নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ৫৪ {বোনাস 💜}

0
633

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৪ {বোনাস 💜}

আব্রাহামের অফিস নিলামে উঠেছে। হ্যাঁ আব্রাহামের অফিসের ৪ ভাগের ১ ভাগ নিলামে উঠেছে। রাশেদ আজ সকাল থেকেই এগুলো ঝামেলা তে পরে রয়েছে। আর যখন আইরাত তাকে ফোন দেয় তখন রাশেদ আইরাতকে এই কথাই বলে। আর আইরাতের তো এটা শুনে মেজাজ ৪৪০ হয়ে গেছে। আইরাত আর কিছু না বলেই সোজা গাড়ির চাবি টা হাতে নিয়ে বাড়ির বাইরে এসে পরে। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। আব্রাহামের অফিসের এক ভাগ নিলামে উঠেছে লাইক সিরিয়াসলি? তীব্র ভাবে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে আইরাত। প্রায় ২০-২৫ মিনিট পর গাড়ি এসে আব্রাহামের অফিসের সামনে থামে। আইরাত গাড়ির দরজা টা ঠাস করে লাগিয়ে দেয়। আইরাত ভেতরের দিকে হাটা দেয় কিছুদূর যেতে দেখে অফিসের সামনে বেশ কিছু লোক বসে আছে সারিবদ্ধ ভাবে। আর তাদের সবার সামনে দুই-তিনজন লোক দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত কে দেখতে পেরে রাশেদ তার কাছে আসে। আইরাত কাউকে কিছু না বলেই সোজা সামনে চলে যায়।

আইরাত;; বন্ধ করুন এইসব কিছু। কি হচ্ছে এখানে?

আইরাতের চিল্লানোতে সবাই তার দিকে তাকায়। তাকে দেখে একজন লোক এগিয়ে আসে। লোকটি আজাদ রহমান অর্থাৎ যে এই নিলাম তুলেছেন আরকি।

আজাদ;; কে আপনি? আর এখানে কি চাই?

আইরাত;; কে আমি? যার অফিস কে নিলামে তুলেছেন তার বউ হই আমি। আর এগুলো কি হচ্ছে? বিনা কারো পারমিশনে আপনার সাহস হয় কি করে আব্রাহামের অফিসের এক অংশ নিলামে তুলার।

আজাদ;; আমাদের কাছে পুলিশের পারমিশন আছে।

আইরাত;; তাই না? পারমিশন, তো সেটা পুলিশ কে মোটা অংকের ঘুষ খাইয়ে তো আমিও নিতে পারবো।

আজাদ;; দেখুন….

আর কেউ কিছু বলতে যাবে তার আগেই কিছু পুলিশ অফিসার আসে। তারা আসতেই আজাদ বলে ওঠে….

আজাদ;; স্যার দেখুন আমাদের কাছে আপনার পারমিশন থাকা সত্ত্বেও উনি এসে আমাদের কাজ বাধা দিচ্ছেন।

পুলিশ;; মিসেস আইরাত..

আইরাত;; হুয়াট? (চিল্লিয়ে)

পুলিশ;; দেখুন আসলে…

আইরাত;; কিশের ভিত্তিতে আপনারা নিলামে তুলেছেন?

পুলিশ;; দেখুন অফিসে আগুন লেগেছিলো। আর যে অংশে আগুন লেগেছিলো সেখানে কেউ কাজ করে না। কেবিন গুলো পরে আছে। তবে আগুন লাগলেও সেখানে প্রায় লক্ষ লক্ষ টাকা পাওয়া গেছে। সেই টাকা গুলো অবৈধ।

আইরাত;; অবৈধ রাইট? তো আগে আপনি আমাকে এটা বলুন যে পুলিশ তো আপনি হয়ে গেছেনই কিন্তু খাবার খেয়ে নাকি গরুর ঘাস খেয়ে হয়েছেন কোনটা?

পুলিশ;; এক্সকিউজ মি।

আইরাত;; এক্সকিউজ মি মাই ফুট। তো এইযে আপনি বলছেন না যে অবৈধ টাকা পাওয়া গেছে। সত্যি কথা বলতে এমন টাকা গুলো আপনার বাড়ি তালাশি করলেও পাওয়া যাবে। তো অযথা এতো প্যাচ লাগানো বন্ধ করুন। মিস্টার আজাদ আপনাকে কতো লক্ষ টাকা দিয়েছি নাকি কোটি দিয়েছে কোনটা। আমি তার থেকে ডাবল দিবো আপনাকে। আপনি এখনই আমাকে মিস্টার আজাদের বাড়ি নিলামে তুলার পারমিশন টা দিয়ে দিন।

পুলিশ;; আপনি ক……..

