‘লোডশেডিং’
পর্ব ২৪.
তাবিনা মাহনূর
_____________________
ক্ষুদ্র জীবনে সময়ের ব্যবহার মনের তৃষ্ণা মেটায় না। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে যথাযথ ব্যবহার করতে না পারলে মানবসত্তা তৃষ্ণার্ত থেকে যায়। দুনিয়াবী চিন্তা চেতনায় ব্যস্ত মানুষগুলো ধারণা করে, তারা সময়ের সঠিক ব্যবহার করছে। আফসোস! জীবনের শেষ সময়ে এসে তারা যখন উপলব্ধি করবে, এই দুনিয়ার জীবনে ব্যয় করা সময়গুলো তাদের আখিরাত গড়ে তুলেনি, তখন সত্যিই সময়ের স্বল্পতা অনুভব করবে তারা!
সময় নিয়ে গবেষণায় ব্যস্ত চৈতি। কাল থেকে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে। এপ্রিল মাসের দুই তারিখ এত দ্রুত চলে এলো, তার কাছে সবটা কল্পনা মনে হচ্ছে। জানুয়ারি মাসের প্রথম দিকে তার সাথে ঘটে যাওয়া নির্মম নির্যাতন সে ভুলতে পারেনি। সেই ঘটনার পর প্রায় তিন মাস কেটে গেল। বদলেছে অনেককিছু।
শিমুলের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। বিয়ের আগেরদিন নিরা বাড়িতে এসেছিলেন। মেয়েকে জড়িয়ে অনেক কাঁদলেন আর তার কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইলেন। আল্লাহর রহমতে নিরা এখন পর্দা মেনে চলার চেষ্টা করেন। মাঝে মাঝে চৈতির সাথে দেখা করতে আসেন। নিজের মেয়ের অভাব পূরণ করতে চৈতিকে নিয়ে প্রায়ই রান্নাঘরে রান্নার কাজে হাত লাগান যেন শিমুলই তার পাশে আছে।
শিমুল চলে যাওয়ায় জয়নাব বেগম চার তলায় চলে এসেছেন। নিরা অনেকবার বলেছেন দোতলায় ফিরে যেতে। কিন্তু তিনি শিমুলের অনুপস্থিতি খুব বেশি অনুভব করেন বলে সেখানে থাকতে চাইছেন না।
সজীব সাহেব সারাফকে বেশ সমীহ করে চলেন। সৌরভ এখনো চৈতির সামনে আসেনি। সে কোনোভাবে জানতে পেরেছে যে, চৈতি তাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। সজীব তাই তাকে পরামর্শ দিয়েছেন বিয়ের আগ পর্যন্ত চৈতির সাথে যেচে কথা না বলতে। বিয়ের দিন যেন হাতে পায়ে ধরে ক্ষমা চায় সে। সৌরভ অবশ্য ভেবে রেখেছে সে চৈতির কাছে ক্ষমা চাইবে, সেই সাথে চৈতি সারাজীবন যা চাইবে তাই করবে সে। চৈতি তাকে বিয়ে করবে এটাই অনেক বড় কিছু। সৌরভ এতে বেশি খুশি হয়েছে কারণটা স্বাধীন। স্বাধীনকে উচিত জবাব দেয়ার জন্য সে চৈতির পায়ে ধরে মাফ চেয়ে বিয়ে করতে রাজি আছে।
স্বাধীন রাশিয়া চলে যাওয়ার দুই সপ্তাহ পার হয়ে গেল। তার চলে যাওয়ার যাত্রাটা অনেকটা নাটকীয় হয়েছে। সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সে সারাফ সাহেবের সাথে দেখা করেছিল। সারাফ তাকে স্নেহ ভরা কণ্ঠে কিছু উপদেশ দেন যেগুলো সে সবার কাছ থেকেই একটু আধটু পেয়েছে। ‘বিদেশে একা থাকবে, বখে যেও না। ইসলামকে আঁকড়ে ধরে আছো সেটা ছুঁড়ে ফেলো না। ওই দেশি মেয়ে বিয়ে করো না!’ এমনই সব উপদেশের ভিড়ে স্বাধীন শুধু হেসেছে। আল্লাহর কাছে সবসময় সাহায্য চেয়েছে সে। বিদেশ যাত্রা নিয়েও সাহায্য চেয়েছে।
কিন্তু ফেরার পথে জেবিন যখন বললেন চৈতির সাথে দেখা করে যেতে, স্বাধীন বলেছিল, ‘আন্টি, চৈতি বাচ্চা মেয়ে। কষ্ট পেতে পারে। থাক নাহয়।’
জেবিন বলেছিলেন, ‘তুমি যদি দেখা না করে যাও তাহলে ও বেশি কষ্ট পাবে।’
ঘর থেকে জয়নাব বলে উঠলেন, ‘ক্যাডা কষ্ট পাইবো? ছুডু কুহু জোয়ান মাইয়া, হ্যায় জোয়ান পোলা। তুমি দুইজনরে দেহা করতে কও ক্যা? জেনা হইবো না?’
