নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ৫০

0
650

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫০

আব্রাহামের আজ অনেক বড়ো একটা ডিল সাইন করতে হবে। ফরেইন থেকে কিছু ক্লাইন্ট আসবে। আর এটা আব্রাহাম + তার কোম্পানির জন্য অনেক বেশিই গুরুত্বপূর্ণ। আব্রাহাম আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে হাতে ঘড়ি পরছে। তার দুচোখ যেনো আইরাতকেই খুঁজে চলেছে কিন্তু আইরাত ঘরে নেই সে নিচে হলরুমে।

আব্রাহাম;; আইরাত! আইরাত!

__________________________________

আব্রাহাম;; আইরাত! আইরাত! আইরাত!

তখনই রুমে একজন স্টাফ আসে হাতে কফি নিয়ে।

স্টাফ;; স্যার আসবো?

আব্রাহাম;; আইরাত কোথায়?

স্টাফ;; স্যার ম্যাম তো নিচে মানে কাজ করছে আর কি।

আব্রাহাম;; ওকে যে আমি এখানে ডাকছি তার কি? (রেগে)

স্টাফ;; স্যার আ আপনার ক কফি।

আব্রাহাম;; রেখে যাও।

স্টাফ কফি টা রেখে দ্রুত চলে যায় রুম থেকে। এদিকে আইরাত ইলা আর রনিত কে নাস্তা বেরে দিচ্ছে। আব্রাহাম তার জেকেটের হাতা ফোল্ড করতে করতে নিচে নেমে আসে। আইরাত সেদিকে তাকায়।

আইরাত;; এসেছেন আপনি আস………

আব্রাহাম;; কফিটা আমি তোমার হাতে রুমে নিয়ে যেতে বলেছিলাম।

আইরাত;; হ্যাঁ কিন্তু আমি এখানে একটু কাজ করছিলাম তাই……

আব্রাহাম;; কফি রুমে দিয়ে আসতে বেশি একটা সময় ব্যয় হতো না নিশ্চয়ই।

আইরাত;; আচ্ছা কি হয়েছে? স্টাফ দিয়ে এসেছে না কফি। একই তো হলো।

আব্রাহাম;; না এক না। সবসময় আমার সাথে তোমার ত্যাড়ামি না করলে চলে না তাই না।

আইরাত;; আরে আজব।

আব্রাহাম তার ভারি ভারি কদম গুলো ফেলে হলরুম থেকে বের হয়ে গেলো। আর আইরাত অবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।

আইরাত;; বুঝলাম না এইটুকু কথায় এতো রাগ করার কি আছে। আমি কি খালি বসে আছি নাকি কাজ করছি তো। একজন দিয়ে এলেই তো হবে, আমার হাতেই কফি খেতে হবে নাকি। রাগ যেনো নাকের ডগায় থাকে, আজাইরা।

ইলা;; তোদের মাঝে কি কিছু হয়েছে?

আইরাত;; আরে না দাদি কিছুই না। শুধু কফি টা আমি নিজে গিয়ে দিয়ে আসি নি দেখে এমন করছে।

ইলা;; জানিসই যে ছেলে টার রাগ মাত্রাতিরিক্ত, কাজ আমি করতাম তুই গিয়ে দিয়ে আসতি।

আইরাত;; আরে ছাড়ো তো একটু পরই ভালো হয়ে যাবো।

.
.

আব্রাহাম গাড়িতে করে যাচ্ছে তবে অফিসে না। মিটিং টা হবে কোন এক ফাইভ স্টার হোটেলে। কানে এয়ার পড আব্রাহামের সেটা দিয়েই কথা বলছে।

আব্রাহাম;; সবকিছু রেডি আছে?

রাশেদ;; জ্বি স্যার সবই রেডি। শুধু আপনি ওখানে যাবেন। ক্লাইন্ট গুলোও এসে পরেছে।

আব্রাহাম;; ওকে।

রাশেদ;; স্যার আপনি বললে আমিও ওখানে যাই?

