#হৃদয়ে_লুকানো_প্রেম
#নুুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১০
প্রিয়ম বাসায় আসার পর প্রিয়া ওর ভাইয়ের রুমে হানা দিয়েছে।
“দেখ ভাই, তোর বন্ধুর ছবি দেখাবি নয়তো আমি অনশন করব। আমি বাদে সবাই তাকে দেখেছিস! এটা মেনে নেয়া যায় না না না। হুহ্!”
প্রিয়ম হাই তুলতে তুলতে বিছানায় উপুর হয়ে শুয়ে বলে,
“যা অনশন কর। নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে অনশন করবি। পানিটুকুও খাবি না। ৪৮ ঘন্টা যদি করতে পারিস তবেই আমি তোকে আমার বন্ধুর ছবি দেখাব।”
প্রিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে প্রিয়মকে এলোপাথাড়ি কয়েকটা কি*ল-ঘু*ষি দিয়ে ফোন ছিনিয়ে নিতে চাইছে। দুই ভাই-বোনের কারাকারি ও চিৎকারে ওদের বাবা-মা এসে হাজির। পিয়ালি বেগম মেয়েকে টেনে এনে জিজ্ঞাসা করেন,
“কী হয়েছে? এমনভাবে লাগছিস কেনো?”
প্রিয়া মুখ কুঁচকে বলল,
“তোমার ছেলেকে বললাম আমি তার বন্ধুর ছবি দেখব, সে দেখাচ্ছে না। আমি একটু কী দেখতে পারি না বলো?”
“না পারিস না। তখন তো মানা করছিস। এখন একেবারে বিয়ের সময় দেখবি। যা রুমে যা। পড়তে বস।”
“ধ্যাত ভাল্লাগে না।”
মায়ের কথায় মন খারাপ করে প্রিয়া চলে যায়। প্রিয়া যেতেই প্রিয়ম হেসে উঠে আর বলে,
“পা*গলিটা বিয়ের দিন শ*ক খাবে।”
পিয়ালি বেগম ও শরীফ সাহেব হালকা হেসে চলে যান। প্রিয়ম ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রোল করতে থাকে।
_______
জারিফ বাসায় এসে রাতের খাবারের পর সবাইকে জানালো প্রিয়া ওর স্টুডেন্ট এবং সেটা সে আজকেই জানলো। সবাই অবাক হলেও প্রচুর হেসেছে। জারিফের ভাবি তামান্না বলে,
“ভাই, তোমার বউকে তুমি বিয়ের পর দিন-রাত পড়াবা কারণ তুমি শিক্ষক। ইশ বেচারির অবস্থা কল্পনা করে আমার প্রচুর হাসি পাচ্ছে! শেষে কীনা তুমি ছাত্রিকে বিয়ে করবা!”
জারিফ ভাবীর কথায় বেচারা মুখ বানালো। জায়ান তামান্নার কথায় প্রতিউত্তর করে,
“তো তোমাকে কী আমি বিয়ের পর পড়ার জন্য চাপ দিয়ে লাভের লাভ কিছু করতে পেরেছি? তুমি অনার্সটা দিয়ে আর পড়বে না তো পড়বেই না বলে বসে রইলে।”
তামান্না ক্ষিপ্র স্বরে বলে,
“বিয়ের পর এক বছর পড়েছি সেটা কম কিসে হ্যাঁ? আমি তো ভেবেছিলাম আর পড়ব না। তাছাড়া আমি পরে চাইলে মাস্টার্স করতে পারব। এখন আমার তুতুল আছে।”
জায়ান সেন্টিমার্কা হেসে চুপ করে যায়। তরুণীমা বেগম এবার বলেন,
“সমস্যা কোথায় তাতে? শিক্ষকরা কি কাউকে বিয়ে করে না? তুই এসব নিয়ে একদম ভাববি না। প্রিয়াকে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে। শুক্রবার গিয়ে আকদ করিয়ে আসব। তোদের মতিগতি সুবিধার লাগে না আমার।”
জারিফের বাবা নিজের স্ত্রীকে বোঝাতে বলেন,
“আহা! জারিফ কি বলেছে বিয়ে করবে না? বলেনি তো। ওর যদি সময় প্রয়োজন নিক না।”
“না কোনো সময় না। আকদ করে রাখব তারপর যখন ইচ্ছে হবে বউ অনুষ্ঠান করে আনব। তুমি তো একটা কথাও বলবে না। আমি কারও কথাই শুনব না। সামনের রবিবার নাকি মুন্নি আসবে। তোমার বোনের মেয়ে এসে বাগড়া দিবে। ছেলে আমার মুন্নিকে বিয়ে করতে চায় না তাই যখন একবার প্রিয়াকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে তো জলদি বিয়ে হবে। এখনি প্রিয়ার বাবাকে ফোন করে জানাও শুক্রবার আকদ। আমি কিছু শুনতে চাই না।”
তরুণীমা বেগম কথাটা বলেই উঠে গেলেন। তামান্না বলে,
“বাবা, কী করবেন? শুক্রবার আকদ করাবেন?”
