হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম #নুুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_৪৩(অন্তিম পাতা)

0
458

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪৩(অন্তিম পাতা)
“প্রিয় পিহু,
তোমার সাথে পরিচয় হয়েছিল এক বসন্তে সবুজেঘেরা পাহাড়ের কো*লে। উড়নচ*ণ্ডী তোমাকে দেখে প্রথমে বি*র*ক্তি এসেছিল। মন ভালো করার জন্য একটু নিরবতা চেয়ে ঘুরতে এসে বি*র*ক্তি যেনো পিছু নিলো এরকমটাই মনে হয়েছিল। সেই থেকে পরিচয় অতঃপর সময়ের ব্যবধানে বন্ধুত্ব ও হয়তো অদৃশ্য প্রেমও! আজ আমি বহুদূরে চলে যাচ্ছি। কিছু কারণ আছে। বলতে গেলে বংশগতিয়! আমার দাদা যেই কারণে তার শেষ সময়ে এসা*ইলে*মে ছিলেন। আমি নিজের মধ্যে সেরকম কিছু উপলব্ধি করতে পারছি বিধায় অতিসত্তর চিকিৎসা প্রয়োজনে ও সেই সাথে স্টাডির জন্য যেতে হচ্ছে। আমি চাইনা আমার কারণে আমার ফ্যামিলি, ফ্রেন্ডরা আঘা**ত পাক। তোমাকে আমি অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছি। তোমার ভালোবাসা আমাকে দ্বিতীয়বার ভালোবাসতে বাধ্য করেছে। আমি যাকেই ভালোবাসি নিয়তি তাকে আমার থেকে কেড়ে নেয়! অ*দ্ভুত না? যাইহোক, আমার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে তা নিয়ে আমি চিন্তিত নই কিন্তু আমার দাদী ভিষণ চিন্তিত। তিনি তার স্বামীর মতো আমাকেও সেই স্থানে ও সেই যন্ত্রনায় দেখতে চান না। তোমার ভবিষ্যৎ সুন্দর হোক দোয়া রইল। অনেক অনেক সুখী হও।
ইতি একজন হৃদয়হীন ব্যাক্তি!”

চিঠিটা হাতে নিয়ে শূণ্য দৃষ্টিতে চেয়ে আছে পিহু। তার ভালোবাসার জবাব এতোদিন পর পেলেও বুকের ভিতর ভালোবাসা হারিয়ে ফেলার অদৃশ্য শূণ্যতায় খাঁ খাঁ করছে। চিঠির সাথে একটা করে লাল, হলুদ, সাদা গোলাপ, বেলিফুলের মালা ও হাওয়াই মিঠাই। সাদ, রাদ, নিশি ও প্রিয়ারা দাঁড়িয়ে আছে। বন্ধুদের সবার জন্য একটা চিঠি রেখে গেছে।
“প্রিয় লাকি সেভেন!
আমরা সাতজন ভার্সিটি লাইফের দুই বছর নিজেদের ব্যাক্তিগত কোনো কারণকে বন্ধুত্বের মধ্যে আনিনি। তোদের ভীষণ মিস করব। অবশ্য আমি মিস করার মতো অবস্থায় থাকলে! জানিনা কখনও আবার দেখা হবে কীনা! তবে মনে রাখিস, আমি তোদের প্রতিটা আড্ডায় সবসময়কার মতো নিরব ভূমিকা পালন করব। যদি ফিরে আসি তবে আমি আমার লাকি সেভেনকে অটুট দেখতে চাই।
বন্ধুমহলের নিরব মানব!”

গতকাল রাত সাড়ে বারোটার ফ্লাইটে আয়ান আমেরিকা চলে গেছে। ক্রেডিট ট্রান্সফারটাও সেমিস্টার ব্রেকে করে ফেলেছে। চোখের কোণে জমা অশ্রুকণা মুছে নিয়ে পিহু চিঠিটা হাতে উঠে দাঁড়ালো। পরীকে বলল,

“আপু চলো।”

পিহু কথাটা বলে নিজে একাই সামনে অগ্রসর হলো। এরকমটা তার সাথে না হলেও পারত!

