‘লোডশেডিং’
পর্ব ৩১.
তাবিনা মাহনূর
____________________
নিবরাস আবার ফোন করেছে। চৈতি চোখ মুছে মন শক্ত করে ফোন ধরলে নিবরাসের ধমক খেলো।
– কি আশ্চর্য! পুরোটা না শুনেই ফোন কেটে দিলেন কেন?
– দুঃখিত, আপনার কথাগুলো শুনতে কষ্ট হচ্ছিলো।
নিবরাসের রাগ যেন বেড়ে গেল, ‘আর আমার উপর দিয়ে কি যাচ্ছে জানেন আপনি? না জেনেই ফ্যাচ ফ্যাচ করছেন!’
চৈতি চোখ বন্ধ করে বললো, ‘আপনি না করে দিন। আর সমস্যা হবে না।’
নিবরাস কোনো কথা বললো না। কিছু সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর চৈতি নিজেই বলে উঠলো, ‘নিবরাস?’
– হু।
– আর কিছু বলবেন?
– কি বলবো? আপনি তো সমাধান দিয়েই দিলেন।
চৈতির আবারো কান্না আসছে। কিন্তু সে নিবরাসের কাছে নিজের দুর্বলতা প্রকাশ করতে চায় না। কন্ঠ যথাসম্ভব স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করে সে বললো, ‘জি, আপনার অল্প সময়ের করুণা আমি ভুলবো না। ভালো থাকবেন।’
নিবরাস বললো, ‘আপনিও ভালো থাকবেন। আর আমিও ভুলবো না আপনাকে। খুব ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে আপনার জন্য।’
চৈতি ফোন রেখে দিলো। লোকটা নাকি মানুষকে কষ্ট দিতে ভয় পায়। অথচ একের পর এক কষ্ট দিয়েই যাচ্ছে। কতটা নিষ্ঠুর! চৈতিকে স্বপ্ন দেখিয়ে সেই স্বপ্ন ছিনিয়ে নিয়ে আবার উল্টো রাগ ঝাড়ছে! চৈতির সতেজ ফুল এখন শুকনো গন্ধহীন মলিন রূপ ধারণ করেছে। একটা একটা করে পাপড়ি ঝরে পড়ছে।
নিবরাস ছিল চৈতির জীবনে কালবৈশাখীর ঝড়ের মতো। খুব অল্প সময়ের জন্য এসে পুরো জীবনে তান্ডব ঘটিয়ে যেতে পারে যেই মানুষটা। কিন্তু এই ঝড়কে বসন্তের শীতল হাওয়া ভেবেছিল চৈতি। আজ ঝড়ের রূপ প্রকাশ পেলো।
নিবরাসের দুষ্টুমি, ‘সাফা’ সম্বোধন আর বিয়ে পাকাপাকি করে ফেলা- সবকিছু মিলিয়ে চৈতি নতুন কল্পনায় আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছিল যা কল্পনাই থেকে গেল। বাস্তব চিত্রপট রঙিন হলো না, সাদা কালো স্কেচে ব্যথাতুর হয়ে থাকলো।
পরের দিনগুলো খুব শান্ত কাটলো। মিনহাজ আর ফোন করেননি। মাহতাব শিমুলকে নিতে এসে ম্লান মুখে জানিয়েছে, জিনাত ফুপিকে কামিনী অনেক মিথ্যে কথা বলে চৈতির চরিত্রের অপবাদ দিয়েছে। জিনাত অবশ্য দ্বিধায় ছিলেন, কিন্তু চৈতি যদি সত্য হয়েও থাকে তবু তিনি তার একমাত্র পুত্রকে কলঙ্কিত নারীর জীবনে জড়াবেন না। এগুলো মিনহাজ সরাসরি সারাফকে বলতে লজ্জা পাচ্ছেন বলে মাহতাবকে পাঠিয়েছেন বিয়ের বিষয়টা এখানেই থামিয়ে দিতে।
সারাফ একদম দিশেহারা হননি। মেয়ের সামনে তিনি উঁচু গলায় মাহতাবকে বলেছেন, ‘উনাদের বলে দিও, আমরা জানি আমাদের মেয়ে কতটা সত্যবাদী। আল্লাহ সত্যবাদীর কখনো ক্ষতি করবেন না। আমরা আমাদের মেয়ের জন্য রাজপুত্র আনবো। নিবরাস ছাড়াও অনেক ভালো পাত্র আছে।’
চৈতি তাকে থামিয়ে বলেছে, ‘বাবা, এগুলো অহংকারী কথাবার্তা। তুমি এভাবে বলো না।’
