নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ৬২

0
911

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬২

আব্রাহাম আইরাতের ফোন কেটে দিয়েই নিজের সামনে থাকা রাত্রির দিকে চোখগুলো খানিক ছোট করে এক ভ্রু উঁচু করে তাকায়। আব্রাহামের এমন ঘায়েল করা চাহনি দেখে রাত্রি তার ৩২ টা দাঁত বের করে দিয়ে হেসে ওঠে। রাত্রির এমন হাবলা মার্কা হাসি দেখে আব্রাহাম কপাল কুচকে রাগি ভাবে তার দিকে তাকায়। মূহুর্তেই রাত্রির হাসি টা গুম হয়ে যায়। সে মাথা নিচু করে ওরনার আচল টা দুই আঙুলের মাঝে পেচাতে থাকে। তাকে দেখে আব্রাহাম এবার বলে ওঠে…..

আব্রাহাম;; কি হয়েছে এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

রাত্রি;; না মানে মা তোকে খেতে ডাকছে।

আব্রাহাম;; যা আসছি।

রাত্রি;; না না তোকে আমার সাথে একদম নিয়ে যেতে বলেছে।

আব্রাহাম;; আমি তো ছোট কোন বাচ্চা না তাই না। যেতে পারবো তো তুই যা আমি আসছি।

রাত্রি;; বললাম তো তোকে সাথে করে নিয়ে যেতে বলেছে।

আব্রাহাম;; আরে মেরি মা,, আচ্ছা চল।

আব্রাহাম আর না পেরে রাত্রির সাথে চলে গেলো। আসলে আব্রাহাম যেই বাড়িতে থাকে তার নিচের অংশে রাত্রিরা থাকে। রাত্রির বাবা একজন বড়ো পোস্টের সরকারি পুলিশ অফিসার ছিলেন যদিও তিনি এখন আর বেঁচে নেয়। রাত্রির মা আর রাত্রি কিছুটা পারসোনাল ভাবে আব্রাহাম কে চিনে থাকলেও পাবলিক প্লেসে তা প্রকাশ করে না। বাকি ৮-১০ টা মানুষের মতো তারাও আব্রাহামের বিরাট বড়ো ফ্যান এটাই দেখায়। তবে এই রাত্রি আর আব্রাহাম যে একই বাসার ওপর-নিচে থাকে তা সবারই অজানা। আব্রাহাম রাত্রি আর তার মা লাবনীর সাথে রাতের খাবার খেয়ে ওপরে তার রুমে এসে পরে।

আব্রাহাম তার রুমে গিয়ে কাচের দরজার ওপর নিজের হাত টা রেখে দাঁড়িয়ে পরে। চোখ দুটো তার বাইরে স্থীর। আব্রাহাম হঠাৎ তার মাথা নিচে নামিয়ে ফেলে। অবশেষে একটা সিগারেট জ্বালিয়ে নেয়। অনেক সময় কষ্ট মুখে ব্যাক্ত করতে হয় না। আসলে ব্যাক্ত করার প্রয়োজন হয় না। কিছু কষ্ট কিছু ব্যাথা একান্তই নিজের থেকে যায়। মানুষ বলে নিজের মনের কথা কাউকে খুলে বলে দিলে, শেয়ার করলে নাকি অনেক টাই কমে যায়। নিজেকে হালক অনুভব হয়। কিন্তু অনেক সময় এই কষ্ট গুলো কারো সাথে ভাগাভাগি করা যায় না, কাউকে বলা যায় না। মন তাতে সায় দেয় না। থাক না কিছু ব্যার্থতা নিজের নামেই। আব্রাহাম নিজের মনের অব্যাক্ত যন্ত্রণা গুলো যেনো এখন সিগারেটের ধোঁয়ার মাধ্যমে উড়িয়ে দিতে লাগলো। ভালো লাগছে না কিছুতেই, কিছুতে ঠিক ভাবে মনও বসাতে পারছে না। অথচ কাল একটা শো আছে। আব্রাহাম আর এভাবে না থাকতে পেরে একদম রুমের ভেতরে চলে গেলো। রুমের লাইট সম্পূর্ণ নিভিয়ে দিলো। বাইরে থেকে ল্যাম্পপোস্টের কিছু আলো রুমের ভেতরে এসে পরেছে। হাল্কা বাতাসে ঘরের বড়ো বড়ো সাদা পর্দা গুলো উড়ছে। আব্রাহাম ভাবলেশহীন ভাবে ওপরের দিকে এক নয়নে তাকিয়ে থাকে। এভাবেই রাত টুকু কেটে গেলো।


