😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒
ইভা রহমান
Part-50
শ্রাবণ ঘুমিয়ে গেলে হিয়া শ্রাবণকে রুমে নিয়ে এসে শুইয়ে দেয়,,কম্বল টা শ্রাবণের বুক পর্যন্ত টেনে দিয়ে হিয়া শ্রাবণের চুলের ভাঁজে চুমু আঁকে,,ব্যালকুনির গেট টা লাগিয়ে হিয়া ঘরটা একবার চোখ বুলে নিয়ে উজানের রুমে আসলে দেখতে পারে উজান এখন আর বিছানায় নেই,,হিয়া একটু এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে নিলে দেখতে পারে উজান ব্যালকুনিতে দাঁড়িয়ে রাতের শহর দেখায় ব্যস্ত,,হিয়া গুটিগুটি পায়ে ব্যালকুনিতে এসে উজানকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে উজানের পিঠে নিজের মাথাটা আলতো করে রাখলে উজান একটা নীরব হাসি দেয়,উজান গ্রীল থেকে ওর এক হাত নামিয়ে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে রাখা হিয়ার হাত দুটো আরো শক্ত করে চেপে ধরে,,রাতের অন্ধকার সাথে হালকা এক মিষ্টি বাতাস,দূরের কোন বাসের হর্নের শব্দ সব মিলিয়ে পরিবেশ টা অনেক সুন্দর,,
হিয়াঃ সরি(অস্ফুটে)
উজানঃ হুম,,
হিয়াঃ বললাম তো সরি,,
উজানঃ ইট’স ওকে,,
হিয়াঃ খাবেন এখন, আসুন আমার সাথে,
উজানঃ খিদে নেই,
হিয়াঃ বললেই হলো খিদে নেই,,আমি তো জানি পেটের ভেতর ছুঁচো টা এরম এরম করে দৌড় দিচ্ছে,এ-ই যে দেখুন,
বলেই হিয়া উজানের পেটে সুরসুরি দিতে থাকে,আর উজান কাতুকুতু পেয়ে হালকা করে হেঁসে দিয়ে দেয়,,
উজানঃ থামবেন কি আপনি,,আমি কাতুকুতু দিতে শুরু করলে কিন্তু এমন কোনো জায়গা নেই যেটা বাদ রাখবো না,,চলবে?
হিয়াঃ (উজানের পিঠে একটা দুম করে কিল বসিয়ে দিয়ে) অসভ্য একটা,,এর চাইতে বেশি আর কি পারবেন আপনি শুনি,,
উজানঃ তাই না,,
উজান ঘুরে হিয়ার দিকে মুখ করে হিয়ার কাঁধে নিজের দুটো হাত ঝুলিয়ে দেয়,,
হিয়াঃ তাই তো,,
উজানঃ হুমম,,আজকে তুমি যা করছো সেটা কিন্তু আমার একদমই পছন্দ হয় নি হিয়া,,তুমি আমাকে কথা দেও তুমি আমার ছেলের গায়ে আর কখনো হাত তুলবা না,,
হিয়াঃ আপনার ছেলে যদি বদমাইশি করে তাহলে তো আমি তাকে শাসন করবোই,,
উজানঃ তুমি ওর বুবু হও ওর মা তুল্য, কিন্তু সেটা গায়ে হাত তুলে না,,ওকে নিয়ে বসিয়ে বুঝিয়ে শুনিয়ে তারপর,,
হিয়াঃ আর যদি শ্রাবণকে বোঝালে সে না বোঝে তখন,,
উজানঃ বাজে কথা,,আমি শ্রাবণকে যতোটা চিনেছি এতোদিনে তাতে আমি এটা এটলিস্ট ভালো করে বুঝে গিয়েছি যে শ্রাবণ অনেক বাধ্য ছেলে,,ওকে তুমি যা মানা করো ও কিন্তু ভূলেও কখনো সেই কাজ দ্বিতীয়বার করে না,,
হিয়াঃ আপনি কচু জানেন,,আগে ও আমার বাধ্য ছিলো কিন্তু এখন না,এখন তো যেনো আমি কথা বলার সময় ও কানে তুলো দিয়ে রাখে,,
উজানঃ বলছে তোমাকে,,তুমি জানো তুমি শ্রাবণকে ওর স্কুলের ব্যাগে খাতা গুলো উপরে আর বই গুলো নিচের চেইনের পকেটে রাখতে বলছো দেখে ও এখন তাই করে,,সেদিন আমি ভূলে উলটপালট করে রাখছি তখন ও আমাকে এসে কি বলে জানো, যে ভালো ভাইয়া তুমি এসব এভাবে কেনো গুছিয়ে দিলে বুবু তো আমাকে এভাবে-এভাবে রাখতে বলছে,,তার বুবু এভাবে দেখলে না-কি খুব রাগ হবে,,
হিয়াঃ তো এটাতে কি বোঝা যায় যে ও আমার সব কথা শুনে,,
উজানঃ না,,তবে এতটুকু তো বোঝাই যায় সে তোমার প্রতিটা কথা কতো টা মান্য করে,,আর যে ছেলে তোমার এ-ই ছোট ছোট জিনিস গুলো নিজ দায়িত্বে পালন করছে সে নিশ্চয় তোমার বড় কোনো বিষয়কেও সমর্থন করবে,,
হিয়াঃ হুম হ’য়েছে অনেক বোঝানো আমাকে,এখন খাবেন এখন,
হিয়া নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে ধরবে কিন্তু উজান হিয়াকে টান দিয়ে নিয়ে এসে ওর বুকের উপর ফেলে,,
হিয়াঃ কি হলো আবার,ক্ষুধা লাগেনি?
