নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ৬৫

0
627

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৬৫

আব্রাহাম;; মনে তো তখন করবো যখন আমি সবকিছু ভুলে যাব। যখন আমি কিছু ভুলিই নি তখন সেখানে নতুন করে সবকিছু মনে করার প্রশ্নই আসে না।

রাশেদ & অয়ন তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম তাদের পেছনে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম কে দেখে না যতটা বেশি অবাক হয়েছে তার থেকে বেশি অবাক হয়েছে আব্রাহামের কথা শুনে। আব্রাহাম একটা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রাশেদ আর অয়নের টেবিলে এসে একটা চেয়ার টান দিয়ে নিয়ে বসে পরে। আরেক হাতে এলকোহলের পেগ নিয়ে নেয়। আব্রাহাম তার মতো করে আছেই তবে তার সামনে থাকা দুই জনের অবস্থা খারাপ। বেশ অবাক তারা।

আব্রাহাম;; এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো, তোমরা তো আগে থেকেই মেনে নিয়েছো যে আমিই আব্রাহাম। এখন শুধু আমি নিজেই মুখে স্বীকার করে নিলাম ব্যাস। হ্যাঁ আমিই আব্রাহাম,, আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী।

রাশেদ;; স স স্যার, আপনি……

আব্রাহাম;; অয়ন ভাই চোখ নামিয়ে ফেল, নয়তো তা তোর কোটর থেকে খুলে পরে যাবে।

অয়ন আব্রাহামের কথায় ভেবাচেকা খেয়ে যায়।

অয়ন;; আব্রাহাম ভাই মানে আমি কি বলবো এখন। আমি খুঁজে পাচ্ছি না,, তুই, তুই আসলেই ঠিক আছিস তাহলে। মানে কিছু হয় নি তোর ৷ আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না। আর তুই, তুই তাহলে এই এতো গুলো বছর আমাদের সবার থেকে দূরে কেনো ছিলি বল। কেনো আমাদের কারো কাছে আসিস নি। আমাদের কথা কি তোর একটা বারের জন্যও মনে পরে নি। আমাদের কথা ছাড়, আইরাত বউমনির কথা তোর মনে পরে নি। কীভাবে আর কোথায় ছিলি তুই এতোদিন?

আব্রাহাম;; ছিলাম কোথাও না কোথাও তো ছিলামই।

অয়ন;; তুই পাল্টে গেছিস অনেক।

আব্রাহাম;; আহা, আগের আমিই আছি। সামান্য পাল্টাতে বাধ্য ছিলাম এই যা।

অয়ন;; আমি আর কিছুই ভাবতে পারছি না। কি থেকে কি হলো এইসব।

আব্রাহাম;; তুই ভাবিসও। আগে জানতাম না তো। তবে যা হওয়ার তাই হয়েছে।

অয়ন;; সিরিয়াসলি? এখনো লেগ পুল করিস আমার তুই। এতোসব কিছু হয়ে যাওয়ার পরও এতো শান্ত। কীভাবে ভাই?

আব্রাহাম;; মাথা গরম করে সবসময় কাজ করতে হয় না৷

অয়ন;; আই…….

আব্রাহাম;; আইরাতকে আর বলেই বা কি হবে। ও তো এমনিতেই আমাকে আব্রাহাম ভেবেই নিয়েছে৷ ও কারো কথার ধার ধারে না। ওকে হাজার না করলেও ও আমাকে আব্রাহাম ই ভাববে। আইরাত জানে।

অয়ন;; বউমনি তোকে ছাড়া কতো টা নরক যন্ত্রনা সহ্য করেছে তুই জানিস?

আব্রাহাম;; নরক যন্ত্রণা? আমাকে ছাড়া? ওর তো ভালো থাকার কথা।

অয়ন;; হাহ, মুখে বলা টা খুবই সহজ। বউমনি তোকে ছাড়া কি কি সাফার করেছে তা আমরা জানি।

হঠাৎ সেখানে আগমন ঘটে আহসানের ৷ যাকে দেখেই আব্রাহাম কিছুটা বিরক্ত প্রকাশ করে ৷ আহসান অয়নের সাথে কিছু কথা বলে।

আহসান;; আচ্ছা আইরাত কোথায়, দেখছি না যে?

আব্রাহাম;; কেনো ওকে খুব মিস করছো বুঝি?

