#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৬
সকালে আয়ান হেলিপ্যাড থেকে কংলাক পাহাড়ে যাওয়ার জন্য রওনা করে। পথিমধ্যে একটা মেয়ের হাসি বারবার কানে আসছিল। যা আয়ানকে কিছুটা বিরক্ত করছিল। সেই মেয়েটার সাথেই আবার দেখা কংলাক পাহাড়ে উঠার সময়! দেখা হবেই না বা কেনো? গন্তব্য তো একই। মেয়েটা পাহাড়ের ধার দিয়ে যেমন ভাবে চলছে যেনো পাহাড়ের পথে কোনো আঁকাবাঁকা পথ নেই! একদম সরু মসৃণ কন্টকহীন পথ! মেয়েটা নিজের কোমড় পর্যন্ত লম্বা চুলে দুই বেনী করেছে সেগুলো নাড়তে নাড়তে লাফিয়ে চলছে। আয়ানকে পাশ কাটিয়ে আয়ানের সামনে গেলো। পেছোন থেকে মেয়েটার বয়সি কিছু ছেলেমেয়ে ওকে বারবার বলছে, “পরে যাবি লাফাস না!” কিন্তু মেয়েটার নাম বলছে না। আয়ান কানে এয়ারফোন লাগিয়ে নিলো। এসব তার বিরক্ত লাগছে। এসেছে শান্তির খোঁজে কিন্তু এক অশান্তি পিছু নিয়েছে। কিছু পথ হাঁটার পর দেখলো মেয়েটা হুট করে পা পিছলে পরে গেলো। পাহাড়ের ধারে একটা সরু গাছ ধরে ঝুলছে। আকস্মিক ঘটনাতে আয়ান হতবাক হয়ে গেলো। এয়ারফোনের দরুন কানে মেয়েটার চিৎকার আসছে না কিন্তু মেয়েটা যে চিৎকার করছে তা বুঝা যাচ্ছে। কান থেকে এয়ারফোন নামিয়ে মেয়েটার কাছে গেলো। মেয়েটার ফ্রেন্ডরা পেছোন থেকে ছুটে আসছে। তারা অনোকটাই দূরে। আয়ান কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তারপর হাঁটু গেড়ে বসে বলে,
“আর লাফালাফি করবে? সরি তুমি করই বললাম। কারণ তোমাকে দেখে নাইন-টেনে পড়ুয়া নিব্বিই মনে হয়! উড়নচণ্ডী নিব্বি!”
মেয়েটা একে তো ভয়ে আছে তারউপর আয়ানের অসহ্যরকমের কথাবার্তা সাহায্য না করে! কান গরম হচ্ছে তার। কখন হাত পিছলে যায়! নিচের দিকে তাকিয়ে ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। চোখ-মুখ খিঁচে নিয়ে বলে,
“আমাকে প্লিজ তুলুন। আমার ভয় করছে খুব।”
“আগে আমার কথার জবাব দেও।”
মেয়েটার আরও মা*থা গরম হচ্ছে। সে দাঁত কিড়মিড় করে বলে,
“সাহায্য করার জন্যই এসেছেন? নাকি আমার ব্যাবহার শোধরাতে! বেঁচে থাকলেই না নিজেকে শোধরাবো। দয়া করে আমাকে তুলুন তারপর আপনার কথার জবাব দিচ্ছি।”
আয়ান বাঁকা হেসে বলে,
“বা*ন্দ*রকে ঝুলন্ত অবস্থায়ই মানায়! তোমাকেও দারুন মানাচ্ছে।”
মেয়েটার এবার কান্না পাচ্ছে। গলা ছেঁড়ে কাঁদতে পারলে শান্তি লাগতো তার।
“আপনাকে তুলতে হবে না। তাও আমাকে অযথা কথাগুলো বলবেন না। আমি এখান থেকে টুকুস করে পরে আল্লাহর প্রিয় হয়ে যাব! আপনি যান এখান থেকে।”
“না না। আল্লাহর প্রিয় হতে হবে না। আমি জাস্ট আমার বিরক্তির লেভেল যাতে আর না বাড়ে সেটারই বন্দোবস্ত করছিলাম। তোমাকে টেনে তুলব তার বিনিময়ে তুমি শান্তি বজায় রেখে চলাফেরা করবে সাথে কাউকে বিরক্ত করবে না।”
মেয়েটাকে রাগে ফুঁসতে দেখে আয়ান আর কথা না বাড়িয়ে হাত এগিয়ে দেয়। মেয়েটা হাত এগুনো দেখেও ধরছে না। আয়ান ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
“কী হলো? হাত ধরো?”
