হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম #নুুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_২৮

0
637

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৮
দুইদিন ধরে আয়ানরা খাগড়াছড়ি শহরে বিভিন্ন জায়গায় খুঁজে চলেছে। কোথাও পিহু বা তার বন্ধুদের পাচ্ছে না। প্রায় অনেকগুলো পার্ক খুঁজেছে। কলেজে খুঁজে লাভ নেই কারণ এইচএসসির জন্য ক্লাস হচ্ছে না। আজকে তৃতীয় দিন খুঁজছে। না পেলে ফিরে যাবে। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। রাস্তার কিনারে পথচারী চলার স্থান দিয়ে পকেটে হাত গুঁজে হাঁটছে আয়ান। আর ওর দুই বন্ধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কোক খাচ্ছে। আশেপাশে অনেক স্কুল-কলেজের ছেলে-মেয়েরা হাঁটাহাঁটি করছে। কিছু ছেলে-মেয়েরা ফুচকা, আইসক্রিম, ক্যান্ডি ফ্লসের দোকানে ভীড় জমিয়েছে। কোথাও পিহুকে খুঁজে পায়নি। অদূরে মসজিদ থেকে মাগরিবের আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। আজান শোনে আয়ান সাদদের কাছে আসতে নিলে একটা মেয়ের গলার স্বরে থমকে দাঁড়ায়। পেছোনে ঘুরে দেখে হিজাব পরা মেয়ে। মেয়েটির পেছোন সাইড দেখা যাচ্ছে কিন্তু তার বন্ধুদের চেহারা ঠিক দেখা যাচ্ছে। আয়ানের মনে হচ্ছে সবটা তার ভ্রম। সে চোখ কঁচলে আবার তাকালো। আরেকটু এগিয়ে গেলো। মেয়েটি বলছে,

“কীরে ভাই! একটা রিকশাও কি পাবো না? সবগুলোই নাকি বুকিং করা। আজান পরে গেছে।”

আয়ানের ওষ্ঠকোণে নিজের অজান্তেই হাসি ফুটলো। সে থমকে সেখানেই দাঁড়িয়ে রইল মেয়েটির পেছোনে ফেরার অপেক্ষায়। আকাশে এখনও অন্ধকার পুরোপুরি নামেনি। পিহু বিরক্তি প্রকাশ করতে করতে পেছোনে ঘুরে। ল্যাম্পপোস্টের আলো জ্ব*লে উঠেছে এখন। পিহু এখনও আয়ানকে লক্ষ্য করেনি। পিহুর ছেলে বন্ধু দুজনের মধ্যে একজন বলে উঠলো,

“আমরা নামাজ পড়ে আসি। তোরা দাঁড়িয়ে ফুচকা খা নাহয়। রিকশা পেলে উঠে যাস।”

ওরা দুজন চলে গেলো। আয়ান কি করবে করবে ভেবে সেও নামাজে যাওয়ার জন্য তার দুই বন্ধুকে একটু জোরেই ডাক দিলো। এদিকে পিহু আয়ানের মতো কন্ঠ শোনে হকচকিয়ে চমকে উঠে। প্রায় তিন মাস পর কন্ঠস্বর শুনছে। যখন পরিচিত কন্ঠস্বর আমাদের সামনে আসলে ঠিক মস্তিস্কে ক্যা*চ করে। পিহুরও হয়েছে তাই। তবে আমরা মাঝে মাঝে মনে করতে না পারলেও মনের মাঝে খুব করে খচখচ করে। আর পিহু তো তার স্বপ্নে এই কন্ঠস্বরের মালিককে ভাবে। পিহু পেছোনে ঘোরাতে আয়ানের সাথে দেখা হলো। দুইজন দুটো ল্যাম্পপোস্টের নিচে। মাঝের দূরত্ব কয়েক হাত মাত্র। আয়ান মুচকি হেসে সাদ ও রাদকে নিয়ে মসজিদের দিকে গেলো। আর পিহু অবাক হয়ে নিষ্পলক দৃষ্টিতে সেই গমন পথের দিকে চেয়ে আছে। স্বপ্ন না বাস্তব তা সে পার্থক্য করতে পারছে না। অন্য কাউকে আয়ান কল্পনা করছে কিনা ভেবে পাচ্ছে না। স্বপ্নও বুঝি এতো সুন্দর হয়! একদম নিজের কল্পনা করা একটা মূহুর্তের মতো। গৌধূলি সন্ধ্যায় ল্যাম্পপোস্টের নিচে তার সাথে আবার দেখা হওয়ার ইচ্ছে মনে পোষণ করেছিল পিহু। তেমনটাই হলো। কিন্তু কবে কখন কল্পনার আবির্ভাব হয়েছিল তা মনে করতে পারছে না।
______________
রাত পোহালে নতুন ভোর সাথে উৎসব মুখর দিনের সূচনা। মুন্নি নিজের ঘর অন্ধকার করে বসে আছে। রান্নাঘরে মালা খালা দুইজনের জন্য খাবার গরম করছে। আগামীকাল ও পরশু মুন্নির পরীক্ষা নেই বলে সে নির্বিঘ্নে পড়াশোনা ছাড়া রুম আঁধার করে বসে আছে। রাদিফ ডাইনিংয়ে এসে মুন্নির ঘরের বন্ধ দরজার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের রুমে ফিরে গেছে। মুন্নি খোলা জানালা দিয়ে আঁধার অম্বরপানে চেয়ে নিজে নিজেই স্বগোতক্তি করে,

