হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম #নুুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_২৩

0
680

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৩
বাড়িতে যাওয়ার পর প্রিয়া জারিফকে বসার ঘরে রেখেই দৌঁড়ে নিজের রুমে গিয়ে গোঁছগাছ শুরু করেছে। অগোছালো রুমটা দেখলে কেউ বলবে না এটা কোনো মেয়ের রুম! জলদি করে দশ মিনিটের মধ্যে রুমটাকে একটু গুঁছিয়ে প্রিয়া বসার ঘরে যায়। এদিকে প্রিয়ার মা অনেক খাবার দিয়ে টেবিল সাঁজিয়ে ফেলেছে। কিছু বানিয়েছে আবার কিনেও এনেছে। দুই পদের সেমাই, পায়েস, চিকেন রোল, নুডুলস, পাকোড়া, হালিম আর কিনে এনেছে, ছানা মিষ্টি ও কালোজাম। প্রিয়া বসার ঘরের টেবিলের উপর খাবারের পদ দেখে ভিমড়ি খাওয়ার মতো অবস্থায়। এই একা ব্যাক্তি এতো খাবার খাবে কিভাবে! আকদের দিন খাবারের পদ আরও থাকলেও তখন মানুষও সেরকম ছিল। প্রিয়া ভাবলো জারিফের সাথে একটু ফা*জ*লামি করবে। যেই ভাবা সেই কাজ। জারিফের সামনে গিয়ে খাবারের প্লেটগুলো এগিয়ে এগিয়ে দিচ্ছে। জারিফ প্রিয়ার দিকে এক পলক তাকালো। দৃষ্টিতে তার অসহায়ত্ব। প্রিয়ার কেনো জানি হাসি পাচ্ছে। সে বলে,

“স্যার আর কিছু লাগবে? হালিমটা নিন।”

জারিফ পায়েস খাচ্ছিলো। প্রিয়া জোর করে জারিফের হাতে হালিমের বাটি তুলে দেয়। বেচারা জারিফ দুপুরে লাঞ্চ করেই ভরপেট ভার্সিটি থেকে বেরিয়েছিল। এখন তার অবস্থা “ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি!”। প্রিয়া মুখ টিপে হাসছে।

________

মুন্নি সেই দুপুর বারোটা থেকে জারিফের রুমের সামনে এক ধ্যানে বসে আছে। নাওয়া খাওয়া সব তার আজ আকাশে! সবাই বলে গেছে কিন্তু তার হেলদোল নাই। এখন বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। তামান্না মাগরিবের নামাজ পড়ে এসে মুন্নিকে সেই স্থানেই বসে থাকতে দেখলো। তামান্না ভেবে পেলো না, মেয়ে কী করে এভাবে বসে আছে! একগুঁয়েমি আসছে না! পরক্ষণেই মনে হলো, প্রেমের টানে মানুষ বেঁহুশও হয়! তামান্না এবার দাঁত কে*লিয়ে হেসে মুন্নির পাশে গিয়ে বসলো। মুন্নি নিজের পাশে কারও উপস্থিতি বুঝে তাকালো তারপর মলিন হাসলো। তামান্নার খারাপও লাগলো কিন্তু একজনের জন্য আরও দুইটা জীবন নষ্ট হোক তা তো হতে দেওয়া যায় না। জারিফকে ভুলে থাকতে পারলে মুন্নির নিজের জন্যও ভালো। তামান্না দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

“তুমি অপাত্রে ভালোবাসা দান করছো মুন্নি। লাইক ব্ল্যাকহোল। যেখানে তুমি যা দেও তা কখনও ফিরে আসবে না। একসময় তুমি এতোটা মানসিক যন্ত্রনাতে ভুগবে যে বেঁচে থাকার ইচ্ছেটাই ম*রে যাবে।”