উজানঃ লাগছে,,খাবোই তো
হিয়াঃ হ্যা তা আসুন,,
উজানঃ কি খাবো?
হিয়াঃ কি খাবো মানে!ভাত খাবো আর কি খাবো?
উজানঃ আমার তো তোমার খিদে পাইছে,,আমি তো তোমাকে খাবো,,!!
উজানের কথায় হিয়ার চোখ ঠিকরে বেড়িয়ে আসে,হিয়া প্রথমে হা হলেও পরে একটা লজ্জাসূচক হাসি দিয়ে উজানের নাক টা ইচ্ছে মতো টেনে ধরে,ফিসফিস করে বলতে শুরু করে,,
হিয়াঃ আমাকে খাওয়া যাবে না এখন,,
উজানঃ কেএএনো(ফিসফিস করে)
হিয়াঃ এই মাঝরাতে আমাকে খেলে আমি ঘুমাবো কখন?
উজানঃ কেনো আমি আছি তো আমি ঘুম পাড়ায় দেবো,,
হিয়াঃ আপনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়ায় দেবেন আমাকে?
উজানঃ হুম দেবো তো,,
হিয়াঃ সত্যিইইই??
উজানঃ সত্যিইইইই,,
হিয়াঃ ঠিক আছে তাহলে যতো খেতে মন চায় খান আমাকে,,সমস্যা নেই,,
উজানঃ এ-ই তো আমার গুড পিচ্চি,,
হিয়া একটা হাসি দিয়ে উজানের গাল দুটো টান ধরে স্বাভাবিক কন্ঠে,,
হিয়াঃ সবসময় ফাজলামো,,আসুন__ঘুমাবেন এখন__সময় অসময় শুধু আদর আদর আদর,,কি হলো আসুন(ধমকে)
!
!
!
আজ এক সপ্তাহ পরঃ
হিয়া আজ বড়োই চিন্তিত হয়ে ভয়ে ভয়ে উজানের থেকে নিজের মুখ লুকিয়ে আই মিন চুল লুকিয়ে বাঁচছে,,এ-ই চুল লুকিয়ে বাঁচার কারণ সন্ধি আর ঝিনুকের সাধের পার্লার,,হিয়ার বেরঙীন জীবনে তো কখনো হিয়া পার্লার নামক বিলাসিতার মাঝে নিজেকে যুক্ত করে সেখানে পৌঁছতে পারে নি কিন্তু যবে থেকে উজান এসে তার জীবনটাতে রঙীনের ছোঁয়া লাগিয়েছে তবে থেকেই হিয়ার জীবন টা অনেক টা পাল্টেছে,,বিয়ের দিন প্রথম হিয়া পার্লার গিয়েছিলো আর আজ দ্বিতীয়বার তাকে যেতে হলো ঝিনুকদের জন্য,,আর এ-ই যাওয়া কি সেই যা-ওয়া,,পার্লারের যাবতীয় কাজ করে সেখান থেকে বাড়ি আসতে পাক্কা তিন ঘন্টা লেইট,,তার উপর চুলের পেছনের এ-ই বিচ্ছিরমার্কা কার্টিং যদিও হিয়ার মুখে সেটা যথেষ্ট স্যুট করছে কিন্তু তারপরো উজানের তো চাই আবার কোমড় অবধি লম্বা লম্বা চুল,,সন্ধি আর ঝিনুক তো খুব বললো ভালো লাগবে সুন্দর লাগবে উজানের পছন্দ হবে,,কিন্তু কচু হবে উজানের এই কেটে দেওয়া চুল পছন্দ হু,,
হিয়াঃ এর আগের বার রিমা আপু একটু চুল কি কেটে দিয়েছিলো তাই দেখে কি বকা টাই না দিয়েছিলো আমাকে উনি,আর আজকে__কোনোভাবে এই চুল ওনার সামনে আনা যাবে না__বুঝে গেলেই আমাকে খুন করে দেবে,,এ-ই জন্য এ-ই জন্য আমি ঝিনুকদের সাথে ওসব জায়গায় যেতে চাই না,,কতো গুলো টাকাও খরচ হয়ে গেলো আজ__আআ মাথা টা মনে হচ্ছে ফাটিয়ে দিয়ে আসি দু’জনের___এ-ই চুল এখন আমি কি করে ওনার সামনে লুকিয়ে লুকিয়ে রাখবো,,
হিয়া বুদ্ধি করে সব চুল নিয়ে খোঁপা করে রেখে দেয় আর ঠিক করে উজানের সামনে আপাতত সে আর চুল খুলবে না,,এদিকে উজান হিয়া বাড়ি আসছে থেকে হিয়াকে আপাদমস্তক চোখ দিয়ে ভালো করে স্ক্যান করতে থাকে,,যা দেখে হিয়ার ভয় টা ক্রমাগত আরো বেড়ে উঠতে থাকে,,
হিয়াঃ এ এ এরকম করে আমাকে কি দেখছেন,,আগে কি কখনো দেখেননি?
উজানঃ না কিছু না,,কি করলা পার্লারে এতোক্ষণ?চেঞ্জ কিছু হয়েছো বলে তো মনে হচ্ছে না?
হিয়াঃ চে চেঞ্জ হতে যাবো কেনো?পার্লারে গেলেই বুঝি মেয়েরা চেঞ্জ হয়ে আসে?