“আমার জীবনে কেউ আসুক। যে আমার আঁধার জীবনের আলোর দিশারী হবে। যার পদার্পণে আমি অতীতের টান ছাড়তে পারব।”

দীর্ঘশ্বাসে সব দুঃখ বের করার প্রয়াস করলো। মুন্নির মা গোছগাছ করছে। বিয়ে আর তিনদিন পর। তাকে ও তার স্বামীকে জারিফের বাবা অনেক অনুরোধ করে রাজী করিয়েছেন। তাই ভাইয়ের বিশেষ অনুরোধে যাচ্ছেন তারা। মুন্নির বাবা তার স্ত্রীর কাছে একটা স্বর্ণের আংটি দেখিয়ে বললেন,

“দেখো তো। এটা জারিফের বউয়ের জন্য নিলাম। কেমন হলো?”

জমিলা বেগম স্বামীকে হাসি দিয়ে বলেন,
“ভালোই। ভাই যদি ওমন অনুরোধ না করতো তবে শুধু আংটিটা কাউকে দিয়ে পাঠিয়ে দিতাম নয়তো কখনও গেলে দিয়ে দিতাম। নিজের মেয়ের কস্টের থেকে এসব গুরুত্বপূর্ণ না। নেহাত মুন্নিও বারবার করে যেতে বলেছে। মালাকে তো বললাম, তিনদিন থাকতে। এতো বছর ধরে এই বাড়িতে কাজ করছে। ওকেই রেখে গেলাম।”

“হ্যাঁ। যাই হোক। রাদিফও আগামীকাল চলে যাবে। ওর সাথেও কথা বলতে হবে। বাস তো রাত দশটায়। তোমার গোছানো শেষ করো দ্রুত।”

মুন্নির বাবা গেলেন রাদিফের সাথে দেখা করতে। মুন্নির মা চটজলদি গোছগাছ করে মেয়ের ঘরে যাবেন।

__________

নামাজ পড়ে আয়ানরা সেই স্থানে এসে দাঁড়ায়। রাহাত, সাইফরাও সাথে আছে। মসজিদে নামাজের পর ওদের দেখা হয়েছে। রাহাত ও সাইফ তো আয়ানকে প্রথমে ঠিকভাবে চিনতে না পারলেও আয়ান নাম বলার পর চিনে ফেলেছে। ওরা আয়ানকে শুধু পিহুকে খা*দ থেকে তোলার সময় দেখেছিল তারপর পিহুর মুখে আয়ান নাম শুনেই এসেছে। দুজনে আয়ানকে দেখে খুশি হয়। পিহুকে ঝ*টকা দিবে বলে ওরাও উৎসুক।

পিহু এতক্ষণ ধরে অস্থীর ভাবে হাঁটাচলা করছিল। আরেকবার চোখের সন্তুষ্টির জন্য আয়ানকে দেখতে চায়। কাছে গিয়ে কথা বলতে চায়। অপেক্ষার প্রহরের সমাপ্তি ঘটিয়ে সাইফদের সাথে আয়ানকে আসতে দেখে স্থীর হয়ে যায়। রাহাত এসে পিহুর চোখের সামনে চুটকি বা*জিয়ে বলে,

“কীরে? দেখ তো চিনিস কী না?”