“না। আপনি আমায় ফেলে দিবেন। ওইযে রাহাত, সাইফরা আসছে। ওরাই উঠাবে।”
আয়ান তাকিয়ে দেখলো, দুইটা বাচ্চা দেখতে ছেলে! ওগুলোকে বাচ্চাই লাগে দেখতে। আয়ান তাচ্ছিল্য হেসে বলে,
“ওকে! বেস্ট অফ লাক!”
আয়ান উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। এক কদম এগিয়ে আবার পিছিয়ে বলে,
“বাই দা ওয়ে, কোন ক্লাসে পড়ো?”
মেয়েটা আঁড়চোখে একবার তাকিয়ে ভাবলো, ‘একটু আগে না নিজেই বললি আমি নাইন-টেনে পড়ুয়া নিব্বি! এখন কেনো জানতে হবে আমি কিসে পড়ি! হা*রা*মি বেটা। আমি ইন্টার প্রথম বর্ষে পড়ি। তোকে বলব কেন? বলব না হুহ্! আচ্ছা বলি! তোর চিন্তা ভাবনার মধ্যে এক বালতি পানি তো পরবে!’
“ইন্টার প্রথম বর্ষ।”
“ওহ! দেখতে বাচ্চা বাচ্চাই লাগে। তোমার বন্ধুরাও নিশ্চয়ই ইন্টার প্রথম বর্ষেই পড়ে?”
“হুম।”
আয়ান কয়েক কদম বাড়ানোর পরপরই মেয়েটার বন্ধুরা এসে হাজির। এক মেয়ে অস্থীর কন্ঠে বলছে,
“রাহাত! সাইফ! পিহুকে উঠা দোস্ত।”
আয়ান এবার মেয়েটার নাম জানতে পারলো। প্রিয়াকে আয়ান মাঝে সাঝে ‘পিয়ু’ বলে ডাকতো। পিহু আর পিয়ু নামটা অনেক কাছাকাছি। আয়ানের মায়া হলো। পিহুর দুই ছেলে বন্ধু পিহুর হাত ধরে টেনে তোলার চেষ্টা করেও বিফল। পারছে না তুলতে। পিহু মিডিয়াম স্বাস্থ্যের। আর ছেলেগুলা শুকনো। ওরা পিহুকে উঠানোর চেষ্টা করছে তন্মধ্যেই আয়ান গিয়ে ছেলেগুলার সাথেই পিহুকে ধরে টান দেয়। তিনজনে মিলে পিহুকে উঠাতে সক্ষম হয়। ছেলেগুলোর মধ্যে রাহাত নামের ছেলেটা বিনয়ের সাথে বলে,
“অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।”
আয়ান বিনিময়ে হেসে নিজের পথে হাঁটতে থাকে। কংলাক চূড়ায় উঠে আয়ান মন খুলে শ্বাস নেয়। মন শান্ত শান্ত লাগছে।
এদিকে পিহু রাহাত ও সাইফকে কতেগুলো কি*ল, ঘু*ষি লাগালো কারণ তারা আয়ানের থেকে সাহায্য নিয়েছে। তনিমা বলে,
“তোকে বারবার আমরা মানা করছিলাম লাফালাফি করিস না। শুনছিস আমাদের কথা? তোর বাড়িতে যে আমরা কিভাবে রাজি করিয়েছি তা আমরাই জানি। আঙ্কেল আন্টি তোর এই স্বভাবের কারণেই একা ছাড়তে চাননা। যদি কিছু হয়ে যেতো!”
পিহু তনিমার কাঁধে কনুই রেখে বলে,
“চি*ল বেবস! কিছু হয়নি তো।”
নাইমা বলে উঠে,
“হতে কতক্ষণ? ভাইয়াটা হেল্প না করলে আমরা তোকে তুলতাম কি করে? আমার তো তোর চিৎকারে হৃৎপিন্ড বেরিয়ে যাওয়ার দশা হয়েছিল।”
রাখি বলে,
“শুধু শুধু ওকে বুঝিয়ে শব্দের অপচয় করছিস। সে কি বুঝবে!”
পিহু মুখ ভাড় করে বলে,
“তোরাও আমাকে ব*কবি! ওই লোকটাও ব*কে গেছে। আমি কি বুঝেছিলাম যে পরে যাবো!”