উজানঃ অবশ্যই,তোমরা মেয়েরা তো নিজেদের একটু সুন্দর করার জন্যেই ওখানে,,ইউ নো
হিয়াঃ বলেছে আপনাকে,,আপু ঔ আমাকে কিসব হাত পা পরিষ্কার করে পেডিকিওর না কি কিওর করিয়ে দিলো ওগুলোতেই সময় লাগলো এতোক্ষণ,,
উজানঃ এ-ই মেয়ের তো টাকা গাছে ধরে,,তুষারকে বিয়ে করে সংসার করতে দেও তখন বুঝবে কতো ধানে কতো চাল,,
হিয়াঃ বলেছে আপনাকে,,,,তা আবার এ-ই মাঝরাতে ল্যাপটপ নিয়ে কেনো বসলেন,,
উজানঃ কারণ আমরা এখন মুভি দেখবো,,কি মুভি দেখবো শ্রাবণ,,
শ্রাবণঃ হরোর মুভিইইই,,খুব ভয়ানকক😍
উজানঃ হুমমমমম,,ভূতনী টা একদম তোর বুবুর মতোওওও,,সেইম টু সেইম
শ্রাবণঃ হুমমমম,,
হিয়াঃ যা খুশি করো গিয়ে কিন্তু আমাকে কোনো ডিস্টার্ব দেবা না,,আমি ঘুমাবো এখন,শরীরটা খুবই ক্লান্ত লাগছে আমার,,
উজানঃ ওকে,,
হিয়া সব গুলো ঘর আরেকবার দেখেশুনে নিয়ে রুমে আসে,,লাইট ওফ করতে চাইলেও এরা দুজন যদি ভয় পায় তাই আর বন্ধ করে না,,ব্যালকুনির দরজা টা লাগিয়ে হিয়া বিছানায় এসে কম্বল মুড়ে এক কানিতে শুইয়ে পড়ে,,আর এদিকে শ্রাবণ আর উজানকে আজ পায় কে,কাল শুক্রবার সব ছুটি এখন সারারাত শুধু মুভি চলবে আজ শুধু উড়াধুড়া মুভি,,
হিয়াঃ আমি যেনো একদিকে কোনো সাউন্ড না শুনি,,নাহলে কিন্তু আমি ঔ রুমে গিয়ে শুইয়ে পড়বো,
উজানঃ আচ্ছা সাউন্ড করবো না তুমি ঘুমাও ,,অবশ্য তুমি চাইলে আমাদের সাথে জয়েনো করতে পারো,,আমরা মাইন্ড করবো না,
হিয়াঃ আমার এই আলতু ফালতু মুভি দেখার সময় নেই,আমার কাল কাজ আছে অনেক আমি ঘুমোলাম,,
শ্রাবণঃ আয় না বুবু দেখে যা মুভি টা কি ভয়য়য়য়ের
হিয়াঃ ওসবই দেখো তুমি,,,উজান আমি যাবার পর শ্রাবণ কতোক্ষণ পড়তে বসছে আজ,,
উজানঃ পড়ছে বাবা,,অনেকক্ষণ পড়ছে,আমি নিজে ওকে পড়িয়েছি___আর তুমি নিজে কি, তিনজনে মিলে তো টইটই করে ঘুরেফিরে এ-ই রাতে আসলে আর এখন আমরা একটু মুভি দেখলে দোষ
হিয়াঃ আমি কি তা একবারো বলেছি,,ওলয়েজ বেশি বুঝে__আমি ঘুমালাম গুড নাইট,,
উজানঃ গুড নাইট,,
শ্রাবণঃ গুড নাইট বুবুউউ,,
হিয়াকে গুড নাইট বলে উজান আর শ্রাবণ দু’জনেই ভূতের মুভি টা দেখায় একদম মনোনিবেশ করে,,আর এবার শুরু হয় জ্বালা,,মুভি টা এতোটাই ভয়ংকর ছিলো যে উজান আর শ্রাবণ থেকে থেকে কাপতে শুরু করে,আবার মাঝেমধ্যে মুখে হাত চাপা দিয়ে কখনো হালকা কখনো একটু জোরে চিৎকার করে উঠে,,এদিকে উজান আর শ্রাবণের এ-ই চিৎকার আর কাঁপাকাপিতে হিয়ার মেজাজ পুরো বিগড়ে যাচ্ছে,,হিয়া সব সহ্য করে চোখ বন্ধ করেছিলো কিন্তু এবার যখন শেষে গিয়ে উজান আর শ্রাবণ গলা ছেড়ে একটা বিভৎস রকমের আআআআআআ বলে চিৎকার করে উঠলো তখন তো হিয়া নিজেও ভয় পেয়ে একদম কম্বল টা গা থেকে ছুঁড়ে দিয়ে পুরো বসে গেলো,,
হিয়াঃ কি সমস্যা তোমাদের দুইজনের?এরকম ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছো কেনো?
