#নেশাক্ত_ভালোবাসা #লেখিকাঃ Tamanna Islam #পর্বঃ ৫৩

0
808

#নেশাক্ত_ভালোবাসা
#লেখিকাঃ Tamanna Islam
#পর্বঃ ৫৩

আইরাত দৌড়ে বাইরে এসে পরেছে। মেয়েটা অনেক ভয় পেয়ে আছে। আইরাতের এতো জোরে ছুটার কারণে একটা টেবিলের সাথে তার পায়ে হোচট খায়। ব্যাথায় চোখ মুখ কুচকিয়ে ফেলে। পায়ের আঙুল একদম কেটে ভর্তা হয়ে গেছে। আইরাত একটু থেমে তার এক হাত দিয়ে পায়ের আঙুলে চেপে ধরে। আইরাত তার পেছনের দিকে তাকায়। রায়হান কে যেই রুমে লক করে দিয়ে এসেছে সেই দরজাতে আবার জোরে জরে চাপড় পরে। রায়হান ধাক্কাচ্ছে। আইরাত আর কোন উপায় না পেয়ে দ্রুত ওপরে নিজের রুমে চলে যায়। গিয়েই দেখে বিছানার ওপর নিজের ফোন টা রাখা। আইরাত দ্রুত সেখানে যায় গিয়ে তড়িঘড়ি করে ফোন টা নেই। হাত কাপছে। আর ক্রমাগত ভাবেই ওই রুমের দরজাতে রায়হান একের পর এক ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছে। ভাগ্যিস শুট করা হয়েছে ওর দুই বাহুতেই তাই ব্যাথায় বাইরে আসতে পারছে না। আইরাত তার এক হাতের উলটো পাশ দিয়ে বারবার নিজের চোখের পানি মুছছে আর ফোন দিচ্ছে। আইরাত সবার আগে রাশেদ কে ফোন দেয়। রাশেদ তার বাসায় ছিলো। কেননা অফিস নেই। আর আগুন লাগার পর অফিসের সবকিছু আবার নতুন করে ঠিক করা হচ্ছে। এই সময়ে কে ফোন দিলো এই ভেবেই রাশেদ ফোন টা রিসিভ করে। রিসিভ করতেই ওপর পাশ থেকে তড়িঘড়ি করে বলে ওঠে……

আইরাত;; রাশেদ, রাশেদ প্লিজ জলদি আসো। আমার, আমার খুব ভয় লাগছে। যেকোন সময় ও এসে পরবে এখানে। প্লিজ জলদি আসো।

রাশেদ;; ম্যাম, কি হয়েছে ম্যাম? আপনি, আপনি ঠিক আছেন তো? কে আসবে কি হয়েছে?

আইরাত;; রায়হান, রায়হান হুট করেই আমার বাসায় এসে পরেছে। আমার ওকে ভালো লাগছে না। আমি না ওকে, ওকে শুট করে দিয়েছি।

রায়হান;; হুয়াট?

আইরাত;; তো আমি আর কি করতাম ও, ও অসভ্যতামি করতে চাইছিলো। আমাকে নাকি নিয়ে যেতে এসেছে। আমি আমার রুম থেকে পালিয়ে অন্য রুমে যাই তারপর সেখানে আব্রাহামের জেকেটের পাশে একটা রিভলবার পেয়েছি তো আই জাস্ট শুট হিম। বাহুতে করেছি।

রায়হান;; ভুল করেছেন আপনি?

আইরাত;; মা মা মানে?

রায়হান;; ওই হারামির মাথা বরাবর শুট করা উচিত ছিলো। ম্যাম আপনি রুম লক করে থাকুন আমি জাস্ট দুই মিনিটে আসছি।

আইরাত ফোন কেটে দেয়। নিচে ধপ করে বসে পরে, হাত দিয়ে কপালে এসে পরা চুল গুলো পেছনে ঠেলে দেয়। তখনই নিচে আবার দরজা ধাক্কানোর শব্দ আসে। আইরাত তার হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকে। তার প্রায় কিছুক্ষন পরেই নিচে বেশ কিছু মানুষের সমাগম বোঝা গেলো। আইরাত জানালা দিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে পুলিশ রা গাড়ি থেকে নামছে আর তাদের সাথে রাশেদও আছে। তারা সবাই মিলে বাড়ির ভেতরে ঢুকছে। আইরাত এটা দেখেই দৌড়ে রুমের বাইরে বের হয়ে পরে। নিচে যেতেই রাশেদের সামনে পরে। আর রায়হান তার মতো করেই দরজা ধাক্কাচ্ছে।

রাশেদ;; ম্যাম ঠিক আছেন?

