#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৭
টানা দেড় ঘণ্টা জারিফের থেকে পড়া বুঝে রাত বারোটায় শেষ হলো। প্রিয়া লম্বা হাই তুলে বলে,
“সব ক্লিয়ার। এইবার পরীক্ষার সময় মনে থাকলেই হয়। এতো পড়া উফ! ফাইনালটা শেষ হলে একটু শান্তি দশ-পনেরো দিনের জন্য। আচ্ছা শুনুন?”
জারিফ টেবিলের উপর গালে দুই হাত ঠেকিয়ে বসে বসে ল্যাপটপের স্ক্রিনে প্রিয়াকে দেখছিল। প্রিয়া জারিফের গতিবিধির উপর নজর দেয়নি। এবার প্রিয়ার ডাকেও জারিফ সেই একই ভঙ্গিতে বসে আছে। দৃষ্টিতে মা*দ*কতা। প্রিয়া কথা বলতে বলতে স্ক্রিনে জারিফের দিকে নজর গেলে ভ’ড়কে উঠে। থতমত খেয়ে যায় জারিফের পলকহীন দৃষ্টিতে। কপালের সামনে পরে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়। কলম দিয়ে টেবিলে কিছুটা শব্দ করে যাতে জারিফ নড়েচড়ে বসে। কিন্তু জারিফ মোটেও নড়লো না। অনড় অবস্থায়ই ঠোঁট নাড়িয়ে বলল,
“বলো শুনছি।”
প্রিয়া অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে বলে,
“আপনি এভাবে থাকলে আমি তো বলতে পারব না।”
“কেনো আমার এভাবে থাকাতে তোমার কী সমস্যা?”
জারিফের কা*টকা*ট প্রশ্নে কিয়ৎক্ষণ মৌন রইল প্রিয়া। তারপর ঢোক গিলে বলল,
“না মানে সমস্যা না কিন্তু আমার কথা বলাতে মনোযোগ আসছে না।”
জারিফ হাতের উপর থেকে মুখ তুলে হালকা হাসলো অতঃপর চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বলল,
“নাও তোমার মনোযোগ ফেরানোর ব্যাবস্থা করলাম।”
প্রিয়া জারিফের মুখাবয়ব দেখে চমৎকার হাসলো।
“অ্যাই ফিল, অ্যাই অ্যাম দা মোস্ট লাকিয়েস্ট ওমেন ইন দিস ওয়ার্ল্ড! ডোন্ট নো হোয়াই।”
জারিফ চোখে হেসে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
“অনেক রাত হলো ঘুমাও। তিন দিন পর সেমিস্টার ফাইনাল। গুড নাইট।”
প্রিয়া কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হলো। জারিফ বলে,
“নারীর অভিমানও সুন্দর যদি দৃষ্টিতে ভালোবাসা থাকে।”
থমকে যাক প্রহর একে অপরের নয়নযুগলে দৃষ্টি নিবদ্ধ থেকে। হৃদয়ে লুকানো প্রেম চোখের ভাষায় প্রকাশ পাক। পূর্ণ হোক হৃদয়।
__________
অপেক্ষমাণ সময় বড্ড দ্রুত গতিতে চলে। পরীক্ষার সময় মনে হয় ঘড়ির পেন্ডুলাম অতি দ্রুত গতিতে চলে। এক অস্থীরতা পূর্ণ মূহুর্ত। আজ ফাইনালের শেষ পরীক্ষা। পরীক্ষা দিয়ে এসে গ্রাউন্ডে একেকজন হাত-পা ছাড়িয়ে বসেছে। সাদ বলে,
“উফ কী যে এক প্যারার মধ্যে সপ্তাহটা পার করেছি! এটলাস্ট একটু রিলিফ পেলাম। এক্সাম যেমনই হোক না কেনো, এখন শান্তি শান্তি ফিলিং হচ্ছে। এই কয়টা দিন যেনো গ*লা কা*টা মু*র*গীর মতো ছটফট করেছি। এতক্ষণে জা*নে পানি এসেছে।”
সাদ কথাটা বলেই পাশে তাকিয়ে দেখলো ওর কথার সাথে কেউই তাল মিলাচ্ছে না। মেয়ে চারটা মাথা হাঁটুতে ঠেকিয়ে বসে আছে আর আয়ান ও রাদ ফোনে কি যেনো করছে। সাদ ভ্রুঁ কুঁচকে আয়ানের পেছোনে গিয়ে কাঁধ পেঁচিয়ে ধরলো। সাদ দেখলো আয়ান অনলাইনে বাসের কিছু একটা দেখছে। সাদ কিছুটা জোরেই বলে উঠলো,
“কী মামা! ফাইনাল শেষ হতেই ট্যুর প্ল্যান? আহা! তো কোথায় প্ল্যান করলি?”
