#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২২
রেস্টুরেন্ট থেকে ওরা ভার্সিটিতে চলে আসে। তারপর প্রিয়া বন্ধুদের জন্য ক্যাম্পাসে অপেক্ষা করছে আর জারিফ তার অফিসরুমে চলে যায়। রেস্টুরেন্টে জারিফ প্রিয়াকে প্রথমবারের মতো নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছিল। প্রিয়া সেটা এখন একাকি বসে ভাবতেই ব্রীড়ামিশ্রিত হাসলো। প্রিয়াও জারিফকে খাইয়ে দিয়েছিল। ইশ! যদি কেউ ওই মোমেন্টটা ক্যাপচার করে নিতে পারতো! আফসোস হচ্ছে প্রিয়ার। কী সুন্দর একটা মুহূর্ত ছিল। রেস্টুরেন্টটা লাল-নীল আলোক সজ্জায় সজ্জিত। একটা রোমান্টিক ওয়েদার। প্রিয়ার এসব কল্পনা-ঝল্পনার মাঝে অর্ষা এসে হাজির। সে বেখেয়ালি প্রিয়ার পাশে বসে বলে,
“কার ধ্যানে মগ্ন আপনি শেহজাদী? মেসেঞ্জারে এতো মেসেজ করছি যে দেখছেন না! আজ আমার ফোনে টাকা ও এমবি নেই বলে!”
প্রিয়া অর্ষার দিকে ফিরে তাকিয়ে ভ্রুঁ কুঁচকে বলে,
“আমি নেটে নাই দেখিস নি?”
অর্ষা মুখ বাঁকিয়ে কানে হেডফোন গুঁজে বসে। আস্তে আস্তে বাকিরাও আসে। প্রিয়া ওদের কালকের ঘটনা বলে। তারপর ক্লাসে চলে যায়।
_________
ভার্সিটির ক্লাস শেষে জারিফ বেরোবে তখন তার ফোনে তামান্নার কল আসে। তামান্না সচরাচর জারিফকে ফোন করে না বিধায় জারিফ কিঞ্চিত অবাকই হলো। রিসিভ করে সালাম বিনিময়ের পর তামান্না বলে,
“ভাই, তুমি আজকে বাড়ি এসো না। তুমি যাওয়ার পর মুন্নি অনেক ঝামেলা করেছে। রান্না করা সব খাবার ডাস্টবিনে ফেলেছে এখন তোমার রুমের সামনে বসে আছে। ভাগ্যিস তুমি রুম লক করে চাবি নিয়ে গিয়েছ। সে রুমে ঢোকার বহু চেষ্টাও করেছে কিন্তু ফলপ্রসূ হয়নি। তুমি.. তুমি এক কাজ করো, আজকে প্রিয়াদের বাড়িতে চলে যাও। আকদের দিনও তো রাতে থাকোনি। আজকে থেকে যাও। এমনিতেও আকদের পর জামাই শ্বশুরবাড়িতে যায় এক দুইবার থাকতে। নাহলে বিষয়টা কিছুটা দৃষ্টিকটু লাগে। তোমার যাওয়াই হয়নি। আজকে চলে যাও। আর শোনো…”
জারিফ তার ভাবীর একটানা কথায় বাধ সাধে অতঃপর বলে,
“তোমার কী মনে হয় ভাবী? আমি ভয় পাই মুন্নিকে? যে এখন লুকিয়ে থাকতে হবে।”
তামান্না জারিফকে বোঝানোর চেষ্টা করল,
“আরে নারে ভাই। ভয় পাবে কেনো? তোমার তো উচিত প্রিয়াদের বাড়িতে যাওয়া। না গেলে কেমন দেখায় না বলো? বিয়েটা করে যে সেই এলে আর তো গেলে না। আজকে যাও আর এদিকে আমি মুন্নিকে একটু ডোজ দিবো। দেখবা কালকেই ব্যাগ গুছিয়ে পাগারপার!”
জারিফ কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করে,
“কী করবে ভাবী?”
“পরে বলব। এখন প্রিয়াদের বাড়িতে যাও তো। বিয়ের পর প্রথমবার শ্বশুরবাড়িতে যাবে কিছু নিয়ে যেয়ো। রাখছি।”
তামান্না ফোন রেখে দিলে জারিফ হ্যাং হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রয় তারপর প্রিয়মকে ফোন করে। প্রিয়মকে ফোনে যতটুকু পারে বুঝিয়ে বলে। প্রিয়ম জারিফকে বলে প্রিয়ার সাথে একসাথে ওদের বাড়িতে আসতে সে তার মাকে জানিয়ে দিচ্ছে। জারিফ তারপর প্রিয়াকে ফোন করে। এবার প্রিয়া ফোন রিসিভ করতে কোনো দেরি করেনা। রিং প্রথমবারেই রিসিভ করে তারপর সালাম বিনিময়ের পর জারিফ বলে,
“কোথায় আছো?”
“এই তো ক্যাম্পাসে বসে আছি।”
“আচ্ছা। আধঘণ্টা পর সেদিন যেখান থেকে গাড়িতে উঠেছিলে সেখানে এসো। আমি ফোন করব।”
“আচ্ছা।”
প্রিয়া কোনো প্রশ্ন করল না। এক বাক্যে রাজি হয়ে গেছে। কল ডিসকানেক্ট হওয়ার পর সাদ বলে,
“কীরে? স্যারের কল ছিল?”