আইরাত;; আব্রাহাম কেমন মানুষ ছিলো বা কোন জগৎ এর মানুষ ছিলো তা আপনি-আমি সবাই জানি। এখানে নতুন করে বলার কিছুই নেই। কিন্তু তাই বলে আব্রাহাম কোন ইলিগ্যাল কাজ করবে তার প্রশ্নই আসে না। টাকারই অফিস। অফিসে টাকার কাজই করা হয় তো টাকা পাওয়া যাবে না আশ্চর্য তো। মানলাম যে কেবিন গুলো তে আগুন লেগেছিলো সেখানে কোন কাজ করা হয় না তাই বলে টাকা থাকবে না এমন কোন কথা আছে নাকি। আর নিলামে তো ওই কেবিন গুলোই তোলা হয়েছে তাই না।

পুলিশ;; আসলে ম্যাম। আচ্ছা আমরা সব আগের মতো করে দিচ্ছে। কোন নিলাম-টিলাম হবে না। সব বন্ধ।

আইরাত;; হ্যাঁ যতো তাড়াতাড়ি বন্ধ করে দিবেন এইসব ততো তাড়াতাড়ি আপনাদেরই ভালো। আর একটা কথা এখানে না এখনো এমন কোন বিজন্যান ম্যান তৈরি হয়নি যে কিনা আব্রাহামের অফিসের এক অংশ তো দূর অর্ধেক অংশও কিনে নিতে পারবে । (আজাদের দিকে তাকিয়ে)

আইরাত;; এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চেহারা কি দেখছেন যান এখন থেকে সব। (চিল্লিয়ে)

সবাই সেখান থেকে চলে যায়। আইরাত নিজেও চলে আসতে নিবে তখন পুলিশ অফিসার ডাক দিয়ে ওঠে….

পুলিশ;; ম্যাম!

আইরাত পেছন ঘুরে তাকায়।

পুলিশ;; ম্যাম সরি টু সে বাট আব্রাহাম স্যার তো এখন আর নেই তাহলে উনার এই অফিস- আন্ডারগ্রাউন্ড বা এই এত্তো সব কিছু কীভাবে কি?

আইরাত;; সেই মাথা ব্যাথা আপনার না আমার। আর হ্যাঁ আব্রাহামের আইরাত এখন মরে নি বেঁচে আছে।

এই বলেই আইরাত সেখান থেকে এসে পরে। আইরাত যখন বাইরে আসে তখন রাশেদ তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।

আইরাত;; কি হলো?

রাশেদ;; ম্যাম সত্যি বলতে আমি এইটা সামলাতে পারতাম না। একদম সিচুয়েশন বিগড়ে যেতো কিন্তু আপনি….

আইরাত;; হয়েছে। আমি বাড়ি যাচ্ছি। আর যত জলদি সম্ভব ওই পুড়ে যাওয়া কেবিন গুলোকে দ্রুত ঠিক করো। আর হ্যাঁ কাল সকাল বেলা অফিসের যতো প্যান্ডিং ফাইল আছে সব কটা আমার বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসবে। এখন থেকেই কাজ করার দরকার নেই। অফিস আগে সম্পূর্ণ রুপে ঠিক হোক তারপর। আপাতত আব্রাহামের ফাইল গুলো বাসায় পৌঁছে দিও।

রাশেদ;; জ্বি ম্যাম আচ্ছা।

তখনই একজন ড্রাইভার কে আইরাতের চোখে পরে। সে অতি দ্রুত কিছুটা লুকিয়েই অফিসের পেছন রাস্তা দিয়ে বের হয়ে গেলো। আইরাতের কাছে ব্যাপার টা কেমন যেনো বাধলো। এই সেই ড্রাইভার টা যে রায়হানের সাথে জড়িত ছিলো। তবে আইরাত তা জানে না আর না ই রাশেদ জানে।

আইরাত;; রাশেদ?

রাশেদ;; জ্বি?