আইরাত;; অয়ন ভাইয়া গ্যাস করো আমি তোমাকে কি বলতে যাচ্ছি!!

অয়ন;; কি?

আইরাত;; গ্যাস করো।

অয়ন;; আমি এই গ্যাস করাতে সবসময় ভুলই হই। এবারও হবো তো তুমিই বলো।

আইরাত;; ব্যাপার টা শুনে ৪৪০° এর ঝটকা খাবে।

অয়ন;; এমন কি?

আইরাত;; অনেক বড়ো কিছু।

অয়ন;; আচ্ছা এবার বলো তো।

আইরাত;; আব্রাহাম।

অয়ন;; আমি জানি তুমি ওকে অনেক মিস করো।

আইরাত;; ও ফিরে এসেছে।

অয়ন;; হ্যাঁ আমি…… কিহ?

আইরাত;; কিন্তু স্বীকার করছে না। ও মরে নি, বেচে আছে ও।

অয়ন;; বউমনি, শরীর ঠিক আছে তোমার। জ্বর টর আসে নি তো।

আইরাত;; ধুত্তুরি ভাইয়া আমি সিরিয়াস।

অয়ন;; না বউমনি হয়তো তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। এটা কি করে…?

আইরাত;; আমি গত এক সপ্তাহের বেশি হবে তার সাথে আছি। অর্থাৎ কাজ করছি। ভাইয়া তুমি দেখলে সেখানেই পরে যাবে। ও হুবাহু আমার আব্রাহাম। কিন্তু ও মানতেই চায় না।

