হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম #নুুরুন্নাহার_তিথী #পর্ব_৩৪

0
640

#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৪
নাস্তার টেবিলে বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠরা শ্বশুরবাড়িতে প্রিয়ার প্রথম রান্নার প্রশংসা করল। নাস্তা শেষে মেয়েরা সব আড্ডা দিতে ড্রয়িংরুমে জড়ো হয়েছে আর ছেলেরা ছাদে। বিয়ের পরেরদিন বৌভাতের অনুষ্ঠান না রাখায় ব্যাস্ততা কিছুটা কম। বৌভাতের অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি অর্ধেকের বেশি আগেই করে ফেলেছে। তাসফি আজ সকালে একটা প্রপোজ পেয়েছে। ছেলেটা জারিফের বন্ধু হয়। তাসফি এখনও কাউকে জানায়নি। বাগানে হাঁটতে বেরিয়েছিল তখনি কোথা থেকে এসে ছেলেটা কতোগুলো নয়নতারা ফুল দিয়ে বলেছিল,

“অ্যাই লাভ ইউ! অ্যাই ওয়ান্ট টু ম্যারি ইউ।”

তাসফি তখন থতমত খেয়ে গিয়েছিল। চুপ করে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার পর ছেলেটার আবার জিজ্ঞেস করাতে পিছু দৌঁড়ে চলে এসেছে। এখন বেচারির আড্ডাতে মন নাই। প্রিয়ারা সবাই মিলে গানের কলি খেলছে। প্রিয়া তাসফিকে একটা অক্ষর দিতে গিয়ে দেখে মেয়েটা বেখেয়ালি। প্রিয়া ওকে ঠে*লা দিয়ে বলে,

“কী-রে? কোথায় হারালি? বল।”

তাসফি হকচকিয়ে উঠে।
“হু? কী বলব?

“তোকে তামান্না আপু অক্ষর দিয়েছে। এখন সেটা দিয়ে গা*ন গাইবি। কী হয়েছে তোর?”

তাসফি হাসার চেষ্টা করে বলল,
“না কিছুহয়নি। আচ্ছা গাইছি।”

তাসফি কোনোমতে গান গেয়ে প্রিয়ার কাছে ত অক্ষর দিলো। প্রিয়া একটু ঠিক হয়ে বসে গা*ন ধরল,

“তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে হলে,
আমায় দিতে পারো
আমার ভালো লাগা ভালোবাসা
তোমায় দেবো আরো!(২)
তুমি হাতটা শুধু ধরো
আমি হবো না আর কারো! (২)
তোমার স্বপ্ন গুলো আমার চোখে
হচ্ছে জড়সড়!
তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে গুলো
তোমার ইচ্ছে গুলো ইচ্ছে হলে,
আমায় দিতে পারো
আমার ভালো লাগা ভালোবাসা
তোমায় দেবো আরো!”

গা*ন শেষ হলে জারিফের এক কাজিন ভাবী বলে উঠে,
“দিয়ে দাও তাকে তোমার ইচ্ছে গুলো। সে তোমার হাতটা খুব ভালোবেসে সারাজীবন ধরে রাখবে।”

প্রিয়া লজ্জা পেলো। লজ্জায় মা*থা নিচু করে মুখ লুকালো। এদের আড্ডা চলছেই আর ছেলেরা দা*বা ও ক্যারাম খেলছে ছাদে। জারিফ খুব ভালো দাবা খেলতে পারে। ওর সাথে এখন পর্যন্ত জায়ান ও তাদের বাবা খেলে জিততে পারেনি। তো জায়ান এখনও পারল না! বেচারা জায়ান বলে,

“এই তুই একবার তো আমাকে জিততে দিতে পারিস! আমার রাজাকে তুই প্রথমেই চে*কমে*ট কেনো দিস!”

“তুমি হে*রে গেলে আমি কী করব ভাইয়া? ইচ্ছে করে তো হারতে পারি না!”

জায়ানের কিঞ্চিত ক্ষো*ভ মিশ্রিত বুলিতে জারিফের প্রতিউত্তরে এক কাজিন বলে,

“পদে পদে ইচ্ছে করে হারতে হবে ভাই আমার! নাহলে তোকে স*ন্ন্যাসী হতে হবে!”

