মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 ইভা রহমান Part-51

0
908

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

ইভা রহমান

Part-51

রুপম এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসার সাথে সাথে সেই ভোর রাতেই শ্রাবণকে নিয়ে আসা হয় হসপিটালে,,রাতে যেই ডক্টররা ডিউটিতে ছিলো তারা প্রথমেই শ্রাবণের জন্য একটা স্যালাইনের ব্যবস্থা করে বাকি ট্রিটমেন্ট শুরু করে,,তাদের ধারণা শ্রাবণের হয়তো পেট খারাপের পাশাপাশি ডিহাইড্রেশন তো হয়েছে সাথে হয়েছে টাইফয়েড টাইপ কিছু একটা,,নার্সরা এসে শ্রাবণের থেকে ব্লাড আর ইউরিন কালেক্ট করে পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায়,,এ-ই পরীক্ষার রিপোর্ট আসতে না-কি সময় লাগবে পাঁচ থেকে ছয় ঘন্টা বা তারো বেশি,,ডক্টরা শ্রাবণকে কিছু মেডিসিনের সাথে ঘুমের ঔষধ দিয়ে ঘুম পাড়ানোর ব্যবস্থা করে,,এদিকে দেখতে দেখতে সময় পেড়িয়ে সকাল তখন আটটা,,খবর পাবার সাথে সাথে সন্ধি ঝিনুক দু’জনেই এ-ই সাত সকালে এসে হাজির হয় হসপিটালে,,ওরা এসে যেভাবে পারছে হিয়াকে সান্ত্বনা দেবার চেষ্টা করছে,,কিন্তু হিয়াকে শান্ত করার সাধ্য যে তাদের এ-ই মুহুর্তে নেই,,

হিয়াঃ আমার কিছু ভালো লাগছে না ঝিনুক,,শ্রাবণ আবার সেবারের মতো চুপ করে ঘুমিয়ে আছে আমার সাথে কথা বলছে না,,ও ও আবার আগের মতো,,

সন্ধিঃ হিয়া শান্ত হও,,এটা তো বোঝাই যাচ্ছে যে বাহিরের খাবার খেয়ে এরকম টা,,

হিয়াঃ উনি তো সুস্থ হ’য়ে গেলো তাহলে শ্রাবণ কেনো এভাবে,,কেনো ওর জ্বর আসলো বলুন আমাকে,,

ঝিনুকঃ চুপ না সোনা বোন আমার,,এভাবে কাঁদতে হয় না__ভাইয়া তো বড় মানুষ বল এজন্য তাড়াতাড়ি সুস্থ হ’য়ে গেছে শ্রাবণ তো ছোট ওর শরীর নিতে পারে নি,,

হিয়াঃ আমি জানি না তোরা আমার বাচ্চা টাকে সুস্থ করে দে,,ওর রিপোর্ট আসতে এতো কেনো সময় লাগছে,কি কথা বলছে উনি ডক্টরের সাথে এতো,আমি শুনবো,,ছাড় আমাকে,,

হিয়া ঝিনুকের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বাহিরে আসে,আর এসে উজানের সাথে ডক্টরের যে কথোপকথন শুনতে পারে এটার জন্য যেনো সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না,,

ডক্টরঃ বাচ্চার শরীরে তো ব্লাড অনেক কম ও কি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করে না?

উজানঃ ব্লাড কম!(অস্ফুটে)

ডক্টরঃ ওর শরীরে ঠিক মতো ব্লাড তৈরি হচ্ছে না,কাউন্ট অনেক কম,,,,,,তার উপর ডায়রিয়া হয়ে পুরো শরীরে পানির লেভেল লো তে নেমে গেছে,,পুরো শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে,বাচ্চাটাকে ইমিডিয়েট তিন ব্যাগ রক্ত দেবার ব্যবস্থা করুন নাহলে অবস্থা আরো ক্রিটিকেল আকার ধারণ করতে পারে,,হয়তো বাচ্চা টাকে তখন আর কোনোভাবে,,

উজানঃ না,,আপনাদের যা করতে হয় আপনারা করুন,আমাকে কি করতে হবে সেটা আমাকে বলুন দয়া করে,,

ডক্টরঃ ওর রক্তের গ্রুপ যেটা বললেন সেটা এ-ই মুহুর্তে আমাদের কাছে নেই,,কাল এক সিজারের রোগীর জন্য পুরো চার ব্যাগ রক্ত আমাদের থেকে দিতে হয়েছিলো,,আপনাদের কোনো রিলেটিভ বা কেউ যদি সেই গ্রুপের থাকে ইমিডিয়েট তাদের সাথে যোগাযোগ করার ব্যবস্থা করুন,,

উজানঃ আপনাদের কালেকশনে কি একটাও বি নেগেটিভের ব্লাড পাওয়া যাবে না,,এটা কোনো কথা,,আমরা এ-ই মুহুর্তে কি করে

ডক্টরঃ আপনারা পাশের দু-তিনটে হসপিটালে খোঁজ নিয়ে দেখুন,আপনাদের পরিবারে কারো বা ফ্রেন্ড সার্কেলে কারো যদি,

উজানঃ (একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে) কতোক্ষণের মাঝে এ-ই ব্লাড দিতে হবে,,একবারে তো তিন ব্যাগ লাগবে না?

ডক্টরঃ তিন ব্যাগ লাগবে না কিন্তু ওর যা অবস্থা দেখছি ৫/৬ঘন্টার মধ্যে ব্লাড না দিলে অবস্থা আরো অবনতি হ’য়ে হয়তো,

উজানঃ না কিচ্ছু হবে না আমার শ্রাবণের,,আপনাদের যা করার দেখুন কি করতে পারেন আমি রক্তের ব্যবস্থা করছি,,

ডক্টর দুইজন প্রস্থান নিতেই উজান পেছন ঘুরে হিয়ার কাছে যেতেই খেয়াল করে হিয়া ঠিক ওর পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে,হিয়ার সাথে দাঁড়িয়ে আছে বাকি সবাই,উজান হিয়াকে কি উওর দেবে বুঝতে পারে না,,হিয়া জানে এর আগের বারো অপারেশন এর সময় এই ব্লাড যোগাড় করতে অনেক হয়রানি হতে হয়েছিলো তাদের,,আর এবার তো এতোটুকু সময়ে কি করে,,,,,,হিয়া কান্নায় ভেঙে গেলে উজান এসে হিয়াকে জড়িয়ে ধরে হিয়ার মাথা টা খুব শক্ত করে নিজের বুকে চেপে ধরে,,উজানের চোখে পানি আর হিয়ার চোখ দিয়ে পড়া পানিতে ভিজে যাচ্ছে উজানের শার্টের ভাজ,,