আব্রাহাম;; না থাক। তুমি ওইদিক টা সামলাও আর আমি এখানে দেখছি।

রাশেদ;; আচ্ছা স্যার।

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়। হোটেলে যেতেই আব্রাহামের সময় লাগে প্রায় আধ ঘন্টা। আগে থেকেই সব এরেঞ্জ করা আছে। কেননা সবাই জানে আব্রাহাম আসবে। আব্রাহামের যেতেই কতোগুলো বিদেশি লোক এগিয়ে আসে। তারপর তারা ভেতরে চলে যায়।


অন্যদিকে আজ একদম সকাল বেলাই রায়হান & প্রীতি বাংলাদেশে এসে পরেছে। রায়হান প্রীতি কে নিয়ে নিজের দুই নাম্বার বাড়িতে চলে যায়। সেখানেই বসে আছে। প্রীতি ওয়াইন খাচ্ছিলো তখন হঠাৎ বলে ওঠে….

প্রীতি;; এখন কি করবে?

রায়হান;; এখন না যা করার রাতে করতে হবে।

প্রীতি;; তুমি আসলে করতে কি চাচ্ছো বলতো?

তখনই ভেতরে ২-৩ জন লোক আসে। প্রীতি তাদের দেখে বেশ অবাক হয়।

প্রীতি;; এরা কে?

রায়হান;; এখনই বুঝে যাবে, ওয়েট।

প্রীতি খেয়াল করে দেখে লোক গুলোর হাতে বিভিন্ন ধরনের সারজিক্যাল জাতীয় জিনিস। প্রীতির মাথায় তো কিছুই ঢুকছে না। অবশেষে রায়হান বলে ওঠে….

রায়হান;; বলছিলাম না আইরাত হতে হবে।

প্রীতি;; এখন কি সার্জারি করবো নাকি?

রায়হান;; না। এটা পরতে হবে। আর সম্পূর্ণ কালো কালারের কাপড় পরবে। লাইক হুডি। আইরাত আর তোমার হাইট প্রায় মিলে যায়। মুখে মাস্ক তো পরেই থাকবে।

প্রীতি;; ওয়েট তুমি ফেইক আইরাত হতে বলছো আবার মাস্কও পরতে বলছো কেনো।

রায়হান;; লিসেন মানুষের চামরা দিয়েই অর্থাৎ অনেক সময় মৃত মানুষের চামড়া দিয়ে বা প্লাস্টিক দিয়েই অন্যের মতো হুবাহু মাস্ক বানানো যায়। এখন জমজ তো আর সবাই হয় না তাই না। তাই একই রকম দেখার জন্য এই প্লাস্টিকের মাস্ক গুলো পরা হয়। ফর এক্সাম্পাল আমরা মুভি তে অনেক সময় দেখি যে একটা মানুষের ডাবল রোল করতে হচ্ছে কিন্তু এখানে তো আর সত্যি সত্যি প্লাস্টিক সার্জারি করা হয় না তাই না। তো তখন এই প্লাস্টিকের লুক এ লাইক মাস্ক গুলো ইউজ করা হয়।

(The face mask phenomenon,, a mask which is made by plastic… Reconstructive procedures correct defects on the face or body… The main fact is It’s temporary not permanent… It’s the specialty of this plastic mask… Anyone can give this mask”s structure as his/her wish and he/she can remove this plastic mask at any time..But it take a lots of time to put properly on Someone’s face,, কারো মনে কোন প্রশ্ন থাকলে গুগলে সার্চ দিয়ে দেখতে পারেন)

অতঃপর অনেক সময় ব্যায় করে মাস্ক লাগানো হয়। এতোক্ষন প্রীতিকে ইচ্ছে করেই আয়না দেখানো হয় নি। আর যখন সে দেখলো প্রীতির চোখ গুলো তার কোটর থেকে খুলে আসার উপক্রম। হুবাহু প্রীতিকে আইরাতের মতো লাগছে। রায়হাম প্রীতির পাশে এসে দাঁড়ায়। প্রীতি আয়নাতে নিজেকে দেখছে আর গালে নাকে মুখে হাত দিয়ে দেখছে। তার যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না।

প্রীতি;; লাইক সিরিয়াসলি? মানে আমি আইরাত। কীভাবে কি। এই এই আমি হবো না খুলো এই প্লাস্টিক মুখ থেকে।

রায়হান;; এতো ওভার রিয়েক্ট করার দরকার নেই। তোমার ফেইস টা জাস্ট ওর মতো করা হয়েছে যেনো সব প্ল্যান মুতাবিক হয় আর কিছুই না। পুরো ৩ ঘন্টা সময় লেগেছে। আর শুনো চেহারা এক হয়ে গেলেও কোন লাভ নেই। তোমার যে কথা বলার স্টাইল বা এমন আচরণ না আব্রাহাম তাতে তোমাকে এক সেকেন্ডই চিনে ফেলবে।

প্রীতি;; এখন কি আমাকে এই আইরাতের মতো বেহেন জ্বি হতে হবে নাকি?

