প্রেমের পাঁচফোড়ন💖
#সিজন_২
#পর্ব_৬৪
#Writer_Afnan_Lara
🌸
আপনার যা খুশি করেন,আমি পারবো না এত ভেজাল মাথায় নিতে,ওকে বাই”
♣
মা আর খালা শান্তি রহমানের সাথে গল্প করা শেষ করে একেবারে বিকেলে বাসায় ফিরলেন,শান্ত কাজ করতে করতে শেষ,আজ অফিসে যেতে পারেনি বলে সব কাজ এখন বাসায় বসে করছে সে
.
আহানা ফ্রি টাইমে নিজের জামাকাপড় গুছাতে গিয়ে একটা ছবি দেখে থমকে গেলো,তারপর দেয়ালে টাঙানো ক্যালেন্ডার টার কাছে এসে সে তারিখ চেক করলো,চোখ দিয়ে হঠাৎ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে
আহানা ছবিটা বুকে ধরে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে,দৌড়াতে দৌড়াতে দুচোখ যেদিকে যায় সেদিকে চলো গেলো সে
.
শান্ত এ বিষয়ে জানে না,তার কাজ শেষ হয়েছে সন্ধ্যা ৭টা ৩৫এ
কাজ শেষ করে সে টিভিটা অন করে বললো”আহানা এক কাপ কফি হবে?”
.
আহানার কোনো খবর নেই দেখে সে রুম থেকে বেরিয়ে করিডোর পেরিয়ে রান্নাঘরে চেয়ে দেখলো পুরো রান্নাঘর ফাঁকা,নিতু তার রুমে পড়ছে,মা ঘুমাচ্ছেন,তাহলে মেয়েটা গেলো কই?
.
শান্ত ফোন হাতে নিয়ে বাসার বাইরে বের হয়ে বাগানগুলো চেক করে না পেয়ে আহানাকে কল করলো,আহানার ফোন বেজে যাচ্ছে কিন্তু সে ধরছে না কারন সে ফোন বাসাই রেখে গেছে
আহানা দৌড়াতে দৌড়াতে তাদের বাসার কাছে আসলো,এতটা পথ সে ছুটে এসেছে,রিকসা নিবে নাকি শান্তদের বাসার কারে করে আসবে এতসব মাথায় ছিল না তখন
তার শুধু মাথায় আছে তাকে এখন এই মূহুর্তে নিজের বাড়ি ফিরতে হবে
বাড়িতে না ঢুকে সে বাড়ির পেছন দিকটায় আসলো
.
একটা কবর সেখানে,আশেপাশে টাইলস করা,দুটো সাদা আর লাল গোলাপের গাছ মাঝখানে, তাতে ফুল ধরে আছে অনেক
আহানা একটু এগিয়ে এসে নিচে বসে পড়লো হাঁটু গেড়ে
কবরটি তার বাবার
আর কাল তার জন্মদিন,প্রতিবার খুব ধুমদাম করে জন্মদিনটা পালন করতো আহানারা
উনি যাওয়ার পর থেকে না আহানার জন্মদিন পালন হয় না উনার
কিন্তু আহানা টাকা জমিয়ে প্রতিবার গরীব কিছু লোকদের খাওয়ায় বাবার জন্য
এবারও খাওয়াবে সে,বাবার কবরটায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সে চোখের পানি মুছতে লাগলো নিঃশব্দে
.
হঠাৎ পিঠে কারোর হাতের স্পর্শ পেয়ে আহানা চমকে গিয়ে পিছন ফিরে তাকালো,চোখ ভর্তি পানি তার
শান্ত বুঝতে পারলো আহানা কেন কাঁদছে তারপর সে স্বাভাবিক গলায় বললো”কাঁদলে উনি কষ্ট পাবেন,বরং হাসি মুখে থাকো,কাল তো আঙ্কেলের জন্মদিন,কত কাজ আমাদের,এভাবে কাঁদলে চলবে?উঠো!”
.
আহানা কাঁদো কাঁদো গলায় বললো”আপনি যান,আমাকে একা থাকতে দিন,এতসবের মাঝে আমি দিনটা ভুলেই গিয়েছিলাম,কাপড় গুছাতে গিয়ে ছবিটা না পেলে হয়ত মনেই আসতো না”
.
এখন এসেছে তো?এটা নিয়েই পড়ে থাকবা নাকি কি করে দিনটা পালন করনা সেটাই ভাববা,আমি কিন্তু পথশিশু দের খাওয়াবো
.
আহানা হালকা হেসে বললো”আমি তাদের মা বাবাদের খাওয়াবো”
.
হুম,চলো এখন,রাত করে এখানে বসে থাকতে হবে না,তোমার এমন হাল দেখে আমারও খারাপ লাগে,তোমাকে তো ধানিলঙ্কা ফ্লেভারে মানায় শুধু
.