অয়ন;; এখন তো আমার ই বিশ্বাস হচ্ছে না।

আইরাত;; ওকে ফাইন তুমি একটা জায়গায় এসে পরো যত জলদি সম্ভব।

অয়ন;; আচ্ছা বউমনি আসছি, তুমি মেইল করে দাও এড্রেস টা।

আইরাত;; আচ্ছা।

এই বলেই আইরাত ফোন কেটে দেয় তরপর অয়ন কে এড্রেস টা মেইল করে পাঠিয়ে দেয়। এদিকে আজ সকাল থেকে আব্রাহামের কোন খোজ নেই। সে কোথায় আইরাত জানে না। বারবার আব্রাহাম কে ফোন দিয়ে যাচ্ছে বাট নো রেসপন্স। আইরাত একবার ভাবলো যে হয়তো সে তার শো তে। কিন্তু ফোন না ধরার সাথে কি কানেকশন। অনেক আগে থেকেই তো ফোন করে যাচ্ছে। যাই হোক আইরাত অফিসের কিছু কজ মিটমাট করে সোজা চলে যায় আব্রাহামের শো তে। আইরাত একদম তার মুখে মাস্ক টাস্ক পরে গিয়েছে যেনো কেউ না চিনে। তবে আইরাত সেখানে গিয়ে এই যে আব্রাহাম কে খুঁজে কিন্তু তার দেখা আর মিলে না। তবে আইরাত হাটতে হাটতে একসময় একটা বেশ বড়ো আর খোলা মেলা জায়গা তে এসে পরে। তার কিছুদূর যেতেই বেশ কিছু মানুষের চিল্লাপাল্লার আওয়াজ আইরাতের কানে আসে। আইরাত ভাবে হয়তো কোন ঝামেলা পেকেছে তাই আইরাত আগেই তার প্যান্টের পকেটে থাকা রিভলবার টা হাত দিয়ে খামছিয়ে ধরে। কিন্তু সামনে এগোতেই দেখে খোলা আকাশের নিচে আর ঘন সবুজ গাছের ওপরে বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়ে আছে। আর তাদের সবার সামনে আব্রাহাম হাতে গিটার নিয়ে মুখে হাসির রেশ টেনে নিয়ে বসে আছে। আইরাত এগুলো দেখে নিজের আনমনেই হেসে ওঠে৷ যাহ বাবা, নিজে ভাবলো কি আর হলো কি। আইরাত সবার পেছনে দাঁড়িয়েই দেখতে লাগলো। পরিবেশ টা সুন্দর। একদম খোলা আকাশের নিচেই সবাই কে নিয়ে বসেছে। শো এর যে হোস্ট ছিলো উনি বেশ হাই-ফাই একটা স্টেজে এরেঞ্জ করেছিলো সব কিন্তু আব্রাহামের সেটা পছন্দ হয় নি। সামনেই এত্তো বড়ো একটা জায়গা থাকতে আর এগুলো কেনো। আশে পাশে বেশ কিছু গাছ রয়েছে। সেগুল কিছুটা আর্টিফিশিয়াল ভাবে সাজানো হয়েছে। মানে সবকিছু মিলিয়েই বেশ সুন্দর। সবাই যেনো আব্রাহাম কে পেয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। অনেকেই তাদের গালে হাত ঠেকিয়ে আব্রাহাম কে দেখছে। মাঝে মধ্যে হালকা ভাবে চিল্লিয়ে উঠছে। হঠাৎ করেই আব্রাহাম তখন গান ধরে…….

“কেনো কাছে তুই এলি
যদি আবার চলে যাবি

বল কেনো তাহলে স্বপ্ন দেখালি ❤️~~

~আমি জানি কোন একদিন
কোন এক নতুন ভোরে

দেখা হবে আমাদের আবার
এক স্বপ্নের শহরে ✨

~~আমি জানি কোন একদিন
কোন এক নতুন ভোরে

দেখা হবে আমাদের আবার
এক স্বপ্নের শহরে “

•••তোর সাথে ছিলো বাকি
কতো কথা বলবো একদিন

একাকী নিজের সাথে
করেছি তোর গল্প সারাদিন ~~

~`তোর কথা আসে ফিরে ফিরে
পথ হারানোর সব কবিতায়

আমি তোকে নিয়ে যাবো আবার
রুপকথার সেই বাড়িতে—–

আয় ফিরে 🍂……….

“আমি জানি কোন একদিন
কোন এক নতুন ভোরে
দেখা হবে আমাদের আবার
এক স্বপ্নের শহরে ~~

“আমি জানি কোন একদিন
কোন এক নতুন ভোরে
দেখা হবে আমাদের আবার
এক স্বপ্নের শহরে ~~

~`~`Mujhe khone ke baad ekdin
Tum mujhe yaad karooge

Phir dekhna milke ki mujhse
Tum fariyad karooge ❣️

~`~`Mujhe khone ke baad ekdin
Tum mujhe yaad karooge

Phir dekhna milke ki mujhse
Tum fariyad karooge ~ 🖤🥀

শেষ হতেই সবাই ওওওওওওওওও করে ওঠে। তবে আব্রাহাম যখন গানটা গাচ্ছিলো তখন কেনো জানি সে আইরাতের দিকে তাকাচ্ছিলো না। কথায় বলে মানুষ যা মুখে বা ভাষায় প্রকাশ করতে পারে না তখন তা গানের মাধ্যমে বের হয়ে আসে। মুখে লেগে ছিলো আব্রাহামের বেলাগাম হাসি। থেকে থেকে খুব কম আইরাতের দিকে তাকাচ্ছিলো আবার চোখ নামিয়ে নিচ্ছিলো। আইরাত এতোক্ষন ভরা আব্রাহাম কেই দেখে যাচ্ছিলো। গানটাতে সত্যি হারিয়ে ফেলা মানুষ কে আবার আগের মতো করে কাছে পাবার প্রবল আকাঙ্খা ছিলো।

অবশেষে আরো প্রায় ঘন্টা খানিকের মতো সেখানে থেকে আব্রাহাম সেখান থেকে চলে আসে। আব্রাহামের বাইরে আসতেই আইরাত দ্রুত তার কাছে যায়।

আইরাত;; ওই জামাইজান দাড়ান।

আব্রাহাম;; তুমি এখানে কি করো?