মুন্নি হেসে বলল,
“আমার কী ইচ্ছে হয় আমি নিজেও বুঝি না। সকালে ওসব কেনো করলাম আমি নিজেই বুঝতে পারতেছি না। এই যে এখানে বসে আছি কেনো সেটাও বুঝতেছি না। জারিফ ভাইকে মন ভরে দেখতে ইচ্ছে করে। খুব কাছ থেকে।”

তামান্না ভাবলো,
“এখন কিছুটা সুস্থ মস্তিস্কে আছে তাই কথাটা বলে দিলে পাগলামী করবে না হয়তো। কান্না করবে তারপর যদি একটু বোঝে।”

তামান্না শেষমেশ বলেই দিলো,
“আজকে জারিফের অপেক্ষায় থেকে লাভ নেই।”

মুন্নি তামান্নার দিকে ঘুরে বসে বলল,
“ঠিক বুঝলাম না ভাবী। লাভ নাই কেনো?”

“কারণ সে আজকে আসবে না।”

মুন্নি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আসবে না তো কোথায় যাবে? আর সে আসবে নাই বা কেনো?”

তামান্না এবার খুব আয়োজন করে জবাব দিবে বলে প্রস্তুত হলো। উৎফুল্লিত হয়ে বলল,
“আজ সে তার শ্বশুরবাড়িতে গিয়েছে। আকদের পর আজকেই গিয়েছে। প্রিয়ার সাথে ভার্সিটি থেকেই একসাথে প্রিয়াদের বাড়িতে গেলো। গতকালকেই যেতো কিন্তু প্রিয়া একটু ফ্রেন্ডদের সাথে ঘুরতে গিয়েছিল বলে হয়ে উঠেনি। এখন বউ ছাড়া যাওয়াটা তার কাছে বেমানান লাগে বলে কথা।”

মুন্নির হৃদয়ে যেনো কেউ ছু*ড়ি*র দিয়ে আ*ঘাত করে ক্ষ*তবি*ক্ষত করছে। এতো পরিমান অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে যে সে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। চোখে নোনাজলেরা ভীড় জমিয়েছে। টুপ করে জলের ধারা অক্ষিযুগল বেয়ে গড়িয়ে পরলো। মুন্নি চোখের জল লুকাতে উঠে দৌঁড়ে গেস্টরুমের দিকে চলে গেলো। তারপর দরজা আটকে বিছানায় পরে কাঁদতে থাকে। তামান্না মুন্নির দৌঁড়ে যাওয়া, দরজা লাগানো সব দেখলো অতঃপর হতাশ নিঃশ্বাস ফেলে উঠে গেলো।

_________

প্রিয়ম আজকে একটু জলদি ছুটি নিয়ে এসেছে। সন্ধ্যার নামাজের পর বসার ঘরেই প্রিয়ার বাবার সাথে কথাবার্তাতে মশগুল। বেচারা জারিফ নাস্তা করার পর নামাজ পড়ে এখন আবার চায়ের নাস্তার খপ্পরে পরেছে। জারিফের জন্য অবশ্য প্রিয়া কফি বানিয়ে দিয়েছে।
কিছুক্ষণ পর প্রিয়ম আসলে প্রিয়ম জারিফকে তার ঘরে নিয়ে যায় আড্ডা দেওয়ার উদ্দেশ্যে। এদিকে প্রিয়ার মা প্রিয়াকে তার ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। তারপর আলমারি থেকে নিজের একটা লাল-নীল মিশেলে সিল্ক শাড়ি বের করে দেয়। প্রিয়াকে বলে,

“নামাজ পড়ে এই শাড়ি পরবি। সুন্দর করে পরিপাটি হবি। জামাই বাবা আজকে প্রথমবার থাকবে। তুই যা গ*রুর মতো থাকিস তাতে তোর দ্বারা যে কেমনে সংসার হবে আমি বুঝি না।”

প্রিয়া গোল গোল চোখ করে শাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। অবাক কন্ঠে বলে,
“এই রাতের বেলা আমি শাড়ি পরব! তাও কীনা সিল্কের শাড়ি! শাড়ি পরেই কি ঘুমাতে হবে?”