হিয়াঃ (ভীষণ ভাবে কাঁদতে কাঁদতে)আমি ওকে আর বকবো নাআ,আপনি শ্রাবণকে গিয়ে বলুন না উঠে যেতে,তার বুবু আর কখনো তার গায়ে হাত তুলবে না,সে পরীক্ষা তে ফেইল করলেও তাকে পড়ার জন্য জোর করবে না,,ও উজান আপনি গিয়ে শ্রাবণের সাথে কথা বলে আসুন না,,শ্রাবণের কি আমার সাথে খুবব রাগ,,,,ও কেনো শুইয়ে আছে ওভাবে,,উজান

উজানঃ চুপপপ না হিয়া,,তুমি প্রতিবার এভাবে ভেঙে পড়লে আমি কোথায় থেকে সাহস পাবো একটু বলো তো তুমি আমাকে,,এভাবে হবে না হিয়া,,একটু শান্ত হও,,আমাকে রক্তের ব্যবস্থা করতে হবে একটু বুঝো,,

রুপমঃ আচ্ছা শোন আমি আজকে আর ইন্টারভিউ দিতে যাবো না,,কি হবে ইন্টারভিউ দিয়ে বাচ্চাটাকেই যদি সুস্থ করতে না পারি,,আমি সামনের হাসপাতাল গুলোতে খোঁজ করে আসছি দেখি ব্লাড পাওয়া যায় কি না,

তুষারঃ ঠিক আছে তুই যা,,আমি এদিকে দেখি সবাইকে ফোন করে বলি যে,,

সন্ধিঃ ওসব ছাড় তো,,সাব্বিরের ব্লাড গ্রুপ বি নেগেটিভ না??ওকে ফোন করে ডাকলেই তো হচ্ছে,,

রুপমঃ সাব সাব্বির হ্যা সাব্বিরের কথা কি করে আমরা ভুলে গেলাম এর আগের বার তো সাব্বিরই শ্রাবণকে এক ব্যাগ,,ধ্যাত,,আচ্ছা ওয়েট আমি এক্ষুনি ওকে ফোন দিয়ে ডাকছি,,

উজানঃ ডেকে লাভ নেই সন্ধি,সাব্বির ইন্টারভিউ দিতে সিলেটে আছে এখন,,

সন্ধিঃ সিলে__টে!!হ্যা ও-তো গত পরশু ইন্টার-ভিউ দিতে,,এখন!

তুষারঃ আমি সিউর ওকে ফোন করলে ও ইন্টারভিউ কেনো সব ছেড়ে চলে আসবে,,

উজানঃ কিন্তু এটা তো ওর ড্রিম জব তুষার,তুই তো জানিস সাব্বির ছোট থেকেই,,আর এবার ইন্টারভিউ মিস করলে ও আর কখনো,,

তুষারঃ চুপ কর তো শ্রাবণের কাছে তোর মনে হয় এসব কোনো বিষয় আমাদের কাছে,,তুই এখনি ফোন কর সাব্বিরকে,,তুই না করলে আমি করছি,,দাঁড়া তুই,,

তুষার সাব্বিরকে ফোন করে ইমিডিয়েট ঢাকা ব্যাক করতে বলে,,কোথায় আর থাকে সাব্বিরের ড্রীম জব,,এরা চার বন্ধু তো নিজেদের জন্য জব কেনো নিজেদের প্রাণ টাও উৎসর্গ করতে এক পায়ে তৈরি,,কিন্তু হঠাৎ করে আসতে চাইলে তো আসা সম্ভব হয় না,,বাসে আসতে গেলেও অনেক সময়ের ব্যাপার,,সাব্বির এ্যায়রলাইন্সে ফোন করলে তারা বলে ইমার্জেন্সির জন্য যেই ফ্লাইট সেই সার্ভিস আপাতত বন্ধ তবে যে-ই একটা ঢাকা রুটের ফ্লাইট আছে সেটা ছাড়তেও আরো ঘন্টা তিন এর মতো সময় নেবে,,

সাব্বিরঃ হ্যা উজান শোন,,ইমার্জেন্সিতে তো আসতে পারছি না,,সেকেন্ড যেই ফ্লাইট টা আছে ১টার ওটায় আসছি,,হয়তো বড় জোড় ফ্লাইটে করে এ্যায়রপোর্ট নেমে হসপিটাল পৌঁছাতে ঘন্টা ১ তো লাগবে,,,,,কিছু চিন্তা করিস না ডক্টর বললো তো ৫/৬ঘন্টা আমি দেখি আসছি,,তুই চিন্তা করিস না আমাদের শ্রাবণের কিচ্ছু হবে না,,

সাব্বিরের কথায় উজান কান্নায় ভেঙে পড়ে,,যেই জব টার স্বপ্ন সাব্বির ছোট থেকে নিজের মনে একটু একটু করে তৈরি করেছিলো সেটাকে ফেলে ও উজানের এক কথাতে,,

উজানঃ আমাকে ক্ষমা করে দিস সাব্বির,আমি জানি এ-ই জব টা তোর জন্য,,পারলে আমাকে মাফ করে দিস তুই

সাব্বিরঃ খবরদার এরকম মেয়ে মানুষের মতো আমার সামনে কান্নাকাটি করবি না,,আমাদের বন্ধুত্ব কি এতোটাই ঠুনকো যে আমি সামান্য একটা জবের জন্য আমাদের সবার প্রিয় শ্রাবণকে হারাতে দেবো,,আমি আসছি তুই সাবধানে থাক,,রাখলাম এখন,,

সাব্বির ফোন রেখে দিলে উজান এসে ব্লাড দেবার জন্য যা যা লাগে সব এ্যারেন্জমেন্ট করতে বলে যাতে সাব্বির আসার সাথে সাথে একটা মুহুর্ত যেনো দেড়ি না হয়,,এদিকে রুপম চারটা হসপিটাল খুঁজেও বি নেগেটিভ এর রক্ত ম্যানেজ করতে আজ ব্যর্থ,,সন্ধি তুষার যেভাবে পারছে ফোন করে,ফেইসবুকে স্ট্যাটাসের মাধ্যমে ব্লাডের জন্য লিখে দিচ্ছে কিন্তু কোথাও থেকে কোনো সাড়া আসছে না,,এদিকে সময় বাড়ায় সাথে সাথে হিয়ার বুক টা শূন্য হয়ে আসছে,,মাথার কাছের ঘড়ির টিক টিক শব্দ টা মনের ভয় টাকে যেনো আরো গভীর ভাবে জানান দিচ্ছে আর বলছে হাতে যেনো আর বেশি সময় নেই!!!

