লোডশেডিং’ পর্ব ৩২.

0
302

‘লোডশেডিং’
পর্ব ৩২.

তাবিনা মাহনূর

_____________

– আসসালামু আলাইকুম সাফা, বলুন।

চৈতি নিজের ক্রোধ চেপে রেখে বললো, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম। মিনহাজ আংকেল ফোন করে কি বললেন এটা?’

– বাবা বলেছে আজ দুপুরে ইলিশ মাছ রান্না হয়েছে।
– ফাজলামি রাখুন!
– ওমা! সত্যিই তো, বাবা আমাকে ফোন করে এটাই বললো।

চৈতি দু চোখ বন্ধ করে বললো, ‘আমাকে কি বলেছে জানেন?’

– আপনাকে কি বলেছে এটা জানবো কি করে বলুন?
– ধ্যাৎ!

চৈতি ফোন কেটে দিয়েছে। এই লোকটা সবসময় মশকরার মেজাজে থাকে। নিবরাস ফোন করেছে। নেহাত চৈতির এখন কথা বলা জরুরি। নাহলে এই বদ লোকটার ফোন ধরার মতো ভুল সে কখনোই করতো না।

– নিবরাস ভাই…
– একদম না! ভাই একটা ন্যাকামি শব্দ।
– আংকেল বলি?
– না ভাই শব্দটাই ঠিকাছে।
– নিবরাস, আপনার কাছে বিষয়টা ফাজলামির হলেও আমার জন্য এটাই অনেক সম্মান-অসম্মানের বিষয়। আপনারা আমার সাথে যা করছেন, তাতে আমার জায়গায় নিজেকে একবার কল্পনা করুন তো? পারতেন এই অপমান সহ্য করতে? আপনাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী গতকাল আমাদের বিয়ে হতে পারতো। কিন্তু আপনাদের মত বদলে গেল বাড়ি গিয়ে। আজ আবার বিয়ের জন্য ডাকছেন। এই খেলার অর্থ কি বলুন? আমি একের পর এক এসব সহ্য করেই যাচ্ছি। কেন? আমি কি মানুষ না? কোনো প্রাণীর সাথেও তো এমন অনৈতিক আচরণ করে না কেউ!

নিবরাস চৈতিকে বলার সুযোগ দিলো এতক্ষণ। চৈতির কথা শেষ হলে সে বললো, ‘এই যে আপনি বললেন আপনার জায়গায় আমি থাকলে কি করতাম, তাহলে শুনুন আমি কি করতাম।’

– বলুন, সেটাই জানতে চাইছি। মেয়েকে মেয়ে বলে ভাবেন না, আর ধর্ষিতা মেয়ের তো কোনো মূল্যই নেই! বেঁচে থাকাটাই যেন তার জন্য অনেক বড় উপহার। অথচ তার কাছে এই উপহার গলার কাটার মতো।

নিবরাস শীতল কণ্ঠে বললো, ‘আমাকে বলতে দিবেন একটু?’

– হুম।
– আমি যদি আপনার স্থানে থাকতাম তাহলে আমাকে যে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এতোটা সময় পর, তার অবস্থানটাও বিবেচনা করতাম।
– মানে?
– মানে আপনি একবারও আমার কথা ভেবেছেন? আমি কত কষ্ট করে আমার পরিবারকে রাজি করিয়েছি? শুধু নিজের অপমান দেখলেন? আমার শ্রম দেখলেন না?
– আপনাকে কে বলেছিল এত কষ্ট করতে? আমি বলেছি? আমি পা ধরেছি?
– যাকে একবার কথা দিয়েছি, সেই কথা ফিরিয়ে নেয়ার মতো কাপুরুষ আমি নই।

চৈতির চোখ ছলছল করে উঠলো, ‘তারমানে শুধু কথা রাখার স্বার্থে আমাকে বিয়ে করবেন? বিয়ে পরবর্তী জীবনটা কেমন হবে ভাবলেন না?’

নিবরাস বললো, ‘কেন বিয়ে করছি, এ কথা বিয়ের আগে বলা উচিত হবে না। ইতিমধ্যে আমি অনেক গুনাহ করে ফেলেছি, আর বাড়াতে চাই না।’

স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে চৈতি। কি এমন কথা যে বললে গুনাহ হয়ে যাবে!

