লোডশেডিং’ পর্ব ৩৩.

0
310

‘লোডশেডিং’
পর্ব ৩৩.

তাবিনা মাহনূর

____________________

– আমি যখন সাত মাসের শিশু, তখন আমার মায়ের গর্ভে আবারো সন্তান এলো। মা আমার মতো বাচ্চা ছেলেকে নিয়ে চিন্তায় পড়ে গেলেন। আমি তখন দুগ্ধশিশু, মায়ের আদর যত্ন পাওয়া থেকে বঞ্চিত হলাম। আমার সবচেয়ে কষ্ট হলো খাওয়ার ব্যাপার নিয়ে। এসময় এগিয়ে এলেন আমার চাচী, যাকে আমি ছোট আম্মু ডাকতাম।

নিবরাস চৈতির কোলে মাথা রেখে তার গল্প বলছে। গল্পটা কল্পনা নয়, বাস্তবের নির্মম সত্য। চৈতি তন্ময় চিত্তে নিবরাসের কথা শুনছে।

– ছোট আম্মুর তখন পাঁচ মাসের একটা মেয়ে আছে। তাই আমার দুধ মাতা হলেন তিনি। মা বলে, ছোট আম্মুর কাছে প্রায় ছয় সাত মাস দুধ পান করেছি আমি। তারমানে আমার আর ছোট আম্মুর বন্ধন অনেকটা আমার মায়ের সমানই। কষ্টের ব্যাপার এই যে, আমার মা আমার দেখভাল করতে পারতেন না যেই সন্তান জন্ম দেয়ার কারণে, সেই সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছেই মৃত হয়ে। অর্থাৎ, আমার ছোট ভাই পৃথিবীর আলো দেখেনি। গর্ভে মারা গিয়েছে। এরপর মায়ের জরায়ু ফেলে দেয়া হয় কারণ জরায়ুতে টিউমার ছিল।

চৈতি প্রশ্ন করলো, ‘আপনার ছোট চাচার স্ত্রী আমার সাথে দেখা করেছেন। খুব আন্তরিক উনি।’

মুচকি হাসলো নিবরাস, ‘উনি আমার ছোট চাচী, ছোট আম্মু নন।’

অবাক হলো চৈতি, ‘মানে?’

– মানে বলছি, তুমি শুনতে থাকো। ছোট আম্মুর কোলে কোলে বড় হয়েছি আমি। কারণ আমার ছোট ভাইয়ের মৃত্যুতে আমার মা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন প্রায় পাঁচ ছয় মাস। মাকে সাইকোলজিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়া ও দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন বাবা, তাই আমার খেয়াল রাখার মতো কেউ ছিল না। দাদি একা সামলে রাখতে পারতেন না আমাকে। ওহ! বলতে ভুলে গিয়েছি। আমার বড় দুই চাচা পরিবার নিয়ে দুবাই থাকেন। তাই আমরা আর ছোট চাচারা এই বাসায় একসাথে থাকতাম। আলাদা হওয়ার ঘটনাও বলবো তোমাকে। এখন পটভূমি শোনো।
– জি।
– আমি আমার দুধ বোনের সাথে বড় হয়েছি। ছোট আম্মু আমাদের দুই ভাই বোনকে খুব আগলে রাখতেন। আমি তো এক সময় মায়ের কাছে যেতেই চাইতাম না। কিন্তু ছোট আম্মু আমাকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে মায়ের কাছে পাঠাতেন। কারণ আমার মা আমাকে ছাড়া থাকতে পারতেন না। একটাই সন্তান বলে মাও আমাকে আদরের দুলাল বানিয়েছেন। সব মিলিয়ে আমি ছিলাম খুব সুখে। আমার আর আমার দুধ বোন জাফনুনের বয়স যখন সাত, তখন ছোট আম্মু আমাদের একটা ভাই উপহার দিলেন। তুমি জানো? আমার ছোট আম্মু কত অমায়িক! উনি আমাদের ছোট ভাই জাওয়াদকে মায়ের কাছেই রাখতেন বেশি। যেন মা মৃত ছেলের কষ্ট ভুলতে পারে।