চৈতি তার ঘরের পর্দার আড়াল থেকে মাহতাবকে বলেছে, ‘নিবরাস ভাই সত্যিই অনেক গুনবান পাত্র। উনার পাত্রীর অভাব পড়বে না। কিন্তু শুনতে খারাপ লাগলেও সত্যি এই যে, আমার পাত্রের অভাব পড়বে। আমি কলঙ্কিত। তাই বলে আমি ফেলে দেয়ার মতো নই। নিশ্চয়ই এমন কেউ আসবে যে আমার কলঙ্ক নয়, বরং কলঙ্ক পরবর্তী মানসিকতাকে প্রাধান্য দিবে। যে দেখবে আমি চৈতি নই, সাফওয়ানা।’
এরপর থেকে বাড়িতে অদ্ভুত নিস্তব্ধতা পালন করছে সবাই। সারাফ সবসময় ভ্রু কুঁচকে থাকেন। জেবিন চৈতির সাথে ধর্মীয় আলোচনা ব্যতীত অন্য কোনো কথা বলেন না। বলতে গেলেই তার মুখে স্বাধীনের নাম চলে আসে যেটা চৈতি মোটেও পছন্দ করে না। জয়নাব এখন আরো অসুস্থ থাকেন বলে তাকে দেখতে মাঝে মাঝে নীরা আর শিল্পী আসেন। কিন্তু দুজনেই চৈতির সাথে খুব কথা বলেন না। তাদের মুখেও বারবার স্বাধীনের নাম চলে আসে। তাই চৈতি এখন নির্বাক সময়গুলো কাটিয়ে দেয় উম্মুল মুমিনীনদের জীবনী ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ সম্পর্কে জেনে।
আজ বিকেলেও উম্মুল মুমিনীন আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা)কে নিয়ে অপবাদের কাহিনী জানলো চৈতি। আয়িশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) একবার কাফিলা থেকে বিশেষ কারণে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় উনাকে নিয়ে একজন সাহাবী রাসূলের কাছে পৌঁছে দিয়েছিলেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে তৎকালীন আরব সমাজে রাসূলের সম্মানিত স্ত্রীকে নিয়ে নোংরা অপবাদ ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, হজরত আয়িশা সেই সাহাবীর সাথে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়েছেন। নাউযুবিল্লাহ! এরই পৃষ্ঠে সূরা নূরের আয়াত নাজিল হয়।
নারীদের নামে অপবাদ দেয়ার শাস্তি ভয়াবহ। এর কোনো মাফ নেই যতক্ষণ না ওই নারী মাফ করছে। চৈতি আরো জানলো, কীভাবে রাসূলের প্রিয়তমা স্ত্রী আয়িশা সবর করেছেন। চৈতি চোখ দুটো বন্ধ করে আল্লাহকে বললো, ‘এতোটা সবর করার মতো মহান আমি নই আল্লাহ। তোমার সাহায্য ছাড়া আমার পক্ষে ধৈর্য ধারণ করা অসম্ভব। আমাকে সহায়তা করা হয় আল্লাহ! আমি তাওয়াক্কুল রাখতে চাই, দৃঢ় তাওয়াক্কুল।’
__________
ঘটনার সাত দিন কেটে যাওয়ার পর সারাফ একদিন মেয়ের কাছে গেলেন গল্পের অজুহাতে। চৈতি বাবার মুখ দেখেই বুঝেছে এবার তাকে তৃতীয় ধাক্কা পেতে হবে। সে তবু মুচকি হেসে বললো, ‘বাবা, দাদি কি ঘুমাচ্ছে?’
– হ্যাঁ রে মা। তোর দাদি এখন বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়েই কাটিয়ে দেয়। নাহলে বাতের যন্ত্রনা আর বুকে ব্যাথা বাড়ে।
– ডাক্তার কি বলেছে?
– ভালো নারে মা। ফুসফুসের ইনফেকশন আরো ছড়িয়ে যাচ্ছে। কবে যে কি শুনবো!
