‘লোডশেডিং’
পর্ব ৩০.
তাবিনা মাহনূর
___________________
নিবরাসের গম্ভীর মুখ দেখে চঞ্চল নিবরাসের মুখশ্রী ভুলে গেল চৈতি। এই নিবরাসের সাথে একটু আগের নিবরাসের কোনো মিল নেই। দৃঢ় চিবুক আর জড়ো কপাল বলে দিচ্ছে, নিবরাস এখন গহীন চিন্তায় মগ্ন। চৈতি তার জীবনের অপ্রিয় অধ্যায়ের গল্পটা বলার পর থেকে সামনে বসে থাকা মানুষটার কন্ঠ রুদ্ধ হয়ে গিয়েছে, চোখ জোড়ার দৃষ্টি এখন আর উপরে নেই।
বেশ কিছুক্ষণ পর নিবরাস বলে উঠলো, ‘আপনাকে বিশ্বাস না করলে রাগ করবেন?’
চৈতির মুচকি হাসির উত্তর, ‘রাগ করলে আপনার কিছু আসে যায়?’
নিবরাস পিঠ টানটান করে বসে চৈতির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘দেখুন, আমি খুব প্রাণোচ্ছল কিংবা দাপুটে ছেলে হলেও মানুষের মনে কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে ভয় করে চলি। আমার দুষ্টুমির কারণে কেউ কষ্ট পাবে, এটা মেনে নিতে পারি না। এই ব্যাপারটাও এমন। আপনার ক্ষেত্রে যদি আমি আপনার কথাগুলো অবিশ্বাস করে বলি আপনি নিজেকে বাঁচাতে ধর্ষিতার ট্যাগটা গায়ে চড়িয়ে রেখেছেন, এতে আপনার রাগ হতে পারে। হওয়াটাই স্বাভাবিক। তখন আমি সত্যিই কষ্ট পাবো।’
– বাহ! আমাকে রাগিয়ে দেয়া কিংবা কষ্ট দেয়ার মতো কথা বলবেন, আর আমি কষ্ট পাবো না, এটা কেমন চাওয়া? দুই দিকেই ঠিক থাকা কি আদৌ সম্ভব?
– আপনি আমার কথার অর্থ বুঝেননি।
– তবে বুঝিয়ে বলুন।
নিবরাসের দৃষ্টি এখন চৈতির মনের প্রতিচ্ছবি দেখতে চাইছে। তার এমন গহীন চাহনি চৈতিকে দ্বিধায় জড়িয়ে রেখেছে। নিবরাস চাইছে কি!
– আমার কথার অর্থ হলো, আমি চাই না আপনি কষ্ট পান। আবার আপনার কথাগুলো বিশ্বাস করতে আমার অবচেতন মন সায় দিচ্ছে না। তাই আমি চাই আপনি প্রমাণ দিন, আপনার স্বপক্ষে।
চৈতির জবাব, ‘প্রমাণ হিসেবে যাদেরকে আপনার সামনে দাঁড় করাবো, তাদেরকেও আপনি বিশ্বাস করবেন না।’
– কাদের?
– উম্মি, বাবা, শিমুল আপু, এ বাড়ির প্রত্যেক সদস্য। আর পাশের বাসার স্বাধীন ভাই।
– বাড়ির সদস্যরা আপনার পক্ষ নিবে, এটা অস্বাভাবিক নয়। তবে পাশের বাসার কে বললেন?
– স্বাধীন ভাই।
– উনি কেন আপনার পক্ষ নিবে?
– কারণ উনি সত্যবাদী। উনি যা দেখেছেন তাই বলবেন।
নিবরাস চুপ করে আছে। তবে বেশিক্ষণ সময় না নিয়ে সে বললো, ‘মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রমাণ নেই?’
– আমাদের স্টোর রুম।
– মানে?
– ধর্ষণের পর আমি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গিয়েছিলাম। চাদর কেটে টুকরো করেছি, কম্বল কেটেছি, আর ডিভান ঘর থেকে বের করে স্টোর রুমে রেখেছি। টুকরো কাপড়গুলো হয়তো এখন পাবেন না, কিন্তু ডিভান ওখানেই পাবেন।
– এটাও কোনো প্রমাণ!