আইরাত;; ওইযে মাত্রই যে ড্রাইভার টা গেলো ও কে? আগে তো দেখি নি।

রাশেদ;; ম্যাম ওর নাম নাফিজ। নতুন ড্রাইভার।

আইরাত;; ওহহ আচ্ছা।

এই বলেই আইরাত গাড়িতে উঠে পরে। তারপর ড্রাইভ করে বাড়ি এসে পরে। বাড়ি এসেই দেখে ইলা গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে।

আইরাত;; এভাবে দাঁড়িয়ে আছো যে? কি হয়েছে?

ইলা;; তুই তখন ওভাবে চলে গেলি কিছু না বলেই। কি হয়েছে আগে তুই বল।

আইরাত;; একটা কথা কি জানো। মানুষ টাকা চিনে। এই কাগজে তৈরি নোট গুলো মানুষের ইমান পর্যন্ত কিনে নিতে পারে। টাকার থেকে বড়ো আর কিছুই না, কিচ্ছু না। কথা গুলো তেতো হলেও সত্য। আর সত্য সবসময় তেতোই হয়।

ইলা;; মানে?

আইরাত;; কিছু না চলো।

ইলা;; তুই রেগে আছিস?

আইরাত;; যার ওপর রাগ করতাম সেই মানুষ টাই যখন আমার কাছে আর নেই তখন রাগ আর কি করে বা কি নিয়েই করবো বলো।

ইলা;; ভেতরে চল।

এভাবেই সেইদিন টা চলে গেলো। পরেরদিন সকালে একজন গার্ড এসে আইরাতের বাসায় অফিসের সব ফাইল গুলো দিয়ে যায়। আইরাত সব ভালোভাবে ফাইলগুলো দেখে। আইরাতের জানা মতে এখানে এখন কোন গরবর নেই। আর আব্রাহাম কখনোই আইরাত কে না জানিয়ে কিছু করতো না। সেটা অফিসের কাজ হোক বা কোন ডিলই সাইন করতে হোক না কেনো সব ব্যাপারেই আইরাতের জানা থাকতো। আর এটাই যেনো আইরাতের জন্য প্লাস পয়েন্ট হয়ে গেছে। আইরাত ফাইল গুলো যখন ওলট-পালট করে দেখছিলো তখন তাদের মাঝখান থেকে আব্রাহামের ওই সিগন্যাচার প্যান টা বের হয় যা দিয়ে আব্রাহাম সবসময়ই সাইন করতো। আইরাত তা হাতে নিয়ে দেখে। মুচকি হেসে ওঠে। আব্রাহাম যেভাবে প্যান ধরতো সেভাবেই ধরার ট্রাই করে কিন্তু পারে না। বেশ কয়েকবার ট্রাই করতে করতে হয়ে যায়। একদিন যে আইরাত অফিসে আব্রাহামের কোর্ট, সাইন করা প্যান এইসব নিয়ে আব্রাহাম পার্ট টু হওয়ার ট্রাই করছিলো হঠাৎ করেই তার সেইদিনের কথা মনে পরে যায়। আইরাত তার আনমনেই হেসে ওঠে।

আইরাত এক ক্ষীন দম ছেড়ে ফাইল গুলো নিয়ে বসে পরে। একটার পর একটা ফাইল চেক করে যাচ্ছে তো করেই যাচ্ছে। উঠার নাম নেই। নেই হাত ব্যাথারও নাম। বেশ সময় পার হয়ে যায় কিন্তু আইরাত তার রুম থেকে বের হয় না। আইরাত বের হচ্ছে না দেখে ইলা আইরাতের রুমে যায়। গিয়ে দেখে আইরাত বসে বসে ফাইল দেখছে, চোখে চশমা।

ইলা;; আইরাত!

আইরাত;; হ্যাঁ এসো (ফাইলের দিকে তাকিয়েই)

ইলা;; কি করিস?

আইরাত;; কাজ করি, অফিসের কাজ।

ইলা;; অফিসের কাজ??

আইরাত;; হ্যাঁ আসলে অনেক গুলো ফাইল পরে ছিলো তো ভাবলাম আমি সব করে দেই। তাই রাশেদকে বলে এসেছিলাম তো তাই ফাইলগুলো দিয়ে গেলো।

ইলা;; হুমম মনমরা হয়ে বসে থাকার চেয়ে ভালো কাজে ব্যাস্ত থাক।

আইরাত;; হুমম।

ইলা;; একটা কথা বলবো?