আইরাত;; ঠিক আছি।

পুলিশ অফিসারদের আর কিছু জিজ্ঞেস করতে হলো না কেননা রায়হান যে হারে দরজা ধাক্কাচ্ছে তাতেই বুঝা যাচ্ছে যে সে সেই রুমের ভেতরে রয়েছে। আইরাত পাশে থাকা একটা চেয়ারে বসে পরে। পায়ের আঙুল সহ পা অনেক টুকু কেটে গিয়েছে। যন্ত্রণায় যেনো ছিড়ে যাচ্ছে পা। পুলিশ অফিসার রা গিয়ে রায়হানকে কিছুটা রক্তাক্ত অবস্থায় পায়। রায়হানের হাত গুলো পেছনে নিয়ে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে দেয়। তারপর টানতে টানতে বাইরে নিয়ে আসে।

রাশেদ;; তুই এর আগে দু-দুটো মার্ডার করেছিস তারপরও কেস করি নি। এর জন্য বেশি পার পেয়ে গেছিস তাই না। আমার তো পুরো সন্দেহ তোর ওপর যে তুই ই আব্রাহাম স্যারের সাথে কিছু না কিছু করে বসেছিস। চেহারা অব্দি দেখতে মন চায় না তোর। অফিসার প্লিজ এই জানোয়ার কে নিয়ে যান।

রায়হান কে ধাক্কাতে ধাক্কাতে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে যাওয়ার আগে রায়হান আইরাতকে একটা লুক দিয়ে যায়। যেনো এতো সহজে ছাড়বে না সে। পুলিশ রা চলে যায়। রায়হান কে জেলে ভরা হয়েছে। রাশেদ বাড়ির সব গুলো গার্ড আর স্টাফ কে আচ্ছা মতো ঝাড়ি মেরে দেয়। কতো গুলোকে তো সোজা চাকরি থেকে বেরও করে দিয়েছে। বাড়িতে এতো বড়ো একটা কান্ড হয়ে গেলো আর সবগুলো কি ঘাস কাটতে গিয়েছিলো নাকি। ওদিকে ইলা রনিত কে নিয়ে বাসায়ও এসে পরে। বাড়ির বাইরে এতো গুলো পুলিশ কে দেখে ইলার বুক টা ধক করে উঠে। সে রনিত কে নিয়ে দ্রুত বাড়ির ভেতরে যায়। গিয়ে দেখে রাশেদ বসে আছে আর আইরাতের অবস্থা বেশি ভালো না।

ইলা;; আইরাত কি হয়েছে? বাইরে এরা কেনো আর তোর পা কীভাবে কাটলো। কি হয়েছে রাশেদ?

রাশেদ;; আসলে…

আইরাত;; কিছুনা। কিছু হয় নি। প্লিজ আর একটা কিছুও আমাকে জিজ্ঞেস করো না। আমি কেনো মরে গেলাম না। এভাবে আর আমি পারি না। আমার কিছু জিজ্ঞেস করো না।

ইলা;; রাশেদ?

রাশেদ;; রায়হান এসেছিলো। গুন্ডামি শুরু করে দিয়েছিলো একদম। তখন ম্যাম আমাকে ফোন করে আর আমি অফিসার দের সাথে নিয়ে আসি।

ইলা আর কিছুই বলে না। সে গিয়ে সোজা ফার্স্ট এয়িড বক্স এনে আইরাতের পায়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়। আইরাত মানা করলেও শুনে না। তখনই কীভাবে যেনো অয়ন আসে।

অয়ন;; আব্রাহাম কে পাওয়া গেছে??

আইরাত;;

অয়ন;; বউমনি কিছু বলছো না?

আইরাত;; বলার কিছুই নেই।

অয়ন;; সরি আমি আগেই আসতাম কিন্তু আমি লন্ডন ছিলাম আর আমার ফ্লাইট মিস হয়ে গিয়েছিলো।

আইরাত;; আমি জানি।

অয়ন;; এখন আব্রাহাম কোথায়?

আইরাত;; আছে তো। ও আছে ও যায় নি কোথাও আর যাবেও না।

রাশেদ অয়নকে ধরে সোফাতে বসিয়ে দেয়। আইরাত তো আব্রাহামে নামে কিছু বলবে না কারণ ও বিশ্বাসই করে না যে আব্রাহাম মারা গেছে। অতঃপর রাশেদ অয়ন কে সব খুলে বলে আর সব শুনে অয়নের যেনো দুনিয়া ঘুরে গেলো।

অয়ন;; এটা হতেই পারে না? এগুলো কীভাবে সম্ভব?