সাদ প্রশ্নটা করার পর আয়ান প্রিয়ার দিকে এক পলক তাকালো। প্রিয়ার মুখশ্রী লাজে রাঙা। আয়ান আনমনে হাসলো।
প্রিয়া বলে,
“হ্যাঁ। উনি আমাকে অপেক্ষা করতে বলেছেন।”
প্রিয়ার কথার প্রতিউত্তরে অর্ষা বলে,
“হাউ রোমান্টিক ইয়ার! জিজুকে ক্লাসে যতোটা বোরিং লাগে সে তার বউয়ের সাথে তার উলটো। ক্লাসে খালি পড়া আর পড়া!”
প্রিয়া চোখ ছোটো করে তাকিয়ে বলে,
“হইছে থাম। সে আমার সাথে রোমান্টিক হবে নাতো কী ওই মুন্নির সাথে হবে! আমার বর সে। আমার সাথেই রোমান্টিক হবে। অন্যকারও সাথে হলে তার চো*খ আমি ঘু*টে তু*লে ফেলব!”
নিশি, মিম, অর্ষা, রাদ, সাদ, সবাই চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় আর আয়ান নির্নিমেষ প্রিয়ার অভিব্যক্তি পরিলক্ষণ করছে। মিম বলে উঠে,
“এই তুই এসব ভয়ংকর চিন্তা-ধারা রাখ। জিজু ওরকম করবেই না। অনেকসময় মানুষ দেখলে বুঝা যায় সে কেমন। জিজু অনেক লয়াল তোর প্রতি। ”
প্রিয়া ঠোঁট উলটে বলে,
“ওই মেয়ের কাণ্ডকারখানা আমার পছন্দ হচ্ছে না। অন্যের বরের পেছোনে হাত ধুয়ে পরেছে! আবার মেয়ে কীনা তার ফুফাতো বোন। যদি আমার শ্বশুর তার বোনের অনুরোধে রাজি হয়ে যায়!”
নিশি প্রিয়ার অতিরিক্ত অলুক্ষুণে চিন্তায় বিরক্ত হয়ে ধ*মক দিয়ে বলে,
“চুপ! খালি আজেবাজে চিন্তা। সারাটাদিন আজকে এইসবই বলেই গেল। তাদের যদি মুন্নিকে ছেলের বউ করারই হতো তবে আগেই করতো। তোকে বিয়ে করাতো না। আরেকবার এসব কথা বলবি তো কানের নিচে খাবি।”
বাকিরাও তাল মিলালে প্রিয়া গালে হাত দিয়ে মুখ ভাড় করে বসে রইল।
________
প্রায় আধাঘন্টা পর জারিফ প্রিয়াকে বেরোতে বলে। প্রিয়া আগেই বের হয়েছে। এখন আর একটু পথ বাকি। রাস্তার অপজিটে গিয়ে গাড়িতে উঠে বসে। আজকেও ড্রাইভার নেই। প্রিয়া জারিফকে বিনিময়ে হাসি দেয়। জারিফ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলে,
“আজ কিন্তু আমি তোমাদের বাড়িতে যাচ্ছি।”
প্রিয়া সামনের দিকে তাকিয়ে ছিল। হঠাৎ জারিফের এহেনো কথায় হকচকিয়ে যায়। তারপর অবাক কন্ঠে বলে,
“রিয়ালি? কই সকালে তো বললেন না।”
“কেনো সকালে না বললে কি যেতে পারব না?”
প্রিয়া বোকার মতো জারিফের দিকে তাকিয়ে আছে। জারিফের দৃষ্টি সামনের দিকেই স্থীর। প্রিয়া বলে,
“না তা বলিনি। মানে যাবেন সেটা আগে জানতেন কিনা। আমি তাহলে আম্মুকে বলতাম।”
“তোমার মা আগেই জানে।”
প্রিয়া আরও অবাক হয় জারিফের কথায় তারপর বলে,
“শুধু আমিই জানতাম না! নট ফেয়ার।”
প্রিয়ার গোমড়া মুখ দেখে জারিফ হালকা হাসে তারপর বলে,
“এখন তো জানলে। আমিও জানতাম না আধঘণ্টার আগে। জানার পর প্রিয়মকে জানালাম তারপর তোমাকে আসতে বললাম। প্রিয়ম তোমার মাকে জানিয়েছে।”
“ওহ।”
প্রিয়ার ছোট্ট জবাবে জারিফ হাসলো।
“রাতেও কিন্তু থাকব!”
প্রিয়া একটু গা ছেড়ে বসেছিল কিন্তু জারিফের শেষোক্ত কথায় ধড়ফড়িয়ে সোজা হয়ে বসল। ঢোক গিলে বলে,
“মানে?”
“কেনো বুঝোনি? আজকে রাতে আমি তোমাদের বাড়িতে অ্যাই মিন, আমার শ্বশুরবাড়িতে থাকব।”
জারিফকে বিপরীতে কী বলবে প্রিয়া চিন্তায় পরে গেল। এদিকে তার শরীরের লোম কা*টা দিয়ে উঠছে। হুট করে একটা বোকার মতো বলে বসলো,
“ভাইয়ার সাথে থাকবেন?”
জারিফ প্রস্তুত ছিল না প্রিয়ার থেকে এমন কিছু শুনবে। হুট করে গাড়ি ব্রেক করে প্রিয়ার দিকে ঘুরে।
“তোমার মনে হয়? তোমাদের বাড়িতে গেলে আমাকে তোমার বাবা-মা, ভাই কেউ তোমার রুম ছাড়া অন্যরুমে এলাউ করবে! প্রিয়ম আমার বেস্টফ্রেন্ড তাও সে আমাকে তার রুমে এলাউ করবে না।”
প্রিয়া মুখে হাত দিয়ে দাঁত দিয়ে নখ কা*টছে।
“সরি। আমি বোকার মতো বলে ফেলেছি। আর বলব না।”
জারিফ আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
চলবে ইনশাআল্লাহ্,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।