উজানঃ (হাঁপাতে হাঁপাতে) ভূ ভূ ভূত টা,,
হিয়াঃ কি ভূত টা(রাগে)
শ্রাবণঃ ভূত টা কিরকম,কিরকম একটা জানি,
উজানঃ ভূত টা সত্যি অনেক ভয়ংকর ছিলো হিয়া,,
হিয়াঃ তো,,ভূত তা কি ল্যাপটপ থেকে এসে খেয়ে নিতো আপনাদের যে এরকম চিৎকার করতে হচ্ছে এই মাঝরাতে?মানুষ কি ভাববে যে,,
উজানঃ আরে সীন টা এরকম ভয়ানক হবে কে জানতো,,
হিয়াঃ (রাগে চোখ মুখ খিঁচে) নেক্সট এ সীন কি আসে সেটা আমরা না কেউ জানি না উজান,,দেখি ল্যাপটপ টা দিন,,দিন বলছি,,কাল শুক্রবার ভাবলাম একটু শান্তি করে ঘুমিয়ে বেলা করে উঠবো তাও শান্তি নেই,,একদম এখন চুপচাপ ঘুমে যাবেন,আর যদি দু’জনকে আমি কোনো রকম ফিসফিস এপাশ ওপাশ করা দেখছি না তারপর দেখিও,,
হিয়া এক টানে উজানের উপর থেকে ল্যাপটপ টা নিয়ে শাট ডাউন করে ওটা ওফ করে দেয়,,এদিকে এবার শুরু হয় উজান আর শ্রাবণের কাঁপাকাপি লাফালাফি ছুটাছুটি,,মানে কে কোনদিকে ঘুমোবে তার জন্য চিল্লাচিল্লি,,
শ্রাবণঃ না আমি বুবুর পাশে ঘুমাবো,আমার ভয় করে,,
উজানঃ তুই তো রোজই বুবুর পাশে ঘুমাস শ্রাবণ,,আজকে আমি ঘুমাই না প্লিজজজ,,
শ্রাবণঃ না না আমি মাঝে ঘুমাবো তোমরা আমার দুপাশে,তাইলে কেউ আমাকে নিয়ে যাবে না,,ভূত টা ভূত টা তোমাদের দেখে পালায় যাবে,,
উজানঃ আর আমি এদিকে শুলে যদি ভূতটা আমাকে এসে নিয়ে যায় তকন,,
শ্রাবণঃ না তুমি বড় মানুষ তোমাকে ভূত নিয়ে যাবে নাআআ,,
উজানঃ না ওরা বড় ভূত বড় মানুষকে নিয়ে যায় একটু বুঝ,,
শ্রাবণঃ না না না,,
হিয়াঃ আহ হচ্ছে টা কি(রাগে),,শ্রাবণ না হয় ছোট মানুষ কিন্তু আপনি,,আপনাকে এসব মানায়,,,
উজানঃ ভূ ভূত টা সত্যি অনেক ভয়ংকর ছিলো হিয়া,,
হিয়াঃ এ-তোই যখন ভয় তখন দেখতে যানই বা কেনো ওসব মুভি,,যতোসব___দেখি তুমি দেওয়ালের কানিতে যাও আর আপনি এপাশে আসুন,,
উজানঃ ভূত টা আমাকে এপাশ থেকে নিয়ে যায় যদি,,
হিয়াঃ একদম বাচ্চাদের মতো বিহেভ করবেন না,,আপনি কি শ্রাবণ যে এসব অবান্তর কথা বলছেন যার কোনো লজিক নেই যুক্তি নেই,,,
উজানঃ হিয়া আমি,,
হিয়াঃ চুপ,,,,আর একটা কথা না,,দেখি শ্রাবণ,,
হিয়া দেওয়ালের কানিতে দুটো বালিশ দিয়ে ঠেস দেয় যাতে শ্রাবণের দিকে ভূত না আসে,শ্রাবণকে শুইয়ে দিয়ে হিয়া মাঝে শুইয়ে যায়,আর হিয়ার এদিকে উজান,,উজান ঔ রুম থেকে আরো দুইটা বালিশ এনে তার এপাশে দিয়ে শুইয়ে পড়ে,,
হিয়াঃ আর যদি কারো আমি নড়াচড়া,,এপাশ ওপাশ না দেখি,না হলে কিন্তু দুইজনকে রেখে আমি ঔ রুমে একা চলে যাবো,,
হিয়ার কথায় উজান আর শ্রাবণ দু’জনে একটা বড় করে নাআআআ বলে উঠে,,কারণ হিয়ার আজকে অনন্ত ঔ রুমে যা-ওয়া চলবে না এক মিনিটের জন্যেও না উমহুম,,শ্রাবণ এসে হিয়ার উপর গা পা তুলে হিয়াকে একপাশ দিয়ে জড়িয়ে ধরে,,আর উজান এক পা তুলে হিয়াকে খিঁচে শ্রাবণ সহ হিয়াকে জাপ্টে ধরে,,দুজনে মাথা রাখে হিয়ার দুই কাঁধে,,
হিয়াঃ আপনাদের দু’জনের কি মনে হয় আপনাদের শরীরের কোনো ভার নেই,,আমার দম বন্ধ লাগছে ছাড়ুন নাআআআ উজান,,শ্রাবণ ওপাশে পিছা না ভাই,,ভূত টূত কিছু হয় না,,সত্যি,,সারারাত কি আমাকে এরকম করে থাকতে হবে না-কি আজব,,,ও উজাননন,,এতো দেখছি মহাজ্বালা,,
!
!
!