রায়হান;; না শুধু একটা ভদ্রতা আর সভ্যতা শিখতে হবে।

প্রীতি;; হবে যাবে। তারপর কি?

রায়হান;; আগুন লাগাতে হবে?

প্রীতি;; কোথায়?

রায়হান;; এখন আপাতত অন্য কিছুতে লাগাই তারপর না হয় মানুষের জীবনেও লাগিয়ে দিবো।

রায়হানের সাথে আব্রাহামের যেই ড্রাইভারের কানেকশন আছে রায়হান সোজা তাকে ফোন দেয়।

রায়হান;; হ্যালো।

ড্রাইভার;; হ্যালো, স্যার ভালো খবর আছে।

রায়হান;; কি?

ড্রাইভার;; আব্রাহাম স্যার অফিসে নেই। উনি বাইরে কোন কাজে গিয়েছেন।

রায়হান;; বাহ, গুড। তোকে কি কি করতে হবে জানিস তো?

ড্রাইভার;; জ্বি জ্বি আমি জানি।

রায়হান;; তো আর দেরি কিসের লেগে পর।

রায়হান ফোন কেটে দেয়।

রায়হান;; আমাদের এখান থেকে বের হতে হবে।

প্রীতি;; কখন?

রায়হান;; একটা সু সংবাদ আসবে তারপরেই।

এখন সন্ধ্যার সময়। আর এই ড্রাইভার গিয়ে আব্রাহামের অফিসের একদম শেষ কেবিনের দিকে হাটা ধরে। এই কেবিন গুলোতে সাধারণত কোন স্টাফ কাজ করে না। তাই এখানে মানুষ জনও তেমন বেশি একটা নেই। এগুলোই যেনো তার কাজটাকে আরো সহজ করে দিয়েছে। খুব লুকিয়ে চুরিয়ে ড্রাইভার সেই কেবিন গুলোর দিকে চলে যায়। যেহেতু এটা পুরো অফিসের একদম শেষ জায়গা তাই এখানেই কাজ টা করতে হবে। কাজ বলতে আগুন লাগিয়ে দিবে। যেই ভাবা সেই কাজ। ড্রাইভার টা তার পেছন থেকে একটা বড়ো সড়ো পেট্রোলের বোতল বের করে। কেবিনের চারিদিকেই ইচ্ছে মতো পেট্রোল ছিটিয়ে দেয়। পুরো কেবিনেই পানির মতো পেট্রোল পরে আছে। ড্রাইভার টা সেই কেবিন থেকে বের হয়ে এসে পরে। কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে শয়তানি এক হাসি দিয়ে নিজের পকেট থেকে লাইটার টা বের করে জ্বালিয়ে ছুড়ে মারে কেবিনের একদম ভেতরে। চোখের পলকে যেনো ফ্লোরে আগুন ধরে গেলো। আগুনের ধারা যেতে যেতে পুরো রুমে দাও দাও করে আগুন ধরে গেলো। আর এই দিকে সেই ড্রাইভার টা ওখান থেকে দ্রুত পালিয়ে গেলো। রায়হান কে ফোন করে জানিয়ে দেওয়াও হয়েছে যে আব্রাহামের অফিসে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে। আর ভাগ্য ভালো যে কেবিনে যে কটা সিসিটিভি ক্যামেরা ছিলো তাও জ্বলে গেছে। রায়হানের কলিজাতে যেনো এবার শান্তি পরেছে। অফিসে রেড সিংনাল আছে। আগুন লাগলে তা আপনা আপনিই বেজে ওঠে। রেড সিংনালের তীব্র শব্দ অফিসের চারিদিকে বেজে ওঠলে সবাই যেনো ভয়ে পেয়ে যায়। রাশেদ কথা বলছিলো একজন স্টাফের সাথে তখনই অফিসের পিয়ন ছুটে আসে।

পিয়ন;; রাশেদ স্যার, ও রাশেদ স্যার। অফিসে তো আগুন লাইগা গেছে।

রাশেদ;; কি বলছেন কি এইসব?