জারিফ মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“তোমাদের বউরা এমন করেছে বলে কি আমার বউও করবে? তাহলে তো তোমাদের বউদের থেকে প্রিয়াকে দূরে দূরে রাখতে হবে। সে আমার সামনে ভীতু ও লাজুকটাই আদুরে।”

“প্রথম প্রথম এমনি থাকে ভাই! পরে…!”

“উফ! পরেরটা পরে দেখা যাবে। খেলো তো তোমরা।”

জারিফ আবার খেলা শুরু করল।

____________

সকাল দশটায় ঘুম থেকে উঠে বালিশের সাইড থেকে ফোনটা নিয়ে সময় দেখে নেট অন করলো। গতকাল অনেক রাত করে বাসায় এসে ঘুমিয়েছিল। কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করার পর মেসেঞ্জারে গেলো। পিহুর আইডি থেকে মেসেজ এসেছে সকাল নয়টার দিকে। লিখেছে,

“এই শুনুন! আব্বুকে কাল বলেছিলাম আমি ঢাকাতে ভর্তি হবো। সেকেন্ড ইয়ারে ঢাকাতে গিয়ে একটা কলেজে ভর্তি হবো। আব্বু একটু আগে আমাকে জানিয়ে গেছেন, তিনি রাজি। ঢাকাতে আমার খালামনির বাড়িতে পাঠাবে আমাকে। অ্যাই অ্যাম সো এক্সাইটেড। আপনার শহরে আসব। বন্ধুদের ছেড়ে যেতে কষ্ট হবে তবে ওরা তো এইচএসসির পরে ঢাকা যাবেই। ওদেরকে গতকাল বলেছিলাম আমার এই ইচ্ছের কথাটা। মন খারাপ করেছে ওরা। আমি মানিয়ে নিবো ওদের সমস্যা নাই।”

আয়ান অবাক দৃষ্টিতে লম্বা মেসেজটার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটা কি পা*গ*ল! একা একা ঢাকাতে পড়তে আসবে! আয়ান চোখ কঁচলে আবার মেসেজটা পড়লো। তারপর কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে হেসে উঠলো। মা*থা চুলকে স্বগোতক্তি করলো,

“মেয়েটা এতো ডেসপারেট কেনো? তার চেনা শহর, চেনা সব ছেড়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের টানে ছুটে আসছে! সে যদি মনঃক্ষুণ্ণ হয়?”

আয়ান চোখ বন্ধ করে লম্বাশ্বাস নিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।

_________

সন্ধ্যার আড্ডার আগে প্রিয়া নামাজ পড়ে রুমে বিছানার উপর বসে আছে। আজ সারাদিন জারিফের সাথে তার কথা হয়নি। তাই এখন জারিফ মসজিদ থেকে আসবে তাই অপেক্ষা করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে জারিফ আসলো। প্রিয়াকে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে থাকতে দেখে হেঁটে ড্রেসিংটেবিলের সামনে যেতে যেতে বলল,

“তৈরী হওনি?”

প্রিয়া ভ্রুঁকুটি করে বলে,
“কেনো? তৈরী হবো কিসের জন্য?”

জারিফ প্রিয়ার দিকে ঘুরে বলে,
“কেনো ফিহা তোমাকে বলেনি?”

প্রিয়া এবার মুখ লটকে বলল,
“কী বলবে?

“ফিহা জেদ ধরেছে। আজ সবাইকে নিয়ে ট্রিট দিতে হবে। ওরা সবাই স্ট্রিট ফুড খেতে যাবে।”

প্রিয়া মনে করার চেষ্টা করল অতঃপর বলল,

“ওহ হ্যাঁ। ফিহা বলেছিল আপনি ট্রিট দিবেন। তবে এখন সেটা বলেনি?”

জারিফ হাতে ঘড়ি পরতে পরতে বলল,
“মাত্রই ওদের সময় বলে জায়ান ভাইয়ার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম। যাই হোক রেডি হও। ফিহা তো শুনেই দৌঁড় দিয়েছে।”

প্রিয়া হাসে তারপর আলমারির কাছে গিয়ে খুলে কী পরবে তা সিলেক্ট করতে চেষ্টা করছে। জারিফ ব্যালকনিতে গিয়ে একটা ফোন কল এটেন্ড করে এসে দেখে প্রিয়া এখনও পছন্দ করতে পারেনি। জারিফ এবার প্রিয়ার পেছোনে এসে দাঁড়িয়ে হাত বাড়িয়ে একটা সবুজ রঙের থ্রিপিস বের করে দিলো।