রাশেদ;; নিজেকে শান্ত করুন।

আইরাত সেখানে আর বসে থাকতে না পেরে উঠে নিজের রুমে চলে আসে। এসেই আব্রাহামের ওই নেভি ব্লু জেকেট টা যেটা খাদ থেকে পাওয়া গিয়েছিলো সেটা বের করে নিজের বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আবার হাউমাউ করে কেদে দেয়।

আইরাত;; আব্রাহাম, আপনি যদি আজকে থাকতেন তাহলে আজ, আজ আমার সাথে এগুলো কিছুই হতো না। না ই রায়হান এখানে আসার সাহস পেতো আর না ই এতো কিছু হতো। আপনি কোথায় চলে গেলেন? আমার যে আর ভালো লাগে না আপনাকে ছাড়া। হয়তো আমার কাছে আবার ফিরে আসুন আর নয়তো আপনি যেখানে আছেন আমাকেও সেখানে নিয়ে চলুন। আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি পারবো না আপনাকে ছাড়া থাকতে। আব্রাহায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়াম।

এভাবেই এক বেলা কেটে যায়। রাশেদ চলে যায় ইলাকে বলে। অয়ন নিজেও অনেক কান্নাকাটি করছিলো ইলা কে জড়িয়ে ধরে। অবশেষে ইলাও তাকে বুঝিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এর মাঝে একবার গিয়ে আইরাতকে জোর করে ফ্রেশ হতে পাঠিয়েছে। আইরাত সবসময়ের মতো জানালার কাছে দুই পা গুটিয়ে বসে ছিলো। ইলা খাবার নিয়ে যায় কিন্তু আইরাত খায় না। আইরাত আজ তখনকার পর থেকে আর নিচেই নামে নি। রনিত ইলার সাথেই ঘুমায়। সে ঘুমাচ্ছে। আর ইলা এদিকে তার রুমেই পায়চারি করে যাচ্ছে। চোখে নেই ঘুম। ইলা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত বাজে ২ঃ৩৫ মিনিট। না জানি আইরাত এখন কি করছে। ঘুমায় তো একটুও না। ইলা আর থাকতে না পেরে আইরাতের রুমের দিকে হাটা ধরে। ইলা গিয়ে দেখে রুমের দরজাটাও চাপানো। ঠিকভাবে লাগায় নি। ইলা রুমের ভেতরে গিয়ে দেখে আইরাত নেই। ইলা সামনে হাটছে আর আইরাতকে খুঁজে চলেছে। ওয়াসরুমে গিয়ে দেখে সেখানে নেই, করিডরে গিয়ে দেখে সেখানেও নেই। তাহলে কোথায় গেলো। হঠাৎ কারো হাসির আওয়াজ কানে আসে ইলার। ইলা কপাল কুচকে তাকায়। খেয়াল করে দেখে যে আরেক রুমের ভেতর থেকে আওয়াজ আসছে। ইলা সেই রুমে যায়। আর যেতেই যা দেখে তাতে ইলা যেনো আরেক দফা ভেঙে যায়।

আইরাত কাবার্ড থেকে এক এক করে আব্রাহামের সব কাপড়-চোপড় বের করেছে। রুমের এমন কোন জায়গা ফাকা নেই যাতে আব্রাহামের কাপড় গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে নেই। গাদা গাদা খালি কাপড়। আর তার মাঝে আইরাত বসে আছে। আইরাতের জামার ওপর দিয়েও আব্রাহামের জেকেট। মানে আইরাত আব্রাহামের জেকেট পরে বসে আছে। একদম বাচ্চার মতো লাগছে দেখতে। হাতে আব্রাহামের ঘড়ি। আইরাত বসে বসে কাপড় গুলো মেলে মেলে দেখছে। ইলা যে রুমে এসেছে তার দিকে আইরাতের কোন খেয়ালই নেই। আইরাত কিছুটা হাসছে। যেনো আব্রাহামের এই জিনিস গুলোতেই সে নিজের সর্বসুখ খুঁজে পাচ্ছে। আইরাত আরেকটা জেকেট নিয়ে নিজের ওপরে মেলে দেয়।

ইলা;; আইরাত..!