এটুকু বলে নিবরাস থেমে গেল। চৈতি তার চুলে হাত বুলিয়ে বললো, ‘কষ্ট হলে আজ থাক নাহয়।’

– না সাফা, আমি বলা শুরু করেছি, শেষ আজকেই করবো। আজকের কথাগুলো আর কখনো বলতে চাই না। আমার খুব কষ্ট হয়।

চৈতি নিষেধ করলো না। নিবরাস আবার বলতে শুরু করলো, ‘জাওয়াদকে নিয়ে আমাদের দুই ভাই বোনের মারামারি, পড়াশোনায় ফাঁকিবাজির কারণে মায়ের বকাঝকা, দুষ্টুমি করতে গিয়ে ধরা পড়া- সবকিছু ছোট আম্মু সামলে রাখতেন। আর আমার মা বাড়ির বাকি কাজগুলোর দায়িত্বে ছিলেন। তাই আমি বেশিরভাগ সময় ছোট আম্মুর কাছেই কাটিয়েছি। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর হঠাৎ একদিন আমার জীবনে খুব বড় রকমের কষ্ট নেমে এলো, যেই কষ্টের ভার এখনো বহন করছি।’

একটু থেমে নিবরাস আবার বলতে শুরু করলো। এখন সে চৈতির হাতটা বুকের উপর রেখেছে।

– আমি তখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। বাড়ি ফেরার পর ছোট আম্মুকে পেলাম না। মা ঝটপট দুপুরের খাবার খেতে দিয়ে বললেন ছোট আম্মু জাওয়াদকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছেন। কিন্তু ছোট চাচা জাওয়াদকে নিয়ে আসায় আমরা খুব অবাক হলাম। চাচা তো রেগে অস্থির! আম্মু কেন স্কুলে আনতে যায়নি, জাওয়াদের টিচার ফোন করে চাচাকে যেতে বলেছে, আবার চাচার ফোন ধরছে না ছোট আম্মু। যখন তিনি জানলেন ছোট আম্মু বাসায় নেই তখন তিনি সহ আমরা সবাই চিন্তায় পড়ে গেলাম। চাচা স্কুলের পথ ধরে খুঁজতে শুরু করলেন, আমি খুঁজলাম আম্মুর বোনের বাড়ির পথে। কারণ মাঝে মাঝেই তিনি জাওয়াদকে স্কুলে দিয়ে বোনের বাসায় যেতেন। কিন্তু আমরা কেউই খুঁজে পেলাম না তাকে। একদিন নিখোঁজ না হওয়া অব্দি থানায় জিডি করা যায় না। তাই কিছুই করতে পারছিলাম না। তারপর সবার চিন্তার অবসান ঘটিয়ে আম্মু এলেন সন্ধ্যার পর, সাড়ে সাতটার দিকে, বিধ্বস্ত অবস্থায়।

চৈতি শ্বাস আটকে শুনছে। নিবরাস যেন তাকে উপন্যাস পড়ে শোনাচ্ছে, মন্ত্রমুগ্ধের মতো শ্রোতা হয়ে বসে আছে চৈতি।

– ছোট আম্মুকে গণধর্ষণ করা হয়েছিল। আম্মু সেদিন জাওয়াদকে আনতে গিয়েছিলেন। রিকশা জ্যামে আটকে যাওয়ায় জাওয়াদের চিন্তায় আম্মু মাঝ রাস্তায় নেমে তাড়াতাড়ি স্কুলে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে গলি দিয়ে হাঁটতে থাকেন। গলির মোড়ে চার জন বখাটে মাদকে মত্ত ছিল। ছোট আম্মু থেমে গিয়ে তাদের অলক্ষে উল্টো পথ ধরেছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। চার জন আম্মুকে ঘিরে ধরে। একজনও বাদ দেয়নি। পেটের ব্যথায় কাতর আমার আম্মুর চিৎকার কেউ শোনেনি। কেউ নাহ!

