লোডশেডিং’ পর্ব ২৫.

0
265

‘লোডশেডিং’
পর্ব ২৫.

তাবিনা মাহনূর

______________________

কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলো না চৈতি। বাসায় সারাফ সাহেব চৈতিকে বকাঝকা না করলেও মহিলা সদস্যরা ইচ্ছেমতো বকেছেন। নীরা আর শিমুল দুজনেই কিছুক্ষণ বকে চৈতিকে আদর করে দিয়েছেন। জেবিন বকা না দিলেও উপদেশ দিয়েছেন দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দেয়ার জন্য। এসএসসি তে যেই মেয়ে বৃত্তি পাওয়ার মতো নম্বর পেয়েছে, সেই মেয়ে কীভাবে কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেলো না, তা কেউ বুঝতে পারছেন না।

চৈতি অবশ্য চুপচাপ বসে আছে। একে একে প্রত্যেকেই নিজেদের মতো গল্পের আসর জমালে চৈতি সেখান থেকে উঠে সারাফের ঘরে গিয়ে বলে, ‘বাবা!’

সারাফ মেয়ের দিকে তাকালেন না। বইয়ে মুখ গুঁজে বললেন, ‘হুম।’

– রাগ করেছো?

এবার সারাফ তাকিয়ে বললেন, ‘এদিকে এসে বস।’

চৈতি বাবার পাশে বসলো। সারাফ মেয়ের হাত ধরে বললেন, ‘কাজটা ঠিক করেছিস?’

– আমি জানি না বাবা।
– আমার ভালো মেয়েটার রেজাল্ট এমন আসলো কেন?
– বাবা!
– বল মা, শুনছি তো।
– আজকে সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজাল্ট বের হয়েছে।
– পরীক্ষা দিয়েছিলি?
– হ্যাঁ।
– রেজাল্ট দেখেছিস?
– নবম হয়েছি।

সারাফ সাহেব কিছুক্ষণ থমকে বসে থেকে উচ্চস্বরে জেবিনকে ডাকতে ডাকতে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন।

– শুনছো? কোথায় তোমরা? চৈতালি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে!

এ কথা শুনে সবাই সারাফের মতো কিছুক্ষণ হতবাক হয়ে থাকলেন। তারপর চৈতিকে জড়িয়ে সবাই নিজেদের আনন্দ প্রকাশ করলো। কিন্তু চৈতির মনে অন্য চিন্তা। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবে না। কিন্তু কথাটা সে কাউকেই বলেনি উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায়।

উৎসবের সাজরব পরে গেল চারিপাশে। জেবিন পোলাও মাংস রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। শিমুল নিজের হাতে কেক আর কাস্টার্ড বানানোর দায়িত্ব নিলো। আর নিরা বানাবেন চিংড়ির মালাইকারি আর বিভিন্ন রকমের ভর্তা। তাদের উৎফুল্ল মন আর কাজের আগ্রহ দেখে চৈতি আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া জানালো।

সারাফ মেয়ের কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘মা কি আগে থেকেই এসব পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন?’

– জি পুত্র।
– এটা কত ভয়াবহ পদক্ষেপ বুঝতে পারছিস? ইচ্ছে করে ঢাকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা বাজে দেয়া উচিত হয়েছে?
– যদি ঢাকায় সুযোগ পেতাম তাহলে তুমি এখানেই রেখে দিতে আমাকে।

সারাফের মন খারাপ হয়ে গেল। তিনি মেয়েকে বললেন, ‘যতদিন আছিস, আমার কাছে থাকলে কি হতো?’

চৈতি মলিন হেসে বললো, ‘এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছি বলে সব ভুলে গিয়েছি, এমনটা নয় বাবা।’

– তোর খুশিই আমার খুশি। তুই যেখানে ভালো থাকবি সেখানেই থাকবি। শুধু আমাকে মনে রাখলেই চলবে।
– তোমাকে ভুলবো কেন বাবা! এটা কেমন প্রশ্ন?