সাদের কথায় ঝিমিয়ে থাকা বাকিরাও নড়েচড়ে বসে। অর্ষা বলে,
“নট ফেয়ার ইয়ার। কয়দিন পর প্রিয়ার বিয়ে। হাতে ছয়-সাত দিন আছে। এখন ট্যুর প্ল্যান করলে প্রিয়া যেতে পারবে না। ওর বিয়ের পর যাই। ও স্যারকে নিয়ে শর্ট হানিমুনে গেলো আর আমরা ট্যুর। জোস না?”
মাঝ থেকে রাদ বলে উঠে,
“না। জোস না। প্রিয়া হানিমুনে যাবে সেখানেও আমরা যাবো! তাও স্যারের সাথে? কেমন অ’ড লাগে।”
আয়ান ওদের এতো আকাশকুসুম চিন্তা-ভাবনাতে এক বালতি জল ঢেলে বলে,
“কেউ যাবে না। জাস্ট আমি একা। আমি কোনো ট্যুরে যাচ্ছি না। একটা কাজেই যাচ্ছি। ”
সাদ আয়ানের কাঁধে ধা*ক্কা দিয়ে বলে,
“আগেরবারও এই রকমই করেছিস। এবার আমরা যাবোই। অন্তত আমি ও রাদ তো মাস্ট। তোর কোনো কথা শুনব না।”
আয়ান ওদেরকে হতাশ স্বরে বলে,
“বিলিভ মি। এটা কোনো ট্যুর না। সাজেক, বান্দরবান, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন এসব কোথাও বা কোনো টুরিস্ট স্পটেই যাচ্ছি না। আমি খাগড়াছড়ি যাচ্ছি। একটা বিশেষ কাজে। আর্জেন্ট।”
“তোর আর্জেন্ট কাজে আমরা দুইজনও যাবো। দেখ সেমিস্টার ব্রেক। কোনো কাজ-কাম নাই। বাসায় শুধু শুয়ে বসে ঘুমানো ছাড়া। আমাদের জন্যও টিকেট বুকড কর।”
আয়ান ওদের বুঝানোর প্রয়াস করলো কিন্তু দুইজনের অকা*ট্য যুক্তিতে হার মেনে শেষে রাজি হলো। ওদিকে নিশি, মিম, অর্ষা, প্রিয়া বাঁকা নজরে এই তিন বন্ধুকে দেখছে। ওদের তিনজনের তো এই চারজনের দিকে সামান্যতমও ভ্রুঁক্ষেপ নেই। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ওদের মনোযোগ আকর্ষণে ব্যার্থ হলে মিম ব্যাগ থেকে কলম বের করে সাদের পিঠে গুঁ*তো দেয়।
“তোদের তিনটাকে সামনের খা*লে ফে*লে দিবো। এতো নি*র্দয় কেনো তোরা? আমাদের চারজনকে কি তোদের চোখে লাগে না? গোনায় ধরিস না আমাদের।”
আয়ান অসহায় কন্ঠে বলে,
“বিশ্বাস কর, এই দুটোকে যে নিচ্ছি এটাই তো আমার জন্য প্রবলেম হয়ে যাচ্ছে। তোদেরকে কিভাবে নিবো? দুইদিনে জন্য যাবো। কাল সকালে রওনা করব। পরশুদিন ও তার পরেরদিন থেকে রওনা করব। আর প্রিয়ার তো বিয়ে। তোদেরও তোড়জোড় আছে তাই না?”
