‘লোডশেডিং’ পর্ব ৯.

0
319

‘লোডশেডিং’
পর্ব ৯.

তাবিনা মাহনূর

_______________

চৈতির চোখে ঘুম নেই। স্বাধীন বেলি ফুলের সুবাস পেয়েছে তার মাঝে, ভাবতেই মনের অরণ্যে হারিয়ে যাচ্ছে সে। যেখানে শুধু সজীবতা ও সবুজের সমারোহ। স্বাধীনের কথা শুনে তার স্বাধীনকে পাওয়ার আশা আরো দৃঢ় হয়েছে। ভেবে রেখেছে, বিয়ের দিন ভারী শাড়ি গহনা খুলে লাল রঙের নরম তাঁতের শাড়ি পরবে সে। আর খোঁপা ও হাতে থাকবে বেলি ফুলের মালা। স্বাধীন যা দুষ্টু! হয়তো বলে বসবে, ‘ভুত আর গুপ্তচর সেজে শান্তি হয়নি? এখন ছলনাময়ী সাজতে এসেছো?’

চৈতি কল্পনায় ভাসে, ডুবে ডুবে জল খায়। তার সাথে সৌরভ যেমন আচরণই করুক, সে সহ্য করে যায় আর দিন গুনে। তার বিশ্বাস স্বাধীন নিশ্চয়ই একদিন আসবে তাকে নরকের দ্বার থেকে ফিরিয়ে আনতে।

অথচ সে উপলব্ধি করে না, স্বাধীন তাকে ওই একটা কথাই বলেছে। এর বেশি কিছু না। এরপর সে চলে গিয়েছিল। আজ ষোলো তারিখ। এতদিন ধরে কোনো কথা হয়নি তাদের। শিমুলকে সে স্বাধীনের বলা কথা বলেছে। শিমুল ভাব দেখিয়ে বলেছে, ‘আমি তো আগেই বলেছিলাম! তবে তুই আর স্বাধীন কোনো রিলেশনে যাবি না। ছেলেটা চাকরি পাক। ততদিন তুইও দ্বীনের ব্যাপারে জানতে থাক। বিয়ে ভাগ্যে থাকলে এমনিই হবে। আল্লাহ চাইলে কী না পারেন! স্বাধীনকে মনে লালন করে তার সাথে জড়িয়ে যাওয়া যাবে না।’

মন কি আর বাধা মানে? চৈতির প্রাণোচ্ছল মন শুধুই হারমনিকার সুরে হারিয়ে যেতে চায়। কিন্তু হুট করে সে আজ এমন একটা খবর পেলো যা তাকে অভিভূত করলো। সত্যি! আল্লাহ চাইলে কী না পারেন!

সকাল সকাল সৌরভ এসে হাজির। গতকাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর রাতে এসেছিল চৈতির সাথে দেখা করতে। জোরজবরদস্তি করে ছাদে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানে কিছুক্ষণ চন্দ্রবিলাস করে চলে এসেছে। তবে চৈতির বারবার পাশের ছাদের চিলেকোঠার দিকে চোখ যাচ্ছিলো। একবার সৌরভ তা খেয়াল করে বলে, ‘ওখানে স্বাধীন নেই। ও সেই কবে মামার বাড়ি গিয়েছে! বেচারার ভালো লাগেনা এ বাড়িতে।’

এরপর আজ সকালে সৌরভ এলো নতুন খবর নিয়ে। চৈতি হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা খেতে ডাইনিং রুমে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই শুনতে পেল সৌরভের কন্ঠ। সে দরজার চৌকাঠ না পেরিয়ে কান পেতে শুনতে লাগলো তাদের কথোপকথন।

– কাকা আপনি বিশ্বাস করবেন না স্বাধীন কি রকম পরিবর্তন হয়েছে!

এমন সময় জেবিনের কন্ঠ শোনা গেল, ‘কি হয়েছে রে? তোর না বন্ধুদের নিয়ে ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিল?’

