প্রেমের পাঁচফোড়ন💖 #সিজন_২ #পর্ব_৩৭

0
480

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৭
#Writer_Afnan_Lara
🌸
তুমি কি চাও আহানা?কি বুঝাতে চাও তুমি?তুমি যদি চাও আমার স্ত্রী হয়ে থাকতে তো আমি তোমাকে সারাজীবনের জন্য আমার স্ত্রীর মর্যাদা দিতে রাজি আছি,তুমি ঠিক কি চাও সেটা বলো আমাকে
.
আহানা মুখ আরেকদিকে ফিরিয়ে নিয়ে বললো”আমাকে একা থাকতে দিন”
.
না দিব না!তোমাকে আজ সব ক্লিয়ারলি বলতেই হবে,কেন তুমি আজ আমাকে না বলে একা একা এই বাসায় চলে আসলে,কেন তোমার মুখের ভাবগতি বদলে গেলো হুট করেই,আমি আজ শুনতে চাই!তুমি এই বাসায় কোন সাহসে একা একা এলে,হাসবেন্ড হিসেবে তা জানার পুরো অধিকার আছে আমার
.
না নেই,চুক্তির বিয়েতে আপনার কোনো অধিকার নেই আমার থেকে এসব জিজ্ঞেস করার
আমি আমার মতন আছি,আমাকে আমার মত থাকতেও দিয়েছেন আপনি
আজ তা পরিষ্কার করে বলেও দিয়েছিলেন তাহলে এখন কেন স্বামীর অধিকারের প্রসঙ্গ উঠতেছে?
.
আহানা আমি নিজ থেকে এই বিয়েটাকে ছোট করে দেখতে চাইনি,তুমি সেদিন বিয়েতে বিন্দুমাত্র রাজি ছিলে না বলেই আমি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এখন তুমি এটাতেও নারাজ,তাহলে তুমি ঠিক কিসে খুশি?
.
আপনি প্লিস আমার হাত ছেড়ে দিন,আমার কিছু ভাল্লাগতেছে না,আমি একটু একা থাকতে চাই
.
ফাইন!!চলো আমার সাথে
.
কথাটা বলে শান্ত আহানার শাড়ীর উপরে থাকা ওর জ্যাকেটটা টেনে খুলে ওর হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো
.
কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে,হাত ছাড়ুন!
.
শান্ত আহানাকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে একটা রিকসা নিলো
আহানা বার বার জিজ্ঞেস করতেছে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে ওকে কিন্তু শান্ত একটু টু শব্দ ও করছে না,শুধু আহানার হাতটা খুব শক্ত করে ধরে রেখেছে সে
বাসার থেকে ১০মিনিট দূরে একটি মসজিদ,সেখানে আসতেই রিকসা থামাতে বললো শান্ত
তারপর ভাড়া দিয়ে আহানাকে টেনে নামিয়ে ওখানে দাঁড় করিয়ে মসজিদের ভিতরে চলে গেলো সে
আহানা কিছুই বুঝতেছে না, শান্ত ওকে কেন এখানে নিয়ে এসেছে
শান্ত ৫মিনিট পর বেরিয়ে এসেছে,এসেই ওকে ধরে মসজিদের পাশে হুজুরের বাড়ির দিকে নিয়ে গেলো
.
আপনি একটু বলবেন আপনি আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?
.
শান্ত হাঁটতে হাঁটতে বললো”একটা কাজ বাকি রইলো সেটা পূরণ করতে”
.
হুজুরের বাসায় ঢুকে শান্ত আহানাকে সোফায় বসিয়ে দিলো তারপর ওর মাথায় গোমটা টেনে দিয়ে ওর পাশে নিজেও বসে পড়লো
হুজুর চেয়ার টেনে বসেছেন ততক্ষণে
.
আহানা শান্তর দিকে তাকাচ্ছে আবার হুজুরের দিকে তাকাচ্ছে,হুজুর দোয়া পড়া শুরু করলেন ইতিমধ্যে
এবার আহানা বুঝলো এখানে ঠিক কি হচ্ছে,এখানে তাদের বিয়ে হচ্ছে
আহানা শান্তর দিকে অবাক চোখে তাকালো
শান্ত শুধু কিছু কথা বললো আহানার চাহনি দেখে আর সেটা হলো”যেটা নিয়ে তোমার ভয়,যেটার জন্য তুমি না বলে একা বাড়ি ফিরলে,যেটার জন্য তোমার মন খারাপ ছিলে ঠিক সেই ভয়টা আমি এখন দূর করবো,ধর্ম মতে তোমাকে বিয়ে করবো”
.