তখনই বেশ কিছু মানুষের চিল্লা পাল্লার আওয়াজ শোনা যায়। সবাই ছুটে আসছে এইদিকে। অবস্থা বেশি ভালো না বুঝতে পেরে রাশেদ এক ফ্লোরে বাইরের গ্লাস দিয়ে অন্য ফ্লোরে দেখে। সেদিকে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না শুধু কালো ধোঁয়া আর ধোঁয়া। রাশেদ দ্রুত সবাইকে বাইরে বের হয়ে যেতে বলে। সবাই ছুটোছুটি করে বাইরে বের হয়ে এসেছে। রাশেদ অন্য গার্ড গুলোকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ফায়ার সার্ভিস দের ডেকে নিয়ে আসতে বলে। সবাই এই মূহুর্তে অফিসের বাইরে। তার খানিক পর দুটো ফায়ার সার্বিসের গাড়ি আসে। তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে আগুন নিভানোর। কিন্তু আগুন প্রায় ওই কেবিনের সাথে সাথে বাকি কয়েকটা কেবিনেও ছড়িয়ে পরেছে। রাশেদের চিন্তায় ভালো লাগছে না। এটা হলো কি করে। কেননা অফিসের ভেতরে আগুন লাগবে এমন কোন জিনিস রাখাই হয় নি। আর কেউ স্মোক করলে তো তাকে সোজা বাইরে বের করে দেওয়া হবে। তাহলে হলো কি করে এটা?
রাশেদ দ্রুত আব্রাহাম কে ফোন করে….

আব্রাহাম;; So if we invest thirty seven lakh rupees on this project then we can be successful…..

আব্রাহাম মিটিং এ ছিলো তখনই তার ফোন বেজে ওঠে। আর স্বাভাবিক ভাবেই আব্রাহাম বেশ বিরক্ত হয়। তাকিয়ে দেখে রাশেদ ফোন করে। আব্রাহাম প্রথমে তা কেটে দেয়। কয়েক সেকেন্ড পর রাশেদ আবার ফোন দেয়। আব্রাহাম এবার সিরিভ করে…

আব্রাহাম;; Excuse me plz…!

আব্রাহাম দূরে গিয়ে ফোন টা কানে ধরে কিছুটা রাগি ভাবেই বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; রাশেদ তুমি জানো যে আমি মিটিং এ কেনো ফোন ক………

রাশেদ;; স্যার অনেক বড়ো একটা বিপদ হয়ে গেছে।

আব্রাহাম;; কি হয়েছে গলা এমন কেনো তোমার?

রাশেদ;; স্যার অফিসে আগুন লেগেছে।

আব্রাহাম;; What? কি যা তা বলছো এগুলো?

রাশেদ;; স্যার বিশ্বাস করুন। ওই পেছনের কেবিন গুলোতে আগুন লেগে গেছে। আর আমরা সবাই এখন বাইরে। ফায়ার সার্ভিস এসেছে তনে আগুন নিভছে না। এখন আরো একটা গাড়ি এসেছে তারাও নিভানোর চেষ্টা করছে।

আব্রাহাম;; ওহহ গড, কখন এগুলো হলো আর আমাকে আগে বলো কি কেনো? আর তোমরা সবাই সেইফ আছো তো?

রাশেদ;; স্যার আপনার মিটিং ছিলো সেই জন্যই আমি ফোন দিচ্ছিলাম না আর হ্যাঁ আমরা ঠিক আছি।

আব্রাহাম;; আমি এক্ষুনি আসছি।

আব্রাহাম ফোন কেটে দেয়।

আব্রাহাম;; Hay guys, i am really very sorry… I have go now immediately and the meeting is postponed..

আব্রাহাম এই বলেই দ্রুত চলে আসে। বাইরে আসতেই দেখে ড্রাইভার আব্দুল দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম তার কাছ থেকে চাবি টা নিয়ে নেয়।

আব্দুল;; আব্রাহাম বাবা এতো জলদি মিটিং শেষ হইয়া গেলো?

আব্রাহাম;; চাচা অফিসে আগুন লেগে গেছে। রাশেদ মাত্র ফোন করে বললো আমায়।

আব্দুল;; হায় হায় কও কি।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ, এখন আমাকে যেতে হবে।

আব্দুল;; চলো আমি নিয়া যাই।

আব্রাহাম;; না না চাচা শুনো এখানে কিছু কাজ আছে। মানে ভেতরে গেলেই আমার মিটিং এর কিছু ফাইল আসবে বুঝলে সেগুলো নিয়ে তুমি বরং পরে এসে পরো আমি এখন যাই।

আব্দুল;; আইচ্ছা কিন্তু আমরা এখানে যেই রাস্তা দিয়ে আসছি ওই রাস্তা তো বন্ধ। মানে কিছু সমস্যার জন্য বন্ধ করে দিছে।

আব্রাহাম;; আমরা যখন দুপুরের দিকে এখানে আসলাম তখন না ঠিকই ছিলো!!

