এক_শহর_প্রেম💓 লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_২১

0
713

#এক_শহর_প্রেম💓
লেখনীতেঃ #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২১
সন্ধ্যার সময় বান্দবান থেকে রাদিবের মৃ*ত্যুর খবর এলো। রাদিবের পরিবারে শোকের মাতম। রাদিবের মায়ের প্রেশার ফল করে সেন্স হারিয়ে ফেলেছিল। এখন তাকে স্যালাইন দিয়ে রাখা হয়েছে। কতক্ষণ পরপর সে রাদিবের নাম নিয়ে বিলাপ করছেন। রাদিবের লা*শ আনার ব্যাবস্থা হচ্ছে দ্রুত। রুহুল আমিন বিষয়টা বিশ্বাস করতে পারছেন না। সাগরকে তৎক্ষণাৎ ফোন করলেন। সাগর তখনও খবরটা জানে না। সাগর চট্টগ্রামে তার বাড়িতে এখন। সাগর ঘুমিয়েছিল। কয়েকবার ফোনের রিংটোনে সে বিরক্ত হয়ে ফোন রিসিভ করে চিৎকার করে অকথ্য গা*লাগা-ল শুরু করে।

রুহুল আমিন প্রচণ্ড রেগে বললেন,
–তোর ঘুম আমি বের করবো। তুই না বলছিলি বান্দরবান তোর পরিচিত আছে। তাহলে রাদিব আ*ত্মহ*নন করলো কেন? জবাব দে।

সাগর হুড়মুড় করে উঠে বসে। রাদিব যে কিনা নিজের জীবন বাঁচাতে এতো বছর পালিয়ে ছিল! সে সু*ই*সা*ইড করেছে? সাগর বিস্ময়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে বলল,

–কী সব বলছেন? রাদিবের এন্টারটেইনিং এর জন্য তো সব ব্যাবস্থা করা ছিল। যা আমি নিজে হোটেল ম্যানেজারের সাথে কথা বলে করেছি। তাহলে সু*ই*সা*ইডের কারণ কী? সে তো আনন্দেই ছিল।

রুহুল আমিন বিরক্ত হয়ে ফোন কে*টে দেয়। রাদিবের পরিবার তদন্ত করতে চায় তাদের ছেলে কী আ*ত্মহ*ত্যা করেছে নাকি খু*ন হয়েছে। কিন্তু রুহুল আমিন সেখানে বাধ সাধেন। কারণ তিনি জানেন রাদিব কিছুটা হলেও মা*দকা*স*ক্ত। এখন যদি ব্যাপারটা জানাজানি হয় তাহলে আরও ঝামেলা হবে। আর রাদিব যা যা সেবন করতো তা চুলের স্যাম্পলে ৯০ দিন মা*দ*কের প্রভাব পাওয়া যায়। তাই জলদি ক*বরস্থানে নিয়ে ক*বর দিয়ে দিতে চান।

…….
রাদিবের মৃ*ত্যুর নিশ্চিত খবর পেয়ে মারসাদ উচ্চস্বরে হেসে উঠে। আহনাফরা মারসাদের সাথেই। মারসাদ হোস্টেলের ব্যালকনি দিয়ে নিচের দিকে ঝুঁকে বলে,

–এল*এস*ডি কাজে দিয়েছে। জাস্ট দুইটা হাইডোজ। আর সাথে আপিলির বেশে ঘুরে বেড়ানো রমণী। রাদিব যে সামান্য হলেও মা*দ*কা*স*ক্ত তা আমি জানতাম। আজ আপিলির এক কা*লপ্রি*টের বিনাশ হলো। এখন রুহুল আমিন। তবে রুহুল আমিনকে ধরাশায়ী করতে হবে ওর অ*বৈধ ব্যাবসাতে। মা*দক ব্যাবসা। যখন পাচার করার সময় ওর ট্রাক গুলো ধরা পরবে তখন ওর কোটি টাকার লোকসান সাথে মানহানি।

আহনাফ চিন্তিত হয়ে বলল,
–তোর কী মনে হয়? সে পারবে? সে তো রাদিবের মামাতো ভাই। আমাদের সাহায্য কেনো করছে সে?

মারসাদ বাঁকা হেসে বলে,
–কারণ রাদিব তার মামাতো ভাই নিহাদের হবু স্ত্রীকে ধ*র্ষ*ণ করে হ*ত্যা করেছিল। সাথে রুহুল আমিনও যুক্ত। নিহাদ খুব ভালোবাসতো তার হবু স্ত্রীকে। সাত বছরের প্রেমের পর বিয়ে করবে ঠিক করেছিল। রাদিব ওই ঘটনার পর বিদেশ চলে গিয়েছিল অনার্সে ক্রেডিট ট্রান্সফার করে। নিহাদ ও নিহাদের বর্তমান স্ত্রী সাথি ছাড়া কেউ জানতো না। সাথি হচ্ছে কথা মানে নিহাদের সাথে যার সাত বছরের সম্পর্ক ছিল তার আপন ছোটোবোন। সাথি নিজের বোনের মৃ*ত্যুর প্রতিশোধের জন্য নিহাদকে বিয়ে করেছিল কথার মৃ*ত্যুর ৪ বছর পর। কিন্তু সব সত্যি জানার পর সাথি নিহাদের সাথে মিলে রাদিবকে শাস্তি দিতে আমাদের সাহায্য করেছে।