জেবিন এর পৃষ্ঠে আর কিছু বলতে পারেননি। একটা ছেলে আর মেয়ের মনে নিষিদ্ধ অনুভূতি থাকলে তা মনের মাঝেই চেপে রাখতে হয় এবং তার জন্য ক্ষমা চাইতে হয় আন্তরিকভাবে। অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটলে পাপ গোপন থাকে না। তখন প্রকাশ্য পাপ সকলের সামনে তুলে ধরা হবে। স্বাধীন বিচক্ষণ ছেলে। সে চৈতির সাথে দেখা না করেই নীচে নামছিল। সেসময় চৈতি দোতলা থেকে নিরার কাছ থেকে ফিরে বাসার উদ্দেশ্যে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠছিল।
তাকদীরে যা লেখা ছিল, তাই হলো। স্বাধীন থমকে দাঁড়ালো আর চৈতিও দাঁড়িয়ে গেল। কিছুক্ষণ দুজনেই দাঁড়িয়ে থাকলো। স্বাধীন বলে উঠলো, ‘চলে যাচ্ছি। জানি না কবে ফিরবো। ভালো থেকো।’
চৈতি একটাই উত্তর দিয়েছে, ‘আপনিও।’
চলে যাচ্ছে স্বাধীন। পেছন ফিরে তাকালে ঠিক সেসময় চৈতিও পেছন ফিরে তাকায়। স্বাধীন সামনে ঘুরে চলে যাওয়ার সময় চৈতি বললো, ‘আল্লাহ আপনার ঈমান শক্ত রাখুন!’
– আমিন!
_______________
এরপর চৈতির স্বপ্ন বলতে শুধুই আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার প্রচেষ্টা। সে মনে করে, প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন এটাই হওয়া উচিত এবং প্রানপন চেষ্টা করা উচিত স্বপ্নটাকে বাস্তব রূপ দিতে।
চৈতির ভাবনায় ছেদ পড়লো জয়নাবের ডাকে।
– ছুডু কুহু! এদিকে আয় নারে বুড়ি!
চৈতি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বিছানায় বসে বললো, ‘কি হয়েছে বুড়ি?’
– শিমুলের নাম্বারে একটু ফোন কইরা দে রে। কতা কইতে মনে চায়।
চৈতি শিমুলকে ভিডিও কল দিলো। অনেকক্ষণ কথা বলার পর শিমুলের সাথে একান্তে কথা বলার সুযোগ পেলো সে। ভিডিও কল কেটে অডিও কলে কথা বলতে শুরু করলো।
– কাল থেকে পরীক্ষা। নার্ভাস লাগছে।
– নার্ভাস লাগবেই। আমি তোকে এটাও বলতে পারবো না যে টেনশন করিস না। কারণ আমি তোর চেয়ে বেশি ভয় পেতাম। তবে একটা কথা বলবো, তুই অনেক ভালো ছাত্রী। তোর টেনশন একটু কম করা উচিত। যারা পড়াশোনা করে না তারা বেশি টেনশন করবে।
– তারপরও চিন্তা হচ্ছে। এই পরীক্ষার উপর আমার ক্যারিয়ারের ভিত্তি গড়ে উঠবে।
– এত বেশি চিন্তা করা ঠিক না। বাংলাদেশে জিপিএ পাঁচ না পেলে সমাজ কটু কথা বলবে। কিন্তু জিপিএ পাঁচ না পেয়েও অনেককিছু করতে পারবি। আর তোর বুদ্ধির বেশি প্রশংসা করবো না, এটা হাদিস পরিপন্থী। শুধু বলছি, তুই বৃত্তি পাওয়ার মতো মেয়ে।
চৈতি মুচকি হেসে বললো, ‘ইন শা আল্লাহ, আল্লাহ যা রেখেছেন ভালোর জন্যই।’
– এটাই তাওয়াক্কুল। শোন, মন ভালো তো?