আব্দুল;; কিন্তু এখন বন্ধ। অফিসে গেলে অন্য রাস্তা দিয়া যাইতে হবো। কিন্তু এই রাস্তা টা একটু পাহাড়ি রাস্তা আর কি।

আব্রাহাম;; আরে সমস্যা নেই আমি যেতে পারবো এখন তুমি ভেতরে যাও। আমি গেলাম।

আব্দুল;; আইচ্ছা।

আব্রাহাম গাড়িতে উঠে উলটো রাস্তা দিয়ে যেতে ধরলো। আব্রাহামের সেখান থেকে চলে যেতেই যেই ড্রাইভার টা আব্রাহামের অফিসে আগুন লাগিয়েছে সেই আব্দুলের কাছে ফোন করে।

আব্দুল;; হ্যালো

ড্রাইভার;; হ্যাঁ আমি, আব্রাহাম স্যার কোথায়?

আব্দুল;; আব্রাহাম বাবা তো অফিসে যাওয়ার জন্য রওনা দিলো। অফিসে নাকি আগুন লাগছে।

ড্রাইভার;; হ্যাঁ, আচ্ছা আমি রাখি তাহলে আর আপনার জন্য গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি।

আব্দুল;; আচ্ছা।

ওই ড্রাইভার টা ফোন রেখে দিয়েই সোজা রায়হান কে ফোন দেয়।

ড্রাইভার;; স্যার, আব্রাহাম স্যার অফিসে আসার জন্য বেরিয়ে পরেছে। আর ওই আগের রাস্তা কিন্তু বন্ধ তাই সে উলটো রাস্তা দিয়ে আসছে।

রায়হান;; হুমম বুঝলাম।

ড্রাইভার;; স্যার স্যার আমার টাকা টা!

রায়হান;; পেয়ে যাবি।


রায়হান ফোন কেটে দেয়। আইরাত ওরফে প্রীতির দিকে তাকায়।

রায়হান;; কিছুক্ষন পর আমাদের ওহ না তোমার বের হতে হবে।

প্রীতি;; আমি একা কেনো?

রায়হান;; কারণ এই কাজ টা আপাতত তোমার পরের টা আমার।

প্রীতি;; আব্রাহাম কোথায়?

রায়হান;; আব্রাহাম অন্য রাস্তা দিয়ে অফিসে আসছে। তবে আসতে পারবে না।

প্রীতি;; আব্রাহামের…..

রায়হান;; গাড়িতে গরবর করা আছে।

প্রীতি;; মানে কি করেছো তুমি?

রায়হান;; তা তো গেলেই বুঝতে পারবে। এবার চলো। শুনো যে করেই হোক সেই রোডে আমাদের আব্রাহামের আগে পৌঁছাতে হবে। আর আগেই পৌছাবো আমরা কেননা আব্রাহামের গাড়ির ব্রেকে আগে থেকেই কিছুটা তালগোল আমি পাকিয়ে রেখেছি এই ড্রাইভার কে বলে। সো জলদি বের হও। আর শুনো বিহেভ ইউরসেল্ফ। কোন ভাবেই যেনো আব্রাহাম টের না পায় ওকে।

প্রীতি;; বললাম না চিন্তা করতে হবে না সেই ব্যাপারে তোমাকে। আমি সব করতে পারবো।

রায়হান আর প্রীতি বের হয়ে পরে। ১৫-২০ মিনিটের মাথায় তারা দুইজন সেই পাহাড়ি রোডে এসে পরে।

প্রীতি;; আচ্ছা আব্রাহাম এখানে কখন আসবে তা আমরা জানবো কি করে?

রায়হান;; চিন্তা করো না আব্রাহামের গাড়ির পেছনে ট্রান্সমিটার রাখা আছে।

প্রীতি;; হুমম।

রায়হান তার গাড়ির ভেতর থেকে একটা ট্যাব বের করে যাতে রেড লাইট আছে আর সেটাই বলে দেয় যে আব্রাহাম এখন কোথায় আছে।

রায়হান;; প্রীতি গেট রেডি, আব্রাহাম আমাদের খুব কাছে এসে পরেছে। আমি গাড়ি নিয়ে অন্য পাশে দাঁড়িয়ে থাকবো আর তুমি কি করবে জানো তো?