আইরাত;; হুমম।

ইলা;; তোকে আব্রাহামের মতো লাগছে।

আইরাত তার মাথা তুলে ইলার দিকে তাকায়।

ইলা;; আব্রাহাম নিজেও এভাবে চোখে চশমা পরে সামনে ল্যাপটপ নিয়ে গম্ভীর মুখ বানিয়ে কাজ করতো।

আইরাত;; চশমা টা আব্রাহামেরই।

ইলা;; হুমম বুঝলাম।

এভাবেই সেই বেলা চলে যায়। এখন বিকেল বেলা। আইরাত একটু উঠে ছাদে গিয়ে দাঁড়ায়। বিকেল যেহেতু তাই আকাশ টা সুন্দর লাগছে আরো বেশি। আইরাত ওপরে আকাশের দিকে তাকায়। আকাশ কিছুটা হলুদ-কমলা রঙে রঙ্গিন হয়ে আছে। মৃদু ঠান্ডা বাতাস এসে আইরাতের চুল গুলোকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। কয়েক মিনিট পর একজন স্টাফ এসে আইরাতকে এক মগ গরম কফি দিয়ে যায়। আইরাত কতোক্ষন এক ধ্যানে কফির দিকে তাকিয়ে থাকে। কেননা এই সেইম কালারের কফির মগ দুইটা ছিলো। একটা আব্রাহামের আর একটা আইরাতের। সবই আছে শুধু মানুষ টা বাদে। আইরাত বড়ো সড়ো একটা দম ছাড়ে। এমন কোন জিনিস নেই যাতে আব্রাহাম বা তার মেমোরি নেই। সবকিছুতেই আছেই। আইরাতের নিজের মাঝেও আব্রাহামের ছোয়া লেগে আছে। আইরাত দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ গুলো বন্ধ করে নেয়। গাল বেয়ে গড়িয়ে পরে একবিন্দু অশ্রু। সময় যেতে থাকে। সন্ধ্যাও হয়ে যায় কিন্তু আইরাতের ছাদের ওপর থেকে নামার খবর নেই। হঠাৎ করেই হুড়মুড়িয়ে বৃষ্টি নামে। মেঘ করলো না, সাজ করলো না। হঠাৎ করেই তীব্র বৃষ্টি নেমে পরলো। সাথে সাথে এক বিকট শব্দ করে বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজ আসে। আইরাত তার মাথা নিচে নামিয়ে ফেলে। বৃষ্টির মাঝেই দাঁড়িয়ে থাকে। নড়াচড়া কিছুই নেই। বৃষ্টিরও যেনো আজ আইরাতের ওপর প্রচন্ড মায়া হয়েছে। তাই তো আইরাতের চোখের পানি গুলোকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে সে নিজেও নেমে পরেছে। আইরাত ভিজে একাকার হয়ে গেলো। কেনো জানি না বৃষ্টির সাথে আইরাতের এক আলাদা সম্পর্ক আছে। যখনই আইরাতের মন খারাপ থাকে বা ভেজার ইচ্ছে হয় তখনই বিনা বলে-কয়ে হুটহাট নেমে পরে। তবে এই বৃষ্টি নামলেই আব্রাহামের কথা যেনো আরো প্রবল ভাবে মনে পরে আইরাতের। প্রায় এক ঘন্টার মতো সেখানে তেকে আইরাত নেমে আসে। নিজের রুমে চলে যায়। বাইরে বিদুৎ চমকাচ্ছে। রুমে আইরাত বসে আছে। সে তার চোখ ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে পুরো রুমকে দেখছে। শুধু আর শুধুই আব্রাহামের ছবি। কোন ছবিতে হাসছে, কোন ছবিতে বেশ স্টাইল নিয়ে আছে, কোন ছবিতে ভাবলেশহীন। আবার কোনটাতে আইরাতকে পরম আবেশে আলিঙ্গন করে আছে। এগুলো দেখে এখন এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। আইরাত আব্রাহামের একটা জেকেট বের করে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পরে। আজ এত্তো গুলো দিন পর তার চোখে কিছুটা ঘুম নেমে এসেছে। এত্তোদিন পর যেনো ঘুমপরি আইরাতের চোখের মাঝে কিছুটা উঁকি দিয়েছে। আইরাত আব্রাহামের জেকেট টা নিজের বুকের সাথে একদম লেপ্টে ধরে শুয়ে থাকে। হঠাৎ ঘুমিয়ে পরে। ঘুমিয়ে পরে এই ভেবেই যে যদি কাল এক নতুন সকালের, নতুন দিনের, নতুন রুপে কিছু ফিরে পায় বা শুরু হয়, যদি!!!

এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেলো চার-চারটে মাস।





চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here