– হুম। তোমার সাথে কথা বলে আরো ভালো লাগছে।
– কালকে পরীক্ষা, মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে। দরকার পড়লে আমি আসবো কালকে তোর কাছে।
চৈতি খুব খুশি হয়ে বললো, ‘তুমি আসলে খুবই ভালো লাগবে। কিন্তু তোমার কষ্ট হলে থাক।’
– আমি আসবো। মন ভালো রাখবি। মন ভালো থাকা ঔষধের মতো। ছোট কাকীর সাথে তোর সম্পর্কের উন্নতি দেখে খুব ভালো লাগে রে।
– জি আপু। এজন্যই বলেছিলাম, আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
– তোর অনেক ধৈর্য মা শা আল্লাহ।
কথা শেষে চৈতি পড়তে বসলো। তাহাজ্জুদের নামাজ পর্যন্ত পড়াশোনা করে চৈতি। এরপর ফজরের নামাজ পড়ে ঘুমাতে যায়। কিন্তু আজ জেবিন এসে বললেন, ‘কাল পরীক্ষা, আজকে বেশি রাত জাগতে হবে না।’
চৈতি বই বন্ধ করে শুয়ে পড়লো। জেবিন লাইট অফ করে দরজা ভিড়িয়ে চলে গেলেন। চৈতি নিঃশব্দে উঠে দাঁড়িয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো।
ছোট্ট মেয়ে চৈতি এই বারান্দায় মায়ের কোলে বসে কত গল্প করেছে! পাঁচ বছর বয়সের দুই একটা স্মৃতি এখনো মনে পড়ে তার। কুহুর কোলে বসে চিপস খাচ্ছিলো সে। আর বাবা সারাফ ঘর থেকে বারান্দায় এসে মায়ের পাশে বসে হাসি ঠাট্টা করছিলেন। ছোট্ট চৈতি সেসব অনুভূতি বুঝতে পারেনি তখন, কিন্তু মা বাবার আলোচনায় মনোযোগ না দিয়ে সামনের বাসার গাছে থাকা চড়ুই পাখিটা দেখছিলো। কি সুন্দর উড়তে পারে তারা!
বড় হওয়ার সাথে সাথে চড়ুই পাখির সাথে হিংসে জেঁকে বসলো তার। মা চলে গেল, বাবা বাধা পড়লো মামণির কাছে। দাদি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। সৌরভের ধমক আর জেবিনের অনাদরে তার মনে মুক্ত পাখি হওয়ার সুপ্ত বাসনা বেড়েই চললো। কিন্তু পাখি হওয়ার শক্তি কখনোই মিললো না।
স্বাধীন নামক পাখিটার অস্তিত্ব তাকে ভালো লাগার অনুভূতি দিলে সেই পাখিকেই নিজের মুক্তাবস্থা ভেবে নিলো চৈতি। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাগুলো সেই পাখিকেও কেড়ে নিলো। এখন আর কোনো উপায় নেই।
কিন্তু নাহ! চৈতি হাল ছাড়েনি। পাখি হতে চায় না সে। মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ রূপেই মানুষের সীমাবদ্ধতা মেনে নিজের সম্মান রক্ষার্থে কাজ করে যাবে সে। নিজেকে সরল পথের পথিক রূপে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দেখানো পথে চলতে চলতে এক সময় আসল সাফল্যে পৌঁছাবে সে। এটাই তার প্রত্যাশা।
__________
এইচএসসি পরীক্ষার শেষ দিন আজ। প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা থাকায় কোনো প্রকার চাপ ছিল না চৈতির। আজ নিজেকে মুক্ত পাখি মনে হচ্ছে। কিন্তু পরক্ষণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কথা ভেবে মন ভার হয়ে এলো। এসএসসি পরীক্ষার পর তিনটা মাস ছুটি পাওয়া যায়। সেসময় অন্য পড়ার চাপ থাকে না। কিন্তু এইচএসসির পর আরো চাপ বেড়ে যায়। তবু আজকের দিনটা সে ছুটি কাটাবে। পড়াশোনা ও অন্যান্য সকল চিন্তা থেকে মুক্তি দিবে নিজেকে।
রাস্তার ফুটপাতে হাঁটছে চৈতি। আজ হেঁটে বাসায় ফিরবে সে। বাবাকে ফোন করে বলে দিয়েছে, গাড়ি না পাঠাতে। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ একটা রিকশা দেখে বললো, ‘এই রিকশা! যাবেন?’