প্রীতি;; হ্যাঁ।

রায়হান;; প্রীতি আই রিপিট আব্রাহাম যেনো টের না পায় যে তুমি আইরাত না প্রীতি ওকে। চেহারা যেহেতু এখন আইরাতের মতো তাই আসলেই আইরাত হবার চেষ্টা করো। আর আমাদের জন্য আরো একটা প্লাস পয়েন্ট হচ্ছে এই অন্ধকার রাস্তা ওকে।

প্রীতি;; ওকে।

রায়হান কিছুটা দূর চলে যায়।

তবে ওদিকে আব্রাহামের চিন্তায় মাথা কাজ করছে না। আর এই রাস্তা টা অনেক বড়ো। সহজে শেষই হতে চায় না। রাস্তা গুলো অনেক ভাঙা চোরা,, উঁচু নিচু অনেক। রাস্তার অবস্থা একেবারেই বাজে। আব্রাহাম দেখে সামনে বেশ ভাঙা একটু জায়গা আছে। তাই আব্রাহাম ব্রেক কষার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্রেক হচ্ছে না কোন ভাবেই। আব্রাহাম বেশ কয়েকবার ট্রাই করে ব্রেক করার কিন্তু কোন ভাবেই হচ্ছে না। আব্রাহামের কপালে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট। ব্রেক হচ্ছে না, আর গাড়ি এদিকে সামনে এগিয়েই যাচ্ছে। এক সময় গাড়ি ওই ভাঙা জায়গা টার সাথে বারি খায়। আব্রাহাম গাড়িটা ঘুড়াতে চাইলে গাড়ি ব্রেকলেস হয়ে অন্য দিকে ঘুড়ে যায় আপনা আপনিই। গাড়ি গিয়ে একটা বেশ বড়ো গাছের সাথে জোরে ধাক্কা খায়। ধাক্কা টা এতোই জোরে লেগেছে যে গাড়ির ফ্রোর্ন্ট গ্লাস টা ভেঙে সব কাচ ভেতরে টুকরো টুকরো হয়ে এসে পরেছে। আব্রাহামের হাত কেটে গেছে অনেক টুকু। কপালে চোট পেয়েছে। ব্লাড যাচ্ছে অনেক। কপালের পাশ দিয়ে রক্ত যাচ্ছে। গাড়ির ঠিক ওপরে গাছের একটা ডাল ভেঙে পরেছে। আব্রাহাম গাড়ি থেকে বের হবার মতো কোন রাস্তা খুঁজে পাচ্ছে না। অবশেষে খুব কষ্টে আব্রাহাম গাড়ি থেকে বের হয়ে পরে। তবে গাড়ি থেকে বের হতেই সে তার মাথা দুই হাত দিয়ে চেপে ধরে চোখ মুখ সব কুচকে ফেলে। মাটিতে লুটিয়ে পরে সে। কেমন যেনো মাথা টা ঘোড়াচ্ছে। মাথায় আঘাত পাওয়ার ফল এটা। চোখের সামনে নিজের সবকিছু ঝাপসা ভাবে দেখছে। আব্রাহাম আধো আধো চোখে সামনে তাকায় দেখে কেউ একজন কালো হুডি পরে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। ধীরে ধীরে সে আব্রাহামের একদম কাছে এসে পরে। এক হাটু ভাজ করে আব্রাহামের সামনে বসে পরে। আব্রাহাম নিভু নিভু চোখে সামনে তাকায়। কিন্তু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না কিছুই। কারণ ব্যাক্তি টা সম্পূর্ণ কালো পোশাকে জড়ানো আর মুখেও কালো মাস্ক।

আব্রাহাম;; ক ক্ক ক কে?

প্রীতি;; আমাকে চিনলে না আব্রাহাম। তোমার বেবিগার্ল কে তুমি চিনলে না।

আব্রাহাম;;

প্রীতি;; আমি আব্রাহাম। তোমার আইরাত।

আব্রাহাম;;