– দেখুন সাফা, আপনি চাইলে বিয়েতে না করে দিয়ে নিজের সম্মান বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারেন। কিন্তু এতে কি হবে বলুন তো? এতে আপনার হয়তো সম্মান অক্ষুণ্ন থাকবে, আপনি হয়তো উপযুক্ত পাত্র পেয়ে বিয়েও করে ফেলবেন। কিন্তু আমার সব কষ্ট ধুলোয় মিশে যাবে। আমি কখনো আপনাকে ক্ষমা করতে পারবো না। আমি খুব খারাপ সাফা, আমি অতোটা মহান নই যাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছি, তার প্রত্যাখ্যানটা সহজে মেনে নিবে।

চৈতি চুপ করে আছে। এখানে সে কিছু বলার ভাষা পাচ্ছে না। নিবরাসকে রহস্যময় লাগছে তার। চৈতির নীরবতা দেখে নিবরাস বলে উঠলো, ‘সাফা, অনুরোধ করছি ফিরিয়ে দিবেন না।’

– যদি ফিরিয়ে দিই?
– তাহলে আপনাকে ভালো থাকতে দিব না।
– কীভাবে?
– জানি না। আমি ভালো না থাকলে আপনাকেও ভালো রাখবো না। বলেছি তো, আমি খুব খারাপ।

চৈতি অজান্তেই মুচকি হাসলো। সে এতক্ষণে এটুকু বুঝেছে, নিবরাস কারো ক্ষতি করার মতো লোক নয়। চৈতি বলে উঠলো, ‘নিবরাস, এবার যদি পিছিয়ে যান তাহলে আমি কখনোই আপনাকে ক্ষমা করবো না। আমিও খুব খারাপ।’

– আপনি খারাপ বলেই তো বিয়ের জন্য তোড়জোড় শুরু করেছি। কখন আবার বেঁকে বসেন!
– রাখছি।

চৈতি ফোন রেখে সারাফের কাছে গিয়ে নিজের মত জানালো। সারাফ ভ্রু কুঁচকে বললেন, ‘তুই কীভাবে রাজি হলি এখানে?’

– বাবা দেখো, নিবরাস আমাকে বিয়ে করার জন্য অনেক কষ্ট করে রাজি করিয়েছে ওই পরিবারকে। এখন যদি আমি রাজি না হই তাহলে বিষয়টা কেমন হবে? তাছাড়া আমরা দুজন রাজি ছিলাম আগে থেকেই। আমি ইস্তিখারা করেছি। সব মিলিয়ে তো ভালোই মনে হচ্ছে।
– আর ওই পরিবারে গিয়ে তুই ভালো থাকবি?

মুচকি হাসলো চৈতি, ‘কোন পরিবারই নিখুঁত হয় না বাবা। সব পরিবারে একটু আধটু ঝামেলা থাকে। আর আমার মতো মেয়ের জন্য…’

– বারবার ‘আমার মতো মেয়ে’ কথাটা বলবি না। মেজাজ গরম হয়ে যায়। তুই কি পরকীয়া করিস? নাকি তোর চরিত্রে সমস্যা? কি সমস্যা আছে তোর?
– বাবা, এগুলো বলা সহজ। কিন্তু বাস্তব অনেক কঠিন।
– শোন মা, বিয়েটা শুধু দুজন মানুষের হয় না। দুটো পরিবারের মাঝে মেলবন্ধন তৈরি হয় বিয়ের মাধ্যমে।
– তুমি কি বলতে চাইছো বাবা?

সারাফ বুঝিয়ে বললেন, ‘তুই বলেছিস তোকে যেন কোনো কথা বলতে ভয় না করি। তাই বলছি, স্বাধীনের পরিবার আমার কাছে সর্বোত্তম মনে হয়।’

চৈতি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, ‘স্বাধীন ভাইকে নিয়েই পরে আছো তোমরা! উনি কি করেছেন যে তোমরা শুধু উনার কথাই বলো?’

– এইযে, এজন্যই সবাই ভয় পায় তোকে। রেগে গেলি হুট করে। মা রে, স্বাধীনের মা তোকে চিনে। ওই বাসায় স্বাধীনের পরিবারের সাথে তুই খুব ভালো থাকবি মা।

চৈতি বললো, ‘কিন্তু উনাকে দেখলে আমার বিরক্ত লাগে বাবা। তারপরও আমি ভালো থাকবো?’

