নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ৫১

0
819

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫১

পরেরদিন সকাল হয়ে যায় কিন্তু আব্রাহামের কোন খবর নেই। যে হোটেলে আব্রাহাম তার মিটিং এটেন্ড করছিলো রাশেদ গাড়ি নিয়ে সেই হোটেলে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু আবহাওয়া প্রচন্ড পরিমাণে খারাপ থাকার কারণে আর যাওয়া হয় নি। সব রাস্তা-ঘাট বন্ধ পরে আছে। যার ফলে রাশেদ যেতে পারে নি। ফোনের ওপর ফোন করে যাচ্ছে আব্রাহাম কে, মেসেজ করছে কিন্তু নো রেসপন্স। অফিসের আগুন নিভে গেছে। প্রায় ৪ টা কেবিনের মতো সব জ্বলে পুড়ে গেছে। তবে কেবিন গুলো বেকার আর তাতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিছু না থাকায় বেচে গেছে। রাশেদ অফিসেই আছে, অফিস পুরো পুরি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত সকল স্টাফ দের আসা নিষেধ করে দিয়েছে। সবাই আব্রাহাম কে খুঁজে চলেছে। সবার কথা যার অফিসে আগুন লেগেছিলো তার নিজেই কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। রাশেদ দেখলো আব্দুল গাড়ি নিয়ে বাইরে এসে পরেছে। তাকে দেখে রাশেদ দ্রুত ছুটে যায়।

রাশেদ;; আপনি এসেছেন?

আব্দুল;; জ্বি।

রাশেদ;; স্যার কোথায়? স্যার কে এত্তো ফোন দিচ্ছি, মেসেজ, ই-মেইল কোথায় উনি?

আব্দুল;; কি বলছেন এইসব। আব্রাহাম বাবা তো গতকাল রাতেই এখানে আসার জন্য রওনা দিয়েছেন।

রাশেদ;; কি? তাহলে এখনো আসলো না কেনো। আর রাস্তা-ঘাট…..

আব্দুল;; না না রাস্তা-ঘাট কয়েক ঘন্টা পর্যন্ত বন্ধ ছিলো এখন তো খোলাই।

রাশেদ;; আরে আশ্চর্য তাহলে স্যার কোথায়?

আব্দুল;; তা তো জানি না। আব্রাহাম বাবা আমাকে ফাইল নিয়ে পরে আসতে বলে সে এখানে এসে পরেছিলো। এই দেখুন গাড়ি টাও আলাদা। আমি বাবা কে যেই গাড়ি করে নিয়ে গিয়েছিলাম ওটা দিয়ে বাবা একাই এসে পরেছে। তারপর আমি অন্য গাড়ি দিয়ে আসি।

রাশেদ;; তো এভাবে বলা নেই কওয়া নেই কোথায় গেলেন স্যার? অফিসে এতো বড়ো একটা কান্ড হলো তা জেনেও তো এভাবে স্যার কখনোই বসে থাকবেন না।

এবার যেনো চিন্তার পাহাড় মাথায় এসে পরলো।


অন্যদিকে আইরাতের মন-মেজাজ খুব বেশি খারাপ। কাল দুপুরের দিকে বের হয়ে গেলো আব্রাহাম, আইরাতের সাথে কিছুটা কথা কাটাকাটি করেই। রাতে কমপক্ষে আইরাত ১০০ বারের ওপরে ফোন করেছে কিন্তু ফোন বন্ধ মেসেজ দিতে দিতে হাত ব্যাথা ব্যাথা হয়ে গেছে। আর আব্রাহাম তো বাইরে আইরাতকে ছাড়া কখনোই থাকবে না। আর যদি কোন কারণ বশত থাকতেও হয় তাহলে অন্তত একটা মেসেজ করে হলেও আইরাতকে জানিয়ে দিতো। সারারাত ঘুম নেই আইরাতের চোখে। আইরাত হলরুমে পা গুটিয়ে বসে ছিলো আব্রাহামের অপেক্ষায় কিন্তু সে নেই। সকাল হলে ইলা হলরুমে এসে দেখে আইরাত গালে হাত দিয়ে বসে আছে।

ইলা;; কিরে এভাবে বসে আছিস যে আর এতো সকালে উঠে পরেছিস?

আইরাত;; আব্রাহাম আসে নি।

ইলা;; কি?