– আমার কাছে আর কোনো প্রমাণ নেই।
আবারো নিস্তব্ধতা। চৈতি বুঝে গিয়েছে, নিবরাস তাকে অবিশ্বাস করছে এবং সে এই বিয়েতে অমত করবে। চৈতির ভেতরে জেগে ওঠা সজীব কলিটা সে প্রস্ফুটিত হতে দেয়নি। নাহলে ফুটে ওঠা সেই ফুলের পাপড়িগুলো সহজেই ঝরে যেতো এই অল্প সময়ের কথোপকথনে। তাতে চৈতি দ্বিতীয় আঘাতটা পেতো।
কিন্তু তাকে অবাক করে দিয়ে নিবরাস উঠে দাঁড়িয়ে বললো, ‘আপনাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে। মাত্র কিছুক্ষণের আলাপনে আমি এতটাই মুগ্ধ হয়েছি যে আপনাকে ছাড়া অন্য মেয়ে দেখার ইচ্ছে মরে গিয়েছে। কিন্তু আপনি যা বললেন, তাতে আমার খুব কষ্ট হচ্ছে সাফা। আমি জানি না বাকিটা কীভাবে সামলাবো। কোনোভাবে যদি আমার পরিবারের কানে এই কথাগুলো যায় তবে…’
নিবরাসকে থামিয়ে চৈতি উঠে দাঁড়িয়ে বললো,’কিন্তু আপনিই বা আমাকে মেনে নিবেন কেন? পরিবারের কথা পরে আসবে, আগে আপনার কথা বলুন।’
নিবরাস তার বিখ্যাত মুচকি হাসিটা হেসে বললো, ‘আপনি যদি নিজেকে বাঁচাতে চাইতেন, তাহলে এসব কিছুই বলতেন না। এসব বলে নিজেকে আরো যন্ত্রণার মাঝে ফেলার কোনো দরকার ছিল না। তারমানে আপনি সত্যিই নোংরা খেলার শিকার।’
চৈতি ভ্রু উঁচিয়ে হেসে বললো, ‘আর যদি আমি খারাপ হয়েই থাকি? আপনি আমার মোহে পড়ে কেন পরিবারের মানুষের সাথে ঝামেলা করবেন?’
নিবরাস গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিলো, ‘মোহ। ঠিকই বলেছেন। বিয়ের আগে শরিয়াহ সম্মত এই দেখাদেখিতে মোহ তৈরি হয় কিনা জানা নেই, তবে এই দেখাদেখি সংসার জীবনের সৌন্দর্য বাড়ানোর প্রথম ধাপ। যেই ধাপে আপনি সফল। এটাকে মোহ বলতে চাইলে মোহ, সফলতা বলতে চাইলে সফলতা।’
– কখনো কখনো এই সফলতা পরবর্তী কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমি সফল হতে চাইনা।
– ব্যর্থতা যে আরো কষ্টের।
– উহু, প্রথম সফলতা অর্জন করেও যখন সমাপ্তিতে হেরে যেতে হয়, তখন যেই বিষাদ আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে, সেই বিষাদকে ভুলে যাওয়া সহজ নয়। ব্যর্থতা ভোলা যায় সহজে।
নিবরাসের দৃষ্টিতে আত্মবিশ্বাস, ‘বিশ্বাস রাখুন, সমাপ্তিতেও সফলতা আসবে।’
চৈতি বলে উঠলো, ‘হাসবুনাল্লাহ ওয়া নি’মাল ওয়াকিল।’
________________
নিবরাস বেরিয়ে যাওয়ার পর নিবরাসের বাবা মিনহাজের সাথে সে একান্ত কিছু কথা বলে। মিনহাজ হাসিমুখে সারাফের কাছে গিয়ে বলেন, ‘সুখবর ভাই। আমার ছেলের পছন্দ হয়েছে আপনার মেয়েকে।’
সারাফ আনন্দে কেঁদে ফেললেন। দ্রুত তার অশ্রু আড়াল করে তিনি জেবিনকে কাছে গেলেন। মিনহাজ গেলেন জিনাতের কাছে ছেলের পছন্দের কথা বলতে। বাড়ির পুরুষ সদস্যরা মিলে নিবরাস আর চৈতির বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করতে শুরু করলো। ড্রইং রুমে এখন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে, এই আলোচনা আনন্দের, উল্লাসের। তার পাশেই একটু দূরে মহিলারা আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন নীরব থেকে।