আইরাত;; তুমি যেখানে, আমি সেখানে সেকি জানো না।

আব্রাহাম;; প্রচুর বেসুরা গলা ছিলো।

আইরাত;; এই চুপ করুন আর চলুন।

আব্রাহাম;; কোথায়?

আইরাত;; যেদিকে দুচোখ যায়।

আব্রাহাম;; মানে?

আইরাত;; মনে পরে কি কিছু? আমিও এভাবেই জিজ্ঞেস করতাম যে আমরা কোথায় যাচ্ছি আর তখন আপনি আমায় এই ডায়লগ টা মারতেন।

আব্রাহাম;; আমার কাজ আছে অনেক আমি পারবো না।

আইরাত;; আপনি যাবেন না আমার সাথে?

আব্রাহাম;; না

আইরাত;; যাবেন না?

আব্রাহাম;; না বললাম তো।

আইরাত;; তবে রে।

আইরাত হাতে একটা ইয়া বড়ো পাথর নিয়ে নিলো।

আব্রাহাম;; এই এই কি করছো?

আইরাত;; আমার সাথে এখন না গেলে এই পাথর দিয়ে প্রথমে আপনার গাড়ির হুলিয়া পালটে দিবো আর তারপর আপনার।

আব্রাহাম;; এ তো দেখি আচ্ছা মুশকিল রে বাবা,, আচ্ছা চলো।

আইরাত;; আপনি না আসলেই ঘি।

আব্রাহাম;; কি?

আইরাত;; হ্যাঁ ঘি কে যেমন সবসময় বাকা আঙুলে তুলতে হয়, ঠিক তেমন ভাবে আপনাকেও বাকা পথে রাজি করাতে হয়।

আব্রাহাম আইরাতের কাছ থেকে এসে পরে। তারপর আইরাত আর আব্রাহাম গাড়িতে ওঠে চলে যায়। আব্রাহাম শুধু বসে বসে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে ছিলো। তবে যেই রাস্তা গুলো দিয়ে যাচ্ছে সেগুলো আব্রাহামের বেশ চেনা। দেখতে দেখতেই এক সময় গাড়ি থেমে যায়। আব্রাহাম তার মাথা ঘুড়িয়ে আইরাতের দিকে তাকায়।

আইরাত;; নামুন নামুন।

আব্রাহাম নেমে পরে সাথে আইরাতও। আব্রাহাম এই জায়গা টা দেখে অবাক। কেননা এটা সেই পার্ক যেখানে আব্রাহাম একদিন আইরাত কে নিয়ে এসেছিলো।

আইরাত;; মনে পরে কিছু?

আব্রাহাম;;

আইরাত;; নাকি এখনো বলবেন যে মনে নেই।

আব্রাহাম;; আমরা এখানে কেনো এসেছি?

আইরাত;; আসুন।

আইরাত আব্রাহাম কে হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে যায়।

আইরাত;; আমরা এটা করবো।

আব্রাহাম সামনে তাকিয়ে দেখে বাঞ্জি জাম্পিং। আইরাত তাকে এখানে নিয়ে আসবে আব্রাহাম তা ভাবেও নি। তবে আইরাতের কথায় আব্রাহাম হেসে দেয়।

আইরাত;; আজব, হাসার কি আছে?

আব্রাহাম;; তুমি করবে বাঞ্জি জাম্পিং, সিরিয়াসলি?

আইরাত;; হ্যাঁ তো?