– আল্লাহ ভরসা।
– হ্যাঁ, এই ভরসা নিয়েই এতগুলো বছর পার করলাম। এটাই যে সত্য ভরসা।
চৈতি বাবার হাতের উপর হাত রেখে বললো, ‘কিছু বলতে চাইলে বলো বাবা।’
সারাফ মেয়ের দিকে তাকালেন। একটু ইতস্তত বোধ করে বললেন, ‘জেবিনকে বলতে বলেছিলাম। জেবিন বলতে ভয় পাচ্ছে বলে আমিই এলাম।’
চৈতি হাসলো, ‘ভয়ের কি আছে? তুমি ভয় পেয়ো না।’
– আমার একটা বন্ধুর খোঁজ পেয়েছি অনেকদিন পর। বন্ধুর ছেলেটার বউ বাস এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে বিয়ের দুই মাস পরেই। এখন আবার বিয়ের জন্য ছেলেটা মেয়ে খুঁজছে। খুবই দ্বীনদার মা শা আল্লাহ। আমি তোর কথাটা আমার বন্ধুকে আকার ইঙ্গিতে বললে সে নিজেই প্রস্তাব দিলো। কি করবো বল তো?
– আসতে বলো।
চৈতির কথা শুনে চমকে উঠলেন সারাফ, ‘কি বলছিস!’
– অবাক হচ্ছো কেন বাবা? আমার একটাই চাহিদা। ছেলে দ্বীনদার কিনা। যেহেতু খুবই দ্বীনদার বলছো তাহলে সমস্যা কোথায়?
সারাফ মুখ কাচুমাচু করে বললেন, ‘সবই ঠিকাছে, কিন্তু ছেলেটার একটা সমস্যা আছে।’
– কি সমস্যা?
– তোর কথা শোনার পর সে বলেছে, তোকে বিয়ে করতে সে রাজি আছে। কিন্তু এরপর সে আরেকটা বিয়ে করবে।
– তো?
সারাফ আবার অবাক হলেন, ‘তো মানে? সে একাধিক বিয়ে করতে ইচ্ছুক। তার কুমারী মেয়ে লাগবে। আর তুই বলছিস, তো?’
চৈতি লেখালেখি বন্ধ করে বললো, ‘বাবা, সে অন্যায় কিছু চায়নি। আমার আপত্তির কি আছে? তাছাড়া তার চাহিদাটা কোনো পাপকাজ নয়। এর জন্য তাকে ছোট মানসিকতার বলতে পারি না আমরা। শরীয়ত তাকে এই সুযোগ দিয়েছে। আমার মতো অনেক মেয়ে আছে যাদের এখনো বিয়ে হয়নি শুধুমাত্র এই একাধিক বিয়েটাকে একটা ট্যাবু বানিয়ে ফেলার কারণে। ধর্ষিতা, ডিভোর্সি কিংবা বিধবা অনেক নারী একাকিত্বে ভুগতে ভুগতে পাগল হয়ে গেলেও যদি তাদের বলা হয় কারো মাসনা হতে, তাহলেই তাদের টনক নড়ে উঠে। একা থাকবে তাও মাসনা হবে না। তবে এ ব্যাপারে অবশ্যই ওয়াহিদা অর্থাৎ প্রথম স্ত্রীর মতামত জেনে নিতে হবে যে লোকটা আসলেই সমতা রক্ষা করতে সক্ষম হবে কিনা। কারণ প্রথম স্ত্রীই ভালো জানবেন তার স্বামী অর্ধাঙ্গ হিসেবে কতটা সফল।’
সারাফ প্রতিবারের মতো এবারও বিস্ময় নিয়ে মেয়ের কথা শুনছেন। চৈতি বলেই যাচ্ছে।
– এখন অবশ্য কিছু ভাইয়েরা দ্বিতীয় বিয়ের জন্য উতলা হয়ে ওঠেন আর পরবর্তীতে ওয়াহিদাকে ভুলতে বসেন। এমন অনেক মামলা দেখেছি। তাই এখনকার বোনদের এই একাধিক বিয়ের ব্যাপারটায় ভীতি থাকা অস্বাভাবিক নয়। এই যেমন আমার জন্য যেই বিয়েটা এনেছো তুমি, এই লোক আমাকে বিয়ে না করতেই আরেকটা বিয়ের শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন কারণ আমি কুমারী নই। তাহলে উনি যখন দ্বিতীয়বার একজন কুমারী মেয়েকে বিয়ে করে আনবেন তখন উনি আমাকে ভুলে যাবেন না, এই নিশ্চয়তা কীভাবে দিব? তাই তোমার আনা পাত্রকে আমার মতো অন্য নারীদের বিয়ে করতে আমি অনুৎসাহিত করবো।
সারাফ হা করে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন। তার বিস্ময়ের ধাপ এভারেস্টের চূড়ায় পৌঁছে দিতে চৈতি বললো, ‘কিন্তু আমার আপত্তি নেই। আমার দ্বীনদার হলেই হবে।’
সারাফ যেন গোলকধাঁধায় পরে গিয়েছেন। চৈতির ‘হ্যাঁ-না’ খেলায় তিনি বিভ্রান্তির চরম শিখরে! এবার তিনি বললেন, ‘তুই একটু আগেই বললি অন্য মেয়েদের জন্য এই পাত্রকে তোর পছন্দ হবে না!’
