প্রেমের পাঁচফোড়ন💖 #সিজন_২ #পর্ব_৩৮

0
650

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৮
#Writer_Afnan_Lara
🌸
শান্তর সামনে খাবারের প্লেট রেখে আহানা গালে হাত দিয়ে বসে আছে সোফার উপর
শান্ত খেতে খেতে গভীর মনযোগ দিয়ে টিভি দেখতেছে
আহানা হাই তুলতে তুলতে শেষমেষ ঘুমিয়েই গেলো সোফার উপর
পরেরদিন যখন চোখ খুললো তখন আবারও নিজেকে শান্তর রুমে শান্তর পাশে,শান্তর বিছানায় আবিষ্কার করলো
লাফ দিয়ে উঠে বসলো সে,শান্ত পাশেই ঘুমাচ্ছে,ঘড়িতে ভোর ৫টা বাজে তখন
আহানা শান্তর দিকে কিছুক্ষন চেয়ে থেকে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো
এ সময়ে ঝগড়া করার মনমানসিকতা নেই তার,পরে সকালে ৮/৯টার দিকে উঠে ঝগড়া করা যাবে এই নিয়ে,এখন আপাতত এই সুন্দর সময়ে ঘুমাই একটু,পরেরটা পরে দেখা যাবে
সকাল হতেই যখন সে চোখ খুললো সেই শান্তকেই দেখলো
হাতে তার একটা নীল রঙের শাড়ী আরও গয়না গাটিও আছে
সে দাঁত কেলিয়ে বললো”ম্যাডাম বউ আপনার কি খবর আছে আজ বৌভাত??”
আহানা আড়মোড়া ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বললো”কার আমার??”
.
শান্ত হেসে ফেললো তারপর বললো”জি না,রিয়াজ আর নওমির,এখন উঠে জলদি করে তৈরি হয়ে নাও,লেট হয়ে যাবে,তোমার আম্মু বারবার ফোন করে তোমার কথা জিজ্ঞেস করতেছে,আমি একবার বলছি তুমি বাথরুমে আবার বলছি রুপার মাথায় পোটি দিচ্ছো,আর কি বলবো?”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে উঠে বসলো তারপর শান্তর হাত থেকে শাড়ীটা নিয়ে বাথরুমে যেতে যেতে বললো”এই শাড়ীটা পেলেন কই”
.
আম্মুর,আলমারি থেকে আনছি,এ সময়ে শাড়ী পাবো কই?
.
আন্টি তো আমার গায়ে শাড়ীটা দেখলো চিনে ফেলবে,তখন কি হবে?
.
আরে আমি একটা কিছু বলে বুঝিয়ে দিব,সমস্যা নাই
.
আহানা ১৫মিনিট বাদে তৈরি হয়ে এসে দেখলো শান্ত ও রেডি হয়ে গেছে ততক্ষণে
.
চলুন যাই
.
নাস্তা তো করবা,যাত্রামুড়া যেতে এখনও অনেক দেরি আছে
.
কই নাস্তা?কে বানালো?
.
বুয়া বানিয়ে দিয়ে গেছে,আসো খেতে আসো,আর শুনো আজ আমি মাকে বলবো আমাদের বিয়ের কথা
.
কি জন্যে?আপনি না বললেন মুডের উপর ডিপেন্ড করে বলবেন!
.
আরে আজ মায়ের মুড ভালো থাকবে আমি জানি,আর আজই সবটা জানাবো তাকে

বুবু আমার মনে হয় এদের এক করার জন্য আমাদের কিছু একটা করতে হবে যাতে করে দুজনেই হিট খায় তারপর মিল হবে দেখিও
.
শান্তি রহমান হাত নাড়িয়ে বুঝালেন তিনি কথাটা শুনতে চান
.
তাহলে শুনো আমার পরিকল্পনা…(……)