প্রীতি;; এখন তোমার মনে হাজার প্রশ্ন আসবে যে আমি এখানে কি করে এলাম। কি করছি? হাহ তুমি কি ভেবেছো যে আমি তোমায় ভালোবাসি। আমি ভালোবেসে তোমায় বিয়ে করেছি। জীবনেও না। আমি শুধু ঘৃণা করি তোমাকে শুধুই ঘৃণা আর কিচ্ছু না। আমাকে কম জ্বালাও নি তুমি। এমনকি আমার চাচা-চাচি ও তোমার জন্যই মরেছে। কীভাবে জানো, না ই তুমি আমার জীবনে আসতে। না এতো ঝামেলা হতো না রায়হামের মনে জেদ উঠতো আমাকে নিতে আর না ই আমার চাচা চাচি কে মারতো সে। সবকিছুর মূল তুমি। সব আমার এক্টিং ছিলাও সব। তোমাকে ভালোবাসি বলা, এমনকি বিয়ে করা। সব ঢং ছিলো। তোমাকে আজ মেরে ফেলতেও আমার বাধবে না। আর আজ এই যে তোমার এক্সিডেন্ট হলো না তাও আমিই করিয়েছি। মনে রেখো আমি মরে যাবো তাও তোমার মতো মানুষ কে ভালোবাসবো না। আমি ঘৃণা করি তোমাকে। শুধুই ঘৃণা। আমিই মেরেছি তোমাকে।

আব্রাহাম;; ন ন না ত ত তু তুমি আ আই আইরাত না না। তুমি আ আ আইরাত না।

প্রীতি;; দেখবে আমায়?

প্রীতি তার মুখ থেকে মাস্ক টা খুলে ফেলে। আব্রাহামের ওকে দেখে তার মাথায় যেনো আকাশ টা ভেঙে পরেছে। এই আইরাত। এই আব্রাহামের সেই আইরাত। আইরাত আব্রাহাম কে মেরে ফেলার জন্য এগুলো করেছে। এতোই ঘৃণা করে তার আইরাত তাকে। আব্রাহামের মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে খুব। সে আর চোখ খুলে রাখতে পারছে না।

প্রীতি;; মরো।

এই কথা বলেই প্রীতি ঘুড়ে এসে পরে। কিন্তু এদিকে আব্রাহামের যেনো বিশ্বাসই হচ্ছে না এই আইরাত। আইরাত কীভাবে তার সাথে এগুলো করতে পারলো। তাহলে এতোদিন যাই ছিলো সব কি মিথ্যা। প্রীতি চলে যেতে লাগলো। আব্রাহাম উঠে দাড়াতে পারছে না খুব কষ্ট হচ্ছে। তবুও কোন রকমে আব্রাহাম উঠে দাঁড়ায়। কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহামের মাথার পেছনে ভারি শক্ত কোন বস্তু দিয়ে তীব্র আঘাত হয়। আব্রাহাম তার দুই হাত দিয়ে মাথা চেপে ধরে। রক্ত ঝরছে মাথার পেছন দিয়ে। টাস করে একটা শব্দ এসে প্রীতির কানে লাগে। প্রীতি থেমে যায়। পেছন ঘুড়ে দেখে রায়হান আর তার হাতে একটা ভারি লোহা। সেটা দিয়েই আব্রাহামের মাথার পেছনে আঘাত করা হয়েছে। সাথে সাথে আব্রাহাম মাটিতে লুটিয়ে পরে।
কিন্তু প্রীতি তো অবাক। সে দ্রুত রায়হানের কাছে যায়।

প্রীতি;; রায়হান এই কি করলে আব্রাহাম কে মারলে কেনো। এটা আমাদের কথা ছিলো না।

রায়হান;; রিলেক্স বেশি কিছু হয় নি মরে নি।

প্রীতি;; কিন্তু

রায়হান;; চুপ।

রায়হান আব্রাহাম কে তার গাড়িতে তুলে খুব কষ্টে। তারপর গাড়ির দরজা জানালা সব দিক থেকে বন্ধ করে দেয়।

প্রীতি;; তুমি কি করতে যাচ্ছো?

রায়হান;; খুন।

আব্রাহাম যে গাড়ির ভেতরে ছিলো রায়হান সেই গাড়ি টাকে ধাক্কা দিয়ে দেয়। আর গাড়ি তার কন্ট্রোল হারিয়ে পাহাড়ের একদম ওপর থেকে নিচে পরে যায়। এই পাহাড়ের ওপর থেকে চারিদিকে যতদূর চোখ যায় শুধু ঘন জঙ্গল আর জঙ্গল। কেউ একবার এখানে পরলে আর সাধ্য নেই বেচে ফেরার। আর রায়হান সেই পাহাড় থেকেই আব্রাহাম কে ফেলে দিয়েছে। আব্রাহামের গাড়িটা নিচে পরে যায়। বিকট শব্দ তো হয়েছেই তবে গাড়িটা এই ঘুটঘুটে অন্ধকারে আর দেখা যায় নি। তবে এইবার প্রীতি যেনো আর থাকতে পারলো না।