উজানঃ সন্ধি তুই হিয়ার পাশে থাক,,আমি আর তুষার এ্যায়রপোর্টের দিকে যাচ্ছি বাইক নিয়ে,,উবার ভাড়া করছি কিন্তু ঠিক সময় না আসলে,,তার চেয়ে বাইক নিয়ে

সন্ধিঃ ঠিক আছে বাইক টা বেস্ট হবে রাস্তায় যা জ্যাম,,তবে সামধানে,তাড়াতাড়ি আসতে গিয়ে আবার কোনো দূর্ঘটনা বাঁধিয়ে আসিস না,,

উজানঃ হুম,,

উজান এসে হিয়ার মাথায় হাত বুলে দিতেই হিয়া উজানকে জাপ্টে আবার কান্না শুরু করে দেয়,

হিয়াঃ উজান হাতে সময় নেই বেশি,,এক রাতের মধ্যে কি থেকে কি হ’য়ে যাচ্ছে এসব,,আমার সুখ টা কি সৃষ্টিকর্তার সহ্য হয় না কেনো উনি আমার এ-তো পরীক্ষা নিচ্ছে কেনো,উজান কেনো?

উজানঃ চুপ না হিয়া,,এভাবে বলতে নেই,,গুনাহ হয়,,সৃষ্টিকর্তা চাইছে বলেই না আমরা এক হয়েছি,,উনি আমাদের পরীক্ষা নিতে চাইছেন তো,আমরাও একটু ধর্য্য ধরি,কেমন,,___দেখি চোখ টা মুছো তো__শ্রাবণ কি বলে ভূলে গেছো কাঁদলে জানি কেমন লাগে তার বুবুকে একদম পেঁচার মতো,,তাই না____তুমি সন্ধির সাথে বসো আমি আসছি,,

হিয়াঃ আপনি এতো তাড়াতাড়ি গিয়ে কি করবেন এ্যায়রপোর্টে ভাইয়ার আসতে তো আরো ঘন্টা দুইয়ের মতো সময় লাগবে,,

উজানঃ জানি,,কিন্তু রিস্ক নিতে চাইছি না ও আসলেই ওকে নিয়ে এক টানে হসপিটালে আসবো,,রাস্তায় আটকা পড়লে তখন ঝামেলা,,

হিয়াঃ ঠিক আছে,,সাবধানে আসবেন,,

উজান হিয়ার চোখ মুছে দিয়ে তুষারের সাথে এ্যায়রপোর্টের দিকে যাএা শুরু করে,,এদিকে রুপমকে পাঠিয়ে দেয় আরো কয়েকটা হসপিটাল খুঁজতে,,সময় তখন সাড়ে ১১টার কাছাকাছি সাব্বিরের ফ্লাইট ১টা,,এ-ই দুই তিন ঘন্টা দোয়া দরুদ পড়া ছাড়া আর কোনো উপায় হিয়ার কাছে নেই,,হিয়া শ্রাবণকে জাপ্টে ধরে এ-ই যে চোখের পানি ফেলছে সেই পানি যেনো আর কোনোভাবে থামার নাম নিতে চাইছে না,,

!
!
!

প্রায় তিন ঘন্টা পর সাব্বিরকে নিয়ে তড়িঘড়ি করে উজান আসে রিসিপশনে,,আর একটা সেকেন্ডো যেনো সে দেড়ি করতে ইচ্ছুক না,,নার্সের সাথে কথা বলবে কি সে যেভাবে হাঁপাচ্ছে,অর্ধেক কথা বলতে গিয়েই যেনো সব কথা তার গলার কাছে দলা পাকিয়ে যাচ্ছে,,

উজানঃ আপনাদের সব কিছু রেডিতো,,আমার লোক এসে গেছে,,আপনারা ইমিডিয়েট ব্লাড দেবার ব্যবস্থা করুন,,

নার্সঃ ৫নাম্বার কেবিনের বাচ্চাটার কথা বলছেন তো,ওকে তো এক কি দেড় ঘন্টা আগে ব্লাড দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েই গেছে এখন কিসের আবার রক্ত,,এটা শেষ না হলে তো নতুন ব্লাড দেওয়া যাবে না,,

উজানঃ ব্লাড দেবার ব্যবস্থা হয়ে গেছে মানে!!ব্লা-ড কে দি-লো?রুপম তুই কি কাউকে?

রুপমঃ আমি জানি না,,সন্ধি ঝিনুক এরা কোথায় এদের কাউকে কেনো দেখতে পাচ্ছি না?

উজানঃ আপনি আমাকে কাইন্ডলি একটু বলবেন আমার বাচ্চা টাকে কে?

নার্সঃ কেনো,বাচ্চার মা’ই তো এখানে সাইন করে দিয়ে বললো ওনার থেকে ব্লাড নিতে,,সম্ভবত উনি যার থেকে ব্লাড টা নিলেন উনি ওনার বাবা হয়,,আমি আপনার মিসেস কে তাকে বাবা বলে সম্বোধন করতেই তো শুনলাম,,

উজানঃ বাবা হয়,,না না আপনাদের কোথাও ভূল হচ্ছে হিয়া তো অনাথ ওর কি করে,,

নার্সঃসরি স্যার তাহলে আমি কিছু বলতে পারবো না,আপনি আপনার মিসেস এর থেকেই শুনে নিন,,আসছি

নার্স টা চলে যেতেই উজান অবাক দৃষ্টিতে তুষারের দিকে তাকায়,সাব্বির তুষার রুপম সহ সবার চোখেমুখে এখন একটাই প্রশ্ন রক্ত টা কে দিলো,,উজান একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে শ্রাবণের কেবিনে আসতে দেখে সত্যি সত্যি শ্রবাণকে ব্লাড দেবার ব্যবস্থা করা হ’য়েছে আর যে মানুষ টা শ্রাবণকে ব্লাড দিচ্ছে সে আর কেউ না তার নিজের বাবা!!