চৈতি হাসলো। মনে পড়লো, শিমুলকে সে বলেছিল, সৌরভ এলেও সে মানা করবে না। তবে কথাটা একটু ভুল। সৌরভ দ্বীনদার নয়। চৈতি এখন দ্বীনি যেকোনো ছেলেকে বিয়ে করতে আগ্রহী। ঠিক আগ্রহী নয়, বাধ্য। বিয়ে না হলে সে চলতে পারবে। কিন্তু বিয়ে হলে অনেক মানুষের বোঝা কমে যাবে। চৈতি কারো বোঝা হয়ে থাকতে চায় না। তাই কোনোরকম কোনো দ্বীনি জ্ঞান সম্পন্ন পাত্র পেলেই হলো।
– অন্য মেয়েদের বিষয় আলাদা, আমার বিষয় আলাদা।
সারাফ রেগে গেলেন, ‘এবার একটা চড় মারবো। যেই পাত্র আমারই পছন্দ না সেই পাত্রকে তুই কীভাবে পছন্দ করিস?’
চৈতি বাবার বিষয়টা বুঝতে পারলো। সে বললো, ‘তোমার পছন্দ না হলে আমার কাছে বললে কেন বাবা? বিনা কারণে এমন একজন পাত্রের খোঁজ দেয়ার কারণ কি?’
সারাফ দমে গেলেন। তাকে কিছু বলতে হলো না। চৈতি নিজেই বললো, ‘স্বাধীন ভাইয়ের কথা বলতে জড়তা কাজ করছে বলে একজন বিবাহিত পাত্রের খোঁজ দিয়ে আমার মানসিকতা বুঝতে চাইছিলে। তাই তো?’
সারাফ ছোট এক শ্বাস ফেলে বললেন, ‘তুই বুদ্ধিমতী মেয়ে। তোকে না বোঝালেও সব বুঝে যাস।’
– বাবা, কেন তোমরা স্বাধীন ভাইয়ের ব্যাপারে আমাকে এতো ভয় করে চলো? এটা ঠিক যে আমি চাই না তোমরা নিজে থেকে প্রস্তাব দাও উনাকে। কিন্তু আমি কি একবারও উচ্চবাচ্য করেছি এই নিয়ে?
– উহু।
– তাহলে অযথাই ভান ভনিতা করছো কেন? সরাসরি বলে দিবে কি বলতে চাও।
– আমরা এটাই বলতে চাই যে স্বাধীন একদম তোর মনের মতো একটা পাত্র। আবার আমাদের চোখের সামনেই সে বড় হয়েছে, আমরা জানি সে কেমন। সেও জানে তোর জীবনের আসল সত্য কি।
– তোমাদের যা ইচ্ছে করো।
– সত্যি বলছিস?
– হুম।
সারাফ আরো কিছুক্ষণ গল্প করলেন, তবে হাসিমুখে। কিন্তু চৈতির বুক ফেটে কান্না বেরিয়ে আসতে চাইছে। এতোটা অপমান সে নিতে পারছে না। স্বাধীন হয়তো ফিরিয়ে দিবে না, কিন্তু এই দিনও যে চৈতিকে দেখতে হবে তা সে কখনোই ভাবেনি। সে কখনোই চায়নি যাকে ঘিরে তার নোংরা ঘটনার উৎপত্তি, তাকেই আবার জীবনে জড়িয়ে নিতে। স্বাধীনকে কেন যেন চৈতির খুব বিরক্ত লাগে। দেশে আসার পর দুদিন দেখেছে তাকে। প্রথমবার ছাদে, দ্বিতীয়বার গলির মোড়ে। চৈতি দুইবারই চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে। খুব বিরক্তিকর লোক স্বাধীন!