“তাই না! এখন তো বাহানা। যাহ্ যাবো না।”
নিশির মুখ বাঁ*কানো কথায় আয়ান বিপাকে পরে গেলো। কিন্তু সত্যি সে ছেলো দুটোকে নিতে পারলেও মেয়েদের পারবেই না। হতাশ নিঃশ্বাসে অভিমান মেনে নিলো।
__________
ছাদে বসে পড়ন্ত বিকেলে চা বিলাশ করছে দুটো মানব-মানবী। এপ্রিলের শেষ দিন। প্রকৃতিতে গ্রীষ্মের তাপদাহ প্রখর হতে প্রখর। বিকেলের সময়টা কিছুটা শীতলতা বিরাজ করে। মুন্নি চায়ের কাপ হাতে নিয়ে চোখে হেসে আকাশ দেখছে। তার বিপরীতে বসা রাদিফ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে মুন্নির মুখচ্ছবি বোঝার চেষ্টা করছে। হালকা টিয়া রঙের থ্রিপিসে ফর্সা গড়নে ফুটে উঠেছে। রাদিফ বলে,
“আপনি সবসময় আকাশপানে কী দেখেন?”
“আমার সুখ!”
মুন্নির ভাবলেশহীন জবাবে রাদিফ বিভ্রান্ত হয়ে হাসলো। মেয়েটার দৃষ্টি কিন্তু একটুও তার দৃষ্টিসীমা থেকে হটেনি। রাদিফ বলে,
“মানে?”
“একটা গান শুনবেন?”
মুন্নির হঠাৎ এহেনো নিঃসঙ্কোচ আবদারে রাদিফ মানা করতে পারলো না।
“দূর হতে আমি তারে সাধিব
গোপনে বিরহডোরে বাধিব
দূর হতে আমি তারে সাধিব
গোপনে বিরহডোরে বাধিব
বাধনবিহীন সেই যে বাধন
অকারণ
মায়াবন বিহারিনী
মায়াবন বিহারীনি হরিনী
গহন-স্বপন-সঞ্চারিণী
কেন তারে ধরিবারে করি পণ
অকারণ
মায়াবন বিহারীনি”
“জানেন এইটুকু আমার অনেক ভালো লাগে। মনে গেঁথে আছে একদম।”
রাদিফ মুগ্ধচিত্তে মুন্নির গান ও কথাগুলো শুনলো। মুন্নি এখন হাসি চোখে আকাশ দেখছে। রাদিফ বলে উঠলো,
“আপনি গান শিখেছেন কখনও?
ঘার ঘুরিয়ে রাদিফের দিকে চেয়ে বলে,
“হ্যাঁ ছোটোবেলায়।”
“আপনার গানের গলা খুব সুন্দর।”
“ধন্যবাদ।”
পরন্তু দুজনেই মৌন। আজ রাদিফ জলদি ফিরেছে কারণ কালকে সে শিফট হবে মেসে। রাদিফ এই কয়দিনে মুন্নির প্রতি খানিকটা দুর্বল হয়ে পরেছে। ইতস্তত করে বলে,
“আপনার ফেসবুক আছে? ফ্রেন্ডলিস্টে কী জায়গা হবে আমার?”
মুন্নি বলে,
“আপাততো ডিএক্টিভ।”
“আপনার বাবা-মা তো আজকে রাতের বাসে ঢাকা যাবেন। আপনার জন্য মালা খালাকে রেখে গেলেন। শুনেছি আপনার মামাতো ভাইয়ের বিয়ে। বিয়ের তারিখটা পেছোলেও পারতো।”
রাদিফের কথায় মুন্নির চোয়াল শক্ত হয়ে যায়। কা*টকা*ট জবাব দেয়,
“না পারতো না। জলদি বিয়ে হলেই ভালো। সন্ধ্যা নামছে আমি নিচে গেলাম।”
এই বলে মুন্নি হনহন করে ছাদ থেকে নেমে গেলো। রাদিফ বোকার মতো বসে রইল। সে কী এমন বলল যে মুন্নি এভাবে চলে গেলো তা ভেবে পেলো না।
চলবে ইনশাআল্লাহ,
আমার ডান চোখ গত তিনদিন ধরে ফুলে আছে সাথে প্রচন্ড ব্যাথা। এটা নাকি এখন অনেক হচ্ছে। আজকে মিড১ পরীক্ষা শেষ হলো।
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।