!
!
!

একটা নিস্তব্ধতা কাটিয়ে,,

হিয়াঃ উজান(অস্ফুটে)আপনি এরপরো বাবার সাথে কথা না বলে থাকবেন,মানুষ টা শ্রাবণের অসুস্থতার কথা শোনা মাএ সব ছেড়ে দিয়ে চলে আসলো আপনি একবারো কি তাকে গিয়ে একটা ধন্যবাদ দিয়ে আসতে পারবেন না,,বলুন না আমাকে,,

উজানঃ হিয়া আমি,,

হিয়াঃ আজ আর কোনো কথা না উজান,,আমি আপনার বাবার কাছে ঋণী হয়ে আছি আর আপনিই পারেন আমাকে এ-ই ঋণ টা থেকে মুক্ত করতে,,

হিয়া এসে কাঁপা কাঁপা হাতে উজানের হাত দুটো ধরে সেখানে নিজের কপাল ঠেকে ডুকরে কেঁদে উঠে,,

হিয়াঃ উজান আমি চাই আপনি সব ভূলে আপনার বাবাকে ক্ষমা করে দিন,,তার সাথে আবার আগের মতো সবটা শুরু করুন,,প্লিজ উজান আপনি আজকে অনন্ত আর,,

হিয়া আর কিছু বলার আগে উজান হিয়াকে নিজের বুকে জড়িয়ে নিয়ে নিজেও কেঁদে উঠে,,

উজানঃ ঠিক আছে হিয়া,,যে-ই মানুষ টা আমার শ্রাবণকে বাঁচানোর জন্য এ-তো টা দূর থেকে,,আমি তোমায় কথা দিচ্ছি আমি তার সাথে সব মান অভিমান যতো অভিযোগ সব ভুলে,,

হিয়াঃ আমি আর আপনাদের কাউকে হারাতে চাই না উজান,,আমি সবাইকে নিয়ে বাঁচতে চাই,সারাজীবন একটা পরিবারে জন্য হাহাকার করছে আমার বুক টা,,আপনি আমাকে সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করবেন না,,কথা দিন আমায় শ্রাবণ সুস্থ হবার পর আপনি আমাকে নিয়ে আবার একটা সুন্দর জীবন শুরু করবেন,,যেখানে কোনো ঘৃনা,অভিযোগ অভিমান কিচ্ছু থাকবে না কিচ্ছু না,,

উজানঃ হুম,,কথা দিচ্ছি,,কোনো সম্পর্কের কলহ আমি আর আমাদের মাঝে আসতে দেবো না,,এখন থেকে সব ভালো হবে,,সব সব সুন্দর হবে,

উজান হিয়ার কপালে একটা স্নেহের পরশ বুলে দিয়ে হিয়ার চোখের পানি গুলো খুব যত্নে মুছে দেয়,,নিজেদের স্বাভাবিক করে উজান হিয়া বাহিরে আসে,,চোখ টা ভালো করে মুছে নিয়ে উজান এবার সাব্বিরকে আবার ইমার্জেন্সি তে সিলেট যাবার জন্য রিকুয়েষ্ট করে যদি কোনোভাবে বিকেলের মধ্যে ইন্টারভিউ টা ধরা যায়,,সাব্বির না করলেও উজান আর হিয়ার জোড়াজুড়ি তে সে রাজি হয় আবার সেই সিলেটের জন্য রওনা দিতে,,

সময় যাবার সাথে সাথে সবার চোখেমুখে যেই একটা চিন্তার ছাপ দেখা মিলছিলো সেটা এখন অনেকটা কমে যাচ্ছে,,যাগ রক্তের জন্য এখন নিজেদেরই দুইজন লোক আছে এখন শুধু শ্রাবণের সুস্থতা সময়ের অপেক্ষা মাএ,,

শ্রাবণকে রক্ত দেবার পর উজানের বাবাকে একটা কেবিনে কিছুক্ষণের জন্য শুইয়ে রাখা হয়,,সমরেশ নিজের কেবিনে শুইয়ে সিলিংএর দিকে তাকিয়ে এক গভীর ভাবনায় মগ্ন,এমন সময় হিয়া উজান সহ গুটিগুটি পায়ে সমরেশের সামনে এসে দাঁড়ায়,,হিয়ার যা কৃতজ্ঞতা জানানোর সেটা তো সে তখনি জানিয়ে দিয়েছিলো এখন পালা উজানের,,হিয়া উজানকে টেনে এনে বসিয়ে দেয় সমরেশের পাশের টুল টায়,,উজান কি করবে বুঝতে পারে না,উজানের ঠোঁট কাঁপছে সে কি দিয়ে কথা শুরু করবে তাই যেনো বুঝতে পারছে না,হিয়া চোখের ইশারায় উজানকে কথা বলার জন্য হুকুম করলেও উজান আমতা আমতা শুরু করে,,উজানের অস্থিরতা লক্ষ্য করে এবার সব নীরবতা কাটিয়ে সময় নিজে থেকেই কথাই শুরু করে,,

সমরেশঃ যখন তুই ছোট ছিলি তখন একবার রাতে তোর মা আমার সাথে কি যেনো একটা কারণে রাগারাগি করে আমাকে রাতে ভাত খেতে দেয়নি,,তখন তুই কি করেছিলি জানিস উজান? মাঝরাতে চুপিচুপি ফ্রিজ খুলে তোর খালার নিয়ে আসা অনেক গুলো মিষ্টির প্যাকেট থেকে সব মিষ্টি একটা বাটিতে তুলে গুটি গুটি পায়ে, তোর মা’র চোখ ফাঁকি দিয়ে আমার রুমে এসেছিলি,,এসে ফিসফিস করে কি বলেছিলি আমাকে জানিস,যে বাবা,মা এখন ঘুমিয়ে আছে তুমি এখন তাড়াতাড়ি গপগপ করে সব মিষ্টি খেয়ে নেও তো,,তোর না-কি আমাকে ওভাবে না খেয়ে দেখে খুব কষ্ট হচ্ছিলো,,সেদিন তোর মাঝে আমার জন্য যেই গভীর ভালোবাসা টা আমি অনুভব করেছি না সেটা তুই আমাকে রেখে চলে যাবার বহুবছর পর আমি শ্রাবণের মাঝে খুঁজে পেয়েছি,,শ্রাবণ আমাকে শিখিয়েছে একটা বড় কোনো ফ্যামিলি থেকে বিলং করলেই মানুষের মতো মানুষ হওয়া যায় না,,হিয়া শ্রাবণকে যা শিখিয়েছে কোনো বড়লোক বাবা মা বা কোনো উচ্চ শিক্ষিত পরিবারো হয়তো তাদের ছেলে মেয়েকে এ-তো টা সাবলীল ভাবে মানুষ করতে পারবে না,,