রিকশায় উঠে রিকশা চালককে সে বললো, ‘আমাকে অনেকদূর নিয়ে যান তো মামা।’
চিন্তিত কণ্ঠে রিক্সাওয়ালা মামা বললেন, ‘এইডা কিরাম কতা মা?’
– মামা, আপনি টিএসসি চলেন।
টিএসসি এসে একা একা ঘুরাফেরা করলো চৈতি। প্রথমে আম ভর্তা খেলো, এরপর ফুচকা খেলো ঝাল মিশিয়ে। গাছের দোকানে গিয়ে রুয়েলিয়া ফুলের গাছ কিনলো বাবার টেবিলে সাজিয়ে রাখার জন্য। মাটির দোকান থেকে ছোট একটা মাটির আয়না কিনলো। সাথে শিমুলের জন্য মাটির তৈরি ফুলদানি। সব টাকা তার এইচএসসি পরীক্ষা উপলক্ষে বিভিন্ন আত্মীয় স্বজন দিয়েছিল। সে এই বিষয়টা বুঝে না, পরীক্ষার আগে কেন টাকা দেয় তারা? তবে ভালোই হয়েছে। সেই টাকা দিয়ে মনের ইচ্ছা পূরণ করছে চৈতি।
নীলক্ষেত গিয়ে সাদিয়ার জন্য রূপকথার গল্পের বই কিনলো। আর সাদিকের জন্য রকিব হাসানের ‘তিন গোয়েন্দা’। সাদিয়া গোয়েন্দা কাহিনী পছন্দ করে না। চৈতি অবশ্য গোয়েন্দা কাহিনী বেশি পছন্দ করে। তাই যতগুলো বই কিনলো, তার বেশিরভাগ মিস্ট্রি।
কেনাকাটা, ঘুরাঘুরি শেষে ভারি ব্যাগ নিয়ে ঝামেলায় পরে গেল চৈতি। ঠিক সেসময় দেখা হয়ে গেল মাহিয়ার সাথে। মাহিয়াকে দেখে চৈতি ডেকে উঠলো, ‘মাহিয়া আপু!’
মাহিয়া ঘাবড়ে গেল। কেননা তার সামনে সাদা হিজাব আর নিকাব পরে কলেজ ড্রেস পরা অবস্থায় কেউ দাঁড়িয়ে আছে। এমন কাউকে সে চিনে না। চৈতি কাছে এসে বললো, ‘আমাকে চেনোনি আপু? আমি চৈতি!’
বেশ অবাক হলো মাহিয়া, ‘হায় আল্লাহ! চৈতি তুমি নিকাব পরা শুরু করেছো কবে থেকে?’
– অনেকদিন হয়ে গেল আলহামদুলিল্লাহ। কেমন আছো আপু?
– আলহামদুলিল্লাহ। তোমার শরীর কেমন? পরীক্ষা ছিল নাকি?
