প্রেমের পাঁচফোড়ন💖 #সিজন_২ #পর্ব_৩৯

0
663

প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৩৯
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আহানা সোজা গিয়ে শান্তি রহমানের পাশে এসে বসেছে,উনি নরমালি একবার তাকালো আহানার দিকে তারপর আহানার গায়ের শাড়ীটা দেখে মনে মনে হাসলেন
শাড়ীটা যে তার আলমারিতে ছিল এবং সেটা যে শান্ত নিয়ে আহানাকে দিয়েছে তা আর বুঝতে বাকি নেই উনার
শান্ত কিছুক্ষণ বাদেই সোফার রুমে এসে হাজির হলো,মায়ের সামনে এসে শক্ত গলায় বললো”মা শুনো,আমি আপাতত বিয়ে করতে চাই না,আহানাকেও না, কণাকেও না,আমাকে আমার মতো থাকতে দাও প্লিস”
এক দমে কথা শেষ করলো শান্ত,আহানা লাইনটা মুখস্থ করে নিয়েছে ততক্ষণে
তারপর সেও তার মায়ের দিকে চেয়ে বললো”মা শুনো,আমি আপাতত বিয়ে করতে চাই না,শান্তকেও না, রামিমকেও না,আমাকে আমার মতো থাকতে দাও প্লিস”
.
আহানার মা আর শান্তর মা চুপ করে চেয়ে আছেন ওদের দিকে
তারপর দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকালেন,এরপর নিরবতা!!
.
১০মিনিট হয়েছে শান্ত দাঁড়িয়ে আছ উনাদের মুখের দিকে তাকিয়ে অথচ উনারা ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছেন,আর আহানাও ঠিক একই ভঙ্গিতে উনাদের মুখ দেখায় ব্যস্ত
.
শেষে শান্ত বললো”কি ব্যাপার?”
.
শুনো বাবা,আমি কিছু কথা বলি,আমাদের সবারই কিছু না কিছু ইচ্ছা থাকে আমাদের সন্তানদের নিয়ে
আর আমরা চাই তোমরা আমাদের সিদ্ধান্তটা মেনে নাও
যেহেতু তোমরা একে অপরকে বিয়ে করতে চাও না সেহেতু যাদের সাথে আমরা ঠিক করেছি তাদেরই করে নাও,সমস্যা কোথায়?
.
মায়ের কথা শুনে আহানা উঠে দাঁড়িয়ে বললো”মা শুনো,আমার আর উনার বিয়ে…!
.
শান্ত আহানার হাত টেনে ওকে চুপ করিয়ে দিলো তারপর বললো”আমাদের সময় দাও,হুটহাট করে বিয়ের কথা বললেই তো আর বিয়ের পিরিতে বসে যাওয়া যায় না?”
.
ঠিক আছে,সময় নাও তোমরা,আজকালকার ছেলে মেয়েরা মায়েদের কথায় গুরুত্বই দেয় না,যা বুঝলাম

আহানা বাসা থেকে বেরিয়ে দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে,বিবাহিত হওয়ার সত্ত্বেও বিয়ের কথা চলছে তার আর তার স্বামীর তাও আরেকজনের সাথে
আর আমার স্বামী সব অস্বীকার করতেছে তাও আন্টির ভয়ে
আরে আন্টি তো জানলে আরও খুশি হবেন
একটু নারাজ হলেও পরে খুশি খুশি মেনে নিবেন তিনি,এটা তার কাছে একটা সারপ্রাইজ হবে আর তাকে দেখো,ভীতুর ডিম একটা!বুঝতেই চায় না

রিয়াজের বৌভাত শেষ হয়েছে সবেমাত্র,যে যার বাসায় চলে যাচ্ছে
আহানা শান্ত আর তাদের মা,সাথে নিতু এক কারে উঠে বাড়ি ফিরছে,আহানার মা তো রামিম ছেলেটার গুনগান গাইতে গাইতে শেষ
কাঁচপুর ব্রিজ দিয়ে যাওয়ার সময় শান্তর মন চাচ্ছিলো কারটা ব্রিজ টিপকিয়ে পানিতে ফেলতে
তার নিজের দুবার বিয়ে করা বউ কিনা কোথাকার কোন রামিমকে বিয়ে করবে?