রবিন বলে,
–এক ন*রপ*শুর পতন হলো। তবে কথা হচ্ছে সাগরকে নিয়ে। সাগর কিন্তু রুহুল আমিনের সাথে হাত মিলিয়েছে মনে হচ্ছে। আর রাত্রিকে টোপ হিসেবে ব্যাবহার করছে। রাত্রিকে কিভাবে এসব থেকে বাঁচাবো?

মৃদুল হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
–জানি না।

ওরা পাঁচজন পরবর্তীর কাজের ছক কষতে থাকে।
……..

পরেরদিন আদিরা আহনাফের নাম্বার থেকে তার মাকে ফোন করে। আদিরার মা আদিরার কন্ঠস্বর শুনে তৃপ্তি পায়। দুইদিন সে অনেক চিন্তায় ছিল। আদিরার মা উৎকণ্ঠিত হয়ে জিজ্ঞেস করেন,

–কেমন আছিস মা? কাল ঠিকঠাক পৌঁছাইছিলি? আমি চিন্তায় ছিলাম অনেক।

আদিরা হালকা হেসে তার মাকে আশ্বস্ত কন্ঠে জবাব দেয়,
–হ্যাঁ মা। আমি ঠিকঠাক ভাবে পৌঁছেছি। বাবা ও ভাই কেমন আছে? গ্রামে কোনো ঝামেলা হয়েছিল? কালকে আমাকে ফোন করতে বারণ করেছিল যদি দেলোয়ার খোঁজ পেয়ে যায় তাই।

আদিরার মা স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলে বলেন,
–তোর বাপ, ভাই ভালো আছে। দেলোয়ার কাইল সকাল সকাল আসছিল। তারপর তোরে না পাইয়া হুমকি-ধামকি দিয়ে গেছিল। তোর বাপে বিকালে সব দেনা পরিশোধ কইরা দিয়া আসছে।

আদিরা শেষোক্ত কথায় অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
–এতো টাকা আব্বা কই পাইলো? দুই লাখ তো কম না!

আদিরার মা মেয়েকে কি বলবেন বুঝতে পারছে না। তিনি কিছু বলবেন তার আগেই আদিরার হাত থেকে মারসাদ ফোনটা নিয়ে নেয়। হুট করে এমন হওয়ায় আদিরা চমকে উঠে। মারসাদ ফোন নিজের কানে নিয়ে আদিরার মাকে বলেন,

–আন্টি আমি মারসাদ। চিন্তা করবেন না। আপনার মেয়ে একদম সুস্থ ও ঠিক আছে। আপনি কেমন আছেন আন্টি? আঙ্কেল কেমন আছেন? আর আপনার ছেলে?

আদিরার মা বুঝতে পারলেন যে মারসাদ চাইছে না আদিরা টাকার ব্যাপারে জানুক। আদিরার মা টুকটাক কুশল বিনিময় করেন মারসাদের সাথে। কথা বলা শেষে মারসাদ কল ডিসকানেক্ট করে দিয়ে আদিরাকে বলে,

–এই মেয়ে শোনো! আজকে যে তুমি এক্সট্রা বেশি সময় টিউশনে পড়াবে তো যাও তৈরি হও গিয়ে। সন্ধ্যা সাতটায় পড়ানোর সময় আজ। আমিও আজ এক্সট্রা সময় পড়াবো। জলদি যাও।

আদিরা মনের মধ্যে অসন্তোষ নিয়ে মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলো। আদিরা যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলে,

“তার কি আমাকে ধ*মক না দিয়ে কথা বললে হয় না! এমন কেনো সে? কথার প্যাঁচ কিছুই বুঝি না।”

মারসাদ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি টেনে আদিরার গমনপথে চেয়ে রয়। মারসাদ নিজে নিজে স্বগোতক্তি করে,

“দিন দিন তুমি পরিবর্তন হচ্ছো। এখন তুমি মুখে না বললেও তোমার ভাব-ভঙ্গীতে প্রকাশ পায়। বড্ড অবাধ্য যে তুমি। তাইতো তোমাকে ধমকের উপর রাখতে হয়। যেদিন তুমি আমার হিয়ার মাঝে সেচ্ছায় ডুববে সেদিন তোমার শহরে ভালোবাসার বর্ষণ ঘটাবো আমি।”

মারসাদ এক পা এক পা করে পেছোতে থাকে পকেটে দুইহাত পু’রে সামনে দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রেখে। এরপর আহনাফদের সাথে টঙের দোকানে গিয়ে পাঁচ বন্ধু সিগরেট ধরায়।

________

সাগর চট্টগ্রাম থেকে ফিরে নিলয়কে ডেকেছে। নিলয় ঢাকাতেই থাকে। সাগর বলে,
–মারসাদদের কী খবর?

