#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৯
প্রথম ক্লাসটা করে প্রিয়ারা ক্যাম্পাসে বসলো হাতে লেমোনেট নিয়ে। তখন এক সিনিয়র এসে দাঁড়ায় ওদের কাছে। ওরা ছয়জন তাকে সালাম দিলে তিনিও সালাম নেন তারপর তিনি বলেন,
“কেমন আছিস তোরা? আর নিশি, মিম, অর্ষা, প্রিয়া তোমরা কেমন আছো?”
মিম জোরপূর্বক হেসে বলে,
“আলহামদুলিল্লাহ্ ভাইয়া আমরা সবাই ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন?”
“আমিও ভালো আছি। আজকাল কী দিনেও তারা দেখা যাচ্ছে নাকি?”
সিনিয়র ভাই শাফিনের হেয়ালিপূর্ণ কথায় ওরা ছয়জনেই কনফিউজড হয়ে তাকায়। সাদ বলে,
“ভাই, তারা তো রাতে দেখা যায়।”
শাফিন সাদের পিঠ চাঁ*পড়ে বলে,
“আরে পা*গলা! তারা বলতে কি আকাশের তারা বুঝিয়েছি নাকি! প্রিয়াকে আজ অন্যদিনের তুলনায় একটু বেশি সুন্দর লাগছে। তারকারাজির ঝলমলে তারা।”
প্রিয়ারা অবিশ্বাসের নজরে তাকায় শাফিনের দিকে। শাফিন তা দেখে বলে,
“সুন্দরকে সুন্দর বলা উচিত। এতে দোষের কিছু নেই। তারাদের রাণীর মতো লাগছে তোমাকে প্রিয়া।”
প্রিয়ার মাথা ঘুরছে। মিম বিড়বিড় করে বলে,
“অন্যের বউকে এতো রসিয়ে রসিয়ে সুন্দর বলিস! লজ্জা করে না তোর!”
নিশি মিমকে ঠেলে বলে,
“চুপ কর। সে একটু ফ্লার্টিং করছে করতে দে। একটু ডান সাইডের উপরে তাকা।”
মিম নিশির কথা মতো উপরে তাকিয়ে দেখে চারতলায় জারিফের অফিস রুমের জানালার কাছে জারিফ দাঁড়িয়ে আছে। শাফিন যে প্রিয়াকে নিয়ে কথা বলছে তা সে শুনতে না পেলেও বুঝতে পারছে। কেমন গম্ভীর ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। মিম নিশির দিকে তাকিয়ে কনফিউজড হয়ে বলে,
“স্যার কি সব শুনছে? মনে তো হচ্ছে শুনছে না। সে গম্ভীর ভাবে দাঁড়িয়ে আছে কেনো? আর দৃষ্টি যেনো প্রিয়া আর শাফিন ভাইয়ার দিকেই স্থীর!”
নিশি বাঁকা হেসে বলে,
“না শুনলেও শাফিন ভাই যেমন অঙ্গভঙ্গি করে কথা বলছে তা দেখে স্যার ঠিকই বুঝতে পারছে। স্যার জেলাস হচ্ছে রে!”
মিম আর নিশি দুজনেই মিটমিট করে হাসতে থাকে। ওদের হাসতে দেখে অর্ষা ইশারায় জিজ্ঞেস করলে ওরা জারিফ স্যারের দিকে ইশারা করে তারপর অর্ষারও হাসি পেয়ে যায়। শাফিন আরও কিছুক্ষণ কথা বলে চলে যায়। শাফিন গেলে প্রিয়া হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। অর্ষা বলে,
“বান্ধুবী! উপরে তো দেখো।”
“কী?”