এখন এই উটকো ঝামেলার কাছেই ভিক্ষা চাইতে হচ্ছে চৈতিকে। না চেয়েও উপায় নেই। চৈতিকে সবাই বোঝা মনে করছে। তাই বোঝা কমাতে চৈতির সম্মান বিসর্জন দিতেও কেউ দুবার ভাববে না।
__________________
স্বাধীনের দিনগুলো ভালোই কাটছে। আলিয়ার মতো দ্বিমুখী স্বভাবের মেয়ের সাথে থাকতে গিয়ে জীবনের অর্থ অনেকটা বুঝেছে সে। সেসময় তার ভেতরের সুনামি কেউ টের পায়নি। ছেলে আরহামকে নিয়ে অকুল পাথারে পরে গিয়েছিল সে। তালাক দেয়ার পর নতুন জীবন খুঁজে পেয়েছে। এ জীবনে দ্বিতীয় বিয়ের শখও নেই তার।
কিন্তু চৈতির আসার কথা শোনার পর মন কেমন করছে। সে একবারও দেখেনি চৈতিকে। সেদিন সারাফের সাথে দেখা হয়েছিল মুদি দোকানের সামনে। সারাফ বিদায় নিয়ে যাওয়ার সময় এক কালো বোরকায় আবৃত মেয়ের হাত ধরে বাড়ির দিকে রওনা হলে স্বাধীন বুঝতে পারে, এটাই চৈতি। কারণ জেবিন এখনো এ ধরনের পর্দা ধরেননি। আর শিমুলের হাত ধরে সারাফ হাঁটবেন না নিশ্চয়ই।
এরপর থেকে দ্বিতীয় বিয়ের চিন্তাটা মাথায় জেঁকে বসেছে। তার মাও একবার চৈতির কথা বলতে চেয়েছেন। কিন্তু স্বাধীনের উত্তর ছিল, ‘মা, চৈতি কুমারী না হলেও সে অপরাধী নয়। তাই তার অবিবাহিত পাত্র পাওয়ার অধিকার আছে। আমার ছেলে সহ আমাকে সে কেন গ্রহণ করবে?’ এ কথা শোনার পর স্বাধীনের মা নাজমা আর কথা বাড়াননি। কিন্তু স্বাধীন এসব বলেও নিজের মনকে মানাতে পারছে না। অপেক্ষায় আছে চৈতি যদি নিজে আসে একবার!
কিন্তু চৈতি গেল না, সারাফও এতো তাড়াতাড়ি গেলেন না। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে তারপর যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তাই এরই মাঝে ঘটে গেল অপ্রত্যাশিত ঘটনা।
বেশ কিছুদিন পর মিনহাজ ফোন করে দুঃখ প্রকাশ করলেন। সারাফকে বললেন তারা রাজি আছেন চৈতির সাথে নিবরাসের বিয়ে দিতে। সারাফ হতবাক হয়ে গেলেও নিজের ব্যক্তিত্ব ধরে রেখে বললেন, ‘ভাই, আমার মেয়েটার অনুমতি নিয়ে তারপর জানাচ্ছি।’
মিনহাজ হয়তো এমন উত্তর আশা করেননি। তাই তিনি বলেন, ‘চৈতি রাজি নয়?’
– রাজি সে ছিল। নিবরাস মানা করে দেয়ায় মেয়েটা অন্য দিকে মন নিয়েছে কিনা দেখতে হবে। আপনি অপেক্ষা করুন, আমি জানাচ্ছি।
ফোন রাখার পর সারাফ নিবরাসের বিষয়টা জানাতে চাননি চৈতিকে। কিন্তু চৈতি পরে জানলে রাগ করতে পারে ভেবে তিনি জানালে চৈতি অবাক হয়ে বলে, ‘কি বলছো বাবা? দশ পনেরো দিন পর সম্মতি জানানোর মানে কি? অথচ বিয়ের ডেট গতকাল পাকাপাকি করেছিলেন উনারা।’
– সেটাই বুঝছি না মা। নিবরাস কি কিছু করেছে?
চৈতি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠে, ‘তুমি এখনই কিছু জানাবে না। আমি নিবরাসের সাথে কথা বলার পর সিদ্ধান্ত নিব। খেলনা পেয়েছে আমাকে!’
চৈতি অনেক খুঁজেও সেই নাম্বার বের করতে পারলো না। নিবরাস ফোন করলেও সে নাম্বার সেভ করে রাখেনি কারণ নিবরাসের সাথে আর কথা বলার প্রয়োজন হবে না বলেই তার ধারণা ছিল। কিন্তু এখন সে অগণিত নম্বরের মহা সমুদ্রে পড়েছে। বাধ্য হয়ে শিমুলকে ফোন করে মাহতাবের মাধ্যমে নিবরাসের নাম্বার নিলো চৈতি। দুই একটা রিং হওয়ার পর নিবরাস ফোন ধরলো। চৈতির ক্ষোভ ঝরে পড়লো।
_____________________
চলবে ইন শা আল্লাহ….