আহসান;; হ্যাঁ করারই কথা। (হেসে)

আব্রাহাম;; হুমম, করবেই তো। কেউ কি আর সুযোগ ছাড়ে।

আহসান;; হুয়াট ডু ইউ মিন?

আব্রাহাম;; আই মিন ভালোই তো তাই না। তুমিও আইরাতের সাথে আছো আর আইরাতও তোমাকে ভালোই পাত্তা দেয় তো ভালোই তো।

আহসান;; হাহাহাহাহা 😅,, হাসালে। তোমাকে জানিয়ে দেই যে আমি আইরাত কে আমার বোনের চোখে দেখি। আর সেও আমাকে ভাই বলেই ডাকে।

আব্রাহাম;; আচ্ছা??

আহসান;; হ্যাঁ।

আব্রাহাম;; গুড

তাদের কথার মাঝেই রোদেলা আর আইরাত এসে পরে। আইরাত এসে দেখে আব্রাহাম, অয়ন, রাশেদ এরা তিনজনেই বেশ গম্ভীর মুডে বসে রয়েছে। আইরাত এসে আব্রাহামের পাশেই বসে পরে।

আইরাত;; হেই গাইস, কি হয়েছে সবাই এমন সিরিয়াস মুডে কেনো?

অয়ন;; না এমনি।

আইরাত;; হে… (আব্রাহামের উদ্দেশ্যে)

আব্রাহাম;; খাবে?

আইরাত;; এইসব ছাইপাস আপনিই খান। এখন মুড নেই আমার।

আব্রাহাম;; হুমম।

হঠাৎ সেখান থেকে রাশেদ, অয়ন, রোদেলা আর আহসান উঠে চলে যায়। থেকে যায় শুধু আব্রাহাম-আইরাত। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকায়। এক নয়নে তাকিয়েই থাকে। আইরাত তা খেয়াল করে হালকা হেসে দেয়।

আইরাত;; কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?

আব্রাহাম;; সবকিছু কতো দ্রুত পালটে যায় তাই না।

আইরাত;; হুমম।

আব্রাহাম;; তুমি কীভাবে পাল্টালে বলো তো!!

আইরাত;; যেভাবে আপনি পাল্টেছেন।

আব্রাহাম;; “ভালোবাসা” মানুষ কে জিন্দা মেরে ফেলার মতো ক্ষমতা রাখে।

আইরাত;; হুম, বেশ অভিজ্ঞতা আছে আমার।

আব্রাহাম;; আবার মরতে পারবে?

আইরাত;; না। কষ্ট হয় অনেক।

আব্রাহাম;; তাহলে ভালোবাসা জিনিস টা থেকে দূরে চলে যাও।

আইরাত;; সম্ভব না। এটার ওপর আমার নিজের কোন হাত নেই। আমার ক্ষমতা নেই বের হবার।

আব্রাহাম;; ভা…………

আইরাত;; আমি আপনাকে ভালোবাসি।

আব্রাহাম;; Stop loving me..

আইরাত;; I can”t…

আব্রাহাম;; আইরাত……….

আইরাত;; আব্রাহাম, আমার কাছে সব ছিলো সব। সব ছিলো আমার কাছে। টাকা-পয়সা, প্রোপার্টি, ব্যাংক ব্যালেন্স, পাবলিসিটি, পপুলারিটি সব। কিন্তু এই সবকিছু থেকেও আমার কিচ্ছু ছিলো না। কিচ্ছুই না।
I was a big big zero..

আব্রাহাম;; __________________

আইরাত;; কিন্তু এখন আমার কাছে সব আছে সব। কারণ এখন আমার কাছে আপনি আছেন। এখন যদি কেউ আমার কাছ থেকে আমার জীবন টাও চায় তাহলে আমি হেসে হেসে রাজি হয়ে যাবো।

আব্রাহাম আইরাতের বেশ কাছে এসে পরে।

আব্রাহাম;; তাহলে সেইদিন আমার জীবন কেনো নিয়েছিলে?

আব্রাহামের কথায় আইরাতের মুখের হাসি টা উড়ে গিয়ে কিছুটা কালো হয়ে আসে। বুকের ভেতর টা ধক করে ওঠে।

আইরাত;; ম মা মানে?