চৈতির অশ্রু ঝরে পড়ছে। সে জানে এই বিভীষিকাময় ঘটনা কতখানি ভয়ানক!

– আম্মুর মুখের এই বক্তব্য আমি শূন্য অনুভূতি নিয়ে শুনছিলাম। এলাকায় ততক্ষণে সবাই জেনে গিয়েছে আমার আম্মুর খবর। ছোট আম্মুর আসতে দেরি হয়েছে কারণ তিনি একাই হেঁটে হেঁটে হাসপাতালে গিয়েছিলেন নিজেকে বাঁচাতে। তারপর একাকী বাসায় ফিরেছেন। আম্মু খাস পর্দানশীন ছিলেন। কিন্তু দুনিয়ার পরীক্ষা যে বড় কঠিন!

নিবরাস চৈতির দিকে তাকালো। তার হাত দিয়ে চৈতির অশ্রু মুছে বললো, ‘তারপর এলো আরো বড় পরীক্ষা। দাদি মানলেন না ছোট আম্মুকে। তিনি কিছুতেই বিশ্বাস করলেন না পর্দা করা সত্ত্বেও কেন ছোট আম্মুর সাথে এমন হলো, নিশ্চয়ই আমার আম্মুর চরিত্রে সমস্যা আছে! এসব শুনে চাচার মাথা নষ্ট হয়ে গেল। তিনিও আম্মুকে সন্দেহ করা শুরু করলেন। তারপর একদিন হুট করে তিন তালাক দিয়ে বসলেন। আর আম্মু সেদিনটা কাটালেন ঘোর গ্রস্থের মতো। পরেরদিন থেকে আম্মু নিখোঁজ হয়ে গেলেন, আমরা কেউ খুঁজে পাইনি।’

চৈতি স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। নিবরাস উঠে বসে বললো, ‘আর একারণেই আমরা এখন আলাদা থাকি। আমার আম্মু চলে যাওয়ায় আমি ছোট চাচার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করেছিলাম। গায়ে হাত তোলা বাকি ছিল শুধু। যেহেতু এই বাড়িটা আমার বাবা বানিয়েছিলেন তাই এই বাড়িতে চাচা আর থাকলেন না। তিনি গাজীপুরে দাদার বানানো এক তলা বাড়িটায় থাকতে শুরু করলেন। আর দুই মাসের মাঝেই নিয়ে এলেন বন্ধা ছোট চাচীকে। যেন জাফনুন আর জাওয়াদের যত্নে কোনো ত্রুটি না থাকে।

চৈতি চোখ মুছে বললো, ‘কিন্তু আপনাকে দেখলাম আপনার চাচার সাথে হেসে হেসে কথা বলছেন?’

– সাফা, আমি খারাপ আচরণ করেছিলাম প্রচন্ড রেগে গিয়ে। কিন্তু সম্পর্ক নষ্ট করিনি, এটা হারাম। পরে চাচার বাসায় গিয়ে চাচার হাত ধরে ক্ষমা চেয়েছিলাম। কিন্তু চাচাই উল্টো ক্ষমা চেয়েছিলেন। তিনিও বুঝেছিলেন তিনি কত বড় ভুল করেছেন। কারণ আমি একবারও তার সামনে ছোট আম্মুর ব্যাপারে কোনো কথা না বললেও, আমার নীরব অশ্রু বলে দিয়েছে অনেক কিছু।
– জাফনুন আপু আপনার দুধ বোন?
– হুম।
– ওহ, জাফনুন আপু আমাকে অনেক আদর করেছেন। বলতে গেলে, এ বাড়িতে আসার পর আপুই আমাকে সবচেয়ে বেশি আগলে রেখেছিলেন। এজন্য সবাই চলে গেলেও আমি আপুকে অনেক খুঁজেছি। ভেবেছিলাম আপু থাকলে একটু ভালো লাগতো। তবে আপনার সাথে অনেক গল্প করছিল আপু, এজন্য একটু ভয় পেয়েছিলাম আপনি চাচাতো বোনের ব্যাপারে গায়রে মাহরাম মেনে চলেন কি না।