আব্রাহাম;; তুমি উঁচু দেখে ভয় পাও।

আইরাত সরু চোখে আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আইরাত;; আমি উঁচু দেখে ভয় পাই তা আপনি কি করে জানলেন?

আব্রাহাম;; আব… আহাম। না মানে আইডিয়া করলাম আর কি।

আইরাত;; তো আইডিয়া করে কি মনে হলো?

আব্রাহাম;; পারবে না।

আইরাত;; আর যদি পারি তো?

আব্রাহাম;; যা বলবে তাই করবো।

আইরাত;; সত্যি?

আব্রাহাম;; সত্যি।

আইরাত;; ভেবে বলছেন তো?

আব্রাহাম;; হ্যাঁ

আইরাত;; ফাইন।

আইরাত দ্রুত পায়ে একদম ওপরে চলে গেলো। আর আব্রাহাম সিওর ছিলো যে আইরাত পারবে না জাম্প করতে। তাই সে নিচে গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটছে। কিন্তু বেশ সময় পার হয়ে যায় তবুও আইরাতের আসার নাম গন্ধ নেই তা দেখে আব্রাহাম কিছুদূর হেটে সামনে যায়। আর সামনে যেতেই সে অবাক। আইরাত সত্যি দুই হাত মেলে অনেক বেশিই উঁচু তে দাঁড়িয়ে আছে। জাম্প করে করে এমন অবস্থা। আব্রাহাম অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
আর ওদিকে আইরাত বুক ভরে দুইবার দম নেয়। চোখ গুলো বন্ধ করে নেয় সে। সেইদিনের কথা মনে পরছে। আব্রাহাম তাকে জড়িয়ে ধরে ছিলো। আর আইরাত চিল্লিয়ে চল্লিয়ে তার মাথা খেয়ে ফেলছিলো। হঠাৎ এভাবে থাকতে থাকতে আইরাত খেয়াল করে যে তার পেছনের বাধন টুকু বেশ আলগা হয়ে আসছে। তার পরমুহূর্তেই ধিরিম করে আইরাত কে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। আইরাত শুধু খিচে চোখ বন্ধ করে দিয়ে থাকে। ১০-১৫ সেকেন্ড পরই আইরাত নিচে গিয়ে আটকে যায়। পায়ের সাথে দড়ি বেধে নিচে ঝুলে আছে। তারপর তাকে ওপরে এনে ঠিক ঠাক ভাবে সব র‍্যাপ গুলো খুলে দেয়। আইরাত আবার দ্রুত সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে। আব্রাহাম তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।

আইরাত;; এখন যা বলবো তা যদি না শুনেন তাহলে খবর আছে আপনার।

আব্রাহাম;; ভয় লাগে নি?

আইরাত;; ভয়? ভয় কাকে বলে কেউ তা আমার কাছ থেকে শিখুক।

আব্রাহাম;; তাহলে!

আইরাত;; আচ্ছা ছাড়ুন না। এখন আমি যা চাইবো তাই দিবেন।

আব্রাহাম;; আচ্ছা কি চাই বলো।

আইরাত;; আপনাকে চাই আমার।

আব্রাহাম;; আইরাত, লিসেন। আমি জানি না কীভাবে আর বুঝাবো তোমাকে। আমি তোমার হাসব্যান্ড না।

আইরাত;; আমি মিথ্যা কথা ধরতে পারি আব্রাহাম।

আব্রাহাম;; আইরাত Watch out!!