আব্রাহাম;; মাঝে মাঝে দেখে মনে হয় যে তুমি এমন টা করতেই পারো না, কখনোই না। এটা মাত্রই আমার ভূল। কেননা তোমার চোখে মুখে আমি নিজের জন্য গাঢ় ভালোবাসা খুঁজে পাই। আমাকে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা খুঁজে পাই। কিন্তু পরক্ষণেই আবার পুরোনো সব কিছু মনে পরে সব এলোমেলো হয়ে যায়।

আইরাত;; আমি ক…………

আব্রাহাম;; বাদ দাও সব প্লিজ আমি আর কথা বলতে চাচ্ছি না।

আইরাত;; ____________________

আব্রাহাম;; তো? নতুন লাইফ পার্টানারের সাথে জীবন কীভাবে কাটাবে ভাবলে কিছু?

আইরাত;; আব্রাহাম কি বলছেন এইসব?

আব্রাহাম;; কবির?

আইরাত;; আরেএএএএএএ,, কবির ফেইক নিউজ বানিয়েছিলো আমার নামে। আমাকে না বলে কয়েই। ওটা ভুয়া। কিসের লাইফ পার্টনার, আমার বিয়ে বছর কয়েক আগে হয়ে গেছে আপনার সাথেই।

আব্রাহাম তার এক হাত কপালের সাইডে ঠেকিয়ে আইরাতের দিকে পলকহীন ভাবে তাকিয়ে থাকে।

আইরাত;; হাহ, কথা শুনেছো। নিজে বিয়ের আসর অব্দি চলে গিয়েছিলো আমি কিছু বললাম না অবশ্য করে দেখিয়েছিলাম। আর সে আসছে আমার বিয়ের খবর নিয়ে, এহহহহহহ।

আব্রাহাম;; অনেক রাত হয়েছে বাড়ি যাও।

আইরাত;; আর আপনি এখানে একা একা ক্লাবে থেকে কি করবেন। আপনাকে আমি এখানে রেখে যাই যেনো আপনি অন্য মেয়েদের সাথে ফ্লার্ট করতে পারেন তাই না?

আব্রাহাম;; ওও ম্যাডাম, ক্যারেক্টার এতো টাও ঢিলা না আমার ওকে।

আইরাত;; হ্যাঁ জানি আমি। এর জন্যই তো আপনাকে এতো এতো ভালোবাসি আমি।


আইরাত-আব্রাহাম আর বাকিরা সবাই ক্লাব থেকে এসে পরে। সবাই যার যার গাড়িতে উঠে বসে পরে। আব্রাহাম চলে যেতে ধরবে কিন্তু আইরাত তার সামনে এসে পথ আটকে দেয়। আব্রাহাম তার দিকে কপাল কুচকে তাকায়।

আব্রাহাম;; হুয়াট?

আইরাত;; আপনাকে না অনেক কিউট লাগছে।

আব্রাহাম;; থ্যাংক্স গার্ল।

আইরাত;; ফেভারিট।

আব্রাহাম;; কি?

আইরাত;; আপনার চাপদাড়ি গুলো।

আব্রাহাম;; এবার কি আমি যাবো?

আইরাত;; জান।

আব্রাহাম;; ওকে সামনে থেকে সরো।

আইরাত;; জান জান

আব্রাহাম;; সরলে তো যাবো নাকি!

আইরাত;; আরে ওই যান বলি নি আমি বলেছি জান। জায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ান।

আব্রাহাম;; ইয়া খোদা। আইরাত প্লিজ বাড়ি যাও,, অনেক রাত হয়েছে, পাগলামি করো না ওকে। প্লিজ বাড়ি যাও।