পিহু যেনো বাকরুদ্ধ হয়ে গেছে। পিহুর বান্ধুবীরাও অবাক হয়ে গেছে। সাইফ, রাহাত, রাদ, সাদ মুখ চেপে হাসছে। আয়ান ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফুটিয়ে পিহুর দিকে এগিয়ে গিয়ে হাত বাড়িয়ে বলে,

“হাই। মাইসেল্ফ আয়ান মাহমুদ। নাইস টু মিট ইউ এগেইন। ”

পিহু হা করে তাকিয়ে আছে। পিহুর বান্ধুবী রাখি পিহুকে আলতো ধা*ক্কা দিলে পিহু হকচকিয়ে নড়েচড়ে দাঁড়ায়। নিজের হাত কাঁপা কাঁপা ভাবে এগোয়। আয়ান পিহুর হাতটা ধরতেই পিহু নিজের হাত টান দিয়ে ছুটিয়ে নেয়। আয়ান পিহুর চোখে ও ব্যাবহারে এতোটা বিহ্বলতা দেখে হেসে ফেলে।

“এই মিস ছটফটে। এতো ভয় পাচ্ছো কেনো? তোমার জন্য তিন দিন ধরে খাগড়াছড়ির রাস্তাঘাটে ঘুরছি আর তুমি কীনা এখন শ*ক*ড হয়ে দাঁড়িয়ে আছো! দ্যাটস নট ফেয়ার ইয়ার।”

আয়ানের কথাগুলো পিহুর কানে ঝংকার তুললো। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

“আপনি আমার জন্য এসেছেন? সত্যি?”

“হ্যাঁ। চলো কোথাও বসি।”

পিহু ঘোরের মধ্যে আয়ানের কথায় চলতে থাকে। ওরা রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের নিচে পথচারী হাঁটার স্থানে বসে। সেখানে অনেকেই বসে থাকে।

_______

সকাল থেকে বাড়িতে আত্মীয় স্বজনদের ভীড় হতে দেখে প্রিয়া নিজের ফোনটাও পাচ্ছে না। আবারও ওর ইফা আপু এসে ওকে নানারকমের রূপচর্চাতে শামিল করছে। এদিকে জারিফ কয়েকবার প্রিয়াকে ফোন করে পায়নি। প্রতিবার যেকোনো কাজিন ফোন ধরে বলে প্রিয়া এটা করে ওটা করে। ব্যাস কথা আর বলতে দেয় না।
রাতে প্রিয়া কাউকে না জানিয়ে ছাদে উঠে। তারপর জারিফকে কল করে। জারিফ রিসিভ করার পর প্রিয়া সালাম দিয়েই বলে,

“সো সরি। ওরা আমাকে ফোন ধরতেই দিচ্ছিলো না। ”

“ইটস অকে। তা এখন কেউ নেই?”

প্রিয়া হেসে বলে,
“নাহ্। আমি ছাদে চলে এসেছি কাউকে না বলে।”

জারিফ অবাক হয়ে যায়। দ্রুততার সাথে বলে,

“জলদি ছাদ থেকে নামো। তোমার সাথে কথা বলাটা এখন অতোটাও মেন্ডেটরি না। দাদী বলতো, বিয়ের কনেকে একা একা সন্ধ্যার পর ছাদে উঠতে হয় না। অ্যাই ডোন্ট নো, কতটা সত্য। কিন্তু রিস্ক নেওয়ার দরকারটা কী বলো। পরশু তো হলুদের অনুষ্ঠানে দেখা হচ্ছেই।”

প্রিয়া জারিফের কথাগুলো ভাবলো। তারও এখন গা ছমছম করছে তাই বলে,
“তাহলে বারোটার পর কথা হবে। ওদের ঘুম পারাতে দরকার পরলে চায়ের সাথে স্লি*পিং পি*ল দিবো।”

জারিফ খানিক শব্দ করই হাসে। তারপর বলে,
“তা দরকার নেই। এই দুইদিন কাজিনদের সাথে সুন্দর টাইম স্পেন্ড করো। তারপর তুমি সারাজীবনের জন্য আমার সাথে নিজের বাকি জীবন কা*টাবে। কিছু কথা জমে থাকুক।”

প্রিয়া লাজরাঙা হলো। ওদের টুকটাক কথা হচ্ছিলো প্রিয়া ঘরের সদর দরজায় যাওয়া পর্যন্ত। তারপর কল কে*টে প্রিয়া ওর মায়ের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। মাকে ছেড়ে চলে যাবে ভাবতেই বিষণ্ণতা ভর করছে মনে। আগের মতো যেকোনো সময় মায়ের ব*কাব*কি, আদর, জড়িয়ে ধরা হবে না। প্রিয়ার মাও মেয়েকে জড়িয়ে কপালে চু*মু খেলেন। মেয়ে বিদায় দিবেন ভেবে তারও ক*লিজা ছিঁ*ড়ে যাচ্ছে। মেয়েকে কাছে পেয়ে শান্তি লাগছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,
চোখের ব্যাথা নেই আর ফুলাও অনেকটা কমেছে। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here