বাবা মেয়ের মধ্যকার আলাপে সাদিয়া আর সাদিক এসেও যুক্ত হলো। সবার মাঝে আজ আনন্দের জোয়ার। দুপুরের খাবারের পর্ব সেরে বিকেলে সবাই ঘুরতে যাওয়ার চিন্তা করলো। মাহতাব আজকে চৈতির পক্ষ থেকে সবাইকে খাওয়াতে চেয়েছে। এটা আজকালকার বহুল পরিচিত ‘ট্রিট’! যেটা চৈতির দেয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেই ভার মাহতাব নিজের ঘাড়ে নিয়েছে।

বাহির থেকে ঘুরে এসে সারাফ দেখলেন সজীব সাহেব দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। তিনি চৈতিকে দেখে বললেন, ‘মা শা আল্লাহ চৈতি মা! কি ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করেছো!’

চৈতি মৃদু কণ্ঠে বললো, ‘জাঝাকাল্লাহ খইরন বড় কাকা।’

সজীব মুচকি হেসে সারাফকে বললেন, ‘আমার যে কি খুশি লাগছে রে সারাফ! আমার হবু বৌমা ভালো করেছে।’

থমথমে মুখে সারাফ বললেন, ‘বড় ভাই, দরজা খুলি। এরপর ভেতরে গিয়ে কথা বলবো।’

ভেতরে গিয়েই চৈতি ঘরে ঢুকে দরজা ভিড়িয়ে দিলো।জেবিন আর শিমুল ড্রইং রুমে আলোচনা সভায় বসেছে। নিরা সাজ্জাদকে নিয়ে এখানে আসবেন বলে নীচে আছেন। সজীব সাহেব কথা শুরু করার আগ মুহূর্তে দিলারা বেগম হাজির।

দিলারা আজও চৈতির সাথে কথা বলেন না। সেই ঘটনার পর এতগুলো মাস পেরিয়ে গেল, এখন অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়। তবু তিনি চৈতির সাথে কথা বলেননি। মনে মনে কূটকৌশল তৈরি করে রেখেছেন, ছেলের সাথে চৈতির বিয়ে দিয়ে চৈতিকে উনি কখনোই শান্তি দিবেন না। নিজের আদরের পুত্রকে ধুঁকে ধুঁকে মরতে দেখেছিলেন সেসময়। সেই কষ্ট তিনি এখনো ভুলেননি। তিনি এখনো বিশ্বাস করেন চৈতি নির্দোষ নয়।

প্রথম কথা সজীব সাহেব তুললেন, ‘দেখ সারাফ, তোদেরকে যখন বিয়ের বিষয়ে চিন্তা করতে বলেছিলাম, তখন তোরা চৈতির পড়াশোনা নিয়ে কথা বলেছিলি। আমরা মেনে নিয়েছি। চৈতি এখন একটা ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে যুক্ত হতে পারবে। আমাদের কি এখন কথাবার্তা এগোনো উচিত না?’

– বড় ভাই, চৈতির সাথে আলাপ না করে আগেই বলতে পারছি না।

‘আবার কি আলাপ? এত আলাপ কিসের?’ দিলারার প্রশ্নে সজীব বললেন, ‘কামিনীর মা, তুমি থামো। কথার মাঝে কথা বলো না।’

দিলারা চুপ করে মুখ গম্ভীর করে রাখলেন। সজীব বললেন, ‘যা সিদ্ধান্ত নেয়ার এখনই নিতে চাই। চৈতিকে ডাক।’

জেবিন ইতস্তত কণ্ঠে বললেন, ‘বড় ভাই, চৈতি বাহির থেকে এসেছে কেবল।’

– বাহির থেকে আসলেই কি? সে কি বিদেশ থেকে এসেছে যে জেট ল্যাগ হচ্ছে?

দিলারার তাচ্ছিল্যপূর্ণ কথায় শিমুল রেগে গিয়ে কিছু বলতে যাবে কিন্তু নীরার ইশারায় সে থেমে গেল। সজীব বললেন, ‘তুমি কিন্তু বাড়াবাড়ি করছো?’