শান্ত কাগজে আহানার বাবার আর মায়ের নাম লিখে দিলো,সাথে নিজেরটাও লিখলো তারপর হুজুরের হাতে কাগজটা দিলো সে
হুজুর শেষে বললেন শান্তকে কবুল বলতে,শান্ত বললো,এবার আহানাকে বলতে বললেন তিনি
আহানা শান্তর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,খুশি হবে নাকি কাঁদবে
সে কি চেয়েছিলো সে নিজেও জানে না
হুজুর আবারও বললেন কবুল বলতে
আহানা নিচের দিকে তাকিয়ে “তিন বার কবুল বলেই দিলো”
.
আলহামদুলিল্লাহ,,

শান্ত হুজুরের সাথে দূরে দাঁড়িয়ে কথা বলতেছে
আর আহানা দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে রোবটের মতন চেয়ে আছে শান্তর দিকে
মূহুর্তেই কি থেকে কি হয়ে গেলো,তার সামান্য মন খারাপ যে এত বড় একটা ঘটনা ঘটিয়ে দিবে তার কল্পনার বাইরে ছিল এটা
শান্ত হুজুরের সাথে কথা শেষ করে আবারও আহানার হাত ধরে টেনে উনার বাসা থেকে বেরিয়ে চলে আসলো,এবার আরেকটা রিকসা নিলো তাদের বাড়ি ফেরার জন্য
আহানা শান্তর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে এখনও
শান্ত সামনে জ্যামের দিকে চেয়ে থেকে বললো”বিয়ে তো সব রীতিতেই হয়ে গেছে,তোমার আর কোনো ভয় থাকার কথা না নিশ্চয়??দেনমোহরে এমন একটা আমাউন্ট লিখেছি,তুমি চাইলেও আমি তোমাকে ছাড়বো না মিস আহানা,সরি সরি,মিসেস আহানা
.
আহানা মুখটা সরিয়ে আরেকদিকে ফিরে তাকালো
১০/১২মিনিটেই তারা বাসায় চলে এসেছে
আহানা রোবটের মত করে হেঁটে তার রুমের দিকে যাওয়া ধরতেই শান্ত ওর হাতের কব্জি ধরে ওকে আটকে ফেললো
আহানা ওর দিকে জিজ্ঞাসু চোখে চেয়ে আছে,মুখ দিয়ে তার কোনো কথা বের হচ্ছে না
শান্ত স্বাভাবিক গলায় বললো”আজ থেকে তুমি আমার সাথে আমার বিছানায় ঘুমাবে,আমার রুমে থাকবে”
.
আহানা হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো”আমি এটা চাইনি”
.
শান্তর মেজাজ গেলো বিগড়ে
রেগে দরজায় একটা ঘুষি মেরে আহানাকে ঝাপটে ধরে কাছে নিয়ে আসলো সে
চিৎকার করে বললো”কি চাও তুমি?”
.
আহানার চোখের পানি টপটপ করে পড়তেছে,তার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না আর
.