আইরাত;; যাচ্ছি যাচ্ছি,, হাহ 😏

তারা সবাই যার যার বাড়ি চলে যায়। আর আব্রাহামও আর বাইরে আজ বেশি একটা থাকে না সেও বাড়ি চলে যায়। তবে বাড়ি গিয়েই আব্রাহাম সোজা নিজের রুমে চলে যায়। ফুল পাওয়ারে এসি অন করে দেয়। ভালো লাগছে না কিছুতেই। সে এক প্রকার কনফিউশনে আছে। একবার মনে হয় আইরাতের সব দোষ আবার মনে হয় যে আইরাতের মতো মেয়ে এমন কিছু একটা করতেই পারে না। আইরাত আব্রাহাম কে মারতেই পারে না। দুই রকম দুই দ্বিধার মাঝে ঝুলে রয়েছে আব্রাহাম। আব্রাহাম তার জেকেট টা খুলে ফেলে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কতোক্ষন নিজের দিকে তাকিয়ে থেকে হুট করেই মাথা অন্য পাশে ঘুড়িয়ে ফেলে। পরনের শার্টের বোতাম গুলো খুলে গায়ের ওপর থেকে শার্ট টা খুলে ফেলে। এক হাত কোমড়ের সাইডে ঠেকিয়ে আরেক হাত ঘাড়ের পেছনে নিয়ে ক্লান্ত ভঙিতে চোখ গুলো বন্ধ করে ফেলে। কতোক্ষন পর নিজের চোখ গুলো মেলে তাকায়। আর তখনই আয়নাতে আব্রাহামের গায়ের একটা জিনিস লক্ষ হয়। আর সেটা হচ্ছে আব্রাহামের বাম পাশের বাহুতে থাকা ডার্ক ব্লেক কালারের ট্যাটু। আব্রাহামের বাম বাহুতে গাঢ় কালো কালার দিয়ে “আইরাত” নামে ট্যাটু করা, আইরাত নামের সাথেই আবার একটা গোলাপ ফুলের মতো গাঢ় নকশা আঁকা। এটা যে ঠিক কতো বছর আগে করেছিলো সে৷ আব্রাহাম হাত দিয়ে তাতে কিছুটা ছুইয়ে দেয়৷ সে ওয়াসরুমে চলে যায়৷ শাওয়ার ছেড়ে দিয়ে এক হাত দেওয়ালে ঠেকিয়ে মাথা নিচু করে থাকে। ওপর থেকে ঠান্ডা বড়ো বড়ো পানিবিন্দু গুলো সব আব্রাহামের গায়ের ওপর পরছে। ফর্সা গায়ে পানিবিন্দু গুলো সব বেয়ে বেয়ে নিচে পরছে। আব্রাহাম বেশ সময় পর মাথা টা তুলে দাঁড়ায়। হাত দিয়ে সামনে আসা চুলগুলো ঠেলে পেছনে দিয়ে দেয়। আব্রাহাম আর চোখ বন্ধ করে থাকতে পারছে না। কারণ চোখ বন্ধ করলেই আইরাতের সেই হাসিমাখা চেহারা টা বারবার তার সামনে এসে পরে। আব্রাহাম হঠাৎ ফট করেই নিজের চোখ মেলে তাকায়। প্রায় বেশ এক লম্বা শাওয়ারের পর আব্রাহাম বের হয়ে আসে। সাদা টাওয়াল টা দিয়ে নিজের সামনের চুল গুলো মুছেতে মুছতে বের হয়ে পরে৷

একটা এশ কালারের টাওজার আর সাদা কালারের টি-শার্ট পরে নেয়। টি-শার্ট টা যেনো বডির সাথে একদম লেগে ধরেছে। একজন সার্ভেন্ট কে দিয়ে গরম-গরম এক কাপ কফি আনতে বলে। কয়েক মিনিট পর এসেও যায়। আব্রাহামের রুমে ভালো লাগছে না দেখে সে করিডরে চলে যায়। চাঁদের আবছা আলো করিডরের সম্পূর্ণ অংশে পরেছে। সেখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রেলিং এর ওপর হাত রেখে গরম ধোঁয়া ওঠা কফিতে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে সে। কিছু সময় সেখানেই কাটিয়ে আবার ফিরে আসে রুমে। বিছানার সাথে গা ঠেকিয়ে ফ্লোরে বসে পরে। ঘাড় টা কিছুটা এলিয়ে দিয়ে ওপরের দিকে একমনে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ চোখ গুলো বন্ধ করে নেয়।

“” আমি না আপনাকে অনেক ভালোবাসি, অনেক টাই বেশি। জামাইজান আমার। আব্রাহাম প্লিজ কোন মেয়ের দিকে তাকাবেন না। আর আমি জানি আপনি তাকাবেন ই না। আচ্ছা আব্রাহাম, আপনি আমাকে কতোটুকু ভালোবাসেন। শুনুন না আব্রাহাম, প্লিজ আপনি আর কখনো আমাকে ছেড়ে দূরে যাবেন না ওকে। প্রমিস করুন। আব্রাহাম-আইরাতের একটা ছোট্ট দুনিয়া হবে যেখানে শুধু ভালোবাসা থাকবে। একটা ছোট্ট বাড়ি, দুটো মানুষ আর অনেক গুলো ভালোবাসা।
আব্রাহাম, আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি আল্লাহ কে বলবো উনি যেনো আমার হায়াত আপনাকে দিয়ে দেয়, তবুও আপনি আমার কাছে থাকুন। ভালোবাসি তো। “”