আহানা আর শান্ত চুপচাপ হয়ে আছে,কারে একসাথে বসেছে প্রায়ই ১ঘন্টা হতে চললো আর ওরা একটাও কথা বলেনি দুজনে
যেন প্রয়োজন হলেই কথা বলবে তারা, এমনি এমনি বলবে না
শেষে শান্তই মুখ খুললো
“শুনো মাকে বলবা না যে বিয়ে দুবার হয়েছে,বলবা হয়েছে,লিগালি এন্ড ধর্ম মতেও,দুবার আলাদা করে করসি এটা বলতে যেও না,যা বলার আমি বলবো,মোট কথা তুমি চুপ থাকবা,ওকে?”
.
হুম
.
যাত্রামুড়া এসে গেছে,শান্ত আর আহানা রিয়াজের বাসার দিকে হেঁটে চলছে মাটির পথটা ধরে
মাটির পথটার পাশে থাকা গাছগুলো ঝিলিক বাতি দিয়ে সাজানো পুরোটা,লাল নীল সবুজ বাতি
সুন্দরই লাগতেছে দেখতে তবে শান্ত আর আহানার মধ্যে দুজনের একজনও এই সৌন্দর্য দেখতেছে না,তাদের মাথায় শুধু ঘুরতেছে ২টো মাকে সত্যিটা বলার পর কি ঘটবে
নেগেটিভ নাকি পজেটিভ?
অবশেষে বাসার মেইন দরজার সামনে এসে দুজনে দাঁড়ালো
মানুষ যতজন আছে তারা সবাই যে যার কাজে ব্যস্ত
শান্ত তার মাকে খুঁজে বের করলো,উনি নিতুর চুল ঠিক করে দিচ্ছেন,আর আহানার মা চা খাচ্ছেন
শান্ত সেদিকে গেলো সোজা
তারপর শক্ত গলায় বললো”মা!!!”
.
শান্তি রহমান নিতুর চুল থেকে হাত সরিয়ে শান্তর দিকে তাকালেন
আহানার মাও তাকালেন ওর দিকে
.
মা আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই
.
আহানার মা মুচকি হেসে স্বাভাবিক গলায় বললেন”তার আগে আমার আর বুবুর ডিসিশন কি হয়েছে সেটা শুনো”
.
কি?
.
কি?
.
আমরা দুজন মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি,যেটা শুনলে আশা করি তোমরা দুজনেই অনেক খুশি হবে,আসলে তোমরা যেটা চাও সেটাই করবো আমরা এখন
.
কি করবা মা?
.
শান্ত আর আহানা বুঝতেছে না উনারা কিসের ডিসিশন নিয়েছেন
.
আহানার মা চায়ের কাপটা টেবিলের উপর রেখে দিয়ে হাতের আঙ্গুল গুলো নাড়াতে নাড়াতে বললেন”শান্ত তোমার জন্য আমরা মেয়ে একটা ঠিক করেছি,তার নাম কণা,সে নাকি তোমাকে অনেক ভালোবাসে,আর আহানা তোর জন্য ও আমরা ছেলে একটা ঠিক করেছি,সে এখানকারই ছেলে,নাম রামিম,এবার বলো তোমরা খুশি তো?
.
কথাটা শুনে শান্ত আর আহানা হা করে চেয়ে রইলো,মুখ দিয়ে যে কথা বের হওয়ার কথা সেটা ভেগে গেছে,এখন তারা ভাবতেছে তারা আসলেই কি শুনলো এটা
এবার যদি আবারও বিয়ে করে তাহলে এই নিয়ে ৩বার??
.
দুজনে দপ করে পিছনে থাকা সোফায় বসে গেলো,একজন আরেকজনের মুখ চাওয়া চাওয়ি করতেছে
তাদের এখন কি বলা উচিত?
মায়ের মুখের হাবভাব দেখে বুঝা যাচ্ছে তাদের নিজেদের বিয়ের কথা এখন বললে তুলকালাম লাগবে
আহানাকে শান্ত বলে দিয়েছিলো মুখ না খুলতে তাই সে আপাতত চুপ করে বসে আছে
শান্ত কি বলবে সেটাই ভাবতেছে
ওদিকে আহানার মা আর শান্তর মা তাদের দিকে চেয়ে আছে উত্তরের আশায়
শান্ত হালকা কাশ দিয়ে পানি এক গ্লাস নিয়ে খেলো
আহানা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে
.
কি হলো?তোমরা দুজন মুখ বাংলার পাঁচ করে রেখেছো কেন? আমাদের ডিসিশন তোমাদের ভালো লাগে নি নাকি?
.
আসলে আন্টি!!
.
শান্তি রহমান আঙ্গুল তুললেন শান্তর দিকে,চোখ রাঙিয়ে চেয়ে রইলেন,চোখের আগুন দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন তিনি তার সিদ্ধান্তে অটল!