সৌরভের কণ্ঠে উত্তেজনা, ‘সে কথাই তো বলছি। স্বাধীন যাবে না।’

– না গেলে, না যাক। তুই যা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করে ফেললি। এমন অনুষ্ঠান আর পাবি বল? আর তাছাড়া ছেলেটার বাবা মারা যাওয়ার পর হয়তো মন খারাপ এখনো কাটেনি।
– কাকী ঐটাই একমাত্র কারণ না। ও এখন পুরোই পরিবর্তন! অবিশ্বাস্য! ওর মামার কাছে গিয়ে দাড়ি সহ এসে হাজির হয়েছে।

সারাফ সাহেব বলে উঠলেন, ‘পুরো বিষয় খুলে বল।’

কাকার কথায় সৌরভ আরো বিস্ময় প্রকাশ করে বললো, ‘ও নাকি এসব দিন আর পালন করবে না। বিজয় দিবস, ভ্যালেন্টাইনস ডে এমনকি স্বাধীনতা দিবস যেদিন ওর জন্মদিন সেদিনটাও পালন করবে না কারণ এসব ইসলামে নিষিদ্ধ।’

– ওমা! এতো পরিবর্তন হুট করে?
– এটাই তো অবাক করা বিষয় কাকা। ওকে আমরা কত জোর করলাম। ইসলামে কাফিরদের নিয়ম মেনে চলা নিষিদ্ধ বলে ছোটখাটো বয়ান দিয়ে দিলো। তারপর সাফ জানিয়ে দিল যে আমাদের সাথে আর কোনো হই হুল্লোড়ে জড়াবে না।
– নামাজ পড়া ধরেছে?
– নামাজ সে কখনোই ছাড়েনি। ওর পরিবার তো বেশ রক্ষণশীল। ওরা নামাজকে অনেক প্রাধান্য দেয়। স্বাধীন ছোট থেকে নামাজ পড়ে। ওর মা নাকি বলতেন, ‘আর যাই করিস, নামাজ ছাড়িস না। নামাজ মুমিন ও কাফিরদের মাঝে পার্থক্যকারী।’
– মা শা আল্লাহ!

চৈতির হৃদকম্পন বেড়ে চলেছে। স্বাধীনের হঠাৎ পরিবর্তন নিজ চোখে না দেখা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছে না সে।

সৌরভ গল্পের মাঝে চৈতিকে নিয়ে বেড়াতে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুললো। সকালটা বন্ধুদের সাথে কাটিয়ে বিকালে চৈতিকে নিয়ে বাইকে লং ড্রাইভ দিতে চাচ্ছে মাওয়া রোডের দিকে। চৈতি তা শুনতে পেয়ে নিজের অজান্তেই দুই পাশে জোরে জোরে মাথা দুলিয়ে ‘না না’ করতে লাগলো। আল্লাহ চৈতির মনের আশা পূরণ করলেন।

সারাফ সাহেব বললেন, ‘চৈতিকে নিয়ে আমি কিছুদিন আগে বেরিয়ে এসেছি। শুনলাম ওর সামনে আরেকটা ছোট টেস্ট আছে। ওটা সাধারণ প্রস্তুতি পরীক্ষা হলেও আমি আর কোনো ঝুঁকি নিতে চাই না। এমনিতে ও আইসিটি আর বাংলায় এ প্লাস পায়নি। ওকে নিয়ে আমার অনেক স্বপ্ন। বাবা, তুমি রাগ করো না।’

সৌরভ কষ্ট পেলেও শেষের কথাটি শুনে দ্রুত বলে উঠলো, ‘ছি ছি কাকা! আমি রাগ করবো কেন? ওর পড়াশোনা দেখার দায়িত্ব আমার। আমি বরং আজকে ওকে পড়াতে আসবো বিকালে।’

– না বাবা। আজকে আমার বন্ধুরা আসবে বাসায়। ও বাসায় থাকুক। আমি পড়াশোনার কথা তুলেছি এ কারণে, যে ওকে নিয়ে এইচএসসি-র আগে কোথাও বের হতে চাই না। তুমিও এসো বাবা। বিকালে নাস্তা করে রাতের খাবার খেয়ে যেও।

জেবিন বলে বসলেন, ‘তোমার মেয়ে সারাদিন বাসায় থেকে কি করবে? ও কি সাহায্য করে আমাকে? তার চেয়ে একটু বেরিয়ে আসুক।’

সারাফ সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে বললেন, ‘আমার বন্ধুর মেয়ে আসবে। ওর সঙ্গ দিতে চৈতিকে প্রয়োজন হবে। তাছাড়া আমি চৈতিকে আর কোথাও যেতে দিতে চাই না পরীক্ষা না হওয়া পর্যন্ত।’