আইরাত;; হ্যাঁ

ইলা;; আব্রাহাম তো কখনোই বাইরে থাকে না তাহলে আজ?

আইরাত;; বুঝতে পারছি না। এত্তো ফোন দিচ্ছি কিন্তু পাচ্ছি না।

ইলা;; গেলো কোথায়?

আইরাত;; দাদি শুনো তুমি রনিত কে দেখো আমি অফিসে যাচ্ছি।

ইলা;; একা যাবি?

আইরাত;; হ্যাঁ একাই যাবো আর এখনই যাবো। তুমি থাকো। আমার আর কিছু ভালো লাগছে না।

আইরাত উঠে শুধু হাতে নিজের ফোনটা নিয়ে চলে যায়। প্রায় বেশ কিছুক্ষণ পর আইরাত অফিসে চলে যায়। কিন্তু অফিসের নকশা কিছুটা ভিন্ন। আইরাত কপাল কুচকে ভেতরে যায়। যেতেই দেখে রাশেদ এক দৌড়ের ওপরে আছে।

আইরাত;; রাশেদ!

রাশেদ;; ম্যাম আপনি?

আইরাত;; আব্রাহাম কোথায়?

রাশেদ;; বাড়িতেও নেই উনি?

আইরাত;; বাড়িতেও নেই মানে কি? মিটিং ছিলো ওর রাইট?

রাশেদ;; ম্যাম আসলে গতকাল জানি না কীভাবে আগুন লেগে যায় অফিসের পেছনের কেবিন গুলোতে। সেই সব কেবিনে কাজ হয় না খালি পরে আছে তবে আগুন কি করে লাগলো তাই জানি না।

আইরাত;; আব্রাহাম মিটিং থেকে ফিরে নি। অফিসে আগুন লেগে গেছে এটা জানার পর অবশ্যই সে হাত গুটিয়ে বসে থাকবে না।

রাশেদ;; স্যার কে কোথাও পাওয়াই যাচ্ছে না। আমি ফোন করেছি কিন্তু নেই। আব্দুল চাচা যে ছিলো উনি পর্যন্ত এসে পরেছেন কিন্তু স্যার নেই।

আইরাত;; কি বলছেন কি এইসব? এখন চিন্তায় আমার কিছু ভালো লাগছে না। মানুষ টা তাহলে কোথায় গেলো?

রাশেদ;; ম্যাম প্লিজ চিন্তা করবেন না। আমি গার্ড দের আর পুলিশ অফিসার দের সেই রাস্তার সবদিকে পাঠিয়ে দিয়েছে তারা খুজছে।

আইরাত;; আমার কিচ্ছু ভালো লাগছে না।

আইরাত তারপর অফিসেই থেকে যায়। বাড়িতে ফোন দিয়ে কয়েকবার ইলা আর রনিতের খবর নিয়েছে। কিন্তু সময় সময়ের মতো যেতে থাকে তবুও আব্রাহামের আসার নাম নেই। সময় যতো দ্রুত এগোচ্ছে আইরাতের চিন্তা ততোই যেনো বেড়ে যাচ্ছে। পুলিশ রা আব্রাহামের ফোন লাস্ট কখন আর কোথায় সুইচ অফ হয়েছিলো তা ট্রেক করে। আর ভাগ্য ক্রমে সেই পাহাড়ি রাস্তায় আব্রাহামের ফোন ট্রেক করে পাওয়া যায়। লাস্ট সেখানেই বন্ধ হয়েছিলো। পুলিশ রা সেখানে যায়। রাস্তায় কিছু একটা থাকলে অবশ্যই পেতো। এখানে রাতের বেলা যেমন গাড়ি-ঘোড়া কম চলাচল করে দিনের বেলা ঠিক তার দ্বীগুন হারে যাতায়াত করে। তাই রাস্তায় কিছু হলে অবশ্যই কারো না কারো নজরে তো পরতোই। চারিদিকে বেশ গাছ পালা। পুলিশ অফিসার রা খেয়াল করে দেখে যে নিচে গভীর খাদ। কোন ক্রমে এখানে কিছু একটা হয়নি তো। নিচে জঙ্গল টা গভীর হলেও সার্চ করতে হবে। এই জঙ্গলে যাওয়ার অনেক রাস্তাই আছে তবে বেশ উঁচু নিচু। খোঁজ চালানোর জন্য একদল পুলিশ ফোর্স কে সেই জঙ্গলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ঘন্টা খানেক তালাশি করার পর কেউ তো কোন মানুষ কে খুঁজে পায় নি তবে গাড়ির কিছু অংশাবিশেষ খুঁজে পাওয়া গেছে। গাড়িটা খুব বাজে ভাবে ভেঙে গেছে। পুলিশ রা দ্রুত রাশেদ কে ফোন করে।

অফিসার;; হ্যালো

রাশেদ;; হ্যালো অফিসার কিছু খোঁজ পেলেন?

