#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৭ {বোনাস 🧚♀️}
গানের এতো তীব্র শব্দ যে তাতে কানের পর্দা ফাটার মতো অবস্থা। একে তো এই গানের শব্দ তার ওপর মানুষের এই চিল্লাপাল্লা। আইরাতের রাগ হতে লাগলো ধীরে ধীরে। তার পরেও আইরাত সেখানেই থেকে গেলো আরো বেশ কয়েক সময়। তার প্রায় এক ঘন্টা শেষ হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে রাত যতো বাড়ছে মানুষের সমাগম টাও ঠিক ততোই বেড়ে চলেছে। আইরাত আশে পাশে তাকিয়ে তনয়া কে খুজতে লাগে কিন্তু তনয়া নেই। আইরাত আর সেখানে থাকতে না পেরে চলে আসে। কনসার্টের একটু ভেতরের দিকে আসলেই বেশ কিছু আপত্তিজনক সিচুয়েশনের মাঝে পরে সে। কেউ একে ওপর কে জড়িয়ে ধরে আছে, কেউ কিস পর্যন্ত করছে আবার কেউ ড্রাং অবস্থায় একদম হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পাগলের মতো করে নেচে চলেছে।
আইরাত এই সব কিছু উপেক্ষা করে সাইদ দিয়ে এসে পরে। আরো একটু ভেতরে এসে দেখে তনয়া ফোনে কথা বলছে। তনয়া পেছন ঘুড়েই দেখে আইরাত দাঁড়িয়ে আছে।
তনয়া;; এখানে কি করিস?
আইরাত;; তুই এখানে এইসবের মাঝে কি করিস?
তনয়া;; আরে আমি তো কথা বলতে এসেছিলাম সেখানে কিছুই শোনা যায় না তাই।
আইরাত;; আমি বাড়ি যাবো।
তনয়া;; আরে কিন্তু…..
আইরাত;; দেখ অনেক সময় থেকেছিস আরেকদিন আসা যাবে এখানে। এখন আর না আমার মাথা ধরে গেছে প্লিজ বোন চল এখন এখান থেকে।
তনয়া;; আচ্ছা চল।
আইরাত সেখান থেকে চলে আসতে নেয়। তখনই আইরাতের ফোন বেজে ওঠে।
আইরাত;; এই তনয়া তুই যা আমি আসছি।
তনয়া;; ওকে।
আইরাত একটু সাইডে দাঁড়িয়ে ফোন রিসিভ করে। আবছা আবছা কন্ঠ শোন যাচ্ছে। তাই আইরাত মুখের সাইডে হাত দিয়ে হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। আইরাত কোন রকমে ফোনে কথা বলছে আর বাইরে আসার ট্রাই করছে। অন্যমনস্ক হয়ে হাটার ফলে কিছুদূর যেতেই আইরাত কার সাথে জানি এক প্রচন্ড রকমের ধাক্কা খায়। প্রায় পরে পরে এমন অবস্থা কিন্তু তখনই হুট করে কেউ একজন আইরাতের কোমড় জড়িয়ে ধরে তাকে সোজা করে দাড় করি দেয়। অল্পের জন্য বাচলো নয়তো একদম নিচে পরে যেতো। আইরাত বুঝতে পেরেছে যে তাকে কেউ ধরে দাড় করিয়েছে। কিন্তু আইরাত যখন তার আশে পাশে তাকায় তখন কাউকেই দেখে না। আইরাত কপাল কুচকে আশে পাশে খুঁজেই চলেছে। কিন্তু সে যখন কাউকেই খুঁজে পায় না তখন দ্রুত বাইরে এসে পরে।
তনয়া;; কিরে এতো দেরি করলি যে?