– বাড়াবাড়ি কোথায় করলাম? তুমি কি সৌরভের বাবা না নাকি! চৈতির আজ না কাল, কাল না পরশু, সিদ্ধান্ত নিইনি এখনো, এসব কথার মানে বুঝছো না? ও আমাদের ছেলেকে ঘুরাতে চাইছে।

সারাফ বেশ রেগে গেলেন, ‘বড় ভাবি, আপনাকে সম্মান করি। তাই বলে মেয়ের অপমান সহ্য করবো না। আপনার ছেলে আমার মেয়ের সর্বনাশ করার পরও আপনারা বড় বড় কথা কীভাবে বলেন তা দেখে সত্যিই অবাক হচ্ছি! আপনাদের ছেলেকে ঘুরাচ্ছি মনে হলে অন্য জায়গায় মেয়ে খুঁজেন। আমাদের এতোটাও শখ হয়নি যে আপনার ছেলেকে জামাই করে ঘরে নিয়ে আসবো।’

সজীব বললেন, ‘আচ্ছা সবাই থামো তো। সৌরভ আর চৈতি আজ মুখোমুখি হোক। এভাবে আর কতদিন চলবে? দশ মাস চলছে। এখনো ছেলে মেয়েরা সামনাসামনি হতে না পারলে বিয়ে দিব কী করে? এই সারাফ, তুই চৈতিকে ডাক। আমি সৌরভকে ডেকে আনছি।’

সজীব বলার সঙ্গে সঙ্গে সৌরভ দরজায় কড়া নাড়লো। সে এতক্ষণ বাইরেই ছিল। বাইরে দাঁড়িয়ে ভেতরের কথোপকথন শুনছিল। শিমুল দরজা খুলে দিয়ে দ্রুত চৈতির ঘরে চলে গেল। চৈতি ঘরে বসে সবটা শুনেছে। শিমুল মৃদু স্বরে বললো, ‘যাবি ওখানে?’

কতদিন পর চৈতি তার জীবনের বিভীষিকাকে চোখের সামনে দেখবে। দুই একবার ভুলক্রমে দেখা হলেও সৌরভ দ্রুত সরে যেতো। তাদের মাঝে এতদিন কোনো কথা হয়নি। চোখ বন্ধ করে আল্লাহর নাম স্মরণ করে মনে সাহস সঞ্চার করলো চৈতি। শিমুলকে বললো, ‘চলো আপু!’

ড্রইং রুমে গিয়ে চৈতি এক কোণে দাঁড়িয়ে বললো, ‘বাবা, যা বলার তুমি বলো। মাঝখানে আমার কথা বলার প্রয়োজন পড়লে আমি কথা বলবো।’

সজীব সাহেব বললেন, ‘না চৈতি। তোমাকেই আজ কথা বলতে হবে। তোমার বড় কাকীর দাবি, তুমি নাকি সৌরভকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শেষে বিয়ে করতে রাজি হবে না।’

– আপনারা যা ইচ্ছে ভাবেন, আমি কোনো কিছুই পরিষ্কার করবো না।
– এটা তো উচিত না। আমাদেরকে বলো তুমি কবে বিয়ে করতে রাজি হবে?
– ফেব্রুয়ারি।

উপস্থিত সকলেই চমকে তাকালো চৈতির দিকে। সারাফ অবশ্য ঘাবড়ালেন না। তিনি বললেন, ‘শুনেছেন বড় ভাই? আমার মেয়েটা ভার্সিটির কাজগুলো সম্পূর্ণ সেরে তারপর বিয়ে নিয়ে ভাবতে চায়।’

– এটা অনেক দেরি সারাফ! বেশি দেরি করা কি ঠিক?