অফিসার;; আসলে আমরা তো আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি তেমন কিছুই পাই নি তবে আবার পেয়েছিও। এখানে একটা গাড়ির প্রায় অনেক গুলো টুকরো পেয়েছি। যেনো ওপর থেকে নিচে খাদে এই গাড়ি টাকে ফেলে দেওয়া হয়েছে এমন।

রাশেদ;; কি আবল-তাবল বলছেন এইসব। আপনারা ভালো করে দেখুন।

অফিসার;; জ্বি আসলে আমি জানি ব্যাপার টা অদ্ভুত কিন্তু যা পেয়েছি তাই বললাম।

রাশেদ;;

অফিসার;; জঙ্গল তো গভীর তাই সেখানে আমাদের গিয়ে খোজাখুজি করা সম্ভব না আরো ভালো ভাবে খোজার জন্য মেশিন আনা হয়েছে। এখন আপনারা যদি এখানে একটু আসতেন তাহলে সুবিধে হবে।

রাশেদ;; জ্বি আসছি।

রাশেদ এই বলেই ফোন কেটে দেয়। রাশেদের মুখ টা কালো দেখে আইরাত বলে ওঠে….

আইরাত;; কি হয়েছে? আব্রাহাম কে পাওয়া গেছে?

রাশেদ;; ম্যাম আমাদের একটু বাইরে যেতে হবে।

আইরাত;; চলো।

রাশেদ আর আইরাত গাড়িতে বসে পরলো। পথ টা দূরে তাই যেতে যেতে প্রায় এক ঘন্টার কাছাকাছিই লেগে গেলো। রাশেদ কে গাড়ি একটা পাহাড়ি রাস্তায় থামাতে দেখে আইরাত কপাল কুচকে তার দিকে তাকায়।

আইরাত;; আমরা এখানে কেনো এলাম?

রাশেদ;; ম্যাম এখানেই স্যারের ফোন লাস্ট সুইচ অফ হয়েছিলো আর এখানেই সব পুলিশ অফিসার রা আছে।

আইরাত;; মানে কি এখানে ফোন বন্ধ হয়েছিলো মানে। আর পুলিশ রা কেনো?

রাশেদ;; ম্যাম চলুন।

আইরাত দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে পরে। বাইরে এসেও দেখে প্রায় অনেক পুলিশ। তারা বেশ বড়ো সড়ো সার্চ মেশিন দিয়ে খাদের ভেতরে খোঁজার চেষ্টা করছে। আইরাতের মনের ভেতরে এগুলো দেখে ১০১ টা হাতুড়ি পেটাতে শুরু করে দিয়েছে। পুলিশ অফিসার রাশেদ কে দেখে এগিয়ে যায়।

রাশেদ;; কি হচ্ছে এইসব?

অফিসার;; সরি টু সে মিস্টার রাশেদ তবে খবর বেশি ভালো না।

রাশেদ;; কি হয়েছে?

অফিসার কিছু বলতে যাবে তার আগেই খাদ থেকে মেশিন দিয়ে একটা আধা ভাঙা গাড়ি তোলা হয়। গাড়িটা দেখেই আইরাতের শরীরে কাটা দিয়ে ওঠে। এটা আব্রাহামের গাড়ি।

আইরাত;; অফিসার কি বলতে চাচ্ছেন?