___________
কেটে গেছে চারটা বছর! আজ নাহান ও ফিহার বিয়ে! পারিবারিকভাবে পছন্দ করে বিয়ে হচ্ছে ওদের। তাদেরকে নিজেদের পছন্দের কথা জিজ্ঞেস করা হয়েছিল এবং দুজনেই জানিয়েছে এমন কোনো পছন্দ নেই। ফিহা ক্রা*স খেলেও সেসবে সে অতোটা গুরুত্বও দেয়নি এবং কারও সাথে কখনও কমিটমেন্টেও ছিল না। আর নাহান! সেই যে প্রিয়ার বৌভাতের পরেরদিন এক ঝলক রাহাকে দেখে তাকে নিয়ে ভেবেছিল! তারপরে তো ওদের দেখা-সাক্ষাত হওয়া বা যোগাযোগ হয়ে উঠেনি। নাহান পড়াশোনা করতো চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। রাহার প্রতি এক ঝলক ভালোলাগাটা আর স্থায়িত্ব পায়নি নাহানের পড়াশোনা ও যোগাযোগ না হওয়াতে। বাবা-মায়ের পছন্দে ফিহাকে বিয়ে করছে সে। বিয়ে ঠিক হওয়ার পর দুই মাস যাবত ফিহার সাথে সময় কা*টিয়ে ফিহাকে নাহানের ভালো লেগেছে। নাহান এখন মাস্টার্স শেষ করে রেজাল্ট সেরা তিনজনের মধ্যে হওয়ায় সরাসরি নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পেয়েছে। ফিহা অনার্স প্রথম বর্ষে পড়াশোনা করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েই তবে ওদের ডিপার্টমেন্টটা আলাদা।

বধূবেশে কিছুক্ষণ আগে তিন কবুল বলে নাহানের স্ত্রী হয়ে গেছে ফিহা। বিয়েতে প্রিয়ার পরিবার সহ রাহাও এসেছে। রাহাকে ফিহা ইনবা*ইট করেছে যেহেতু ফিহার সাথে রাহার যোগাযোগ আছে। রাহা এখন ইশা ও প্রিয়মের ছেলেকে কোলে নিয়ে ফিহার পাশে বসে আছে। ফিহা লাজুক কণ্ঠে বলে,

“আমার জীবনের প্রথম ক্রা*স যে আমার বর হবে এটা আমার বিশ্বাসই হচ্ছিল না। গো*ম*ড়ামু*খোর সাথেই আমি পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হলাম।”

রাহা ফিহার হাসিমাখা লাজুক মুখশ্রী দেখল। এখনি বর-কনেকে একত্রে বসানো হবে। রাহা অদূরে নাহানকে দেখে নিলো। তার প্রথম অন্যরকম অনুভূতির কারণ তো সেই মানুষটি। নাহ্! রাহা নাহানকে ভালোবাসেনি তার কারণও সেদিনের পর আর কোনো দেখা-সাক্ষাত, যোগাযোগ না হওয়া। পড়াশোনার যাঁ*তাক*লে সে ভুলেই বসেছিল। তবুও আজকে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর দেখে কিছুটা কস্ট হচ্ছে।

প্রিয়া ও তামান্নাসহ অন্যান্য ভাবীরা নাহানকে এনে ফিহার পাশে বসাল। প্রিয়া বলে,

“তো আপনাকে কি বলব বুঝতে পারছিনা। সম্পর্কে আপনি দেবর আবার ননদের বর!”

তামান্নাও প্রিয়ার সাথে তাল মিলায়। নাহান হালকা হেসে বলে,
“তাহলে আপনাদের ননদকে কী বলবেন ভাবীরা? সে কিন্তু দেবরের বউ!”

তামান্না নাহানকে চা**টা মেরে রম্যস্বরে বলে,
“ফিহার সাথে চলে চলে কি ফিহার কথার ধাঁচ আপন করেছ দেবরজি? হ্যাঁ বলো?”

সবাই হেসে ওঠে। আরেকজন ভাবী বলে ওঠে,
“তামান্না ভাবী ও প্রিয়া এইসব প্যাঁ*চে পরলেও আমরা কিন্তু পরছি না! আমরা মেয়ে পক্ষের। তাই ননদের বর হিসেবে তোমার থেকে আমরা দাবী রাখছি। দাবী মানলেই ননদ দিব।”

প্রিয়া বলে,
“আমি আর ভাবী তবে নাহান ভাইয়াকে দে*বরা*ই ডাকব! দেবর+নন্দাই=দে*বরা*ই!”

হাসির রোল পরে গেল ওদের। আনন্দ উল্লাসের মধ্যে বিয়ের সমস্ত কার্যকর্ম শেষ হলো।

রাতে প্রিয়া জারিফের জন্য বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে আছে। ওরা দেশে এসেছে এক মাসের বেশি হলো। এরইমধ্যে ফিহার বিয়ে। প্রিয়ার মাস্টার্স শেষ হওয়ার পর জারিফ তার পিএইচডি সুপারভাইজারের কাছ থেকে একটা লম্বা বিরতি চেয়ে এনেছে। এতো লম্বা বিরতি দেওয়া হয় না কিন্তু জারিফের গ্রাজুয়েশনের ইউনিভার্সটির শিক্ষক তিনি। জারিফ আজকের মতো সমস্ত কাজ শেষ করে রুমে আসল তারপর ফ্রেশ হলো। প্রিয়াকে পা ঝুলিয়ে পা না*চা*তে দেখে বলে,

“হোয়াট হ্যাপেন্ড?”