শান্ত আহানার কোনো উত্তর না পেয়ে ওকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে আসলো
তারপর বিছানায় ছুড়ে ফেলে বললো”আমি যেটা বলবো সেটাই হবে,এখন থেকে তুমি সেই সব কিছু করবে যা একজন স্ত্রীর দায়িত্ব”
কথাটা বলে শান্ত নিজের আলমারি খুলে একটা টিশার্ট নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো
আহানা চোখের পানি মুছে চুপ করে আছে,তারপর পা তুলে বিছানার মাঝখানে গিয়ে গোল হয়ে বসলো সে
মনে হচ্ছে শান্তকে ভয় লাগছে,তার কথা না শুনলে আরেকটা চড় খেতে হবে এখন
তাহলে সমান সমান হবে,সেও শান্তকে ২টি চড় দিয়েছিলো
আর শান্ত ও?না না সমান সমান হতে দেওয়া যাবে না কিছুতেই
রাত ৮টা বেজে গেছে,পুরো বাড়ি খালি,অন্ধকার নেমে এসেছে
এই প্রথম সে আর শান্ত এত একা একা একসাথে এক বাসায় যেখানে কেউ নেই
আহানার ভয় করে না,কারণ সে শান্তকে চিনে,শান্ত ওর সাথে এসব নিয়ে জোরজবরদস্তি করবে না
তার পরেও একসাথে এক রুমে এক বিছানায় থাকতে কেমন যেন লাগতেছে
কাল এক সাথে এক রুমে ছিলো তারা কিন্তু সেটা সোফায় আর বিছানায় ছিলো
এখন তো এক বিছানায়,আহানার গা গুলিয়ে আসতেছে শুধু
ভাবতে ভাবতে শান্তকে দেখতে পেলো সে
শান্ত গায়ের পাঞ্জাবিটা বদল করে টিশার্টটা পরে এসেছে
চোখে মুখে রাগের ছাপ,রাগ এখনও কমেনি তার,আহানার দিকে না তাকিয়েই তার ল্যাপটপটা খুঁজে সেটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো সে
তারপর বিন ব্যাগে বসে কাজ শুরু করে দিলো
আহানা ওর দিকে চেয়ে আছে,এরকম ১০মিনিট চেয়ে থেকে আহানার মাথাটাই ব্যাথা হয়ে গেছে
বিছানা থেকে নেমে সে রুম থেকে চলে গেলো সোজা নিজের রুমে
নিজের একটা থ্রি পিস বের করে সেটা পরে আসলো তারপর গেলো রান্নাঘরে,বুয়া সব রেঁধে তারপর চলে গেছে
ইলিশ মাছের আইটেম বেশি,আহানা ব্রু কুঁচকে খুঁজতে খুঁজতে চিকেন ও পেলো,তাই সেটা দিয়ে পেট পুরে ভাত খেলো সে
সকালে যে ঐ বাড়িতে নাস্তা করেছিলো আর কিছু মুখে দেয়নি সে
তাই এখন পেটুকের মত খেলো,তারপর মুখ মুছে চা বসালো
চা খেলে মাথা ধরাটা যাবে,সারাদিনের ক্লান্তি ও যাবে
.
শান্ত বাসায় ঢুকে দরজা লক করে চাবি পকেটে রেখেছে,এই আহানাকে একটুও বিশ্বাস নেই,একটা পাগল মেয়ে,যদি আবার বেরিয়ে যায়?
.
আহানা চায়ের কাপ দুটো হাতে নিয়ে শান্তর রুমের দিকে চললো
শান্ত মাথা টিপতে টিপতে কাজ করতেছে
আহানা কাছে এসে বারান্দায় থাকা টি টেবিলের উপর চায়ের কাপ রেখে আবার বিছানায় ফেরত আসলো
নিজের চা খেতে খেতে টিভি অন করলো সে,কার্টুনের চ্যানেল এনে একটা বালিশ কোলে রেখে কার্টুন দেখায় মনোযোগ দিলো এবার
তার দুবার বিয়ে হয়েছে,এই লোকটার সাথে
যে ল্যাপটপ দেখতে দেখতে তার বানানো চা খাচ্ছে এখন
অথচ আমার কি কপাল,এই দুই বিয়েতে একবারও বাসর রাত হয়নি
অবশ্য আমার মত নেই,আর উনার তো একদমই নাহহ
বাসর রাত নিয়ে কত স্বপ্ন বুনেছিলাম আমি,আসলে যারা বেশি স্বপ্ন দেখে তাদের সাথেই এমনটাই হয়
আমি তার প্রমাণ,বাসর না করি,একটু গল্প গুজব তো করতে পারি?না সেটাও না,বরং এখন দু লাইন বললে ঝাড়ি খেতে হবে উল্টো
যা হয়েছে তার সবটা দোষ ঐ কণার
আমার শান্ত,আমার শান্ত করে মাথা খাচ্ছিলো আমার
বেশ হয়েছে!উনি আমাকে আবারও বিয়ে করেছে,এবার ঐ কণা মেয়েটা আর কিছু করতে পারবে না হুহ
আর একদিন আমাকে যদি ধরে তো বলবো দুইবার বিয়ে করেছি,এখন থেকো এটা আমার শান্ত,আমার আমার আমার!