চৈতি খুশিতে দুই হাত উপরে তুলে একটু নেচে নিলো। মনে মনে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলো।

_____

দুপুরে গোসল সেরে কাপড় নিয়ে ছাদে গেল চৈতি। কপাল ভালো তার, স্বাধীন আগে থেকেই ছাদে দাঁড়িয়ে। সেও নিজের কাপড় মেলে দিচ্ছে। চৈতির দিকে চোখ পড়ায় দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলো স্বাধীন। চৈতি অবাক হওয়ার পরক্ষণেই ভাবলো, স্বাধীন হয়তো দৃষ্টির হেফাজত করার চেষ্টা করছে। সে তাড়াতাড়ি করে ছাদের কোণায় গিয়ে বলে উঠলো, ‘আসসালামু আলাইকুম! শুনছেন? একটু কথা আছে।’

স্বাধীন দাঁড়িয়ে থাকলো কিন্তু মাথা তুললো না। চৈতি বলে উঠলো, ‘আপনি কি আমার দিকে তাকাবেন না?’
এবার স্বাধীন মুখ খুললো, ‘সেদিন বড় মামা খেয়াল করেছেন আমি তোমার দিকে বেহায়ার মতো তাকিয়ে ছিলাম। এরপর আমাকে উনি অনেক কিছু বলেছেন ইসলামে পুরুষের পর্দা নিয়ে। তাই আল্লাহর রহমাতে পর্দা মেনে চলার চেষ্টা করছি।’

এ কথা শোনার পর চৈতির কিছুটা অস্বস্তি বোধ হলো। সে মাথায় ওড়না দিয়ে আসেনি আজ। এখন আলগোছে ওড়না মাথায় তুলে নিয়ে সে বললো, ‘তাহলে কোনোদিন আমার দিকে তাকাবেন না?’

– প্রথমত তুমি গায়রে মাহরাম অর্থাৎ পরনারী। দ্বিতীয়ত, তুমি অন্য কারো।

চৈতির প্রচন্ড রাগ হয়ে এলো। ছাদের রেলিং ঘেঁষে এমনভাবে দাঁড়িয়ে গেল যেন ওই ছাদে চলে যাবে সে।

– আপনি আসলে কি চাইছেন বলবেন? আমাকে কি মনে হয় আপনার?
– কিছুই না।
– কিছুই না! ঢং করছেন? আমি জানি আপনি আমাকে পছন্দ করেন। বন্ধুর বিশ্বাস হারানোর ভয়ে কিছু বলতে পারছেন না।

এ পর্যায়ে স্বাধীন মুখ তুলে তাকিয়ে চৈতির রাগান্বিত চেহারা দেখে হেসে ফেললো। সেই হাসিতে চৈতি দমে যায়নি। আজ তার রাগের সীমা পেরিয়ে গিয়েছে।
স্বাধীন এবার চৈতির কাছাকাছি রেলিংয়ের ধার ঘেষে দাঁড়ালো। এক পলক চৈতিকে দেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে সে বললো, ‘মোহ আর ভালোবাসা কখনোই এক নয় চৈতি।’

চেঁচিয়ে উঠলো চৈতি, ‘ওহ! আপনি বলতে চাইছেন আমার প্রতি আপনার শুধুই মোহ? তাহলে কিশোর বয়স থেকে বুঝি একই মোহ কাজ করে? একই মোহ এতদিন যাবৎ একটা মানুষ কীভাবে লালন করতে পারে?’

– কিশোর বয়স মানে? চৈতি শোনো, সৌরভ আমার সামনে তোমাকে অপদস্থ করতো বলে আমি কৌশলে প্রতিহত করেছি। কারণ একটাই, তোমাকে দেখে মায়া হতো আমার।
– মায়া? শুধুই মায়া? সেদিন কেন বললেন বেলির সুবাস ছড়িয়ে আছে?