“এটা ট্রাই করো। ওয়েদার এন্ড এনভায়রনমেন্টের সাথে তোমাকে সু*ট করবে।”

প্রিয়া জারিফকে ধন্যবাদ দিয়ে খুশিমনে চেঞ্জ করতে চলে গেলো। জারিফ আর চেঞ্জ করল ন। সে একটা ব্ল্যাক পাঞ্জাবী পরে আছে। প্রিয়ার সাথে কালার কম্বিনেশনেও মিলবে।

______
রাহা একটা ব্লু রঙের চুড়িদার পরেছে। সাথে নীল চুড়ি। সে তৈরী হয়ে ড্রয়িংরুমে এসে ফিহার পাশে বসেছে। লিপস্টিক ও ক্রিম ছাড়া অন্য কোনো প্রসাধনী সে ব্যাবহার করেনি। তাসফি কাজল পরছে খুব ধীর গতিতে তাই রাহা ওকে রেখে বেরিয়ে চলে এসেছে। নাহান ফোন টিপতে টিপতে ড্রয়িংরুমের সিঙ্গেল সোফাতে এসে বসেছে। আশেপাশে সে তাকায়নি। নাহানকে বসতে দেখে ফিহা মুখ ভে*ঙচি দেয়। পাশে রাহাকে দেখে রাহার কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে,

“এই ব্যা*টার উপর আমি এক কালে ক্রা*শিত ছিলাম। প্রচুর ভাব তার। আবার রুডও। সারাক্ষণ একটা ভাব নিয়ে চলে। ব্যাবহার আমার পছন্দ হয়নি। তাই পরে ক্রা*শ তুলে নিয়েছি। থাকুক সে তার সো কলড এটি*টিউ*ড নিয়ে। আমার নেক্সট ক্রাশ তো এখন তামান্না ভাবীর চাচাতো ভাই তন্ময়! ছেলেটা অনেক মিশুক আর ফানিও। আর হ্যান্ডসামও বটে। তার সাথে আমার ফেসবুকে কথা হয়। সে এবার অনার্স ফাইনাল ইয়ারে। রাজশাহী থেকে পড়াশোনা করেতো তাই আসতে পারেনি।”

রাহা চুপ করে ফিহার একাধারে কথা শুনে গেলো। বিনিময়ে হালকা হেসে নাহানের দিকে তাকালো। নাহানের ধ্যান জ্ঞান সব ওই ফোনেই। রাহা নিজেও তো ফিহার মতো চঞ্চল কিন্তু নাহান সামনে থাকলে কেমন চুপসে যায়। এখন যদি নাহান সামনে না থাকতো তবে রাহা ফিহার সাথে কথায় তাল মিলাতো।

_________

চটপটি, ফুচকা, মমোস, হালিম, সবকিছু খেয়ে জারিফকে পথের ফ*কি*র করে ছেড়েছে সবাই মিলে। জারিফের এক কাজিন এসে জারিফকে ধীরে ধীরে বলে,

“বলেছিলাম না! দেখলি! তোর জন্য মায়া হচ্ছেরে ভাই।”

জারিফ বিরক্ত হয়ে বলে,
“এতো মায়া হলে অর্ধেক বিলটা দিয়ে দেও না! তাও সারাক্ষণ কানের কাছে এসব বলা বন্ধ করো।”

বেচারা চুপসে গেছে। এসেছিল জারিফকে শান্তনা দিতে কিন্তু জারিফের তিরিক্ষি কন্ঠস্বরে এখন সটকে পরেছে। জারিফের চার হাজারের উপরে বিল হয়েছে। জারিফ এতো খুচরো আনেনি। ম্যানিব্যাগে কার্ড আছে কিন্তু এসব দোকানে তো কার্ডে পরিশোধ করা যায় না। তাই জায়ানের থেকে আপাততো ধার করে পরিশোধ করে বাড়ির পথ ধরল সবাই। মেয়েরা তো প্রচন্ড খুশি। এসব মুখোরোচক খাবার হলে প্রচন্ড রকমের খুশি হওয়াটাই জায়েজ।

চলবে ইনশাআল্লাহ্‌,
আমার মনে হয় গল্পে এবার টান দেওয়া উচিত। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here