বলতে বলতে সমরেশ কেঁদে ফেলে,সমরেশের সাথে তাল মিলিয়ে কাঁদতে শুরু করে উজান হিয়া দু’জনেই,,

সমরেশঃ আজ যখন তোর মা সকালে ফোনে কথা বলার সময় বললো যে শ্রাবণকে তোরা হসপিটালে নিয়ে এসে, আমি না নিজেকে আটকে রাখতে পারি নি,,ওভাবেই ছুটে চলে আসছি বাচ্চা টাকে দেখার জন্য,,তোর মা’কে যে জানবো সেটাও আমার হয়ে উঠে নি,,,,,(একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চোখ টা আলতো করে মুছে)জানিস তো উজান তোর একটা সুন্দর প্রতিচ্ছবি আমি শ্রাবণের মাঝে দেখতে পাই,,তুই ছোট তে যেভাবে আমার চশমা খুঁজে এনে দিতে যেভাবে তোর ছোট ছোট হাত দিয়ে আমার মাথা টিপে দিতি,তোর মা’র সাথে না পারলে সব বায়না সব আবদার আমাকে এসে বলতি আমি শ্রাবণের মাঝে তোর সেই ছেলেবেলাকে স্পষ্ট ভাবে উপলব্ধি করেছি,,আমার মনে হয়েছে তুই আমাকে যেই ঘেন্নার চোখ দিয়ে এখন দেখিস শ্রাবণ ঠিক ততোটাই ভালোবাসা দিয়ে আমাকে,,আমি পারি নি ওর অসুস্থতার কথা শুনে বাড়িতে বসে থাকতে,,আমি পারিনি উজান,,আমি চলে এসেছি,,আমি আমি কি কোনো ভূল করেছি?

উজান ওর বাবার হাত টা ধরে এবার কান্নায় ভেঙে যায়,,

উজানঃ না কোনো ভূল তুমি করো নি তুমি তো আমাকে বাঁচিয়ে দিয়েছো বাবা,,কোনো ভূল তো তোমার হয়নি ভূল তো করছি আমি,,আমাকে তুমি ক্ষমা করে দেও বাবা,আমি জেনেবুঝে তোমাকে অনেক কষ্ট দিছি,আমি জানি না তুমি আমাদের রেখে কেনো আরেকটা বিয়ে___আমি চাই না আমাদের মাঝে আর কখনো সে সব প্রসজ্ঞ উঠুক,, তুমি তুমি তোমার ঔ আরেকটা পরিবারের সাথে যা ইচ্ছে করো কিন্তু তুমি কথা দেও তুমি আমাদের পরিবারের মাঝে কখনো ওনাদের প্রসজ্ঞ তুলে এনে,,,,

সমরেশঃ আমি কখনো কি তোদের মাঝে ওদের প্রসজ্ঞ বা কথা তুলেছি কি,,আমি তো ওদের ছায়া টাও তোদের কারো মাঝে পড়তে দিতে চাই নি,,যতো টা পারছি তোর মা সহ তোদের চার ভাই বোনকে আমার ঔ ভূল থেকে আগলে আগলে রাখার সবর্এ চেষ্টা করেছি,,তোদের যাতে কোনো অভাব না থাকে তোদের যাতে কোনো দুঃখ না আসে তাই জন্য তো আমি,,

উজানঃ I am sorry,,আমাকে এবারের মতো তুমি ক্ষমা করে দেও,,আমি আর কখনো তোমার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করবো না,আমরা দুজন আবার আগের মতো,,

সমরেশঃ এ-ই চুপ কর,নিজের ওয়াইফের সামনে কেউ এরকম করে কাঁদে,,হিয়া মা?

হিয়াঃ হ্যা বাবা,,

সমরেশঃ মা আমি হয়তো একটা সময় তোমার সাথেও অনেকটা খারাপ আচরণ করে ফেলেছি তুমি যদি পারো তো আমার সেই ব্যবহারের জন্য আমকে ক্ষমা করে,,

হিয়াঃ আপনি এভাবে বলবেন না বাবা,,আপনি আজ যা আমার আর শ্রাবণের জন্য করেছেন আমি হয়তো সেই ঋণ কখনো,,আপনি আমাদের ক্ষমা করেছেন তো?

সমরেশ একটা হাসি দিয়ে হিয়ার মাথায় আলতো করে হাত রাখে,,উজান নিজের চোখ টা মুছে তার বাবার বুকে নিজে থেকে আজ জড়িয়ে যায়,,সমরেশের চোখে মুখে এক অন্য রকম শান্তির ছাপ দেখা মিলছে,,তার একটা ভূলের জন্য উজান পাঁচ বছরের বেশি সময় তার থেকে কোনো যোগাযোগ তো দূরে থাক দেখা হলেও চোখ তুলে তাকে দেখে নি,,আর আজ উজান সব ভূলে,,বাবা মনের এ-ই অনূভুতি টা প্রকাশ করার মতো কোনো শব্দ হয়তো কোনো ভাষায় এখন অবধি তৈরি করা হ’য়ে ওঠেনি!!