স্বাধীন বললো, ‘ঐযে বললাম মোহ। আমার বিপদের দিনে কেউ ছিল না আমার পাশে। বাবার শোকে মা কাতর হয়ে ছিলেন, এরপর ভাবীর মৃত্যুতে ছোট ভাই দিশেহারা হয়ে গেলেন। আত্মীয় স্বজন মা আর ছোট ভাইকে নিয়ে ব্যস্ত থাকলেন। বড় ভাইকে সামলালেন বড় ভাবী। আমি কি করতাম? তাই একাই এক ঘরে লুকিয়ে কান্না করে নিজেকে হালকা করতে চাইছিলাম। সেসময় আমার কাউকে প্রয়োজন ছিল। হঠাৎ তুমি আসলে। বুঝতে পারছো? ওই সময়টায় আমার পাশে যেই আসতো তাকে জড়িয়েই শান্তি পেতে চাইতাম আমি। তুমি কাঁদছিলে, আমার মনে হচ্ছিল তোমার কোমর জড়িয়ে পেটে মাথা ঠেকিয়ে একটু মন ভরে কাঁদি। কিন্তু আল্লাহর রহমাত থাকায় ওই সময় তোমাকে দেখে সেই ইচ্ছে জাগার সাথে সাথেই আমার ভেতরে দৃঢ়তা চলে আসে। তাই আমি দ্রুত সরে পড়ি সেখান থেকে। কিন্তু শয়তান সেই সুযোগ হাতছাড়া করেনি। শয়তান বুঝে যায় আমি তোমার প্রতি ক্ষনিকের জন্য দুর্বল হয়ে পড়েছি। সেটা কাজে লাগিয়ে শয়তান আমাকে কয়েকটা দিন ভুগিয়েছে। আমি তাই দ্বিধায় ছিলাম।’

– কেমন দ্বিধা?

স্বাধীন চৈতির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘আমি হুট করে তোমার সবকিছু নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। বাবার শোক আর ভাবীর মৃত্যু নিয়ে যতটা কষ্ট পেয়েছি, তার পাশাপাশি তোমার চিন্তা আমাকে বেশ বিরক্ত করেছে। তাই তোমাকে ওইদিন মনে আশা রাখতে মানা করেছি। তারপর শয়তান আমাকে আরো পেয়ে বসলো। তোমাকে নিয়ে ভাবতে গিয়ে এক পর্যায়ে সৌরভকে বিরক্ত লাগতে শুরু করলো। আর সেদিন তোমার লাল শাড়ি পরা রূপ আমার দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছিল। কি করতাম আমি? মনে অজান্তেই তোমাকে ওসব বলে বসলাম। আলহামদুলিল্লাহ, বড় মামার উসিলায় আল্লাহ আমাকে সঠিক পথে আসতে সহায়তা করলেন। আমি এখন বিন্দুমাত্র বিচলিত নই তোমাকে নিয়ে। তুমি সৌরভকে বিয়ে করো, তাতে আমার আফসোস নেই। মোহ নিয়ে আফসোস করতে হয় এটা ভেবে যে আমি একটা পাপ কাজ করেছি। তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল। নিশ্চয়ই তিঁনি আমাকে ক্ষমা করবেন।’

অবাক তাকিয়ে চৈতি। এটা কোন স্বাধীন! যার পকেটে থাকতো হারমনিকা আর চোখে সীমাহীন আকাশের মতো দৃঢ়তা! এ কোন স্বাধীন? যার হারমনিকার সুরে মন দরিয়ায় ঢেউ খেলে যেত, যার ঝাঁকড়া চুলের দুলুনি নজর আটকে দিতো! অথচ আজকের স্বাধীনের হাতে হারমনিকা নেই, তীক্ষ্ণ চিবুক দাঁড়ির আড়ালে ঢাকা। দৃঢ় দৃষ্টি আছে তবে তা নিমিলিত। চৈতি থমকে গমগমে কণ্ঠে বললো, ‘তাহলে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেন কেন? আমার প্রতি এত মায়া? অন্য যেসব মেয়েরা প্রতিদিন নির্যাতনের শিকার হয় তাদেরকে বাঁচান। যান!’