বৌভাতে সব মেহমানরা আসতেছে এক এক করে,বেলা ১২টা বাজে তখন
দূরের একটা মাঝারি সাইজের নারকেল গাছের সাথে আহানা আর শান্ত হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,বিরহ লুক নিয়ে
কিসের বিরহ!দুবার বিয়ে করে আবার বিয়ে করার বিরহ!
আহানা দুম করে শান্তর গায়ে কিল বসিয়ে দিয়ে বললো”খুব তো ডেং ডেং করে আমাকে জোর করে ২বার বিয়ে করেছিলেন তো এখন এত চুপ কেন আপনি?”
.
আমি কি বলবো?মায়ের মুখ দেখোনি?কেমন আঙ্গুল তুলেছিলো,এর ভিতরে যদি শুনে পালিয়ে বিয়ে করেছি তো রেগে আজীবনের জন্য আমার মুখ ও দেখবে না উনি
.
তাহলে এখন কি করবো?বিয়ে করবো আবার?
.
চুপ থাকো একটু প্লিস,আমাকে ভাবতে দাও,পারলে মায়ের মুডটা ঠিক করো একটু
.
আজব,আমি কি ঠিক করবো এখন?আন্টি ভাববে এতদিব তার ছেলেকে বিয়ে করতে চাইনি এখন তার ছেলের জন্য মেয়ে খুঁজে পাওয়ায় সংসার ভাঙ্গতে চাচ্ছি
.
তুমি এক কাজ করো আমার মাথায় একটা বাড়ি দাও
.
আমি কিছু জানি না,আপনি ঐ কণাকে কিছুতেই বিয়ে করতে পারবেন না ব্যস!মনে রাখবেন আমাকে দুবার বিয়ে করেছেন
.
উফ!এর ভিতরে আরেক টপিক আনো কেন?কে বিয়ে করবে?এক বউকে সামলাতে ২বার বিয়ে করতে হয় তাকে
আবার বুঝি আরেক ঝামেলা ঘাড়ে আনবো আমি?
.
তো কি করবেন তাহলে?
.
ভাবতে দাও,যাও এক গ্লাস শরবত নিয়ে আসো আমার জন্য
.
হুহ
.
আহানা বাসার দিকে যেতেই পড়লো কণার সামনে
কণা হাতে লাগানো নতুন নেইলপলিশ ফু দিতে দিতে বললো”আহানা শুনেছো নিশ্চয়?শান্তি আন্টি আই মিন আমার হবু শাশুমা, উনি নাকি আমার আর শান্তর বিয়ে ঠিক করেছেন?”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে এদিক ওদিক তাকালো একবার
নাহহহ আশেপাশে শুনে লাগানোর মতন কোনো আন্টি-টুন্টি নাই
আহানা এবার তার দু হাত ভাঁজ করে একটু এগিয়ে এসে দাঁড়ালো তারপর মুখ বাঁকিয়ে বললো”তোমার খুব শখ না আমার শান্তর সাথে সম্পর্ক করার??
তো ফাইন!আমার ছেলের ফুফু বানাবো তোমাকে”
.
কথাটা বলে আহানা চলে গেলো
কণা ভাবনায় পড়ে গেলো,আহানার ছেলের ফুফু সে হওয়া মানে আহানার হাসবেন্ডের বোন সে,তার মানে শান্তর বোন??
বেয়াদব মেয়ে কোথাকার! আমার শান্তকে আমার উড বি ভাই বানিয়ে দিয়েছে!!
স্টুপিড!!
.
আহানা শরবত এক গ্লাস নিয়ে আবারও শান্তর দিকে যেতে নিতেই মা ওর হাত ধরে আটকে ফেললো
.
আহানা?সত্যি করে বল!শান্তর কণা মেয়েটার সাথে বিয়ে ঠিক শুনে তোর কি একটুও খারাপ লাগছে না??তুই কি কিছুই বলতে চাস না?তুই ঐ রামিম ছেলেটাকেই বিয়ে করে নিবি?
.
আহানা চুপ করে আছে,কিছু বলছে না
.
মা ওর হাত থেকে শরবতের গ্লাসটা নিয়ে নিলো তারপর বললো”এটা নিশ্চয় শান্তর জন্য?
নিবি না,যাকে বিয়ে করার কথা শুনে বাড়ি মাথায় তুলেছিস তার প্রতি তোর এত কিসের দরদ?যাকে দেখতে পারিস না
সারাদিন ঝগড়া করিস তার জন্য তোর এত কেয়ার আসে কোথা থেকে?
.
আহানা স্বাভাবিক গলায় বললো”আমি তো দূরে থাকতে চেয়েছিলাম মা!!
তুমিই তো সবসময় আমাকে উনার কাছে কাছে রাখতে,তাহলে এখন এই প্রশ্ন কেন?একটা মানুষের সাথে থাকতে থাকতে একটা সময় ভালো লাগা কাজ করে,আমার ঠিক সেটাই হয়েছে
.
কথাগুলো বলে আহানা ওর মায়ের থেকে গ্লাসটা নিয়ে চলে গেলো