আব্রাহাম এক ঝটকায় চোখের পাতা গুলো মেলে ফেলে। চোখের কার্নিশে পানি গুলো জমে ওঠেছে আব্রাহামের। খুব বেশি খারাপ লাগছে তার। কেনো এতো খারাপ লাগছে আজ তা সে নিজেও জানে না। খুব কান্না করতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এই কান্না যেনো আব্রাহাম কে একদম মানায় না। কেউ এই মূহুর্তে কাছেও নেই যাকে কিছুক্ষন শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের মনে শান্তু পাওয়া যায়। এখন যদি আইরাত আব্রাহামের কাছে থাকতো তাহলে হয়তো আব্রাহাম সবকিছু ভুলে, সবকিছু ছেড়ে ছুড়ে আইরাত কে এক নিমিষেই নিজের করে নিতো। আব্রাহামের চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরে আব্রাহাম তা সাথে সাথেই মুছে ফেলে। দূরে ছিলো কতো বছর। আইরাতের জীবন বেশ খারাপ গিয়েছে কিন্তু তাতে যে আব্রাহাম ভালো থেকেছে তা কিন্তু একদমই নয়। আব্রাহামও কম কিছু সহ্য করে নি,, কম কষ্ট আব্রাহামও পায় নি। কেননা আইরাতের থেকে আব্রাহামও কিন্তু তাকে কম ভালোবাসে না। সে নিজের সাধ্য মতো সব করেছে, এমন কিছু নেই যে আব্রাহাম ট্রাই করে নি। কিন্তু হয়তো ভাগ্যে আব্রাহামের সাথে এতো বছর আইরাতের দূরে থাকা টাই লিখা ছিলো। সিচুয়েশন সবকিছু আইরাতের বিপক্ষে ছিলো। দুটো মানুষ দুই প্রান্তে থেকে সমান কষ্ট-ই পেয়েছে। তফাৎ শুধু এটা যে আইরাতের টা প্রকাশ পেয়েছে আর আব্রাহামের টা পায় নি। (আব্রাহামের ব্যাপারেও সব জানতে পারবেন)

আব্রাহাম আর থাকতে না পেরে তার পাশে থাকা গিটার টা হাতে তুলে নেয়। এটাই যেনো আব্রাহামের বর্তমান সঙ্গী হয়ে গেছে। যাই হোক না কেনো, যে কোনকিছুই হোক না কেনো আব্রাহাম তখন এই গিটার টা হাতে নিয়ে মন খুলে গান গাওয়া শুরু করে দেয়,, ব্যাস মন মূহুর্তেই ভালো হয়ে যায়। অনেক সময় আমাদের মনের কথা গুলো আমাদের মুখে ব্যাক্ত করতে না পারলে তা গানের কলি গুলোতে খুঁজে পাওয়া যায়। গানের লাইন গুলো অনেক সময় আমাদের মনের ভেতরের কথা গুলোকে খুব সুন্দর ভাবে প্রকাশ করে দেয়। গানে বা তার কলিগুলোতে মানুষের মনের ভাব প্রকাশ করার মতো এক অদ্ভুত ক্ষমতা থাকে। ঘরের মাঝে আবছা আলো রয়েছে,, এর মাঝেই বিনা বলেই হুড়মুড়িয়ে মুষুলধারে বৃষ্টি নেমে পরে। বাইরে থেকে শীতল বাতাস সব রুমের ভেতরে প্রবেশ করছে। আব্রাহাম গিটার টা হাতে নিয়ে তার চোখ গুলোতে এক নেশা লাগানো ভাব এনে ছাড়া গলায় গান ধরে….

“শ্রাবণ ধারায় এতো চেনা কি খুজে পাও?
যা আমার মাঝে নেই একবিন্দু পরিমাণু 🤍~

`~আমার সরল রেখার চিন্তা-ধারায়
আড়ারি করে দাগ কাট কেনো?