আইরাত;; কিছু না, শোন রাত ৮ঃ৩০ টা বেজে গেছে। আমি তোকে বাড়ি পৌঁছে দেই কেমন।
তনয়া;; আচ্ছা।
আইরাত গাড়ি ঘুড়িয়ে আবার তনয়ার বাসার সামনে থামায়। তনয়া চলে গেলে আইরাত নিজেও এসে পরে। রাশেদ আইরাতের সাথে আসতে চেয়েছিলো কিন্তু আইরাত নিজেই মানা করে দেয়। তবে আইরাত যখন নিজের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দেওয়া শুরু করে তখন তার কিছুটা হলেও বুকে এক অজানা ভয় কাজ করতে লাগে। কেননা তনয়ার বাসা আইরাতের বাসার রাস্তা থেকে বেশ উলটো দিকে৷ এখন আইরাত কে তার বাসায় যেতে হলে অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে হবে। কি আর করার আইরাত ড্রাইভ করা শুরু করে দেয়। দেখতে দেখতে এক সময় আইরাত এক অতি চেন জায়গার রাস্তায় এসে পরে। সেই পাহাড়ি রাস্তা টা যাতে আব্রাহামের এক্সিডেন্ট হয়েছিলো। কেনো জানি আইরাত যখন ওই রাস্তা টা অতিক্রম করছিলো তখন আইরাতের গায়ে কাটা দিয়ে উঠছিলো। এই রাস্তার মুখও সে জীবনে মোড়াতে চাই নি কিন্তু আজ বাধ্য হয়ে। আইরাত যথাসম্ভব নিজেকে সংযোত রেখে সেই রাস্তা টা পারি দেয়। যখন সেই রাস্তা টা অতিক্রম করে এসে পরে তখন যেনো আইরাত নিজের বুক ভরে দম ছাড়ে। এবার এই রোড টা হাইওয়ে। একদম ক্লিন রাস্তা, এখানে কোন কিছুর ভয় নেই। আইরাত গাড়ি কিছুটা পিছিয়ে নিয়ে আবার সাই করে স্টার্ট দেয়। আস্তে আস্তে করে গাড়ি চালাচ্ছে। কিন্তু হুট করেই সামনের দিক থেকে একটা গাড়ি ফুল স্পীডে আইরাতের গাড়ির দিকে আসতে লাগে। আইরাত তা দেখে আগে থেকে তার গাড়ির স্পীড আরো কমিয়ে দেয়। কিন্তু গাড়ি টা এসে সোজা আইরাতের গাড়ির গা একদম ঘেঁষে চলে যায়। এতে আইরাতের গাড়ির একটা সাইড মিরর আর গাড়ির স্কিন বেশ খানি উঠে পরে। আইরাতের এটা দেখে তো মাথা মুথা সব এক্কেবারে খারাপ হয়ে গেলো। আইরাত জিদ ধরে৷ আইরাতের গাড়ির যে পরিমাণ স্পীড ছিলো তা সম্পূর্ণ বাড়িয়ে দিয়ে আইরাত উলটো ঘুড়ে ওই গাড়ির পেছনে যেতে থাকে। আইরাত স্পীড আরো বাড়িয়ে দেয়। প্রায় ৬-৭ মিনিট পর এভাবেই ড্রাইভ করতে থাকে। আরো একটু স্পীড বাড়িয়ে দিয়ে আইরাত একদম সেই গাড়ি ক্রস করে চলে যায়। কিছুদূর গিয়েই আবার ব্রেক কষে সেই গাড়ির সামনে নিজের গাড়ি থামায়। ওই গাড়ি থেকে কেউ নামছে না দেখে আইরাত নিজেই তার গাড়ি থেকে নেমে পরে। আইরাত স্পষ্ট দেখতে পারছে যে ওই গাড়ির ড্রাইভিং সীটে কেউ একজন বসে আছে কিন্তু বের হচ্ছে না। আইরাত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তার দুই হাত দুই দিকে খানিক ছড়িয়ে দিয়ে রাগে বলে ওঠে….