নিবরাস হাসলো, ‘সে সম্পর্কে আমার আপন বোনের মতোই যেহেতু দুধ সম্পর্কের সবাই মাহরাম। তাই আমার আর তার বন্ধুর মতো একটা বন্ধন আছে। বিশেষ করে ছোট আম্মুর কারণে আমাদের মিল বেশি।’

চৈতির মনে পড়লো, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েজ নেই। কিন্তু নিবরাসের ছোট আম্মু একদম যোগাযোগ রাখেননি, তিনি ধর্মপ্রেমী মানুষ হওয়া সত্ত্বেও কেন এমন করলেন? তবে কি তিনি আর বেঁচে নেই! চৈতি নিবরাসকে এগুলো বললো না। নিবরাসের মন আরো খারাপ হয়ে যাবে। সে প্রশ্ন করলো, ‘আমাকে বিয়ে করার কারণ?’

– প্রথমেই বলে রাখি, আমি কিন্তু তোমাকে হুট করেই বিশ্বাস করিনি। আমি সৌরভের সাথে যোগাযোগ করেছি।
– সৌরভ!
– হুম। আমি মহান নই সাফা। আগেও বলেছি। তোমাকে আমি আশি ভাগ বিশ্বাস করেছিলাম তোমার মায়াবী রূপে কোমল কন্ঠ শুনে। যেই কন্ঠ মিথ্যে বলবে না বলেই আস্থা ছিল। তারপরও শত ভাগ বিশ্বাস করতে সৌরভকে ফোন করেছিলাম। উত্তরে সে তোমার কথাগুলোই বললো। আরো বলেছে, পারলে তুমি যেন তাকে মাফ করে দাও।

অবাক হলো চৈতি, ‘যদি সৌরভ মিথ্যে বলতো?’ নিবরাস বললো, ‘সৌরভ মিথ্যে বললে আমি আরো যাচাই করতাম। কারণ সে মিথ্যে বলাটা স্বাভাবিক ছিল। মোট কথা, আমি তোমার কথাগুলোর সত্যতা বের করেই ছাড়তাম। কারণ ততদিনে আমি তোমাকে আমার পাশে দেখতে শুরু করেছি।’

– যদি আমার অন্য কোথাও বিয়ে ঠিক হতো?
– তাহলে সেটা আমার দুর্ভাগ্য হতো।

চৈতি আর কিছু বললো না। নিবরাস বললো, ‘আমি চেয়েছিলাম আমার পরিবারের মানুষকে বোঝাতে, ছোট আম্মুর পাশে না থেকে বরং তাকে তালাক দিয়ে বের করে দেয়া কত বড় অন্যায়। আমার মা একটু বোকা ধরণের ভালো মানুষ। তাই কেউ কেউ তাকে বুঝিয়েছে যেন তোমাকে আমি বিয়ে না করি, মা সেটা নিয়েই পরে আছেন। কিছুদিন গেলে ঠিক হয়ে যাবে সব ইন শা আল্লাহ। আর আমি যদি কোনোদিন ছোট আম্মুকে খুঁজে পাই, তোমাকে নিয়ে তার সামনে দাঁড়াতে চাই। বলতে চাই, সবাই ভুলে গেলেও আমি ভুলিনি তাকে।’

চৈতি মুচকি হাসলো, ‘ঝোঁকের মাঝে আমাকে বিয়ে করলেন আপনি। পরে আফসোস করবেন না তো?’

– এতক্ষণেও বোঝোনি আমি কেমন?
– কতক্ষণই বা হলো?
– আমি তো বলেছি আমি মহৎ না। তাই তোমার ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়েই বিয়ে করেছি আমি।
– খোঁজ খবর না নেয়াটাই অস্বাভাবিক। তাই এতে আমি রাগ করিনি। এমনকি আমার বাবাও আপনাদের এলাকায় এসে আপনার সম্পর্কে খোঁজ নিয়েছিলেন। এই কাজটা বিয়ের আগে পাত্র পাত্রীকে করতে হয়। আমি বলছি ভবিষ্যতের কথা।
– তুমি আমার কথার মর্ম বোঝোনি সাফা।
– বুঝেছি বলেই বলছি। একদিন হয়তো আপনার মনে হবে, একটা কুমারী মেয়ে পেলে ভালো হতো। কিংবা, ছোট আম্মুর সাথে আমার বিয়ের তো কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাহলে কেন করলাম এই বিয়ে?

