#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৮
“আপনি ছিলেন তো বাঁচানোর জন্য!”
আয়ান খানিকটা হকচকিয়ে উঠলো তারপর পিহুর বাচ্চা স্বভাবের কথা ভেবে বলল,
“এমন ভাবে বলছ যেনো তুমি স্লিপ করেছই যাতে আমি তোমাকে উঠাই!”
কথাটা বলেই আয়ান হেসে ফেলে। পিহু এই আলো আঁধারিতে হাস্যজ্বল পুরুষটিকে মুগ্ধতার নজরে দেখছে। সকালে যখন হেলিপ্যাডের জন্য রওনা করেছিল তখনই আয়ানের উদাস দৃষ্টি পিহুর নজর কেড়েছিল। এরপর তো কতোকিছু হয়ে গেলো। ষোল বছরের জীবনে সে অনেক ক্রাশ খেয়েছে তবে সবগুলোই সেলিব্রেটি। এই প্রথম কারও উদাস দৃষ্টিতে মুগ্ধ হয়েছে পিহু।
পিহুকে পলকহীন তাকিয়ে থাকতে দেখে অপ্রস্তুত হলো আয়ান। হালকা কেশে নিয়ে বলে,
“আমোদপ্রিয় জীবনে সবকিছুতে আকর্ষণ কাজ করে। তাই নয় কি?”
পিহু হালকা হাসলো। তারপর বলল,
“দুঃখকে পাত্তা না দিলে আপনিও আমার মতো আমোদপ্রিয় হতে পারবেন।”
“বাচ্চাদের মুখেও গম্ভীর্যতা পূর্ণ কথা। ইমপ্রেসিভ। বাই দা ওয়ে আমি আয়ান মাহমুদ। একটা প্রাইভেট ইউনিভার্সটির বায়োকেমিস্ট্রির ফার্স্ট ইয়ার সেকেন্ড সেমিস্টারে পড়ি।”
পিহু মুচকি হেসে বলে,
“আমি পিহু সরকার। ইন্টার প্রথম বর্ষে বিজ্ঞান শাখাতে পড়ি। আমি আপনার দুই ক্লাসের ছোটো।”
আয়ান নাকচ সুরে বলে,
“উহু। তিন ক্লাস। আমি এক বছর পর ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছি।”
“ওহ। তা ভার্সিটির নাম কী?”
আয়ান ভার্সিটির নাম বলে তারপর পিহু বলে,
“আপনি গিটার বাজাতে পারেন তো গান গাইতে পারেন না?”
আয়ান গিটারের তারে টুংটাং করে বলে,
“কিছুটা। তবে সুর হয় না। গান শুনতে পছন্দ করি।”
পিহু একটু উৎসুক হয়ে বলে,
“আপনি গিটার বাজান। আমি একটা গান ধরি। অতোটাও ভালো গাই না কিন্তু আপনার কানের পোঁকা ম*র*বে না তা সম্পর্কে গ্যারান্টি দিতে পারি।”
আয়ান আবারও হেসে ফেলল সাথে পিহুও। তারপর আয়ান গিটার বাজায় আর পিহু গান গায়।
তোমার ইচ্ছে গুলো, ইচ্ছে গুলো
“তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে হলে, আমায় দিতে পারো।
আমার ভালো লাগা, ভালোবাসা তোমায় দেবো আরো (2)
তুমি হাতটা শুধু ধরো,
আমি হবো না আর কারো (2)
তোমার স্বপ্ন গুলো আমার চোখে হচ্ছে জড়সড়!”