দুদিন পরঃ
উজান আজ সন্ধ্যার পরপর শ্রাবণকে নিয়ে বেড়িয়েছিলো সবাই মিলে একটু আড্ডা ঘুরাঘুরি করবে সেই জন্য,,সাব্বির ইন্টারভিউ দিতে সিলেট যাচ্ছে রুপমো কাল ইন্টারভিউ দিয়ে কিছুদিনের জন্য যাবে বাড়ি তাই একদিনের জন্য সবার একটু দেখাদেখি খাওয়াদাওয়া আড্ডা এ-ই আরকি,,উজানের সাথে বাহিরে আসা মানেই তো শ্রাবণের অন্য রকম শান্তি,উজানের পাশাপাশি তুষাররা সবাইও যে ওকে কম আদর করে ন,, যা খেতে মন চায় সব কিনে দেয় যা নতুন কিছু আসে বাচ্চাদের সব এনে দেয়,,তাই তো শ্রাবণের এতো এতো আনন্দ,,
এদিকে রাত তখন একটার কাছাকাছি,,বাহির থেকে এসে এবার শুরু হয় শ্রাবণ আর উজানের ওয়াশরুম নিয়ে টানাটানি,,আর এ-ই টানাটানির কারণ তাদের পেটের বারো তেরো চৌদ্দ অবস্থা,,বাহিরের ঝালমুড়ি কলা ভর্তার পাশাপাশি ফুচকা নামক লোভনীয় খাবার টা আজকে মজার হলেও সেটা ছিলো পুরোটাই অস্বাস্থ্যকর,,যার ফলস্বরুপ এখন এই পেটের গন্ডগোল,,
হিয়া একবার উজানের জন্য স্যালাইন বানিয়ে আনছে তো আরেকবার শ্রাবণের জন্য,,কখনো ঔষধ এনে হাতে তুলে দিচ্ছি তো কখনো চিঁড়াপানি,,মাথা একবারে পুরোই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে হিয়ার,,রুম টা কিরকম নোংরা নোংরা আর অপরিষ্কার লাগতে শুরু করছে তার কাছে,এদিকে উজান যাও বা বারবার হাত পা ধুইয়ে এসে বিছানায় ধপ করে শুইয়ে পড়ছিলো কিন্তু শ্রাবণকে দেখে তো হিয়ার মাথা যেনো ঘুরতে শুরু করছে,,পানি পায়ে রুমে এসে-হাত মুখ না মুছেই শ্রাবণ ঔ পায়ে বিছানায় উঠছে দেখে হিয়ার গা পুরো ঘিনঘিন শুরু করে দিছে,,উজানের প্যান্ট ভেজা শ্রাবণের গেঞ্জি,,সাথে ওদের জন্য পানিতে চুপচুপ করছে ফ্লোর,,
হিয়াঃ কতোবার,কতোবার করি বলি বাহিরের খাবার না খেতে,কি খেতে মন চায় বলুন,আমি কষ্ট করে হলেও বানিয়ে দেবো,কিন্তু না, বাড়িতে বানালে নাকি বাহিরের মতো স্বাদ হয় না,,তাই তো ওনাদের রোজ রোজ বাহিরের খাবার খাওয়া চাই আর আমার কাজ গুলো আরো বাড়ানো চাই,,
উজানঃ কিছু বললা হিয়া,,
হিয়াঃ না কিছু বলি নি,কি বলবো আমি__আমার কথা শুনেন আপনারা,,,,আর এ-ই যে তুমি পায়ের স্পঞ্জ টা কি পাপোশ টায় ভালো করে মুছে আসা যায় না,,ঘরটর পানি দিয়ে____দেখি গেঞ্জি টা খুলো(রাগে)
শ্রাবণ গেঞ্জি খুলবে কি,বেচারা তো এতোটাই ক্লান্ত হয়ে নিস্তেজ হয়ে গেছে যে গেঞ্জি টা খোলার সেই শক্তি টুকু যেনো ওর আর শরীরে নেই,,হিয়া বিছানায় বসে শ্রাবণের গেঞ্জি খুলে দিয়ে গা টা মুছে দিতে থাকে,,এদিকে উজানের আবার পেট ডাকাডাকি শুরু করলে উজান উঠে আবার দৌড়ে ওয়াশরুম ঢুকে,,
হিয়াঃ কি কি খাইছো আজকে বাহিরে,,??
শ্রাবণঃ ঝালমুড়ি খাইছি,আচার খাইছি,কলাভর্তা খাইছি,,
হিয়াঃ ওসব তো প্রতিদিনই খাও নতুন কি খাইছো আজকে,,
শ্রাবণঃ তুষার ভাইয়া আসচিলো(আসছিলো) না সন্ধি আপুকে নিয়ে তখন আমরা রেস্টুরেন্টে গেছি একটা,ঔখানে চাওমিন খাইছি,,কি মজাআআ,,
হিয়াঃ সন্ধি আপু আসছিলো আজকে কোথায় তোর ভাইয়া তো বললো না একবারো,তাহলে আমিও যেতাম তোদের সাথে
শ্রাবণঃ ভাইয়াও তো জানতো না আপু আসবে,,আমরা যখন ফিরছিলাম তখন দেখা___তারপর ঔ রেস্টুরেন্ট থেকে বের হ’য়ে সন্ধি আপু জিদ ধরে সে ফুচকা খাবে,,তুষার ভাইয়ার সাথে কেমন কান্না কান্না করে,,তারপর ভাইয়া আমাকেও সাথে নিয়ে ফুচকা খাওয়ায়
হিয়াঃহুমমম, এ-তো কিছু খাইছো তোমরা আজকে,,তাহলে পেট খারাপ হবে না কেনো,,নিশ্চয় কোনো খাবারে ভেজাল ছিলো
শ্রাবণঃহুমম😥
হিয়া শ্রাবণকে জামা পড়িয়ে দিতে দিতে খেয়াল করে শ্রাবণের গা টা কিরকম হালকা গরম গরম লাগছে,হিয়া শ্রাবণের গলায় ঘাড়ে কপালে হাত রাখে জ্বর-টর আসছে না-কি সেটা বুঝার জন্য,,
হিয়াঃ শ্রাবণ তোমার গা টা এরকম গরম লাগছে কেনো,,দেখি
শ্রাবণঃ কোথায় গরম,,এ-ই যে ঠান্ডা,,
হিয়াঃ না দেখি,,,,,তোমার কি আর পেট কামড়াকামড়ি করছে,,এখন ঔষধ টা খেয়ে একটু কমে নাই?