“চারতলায় তো দেখো।”
প্রিয়া চারতলায় তাকালে দেখে জারিফ দাঁড়ানো। প্রিয়াকে তাকাতে দেখে জারিফ পর্দা টেনে দেয়। প্রিয়া বোকার মতো নিশিদের দিকে তাকালে নিশি বলে,
“স্যার মেবি জেলাস। দশটা না পাঁচটা না তার একটা মাত্র সুন্দরী বউ বলে কথা! সেটাকেও এখন মানুষের নজর লেগে যাচ্ছে।”
ওরা পাঁচজন হেসে উঠে। প্রিয়া ঠোঁট উলটিয়ে বসে রয়।
__________
জারিফের ক্লাসে জারিফ সবার আগে প্রিয়াকেই পড়া ধরে। প্রিয়া জবাব দিতে গিয়ে একটু আধটু আটকে গেছে। জারিফ বলে,
“ইজি পড়া ছিল এটা। এটা বলতেও এভাবে আটকানো লাগে! মনোযোগ নেই পড়াতে একদম। আরও পড়তে হবে।”
প্রিয়া মন খারাপ করে বসে পরে। একটু ঠেকে গেছে বলে এভাবে বলবে! প্রিয়া মনে মনে বলে,
“কই? ওই সাহারাকেও পড়া ধরতেছে। সাহারা তো আমার থেকেও বেশি আটকেছে। সাহারাকে তো এমন করে বলল না! খ*বি*স কাহিকা। সব ব*কা-ঝকা আমার জন্য! হুহ্!”
প্রিয়া রাগ করে জারিফের দিকে আর একটাবারের জন্যও তাকায়নি। জরিফ এক দুইবার তাকিয়েছিল কিন্তু কিছু বলেনি। এটুকু বুঝেছে তার বউয়ের রাগ হয়েছে।
__________
আজকের মতো প্রিয়া ও জারিফের ক্লাস শেষ। জারিফ প্রিয়াকে মেসেজ করে যেনো কিছুটা সামনে এগিয়ে দাঁড়ায়। প্রিয়া মেসেজ দেখে গাল ফুলিয়ে রেখেছে। লোকটা কেমন যেনো! একবার ভাবে, দাঁড়াবে না। চলে যাবে। আবার ভাবে, এখন চলে গেলে সে জারিফকে বুঝাবে কী করে যে সে রাগ করেছে? তাই সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। পাঁচ মিনিট দাঁড়ানোর পর মেসেজ আসে,
“রাস্তার অপজিট পাশে আসো।”
প্রিয়া রাস্তার ওইপাশে কেনো যাবে তাই বুঝলো না। বাড়িতে যেতে তো এই পাশ দিয়েই যেতে হয়! প্রিয়া লিখল,
“কেনো? কোথায় যাবেন? বাড়িতে তো এই পাশ দিয়েই যেতে হয়।”
জারিফ লিখল,
“জানি আমি। রাস্তার অপজিট পাশে আসতে বলেছি নিশ্চয়ই কারণ আছে। জলদি দেখে শুনে আসো।”
বাধ্য হয়ে প্রিয়া রাস্তার অপরপাশে গেলো। সেখানে জারিফের গাড়ি একটু সাইড করে রাখা। প্রিয়া গাড়ির কাছে গেলে ফ্রন্ট সিটের দরজা খুলে দেয় জারিফ। ড্রাইভিং সিটে জারিফ বসা। প্রিয়া অবাক হয়ে বলে,
“ড্রাইভার আঙ্কেল কই?”
জারিফের ভাবলেশহীন গম্ভীর জবাব,
“তাকে যেতে বলে দিয়েছি। উঠো।”
প্রিয়া উপায়ন্তর না পেয়ে উঠে বসলো। প্রিয়া উঠে বসার পর জারিফ দেখলো প্রিয়ার মাঝে সিটবেল্ট বাঁধার তাগদা নেই তাই নিজেই বেঁধে দিলো। প্রিয়া জারিফের হুট করে কাছে আসাতে কিছুটা অপ্রস্তুত হলো। সিটবেল্ট বেঁধে জারিফ সরে যায় তারপর গাড়ি স্টার্ট করে। গাড়ি মোড় ঘুরে এসে বাড়ির পথ ধরে। প্রিয়া এবার বুঝলো ওইপাশে যাওয়ার কারণ কী ছিল। এইপাশে তো ভার্সিটির কয়েকজন দাঁড়ানো তাই অপরপাশে যাওয়া।
কিছুটা পথ যাওয়ার পর জারিফ বলে,
“তোমার সামনের কেবিনেটটা (গাড়ির ফ্রন্টে কিছু রাখার মতো জায়গা) খুলো।”
প্রিয়া জারিফের দিকে তাকিয়ে কেবিনেটটা খুলতে অগ্রসর হলো। কেবিনেটটা খোলার পর যে এতোটা অবাক হবে তার ধারণাও ছিল না। কেবিনেটের ভিতর একটা বক্সে কতোগুলো চকলেট রাখা। প্রিয়াতো খুশিতে আটখানা অবস্থা। চকলেট বক্সটা নিয়ে জারিফকে খুশিতে ডগমগ হয়ে বলে,
“এটা আমার?”