!
!
!
আজ এক মাস পরঃ

শ্রাবণ এখন অনেকটাই সুস্থ,,এখন আর হিয়া তাকে বেশি পড়াশোনার জন্য চাপ দেয় না উল্টে নিজে শ্রাবণকে নিয়ে নিচে আসে খেলতে,,ব্লাড তৈরির জন্য যা যা খাবার দরকার তার সব কিছুর ব্যবস্থা উজান করে রাখছে আর সারাদিন এখন এ-ই সব খাবার দাবারের চক্করে শ্রাবণ যেনো বড়ই অতিষ্ঠ,,সব খাবার দাঁত দিয়ে চিপে চিপে খেতে তার মুখে যেনো ব্যাথা উঠে যায় এমন অবস্থা,,তবে কিছু দিন পরপর তাকে ডক্টরের চেকআপের আন্ডারে থাকতে হবে যতোদিন না সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যাচ্ছে,,এদিকে শ্রাবণকে হসপিটাল থেকে নিয়ে আসার পর উজানের পুরো পরিবার গোটা দুই সপ্তাহের মতো এসে থেকে যায় ঢাকা,,সব মিলিয়ে পরের সময় গুলে খুব সুন্দর ভাবেই জীবনের নিত্য নতুন নিয়ম মেনে চলতে থাকে,,

ভার্সিটি ক্যাম্পাসঃ

ঝিনুকে সাথে ক্যান্টিনে এসে হিয়া এখন বড়ই বিরক্ত অতিষ্ঠ আর সব চাইতে বেশি রাগান্বিত,তার এই রাগের কারণ ফাস্ট ইয়ারের ইঁচড়েপাকা কয়েকটা মেয়ের কথোপকথন,,

-উজান স্যার টাকে যা লাগে না আমার,,উফফ আমি তো ক্লাস করা বাদ দিয়ে সারাক্ষণ শুধু ওনার দিকে তাকিয়ে থাকি,,স্যাররা এ-তো হ্যান্ডসাম হলে কি পড়াতে মন দেওয়া যায় বল তো,,

-সত্যি রে এ-তো কিউট করে উনি কি করে পড়ায়,পুরো মাখন একটা,,একটা জিনিস দেখবি স্যার পড়াতে পড়াতে মাঝেমধ্যে ওনার ঔ গোলাপি ঠোঁট গুলোর নিচের টা যখন কামড়ে ধরে ইসস তখন যা হয় না আমার,,

-ওসব বলিস না তো,,কেমন একটা ফিল হয়,,তবে আমি কিন্তু শুনেছি উনি ম্যারিড,,সিউর না ঔ শুনলাম এ-ই যা

-ম্যারিড!!কিসের ম্যারিড__ওনাকে দেখলে কে বলবে উনি ম্যারিড,,প্রত্যেকদিন যেভাবে শার্টপ্যান্ট খিঁচে মাঞ্জা দিয়ে বাইক নিয়ে এ্যান্ট্রি নেয় ওনাকে দেখে কেউ বলবে উনি ম্যারিড,,,

-ওনার পারসোনালিটি দেখে আমি পুরো ক্রাসড দোস্ত,

-আমিও রে,,আর ম্যারিড হলে হবে কি সমস্যা,,বউ তো থাকবে বাড়িতে,,এখানে না হয় একটু আধটু,এ-ই এই উজান স্যার মনে হয় এদিকেই আসছে,,চুপ চুপ

মেয়ে গুলো চুপ করে মুখে মিটেমিটে হাসতে হাসতে নিজেদের খাবার নিয়ে একটা টেবিলে বসে যায়,,এদিকে হিয়া রাগে এ-ই বুঝি মেয়েগুলোর পিন্ডি চটকে দিয়ে আসে এরকম,,ভাগ্যিস ঝিনুক ছিলো নয়তো মেয়ে গুলোর আজ সুস্থ ভাবে বাড়ি ফেরা হতো কি না কে জানে,

ঝিনুকঃ আরে চিল না হিয়া,,কেনো খামোখা এতো রেগে নিজের পেশার টা হাই করছিস,,এগুলো ফাস্ট ইয়ারের পোলাপাইন ভাই,,ঔ এক দুদিন ভাইয়ার ক্লাস করেছে তা-ই এরকম করে বলছে,,জানে না হয়তো

হিয়াঃ না জানলে জানতে হবে,,কতো বড় সাহস আমার সামনে,,

ঝিনুকঃ ভাইয়ার আসছে বাদ দে তো,,

উজান সাব্বিরের সাথে কথা বলতে বলতে ক্যান্টিনে এসে হিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে যায়,,

উজানঃ কি ব্যাপার তোমরা এখনো কিছু অডার্র করো নি?

ঝিনুকঃ না ভাইয়া আসলে,,

উজানঃ আচ্ছা থাক,,ঝিনুক সাব্বির তোমাকে কি যেনো বলবে যদি একটু ওর সাথে,,

ঝিনুকঃ ভাইয়া আমি,,আমি আমি মানে

হিয়াঃ এ-তো হেয়ালি না করে যা তো,,সাব্বির ভাইয়া আসছে শুনে তো খুব লাফাচ্ছিলি এখন এতো লজ্জা পাচ্ছিস কোন দুঃখে,,

ঝিনুকঃ তুই চুপ কর তো,,বেশি পাকা

সাব্বির হাত বাড়িয়ে আসতে বললে ঝিনুক কি করবে বুঝতে পারে না,,হিয়া ঝিনুককে ধাক্কা দিয়ে সাব্বিরের সাথে পাঠিয়ে দেয়,,এদিকে সাব্বির আর ঝিনুক প্রস্থান নিতে উজান খাবার অর্ডার দিয়ে হিয়াকে নিয়ে সামনের টেবিল টায় বসে যায়,,হিয়ার তো উজানকে দেখে খুব রাগ হচ্ছে কি দরকার ভার্সিটিতে এতো হাই ফাই গেট আপ নিয়ে আসার,,আজব

উজানঃ হোয়াট?

হিয়াঃ কিছু না,,

উজানঃ কিছু না তা ওভাবে ব্যাগ টা মোছড়ামোছড়ি করছো কোন দুঃখে,,ছিঁড়ে যাবে তো ওটা,,

হিয়াঃ গেলে যাক,নতুন কিনে দিবেন আপনার না অনেক টাকা,

উজানঃ হ্যা ঠিক আছে দেবো কিনে,,কিন্তু এতে এতো হাইপার কেনো হচ্ছো তুমি,,

হিয়াঃ আমি হাইপার কেনো হতে যাবো,,আপনি খাবার অর্ডার করতে চাইলেন না করুন অর্ডার,,

উজানঃ তোমার সামনেই তো অডার করলাম,,,,কি হয়েছে তুমি কি টেনসড,,এরকম হয়ে আছো হঠাৎ,সকালে তো ঠিকই ছিলে,,