প্রীতি;; এই রায়হান ****** কি করলি এটা তুই। আমি বলেছিলাম যে আইরাত তোর আর আব্রাহাম আমার। তুই ফেলে দিলি কেনো ওকে ****।

রায়হান;; চিন্তা করো না তোমার আব্রাহাম যেখানে গিয়েছে এখন তুমিও সেখানেই যাবে বেবি।

এই বলেই রায়হান প্রীতির গলা চেপে ধরে। প্রীতির শ্বাস যেনো আটকে গেলো। চোখ গুলো বড়ো বড়ো হয়ে গেছে। রায়হানের হাত ছাড়ানোর জন্য চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। রায়হান প্রীতি কে দেয় এক ধাক্কা যার ফলে প্রীতিও একটা গগন বিদারি চিৎকার দিয়ে সেই পাহাড়ের খাদে পরে যায়। শেষ দুই কাহীনি।

রায়হান;; কি ভেবেছিলি তুই। আব্রাহাম কে আমি বাচিয়ে রাখবো। বাচিয়ে রাখলে তো সে আইরাতের পিছু ছাড়বেই না যার ফলে আমিও আইরাত কে পাবো না। আর এখন তুইও বেচে থাকলে আমার রাস্তার কাটা হয়ে দাঁড়াবি। তাই তুইও মর।

এই বলেই রায়হান তার গাড়ি নিয়ে দ্রুত সেই জায়গা ত্যাগ করে। আর অন্যদিকে রাশেদ আব্রাহাম কে ফোন করে করে হয়রান কিন্তু আব্রাহামের খোঁজ নেই। আর না পেরে রাশেদ নিজেই ঠিক করে যে সে নিজে গিয়ে আব্রাহামের খোঁজ করবে। কিন্তু আসলে তো ধ্বংসলীলা শুরু হয়ে গেছে।





চলবে~~

.

(কাল আমি সত্যি কিছু মানুষের কমেন্ট পরে বেশ হার্ট হয়েছি। আমি ভাবি নি কেউ এমন বলবে। স্বাভাবিক ভাবেই এই গ্রুপের লেখিকা দের অনেকেই পছন্দ করে না। তো কথা হলো গল্প যদি একই রকমের থেকে যায় তাহলে তার মজা নষ্ট। এর জন্য একটু তো হারামি গিরি তো করতেই হবে তাই না। তার জন্য যদি
‘”পরবো না এমন গল্প”‘ এমন কথা শুনতে হয় তাহলে কারই না খারাপ লাগবে বলুন। এই গল্প লেখার জন্য কেউ আমাদের স্যালারি দেয় না নিজেদের শখের বশে লিখি। তাই ভালো কমেন্ট না হোক অন্তত বাজে কমেন্ট কেউ করবেন না। কথায় কথায় গল্প কে হিন্দি সিরিয়ালের নাম দিয়ে দেওয়া হয়। স্টার জলসা+ জি বাংলা দেখে অনেকেই নিজেদের মাথা ভরে রেখেছে তাই গল্পে কিছু হতে না হতেই হিন্দি সিরিয়াল বলে চালিয়ে দেয়। কাল একজন বলেছিলো “গল্পে ঝামেলা করে গল্প বড়ো করার ধান্দা,, পরবো না গল্প মনে শান্তি খুঁজে পাই না গল্প পরে”। আরে ভাই/বোন গল্পে ঝামেলা না করলে বড়ো হবে কীভাবে। আর শান্তি অশান্তি উভয়ই হবে গল্পে। গল্প ভালো না লাগলে পড়বেন না তাও বাজে কমেন্ট করবেন না। গল্প পড়া না পড়া সম্পূর্ণই আপনাদের নিজেদের ব্যাক্তিগত ব্যাপার। খারাপ লাগলে ইগ্নোর করেন। আর আমি আগেও বলেছি যে গল্পের হ্যাপি এন্ডিং ই হবে বাট মাঝে মাত্র কয়েকটা পর্বে একটু ঝামেলা হবে। তাও দ্রুত শেষ করে দিবো আমি। আব্রাহাম-আইরাত খনিকের জন্য আলাদা হলেও আবার খুব দ্রুতই এক হবে ❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here