আইরাত;; আব্বে ওওও রাস্তা কি তোর বাপের। এভাবে গাড়ি চালাস কেনো? না আসলে গাড়ি চালা নাহয় রাস্তায় এরোপ্লেন চালা। না নেই কিন্তু তা অন্যের ক্ষতি করে নয়। গাড়ি থেকে বের হ।
___________________________________
আইরাত;; এখন চুপ করে আছিস কেনো? বের হ গাড়ি থেকে। কি করেছিস দেখ আমার গাড়ির সাইড মিরর ভেঙে দিয়েছিস আর গাড়ির সাইডের সম্পূর্ণ স্কিল তুলে ফেলেছিস। বের হ গাড়ি থেকে।
আইরাত তো রাগে আগুন কিন্তু এদিকে যে অচেনা ব্যাক্তিটি গাড়িতে চুপচাপ বসে আছে সে আছেই। শুধু তার গাড়ির সামনের দুই হ্যাড লাইট বারবার জ্বালাচ্ছে-নিভাচ্ছে।
আইরাত;; খুব এটিটিউড তাই না। তোর এটিটিউড কে কীভাবে চুপসিয়ে দিতে হয় আই নো দ্যাট ভেরি ওয়েল, ওয়েট।
এই বলেই আইরাত তার আশে পাশে রাস্তায় কিছু একটা খুঁজতে লাগে। আর তারপরই একটা বিশাল আকাড়ের পাথর পেয়ে যায়। আইরাত তা হাতে তুলে এনেই বিনা বাক্যে একদম গাড়ির সামনের দুই হ্যাড লাইটে দেয় জোরে বারি মেরে। ঝরঝর শব্দ তুলে সেগুলো ভেঙে গেলো। আইরাত তার জুতোর চিপা থেকে চাকু বের করে তা দিয়ে গাড়ির গায়ে ধরে দেয় ৪-৫ টা আচড় কেটে। তবে আশ্চর্যজনক বিষয় হচ্ছে যে আইরাত যে এতো কিছু করছে তাতে সেই ব্যাক্তিটি একটা টু শব্দ অব্দি করছে না। চুপচাপ বসে আছে ড্রাইভিং সীটেই। এগুলো এত্তোকিছু করার পর আইরাত তার হাত দুটো ঝাড়তে ঝাড়তে ওই গাড়ি টার সামনে এসে দুই হাত ভাজ করে দাঁড়ায়।
আইরাত;; Tit for tat….
এই বলেই আইরাত তার গাড়িতে গিয়ে ধপ করে বসে পরে তারপর সাই করে চালিয়ে চলে যায়।
।
।
আইরাত বাড়িতে এলেই একটু সারপ্রাইজড হয়। কেননা হলরুমে অয়ন-দিয়া, রহিত-আরুশি, কৌশল-অবনি সবাই এসেছে। আইরাত তাদের দেখে খুশি হয়ে যায়। ওহহ হ্যাঁ আরেকটা খুশির খবর, আরুশি প্রেগন্যান্ট।
দিয়া;; হে বার্থডে গার্ল, হ্যাপি বার্থডে।
আইরাত;; What a pleasant surprise!!
রহিত;; হ্যাঁ ভাবলাম দিয়েই দেই।
আইরাত;; কখন এসেছো তোমরা সবাই?
ইলা;; অনেক আগেই এসেছে কিন্তু তুই অনেক দেরি করেছিস।
আইরাত;; আব… সরি আসলে রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো তো তাই আরকি।
অবনি;; যাই হোক। কেমন আছিস তা বল।
আইরাত;; এইতো আব্রাহাম যেভাবে রেখে গিয়েছে এখনো সেভাবেই আছি 😅। আব… আ আরুশি আপু কেমন আছো। শরীর ভালো?