ঐ রামিমের নিজের বাড়ি আছে তো আমারও ৩টে বাড়ি আছে
এসব শুনানোর কি আছে?
.
মা তো নিজের ফোন থেকে কণার ছবি বের করে আহানার আম্মুকে দেখাচ্ছেন বারবার
আহানা জ্বলতে জ্বলতে শেষ,রাগী রাগী লুক নিয়ে বারবার শান্তর দিকে তাকাচ্ছে সে
.
রাত ৮টার দিকে বাসায় ফিরে যে যার রুমে চলে গেছে
শান্ত বাসায় ফিরার পর থেকে একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আর সেটা হলো কাল আহানার মায়ের জন্মদিন আর সে আহানার মাকে সব চাইতে বেস্ট একটা গিফট দিবে বার্থডে গিফট হিসেবে,সেটারই কাজ করতেছে সে
ঐদিকে আহানা শান্তকে ফোনে কল করছে ছাদে গিয়ে,মায়ের জন্য সামনা সামনা কথা বলতেও ভয় পাচ্ছে আহানা
কোনোরকম একটা বাহানা দিয়ে সে আপাতত ছাদে এসে মশার কামড় খাচ্ছে,আর তার সো কলড দুবার বিয়ে করা জামাইর কিনা খবর নাই!
শান্তি আন্টি সোফার রুমে না থাকলে এতক্ষণে হারামিটার রুমে গিয়ে মারামারি শুরু করে দিতাম,কি এমন কাজ করছে যে ৩৩বার কল করছি একবার ও ধরছে না
আগে ঠেলেও আমাদের দুজনকে এক করতে পারতো না তারা আর এখন এক হতে যেতেই ভয় পাচ্ছি তাও তাদের ভয় হচ্ছে!কি ভাগ্য!
এই জন্যই বুঝি বলে”দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝে না”
.
যাই হোক অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করতে হবে যা দেখছি, এভাবে সারারাত মশার কামড় খেয়েও ঐ শান্তর মুখ দেখবো না,আরে এত সিরিয়াস মোমেন্টে কেউ ফোন সাইলেন্ট রাখে?
নেক্সট কি হবে তা নিয়ে ডিসকাস করার জন্য ফোন করছি,কোনো প্রেম করার জন্য না,আমার টেস্ট এত খারাপ না!

শান্ত খাটের মাঝখানে বসে অনলাইনে বার্থডে ওয়ার্ড বেলুন অর্ডার করছে আর কেক অর্ডার করছে,হঠাৎই তার বারান্দায় শব্দ হলো
ধপাসসসসস!
.
তারপর হালকা করে “ও মাগো,আমার কোমড় গেলো গো” বলার আওয়াজ আসলো
শান্ত ফোনটা সাইডে রেখে বিছানা থেকে নামতেই ওপার থেকে রণচন্ডি রুপ ধারণ করে আহানা এগিয়ে আসলো
ওড়না কোমড়ে বাঁধা আর চোখে মুখে আগুন নিয়ে
হাতে পায়ে কাদাও লেগে আছে
.
শান্ত আহানাকে দেখা শেষ করে বললো”কি হয়েছে?আমার রুমের কি দরজা নাই?এরকম লুটোপুটি খেয়ে এসেছো কেন?!
.
চুপ!আন্টি শুনে ফেলবে,সোফার রুমে উনি,আর দরজা দিয়ে আসবো মানে?আপনি জানেন মা আমাকে আপনার থেকে দূরে থাকতে বলেছে
.
তো থাকো
.
মানে কি এসবের,ভুলে গেছেন কয়বার বিয়ে করেছেন আমাকে?
.
না ভুলি নাই,কিসের জন্য এত সাত সাগর পাড়ি দিসো সেটা বলো এখন,আমার অনেক কাজ আছে
.
ভাব দেখান?কাকে দেখান?জানেন আমি আপনাকে সাড়ে ৩৩বার কল করেছি
.
সাড়ে ৩৩মানে?কল আবার সাড়ে হয় কি করে?
.
লাস্টের বার কল করে রিং ১বার হওয়ার পর কেটে দিয়েছিলাম তাই ওটা সাড়ে ধরেছি
.