অফিসার;; ম্যাম আসলে সরি। কিন্তু আব্রাহাম স্যারের এক্সিডেন্ট হয়েছে অনেক বাজে ভাবে। কেননা এটা উনারই গাড়ি। আব্রাহাম স্যারের ভাঙা ফোনটাও আমরা পেয়েছি। (আইরাতের দিকে একটা ফোন এগিয়ে দিয়ে)
আর এখানে যেই বড়ো খাদ মনে হয় না কেউ একবার পরলে বেচে ফিরতে পারবে।

আইরাত;; মুখ বন্ধ করুন। এটা কোন ভাবেই সম্ভব না। আব্রাহাম করবে এক্সিডেন্ট, জীবনেও না। ওর ড্রাইভিং একদম নিখুঁত। এক্সিডেন্ট হবার প্রশ্নই আসে না আর সেখানে কিনা এতো বড়ো………

অফিসার;; কিছু স্যাম্পাল পাওয়া গেছে। আসুন।

রাশেদ আর আইরাত অফিসারের সাথে চলে যায়। অফিসার আর কিছু না বলেই একটা ঘড়ি, সানগ্লাস, আর একটা ওয়ালেটও পেয়েছে যাতে আইরাতের ছবি ছিলো। বাকি গুলো যেমন তেমন। আইরাত যখন ওয়ালেট টা দেখলো আর তার ভেতরে নিজের ছবি তখন যেনো আইরাতের মাথায় আকাশ ভেঙে পরলো। এগুলো পুলিশরা অনেক খোঁজাখুজির পর পেয়েছে। আইরাতের হাত কাপছে। এটা কি আদৌ সম্ভব? আব্রাহামের এক্সিডেন্ট। কীভাবে হলো? কি থেকে কি হচ্ছে।

অফিসার;; ম্যাম আমাদের মাফ করবেন সেই সকাল থেকে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি কিন্তু খাদে কোন মানুষ তো দূর মানুষের চিহ্ন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। আর এখানে বন্য প্রাণি রাও রয়েছে। আব্রাহাম স্যারের এক্সিডেন্ট হয়েছিলো সন্ধ্যারাতে আর পুরো রাত পেরিয়ে এখন এতো সময় হয়ে গেছে।

আইরাত;; এখন বলতে কি চাইছেন আপনারা?

অফিসার;; ম্যাম মনে হয় স্যার মারা…..

আইরাত;; চুপ করুন। ক ক কি য যাতা ব বলে য যাচ্ছেন। ভ ভুলেও এমন ক কথা ম মুখে আনবেন না। আ আ আপনার সা সাহস হয় কি করে এমন ব বলার। আব্রাহামের কিছুই হয় নি। আপনারা একদিন খুজেই এমন বলছেন। কি ফাউল পুলিশ অফিসার আপনারা। খুজুন আব্রাহাম কে। খুজতে থাকুন। আব্রাহামের কিছুই হয় নি। এক্সিডেন্ট মানুষের হয় না। হয় ই তো তাই বলে কি সে…….. আরো খুজুন। কিছুই হয় নি আব্রাহামের।

রাশেদ;; ম্যাম প্লিজ একটু শান্ত হন। আপনি বাড়ি যান।

আইরাত;; না আমি আমার আব্রাহাম কে ছাড়া বাড়ি যাবো না। আমার আব্রাহাম কে নিয়েই যাবো। ওকে চাই আমার। আর আপনি (অফিসার) দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মুখ কি দেখছেন যান খুজুন।

আইরাত রেগে আছে অনেক। মাথা নষ্ট হয়ে গেছে তার। পুলিশ অফিসার অবস্থা বুঝতে পেরে চলে গেলেন। আইরাত আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। তাই সে হাটা দিলো। এসে গাড়ির ভেতরে বসে পরে। পাশে থাকা পানির বোতল টা নিয়ে ঢক ঢক করে খেয়ে ফেলে। হাত পা রীতিমতো কাপছে। বারবার আল্লাহ কে ডেকে যাচ্ছে। যা ভাবছে সে তা যেনো না হয় কোন ভাবেই যেনো না হয়। এমন কিছু হবার আগে আইরাত মরে যাক কিন্তু প্লিজ এমন কিছু যাতে না হয়।

সেইদিন টা এভাবেই কেটে যায়। আইরাত তো আসতেই চাইছিলো না সেখান থেকে কিন্তু রাশেদ আর বাকিরা অনেক বুঝিয়ে বাড়ি পাঠায় তাকে। পুলিশ অফিসার রা নিজেদের ঘুম হারাম করে আব্রাহাম কে খুজছে। আইরাত বাড়ি চলে এলে ইলা তাকে ঝাপটে ধরে।

ইলা;; কিরে কোথায় ছিলি তুই? আর একা এসেছিস কেনো আব্রাহাম, আব্রাহাম কোথায়?