“তোমার মা তো তেমনই বলল। মুন্নিকে নিয়ে যে কেনো ভয় পায়! আমার বোন বিয়েতে না থাকলে কেমন একটা দেখায়। আর তরু এখনও জমিলাকে (জারিফের ফুপি) জানায়নি। পরে জানলে কস্ট পাবে না বলো?”
তামান্না বলে,
“পরে কস্ট পেলেও বড়ো অনুষ্ঠানের কথা বলে দমানো যাবে কিন্তু মুন্নি মেয়েটা আসলে খুব ঝামেলা হবে। তখন আপনি নিজের বোনের কথাও ফেলতে পারবেন না আবার ছেলেরটাও না। মা ঠিকই বলেছেন। আকদটা হয়ে যাক। তারপর দেখা যাবে।”
“আচ্ছা তোমরা যা ভালো বুঝো। আমি তবে শরীফ সাহেবকে ফোন করে জেনে নেই তাদের সমস্যা আছে কীনা?”
তামান্না ও জায়ান সায় দিলে জায়েদ সাহেব প্রিয়ার বাবাকে ফোন করেন। ফোন রিসিভ হলে একে অপরকে সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে কথা শুরু করেন। জায়েদ সাহেব বলেন,
“ভাইসাহেব, যদি কিছু মনে না করতেন কিছু বলতাম।”
প্রিয়ার বাবা কিছুটা উদ্বিগ্ন হন তিনি সুধান,
“জি বলেন।”
“আপনাদের একটা মেয়ে আমি জানি। মেয়ের বিয়ে নিয়ে অনেক ইচ্ছাও থাকবে। সবই পূরণ হবে ইনশাআল্লাহ্। আসলে শুক্রবার যদি আকদটা করিয়ে রাখা যায়। আপনাদের মতামত প্রয়োজন। আকদের পরে ভালো সময় দেখে অনুষ্ঠান করে আপনার মেয়েকে ঘরে উঠাব। আপনারা কি বলেন?”
শরীফ সাহেব তার স্ত্রীর দিকে তাকালেন। পিয়ালি বেগম উৎসুক দৃষ্টিতে স্বামীর পানে চেয়ে আছেন। শরীফ সাহেব জায়েদ সাহেবকে বলেন,
“একটু অপেক্ষা করেন ভাইসাহেব। আমি আমার স্ত্রী ও ছেলের সাথে কথা বলে আপনাকে জানাচ্ছি।”
“আচ্ছা ভাইসাহেব। রাখি তাহলে। আল্লাহ হাফেজ।”
শরীফ সাহেবও বিদায় জানিয়ে ফোন রাখে। তারপর স্ত্রীকে বলেন,
“প্রিয়মকে ডাকো তো। কথা আছে।”
“কী বললেন তিনি?”
“তুমি আগে ডাকো প্রিয়মকে। বলছি সব।”
পিয়ালি বেগম ছেলেকে ডাক দিয়ে আনলেন। প্রিয়ম এসে জিজ্ঞেসা করে,
“বাবা, কিছু বলবে?”
“হ্যাঁ। জারিফের বাবা চাইছেন, শুক্রবার আকদ করিয়ে রাখতে। আমাদের কোনো আপত্তি আছে কিনা জানতে চাইলেন।”
“করুক না। সমস্যা কোথায়?”