“হ্যাঁ। এই শাড়ি পরেই তোকে আজ ঘুমাতে হবে। জামাই এসেছে তো।”

প্রিয়া কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে,
“মা, আমার এমনিতেই নার্ভাস লাগছে তারউপর শাড়ি! না আমি শাড়ি পরব না। সুন্দর দেখে থ্রিপিস পরি।”

প্রিয়ার মা ধ*মকে উঠেন,
“চুপ। তোকে শাড়িই পরতে হবে। আস্তে আস্তে অভ্যাস কর শাড়ি পরা। শাড়ি পরেই থাকবি আজ। চুপচাপ নিজের ঘরে যা।”

প্রিয়া কিছু বলতে মুখ খুলবে তার আগেই ওর মা ওর হাতে শাড়ি ধরিয়ে দেয়। তারপর ঠেলে রুম থেকে বের করে দেয়। প্রিয়া শাড়িটা নিয়ে নিজের রুমে এসে বিছানায় ধপ করে বসে তারপর শাড়ির দিকে করুণ চোখে তাকাচ্ছে।

“এমনেই লোকটার সাথে এক রুমে, এক বিছানায় থাকতে হবে ভেবে এই শীতল আবহাওয়ায় আমার ঘাম ছুটে যাচ্ছে! গলা বারবার শুকিয়ে যাচ্ছে। তার সাথে শাড়ি পরলে যদি সেন্সলেস হয়ে যাই? হাত-পা যেভাবে ঘামছে, প্রেশার ফল করলো কীনা!”

নিজেই নিজের মতো কথা বলে যাচ্ছে। প্রিয়ার মা একটু আগে মেয়ের ঘরে এসে আবারও তাগদা দিয়ে গেছে তাই প্রিয়া বাধ্য হয়ে উঠে। নামাজটা পড়ে শাড়িটা পরে নেয়। তারপর হালকা করে সাঁজে। সাঁজ বলতে ক্রিম, লোশন, লিপস্টিক ও কাজল। সাঁজ শেষ হলে ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে ফেসবুকে স্টোরিও দিয়ে দিয়েছে। কিছুক্ষণ পর রাতের খাবারের জন্য গেলে প্রিয়ার বাবা-ভাই প্রিয়াকে দেখে অবাক হয় সাথে প্রশংসাও করে। কিন্তু একজন অপলক কিছু মূহুর্ত প্রিয়ার দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে ছিল। প্রিয়ার সাথে দৃষ্টি বিনিময়ের পর হালকা হেসে নিচের দিকে তাকায় আর প্রিয়া জারিফের সাথে নজরবন্ধী হওয়ায় আরও লাজুকলতার ন্যায় মিইয়ে যায়।

খাওয়া-দাওয়ার পর্ব শেষে জারিফকে রেস্ট নিতে প্রিয়ার রুমে পাঠায়। প্রিয়া বারান্দায় চেয়ারে বসেছিল। জারিফ দরজা লাগিয়ে প্রিয়াকে রুমে না দেখে ব্যালকনিতে যায়। তারপর নিঃশব্দে প্রিয়ার পাশে বসে। প্রিয়া জারিফের উপস্থিতি বুঝে লজ্জায় আরক্তিম হলো। আলো আঁধারিতে তা দৃশ্যমান হলো না জারিফের কাছে। দুই পক্ষেই চলল কিছুক্ষণ পিনপতন নিরবতা। শুধু রাতের যানবাহনের কোলাহল ও জোনাকি পোকার শব্দ ছাড়া একে অপরের নিঃশ্বাসের শব্দও শোনা যাচ্ছে না। নিরবতা ভেঙে জারিফই বলে,

“তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে কোনো হুরপরি আসমান থেকে নেমে এসেছে।”

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here