হিয়াঃ আমি যে-রকম আমি সেরকমই আছি,,হু

উজান আর কথা না বাড়িয়ে হাতে থাকা ফাইল টা দেখায় ব্যস্ত হয়ে যায়,,ইদানীং যে হিয়ার মাঝেমধ্যে কি হয় উজানের যেনো কিচ্ছু মাথাতে ঢোকে না,,এদিকে এবার হিয়ার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি ঘোরপাক শুরু করে,,হিয়া ওর চেয়ার টা উজানের চেয়ার সাথে একদম কাছাকাছি ঘেঁষে নিয়ে উজানের এক হাত ধরে সেই কাঁধে মাথা রাখে মিচকে টাইপ হাসি দিতে শুরু করে,,

উজানঃ হি–য়া এ–টা কি ক–রছো তুমি,,সবাই আমাদেরকে দেখ-ছে,,

হিয়াঃ কোথায় দেখছে,,ওদিকে দেখুন মেয়েটা কি সুন্দর ছেলেটার কাঁধে হেলান দিয়ে কফি খাচ্ছে,,কি সুন্দর দৃশ্য না বলুন,,কি রোমান্টিক

উজানঃ হ্যা ঠিক আছে কিন্তু আমরা তো কখনো এভাবে আগে,,আর আমি তো এখন ভার্সিটির একজন শিক্ষক এখন একজন শিক্ষক হ’য়ে যদি আমি এভাবে

হিয়াঃ(কাঁধ হতে মুখ তুলে) কি এভাবে হ্যা,,জানি তো সব আমি,এখন কি আর আমি কাঁধে মাথা রাখলে ভালো লাগবে আপনার, এখন তো ঔ ক্লাসের মেয়ে গুলো এসে মিষ্টি মিষ্টি কথা বললে আপনার সেগুলো শুনতে মন চাইবে,,ঝিনুক কোথায় তুই,,দেখে যা তোদের ভালো ভাইয়া এখন আমাকে রেখে ফাস্ট ইয়ারের মেয়ে গুলোর সাথে,,এ্যা হ্যা এ্যাআআ

উজানঃ হিয়া হিয়া হিয়া,,চুপ চুপ,,এটা ক্যান্টিন হিয়া__(হিয়ার মুখ চিপে ধরে হিয়ার মাথাটা নিজের কাঁধে রেখে)__আরে তুমি কাঁদছো কেনো এভাবে,,এ-ই যে মাথা টা আমার বুকে রাখলাম খুশি এবার,,

হিয়াঃ এ-ই তো আমার ভালো স্বামী উফফ আমার cute eee উজান স্যাররর🥰,,,আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি আপনি আপনার ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্টদের বলেননি যে আপনি ম্যারিড?

উজানঃ হোয়াট!!,আমি ক্লাসে পড়াতে যাই হিয়া আমি ম্যারিড না আনম্যারিড সেটা ডিসকাস করতে না,,আর তোমার আজকে কি হয়েছে হ্যা তুমি এরকম উইয়ার্ড বিহেভ কেনো করছো আমার সাথে,,

হিয়াঃ আমি কোথায় উইয়ার্ড বিহেভ করছি আমি তো শুধু

উজানঃ থাক আর কিছু বলতে হবে না,,খাবার এলে তাড়াতাড়ি খাবারটা খাও শ্রাবণের হয়তো আর কিছুক্ষণ পর ছুটি দিয়ে দিবে,,

হিয়াঃ হুম,,

এর মধ্যে ক্যান্টিন মামা খাবার দিতে এসে উজানের কাঁধে ওভাবে হিয়াকে দেখে হাসি দিয়ে বলে

-ভালো ভালো,,স্বামী স্এী এভাবে সবসময় একে অপরের সাথে থাকবে,,এটাই তো হওয়া দরকার

হিয়া মুখে এক বালতি হাসি টেনে

হিয়াঃ তাই না বলো মামা,,তোমাদের এ-ই স্যার তো বুঝতেই চায় না সেটা

উজানঃ মামা,,যাবা তুমি কি

মামা হাসি দিয়ে চলে যেতেই হিয়া ফিক করে হেঁসে দিয়ে উজানের নাক টা টেনে ধরে আর উজান হালকা ভয়ে পিছিয়ে গিয়ে অবাক দৃষ্টিতে হিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে

উজানঃ তোমার শরীর ঠিক আছে তো হিয়া?দেখি

উজান হিয়ার কপালে হাতের উল্টোপিঠ দিয়ে হিয়ার জ্বরটর আসছে না-কি সেটা দেখতে থাকে,,

হিয়াঃ আরে আমি একদম ঠিক আছি,,বলছি কি উজান যাবার আগে আপনার বাইকে করে যদি ক্যাম্পাস টা একটু,,ইউ নো

উজানঃ কি যে হয় তোমার মাঝে মাঝে,,ঠিক আছে খাও এখন তাড়াতাড়ি,,

হিয়াঃ হুম,,

হিয়া উজানের কাঁধে মাথা রেখে স্যান্ডুইচ টা চপ চপ করে খেতে শুরু করে,,আর উজান এপাশ ওপাশ দেখে নিয়ে নিজের ফাইল টা ঘাটতে শুরু করে,,কিছুসময় বাদে হিয়াকে পানির গ্লাস টা এগিয়ে দিয়ে,,

উজানঃ আচ্ছা হিয়া শ্রাবণের কি আকিকা করানো হয়েছে ও হবার পর?

হিয়াঃ আকিকা!!না__মানে বাবা আর মা আমার আর শ্রাবণের একসাথে আকিকা করতে চেয়েছিলো কিন্তু সেটা তো পরে আর সম্ভব হয় নি,,আর আমারো কখনো সামর্থ্য হয়নি আমি শ্রাবণের জন্য

উজানঃ তারমানে তোমার আকিকা টাও দেওয়া হয়নি তাই তো?

হিয়াঃ আসলে আমি না সিউর বলতে পারছি না,,কি বলুন তো আমি শুনেছিলাম তারা আমাদের একসাথে আকিকা দেবে কিন্তু আমার ছোটতে দিয়েছিলো কি না আমি এখন কিভাবে বলি___আচ্ছা আপনি হঠাৎ এ-ই প্রশ্ন কেনো জিজ্ঞেস করছেন আমাকে,কোনো দরকার?

উজানঃ হুম,,না পরশু জুম্মার দিনে শ্রাবণের আকিকা টা দিয়ে দেবো,,সাথে দেখি তোমার টাও দেওয়া যায় কি না,,আর কয়েকটা ফকির এনে খাওয়ানোর ইচ্ছে আছে এখন দেখি বাকি টা কি হয়,,

হিয়াঃ উজান আপনি (অস্ফুটে),,এটা তো বাবা মার দায়িত্ব, তাদের ওয়াজিব কিন্তু আপনি কেনো?