প্রিয়া মিষ্টি হাসল বিনিময়ে জারিফও। জারিফ প্রিয়ার পাশে এসে বিছানায় গা এলিয়ে দিলে প্রিয়া জারিফের বুকে মাথা রেখে শুয়ে পরে। জারিফ প্রিয়ার চুলে হাত বুলাতে বুলাতে থাকে। প্রিয়া এমতাবস্থায় চোখ বন্ধ করে বলে,

“দুইটা গুড নিউজ আছে। কোনটা আগে শুনবেন?”

“টাইপ বলো।”

“উুঁহু। ধরণ আমি নিজেই নির্ধারণ করতে পারছি না।”

জারিফ মজা করে বলো,
“তবে জিজ্ঞেস করলে যে? এক কাজ করো। টস করো।”

প্রিয়া টস করল তারপর বলল,
“পরশু আয়ান দেশে ফিরছে।”

জারিফ অবাক হয়ে বলে,
“রিয়ালি? ওয়াও! দ্যাটস অ্যা রিয়ালি অ্যামিজিং নিউজ। ছেলেটা তবে সুস্থ হলো।”

“হুম। পিহুকে কেউ এখনও জানায়নি। রাদ ও পরীর বিয়ে সপ্তাহখানেক পরে। পিহুর বাবা-মায়ের সাথে পিহুর অগোচরে সব ঠিকঠাক করা হয়ে গেছে। আয়ানের সাথে ওর বিয়ে ঠিক করে ফেলেছে দুই পরিবার। পরশুদিন সারপ্রাইজ পিহুর জন্য। তারপর রাদ ও পরীর বিয়ের দিন ওদেরও বিয়ে।”

জারিফ প্রিয়ার চুলে ঠোঁট ছোঁয়ালো। প্রিয়ার এবার লজ্জা লাগছে বিধায় আরেকটক গুড নিউজটা জারিফকে বলতে পারছে না। প্রিয়ার চুপ করে থাকা দেখে জারিফ সুধালো,

“সেকেন্ডটা বললে না?”

প্রিয়া যেনো গুঁ*টিশুঁ*টি মে** রে জারিফের বুকের ভিতর লুকালো। জারিফ কিঞ্চিত ভ্রুঁ কুঁচকালো। আবারও জিজ্ঞাসা করলে প্রিয়া একহাত দিয়ে বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ার খুলে একটা কার্ড বের করল এবং সেটা জারিফকে দিলো তারপর আবার জারিফের বুকের সাথে মিশে গেল! জারিফ ভ্রুঁ কুঁচকে কার্ডটা খুলে বিস্ময়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। তার বিশ্বাস হচ্ছে না। প্রিয়াকে নিজের থেকে সরিয়ে উঠে বসল। প্রিয়ার মুখমণ্ডল নিজের দুহাতের আঁজলাতে নিয়ে অবাক কণ্ঠে বলে,

“ইজ ইট ট্রু প্রিয়া?”

লাজুকতার ন্যায় মিইয়ে গিয়ে হ্যাঁ বোধক ইশারা করে। জারিফ খুশিতে কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। প্রিয়াকে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।

“আপনাকেই প্রথম জানালাম।”

“অ্যাই ডোন্ট নো হাউ টু রিয়াক্ট! বাট অ্যাই ফিল দ্যাট অ্যাই অ্যাম দ্যা মোস্ট হ্যাপিয়েস্ট ম্যান ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।”

প্রিয়া আচ্ছন্ন স্বরে বলল,
“এন্ড অ্যাই অ্যাম দ্যা মোস্ট হ্যাপিয়েস্ট ওম্যান ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড। কনগ্রেটস টু আস।”

নতুন সদস্যের আগমন সুখের হোক ওদের জীবনে। সবার হৃদয়ে লুকানো প্রেম পূর্ণতা ও সুখের হয়তো হয়না কিন্তু যাদেরটা হয় তারা ভাগ্যবান/ভাগ্যবতী।
সমাপ্ত

গল্পের নামের সাথে দুইভাবে মিলিয়ে আমি এন্ডিং দেওয়ার চেষ্টা করেছি। যারা প্রথম থেকে পড়েছেন তারা বুঝবেন। গত পর্বেই শেষ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু কিভাবে শেষ করব গুঁছিয়ে উঠতে পারিনি। অনেকের কাছে এটাও অগোছালো লাগতে পারে। রাহার ব্যাপারটা খারাপ লাগলেও এটাও কিন্তু এন্ডিংয়ের একটা অংশ। যাদের কাছে গল্পটা বা**জে লেগেছে তাদের জন্যও ভালোবাসা এতোদিন গল্পটা পড়ার জন্য। সেই সাথে আমি দুঃখিত আপনাদের কস্ট দেওয়াতে। আরেকটা কথা, নাটকের স্ক্রিপ্টও কোনো না কোনো গল্প!
ভুল ত্রুটি মাফ করবেন। কপি নিষিদ্ধ। আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here