– জি আপু। তোমার সাথে অনেকদিন পর দেখা হলো।
– তোমাদের বাসায় যাওয়া হয় না তো। চলো কোথাও বসি।
– না আপু। আমার এখন বাসায় যেতে হবে।
– তোমার হাতে দেখছি অনেককিছু। আমার গাড়িতে চলো।
চৈতি মানা করলেও মাহিয়া শুনলো না। গাড়িতে বসে চৈতির মনে পড়লো, জেবিনের জন্য সে কিছুই নেয়নি। নিজের ভুলের জন্য মন খারাপ হলো চৈতির। ঠিক সেসময় অনাকাঙ্ক্ষিত ফোন কলে চমকে উঠলো সে। মাহিয়াকে রাশেক ফোন করেছে।
মাহিয়া বলে উঠলো, ‘তুইও রাশিয়া চলে যাবি, আগে বলিসনি কেন রাশেক?’
ওপাশ থেকে কিছু একটা উত্তর দিলো রাশেক। মাহিয়া এবার বললো, ‘যা। তোরা সবাই যা। স্বাধীনটা গিয়ে আমার সাথে কোনো যোগাযোগ রাখলো না। বলে কিনা গায়রে মাহরাম! আমি তো জানি, রাশিয়ায় আলিয়াও গিয়েছে। আলিয়াকে ও আগে থেকেই পছন্দ করতো কেন যেন আমার এটা সবসময় মনে হতো। এখন দেখ, আলিয়া নাকি ওরে বিয়ের প্রস্তাব দিবে।’
ওপাশে আবারো কিছু একটা বললে মাহিয়া বললো, ‘কি বলিস? ও তো প্রেম থেকে বেঁচে থাকতে চায়। আলিয়াকে বিয়ে করলে সুবিধা আছে। মেয়েটা হিজাব পরে। হ্যাঁ হ্যাঁ বুঝছি! দেশে আসবে কবে ওরা?’
চৈতি জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে উদাসীন চিত্তে মনে মনে বললো, ‘সুবহানাল্লাহ! আলহামদুলিল্লাহ!’
বাসায় ফিরে সবাইকে উপহার দিলো চৈতি। সাদিয়া আর সাদিক বই পেয়েই পড়া শুরু করে দিয়েছে। আজ শিমুল বাসায় আসবে। জেবিন তাই রান্নাঘরে ব্যস্ত। চৈতি রান্নাঘরে গিয়ে ডেকে উঠলো, ‘মামণি!’
জেবিন একবার তাকিয়ে আবারো রান্নায় মনোযোগ দিলেন, ‘কিরে? ফ্রেশ হয়ে নে। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেল। দুপুরের খাবার তো খাসনি।’
– বাইরে ফুচকা খেয়েছি।
– শুধু ফুচকা খেয়ে পেট ভরে? তাড়াতাড়ি গোসল করে নে।
– মামণি!
এবার জেবিন ফিরে তাকালেন, ‘কি হয়েছে?’
চৈতি একটা হালকা বেগুনি রঙের রুয়েলিয়া ফুল দিয়ে বললো, ‘এটা কানে লাগাবে?’
জেবিন হেসে বললেন, ‘তুই লাগিয়ে দে।’
চৈতি জেবিনের কানের পিছে চুলের ভেতর ফুল গুঁজে তার কেনা আয়নায় জেবিনকে চেহারা দেখালে জেবিন বললেন, ‘ফুলটা খুব সুন্দর।’
– মামণি, এই আয়নাটা তোমার।
– ওমা! দেখি?
জেবিন হাসিমুখে আয়না দেখতে শুরু করলেন। চৈতিও তখন মুচকি হেসে ভাবছে, ‘মানুষের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলে কতই না সুন্দর দেখায়! সেই হাসির কারণটা যদি নিজেই হতে পারি, তাহলে আশেপাশের সকল কিছুই আনন্দময় মনে হয়। নিজের কিছু বিসর্জন দিয়ে হাসি ফোটাতে পারলেও একই সুখ!’
____________________
চলবে ইন শা আল্লাহ!
[বাড়তি পর্ব দিয়েই দিলাম। বিনিময়ে আমার জন্য দুআ করবেন অবশ্যই। যেন ঈমানের সহিত মৃত্যু বরণ করি আর জান্নাতে আল্লাহর নূরের দেখা পাই!]