অবাক হলেন সারাফ, ‘বিরক্ত কেন লাগবে? এটা কেমন কথা!’

– জানি না। ভালো লাগে না আর কিছু। তার চেয়ে তোমার আনা ওই পাত্রটা ভালো। তুমি উনাকেই আসতে বলো।

চৈতি সারাফকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ঘরে চলে গেল। সারাফ হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে মিনহাজকে ফোন করলেন।

____________________

আজ চৈতির বিয়ে। জুম্মার সালাত আদায় করে মসজিদ প্রাঙ্গনে বিয়ে পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেহেদী রাঙা হাতে বসে আছে চৈতি। তার কাছে এখনো সবকিছু স্বপ্ন মনে হচ্ছে। হঠাৎ করেই তার কৈশোরের কথা মনে পড়ছে। স্বাধীন নামক মাদকতা তাকে কতটা আচ্ছন্ন করে রেখেছিল যে সে বেহায়া হতেও দ্বিধা বোধ করতো না তখন। সালাতে সে পাপ কাজ দুআ করতো, স্বাধীনকে পাওয়ার দুআ। চৈতি মনে মনে আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া আদায় করলো যে ওইসব দুআ কবুল হয়নি। তার জন্য যা কল্যাণ তা-ই রেখেছেন আল্লাহ।

‘আলহামদুলিল্লাহ কবুল’, তৃতীয়বার এ কথা বলে নিবরাসের জীবনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিলো চৈতি। এই অনুভূতিটা স্তব্ধ, শূন্য। না ভালো লাগার, না খারাপ লাগার। অদ্ভুত এই বিবশ অনুভূতি চৈতিকে অচেতন করে রেখেছে। মহিলারা আসছে, পায়েস খাইয়ে দিচ্ছে, মিষ্টি হেসে অভিনন্দন জানাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করছে, নিবরাস সম্পর্কে মজার মজার কথা বলছে তার খালা-ফুপুরা। কিন্তু চৈতির কানে যেন কোনো কিছুই ঢুকছে না। কবুল বলার পর মসজিদ থেকে ফেরার পথ থেকে বাসায় এসেও তার এই বিহ্বলতা কাটেনি।

দুপুরের খাবারের পর্বটা ছাদে আয়োজন করা হয়েছে। নামকরা বাবুর্চি ডেকে রান্নার ব্যবস্থা নিয়েছেন সারাফ। বড় মেয়েটার বিয়েতে কোনো ত্রুটি রাখতে চান না তিনি। অনুষ্ঠান করতে চেয়েছিলেন দামি কমিউনিটি সেন্টারে। কিন্তু পাত্র পক্ষ থেকে মাত্র পঁচিশ জন আসবে আর চৈতির অনাড়ম্বর বিয়ের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিতেই বাসায় আয়োজন করা হয়েছে। তাই ক্ষুদ্র পরিসরের এই অনুষ্ঠানে কোনো ভুল দেখতে চান না সারাফ।

মিনহাজ প্রথম দিনের মতোই আন্তরিক ছিলেন। এছাড়া নিবরাসের আত্মীয় স্বজন সবাই বেশ অমায়িক আচরণ করলেও জিনাত ছিলেন গম্ভীর। খুব অল্প কথা বলেছেন এমনকি চৈতিকে দেখেননি পর্যন্ত। সারাফের খুব মন খারাপ হলো। মেয়েটা এই পরিবারে কীভাবে থাকবে কে জানে! কেন যে জোর করে বিয়েটা করলো চৈতি…

চৈতির অনুভূতি ফিরে এলো বিদায়ের সময়। ঝড়া পাতার দুঃখ আর দমিয়ে রাখা কান্না তাকে অনুভূতির রাজ্যে প্রবেশ করালো। কাঁদতে না পারা চৈতি বাবার কাঁধে মাথা রেখে অজ্ঞান হয়ে গেল। সেই অবস্থায় নিবরাস তাকে কোলে তুলে গাড়িতে উঠেছে। জেবিন সহ বাড়ির সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়া হয়নি তার।