শ্রাবণঃ কমছে কিন্তু আমার না বুবু কেমন বমি বমি লাগচে,(লাগছে)
হিয়াঃ বমি তো লাগবেই,,আর যদি আমি শুনছি না বাহিরের খাবার খাওয়া,,দেখি তুই শুইয়ে যা তো আমি আরো চিড়ে ভিজিয়ে রাখি,,রাতে আর আজকে অন্য কিচ্ছু খেতে হবে না,পেট টা ঠিক হোক,,
শ্রাবণঃ চিঁড়ে তে চিনি দিবি বেশি করে কেমন একটা ওয়াআআক,,
হিয়াঃ তুমি মজার মজার খাবার খেয়ে পেট খারাপ করবা আর একটু চিঁড়ে খেতে ওয়াক,,বের করবো তোমাদের কাল থেকে আমি,দাঁড়াও শুধু,,
এদিকে উজান ওয়াশরুম থেকে হেলে দুলে এসে ধাপ করে শ্রাবণের পাশে বিছানায় শুইয়ে যায়,এতোবার পেটের অত্যাচারে শ্রাবণের সাথে সাথে তার অবস্থাও এখন পুরোই কাহিল,,
উজানঃ শ্রাবণণণণণ,,,আমি শেষ____হু____হিয়া আমি গোসল করবো,,
হিয়াঃ কি,এ-ই রাতের বেলা,,
উজানঃ হুম এতোবার ওয়াশরুমে, শরীর টা কিরকম গুলাচ্ছে,,
হিয়াঃ গুলাক,,এ-ই রাতে গোসল করে ঠান্ডা লাগানোর কোনো প্রয়োজন নেই,,হাত মুখ ধুয়েছেন না ভালো করে?,,আমি আপনার ট্রাওজার আর গেঞ্জি বের করে দিচ্ছি জামা টা শুধু ছেড়ে নিন,,
উজানঃ তা-ও হয়,,এই সন্ধিটার জন্য,আমি সিউর ঔ ফুচকা গুলোর মধ্যে কিছু ঝামেলা ছিলো,,
হিয়াঃ ওমনি আপুর দোষ হ’য়ে গেলো,নিজেদের লোভ টাকে তো সামলাতে পারেন না,,আসছে বড় বড় কথা বলতে,,এ-ই যে এখন একদম চুপচাপ শুইয়ে যাবা,থাক আর আজকে পড়তে হবে না,,কালকে শরীর ভালো হলে এখন স্কুল যাওয়া যাবে,,আগে সুস্থ হও_____আর দেখি ফোন দুইটা,,
উজানঃ ফোন টাও নিয়ে থুইয়ে দেওয়া লাগবে,,থাক না ওটা,,
হিয়াঃ হ্যা তারপর দু’জনে কম্বলের ভেতর লুকিয়ে লুকিয়ে ফ্রি-ফায়ার খেলবেন,,কি মনে করেন হিয়া কিছু বুঝে না হিয়া খুব বোকা,তাই না,,
উজানঃ (একটা ভেংচি কেটে) ফোনে চার্জো নেই বেশি,,যা-ও চার্জ দেও,,
হিয়া ফোন দুইটা হাতে নিয়ে উজানের টা চার্জে দিয়ে শ্রাবণের ট্যাব টা বেড সাইডের টেবিল টার ড্রয়ারে ঢুকে দিয়ে যে-ই রুম থেকে বের হতে যাবে ওমনি শ্রাবণ একগাদা বমি করে বিছানার একপাশ পুরোটা ভরিয়ে দেয়,,উজান বিছানা থেকে উঠে এসে শ্রাবণকে জড়িয়ে ধরে আর হিয়া দৌড়ে এসে শ্রাবণের পিঠে বুকে হাত বুলাতে থাকে,
উজানঃ শ্রাবণ,,এ-ই কষ্ট হচ্ছে তোর,,এ-ই ছেলে আরো,আরো বমি করবি,,কি কষ্ট হচ্ছে বল আমাকে,,
হিয়াঃ একটু আগেই বলছিলো বমি বমি লাগছে,,এখন এ-র মধ্যেই
শ্রাবণঃ বুবু পানি,,
উজান শ্রাবণকে নিয়ে ওয়াশরুমে এসে আয়নার পাশের তাক টায় বসিয়ে দেয়,,হিয়া দৌড়ে পানি নিয়ে এসে শ্রাবণকে দিলে শ্রাবণ আগে কুলি করে নিয়ে একটু পানি টা খায়,,উজান শ্রাবণের গেঞ্জি টা খুলে দিয়ে শ্রাবণের পিঠে হাত বুলাতে শুরু করে,,এদিকে হিয়া অস্থির হ’য়ে কি করবে না করবে কিছুরই দিশা খুঁজে পায় না,,
উজানঃ তুমি একটু শান্ত হও,আমি দেখছি তো,
শ্রাবণঃ আমি ঠিক আছি বাইয়া(ভাইয়া)__এ-ই দেখো,বমি টা করে ভালো লাগচে একটু,,পেট টা কেমন ফুলে ছিলো এতোক্ষণ,,দেখো এখন আর নেই,,