(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন।)
গানটা শেষ হলে আয়ান পিহুকে বলে,
“তুমি দারুন গান গাও। অনেক রাত হলো। অ্যাই থিংক ইউ শুড গো।”
পিহু খানিকটা মন খারাপ করলো কিন্তু হয়তো আয়ান একটু একা থাকতে চাইছে তাই বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। আয়ান পিহুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,
“একদিনের পরিচয় মাত্র। আগামীকালই তুমি তোমার রাস্তায় আর আমি আমার রাস্তায়। এতোটা এডিক্ট হবে না। সময়ের নিয়মে তোমার বাচ্চামন ঠিক কন্ট্রোল হয়ে যাবে।”
আয়ানও নিজের রুমে চলে যায়। কাল সকাল ছয়টার গাড়ি ঠিক করিয়েছে হোটেল ম্যানেজারকে দিয়ে। তারপর চট্টগ্রাম থেকে প্লেনে করে ঢাকা যাবে।
__________
প্রিয়া রাত এগারোটা পর্যন্ত পড়লো। আগামী সপ্তাহে মিড১ পরীক্ষা শুরু। এগারোটার পর ফোন হাতে নেয়। তারপর একটু ফেসবুক, মেসেঞ্জারে ঢুকে। জারিফের আইডি সার্চ করে। আইডি লক করা না। তারপর ফটো অপশনে গিয়ে ছবি দেখতে থাকে। তবে ছবি খুব কম। পোস্টও কম। প্রিয়া নিজে নিজেই বলে,
“লোকটা মনে হয় পাবলিক করে পোস্ট কম দেয়। তাকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিলে কি কিছু মনে করবে?”
নিজের উপরই বিরক্ত হয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে রিকুয়েস্ট দিয়ে ফেলল অতঃপর স্বগোতক্তি করে বলে,
“আমার বিয়ে করা বর! আমি তার ফ্রেন্ড লিস্টে কেনো থাকব না! হুহ!”
তারপর আবার ফেসবুক স্ক্রোল করতে শুরু করে। পাঁচ মিনিট, দশ মিনিট পার হয় আর প্রিয়ার মনে অস্থীরতা বেড়েই চলেছে। জারিফ এখনও ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করছে না। ফোনটা বিছানায় রেখে রুম জুড়ে পায়চারি করে এসে আবার ফোনটা হাতে নেয়। নাহ্! এখনও করছে না। আবার পায়চারি করে এসে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে ফোনটা নিয়েই প্রিয়মের রুমের দিকে ছুটে। প্রিয়মের দরজায় নক করলে প্রিয়ম দরজা খুলে দেখে প্রিয়া। প্রিয়মকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রিয়া অভিযোগের কন্ঠে বলে উঠে,
“আমাকে যে তখন ব*কে গেলি! যা এখন নিজের বন্ধুকে ব*ক! আমি নাহয় ফোনের দিকে নজর দেইনি। সে কী করে? খা*রু*স কাহিকা!”
প্রিয়ম অবাক হয়ে প্রিয়ার দিকে তাকায়। প্রিয়া গটগট করে চলে যায়। প্রিয়ম মাথা চুলকে দরজা লাগিয়ে জারিফকে ফোন করে। তিন বার রিং হওয়ার পর জারিফ রিসিভ করে। প্রিয়ম বলে,
“এই তোর বউ রেগে আছে কেন?”
জারিফ ব্যাপারটা না বুঝে বলে,
“মানে? আমি কীভাবে বলব? তোর বোন কেনো রেগে আছে সেটা তুই জানবি।”
“সে তো তোর উপর রেগে আছে। তুই জানবি। বিয়ের সপ্তাহ না পেরোতেই বউকে রাগিয়ে দিছো বন্ধু! কপাল খারাপ তোমার।”
জারিফ অবাক হয়ে বলে,
“আমি আবার কী করলাম! আমি তো কাজ করছিলাম।”
প্রিয়ম সন্দিহান হয়ে বলে,
“তাহলে এই পা*গলী রেগে গেলো কেনো? একটু ফোন চেক কর তো। ফোন বিষয়ে বলেছিল।”
জারিফ চেক করে প্রথমে কল লিস্ট। তার মনে পরে, সে তো রিংটোন অফ করে রাখেনি। তারপর মেসেজ লিস্ট চেক করে তারপর হোয়াটসএপে। শেষে গিয়ে ফেসবুক চেক করে দেখে প্রিয়ার ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পঁচিশ মিনিট আগে। জারিফ হেসে দেয়। প্রিয়মকে বলে,
“তোর বোন ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিয়েছে তাই মনে হয়।”
প্রিয়ম মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“এজন্য এমন করতে হয়! যা একসেপ্ট কর।”
“তুই ওকে বকেছিস কেনো? সে সিক ছিল বলেই চেক করেনি।”
প্রিয়ম ভাব নিয়ে বলে,
“আমার বোন আমি বকেছি। সো আমাকে তুই কিছু বলতে পারবি না।”
দুই বন্ধু হাসি-ঠাট্টাতে ফোনালাপ শেষ করে। জারিফ এবার নিজেই প্রিয়াকে মেসেজ করে বলে,
“সরি অ্যাই ওয়াজ বিজি। এনিথিং সিরিয়াস?”