••নাকি কাঁদিয়ে আমাকে সেই
চোখের জলে ভেজো🍂

তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে শুধুই আমি মরিচিকার মতো! 🥀

~`~তবে তাই যদি হয় করি নাকো ভয়
জানি আঁধার রাত ঘনিয়ে হবে সূর্যোদয়— ⛅

**আমি ভেবে নিলাম তুমি সেই লাল গোলাপ 🌹
যার নিরন্তর পাহারা দেয় এক কাটার বাগান💔

~হুমমমম…হুমমমম…হুমমমম…হুমমমম……

*~*পাহাড়-চূড়ায় বেয়ে আকাশ তো ছুতে দেখিনি
স্রোতস্বিনীর হাওয়ায় পাড়ি দাও সমুদ্দুর ❄️

ওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওওও~~

`~* আচড়ে পরে সে ঢেউ আমার বুকে দূরন্ত বেগে
নাকি কাঁদিয়ে আমাকে সেই চোখের জলে ভেজো 🍂

“`তৃষ্ণার্ত হৃদয়ে শুধুই আমি মরিচিকার মতো! 🤎🦋

~`~তবে তাই যদি হয় করি নাকো ভয়
জানি আঁধার রাত ঘনিয়ে হবে সূর্যোদয়— ⛅

**আমি ভেবে নিলাম তুমি সেই লাল গোলাপ 🌹
যার নিরন্তর পাহারা দেয় এক কাটার বাগান 💝

~হুমমমম…হুমমমম…হুমমমম…হুমমমম……


মূহুর্তেই বাইরে একটা বিকট বর্জ্যপাতের শব্দ শোনা গেলো। আব্রাহাম আস্তে করে গিটার টা নামিয়ে সাইডেই রেখে দিলো। তখনই দরজাতে কারো কড়া নাড়ার শব্দ আসে। আব্রাহাম তার মাথা ঘুড়িয়ে দেখে দরজার আড়ালে রাত্রি দাঁড়িয়ে আছে।

রাত্রি;; আসবো কি?

আব্রাহাম;; হুমম

রাত্রি;; কি হয়েছে মন খারাপ?

আব্রাহাম;; নাহ এমনি

রাত্রি;; তাহলে থামলি কেনো, গান টা তো সুন্দরই ছিলো।

আব্রাহাম;; ভালো লাগছে না।

রাত্রি আব্রাহামের পাশে এসে বসে পরে। আব্রাহামের কাধে হাত রাখে।

আব্রাহাম;; আসলে না আমরা যা কখনোই নিজেদের লাইফে এক্সপেক্ট করি না বা তার বিন্দুমাত্র ধারণাও থাকে না পরবর্তীতে দেখা যায় কি যে সেগুলোই আমাদের সাথে হচ্ছে। জীবন টা যে এভাবে বদলে যাবে ভাবি না। জীবনের মোড় টা যে এবে ঘুড়ে যাবে সত্যি তা ভাবি নি। আমি তো চাই নি এমন কিছু, কিন্তু দেখ না কি থেকে কি হয়ে গেলো।

রাত্রি;; ___________________________

আব্রাহাম;; রাত অনেক হয়েছে যা ঘুমিয়ে পর।

রাত্রি;; তুই?

আব্রাহাম;; আমি তো আমিই। তুই যা।

রাত্রি;; আচ্ছা।

রাত্রি চলে যায়, তবে যাওয়ার আগে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আরেক বার আব্রাহাম কে দেখে যায়। আব্রাহাম ইচ্ছে করেই ঘরের লাইট অফ করে একটা বড়ো সাদা মোমবাতি জ্বালিয়ে রেখেছিলো। বাইরের দমকা বাতাস এসে তাও ধুপ করে নিভিয়ে দিয়ে যায়। ঘর টা আবছা আলো-আঁধারের ছায়া হয়ে যায়। বাইরে যে বিদুৎ চমক দিচ্ছে তার আলো ঘরের মাঝে থেকে থেকে জ্বলে উঠছে। আব্রাহাম শূন্য দৃষ্টিতে বাইরের দিকে তাকায়। আইরাতের কথা খুব বাজে ভাবে মনে পরছে তার। বড্ড বেশি। আব্রাহাম উঠে গিয়ে একটা কালো মোটা ফ্রেমের ডায়েরি বের করে। কালো কালি দিয়ে তাতে গাঢ় ভাবে লিখে………