আইরাত;;

ইলা;; কিরে কিছু বল

আইরাত;; আব্র আব আব্রাহামের এ এক্সিডেন্ট হ হয়েছে।

ইলা;; কি?

আইরাত;; অফিসের পেছন সাইটে আগুন লেগেছিলো। রাশেদ আব্রাহাম কে ফোন করে আসতে বলেছিলো আব্রাহাম আর আসে নি। আজ যখন অফিসে যাই তখন রাশেদ আমাকে এক পাহাড়ি জায়গায় নিয়ে যায়। সেখানে অনেক পুলিশ অফিসার রা ছিলো। আব্রাহাম গতকাল রাতে সেখান দিয়েই আসছিলো তবে তার এক্সিডেন্ট হয় আর তাকে খুঁজে পাওয়া যায় নি। তার গাড়িটা পাওয়া গেছে যা ভেঙে একাকার। ফোন, ওয়াচ আর ওয়ালেট পাওয়া গেছে যাতে আমার ছবিও ছিলো।

আইরাত মূর্তির মতো করে কথা গুলো বলে গেলো। আর ইলা আইরাতের কথা শুনে সোফার ওপর ধপ করে বসে পরলো। ইলার আহাজারি শুরু করে গেছে। আব্রাহামের সাথে এমন হয়েছে তা যেনো কেউ বিশ্বাসই করতে পারছে না। কিন্তু যা যা প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে এটাই স্পষ্ট যে আব্রাহামের এক্সিডেন্ট হয়েছে আর সে খাদে পরে গেছে। কেননা যাই পাওয়া গেছে সেগুলো সবকিছু খাদ থেকেই উদ্ধার করা হয়েছে।

আইরাত কাউকে কিছু না বলেই সোজা নিজের রুমে চলে যায়। চোখে পানি গুলো যেনো চিকচিক করছে। আইরাত রুমের ভেতরে গিয়ে ফ্লোরে ধপ করে বসে পরে। দুইহাত দিয়ে নিজের মাথার চুল গুলো চেপে ধরে। জোরে জোরে শ্বাস নেবার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। আব্রাহামের সাথে এটা হতেই পারে না। কীভাবে হলো? আইরাতের এই প্রশ্ন টাই যেনো মাথায় আসছে। তখনই আইরাতের মাথায় রায়হানের কথা টাও আসে। রায়হান কিছু করে বসে নি তো আবার। কিন্তু রায়হান তো লন্ডনে সে সেখান থেকে কীভাবে কি করবে ও। আইরাত তো আর এইটা জানে না যে রায়হান দেশে ফিরেছে তাই সে তায়হানের কথা টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে। আর এছাড়াও এখন এই মূহুর্তে তার মাথায় আব্রাহাম ছাড়া আর কারো কথা আসছেও না। আইরাত হাউমাউ করে কেদে দেয়। দিনটা এভাবেই যায়। আইরাত সারাদিনে এক ফোটা পানি পর্যন্ত মুখে দেয় নি। ইলার শরীর ভালো না তাই বাধ্য হয়েই আইরাত ইলা কে ঘুমের মেডিসিন দিয়ে ঘুম পারিয়ে রেখেছে। আইরাত রনিতকে নিজের কোলে নিয়ে বসে আছে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছে। ঘুমিয়ে পরেছে ও, ছেলেটাও আজ আব্রাহাম কে না দেখতে পেরে বেশ অনেক বার তার কথা জিজ্ঞেস করেছে। আইরাত কোন রকমে বুঝিয়ে রেখেছে। এক ফোটা ঘুম নেই আইরাতের চোখে। আব্রাহামের কথা গুলো কানে বাজছে। চেহারা টা চোখের সামনে জ্বলজ্বল করছে। রাত যখন প্রায় তিন টার কাছাকাছি তখন হঠাৎ আইরাতের ফোনে ফোন আসে। যদি আব্রাহামের কোন খবর হয় তাই আইরাত দ্রুত ফোন টা রিসিভ করে। আর আইরাত যা শুনে তাতে আইরাতের আত্নার পানি পুরো শুকিয়ে গেছে। হাত থেকে ফোনটা তার আপনা আপনিই নিচে পরে যায়।





চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here