নিলয় জবাব দেয়,
–রাত্রি বললো মারসাদরা নাকি চট্টগ্রাম গিয়েছিল। সেখানে এক রাত থেকে ফিরে এসেছে।

সাগর বলে,
–এসব খবর তোর রাত্রি ফেসবুক দেখে এমনেই পাবে। যা আমরাও পাবো। আর রাত্রিকে লাই দিস না। এবার রাত্রিকে দিয়ে মারসাদদের ব্যাবস্থা করতে হবে। আর কতোদিন অভিনয় করবি? কাজে লাগ এবার। মারসাদের নাম খারাপ হবে পুরো ভার্সিটিতে। সবাই ছি ছি করবে।

সাগর কথাটা বলেই হেসে উঠলো। নিলয়ের মুখে হাসি ফুটলো না। নিলয় কয়েকদিন ধরে রাত্রির প্রতি নিজেকে দুর্বল অনুভব করছে। যেখানে সে নিজেদের উদ্দেশ্যের জন্য রাত্রির সাথে অভিনয় করছিল। নিলয় মা*থা থেকে রাত্রির চিন্তা ঝেড়ে ফেলতে চাইল।

…….
ফাঁকা রাস্তায় কিছুক্ষণ পরপর একটা দুটো প্রাইভেট কার ও রিকশা দেখা যায়। আর পশ্চিমাকাশে ঈষৎ লালাভ গোধূলির আভা। দুইজন মানব-মানবী পাশাপাশি হেঁটে চলেছে। বাতাসে আজ শীতল অনুভূতি হচ্ছে। আকাশ কিছুটা কৃষ্ণ মেঘের ছায়া পরিলক্ষিত হচ্ছে। আদিরার মাথায় ওড়না দেয়াটা বারবার পরে যাচ্ছে। শুষ্ক চুলগুলো চোখে মুখে বারবার ভীড় জমাচ্ছে আর আদিরা হাত দিয়ে সরিয়ে নিচ্ছে। মারসাদ সেই দৃশ্য আঁড়চোখে অবলোকন করছে। মারসাদ ইচ্ছে করে আজ রিকশা নেয় নি। অদ্ভুতভাবে আদিরা একটা প্রশ্নও করে নি রিকশা না নেওয়াতে। দুইজন মানব-মানবীর মনে প্রথম প্রেমের অনুভূতি। মারসাদ নিজের পকেট থেকে একটা কিটকেট ও একটা ডেইরিমিল্ক চকোলেট বের করে আদিরার দিকে বারিয়ে দেয়। আদিরা হাঁটতে হাঁটতে থেমে যায়। মারসাদও থেমে যায়। মারসাদ বাঁকা হেসে বলে,

–তোমাকে রেড ও পার্পলের মিশ্রণে ঠিক এই চকোলেট দুটোর মতো লাগছে। তাই চকোলেট দুটোকে সঠিক পাত্রে হস্তান্তর করলাম।

আদিরা অবাক হয়ে বলল,
–আপনি কিসের সাথে কি মিলালেন? আপনার কথা আমি বুঝতেই পারি না।

মারসাদ সামনের দিকে অগ্রসর হয়ে বলল,
–অতো বুঝে কাজ নেই। বেশি বুঝলে তোমার ড্রাই হেয়ার আরও ড্রাই হয়ে ঝরে পরবে। কম কম বুঝবে। বুঝেছো?

আদিরা হা হয়ে গেল মারসাদের কথা শুনে। নিজের চুলে হাত দিয়ে ঠোঁট উল্টালো। শহুরে মেয়েদের মতো চুলের যত্ন সে নেয় না বলে তার কোমড় ছাড়ানো চুলগুলো শুষ্ক প্রকৃতির। তার চুল নিয়ে কিছু বলা তার পছন্দ না। সে দ্রুত পা চালিয়ে মারসাদের পাশাপাশি গিয়ে বলল,

–আপনি আমার চুল নিয়ে একটাও বাজে কথা বলবেন না। আমার চুলে আমি মায়ের বানানো খাঁটি নারকেল তেল ব্যাবহার করি। আজ শ্যাম্পু করাতে এমন উড়ছে।

মারসাদ পকেটে হাত ঢুকিয়ে হাঁটছে। আদিরার কথায় জবাব দিচ্ছে না। আদিরা ভ্রুঁ কুঁচকে হাঁটতে হাঁটতে মারসাদের জবাবের অপেক্ষা করলো কিন্তু মারসাদের নিরবতা আদিরাকে হতাশ করলো। আদিরা মুখ ফুলিয়ে চলতে লাগলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কার্টেসি ছাড়া কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here