“” যত নেশাই করো না কেনো,, সারা দুনিয়া খুঁজেও নারীর চেয়ে তীব্র নেশা কোথাও পাওয়া যাবে না~~
🖤🥀””

এটা লিখে দিয়েই আব্রাহাম টাস করে ডায়েরি টা বন্ধ করে ফেলে। বিছানাতে গিয়ে গা এলিয়ে দেয়। এভাবেই রাত টুকু কেটে যায় তার।


পরেরদিন সকালে~~

আইরাত;; রাশেদ তাহলে ফাইল গুলো নিয়ে আমি যাচ্ছি ওকে, তোমরা এদিক টা দেখো। আর মিস্টার ডিসোজার কোন ক্লাইন্ট যদি এখানে আসে তাহলে সোজা আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়।

রাশেদ;; জ্বি ম্যাম।

তনয়ার দুই দিন ধরে কোন খবর নেই যার ফলে কাজের চাপ টা একটু বেশিই পরেছে। আইরাত যদিও তনয়া কে ফোন দিয়েছিলো। আর দুই একদিনের মাঝে সে আবার অফিসে জয়েন করবে। তবে এখন কিছু নতুন ক্লাইন্ট আছে আর তারা আইরাতের সাথে দেখা করার জন্য বাইরেই হয়তো কোন এক হোটেলে সব এরেঞ্জম্যান্ট করেছে তাই আইরাত সেখানে যাচ্ছে। আইরাতের বাইরে বের হতেই অফিসের বেশ কিছু স্টাফ দের সাথে তার দেখা হয়,, তারা সবাই আইরাত কে মর্নিং উইস করে। আইরাত হেসে সবার উত্তর দিয়ে দ্রুত পায়ে গিয়ে তার গাড়িতে ওঠে স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। আইরাত আজ নিজেই কিছুটা ব্যাস্ত তাই সে আব্রাহাম কে ফোন দেয় নি। আইরাত গাড়ির স্পীড বেশ বাড়িয়ে দিয়ে আপন গতিতে যেতেই আছে৷ তবে মাঝপথে আচমকাই একটা গাড়ি আইরাতের গাড়ির সামনে এসে পরে,, আইরাত কোন রকমে দ্রুত ব্রেক কষে। অল্পের জন্য সেই গাড়িটার সাথে ধাক্কা লাগে নি তার। আইরাতের মাথায় ধুপ করে আগুন জ্বলে ওঠে। এখন এই গাড়িরও বারো টা বাজাবে আর তার সাথে গাড়ির মালিকেরও। আইরাত গাড়ি থেকে রেগে মেগে আগুন হয়ে নামতে যাবে তার আগেই গাড়ির ওনার আইরাতের গাড়ির উইন্ড-এর পাশে এসে দাঁড়ায়। আইরাত গাড়ির উইন্ড টা নামিয়ে বাইরে তাকায়। আর যে দাঁড়িয়ে ছিলো তাকে দেখে আইরাতের সব রাগ যেনো নিমিষেই পানি পানি হয়ে গেলো। তার মুখে ফুটে ওঠে দীর্ঘ হাসি।

আইরাত;; আরেহহ আমার জামাই টা না এইটা।

আব্রাহাম;; না অন্যের জামাই।

আইরাত;; ওইইয়া ফাইজলামি করেন 😠?

আব্রাহাম;; আইরাত গাড়ি থেকে নামো ফাস্ট।

আইরাত;; কিন্তু কেনো? আর আজ দেখি আমার কথা আপনার আগেই মনে পরেছে। থাকতে না পেরে একা একাই চলে এসেছেন আমার কাছে তাই না।

আব্রাহাম;; আইরাত বেশি কথা বলার সময় নেই এখন প্লিজ জলদি গাড়ি থেকে নেমে পরো।

আইরাত;; কিন্তু আব্রাহাম হয়েছে টা কি বলবেন তো।

আব্রাহাম;; আইরাত, গাড়ি থেকে নামতে বলেছি। সময় নেই হাতে বেশি একটা প্লিজ নামো জলদি।