আইরাত;; দাদি এসেছো? দেখো না আব্রাহামের কত্তো গুলো কাপড়। আমি গুনেও শেষ করতে পারছি না। আর দাদি দেখো এগুলোতে আব্রাহামের গায়ের গন্ধ লেগে আছে। আব্রাহামের বডির স্মেল লেগে আছে। এগুলো আমার কাছে থাকলে মনে হয় আমার আব্রাহামও আমার কাছেই আছে। দেখো না? আব্রাহামের স্মেল পাওয়া যায়।

ইলা আইরাতের এমন দশা দেখে কেদে দেয়।

আইরাত;; দাদি দেখো এই যে আমাদের, আমাদের বিয়ের ছবি। আব্রাহাম কে কত্তো সুন্দর লাগছে তাই না। আমি জানি তো আমার আব্রাহাম কে সুন্দর লাগে। আচ্ছা দাদি বিয়েতে তো আমরা আজীবন এক সাথে বেধে গিয়েছিলাম তাই না তাহলে আব্রাহাম বাধন ভেঙে চলে গেলো কেনো? আমি কি ভুল কিছু করেছি? আমি কি, আমি কি কম ভালোবাসতাম নাকি ওকে?

ইলা;; আইরাত এমন পাগলামি গুলো করিস না, উঠে আয়।

আইরাত;; না আমি যাবো না। বললাম না কাপড় গুলোতে আব্রাহামের ছোয়া লেগে আছে আমি ওকে ছেড়ে যাবো না। আব্রাহাম শুধুই আমার।

ইলা;; আইরাত..!

আইরাত;; 🥺🥺

ইলা;; 😓

আইরাত একের পর এক কাপড় দেখছিলো পাগলের মতো করে। হঠাৎ সে থেমে যায়। নিজের গা এলিয়ে দেয়। চোখে পানি গুলো মুক্তোর মতো চিকচিক করছে।

আইরাত;; দাদি কখনো কিছু চাই নি আমি তোমার কাছে। আজ চাচ্ছি আমাকে দিবে?

ইলা;; একবার বলে তো দেখ।

আইরাত;; আমাকে মেরে ফেলো।

ইলা;;

আইরাত;; প্লিজ আমাকে মেরে ফেলো। কারণ এইসব আমাকে বাঁচতে দিবে না। তিলে তিলে শেষ করে দিবে আমাকে। আমার কাছে মনে হয় কেউ আমাকে কেটে তাতে মরিচ ছিটিয়ে দিয়েছে। যেনো আমি ছটফট করতে করতে মরি। আমার যে কেমন লাগে আমি বলতে পারবো না। আমার ঘুম আসে না। বিছানাতে যখন ঘুমাতে যাই তখন পাশের জায়গা টা কেমন ফাকা ফাকা লাগে। আমি সেখানে হাত দিয়ে দেখি কিন্তু কই আমি তো আমার আব্রাহাম কে সেখানে পাই না। আমি আয়নার সামনে দাড়ালেই আগে আব্রাহাম এসে আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরতো কিন্তু এখন আর কেউ আমাকে জড়িয়ে ধরে না। আমি এখন আর কাউকে আমাকে চকোলেট এনে দেওয়ার কথা বলতে পারি না। এটা ওটার জন্য বায়না ধরতে পারি না। কেউ আমাকে নিয়ে এখন আর হুট হাট বাইরে বের হয় না। আব্রাহামের দেওয়া নাম গুলো ধরে এখন সে আমাকে আর ডাকে না। আমি তো মানুষ,, আমারও তো কষ্ট হয়। তুমি বুঝো? আমি যখন মরার কথা বলি আমাকে থামিয়ে দাও তোমরা। আমার যে কেমন লাগে বুঝো তোমরা। কেউ বুঝো না। যে হারায় সে বুঝে। আমি হারিয়েছি। ছোট থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত আমার জীবনে কিছুই থাকে নি। কিছুই না। সবাই আমাকে রেখে ছেড়ে চলে যায়। আব্রাহামও চলে গিয়েছে। যাকে নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসলাম দিনশেষে কিনা সেই নেই। মরার কম চেষ্টা করেছি। কত্তো বার, কত্তো বার সুইসাইড করতে গিয়েছি। বাথটাবে পানি ভর্তি করে ডুবে থেকেছি যেনো শ্বাস আটকে মরে যাই। অন্ধকার রুমে নিজেকে একদম একা করে রেখেছি যেনো ভয় পেয়ে মরে যাই। ছাদের একদম কিণারে গিয়ে দাঁড়িয়ে থেকেছি যেনো ওপর থেকে নিচে পরে মরে যাই। কাচ দিয়ে হাত কেটেছি, ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থেকেছি, বিষ খাওয়ার কথাও মাথায় এসেছে। কি না করেছি বলো? কি না করেছি। আমি আব্রাহামের কাছে চলে যাবো। আমি আব্রাহাম কে ছাড়া বাঁচতে পারবো না 🥺।আমি বের হতে চাই এই মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে। কিন্তু পারি না। সব জায়গায় শুধু আব্রাহাম আব্রাহাম আর আব্রাহাম। আব্রাহাম এখন আমার স্মৃতি তে আছে কিন্তু আমার কাছে নেই, আমার পাশে নেই। আমি ওকে দেখতে পারি না, হাত দিয়ে ছুতে পারি না। ওকে ছাড়া এখন আমি একটা জীবন্ত লাশ। (চিল্লিয়ে অঝোরে কেদে)