কিন্তু চৈতির চোখ দুটো নিবরাসকে দেখছে। মুখে হাসি নেই নিবরাসের, ভ্রু কুঁচকে হাতের বুড়ো আঙ্গুল কামড়ে কি যেন ভাবছে সে। কোনো কথা বলছে না। চৈতির মনের কলি ইতিমধ্যে ফুটতে শুরু করেছে। যদি নিবরাস পিছিয়ে যায়, তাহলে পাপড়িগুলো পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। চৈতি তখন সম্পূর্ণ এক যন্ত্রমানবে পরিণত হবে।
নিবরাসরা চলে গিয়েছে অনেকক্ষণ হলো। শিমুল হাতের কাজ সেরে একটু বিশ্রাম নিতে চৈতির ঘরে বিছানায় শুয়ে পড়লো। আজ সারাদিন পরিশ্রম করেছে সে। জেবিন আর নিরা জিনাতকে সময় দিয়েছেন বলে ঘরের বেশিরভাগ কাজ শিমুলকে দেখতে হয়েছে। চৈতি মাগরিবের সালাত আদায় করে শিমুলের পাশে শুয়ে বললো, ‘ক্লান্ত হয়ে গিয়েছো। এখন একটু ঘুমিয়ে নাও।’
শিমুল চৈতির দিকে তাকিয়ে বললো, ‘তোর কেমন লাগলো নিবরাসকে? সেটাই তো জানা হলো না! সব পাকাপাকি করে ফেললো তোর মতামত না নিয়েই…’
চৈতি হাসলো। তার মতামত নেয়ার প্রয়োজন কারো নেই। তাকে যে নিবরাস পছন্দ করেছে এটাই সবার কাছে অনেক বড় বিষয়। চৈতির অবশ্য দ্বিমত নেই। বরং নিবরাস যদি এখন বিয়ের ব্যাপারে অস্বীকার করে তাহলে চৈতির মনের সজীবতার অবশিষ্ট আর কিছুই থাকবে না। চৈতি বললো, ‘আমার মত না থাকলে তখনই বলে দিতাম।’
শিমুল হেসে বললো, ‘আলহামদুলিল্লাহ! নিবরাস কিন্তু খুব বুদ্ধিমান ছেলে। বিচক্ষণও বটে।’
– কথা বলার সময় বুঝেছি উনি কেমন।
– তুই কি ওই ঘটনার কথা বলেছিস?
– হ্যাঁ।
উঠে বসলো শিমুল। অবাক স্বরে প্রশ্ন করলো, ‘কি বলিস! সত্যিই বলেছিস?’
– হ্যাঁ শিমুপু।
– নিবরাস মেনে নিলো সব?
– তোমরা তো সব দেখলেই। আমি জানি না উনার মনে কি চলছে, তবে উনি আমার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন।
শিমুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ‘চৈতি, তুই লেখিকা মানুষ। আমার চেয়েও বেশি বুঝবি মানুষের মন কি বলে।’
চৈতি উঠে বসে বললো, ‘হঠাৎ এ কথা বলছো? আপু, কোনো মানুষের পক্ষেই মন পড়া সম্ভব নয়। এ ক্ষমতা শুধুমাত্র আস সামাদের।’
– আমি অন্তর্যামী হওয়ার কথা বলছি না, মানুষকে বুঝে উঠতে পারার কথা বলছি।
– একটু খুলে বলো, হয়তো এখন আমার মাথা কাজ করছে না।
শিমুল মুচকি হেসে বললো, ‘চৈতি, প্রতিটা মানুষের জীবনে গোপন অতীত অধ্যায় থাকে। কেউ যদি বলে, তার জীবনে গোপন কিছুই নেই, তাহলে সে হয় পাগল, নাহয় ব্যক্তিত্বহীন। তাই প্রত্যেক মানবীয় অস্তিত্বের নিজস্ব গোপনীয়তা থাকে।’
বাকিটা শিমুলের বলতে হলো না। চৈতি বলে উঠলো, ‘নিবরাসের গোপন অতীত আছে, এটাই বলতে চাইছো?’