“কেনো? তোমার নিতে ইচ্ছে হচ্ছে না? না ইচ্ছে হলে রেখে দেও।”
নিমিষেই প্রিয়ার মনঃক্ষুণ্ণ হলো। এমন ত্যাড়া কথা বলছে কেনো লোকটা? প্রিয়ার অভিমান হলো। বক্সটা যথাস্থানে রেখে দিলো তারপর বুকে হাত গুঁজে জানালার দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইল। জারিফ এক পলক অভিমানীনির অভিমান দেখে নিঃশব্দে হাসলো অতঃপর নিজেই এক হাতে স্টেয়ারিং ধরে বক্সটা বের করে প্রিয়ার কোলের উপর রেখে বলল,
“তুতুলেরটা ব্যাক সিটে রাখা আছে। আর গাল ফুলিয়ে থাকতে হবে না। এই চকলেটগুলো তোমার জন্যই।”
প্রিয়ার মনে খুশিরা ডানা মেলেছে। জানালার দিকে তাকিয়েই মুখ টিপে হাসলো। সে চাইছে না জারিফ এই হাসিটা দেখুক। জারিফ বুঝোক, তার অভিমান এখনও পানি হয়নি। জারিফ বলল,
“গাল ফুলালে তোমার গালগুলো রেড চেরির মতো লাগে।”
প্রিয়া দ্রুত জারিফের দিকে ফিরলো। নয়নযুগল গোল গোল করে জারিফের দিকে দৃষ্টি স্থীর রেখেছে। জারিফ আনমনে হাসলো অতঃপর বলল,
“চেরি ফলটা আমি খেতে অতোটা লাইক করতাম না কিন্ত দেখতে দারুন লাগে। এটা পাঁকার পর যখন সাওয়ারনেসটা কমে তখন ভালো লাগতো।”
প্রিয়া কিছু বলল না। বক্স খুলে চকলেট খেতে শুরু করেছে। প্রিয়াকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে জারিফ চলে যেতে উদ্যত হলে প্রিয়া বলে,
“বাসায় আসেন।”
“আজকে না। অন্য কোনোদিন।”
“আম্মু জানলে কস্ট পাবে। আপনি বাসার বাহির পর্যন্ত এসে ভিতরে আসলেন না।”
জারিফ হাসলো তারপর বলল,
“বলবে কাজ পরে গিয়েছিল। আমাকে এখন ব্যাংকে যেতে হবে। আর্জেন্ট।”
প্রিয়া আর কিছু বলল না। জড়তা কাজ করছে তার। জারিফ গাড়ি নিয়ে চলে গেলে প্রিয়াও বাসায় ঢুকে।
_________
সন্ধ্যার একটু আগেই আয়ান বাড়িতে এসে পৌঁছেই ঘুম দিয়েছে। এদিকে পিহু সকাল থেকে পুরো রিসোর্টে আয়ানকে খুঁজে না পেয়ে ম্যানেজারের থেকে জানতে পারে আয়ান ঢাকা ফিরে গেছে। তখন থেকে পিহুর মন খারাপ। বন্ধুদের সাথে থেকেও তার মন হারানো। আর কোনোদিন আয়ানের দেখা পাবে কীনা সে জানে না। কোনো কন্টাক্ট নাম্বারও দিয়ে যায়নি। শুধু আয়ানের নাম ও ভার্সিটির নামটা জানে। আজকে পিহুরাও ফিরে যাবে। পিহুর মন খারাপ বিষয়টা লক্ষ্য করে তনিমা জিজ্ঞেস করে,
” কী হয়েছে তোর? এতো মুডঅফ কেন?”
পিহু জবাব দেয় না। তনিমা রাখি ও নাইমার দিকে তাকালে ওরাও ইশারায় জানায় ওরা জানে না। পিহু যেহেতু চুপ করে আছে তার মানে পিহু কথা বলতে ইচ্ছুক না তাই ওকে যা জিজ্ঞেস করবে সব বৃথা। তাই ওরা আর কিছু বলে না।
চলবে ইনশাআল্লাহ্,
আমি আগেই বলেছি, প্রতিদিন গল্পে দেওয়াটা টাফ হয়ে যায়। সন্ধ্যার আগে বাসায় এসে টাইপিং করতে ইচ্ছে হয়না প্রতিদিন। আর গল্পের পার্ট ১০০০+ শব্দের। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।