শান্ত মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে বললো”তুমি একটা উন্মাদ,যা বলার বলবা আগে বাথরুমে গিয়ে হাত পায়ের কাদা পরিষ্কার করে আসো”
.
আহানা তাই বাথরুমের দিকে গিয়ে হাত পা ধুয়ে আবার ফেরত আসলো
.
হুম বলো এবার
.
আরে কি বলবো?আপনি জানেন না?নাকি সব ভুলে গেছেন,আপনার আজকের প্ল্যান তো ফ্লপ হলো,নেক্সট কি হবে?
.
আমার আজকের প্ল্যান কার্যকর না হলেও পরিস্থিতি আয়ত্তে এসেছে বৈকি
.
তারপর কি করবেন সেটা বলেন
.
তারপর তারা বাড়াবাড়ি করলে বিয়ের কথা বলে দিব,আবার বিয়ে করা তো একদমই সম্ভব না
.
হুম সেটাই,তাহলে যাই আমি
.
দাঁড়াও
.
কি?
.
কাল তোমার জন্য বিরাট একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে আহানা,অবশ্য গিফটা আন্টির জন্য তবে আই থিংক তুমি সব চাইতে বেশি খুশি হবে
.
তাই নাকি?আমাকে খুশি করতে পারবেন সেদিন যেদিন আপনি নিজের মুখে বিয়ের কথাটা বলতে পারবেন সবাইকে,তার আগে আহানা খিলখিল করে হাসবে না
.
কথাটা বলে আহানা চললো বারান্দার দিকে,টপকে নিচে নামবে
শান্ত এগিয়ে এসে ওর হাত ধরে টান দিয়ে কাছে নিয়ে আসলো তারপর বললো”তাহলে বিয়েটাকে তুমি মানছো?তুমি চাও আমার স্ত্রী হয়ে থাকতে?আমাকে পছন্দ করো নাকি?”
.
আমাকে ভূতে ধরে নাই,জাস্ট নিজের অধিকারটার জন্য এত কষ্ট করছি আমি আর কিছু না
.
শান্ত পকেটে হাত দিয়ে রুমের দিকে যেতে যেতে বললো”তাহলে তো অন্য অধিকার ও প্রাপ্য তোমার”
.
আহানা ব্রু কুঁচকে কথার উত্তর না দিয়ে গ্রিল টপকে নিচে নেমে চলে গেলো
.
পরেরদিন সকাল থেকে আহানার মায়ের রুম থেকে বের হওয়া বারণ,শান্ত আর আহানা মিলে ডেকোরেশন করতেছে সোফার রুমটায়,আহানা নিজের হাতে একটা কেক বানিয়েছে আর শান্ত একটা অর্ডার করেছে
এদিকে মা তো জানে তার জন্মদিন বলে ওরা এমন করছে
মায়ের তখন খুশি লাগতো যখন আহানার বাবা ছিলো
এখন আর এসবে খুশি আসে না তার
যাই হোক সকাল ১১টা অবদি আহানা আর শান্ত সবটা রেডি করে ফেললো,সাথে নিতু আর রিপা ও হেল্প করেছে
আহানা মায়ের চোখ বেঁধে সোফার রুমে এনে চোখের বাঁধন খুলে দিলো,সাথে সাথে সবাই বললো”হ্যাপি বার্থডে!!!”
মা খুশি হলেন,শান্তর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন
আহানা ব্রু কুঁচকে বললো”বাহ রে,৫১% ডেকোরেশন আমি করেছি,আগে আমার মাথা মুছে দেওয়া উচিত ছিল তোমার,হুহ!”
.
তুই তো আমার মেয়ে,তোকে আবার আলাদা করে মাথা মুছে দিতে হয়?
.
আহানা মুখ বাঁকিয়ে বললো”নাও কেক কাটো!”
.
মা কেক কেটে সবার আগে শান্তর মাকে খাওয়ালো,তারপর নিতুকে,তারপর শান্তকে,সবার শেষে আহানাকে
অবশ্য এতে আহানা রাগ করেনি,কারণ পুরো ডেকোরেশনটা তাদের খরচেই হয়েছে
আহানা এসব ভাবতে ভাবতে এরই মাঝো শান্ত বলে উঠলো উনার জন্য বিরাট একটা সারপ্রাইজ সে রেডি করেছে
আহানার মা জিজ্ঞাসু চোখে তাকিয়ে বললেন”কি সেটা?”