হেসে উঠলো স্বাধীন, ‘এসব আমার সামনে ঘটছে না তাই তাদের সাহায্য করতে পারছি না। তোমার ঘটনা আমার সামনে ঘটে।’

– তাহলে আপনার বন্ধুকে মানা করেন না কেন আমার উপর চড়াও না হওয়ার জন্য? ঐদিকে তো ঠিকই তাল রেখেছেন।
– শোনো, আমি ওকে বলেছি মেয়েটাকে এতো বকাঝকা করে লাভ কি? ও বলেছে ওর এই বিষয়ে যেন আমরা কেউ নাক না গলাই। তুমি ওর বউ হবে, এটা নিশ্চিত। তাই বউকে কীভাবে হাতের মুঠোয় রাখতে হয় সেটা আগে থেকে করে নিচ্ছে। আমরা নাক গলালে ও অন্য চোখে দেখবে। এসব শোনার পর ভাবলাম, ওর বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা সত্যিই অনুচিত। এটা সম্পূর্ণ তোমার আর ওর ব্যক্তিগত বিষয়।
– আচ্ছা? তারমানে আপনার সামনে একজন ডাকাতি করছে দেখে আপনি তাকে বাধা দিবেন, অথচ একটা লোক ডাকাত এটা আপনি জানেন কিন্তু তাকে পুলিশে ধরিয়ে দিবেন না কারণ সে আপনার সামনে ডাকাতি করেনি। এই যুক্তি মেনে চলেন?

চৈতিকে উদ্ভ্রান্তের মতো দেখাচ্ছে। স্বাধীন হতাশ হলো এই বিষয়ে। চৈতি পাগলের মতো করছে, আজকে যেন তার মাঝে সৌরভের ক্রোধ চেপে বসেছে যা অপর পক্ষের মানুষকে ধ্বংস করে দিতে সক্ষম।

– চৈতি, তুমি শান্ত হও। আমার কথার অর্থ বোঝার চেষ্টা করো। আমি কি বলিনি সৌরভকে? আমি বলেছি যে তোমার সাথে অকারণে রাগারাগি করা ঠিক নয়। এটা ওর কাছে ওর অধিকারে হস্তক্ষেপ বলে মনে হলে আমি চিন্তা করে দেখেছি যে, আমি আর কিছু বললে হয়তো ও তোমার বাহিরে বের হওয়ার স্বাধীনতা কেড়ে নিতে চাইবে। হয়তো তোমাকে ছাদে আসতে দিবে না কিংবা সাইকেল চালাতে দিবে না। তোমার স্বাধীনতা তখন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যেতো। আমি তাই কিছু না বলাটাই ভালো মনে করেছি।

চৈতি কাঁপছে। রাগে তার শরীর কাঁপাকাপি করছে। পাগলের মতো নীচে উঁকিঝুঁকি দিয়ে সে হঠাৎ রেলিংয়ে বসে পড়লো। স্বাধীন আঁতকে উঠে বললো, ‘চৈতি! আত্মহত্যা মহাপাপ! এ কাজ করো না।’

চৈতি নাক ফুলিয়ে বললো, ‘চিন্তা নেই। আমি আত্মহত্যা করবো না। এখান থেকে লাফ দিয়ে ওই ছাদে যাওয়া যায় কিনা দেখছি।’

স্বাধীন আরো ভয় পেয়ে গেল। দুই ছাদের মাঝের দূরত্ব দুই হাত পরিমাণ। এখানে লাফ দিয়ে আসা খুব সহজ বিষয় নয়। স্বাধীন বলে উঠলো, ‘দয়া করে এমন কাজ করো না। আমাকে বলো কি করতে চাও তুমি? আমি আসছি।’

– আপনার মাথা ভাঙবো। উফ! বেশ দূরে দেখছি। এক দুই তিন বলে লাফ দিই। মরলে তবু বলতে পারবো যে মরার ইচ্ছে ছিল না।
– দোহাই লাগে এদিকে এসো না!
– আমি আপনার সামনাসামনি হতে চাই। নিচ দিয়ে যেতে পারবো না কেউ দেখে ফেলবে। এই দুপুরে কেউ ছাদে আসবে না, আমি এভাবেই যাবো। আরে!

শেষটায় চৈতি চিৎকার করে উঠে দু হাতে চোখ ঢেকে ফেললো। আস্তে আস্তে হাত সরিয়ে দেখলো, স্বাধীন দুই হাঁটুতে হাত রেখে বসে আছে। তাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রাগান্বিত স্বরে বললো, ‘জেদি মেয়ে! এমনি কি রাগকন্যা নাম দিয়েছি? আমাকে এখানে এনে ছাড়লো!’

_________

চলবে ইন শা আল্লাহ….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here