সাইফ ধ*মকে বলে,
“তা বুঝবি কেন! তুই কি কিছু বুঝিস? এখন যদি লাফালাফি করিস তো তোরে আমি নিজে ধা*ক্কা দিয়ে ফেলে দিব।”
পিহু ঠোঁট উলটে ধপাধপ পা ফেলে হাঁটতে থাকে।
_________
প্রিয়াকে ব্রেকটাইমে পড়তে দেখে ওর বন্ধুরা অবাক হয়ে গেছে। অর্ষা প্রিয়ার দিকে দৃষ্টি রেখে গালে হাত দিয়ে বলে,
“প্রিয়ুটার যে কোন ভূ*তে ধরলো! কোনোদিন দেখেছিস ওকে এমন সময় পড়তে?”
মিম বলে,
“স্যারকে বিয়ে করে সে পড়ার প্রতি ঝুঁকেছে।”
সাদ বাধ সেঁধে বলে,
“কালকে যে স্যার ওকে ডেকেছিল না? তখন মনে হয় পড়তে বলেছে।”
রাদ সাদকে চা*টা মে*রে বলে,
“আরে না! প্রিয়া তো এসে আমাদের সবই বলল। মনে হয় প্রিয়ু নিজেকে স্যারের সাথে তাল মেলাতে পড়াতে মনোযোগী হচ্ছে। আফটারঅল স্যারের বউ বলে কথা!”
কথাটা বলে রাদ তাচ্ছিল্য হাসলো। নিশি সেটা দেখে বলে,
“যেমনই হোক। পড়ছে তো। আর এটা কিন্তু ঠিক যে স্যারের মান-সম্মানের কিঞ্চিত দায়িত্ব প্রিয়ুরও। আর রাদ তুই দুইদিন ধরে কেমন করে যেনো কথা বলিস। কী হয়েছে তোর?”
রাদ চুপ করে থাকে। সাদ কথা কা*টাতে বলে,
“মনে হয়, প্রিয়ু স্যারের বউ আর এখন প্রিয়ু আমাদের সাথে মিশবে না এই কারণে। বাদ দে।”
প্রিয়া এবার ওদের কাছে এসে বসে তারপর বলে,
“কী হয়েছে?”
অর্ষা গালে হাত দিয়েই বলে,
“তোর নতুন রূপে আমরা অভিভূত। জারিফ স্যার তোকে কি থেকে কি বানিয়ে দিলো!”
প্রিয়া হেসে বলে,
“দেখ, আমি চাইনা আমার কারণে উনি লজ্জিত হোক। মোটামোটি একটু ভালো করতে পারলেও হবে। আগে দেদারসে তোদের খাতা দেখতে পারলেও এখন অনেক লুকিয়ে চুরিয়ে দেখতে হবে। উনার মান-সম্মানের বিষয়।”
নিশি, মিম, অর্ষা ও সাদরা সম্মতি প্রকাশ করে। রাদকে চুপ থাকতে দেখে সাদ ওকে টেনে নিয়ে গিয়ে বলে,
“একজনের জন্য অন্য বন্ধুত্বগুলো নষ্ট করিস না। আয়ান নিজেও প্রিয়ার সাথে নরমালি কথা বলবে দেখিস। জানি তোর আয়ানের জন্য বেশি খারাপ লাগছে কিন্তু এতে প্রিয়ুর কি দোষ বল? নিয়তিতে ছিল এটাই। বি নরমাল দোস্ত।”
রাদের মৌন সম্মতি পেয়ে সাদ ওকে নিয়ে আবার আড্ডাতে ফিরে আসে।
এদিকে জারিফের আজ টানা তিনটা ক্লাস। সে তিনটা ক্লাস করে খুব ক্লান্ত। প্রিয়ার সাথে আজ দেখাও হয়নি। গ্রাউন্ডে প্রিয়া বাদে বাকিদের দেখেছে কিন্তু প্রিয়াকে দেখেনি। ভাবলো প্রিয়াকে মেসেজ করবে। কিন্তু আবার ভাবছে করবে না। পরে আর করলোই না। লাঞ্চ শেষ করে চেয়ারপার্সনের সাথে কথা বলে বাড়ির জন্য রওনা করলো। যাওয়ার পথেও প্রিয়াকে দেখেনি। প্রিয়া হয়তো আজ আসেনি এটাই ভেবে নিলো। শেষে মনের সাথে যুদ্ধ করে টেক্সট করেই ফেলল,
“কোথায় তুমি?”
প্রিয়া তখন বাসে। কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে। মেসেজটা সে আর দেখলো না। কারণ প্রিয়া সব কল ও মেসেজের নোটিফিকেশন অফ করে রেখেছে গান শোনার জন্য।
চলবে ইনশাআল্লাহ্,
আমি প্রতিদিন গল্প দিতে পারছি না এখন। ক্লাস করে এসে সবসময় লেখার মন থাকে না। সপ্তাহে চার-পাঁচটা করে দেওয়ার চেষ্টা করব। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।