করেছে। সে নিস্তেজ হয়ে অসাড় হয়ে গেল। আয়েশাকে মাটিতে পড়ে যেতে দেখে তূর্ণা আয়েশার কাছে গেল দ্রূত। তাকে ধরা মাত্রই সে কটমটিয়ে তাকাল। উঠেই তূর্ণার চুল গুলো টেনে ধরল। তূর্ণার বুঝতে কষ্ট হচ্ছে আয়েশা কেন এমন করছে৷ চিল্লায়ে বলতে লাগল

– আয়েশা কী হয়েছে তোর? এমন করছিস কেন?

সাথে সাথে আয়েশা চুল ছেড়ে দিল। আয়েশার দেহটা শূন্যে ভাসতে লাগল। তূর্ণার ভয়ে হাত পা কাঁপতে লাগল। আয়েশা শূন্যে ঘূর্ণিপাক খাচ্ছে আর তূর্ণা আস্তে আস্তে পিছুচ্ছে। তূর্ণা পিছাতে পিছাতে কিছু একটায় ঠেঁকল মনে হয়। পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল তোহা। মৃত তোহাকে জীবিত হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে জোরে চিৎকার করল। তোহা তূর্ণার হাতটা ধরে বলল

– আমি আত্মা। আমি মৃত হলেও সাহায্য করতে চাই। আয়েশার ভেতরে রজনীর আত্মা প্রবেশ করেছে। সে চাইলেও স্বাভাবিক হতে পারবে না। আমি চাই না আমার মতো কারও জীবন এভাবে শেষ হয়ে যাক৷ আমার মধ্যেও রজনীর আত্মা ছিল কীভাবে যেন তার বশে চলে গিয়েছিলাম। একটা ভুল করার সাথে সাথে আমাকে সে খুন করে ফেলে। তুমি নিজেকে শান্ত করো। আমি তোমাকে পথ বলে দিব যেভাবে, সেভাবে কাজ করবে।

তূর্ণা দম নিল। ভয়ে গা ছমছম করছে। তোহাকে বিশ্বাস করবে কী না বুঝতে পারছে না। তবুও ক্ষীণ গলায় বলল

– কি ভুল করেছিলে যে তোমার পরিণতি এমন হলো?

– আমার সন্তান হচ্ছিল না। ডাক্তার বলল আমি কোনোদিন মা হব না। এক সাধুর কাছে যাই। মায়ের মন তো কত কিছুই করতে চায়। একটা সন্তানের জন্য মরিয়া হয়ে উঠি। সাধু বলল যদি আমি কোনো পুরুষের বিয়ের আগের রাতে তার নাম কাগজে লিখে,তারপর সে নামের পাশে সাধুর নির্দেশ মতো হরফ লিখে পুড়াই তাহলে সে অদৃশ্য হয়ে যাবে এবং তার পরিবর্তনে আরেকজনের মৃত্যু হবে। তবে তার রূপ অদৃশ্য ব্যক্তির ন্যায় হবে। সে কে সেটা আমিও বুঝব না। তারপর সে লোকটার হাতে পায়ে কালো কালি দিয়ে তার নির্দেশ দেওয়া হরফ লিখতে হবে। লেখার পর আরও কিছু স্টেপ বলে দিবে সেভাবে আমাকে কাজ করতে হবে।

সাধুর কথা সেদিন শোনার পর থেকে আমার মাথায় শুধু বাজতেছিল কার বিয়ে হবে আর কবে সে সুযোগ কাজে লাগাব। একটা সন্তান যে আমার চাই। নাহয় এ শূন্য সংসার কখনও পরিপূর্ণ হবে না। দুমাস কেটে গেল। আশে পাশে পরিচিত কারও বিয়ে হলো না। এদিকে আমার মাথায় শুধু সাধুর কথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। হুট করে তাসকিনের বিয়ের দাওয়াত আসে। আমি আর সুযোগটা হাত ছাড়া করেনি। আমি জানতাম তাসকিন অদৃশ্য হবে তবে সেটা মাত্র দেড়মাসের জন্য কিন্তু সে বেঁচে থাকবে তার পরিবর্তে অপরিচিত এক ব্যাক্তি তার রূপ ধরে মৃত্যু বরণ করবে। আর কাজটা করলে আমার বাচ্চা হবে। আমি নিজেকে সামলাতে পারলাম না। কারণ যেহেতু সে মৃত ব্যক্তিকে আমি চিনব না সুতরাং সে মরে গেলে বা বেঁচে থাকলে আমার কিছু আসবে যাবে না। একটা বাচ্চার জন্য এটুকু করতে আমার বিবেকে বাঁধল না। তাসকিনের বাসায় আসার আগে আমি সাধুর কাছে গেলাম। সমস্ত নিয়ম জেনে আসলাম। নিয়ম অনুযায়ী আমি কাগজে হরফ গুলো লিখলাম তাতে তাসকিনের নাম লিখে আতর মিশালাম। তারপর সবাই যখন ঘুমিয়ে গেল তখন রুমের একপাশে বসে কাগজ গুলো পুড়াতে লাগলাম মোমবাতির আলোয় সে সাথে একটা আগরবাতি ধরিয়ে নিলাম। সাধু বলেছিল এ কাজ করার সময় কেউ ঘুম থেকে উঠতে পারবে না। আমিও আপন মনে কাজটা করা শেষ করলাম। কাজটা শেষে ঠিক যেমনটা চাচ্ছিলাম তেমনটায় হলো। তাসকিনের রুপ ধরে অন্য একজন মারা গেল। সনিয়াও একটা ঘোরে চলে গেছিল। কারণ তাকে আমি বিশেষ সুঘ্রাণ দিয়ে বশ করে ফেলেছিলাম। যখন সে সুঘ্রাণের বাইরে যেত তখন সে নিজের মধ্যে স্বাভাবিক থাকত কিন্তু যখন সে সুঘ্রাণের মধ্যে থাকত তখন সে আমার বশে থাকত।এদিকে কাজ শেষে সে মৃত ব্যাক্তির হাতে পায়ে হরফ গুলো লিখে একটা বিশেষ পানি ছিটিয়ে চলে আসি। সব কিছু নিয়ম মাফিক চলছিল। তবে একটা ভয়ংকর কাজ করে ফেলি। আমাকে সাধু বলেছিল পরদিন যেন কালো কোনো কাপড় দিয়ে তাতে তার নির্দেশ মতো হরফ লিখে আতর মিশিয়ে মোমবাতিতে পুড়াই। কিন্তু আমি ভুলক্রমে আতরের পরিবর্তে গোলাপ জল দিয়ে ফেলি। আর সে ভুলের জন্য সব এলোমেলো হয়ে গেল ঘটে গেল ভয়ংকর এক ঘটনা।

কথাটা বলেই তোহা চুপ হয়ে গেল। তোহার নীরবতা দেখে তূর্ণা ছটফট গলায় বলে উঠল

– কী ঘটনা বলো আমায়।

তোহা বলা শুরু করল। তূর্ণা যতই শুনছিল ততই তার গা শিউরে উঠছিল।

(কপি করা নিষেধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here