.
তার জন্য চোখ আবারও বাঁধতে হবে
.
শান্ত দুটো ফিতা নিয়ে আসলো রুম থেকে
.
আহানা বললো “দুটো কেন?”
.
উত্তরে শান্ত বললো একটা তার
.
কেন??
.
সারপ্রাইজ দুজনেরই
চুপ থাকো না,সব আগে বলে দিলে সেটা সারপ্রাইজ থাকে?
.
আচ্ছা আচ্ছা
.
আহানাকে আর ওর মায়ের চোখে শান্ত ফিতা বেঁধে দিলো
তারপর ওদের নিয়ে কারে বসালো সে
মাকে বলে আসলো সে ঠিক কি কারণে যাচ্ছে,মায়ের চোখে মুখে খুশি ফুটে উঠলো শান্তর কথা শুনে
ওদিকে আহানা গেস করার চেষ্টা করছে ঠিক কি সারপ্রাইজ হতে পারে
তো প্রায়ই ৩০মিনিটের পথযাত্রার পর কার থামলো
শান্ত কারের দরজা খুলে আহানা আর ওর মাকে বের করলো
তারপর একটা বাড়ির সামনে নিয়ে এক এক করে ওদের চোখের বাঁধন খুলে দিলো সে
এটা সেই বাড়ি যে বাড়ি থেকে ৭বছর আগে তাদের বের করে দেওয়া হয়েছিলো,যে বাড়িটার সাথে সাথে তাদের আর্থিক স্থান বদলে গিয়েছিলো
আজ সেই বাড়িটার সামনে তারা দাঁড়িয়ে আছে
নীল রঙের দোতলা একটা বাড়ি,সামনে শতে শতে নাম না জানা বিদেশি ফুলের বাগান,অবশ্য আগে গন্ধরাজের বাগান ছিলো সেই বাগানটা নষ্ট হয়ে যাওয়ায়
শান্ত নিজের মনের মতন করে বাগানটা সাজিয়ে নিয়েছে
.
বাড়ির সামনে লাল রঙের একটা গাড়ী,এটা সেই গাড়ী যেটা চালিয়ে আহানার বাবা ওকে স্কুলে দিয়ে আসতো
আহানা কারের কাছে দৌড়ে গিয়ে দাঁড়ালো,চোখের সামনে আজও ভাসতেছে বাবা তার হাত ধরে কারে বসাতো তাকে,মা হাসতো,টাটা দিতো
সব একটা কার এক্সিডেন্টে ছারখার হয়ে গেছে
আহানার মা বাড়িতে ঢুকার আগেই পিছন ফিরে শান্তকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেললেন,শান্ত তাকে আজ এত বড় উপহার দিবে তা তার কল্পনার বাহিরে ছিলো
আহানা ততক্ষনে বাড়ির ভিতরে চলে গেছে
সোফার রুমটা একটু দূরে শুরুতেই পড়ে একটা ফুলদানি,সব যেন সেই আগের মতই,শান্ত ঠিক মনে রেখেছে বাড়িটা আগে কিরকম ছিলো
সোফায় হাত বুলিয়ে আহানা চলে যেতে নিতেই থেমে গেলো
সোফায় তাদের ছোটবেলায় আঁকিবুকির দাগ এখনও লেগে আছে,আহানা মনের অজান্তেই হাসলো
তারপর সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় গেলো নিজের রুমে,নিজের রুম দেখে আহানা কেঁদে ফেললো সাথে সাথে
তার সেই গোলাপি রঙের বিছানা,গোলাপি বিছানার চাদর,মিকি মাউসের লম্বাটে একটা পুতুল পাশে,আহানা পুতুলটা জড়িয়ে ধরে বসে পড়লো
মজনু চাচা তাকে পুতুলটা নিতে দেয়নি,অথচ তার সব চাইতে প্রিয় বন্ধু ছিল এই পুুতলটা,পুতুলটা দামি হওয়ায় চাচা রেখে দিয়েছিলেন
আহানা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো এবার
সম্পূর্ণ বাগানের ঠিক মাঝখানে আহানার রুমের বারান্দাটা বানানো,যাতে সেখানে দাঁড়ালেই ফুলের সব সুবাস উপভোগ করা যায়
চলবে♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here