আহানা উঠে গিয়ে চুপচাপ হাঁটা ধরলো,মন খারাপ তার,বাবাকে এসময়টায় খুব মিস করে সে
অবশ্য যখন যখন সে পরিশ্রম করে টাকা কামাতো তখন তখন বাবার কথা মাথায় আসতো,তার বয়সের মেয়েরা বাবার টাকায় আরাম আয়েশ করত আর সে কাজ করে করে সংসার চালাতো
শান্ত ওর জীবনে আসার পর থেকে তো বাবাকে প্রায়ই ভুলেই গিয়েছে সে
আর এখন আবার সেই বাবাকে মনে পড়লো,মন চাচ্ছে বাবাকে সামনে পেলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখতো সে
প্রিয় মানুষ ছেড়ে চলে গেলে তাকে ফিরে পাওয়ার কষ্টটা অনেক, তখন তাকে চেয়েও না পেয়ে আরও খারাপ লাগে
.
শান্ত কার চালাতে চালাতে আর আহানার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলো না,কারণ আহানার মন খারাপ,যেটা হওয়া স্বাভাবিক
এখন ওকে মন খারাপ থেকে বেরিয়ে আসতে বলাও সাজে না
কারণ শান্ত নিজেও তার বাবাকে হারিয়েছে,কষ্টটা সে খুব ভালো মতন ফিল করতে পারে
.
বাসায় ফিরে আহানা ছবিটা ধরে রেখে খাটের এক কোণায় গিয়ে শুয়ে পড়েছে,বলে দিয়েছে সে ডিনার করবে না
বুয়া এসেছে সে সবাইকে ডিনার সার্ভ করে দেবে
.
শান্ত আহানা ডিনার করবে না শুনে তার ও খাওয়ার প্রতি ইচ্ছা উঠে গেছে তাও মায়ের সামনে খেতে হবে বলে কিছুটা খেলো তারপর আহানার জন্য কিছু খাবার নিয়ে সে রুমে ফেরত আসলো,আহানাকে ডাক দিয়ে বললো খাবারটা খেয়ে নিতে কিন্তু আহানা সাফ সাফ মানা করে দিয়েছে
শান্ত এবার এক ধমক দিতেই আহানা উঠে বসে পড়েছে
চোখ দুটো অশ্রুসিক্ত হয়ে আছে তার
শান্তর মনে হলো সে ধমক দিয়ে ভুল করেছে তাও খাওয়ানোর খাতিরে ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে সে বললো”খাবার খেতে বলছি খাবা,এত না না করো কেন?না খেলে এক চড় বসিয়ে দেবো”
.
আপনি কেন বুঝছেন না আমার খিধে নেই,আমার কষ্ট লাগছে
.
তো?খাওয়া কি দোষ করছে??
.
খাব না আমি,প্লিস যান
.
তোমাকে খেতেই হবে
.
আহানা বাধ্য হয়ে দু টুকরো রুটি মুখে দিয়ে পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো
শান্ত আর জোরাজুরি করতে পারলো না,ওর যেভাবে ইচ্ছা থাকুক,জাস্ট নিজের খেয়ালটা রাখুক সে
♣
পরেরদিন ভোর হতে না হতেই আহানা উঠে পড়লো,তার আজ অনেক কাজ,খাবার প্রস্তুত করার জন্য বাবুর্চির সাথে কন্ট্যাক্ট করতে হবে
তা ছাড়া জামাকাপড় কিনে দেবে সে,শান্ত আহানার আঁচল বুকে ধরে ঘুমাচ্ছে,আহানা সব টেনসন গুছিয়ে নিয়ে আঁচল নিয়ে সমস্যা পড়লো এবার
তারপর হালকা টান দিয়ে বললো”আমার আঁচলের সাথে আপনার এত কি সম্পর্ক??ছাড়ুন,সরুন!”
.
হুমমম আহানা, ঘুমাতে দাও
.
ঘুমান না,কে মানা করেছে?আমার আজ কত কাজ,সরুন তো!উফ!
.
আহানা আঁচল টান দিয়ে শান্তর খালি পিঠে এক বাড়ি দিয়ে চলে গেলো,তারপর ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছাতে গুছাতে সে বিছানার দিকে এক নজর তাকালো,কিন্তু অবাক হলো এই দেখে যে শান্ত সেখানে নেই
.
গেলো কই?
.
আহানা এবার ওয়াসরুমের দিকে তাকিয়ে দেখলো শান্ত মাথা মুছতে মুছতে বের হচ্ছে আর কাঁপতে কাঁপতে আলমারির কাছে গিয়ে জ্যাকেট বের করছে
.
কি ব্যাপার?ভোর ৪টা বাজে,এখন উঠলেন কেন?গোসলই বা করলেন কেন?