প্রিয়া জারিফের মেসেজ দেখে চোখ বড়ো বড়ো করে ফেলে। জারিফ এমন মেসেজ করেছে মানে নিশ্চয়ই তার ভাই জারিফকে কিছু বলেছে। প্রিয়া লজ্জায় আড়ষ্ট হলো। কি রিপ্লাই দিবে ভেবে ভেবে শেষে লিখল,
“নাথিং স্যার।”
মেসেজ সেন্ড হতে দেরি কিন্তু প্রিয়ার নেট অফ করতে দেরি নাই। জারিফ প্রিয়ার রিপ্লাই দেখে আনমনে হাসলো তারপর লিখল,
“কাল সকাল সাড়ে আটটায় তোমার ক্লাস? বাস স্ট্যান্ড থেকে একসাথে যাবো। সাড়ে সাতটায় সেখানে থাকবে।”
প্রিয়া ইতোমধ্যে কম্বল মুড়ি দিয়ে দিয়েছে। তার ভাইটা যে দুই কূলেই ভীরে সেটা প্রিয়া ভুলেই গিয়েছিল। একদিকে বোন আরেকদিকে বেস্টফ্রেন্ড। ঘুমানোর চেষ্টা করল কিন্তু মনে অস্থীরতা থাকলে কী আর ঘুম আসে! হাসফাস করে উঠে বসল কিছুক্ষণের মধ্যে তারপর নেট অন করে জারিফের মেসেজ দেখে খানিক লজ্জা পেলো। ফিরতি আর কোনো মেসেজ না করে বান্ধুবীদের সাথে কথা বলায় লেগে পরলো।
________
সকালবেলা প্রিয়া একটা সাদা জর্জেটের থ্রিপিস পরে অন্য দিনের তুলনায় একটু বেশি পরিপাটি হলো। আজ তার ঘুমও অনেক জলদি ভেঙেছে। ফজরের আজানের আগেই ঘুম ভেঙেছে। শীতকালে তো আর শাল ছাড়া বেরোনো যাবে না। সে এখন নিজের হালকা গোলাপি শালটা খুঁজছে। সেটা গায়ে জড়িয়ে মাকে বলে বেরিয়ে গেলো। বাস স্ট্যান্ডে রিকশা দিয়ে গিয়ে দেখে জারিফ গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো। প্রিয়া জারিফের সামনে গিয়ে সালাম দেয়। জারিফও সালামের জবাব দেয়। প্রিয়া জিজ্ঞেস করে,
“জায়ান ভাইয়া গাড়ি দিয়ে যায় না?”
“ভাইয়াকে অফিস থেকে রাইড দিয়েছে। আগেও দিয়েছিল। ভাইয়া সবসময় ইউজ করতো না। এখন করে।”
প্রিয়া হালকা হাসে তারপর ব্যাক সিটে জারিফের সাথে বসে। আধঘণ্টা পর প্রিয়াকে আগে এক জায়গায় নামিয়ে দিতে বলে প্রিয়া। জারিফ প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে কারণ বুঝতে চাইলে প্রিয়া বলে,
“ভার্সিটির কেউ দেখলে এটার অন্য মানে বের করবে। দ্যাটস হোয়াই।”
জারিফ আর আপত্তি করে না। প্রিয়া নিরাপদ দূরত্বে নেমে যায় আর জারিফ চলে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ্,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।