আইরাত;; কিন্তু…

আব্রাহাম;; ধুত্তুরি, ফাজিল মেয়ে বেশি বকবক করে। ওওও মিসেস. বকবক।

এই বলেই আব্রাহাম আইরাতের ডান বাহু ধরে দেয় এক হেচকা টান। ফলে আইরাত হুমড়ি খেয়ে গাড়ির বাইরে বের হয়ে পরে। আব্রাহাম আর কিছু না বলেই আইরাতের হাত ধরে দৌড় লাগায়। দুজনেই দৌড়িয়ে বেশ কিছু দূরে এসে পরে। আইরাত তো হিল পরে ছিলো যার ফলে একটু অসুবিধা হয়েছে দৌড়াতে আর হাপিয়েও গেছে।

আইরাত;; আমি বুঝলাম না এভাবে টেনে বাইরে আনলেন কেনো, আর আমরা দৌড়ালামই বা কেনো। (কোমড়ে হাত রেখে হাপাতে হাপাতে)

আব্রাহাম তার জেকেটের হাতা গুটিয়ে নিয়ে আইরাতের দিকে কপাল কুচকে তাকায়। আর তার সাথে সাথেই এক গগন ফাটানো আওয়াজ করে আইরাতের গাড়ি টা ব্লাস্ট হয়ে হয়ে যায় অর্থাৎ বিস্ফোরণ। আইরাতের মুখ হা হয়ে গেছে। সে ফাটা চোখে তার গাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। আর আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়েই রয়েছে।

আব্রাহাম;; এর জন্য টেনে এনেছি।

এই বলেই আব্রাহাম চলে আসে। আর আইরাত অবাকের চরম পর্যায়ে এখন। মানে কি তার গাড়িতে কি বোম টোম ফিট করা ছিলো নাকি। আইরাত এইসবের কিছু ভুল করেও জানতো না। অল্পের জন্য আজ বেচে গেছে। ভাগ্যিস আব্রাহাম সময়মতো এসেছিলো। তবে আব্রাহাম এটা জানলো কি করে? আইরাত তার পাশে তাকিয়ে দেখে আব্রাহাম নেই। আইরাত ঘুড়ে তাকায় দেখে যে আব্রাহাম তার গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে ফোন ঘাটছে। এগুলো কোন কথা? মাত্রই একটা এত্তো বড়ো বিস্ফোরণ হয়ে গেলো চোখের সামনে আর আব্রাহাম এখন এমন একটা ভাব ধরছে যেনো এখানে কিছুই হয় নি। এমনকি আব্রাহাম-আইরাতের থেকে কিছুটা দূরেই আইরাতের ওই গাড়ি টা আগুন লেগে জ্বলছে। জ্বলে-পুড়ে একদম ছাই হচ্ছে। আইরাত দ্রুত বেগে আব্রাহামের কাছে চলে গেলো। চিল্লিয়ে বলে ওঠে….

আইরাত;; কি হচ্ছে এগুলো? গাড়িতে বোম এলো কোথা থেকে আর আপনিই বা জানলেন কীভাবে?

আব্রাহাম;; _______________________

আইরাত;; আব্রাহাম!! বেশ রাগ হচ্ছে এবার আমার।

আব্রাহাম;; চলো।

আইরাত;; কোথায়?

আব্রাহাম;; যেদিকে দুচোখ যায়।

আইরাত;; কিহ?

আইরাত আব্রাহামের কথা শুনে হাসবে না কাদবে বুঝতে পারছে না। ত্যাড়া যে ত্যাড়াই রয়ে গেলো। আব্রাহাম আইরাতকে তার গাড়িতে তুলে আইরাতের যেই জায়গায় যাওয়ার কথা ছিলো আব্রাহাম তাকে সেখানে পৌঁছে দিয়ে আসে। অবশেষে আইরাত আব্রাহামের গাড়ি থেকে নেমে পরে। আইরাত ভেতরে চলে যেতে ধরবে কিন্তু কি যেনো একটা মনে করে আবার ঘুড়ে আব্রাহামের কাছে আসে। বেশ ঝুকে আব্রাহামের গাড়ির উইন্ড তে দুই হাত রেখে বলে ওঠে…..

আইরাত;; আপনা টাইম আয়েগা 😏

আব্রাহাম;; 🤨🤨

এই বলেই আইরাত ভেতরে চলে যায় আর আব্রাহাম একজন কে ফোন দেয়।





চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here