নিবরাসদের বাড়ির তিন ও চার তলা মিলে নিবরাসের পরিবারের বসবাস। দুই, পাঁচ ও ছয় তলায় ভাড়াটিয়া থাকে। প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের ভিড়ে চৈতির রূপ অনন্যতা ধারণ করেছে। চৈতি মুচকি হেসে সবার সাথে কথা বলছে। চৈতির মতো মিষ্টি মেয়েকে দেখে অনেকেই খুশি হলেও দুই একজন তার সৌন্দর্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। চৈতি শুনেছে একটি বাক্য, ‘মেকআপ করে সুন্দর লাগছে। মেকআপ ধুয়ে ফেললেই শেষ!’ চৈতি মনে মনে হেসেছে। তার মেকআপ বাসায় সে নিজে হাতে করেছে। সে আহামরি সুন্দর না হলেও, আল্লাহর সৃষ্টি সে। এবং সে আশরাফুল মাখলুকাত, অর্থাৎ সৃষ্টির সেরা জীব। তাই অবশ্যই সে সুন্দর!

নিবরাসের সাথে দেখা মিললো রাতের খাবার খাওয়ার সময়। জিনাতকে সাহায্য করছে চৈতি। জিনাত খুব অল্প কথা বললেও চৈতির করা সাহায্যটা অগ্রাহ্য করছেন না। খাওয়া শেষে চৈতি রান্নাঘর গুছিয়ে রাখলো। কারণ জিনাত খাওয়া শেষে চলে গিয়েছেন ঘরে, নিবরাস ডেকে নিয়েছে।

নিজের ঘরে যাওয়ার সময় চৈতি শুনতে পেলো নিবরাসের কন্ঠ।

– এখন সে আমার স্ত্রী। আমি চাই না তাকে কোনো কষ্ট দেয়া হোক বা তার অতীত টেনে কোনো কটু কথা শোনানো হোক।
– তুই আমাকে হুমকি দিচ্ছিস?
– ছি মা! তুমি আমার মা। আমি কেন তোমাকে হুমকি দেব? মা, তুমি কি ভুলে যাচ্ছো তোমার শিক্ষা কি? ছোট থেকে তুমিই আমাকে শিখিয়েছো কারোর সাথে যেন মজা করতে গিয়ে কষ্ট না দিই। তাই আমি দুষ্টু হওয়া সত্ত্বেও মানুষকে কষ্ট দেয়ার ব্যাপারে ভয় করে চলি। আমি এটাই বলতে চাইছি যে তুমি না চাইতেও আমার স্ত্রীকে হয়তো কষ্ট দিয়ে ফেলবে। তখন তো তোমারই ক্ষতি মা। আমি কীভাবে আমার মায়ের ক্ষতি দেখবো বলো?

চৈতি শুনতে পেল জিনাত কাঁদছেন। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলছেন, তাকে যেন সময় দেয়া হয়। তিনি মানিয়ে নিবেন সব কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি মেনে নেয়া সম্ভব নয়। নিবরাস মাকে জড়িয়ে ধরেছে, চৈতি দেখতে পেল না। তবে শুনতে পেল, ‘সময় নাও মা। আমি তোমাকে কখনো ছোট করবো না। তোমার পায়ের নিচেই আমার জান্নাত, এ কথাটা আমি সবসময় মাথায় রাখি। তাই তুমি আমার কাছে সবচেয়ে আগে, আমার উপর তোমার অধিকার সবচেয়ে বেশি। কিন্তু সাফা আমার স্ত্রী মা। তারও আমার উপর অধিকার আছে। কেন জানো? কারণ আমি তার পোশাক আর সে আমার পোশাক। এই কথা আমার না। স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা বলেছেন। তাই আমি চাই না তোমরা দুজনেই কষ্টে থাকো কিংবা একে অপরের সাথে বিরোধ তৈরি করো। চৈতির সামনে যেমন তোমাকে ছোট হতে দেখতে চাই না আমি, তেমনি তোমার সামনে চৈতিকে ছোট হতে দেখবো না মা।’

চৈতি বিস্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিবরাস ঘর থেকে বেরিয়ে চৈতিকে দেখে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। চৈতির সম্বিৎ ফেরেনি। তবে নিবরাস হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ তার হাত ধরে ঝড়ের বেগে ঘরে গিয়ে দরজা আটকে ফেললো। চৈতির হুশ ফিরে এলে সে বললো, ‘হাতটা ব্যথা করছে। উফ!’