আইরাত এই কথা গুলো বলেই চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষন মাথা নিচু করে বসে থাকে তারপর আবার চোখ গুলো বন্ধ রেখেই বলে ওঠে…

আইরাত;; দাদি যাও।

ইলা;; আইর…..

আইরাত;; দাদি প্লিজ তোমার রুমে যাও। আমাকে একা থাকতে দাও। আমার মাথায় ব্যাথা করছে অনেক।

এই কথা বলে আইরাত সেখানেই শুয়ে পরে। ইলা মাথা নিচু করে এসে পরে। ইলা নিচে হলরুমে আসে। এসেই সবার আগে চোখে পরে আব্রাহামের হাস্যজ্বল মুখের একটা ছবি। ইলা তা হাতে নিয়ে কেদে দেয়। নিজের আচল দিয়ে চোখ মুছছে আর বিলাপ পারছে….

ইলা;; দাদুভাই রে কোথায় চলে গেলি তুই। এখানে যে আমরা কেউ ভালো নেই তোকে ছাড়া। তোর আইরাত তো তোকে ছাড়া এক বদ্ধ পাগল হয়ে গেছে।

এভাবেই সেই রাত কেটে যায়। ফজরের আজান দিলে ইলা নামাজ পরে বাইরে আসে। রান্নাঘরে টুকটাক কিছু শব্দ পেয়ে ইলা সেদিকে এগিয়ে যায়। গিয়েই দেখে আইরাত রান্নাঘরে হাতে ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এটা দেখেই ইলার চোখ গুলো বড়ো বড়ো হয়ে গেলো। ইলা দ্রুত আইরাতের কাছে যায়। ইলা কিছু বলতে যাবে তার আগেই আইরাত বলে…..

আইরাত;; চিন্তা করো না মরবো না। মরার জন্য ছুরি হাতে নেই নি আমি। সবজি কাটবো তাই।

ইলা;; বাড়িতে কত্তো স্টাফ আছে। ওরা থাকতে তুই কেনো করবি?

ইলার কথা শুনে আইরাত মলিন হেসে তার কাছে যায়।

আইরাত;; আব্রাহাম থাকা কালে সে রান্নাঘরে আসতে বারণ করতো আর এখন তুমি করছো।

ইলা;; বের হয়ে আয় স্টাফ করে দিবে।

আইরাত;; না নিজের হাতেই বানাই।

ইলা আর না করে না আইরাতকে। থাক এতে যদি একটু ভালো লাগে ওর।

আইরাত রান্না শেষ করে টেবিলের ওপর রাখে। আইরাত যখন টেবিলে খাবার রাখতে যায় তখন আব্রাহামের চেয়ার টা আইরাতের চোখে তীর্যক ভাবে বাধে। আব্রাহাম সবসময় এই চেয়ারেই বসতো। এখনো আইরাতের মনে হচ্ছে যে যেনো আব্রাহাম সেই চেয়ারেই বসে বসে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছে।

ইলা রনিত আর আইরাত এসে টেবিলে বসে। আজ কত্তোদিন পর তারা একসাথে বসে বসে খাচ্ছে। কিন্তু তবুও ফাকা। আব্রাহামের জায়গা টা ফাকা। মানুষ টা আজ নেই। আইরাত মাথা নামিয়ে আস্তে আস্তে খাচ্ছিলো। হঠাৎ টুপ করেই তার চোখ দিয়ে পানি পরে যায়। হাফ খেয়ে আইরাত উঠে চলে যায়। রান্নাঘরে গিয়ে জোরে জোরে দম ছাড়ছে। নিজের চোখের পানি গুলো মুছে ফেলে। আইরাত এসে আবার হলরুমে বসে। তারপর কি যেনো একটা ভেবে রাশেদ কে ফোন দেয়। তবে রাশেদ কে ফোন দিতেই আইরাত যা শুনে তাতে আইরাতের মাথায় আগুন না শুধু একদম আগুনের জুয়ালামুখি ফেটে পরে।





চলবে~~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here