প্রিয়মের জবাবে শরীফ সাহেব বলেন,
“আত্মীয়-স্বজনদের কী বলব? তাদের না জানিয়ে মেয়ের আকদ।”
প্রিয়ম বলে,
“তাদের বলবে যে দেখতে এসে আকদ হয়েছে। এখন মামাদের আর চাচা-ফুফুকে বলো। তারা যদি আসতে পারে আসবে। বাকিদের পরে জানালেও হবে।”
শরীফ সাহেব খানিক ভাবলেন তারপর জায়েদ সাহেবকে ফোন করে হ্যাঁ বলে দেন। এবার পিয়ালি বেগম বলেন,
“তাহলে আমি সেলিনা আপাকে (প্রিয়ার ফুফি) ফোন করে জানাই আর আমার ভাইদের কাল জানাবো। তুমি রফিক ভাইকে জানিয়ো। কিছুটা তোড়জোড় তো করতে হবে।”
প্রিয়ম বলে,
“শুধু দেখতে এসে বিয়ে করাবে। এতো কেনো চিন্তা করছো। মেয়েকে কি সেদিনই বিদায় দিবে!”
ছেলের মাথায় চা*টা মে*রে বলেন,
“তুই চুপ কর ব*ল*দ। যা কাজে লেগে পর।”
প্রিয়ম মাথা ডলতে ডলতে চলে যায়। পিয়ালি বেগম প্রিয়ার ফুপিকে ফোন লাগায়।
___________
প্রিয়াকে সকালে ভার্সিটির জন্য বেরোনোর আগে নাস্তার টেবিলে কথাটা জানালে প্রিয়া যেনো আকাশ থেকে টুপ করে পৃথিবীতে পরে এমন অবস্থা! প্রিয়া হতবাক কন্ঠে বলে,
“শুক্রবার! এতো জলদি কেনো? আরও কয়েকদিন পর করো। আমি কি ছেলেকে জানব চিনব না? এখনও দেখতেই পারলাম না।”
“শুক্রবার মন ভরে দেখিস। আমাদের সবার পছন্দ হয়েছে তাছাড়া রাহার পছন্দ আর তোর পছন্দ তো মিলে। রাহার জিজু পছন্দ হয়েছে। ছেলে দেখতে মাশাআল্লাহ্। তুই সেদিন দেখে নিজেই পছন্দ করে বসবি।”
”কিন্তু মা! যদি পছন্দ না হয়?”
“হবে দেখিস। ছেলে স্বল্পভাষী। খুব মনোযোগ দিয়ে তোর সব কথা শুনবে। তোর বকবকের বিপরীতে সে বকবক করবে না। ছেলের পরিবার কতো ফ্রেন্ডলি। ছেলের ভাবীটাকে আমার খুব ভালো লেগেছে। মেয়েটা খুব মিশুক। ঝামেলা হবে না তোদের। এতো পারফেক্ট ম্যাচ কই পাবি!”
প্রিয়া মুখ ভাড় করে নাস্তা করে উঠে গেলো। ওর মনে ভয় হচ্ছে। বিয়ের আগে বরকে নিয়ে কতো কল্পনা ঝল্পনা থাকে মনে। প্রিয়া এসব ভাবতে ভাবতে বাসে উঠে পরে। বাসে দেখা হয় তামান্নার সাথে। তামান্না প্রিয়াকে দেখে নিজের পাশে বসিয়ে হাসি কন্ঠে বলে,
“ভার্সিটিতে যাচ্ছো?”
“হ্যাঁ আপু। আপনি কোথায় যাচ্ছেন?”
“এই একটু সামনের সুপার মার্কেট থেকে তুতুলের জন্য কিছু কিনব। বিয়ের শপিং হালকা পাতলা সেটা পরে করব মাকে নিয়ে।”
“ওহ। তুতুল কেমন আছে?”
“ও যা দুষ্ট। কী বলব। কাল যখন শুনেছে ওর চাচ্চুর বিয়ে তখন থেকে তোমার ছবি দেখে ছোটোমা বানিয়ে ফেলেছে। তোমাকে জ্বালাবে অনেক।”
প্রিয়া হাসে। তুতুলের ছবি দেখেই প্রিয়ার ওকে আদর করতে ইচ্ছে করছিল। তারপর ওদের মধ্যে টুকটাক কথা হয়। গন্তব্য আসলে তামান্না নেমে যায়।
চলবে ইনশাআল্লাহ্,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।