নিবরাস কপাল কুঁচকে বললো, ‘ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন? পঁচা স্বভাব।’

– আমি তো ঘরে আসছিলাম।
– উম… মিথ্যে বলো না।
– সত্যি! তবে এটা ঠিক যে আপনার কথা শুনে ওখানে থেমে গিয়েছিলাম।

নিবরাস আর কিছু বললো না। সে বিছানা ঠিক করতে গেলে চৈতি দ্রুত তাকে থামিয়ে বললো, ‘আমি ঠিক করছি। আপনি ডিভানে বসুন।’

নিবরাস তৃপ্তির হাসি হেসে বললো, ‘আলহামদুলিল্লাহ! এবার মনে হচ্ছে ব্যাচেলর লাইফটা শেষ হয়েছে।’

চৈতি চাদর ঝেড়ে বললো, ‘হ্যাঁ, এরপর যখন স্ত্রীর মন রক্ষা করতে যাবেন তখন বুঝবেন ব্যাচেলর লাইফ শেষ হওয়া কাকে বলে।’

– এমন করে বলছো কেন? তুমি কি খারাপ?
– আমি তো খারাপই।
– খারাপের ঘরে খারাপ এলে তো সমস্যা।

চৈতি হেসে ফেললো। নিবরাস মুচকি হেসে বললো, ‘আজ তোমার সব প্রশ্নের উত্তর দিব ইন শা আল্লাহ।’

হঠাৎ চৈতির মনে এলোমেলো চিন্তা শুরু হলো। শিমুলের বলা কথাটা মনে পড়লো। প্রত্যেক মানুষের জীবনে গোপন অতীত থাকে। চৈতি নিজেকে প্রস্তুত রাখলো যেন নিবরাসের যেকোনো কথা সে মানিয়ে নিতে পারে। সেটা যত অসহনীয় হোক না কেন।

শীতের এই রাতে চাঁদ তার রূপের বাহার নিয়ে বসেছে। শুভ্র আলোয় মেঘগুলো মুক্তা দানার মতো জ্বলজ্বলে, নিবরাস সেই দৃশ্য দেখছে তার সাফার ছলছল চোখ দিয়ে। চৈতি মনোমুগ্ধকর দৃষ্টিতে আকাশ দেখছে, যেন আগে কখনো দেখেনি সে। এমন সময় নিবরাস তার হাত ধরলো। চৈতি নিবরাসের দিকে তাকালো। মায়াবী হাসি তার প্রিয়তমর। সেই হাসিটা বলে দিচ্ছে, ‘আকাশ তুমি কি শুনতে পাচ্ছো? আমার ঘরেও আজ চাঁদের হাট।’

– আজ না বলি?

চৈতি বলে উঠলো, ‘উহু, আজই বলতে হবে।’

নিবরাস তার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো, ‘দয়া করো আমাকে।’

– একদম না টুথব্রাশ।

নিবরাস হাত ছেড়ে অভিমান করলো, ‘ছোট থেকে এই নাম শুনতে শুনতে কান পঁচে গেল।’

চৈতি কপালে হাত রেখে বললো, ‘হায় আল্লাহ! নাম বিকৃতি হারাম, এ কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। ক্ষমা করবেন আমাকে।’

নিবরাস হতাশ হয়ে বললো, ‘আমি তো মিছেমিছি রাগ করছি।’

– আমি সত্যি সত্যি ক্ষমা চাইছি।
– বউয়ের মুখে সব কিছুই ভালো লাগে।
– তাহলে গোবর বলে ডাকার অনুমতি দিন?

নিবরাস বিস্ময়ের ভান করে বললো, ‘সাফাকে শান্ত ভেবেছিলাম!’

– আমিও তো আপনাকে প্রথমে ভদ্র ভেবেছিলাম।
– পরে কি দেখলে?
– দেখলাম, আস্ত একটা পাজির গোডাউন।

নিবরাস মুচকি হেসে চৈতির হাত ধরে বললো, ‘যেই গোডাউনের একমাত্র মালিক তুমি।’

চৈতি মাথা নিচু করে হাসলো। নিবরাস চৈতির কপালের উপরে থাকা চুলগুলোর সরিয়ে বললো, ‘আমি মহান না সাফা। আমারও একটা উদ্দেশ্য ছিল তোমাকে বিয়ে করার।’

_____________________

চলবে ইন শা আল্লাহ….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here