উজানঃ শ্রাবণ কি আমার বাচ্চা না হিয়া???❤️

হিয়াঃ হুম,,

হিয়া একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে উজানের বাহুতে একটা চুমু এঁকে দেয়,,হিয়ার এ-ই কাজে উজান একটু ইতস্তত হয় হাজার হোক সে এখন এ-ই ভার্সিটির স্টুডেন্ট না একজন শিক্ষক,,উজান জানে হিয়াকে নিয়ে আর বেশিক্ষণ এখানে বসিয়ে রাখা যাবে না কখন কি করে বসে আবার,উজান উঠে হিয়াকে নিয়ে বাইকে করে ক্যাম্পাস টা আর এক চক্কর রাউন্ড দিয়ে শ্রাবণকে নিতে শ্রাবণের স্কুলে আসলে,,

!
!
!

আজ জুম্মার দিনে যথারীতি সব নিয়ম করে উজান,হিয়া আর শ্রাবণের আকিকার যাবতীয় কাজের জন্য নিচে যেখানে কলোনির বাচ্চারা সবাই খেলাধুলা করে সেই মাঠের মধ্যে সব আয়োজনের ব্যবস্থা করে,,একপাশে সব ভাগাভাগির দায়িত্ব সামলাচ্ছে তুষার রুপম তো অন্য দিকে ফকির দের হাতে বিরিয়ানির প্যাকেট তুলে দিচ্ছে সাব্বির,,আর উজান শ্রাবণকে কোলে নিয়ে দুই দিকে তদারকিতে ব্যস্ত,,

হিয়া এতোক্ষণ নিচেই ছিলো,,সব কাজ বুঝিয়ে দিয়ে উপরে আসছে বাকি কোথায় কি রাখতে হবে কাকে কাকে দেওয়া বাকি সব হিসাব করতে,,উপরে এসে সব কাজ গুটিয়ে হিয়া ওর ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে যায়,,ব্যালকুনি দিয়ে নিচে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে কে কি করছে কি হচ্ছে,,সবাই সবার কাজ গুলো নিয়ে কি রকম ব্যস্ত,,পরিষ্কারের লোক এসে আবার মাঠ টা পরিষ্কার করেও দিচ্ছে সাথে সাথে,,উজান ফকিরদের হাতে একবার প্যাকেট তুলে দিচ্ছে আবার কখনো শ্রাবণের সাথে দৌড়াদৌড়ি খেলছে,,উজান আর শ্রাবণ আজ দু’জনেই সাদা রঙের সেম নকশার পাঞ্জাবিতে নিজেদের সাজিয়েছে,,দেখে মনে হচ্ছে শ্রাবণ যেনো উজানের নিজেরই ছেলে,,একই নকশার পাঞ্জাবি তে যেনো দু’জনের চেহারার অবয়ব টা আজ একই রকম চোখে লাগছে হিয়ার কাছে,,কে দেখে বলবে উজানের সাথে শ্রাবণের রক্তের কোনো সম্পর্ক নেই,,এদের দেখে তো এটাই মনে হচ্ছে শ্রাবণ উজানের নিজের রক্ত,,

হিয়াঃ এ-ই আকিকা দেবার দায়িত্ব টা তোমাদের ছিলো বাবা কিন্তু আজ দেখো সেই দায়িত্ব টা উনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পালন করছে,,শুধু কি শ্রাবণ আমার নামের আকিকা টাও তো উনি নিজ দায়িত্বে___জানো মা আমিই হয়তো এখন হাতের কাছে সব পেয়ে নিজের দায়িত্ব গুলো মাঝে মাঝে ভূলে যা-ই কিন্তু এ-ই মানুষ টা,,এই মানুষ টা তো আমার আর শ্রাবণের এমন কোনো দায়িত্ব নেই যেটা না করে,,ওনাকে কখনো কিছু বলতে হয় না জানো মা উনি না নিজ দায়িত্বে আমাদের জন্য সব করে,,,,উনি না আমার মুখ দেখেই বুঝে যায় আমার কি চাই তার বাচ্চা টার কি চাই,,,,,,ওনাকে আমি যতোটা ভালোবাসি তার চাইতে বেশি আমি ওনাকে সম্মান করি ওনাকে শ্রদ্ধা করি,,আর আমি চাই ওনার প্রতি আমার ভালোবাসার চাইতে আমার ওনার প্রতি আসা শ্রদ্ধা টাই সারাজীবন মুখ্য হয়ে থাকুক,,উনি যেমন একজন শিক্ষক হয়ে আমাকে জীবনের সঠিক পথ টা দেখতে শিখিয়েছি তেমনি একজন ভালোবাসার মানুষ হয়ে আমার সেই মেঘলা আকাশের পথ টাকে তার রামধনুর রঙে রাঙিয়ে দিয়েছে আর প্রতিনিয়ত দিচ্ছে,,আমি যেনো কখনো ওনার সাথে কোনো বেয়াদবি না করি মা দোয়া করিও তুমি আর বাবা,,আমি যেনো আমার সব দিয়ে মানুষটার জীবনে মানুষটার ছায়া হয়ে ওনার পাশে থাকতে পারি,,স্বামীর প্রতি একজন স্ত্রীর যতোগুলো কর্তব্য আছে আমি যেনো স্ব সম্মানে সেগুলো পালন করতে পারি!!

হিয়ার ভাবনার ছেদ ঘটে নিচ থেকে ডাকা উজানের চিৎকারে,,

উজানঃ হিয়াআআআ,,শুনতে পাচ্ছো না,,হিয়া,,

হিয়াঃ হু হুমম,,হ্যা বলেন শুনছি আমি,,

উজানঃ আমার ফোন টা একটু নিয়ে গিয়ে চার্জ দেও না,,ফোন পুরো শাট ডাউন হয়ে গেলো,,

হিয়াঃ আআআ আবার নামবো,,কতোবার আজকে নামলাম আর উঠলাম,,

উজানঃ কি বললা,,শুনতে পারি নি,,

হিয়াঃ কিছু বলি নি কি বলবো,,রাখুন আমি আসছি নিতে,,আসছি আসছি,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here