.
ওমা কি বলে!!তোমাকে আমি এ সময়ে একা বের হতে দেবো?মা তো তাহলে আমাকে কুচি কুচি করে কেটে নদীর জলে ভাসিয়ে দেবে
.
মা এমন কিছুই করবে না,আমার জন্য আপনাকে এত কষ্ট করতে হবে না,যান শুয়ে পড়েন,আমি একা একা যেতে পারবো
.
তা হচ্ছে না,আর ছোটবেলার বন্ধু হিসেবে এই টুকু সেফটি দিতেই পারি, তাছাড়া ভুলে যেও না তোমার সেফটির জন্যই কিন্তু আমি তোমাকে বিয়ে করেছি
.
আহা আহা,এতদিনে না রতনের হামলার শিকার হলাম না সাইমনের,তাহলে এত কিসের ভয় আপনার?
.
যাই হোক, আমি যাব মানে যাবোই,চুপচাপ নিজের কাজ করো আমার যাওয়া নিয়ে এত না ভেবে
.
ঠিক আছে ফাইন!
.
আহানা চুল গুলো আঁছড়িয়ে নিতে নিতে শান্ত একটা টি-শার্ট পরলো এ্যাশ কালারের তারপর তার উপর দিয়ে একটা সবুজ রঙের জ্যাকেট পরে নিলো
,হাতে ঘড়ি পরে এবার সে জুতার ফিতা লাগাচ্ছে
আহানা চুলে খোঁপা করে শান্তর দিকে তাকিয়ে বললো”এমন সেজেগুজে যাচ্ছেন কেন?কণার মতো একটা মেয়েকে পাগল করে শান্তি হয়নি আপনার?এখন আবার আরও শতে শতে পাগল করতে চান?”
.
আমার বউ পাগল হলেই চলবে,যাই হোক,পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি কোথা থেকে,কি পুড়ছে??
.
আহানা রেগে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে,শান্ত আহানার ব্যাগটা হাতে নিয়ে ওর পিছু পিছু গেলো,দুজনেই সবার আগে আসলো বাবুর্চির কাছে,তাকে সব মেনু বুঝিয়ে দিয়ো রাঁধতে বলে দিলো আর পথশিশুদের খোঁজায় মন দিলো দুজনে
.
আহানা বললো এভাবে কাজ হবে না,আপনি ওদিকে খোঁজেন আর আমি এদিকে,তাহলে বেশি বেশি পাবো
.
ঠিক আছে
.
সবাইকে সকালের খাবার খাওয়ানো হবে সাথে দুপুরের জন্য ও দিয়ে দেওয়া হবে,সাথে থাকবে জামা কাপড়
.
আজকে শিশুদের মা বাবার খরচ আহানা দেবে বলেছে,আর পথশিশুদের খাওয়ার খরচ শান্ত দেবে ঠিক করেছে
.
আহানা অনেকজনকে পেলো
সে সবার সাথে মজার মজার কথা বলছে,হঠাৎ একজনকে দেখে তার মুখের হাসি হাওয়া হয়ে গেলো
হলুদ রঙের ফ্রিন্টের একটা লুঙ্গি পরা আর জাম কালারের ফতুয়া পরা একজন দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে,আহানা থেকে প্রায়ই ১৩হাত দূরে
লোকটাকে দেখে আহানা ভয়ে গা কেঁপে উঠলো,লোকটা আর কেউ নয়,এ হলো রতন,দাঁত কেলিয়ে সে হাসতেছে এবার
.
আহানা পিছোতে পিছোতে অনেকটা পথ চলে আসলো তারপর এদিক ওদিকে শান্তকে খুঁজতেছে সে এখন
মিনিট দুয়েক পর শান্তর দেখা পেলো সে,শান্ত সেখানে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলতেছিলো
আহানা ভয়ে ভয়ে শান্তর সামনে দাঁড়িয়ে বললো”শান্ত আমি রতনকে দেখেছি”
.
শান্ত ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে বললো”কে?রতন?সেটা কি করে হয়,ও তো জেলে”
.
না আমি ওরেই দেখলাম মাত্র
.
শান্ত আহানার কথা শুনে সেই জায়গায় আসলো কিন্তু রতনকে দেখলো না সে
আহানা বললো সে সত্যি এখানে দেখেছে
.
আচ্ছা আমি কল করে জেনে নেবো রতন জেল থেকে বেরিয়েছে কিনা,তুমি এত টেনসন নিও না,আমি আছি না?
আমি থাকতে কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না,যে ওয়াদা আমি তোমাকে বিয়ে করার সময় করেছিলাম সেটা আমি পালন করবো
.
আহানা ঠিক আছে বলে কাজে মন দিয়েছে,সে ভুলেই গেছে সকালে সে রতনকে দেখেছিলো
চলবে♥