– আমি নিশ্চিত হয়ে বলছি না। তবে নিবরাস কিন্তু ছোট থেকে দ্বীনদার ছিল না। জিনাত ফুপি তার একমাত্র ছেলেকে খুব আদরে মানুষ করেছেন। নিবরাসের যাবতীয় দুষ্টুমি আড়াল করেছেন তিনি মিনহাজ ফুফার কাছ থেকে। সেই হিসেবে নিবরাসের কালো অতীত থাকা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়।
– আর যদি না থাকে? সে যদি করুণা করে আমাকে?
– করুণা করলে তুই আজীবন কষ্ট পাবি। তবু বাস্তবতার স্বার্থে তোকে করুণার পাত্রী হতেই হচ্ছে। কিন্তু যদি করুণা না হয়ে ভালোবাসা হয়?
চৈতি চুপ করে আছে। শিমুল আবার বললো, ‘ভালোবাসা হলে তুই জিতে যাবি। তোর মন বলবে, প্রকৃত প্রেমী খুঁজে পেয়েছি হে আল্লাহ!’
– সত্যিই ভালোবাসা সম্ভব আপু?
চৈতির মলিন কণ্ঠের প্রশ্ন শুনে শিমুলের সাহিত্যিক মন নিমিষেই ছুটি নিলো। শিমুল চুপ হয়ে চৈতির দিকে তাকিয়ে আছে। এতোটা মহৎ মানুষ খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব যে একজন নারীর কলঙ্ক থাকা সত্ত্বেও তাকে আপন করে নিবে। নিবরাস কি অসম্ভবের মাঝে থাকা বিরল সেই সম্ভাবনা?
শিমুল প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে বললো, ‘আচ্ছা তুই কীভাবে বলেছিস নিবরাসকে? স্বাধীনের কথা বলেছিস?’
– না। বলেছি আমার চাচাতো ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে ছিল। আমি রাজি ছিলাম না। আর এ কারণে চাচাতো ভাই আমাকে ধর্ষণ করেছে যেন আমি বিয়ে করতে বাধ্য হই।
– ভালো বলেছিস। স্বাধীনকে টেনে আনার দরকার নেই।
– যেটা প্রয়োজন নেই সেটা বলিনি। এমন না যে স্বাধীন ভাইয়ের সাথে আমার সম্পর্ক ছিল কিংবা ধর্ষণের পরও আমি উনাকে পাওয়ার জন্য পাগলামি করেছি। আমার জীবন পুরোপুরি বদলে গিয়েছে ওই নোংরা ঘটনার পরই। আর জীবন বদলে যাওয়ার পর স্বাধীন ভাইয়ের কোনো অস্তিত্ব ছিল না আমার কাছে। এখনো নেই।
শিমুল অদ্ভুত এক প্রশ্ন করে বসলো, ‘নিবরাস যদি কোনো কারণে তোকে বিয়ে না করে, তাহলে তুই স্বাধীনকে বিয়ে করবি চৈতি?’
চৈতি চুপ করে আছে। শিমুল উত্তরের অপেক্ষায়। চৈতি বললো, ‘আমি নিজে থেকে কখনোই উনার দ্বারে যাবো না। উনি এলে ফিরিয়েও দিব না। নিবরাস আমাকে আশা দেখিয়েছেন, আজ মানা করে দিলে হয়তো এতটা আশাবাদী হতাম না। তাই তিনি মানা করে দিলে আমার অনুভূতি মরে যাবে। এমনকি, তখন সৌরভ এসে বিয়ে করতে চাইলেও হয়তো রাজি হয়ে যাবো। তাই কে এলো, কে গেল, তা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা থাকবে না।’
চৈতি ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। শিমুল অবাক হয়ে ভাবলো, নিবরাস যদি সত্যিই মানা করে দেয় তবে চৈতিকে সামলে রাখা যাবে তো? কত ভয়ানক কথা বলেছে চৈতি!