আইরাত কিছু একটা বলতে যাবে কিন্তু তার আগেই আব্রাহাম খেয়াল করে যে আইরাতের থেকে বেশকিছু দূর একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে আর সে আইরাতের দিকেই গান তাক করে রয়েছে। ইন ফ্যাক্ট শুটও করে দিয়েছে। আব্রাহাম দ্রুত আইরাতের মাথার পেছনে হাত দিয়ে তাকে নিচের দিকে ঝুকিয়ে দেয়। গুলি টা গিয়ে আইরাতের গাড়ির গ্লাস লাগে যার ফলে গ্লাস টা ভেঙে ঝরঝর করে নিচে পরে যায়। আইরাত তার পেছনে তাকিয়ে দেখে একজন ব্যাক্তি হাতে গান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম কিছু একটা করতে যাবে তার আগেই আইরাত তার জুতোর সাইড থেকে ছুরি বের করে একদম তার হাত বরাবর তাক করে ছুরে মারে। আর ছুরিটা লোকটির হাতে লেগেও যায়। গান টা তার হাত থেকে নিচে পরে যায়। ব্যাথায় সে তার এক হাত দিয়ে আরেক হাত চেপে ধরে। চিল্লাপাল্লার আওয়াজ পেয়ে গার্ড রা সব এসে পরে। আব্রাহাম আইরাতের হাত ধরে নিয়ে গাড়িতে বসে আর এক সেকেন্ড দেরি না করে চলে আসে। এবার আব্রাহাম ড্রাইভ করছে।

আব্রাহাম;; লোকটা কে ছিলো?

আইরাত;; জানি না।

আব্রাহাম;; তো এভাবে হুট করেই একটা পাবলিক প্লেসে গুলি চালালো কেনো?

আইরাত;; জনি না।

আব্রাহাম;; হুয়াট দা হেল! তাহলে কি জানো?

আইরাত;; বললাম তো জানি না। আমি কি সবার পরিচয়পত্র নিয়ে ঘুড়ি নাকি।

আব্রাহাম;; তুমি তোমার জুতার ভেতরে চাকু রাখো?

আইরাত;; হ্যাঁ এটা আমার এক চোরাই বুদ্ধি। মারতে কাজে লাগে।

আব্রাহাম;; হ্যাঁ হতেই পারে একবার যখন মেরেছো তখন বারবার মারতেই পারো।

আইরাত;; মানে?

আব্রাহাম;; মানে এই যে আমরা এখন একটা গ্লাস ভাঙা গাড়িতে বসে আছি।

আইরাত;; গ্লাসে বুলেট লেগেছিলো।

আব্রাহাম;; তো এখন কোথায় নামবে?

আইরাত;; মন তো চাইছে আপনার সাথেই থেকে যাই কিন্তু অফিসে কাজ আছে। আর এই লোকটা কে ছিলো তা জানার আছে।

আব্রাহাম;; থ্যাংক গড আমি বেচে গেছি।

আব্রাহাম ড্রাইভ করে আইরাতের অফিসের সামনে নেমে পরে। গার্ড কে ডাক দিয়ে সেই ভাঙা গাড়ি টাকে রিপ্যার করার জন্য বলা যায়। আব্রাহামের যে গাড়ি ছিলো সে তাতে উঠে পরে। আইরাতও ভেতরে চলে যাবে তার আগেই আব্রাহাম বলে ওঠে…..

আব্রাহাম;; আইরাত..!

আইরাত;; হ্যাঁ

আব্রাহাম;; অনেক পালটে গেছো তুমি। অনেকটাই বেশি। রাত-দিনের মাঝে যেমন পার্থক্য তেমন আগের তুমি আর এখনের তুমির মাঝেও তাই।

আইরাত;; মানুষ পরিবর্তনশীল আব্রাহাম।

আব্রাহাম;; আমি যাই আর হ্যাঁ প্লিজ আমার পেছনে একটু কম লাগো।

আইরাত;; মানুষ তার কাজ থেকে ছুটি কি করে নিতে পারে বলুন। আপনার পেছনে লাগাই তো আমার একমাত্র কাজ। আর হ্যাঁ মেয়েদের থেকে দূরে থাকবেন।

আব্রাহাম;; আমি কেনো তোমার কথা শুনবো।

আইরাত;; বাধ্য আপনি।

আব্রাহাম;; ওয়েট ফর সারপ্রাইজ……

এই বলেই আব্রাহাম গাড়ি নিয়ে সাই করে চলে যায়। আইরাতও কিছুক্ষন তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে অফিসের ভেতরে চলে যায় সবার হাওয়া টাইট করতে।





চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here