আরুশি;; অনেক ভালো।
আইরাত;; হ্যাঁ এখন তো ভালো থাকতেই হবে।
সেই রাত টুকু এভাবেই সবার সাথে হেসে খেলে চলে যায়। সবাইকে আজ রাত টা থেকে যেতে বললে সবাই কিছুটা ব্যাস্ততা দেখায়। আইরাতও বুঝে যে সবারই কাজ আছে। আর এছাড়াও প্রতিদিন কথা তো হয়ই। কারো সম্পর্কে কোন রকম ফাটলের ছিটেফোঁটাও ধরে নি। আগে যেমন ছিলো এখনো তাই।
রাত বাজছে ১১ঃ৪৫ মিনিট। ইলাকে আইরাত মেডিসিন খাইয়ে ঘুম পারিয়ে দিয়েছে। আইরাত এখন একটা বই নিয়ে আরেক কাপ গরম কফি নিয়ে বারান্দায় বসে আছে দোলনাতে। লাস্ট পনেরো মিনিট। আর মাত্র পনেরো মিনিট আছে তাদের দুইজনের জন্মদিনের। আবার আসবে এই দিন টা ঠিক একটা বছর ঘুড়ে। না জানি এই একটা বছরে আবার জীবনে কি কি পাল্টাবে। জীবনে আবার কি কি নতুন মোড় নিবে!! আদৌ বেচে থাকবে কিনা আগামী বছরের এই দিনে। কতো চিন্তা-ভাবনা। হঠাৎ কি যেনো ভেবে আইরাত গুনগুন করে গান ধরে….
আইরাত;;
~Kya hua tera waada
Woh kasam woh iraada
Bhoolega dil jis din tumhe
Woh din jindegi ka aakhri din hoga
Kya hua tera waada
Woh kasam woh iraada 🖤🥀~
আইরাত;; Happy birthday Abraham…..
ঘড়িতে টিকটিক শব্দ করে উঠলো তা যেনো জানান দিচ্ছে যে সময় শেষ, বারো টা বেজে গেছে।
।
।
পরেরদিন সকালে উঠে আইরাত অফিসে চলে যায়। আজ সত্যি বলতে অফিসে তেমন কোন কাজ নেই। আইরাতেরও ভালো লাগছে না তাই আইরাত রোদেলা, রাশেদ, আর তনয়া কে ডাক দেয় নিজের কেবিনে।
রাশেদ;; ম্যাম ডেকেছেন?
আইরাত;; আরে এসো এসো। আসলে ভালো লাগছিলো না তাই ভাবলাম তোমাদের ডাক দেই। আসো সবাই একসাথে লাঞ্চ করি।
আইরাতের কথা শুনে তারা তিনজনেই হেসে দেয়। আইরাত কে দেখে কেউ বলবে না যে এতো বড়ো একটা কোম্পানির মালিক কিনা এতো ফ্রেন্ডলি আর এতো ভালো বিহেভ। তারা একসাথে খেতে বসে।
রোদেলা;; এই চলো ঘুড়তে যাই।
তনয়া;; হ্যাঁ ভালো হবে।
আইরাত;; আরে ঘুড়ে না আসলাম আজ আবার।
তনয়া;; ওইদিন ঘুড়তে দিয়েছিস তুই আমাকে। আমাকে নিয়ে এসে পরেছে জোর করেই। চল আজ যাই না।
রাশেদ;; হ্যাঁ ম্যাম চলুন যাই।
রোদেলা;; এই চলো না যাই প্লিজ প্লিজ।
তনয়া;; যাবি না মানে যেতেই হবে।
আইরাত;; আরে বাবা ওকে ফাইন যাবো যাবো।
বিকেলের দিকে বের হবো।
আইরাতকে যেভাবে আকড়ে ধরেছে তাতে আর কোন উপায় রইলো না আইরাত বাধ্য হয়েই গেলো। তবে তারা কোথায় যাচ্ছে তা আইরাত কে বলে নি। এটা নাকি একটা সারপ্রাইজ তাই আইরাতকে বলা হয় নি। আইরাত আর কি করবে ওকে ফাইন না বললো কেউ। তাদের সাথে সাথে আইরাতও যাচ্ছে।
।
।
।
।
চলবে~~~