দিলারা উচ্চস্বরে বললেন, ‘তুমি বুঝতে পারছো না কামিনীর আব্বু? এই মেয়ে পরে গিয়ে বলবে সে সৌরভকে বিয়ে করবে না। এদের চাল আমার বোঝা হয়ে গিয়েছে।’

দিলারার বক্তব্যে এবার সজীব কোনো জবাব দিতে পারলেন না। এখন তারও মনে হচ্ছে চৈতি কোনো পরিকল্পনা সাজিয়েছে। নীরা মাঝখান থেকে বলে উঠলেন, ‘বড় ভাবি, মেয়েটা সবকিছু ঠিকঠাক করে তারপর হয়তো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে।’

– এসব আমি বুঝি। এই মেয়েটা যত সব নষ্টের গোড়া।

সারাফ উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘আপনাদের যখন এতই আপত্তি তাহলে আপনারা অন্য কোথাও মেয়ে খুঁজুন। চৈতালি মা, তুই চিন্তা করিস না। তোর কোথাও বিয়ে না হলেও আমি যতদিন বাঁচবো তোকে কাছে রাখবো।’

হঠাৎ সৌরভ বললো, ‘দয়া করেন কাকা! আজকালের মধ্যে বিয়েটা দিয়ে দেন!’

চৈতিও ঠিক একই সুরে বললো, ‘আমি ফেব্রুয়ারি মাসের আগে বিয়ে করবো না।’

সজীব বললেন, ‘চৈতি মা, আমরা এখনই কাজী ডাকবো। তোমার মতিগতি ভালো লাগছে না।’

– কাকা! আপনি কিছু করবেন না। আমি এখন বিয়ে করবো না।
– সারাফ, তোর মেয়েকে কিছু বল।

সারাফ বললেন, ‘আমার মেয়ে যা বলবে তাই হবে।’

সজীব মুখ থমথমে করে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘ঠিকাছে। সৌরভ, কামিনীর মা, দুজনেই ঘরে চলো।’

নিমিষেই পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে এলো। সবাই নিজেদের মতো কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল। তবে চৈতিকে যখন প্রশ্ন করা হলো ফেব্রুয়ারি মাসে কেন? তখন সে উত্তর দিলো, ‘ভার্সিটিতে ক্লাসের সুযোগ পাবো জানুয়ারির শেষ দিকে। সেখানে অনেক কাজ আছে। আমি যদি বিয়ে করি তাহলে আমার সাথে সৌরভও ওখানে থাকবে কিনা সেটাও বিবেচনা করতে হবে। আমি ভার্সিটি সংক্রান্ত সব কাজ শেষ করে তারপরেই বিয়ে করতে চাই।’

___________

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নাস্তা খেয়ে চৈতি বাইরে যাওয়ার জন্য তৈরি হলো। দরজার কাছে যেতেই জেবিন বললেন, ‘কোথায় যাচ্ছিস?’

চৈতি কোনো উত্তর খুঁজে পেলো না। পেছন থেকে সারাফ বললেন, ‘চৈতালি প্রতিদিন একটা টিউশনি করতে যাবে। আমার বন্ধুর মেয়েকে পড়াবে।’

যুৎসই উত্তর পেয়ে জেবিন আর কিছু বললেন না। চৈতি মুচকি হেসে বাহিরে চলে গেল। বাবার বিচক্ষণতা তাকে সবসময় অভিভূত করে।

তবে বাসায় ফেরার সময় বিপদ তাকে আঁকড়ে ধরলো। দুপুর বেলা। তিন তলায় আসতেই কামিনীর সাথে দেখা। আজই হয়তো বেড়াতে এসেছে। লাল রঙের একটা ফতুয়া আর কালো স্কার্ট পরে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে কামিনী। চৈতিকে দেখে বললো, ‘ঘরে এসো।’

চৈতি স্বাভাবিক কণ্ঠে উত্তর দিলো, ‘না আপু। আমি বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হবো।’

আচমকা কামিনী চৈতির হাত ধরে টেনে ঘরে নিয়ে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। সবটা এত দ্রুত ঘটলো যে চৈতি বুঝতেই পারলো না কি ঘটছে! সে কামিনীকে হতবাক কণ্ঠে প্রশ্ন করলো, ‘কি আশ্চর্য আপু? তুমি এভাবে আমাকে ঘরে নিয়ে এলে কেন?’