নিবরাসের চোখ মুখ শক্ত হয়ে আছে। চৈতি আবার বললো, ‘অবশ্য আমি যে কেন এতো আশা করছি! আগেই বলে রাখি, আপনি আরেকটা বিয়ে করলে সমস্যা নেই।’ নিবরাস কিছু না বলে বাথরুমে গিয়ে ওযু করতে শুরু করলো। চৈতি বুঝতে পারলো নিবরাস রেগে গিয়েছে, রাগ কমানোর চেষ্টা করছে। নিবরাস বের হওয়ার পর শুধু একটা কথাই বললো, ‘মেয়েদের মনে জিলাপি না, এনাকন্ডার মতো প্যাঁচ। অসহ্য!’

নিবরাস চুপচাপ বিছানায় শুয়ে আছে। চৈতি জানালার বাইরে তাকিয়ে। ঘরের মাঝে বিব্রতকর এক নিস্তব্ধতা। দুজনেই যেন অপেক্ষায় আছে কখন ভোর হবে। কারো চোখে ঘুম নেই। হঠাৎ নিবরাস বললো, ‘আমার ব্যাথাটা তুমি বুঝলে না সাফা। আমি তোমার মতো কাউকে নয়, তোমাকেই চেয়েছি।’

চৈতি চুপ করে আছে। নিবরাস উঠে বসে বললো, ‘আমি খুব কষ্ট পেয়েছি সাফা।’

– ক্ষমা করবেন, আমি এমনই।
– ক্ষমা করবো না, আমি শাস্তি দিব তোমাকে।
– শাস্তি দিতে দিতে আপনিই ক্লান্ত হয়ে যাবেন একদিন। কারণ, আমি এমনই!
– ক্লান্ত হবো না। কারণ তুমি এমন থাকবে না আর।
– কীভাবে এতোটা নিশ্চিত হচ্ছেন?
– তুমি এখন নিবরাসের বউ সাফা, সাফওয়ানা চৈতি না।

চৈতির মনে পড়লো, সে চেয়েছিল এমন একজন আসবে যে তাকে সাফওয়ানা অর্থাৎ উজ্জ্বল নক্ষত্র মনে করবে। নিবরাসের কথাতে তার মন ভালো হয়ে গেল। সে বললো, ‘সাফা অর্থ কি?’

– স্বচ্ছতা।
– আমি কি স্বচ্ছ?
– হুম, এতোটাই স্বচ্ছ যে তোমার মাঝে আমার প্রতিবিম্ব দেখা যায়। তুমি যে আমার পুরোটাই।

চৈতি মুচকি হেসে সামনে ফিরে তাকালো। নিবরাসের কথাগুলো তাকে ভাবায়। এতো সুখ কেন তার কপালে! আল্লাহ এ কোন নিয়ামত পাঠালেন তার জন্য, যাকে চৈতি আগলে রাখতে পারবে কিনা এই ভয়েই তার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে হয় সাবধানে!

নিবরাস তাহাজ্জুদের সালাত পড়ছে। পাশে চৈতিও পড়ছে। ফজর পড়ে চৈতি যখন হিজাব আর মুসাল্লা গুছিয়ে রাখছে নিবরাস বললো, ‘সাফা।’

চৈতি তাকালো। মাদকতায় ভরা দৃষ্টিতে নিবরাস হাত বাড়িয়ে দিলো। চৈতি সেই হাত ধরে নিবরাস তার কানে কানে বললো, ‘আমাকে দয়া করো সাফা, আমার কষ্ট প্রশমন করো। আমাকে দয়া করো।’

চৈতির উত্তর, ‘আমি তো তোমারই!’

______________

চলবে ইন শা আল্লাহ…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here