হিয়াঃ না তুমি ঠিক নেই,আপনি ওর গা টা ধরে দেখছেন কি রকম গরম হ’য়ে আছে,,জ্বর আসছে মনে হচ্ছে,,
উজানঃ আমারো তো তাই মনে হচ্ছে,,কি করবো রুপমের ঔ ডক্টর আঙ্কেল টাকে ফোন করবো একবার,,
হিয়াঃ যা ভালো বুঝেন করুন,আগে ওকে নিয়ে আপনি ঔ রুমে শুইয়ে পড়ুন তো,,আমি আসছি
উজানঃ ঠিক আছে,,আসো তুমি,,আমি দেখি রুপমের সাথে কথা বলি আগে,,
উজান শ্রাবণকে নিয়ে এদিকের রুম টায় এসে শ্রাবণকে শুইয়ে দিয়ে শ্রাবণের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে রুপমের সাথে কথা বলতে শুরু করে,,এদিকে হিয়া এপাশের রুমের বমি গুলো পরিষ্কার করে নিয়ে হাত টাত ভালো করে ধুইয়ে রান্না ঘরে আসে,,রান্নাঘরের তাক থেকে সরিষার তেল টা নামায় ওটা হালকা গরম করে নিয়ে এসে শ্রাবণের পাশে বসে যায়,,
হিয়াঃ (শ্রাবণের পিঠে পেটে গরম তেল টা ডোলে দিতে দিতে)কথা হলো ভাইয়ার সাথে?
উজানঃ হ্যা বললাম,কথা বলছে ও,,বলে জানাচ্ছে,,,,,,হিয়া থার্মোমিটার টা কোথায় রাখছো?
হিয়াঃ আপনার রুমের ড্রয়ার টায় দেখুন তো,,ওখানেই তো রেখেছিলাম মনে হচ্ছে,,
উজানঃ আচ্ছা আনছি আমি,,তুমি থাকো ওর পাশে,,আমি জামাটাও একটু চেঞ্জ করে নেই,,
হিয়াঃ আচ্ছা আর আসলে শ্রাবণের জন্যেও আরেকটা গেঞ্জি নিয়ে আসুন না,,
উজানঃ আনছি,,
উজান গিয়ে ওর ড্রেস টা চেঞ্জ করে শ্রাবণের জন্য থার্মোমিটার টা খুঁজে এনে হিয়ার হাতে দেয়,হিয়া শ্রাবণের মুখে থার্মোমিটার টা ঢুকিয়ে দিলে শ্রাবণের হেব্বি মজা লাগে,এ-তো নিস্তেজের মধ্যেও বাচ্চা টা ফিঁক করে একটা মলিন হাসি দিয়ে উঠে,,
হিয়াঃ খুব কষ্ট হচ্ছে না ভাই টার আমার,,এ-ই তো ভাইয়া কথা বলছে ডক্টরের সাথে তারপর আমরা ঔষধ খাবো,,ডক্টরের কাছে যাবো তখন আমার শ্রাবণ আবার সুস্থ হয়ে যাবে,,তাই না
হিয়া শ্রাবণকে হাসানোর জন্য শ্রাবণের খোলা গায়ে হালকা করে কাতুকুতু দিতেই শ্রাবণ ফিঁক করে হেঁসে দেয়,,আর থার্মোমিটার টা টপ করে মুখ থেকে পড়ে যায়,,
হিয়াঃ যা পড়ে গেলো তো,,এখন__নে নে মুখে ঢুকা নাহইলে ভাইয়া এসে আবার বোকা দিবে,,,
উজানঃ হিয়া,,
হিয়াঃ হুম,,কথা বললেন
উজানঃ হ্যা,,আমি একটু নিচ থেকে আসছি
হিয়াঃ কোথায় যাবেন আপনি আবার,
উজানঃ রুপম আসছে,ওর আঙ্কেল কিছু মেডিসিন সাজেস্ট করলো বললো রাতে এগুলো খেয়ে দেখতে,,আর সকালে একবার ওনার চেম্বারে,,
হিয়াঃ আচ্ছা ঠিক আছে,,আপনার পেট কি এখন ঠিক?কিছুতো খেলেনও না,চিঁড়ে গুলো ওভাবেই অর্ধেক খেয়ে রেখে দিলেন,,
উজানঃ পেটটা হালকা কমেছে,,কিন্তু এখন কিছু খাবো না__তুমি থাকতে পারবা তো ওর সাথে একা,,আমি এ-ই যাবো আর আসবো
হিয়াঃ পারবো,,সাবধানে আসবেন,
উজানঃ হুম
উজান যাবার আগে শ্রাবণের মাথায় হাত বুলে দিয়ে নিচে আসে,,কিছুক্ষণ বাদে রুপম এসে উজানকে ডক্টর আঙ্কেলের বলে দেওয়া মেডিসিন গুলো কিনে এনে উজানের হাতে দেয়,,
রুপমঃ আমি কি যাবো একবার উপরে?