_________________
ঘুম রাজ্যের দূত আজ বার্তা নিয়ে আসেনি। তাই চৈতির চোখ দুটো জাগ্রত অবস্থায় মস্তিষ্কের চিন্তাগুলোকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। পুরো ঘরে গুমোট অন্ধকারে চৈতির শ্বাস-প্রশ্বাসের আওয়াজ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। নিবরাসের পরিবার চলে যাওয়ার পর সারাফ ভদ্রতার খাতিরে ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন তারা ঠিকমতো পৌঁছেছে কিনা জানতে। মিনহাজ স্বাভাবিক স্বরে কথা বললেও সারাফের মনে হয়েছে তিনি কথা বলতে অনিচ্ছুক ছিলেন। কেননা তাদের কথা হয়েছে মাত্র দেড় মিনিট। এর মাঝে মিনহাজ শুধু, ‘হু, আচ্ছা’ এটুকু বলে শেষে বলেই ফেলেছিলেন, ‘ভাই এখন রাখছি।’ এমনকি এটাও বলেননি, ‘আবার কথা হবে ইন শা আল্লাহ!’
সারাফ অবশ্য এগুলো মেয়েকে জানাননি। চৈতি নিজেই বাবা মায়ের দরজার বাইরে আড়িপেতে শুনেছে। সে জানে যে কাজটা অন্যায়, তবু তার অবাধ্য মন তাকে অন্যায় কাজটা করতে বাধ্য করেছে। তারপর থেকে চৈতির মনের সাগরে উত্তাল ঊর্মি দোলার আগ্রাসন বেড়েই চলছে। নিবরাস তার ফোন নাম্বার নেয়নি, সেও চায়নি। এটা তার কাছে অপছন্দনীয়। যতই তাদের বিয়ের বিষয়টা পাকাপাকি হয়ে যাক না কেন, তারা তো বিবাহিত নয়। তারা এখনো একে অপরের গয়রে মাহরম।
চৈতির চিন্তার সুতো কেটে ফোনের ভাইব্রেশন শোনা গেল। ফোনটা হাতে নিয়ে অচেনা নম্বর দেখে সে তা ধরে চুপ করে থাকলো। অচেনা নম্বর দেখলে চৈতি এই কাজটা করে। সে অপেক্ষা করে অপর পাশে থাকা মানুষটার কথা শোনার জন্য। তাহলে সে বুঝতে পারে মানুষটা মহিলা নাকি পুরুষ।
এবার ভেসে এলো একজন পুরুষের কন্ঠ। তবে অনাকাঙ্ক্ষিত মানুষটার কন্ঠ শুনে চৈতি একই সাথে বিস্মিত এবং বিব্রত। চৈতি বললো, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম, নিবরাস আপনি?’
নিবরাসের উত্তর, ‘জি আমি। আপনার সাথে গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। প্রেমালাপ করবো না তাই ঘাবড়ে যাবেন না।’
চৈতির ক্রোধ জাগ্রত হলো। সে তো ফোন দেয়নি যে প্রেমালাপের প্রসঙ্গ আসছে! সে বললো, ‘বলুন।’
– প্রথমেই বলছি আপনার নম্বর আমি মাহতাব ভাইয়ার কাছ থেকে নিয়েছি, মানে মাহতাব ভাই ভাবীর কাছ থেকে দিয়েছেন। আর দ্বিতীয় যেই কথা, আমার পরিবার সব জেনে গিয়েছে।
চৈতি দীর্ঘশ্বাস লুকিয়ে বললো, ‘আপনি বলেছেন?’
– উহু, আপনাদের বাসা থেকে বের হওয়ার পর একজন অল্প বয়সী নারী আমার মায়ের সাথে কথা বলেছেন। উনি সম্পর্কে আপনার চাচাতো বোন বলেই পরিচয় দিলেন। উনি আপনার সেই চাচাতো ভাইয়ের বোন। নিজের ভাইয়ের হয়ে সাফাই গেয়েছেন। আপনাদের নাকি মিউচুয়াল রিলেশন…
ফোন কেটে দিয়েছে চৈতি। বাকিটা শোনার মতো রুচি নেই তার। অশ্রু ঝরে পড়ছে অনবরত। চৈতির মুখ থেকে অস্ফুটে বেরিয়ে এলো, ‘কামিনী আপু!’
____________________
চলবে ইন শা আল্লাহ…