কামিনী নির্বিকার ভঙ্গিতে বললো, ‘শাড়ি পরিয়ে দিব। আজকে আমার ভাইয়ের সাথে তোমার বিয়ে দিব।’

চৈতি অদ্ভুত এই কথার পৃষ্ঠে হেসে উঠে বললো, ‘তোমরা যা বলবে তাই হবে? আমি বিয়ে করবো না। এখন যদি জোর করো, তাহলে আমি আগামীতেও বিয়ে করবো না।’

– বোরকা খোলো চৈতি। শাড়ি পরিয়ে দিই।
– আমি বিয়ে করবো না।

কামিনী ডেকে উঠলো, ‘আম্মু! আম্মু!’

দিলারা এসে বললেন, ‘শাড়ি পরতে চাইছে না, তাই না?’

– না। তুমি পারো কিনা দেখো।

দিলারা বললেন, ‘চৈতি, তোমার কি সমস্যা আমাকে বলো তো? আমার ছেলেটা সেই কবে থেকে তোমাকে বিয়ে করার জন্য মুখিয়ে আছে। তুমি বারবার তারিখ পিছিয়ে দিচ্ছ কেন?’

চৈতি চোখ বন্ধ করে শ্বাস নিয়ে বললো, ‘আমি আপনাদের কারোর সাথেই কথা বলবো না। সৌরভকে ডাকুন।’

হতভম্ব হয়ে দিলারা মেয়ের দিকে তাকালেন। কামিনী কিছু বলার পূর্বেই সৌরভ দরজার পেছন থেকে বললো, ‘আম্মু, তোমরা বের হও। আমি কথা বলি ওর সাথে।’

সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পর চৈতি আবার বোরকা ও নিকাব পরে নিলো। সৌরভ মাথা নিচু করে বিছানায় বসে আছে। চৈতি সেদিকে না তাকিয়ে প্রশ্ন করলো, ‘হুট করে বিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা আপনার?’

– না। এটা বাবার প্ল্যান।
– আর আপনি এটাকে সমর্থন করেছেন?

চুপ করে আছে সৌরভ। চৈতি আবার বললো, ‘আপনি এখন বিয়ে করলে আজ কিংবা কাল যেকোনো মুহূর্তে আমি আত্মহত্যা করবো।’

– এমন কথা বলতে হয় না চৈতি।
– আপনারা আমার সাথে আর কি করা বাকি রেখেছেন? আমাকে অতিষ্ঠ করার কোনো কৌশল বাকি রেখেছেন কি?
– তুমি কি চাও? বিয়ে পিছিয়ে দিচ্ছো কেন?
– আমি চাই বিয়েটা জানুয়ারি মাসের চার তারিখেই হবে।

সৌরভ ভেতরে ভেতরে চমকে উঠলেও বাহিরে তা প্রকাশ করলো না। ভয়াবহ সেই দিনের কথা সে নিজেই স্মরণ করতে চায় না। অথচ চৈতি সেদিনই বিয়ে করতে চাইছে। সে ধীর কণ্ঠে বললো, ‘তুমি ফেব্রুয়ারি বলেছিলে।’

– হুম। কিন্তু আপনারা যা শুরু করেছেন তাতে আমাকে জানুয়ারি মাসেই ঠিক করতে হলো। এটাতেও রাজি না থাকলে আমি আপনাকে কোনদিন বিয়ে করবো না।
– ডেট পরিবর্তন করা যায় না?
– না।

সৌরভ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, ‘তুমি যা চাও, তাই হবে।’

– এখন দয়া করে ছেড়ে দিন।
– তুমি যেতে পারো।

চৈতি ঘরে ফিরেই বাবার কাছে গিয়ে বললো, ‘তোমার সাথে আমার কথা আছে বাবা।’

___________

চলবে ইন শা আল্লাহ….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here