উজানঃ না থাক,,এমনিতেও এ-তো রাতে কষ্ট করে এলি,,কাল যে বললি ইন্টারভিউ আছে,,
রুপমঃ হুম আছে দশটার দিকে,,
উজানঃ আচ্ছা শোন এ-ই টাকা টা রাখ,,আমি জানি তোর হাতে এখন বেশি টাকা নেই,,এ-ই মেডিসিন গুলো কিনে আনলি আবার,,
রুপমঃ না থাক,,তোর কাছে খুচরো একশো টাকা থাকলে দে কালকের বাস ভাড়া টা,,
উজানঃ রাখ তো এটা,,আর গিয়ে ঘুমিয়ে পড়,আমি দেখি এদিকে অবস্থা কি হয় জানাবো এখন,
রুপমঃ আচ্ছা দেখ,,তবে দরকার হলে ফোন দিস,আসবো আমি এখন,,আমি তো ফ্রী আছি,
উজানঃ আচ্ছা,,
উজান রুপমের হাতে এক হাজার টাকার একটা নোট ধরিয়ে দেয়,কারণ উজান খুব ভালো করে জানে রুপমের হাত এখন পুরোটাই ফাঁকা,,তার উপর ও শ্রাবণের জন্য মেডিসিন গুলো কিনে আনলো,,উজান রুপমকে বিদায় দিয়ে বাড়িতে ফেরে,,এদিকে যতো সময় পেরুতে থাকে শ্রাবণের শরীর টা তোতোই খারাপ করতে শুরু করে,,হিয়া উজানের থেকে ঔষধ গুলো নিয়ে এক এক করে খাইয়ে দিয়ে শ্রাবণকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করে,,একটা পর্যায় শ্রাবণ ঘুমিয়েও যায়,,শ্রাবণের সাথে একই বালিশে মাথা রেখে শুইয়ে পড়ে উজান নিজেও,,শরীর টা যে তারো আর ভালো লাগছে না,কিন্তু হিয়ার চোখে আজ ঘুম নেই,,হিয়া হাতে বাটি আর পানি নিয়ে শ্রাবণের কপালে জ্বর পট্টি বেঁধে দিচ্ছে আর মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ে ফু দিচ্ছে শ্রাবণের গায়ে,,,,কিন্তু এদিকে রাত যতো গভীর হচ্ছে সেই গভীরতার সাথে শ্রাবণের জ্বর টাও ক্রমাগত বাড়ছে,,হিয়া উজানকে ডাকতে চাইছে না থাক একটু ঘুমিয়ে নিক উজান কিছুক্ষণ,,
ভোরের আগে আগে হিয়ার চোখ টা হালকা লেগে আসলে শ্রাবণ উঠে যায়,তার নাকি আবার বমি লাগছে,,শ্রাবণের সাথে উঠে পড়ে উজান নিজেও,,আর বলা শেষ না হতেই শ্রাবণ আবার বমি করা শুরু করে,,এবার আর বাচ্চা টা পারে না,শরীর পুরো শেষ হয়ে নেতিয়ে যাচ্ছে তার,,জ্বর মেপে যা আসলো সেটা ১০২,,,,চোখ মুখ অল্পকিছুক্ষের মধ্যেই কাল সীটে পড়ে কেমন একটা বিবর্ণ রুপ ধারণ করে নিলো,,শ্রাবণের চোখে আর ঘুম নেই,,সে তার পুরো শরীর উজানের গায়ে ছেড়ে দিয়ে কেমন একটা চুপসে আছে,,আর চোখ দিয়ে পানি ফেলছে এক ফোঁটা দু ফোঁটা করে,,কিচ্ছু যেনো তার কাছে আর ভালো লাগছে না,,না ঘরের আলো না রাতের অন্ধকার,,তাই উজান শ্রাবণকে নিয়ে একবার রুমে হাঁটাহাটি করছে তো কখনো ব্যালকুনিতে,,শ্রাবণের মেজাজো খারাপ হয়ে যাচ্ছে একটুতে,সে খিটখিটে হয়ে কান্না করছে তো কখনো চুপ হয়ে যাচ্ছে,,তার রাগ লাগছে কিচ্ছু সহ্য হচ্ছে না তার,,
উজানঃ বাবা টা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে নাআ,,আর একটু রুপম ভাইয়া আসছে এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তারপর আমরা কই যাবো,ডক্টরের কাছে যাবো
শ্রাবণঃ আমি যাবো নাআআ(কাঁদতে কাঁদতে)
উজানঃ আচ্ছা আচ্ছা যাবো না,,হিয়াআআ
হিয়াঃ আসছি,,
উজানঃ তুমি কি তৈরি?রুপম বললো এ্যাম্বুলেন্স আসছে,তাও আধা ঘন্টার মতো হয় তো লাগবে,,তুমি একটু ঘুমিয়ে নেও ততোক্ষণ,,
হিয়াঃ না আমার কিছু ভালো লাগছে না,,বাচ্চা টা আমার পুরো নেতিয়ে গেছে__রাতের বেলাই তো ভালো ছিলো এখন কি থেকে কি হলো আমার খুব ভয় হচ্ছে,
উজানঃ শান্ত হও একটু,,রুপম বললো ওকে বারবার পানি টা খাওয়াতে,,তুমি একটু জোর করো না আমার কথা তো শুনছে না,,
হিয়াঃ আমার কথাও তো শুনছে না,,কেমন করছে,,
হিয়া কান্নারত মুখে শ্রাবণকে পানি টা খাওয়াতে চায় কিন্তু শ্রাবণ রাগে উজানের মুখে মার বসিয়ে দেয়,সে খাবে না তাও কেনো এরা দুজন এতো জোর করছে তারা কেনো বুঝছে না তার কিচ্ছু ভালো লাগছে না,,