কি হয়েছে?এত দেরি?
.
একবার কণা ধরেছে আবার মা ধরেছে
.
আচ্ছা শুনো!আমি ভেবে নিয়েছি মাকে কি বলবো!
.
কি বলবেন?
.
তাহলে শুনো!তোমাকে এখন যা যা বলবো সব তুমিও আমার মা আর তোমার মায়ের সামনে রিপিট করবা,জাস্ট নাম চেঞ্জ,ওকে?
.
মানে?
.
মানে আমি আহানা বলবো,তুমি শান্ত বলবে,আমি যে ক্যাপশন দিব সেটা কপি পেস্ট করবা আর নামের জায়গা চেঞ্জ হবে,ওকে?
.
ওকে!
.
চলো এখন
.
শান্ত শরবত খেয়ে আহানার হাত ধরে হেঁটে চললো মায়ের কাছে
এর ভিতর রিয়াজ,নওশাদ আর সূর্য মিলে ওকে ঝাপটে ধরে ফেলেছে,আহানাকে বলেছে ১০মিনিট পর ছাড়বে ওকে
আহানা তাই চলে গেলো বাসার ভেতর

তোরে কাল কত করে মানা করছি যে যাইস না??
.
সরি রিয়াজ,আহানা একা ছিলো তো তাই
.
তাই মানে কি?জানিস নওশাদ সূর্য কত মজা করেছে?সব মিস করেছিস তুই
.
দায়িত্ব আগে পরে মজা মাস্তি
.
নওশাদ শান্তর কাঁধে হাত রেখে ফিসফিস করে বললো সে রিয়াজের বাসর ঘরে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছিল
.
সূর্য শান্তর আরেক কানে ফিসফিস করে বললো”ক্যামেরা লাগানোর পরই আবার ধরাও খেয়েছে😂”
.
রিয়াজ নিজের ক্রিম কালারের পাঞ্জাবিটা টেনে বললো”তোরা যে এত এত শয়তানি করিস আমার সাথে
মনে রাখিস আমি কিন্তু তোদেরই বেস্টফ্রেন্ড,তোদের কীর্তিকলাপ হারে হারে জানা আছে আমার”
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here