আহানা হেসে দিলো,পরে শান্তর মুখের দিকে তাকাতেই তার হাসি উধাও
আমার শান্ত না!এমনি
সে আমার শুধু স্বামী,আর কিছু না
তাও আমি আজ অনেক খুশি
আমাকে আর ছাড়তে পারবেন না উনি,ঐ কণা আমাকে উনার থেকে আলাদা করতে পারবে না কোনোদিন
ঐ বার বিয়েতে এত কেঁদেছিলাম কষ্টে আর এবারের বিয়েতে খুশিতে মন চাঙ্গা হয়ে গেছে
আমার সামান্য মন খারাপ আর রাগ করে বাড়ি ফেরাতে এত বড় সারপ্রাইজ পাবো জানলে ডেইলি এমন করতাম
.
এই তুমি আমার বিছানায় বসে কি ভাবতে ভাবতে হাত পা এমন নাচাচ্ছো?
একটু যদি চা ফালাইসো আমার বিছানায় তো খবর আছে তোমার!
.
আহানা মুচকি হেসে বললো”কেন?কি করবেন?আবার বিয়ে করবেন বুঝি?”
.
শান্ত কাজ থেকে মন উঠিয়ে অবাক হয়ে আহানার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ
কি বললো মেয়েটা??সে কি খুশি হয়েছে আজকে করা আমার এই কাজে?নাহলে এটা বললো কেন?
.
আহানা চায়ের কাপ রেখে শান্তর বিছানার চাদর টেনে শুয়ে পড়েছে,সাথে সাথে চোখে রাজ্যের ঘুম এসে গেলো তার
এদিকে শান্তর ফোনে বারবার আহানার মায়ের কল আসতেছে
শান্ত রিসিভ করে বললো আহানা রুপাদের বাসায় গেছে,রুপা অসুস্থ
কোনোরকম এটা বুঝিয়ে দিলো সে
আহানার মা তাই আর কিছু বললেন না
শান্ত ফোন রেখে আবারও কাজে মন দিলো,একেবারে রাতের ১টায় কাজ শেষ করে তারপর উঠেছে সে
কোমড় ঘষতে ঘষতে ল্যাপটপটা নিয়ে ওয়ারড্রবের উপরে রেখে একটা মলম নিয়ে আহানার দিকে তাকালো
আহানা সুন্দর করে চাদর মুড়িয়ে বিছানার এক কোণে ঘুমিয়ে পড়েছে
শান্ত ২মিনিট ধরে ওর ঘুম দেখলো তারপর ব্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে আহানার হাত ধরে টেনে ওকে তুলে ফেললো
আহানা চোখ ডলতে ডলতে বললো”আমি ঘুমালে আপনাকে কেউ খোঁচায়?সুন্দর করে নাম ধরেও তো ডাকতে পারেন,এভাবে হাত ধরে টেনে তুলেন কেন আপনি?”
.
আমার কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে,একটু মলম লাগিয়ে দাও
.
এটার জন্য তুলেছেন আমায়?
.
বউ হও না তুমি আমার?স্বামীর সেবা করো ঠিক করে
.
শান্ত টিশার্টটা একটু উঠিয়ে সামনের দিকে মুখ করে আহানার পাশে এসে বসলো
আহানা চোখ ডলা শেষ করে মলমটা নিয়ে লাগিয়ে দিচ্ছে শান্তর কোমড়ে
লাগানো শেষে শান্ত এবার আহানার হাত ধরে টেনে ওকে বিছানা থেকে নামালো
.
আবার কি?
.
ডিনার করিনি আমি সে খেয়াল আছে তোমার?যাও খাবার নিয়ে আসো আমার জন্য
.
আহানা মাথার চুল টানতে টানতে রান্নাঘরের দিকে গেলো,তারপর খাবার নিতে নিতে বললো”ইলিশ মাছ খান?”
.
শান্ত তখন সোফার রুমে এসে বসেছে,আহানার কথা শুনে সামান্য হেসে বললো”ইলিশ থাকলে জাস্ট ইলিশই দাও,”
.
আহানা ইলিশ প্লেটে নিতে নিতে বললো “কি ছেলেরে বাবা,ইলিশ মাছ কেমনে খায়,আমি তো একটুও খেতে পারি না
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here