মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 ইভা রহমান Part-11

0
1101

😏 # মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

ইভা রহমান

Part-11

✅12_13 & 24_25 পার্ট Fb lite দিয়ে পড়া যাচ্ছে না,,অনুগ্রহ করে নরমাল এফবি দিয়ে পড়ুন!!

হিয়াঃ ভাইয়া শুনুন না,,আমি এমনিতেই টানা তিনদিন টিউশন মিস দিয়েছিলাম এখন আজকে আবার,,আপনার কি কাজ আছে আমাকে বলুন আমি পরশু শুক্রবার আছে তখন না হয়

উজান একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে হিয়াকে নিয়ে ভেজা রাস্তা টা দিয়ে হাঁটতে শুরু করে,,কিছু পথ দু’জনে নিশ্চুপ হাঁটতে থাকে,,হিয়ার মনে এখন অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে,,উজান কি ওকে টিউশনে যেতে অনুমতি দিলো,না ওকে নিয়ে অন্য কোথাও যাচ্ছে,,আচ্ছা উজান অন্য কোথাও নিয়ে গেলেই বা হিয়া কেনো যাবে উজানের সাথে,,কিন্তু হিয়া কেনো সেই প্রশ্ন টা উজানের মুখের উপর করতে পারছে না,,

হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎই পা পিছলে হিয়া দুম করে ধপাস করে পড়ে যায়,,উজান সামনে থাকায় হিয়াকে ধরতে পারে না আর পেছন ফেরার আগেই হিয়া হালকা নিজেকে ঠিক করে নিয়ে উঠতে ধরে

উজানঃ হাত পা ভাঙ্গো এবার,,এমনিতে তো শরীরে কিছু নেই তার উপর হাত পা সব খেয়ে বসো(ঝারি দিয়ে)

হিয়াঃ আমি কি ইচ্ছে করে পড়ে গেলাম নাকি আজব

উজানঃ কেউ ইচ্ছে করে পড়ে না হিয়া,,কিন্তু তোমার মতো এতো খামখেয়ালি ভাবেও কেউ রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করে না,,ভেজা রাস্তা একটু সাবধানে পা ফেললে তো হয়,,নাকি সেটাও শিখিয়ে দিতে হবে

হিয়াঃ আপনি এখনো আমার সাথে এ-রকম করে রাগ দেখিয়ে যাবেন,,আমি কি ইচ্ছে করে ঔ ছেলে গুলোকে ডেকে এনেছিলাম নাকি আমি জানতাম এদিকের রাস্তা টা এরকম,,

উজানঃ জানবা কি করে,,জানো তো শুধু কি করে সিনিয়র দের সাথে বেয়াদবি করতে হয় কি করে তাদের গায়ে হাত তুলতে হয় কি করে তাদের কথা অমান্য করে নিজেকে মহান দাবি করতে হয়

হিয়া রেগে গিয়ে কিছু বলবে উজান এসে হিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে

উজানঃ দেখি হাত টা ধরো,,ধরো বলছি

হিয়াঃ আস্তে,,আমার কান যথেষ্ট ভালো এতো জোরে বলার কিছু নেই

হিয়া উজানের হাত ধরে হাঁটতে যাবে ওমনি হাঁটতে গিয়ে দেখে তার বা পায়ের জুতোর ফিতে টা ছিঁড়ে গেছে,,বেচারি এখন কি করবে,,এমনিতে এই জুতো টা ছাড়া তার বাহিরে পড়বার আর কোনো জুতো নেই এখন সে কি করে,,তার উপর পড়ে গিয়ে হাতে জামাতে কাদা লাগিয়ে যাচ্ছে তাই অবস্থা এখন হিয়ার,,এদিকে হিয়ার এই নাজেহাল অবস্থা দেখে উজান মনে মনে খুব হেঁসে দিলেও হিয়ার সামনে এখনো সেই গম্ভীর হয়েই থাকে!!!!

হিয়া জুতো দুটো হাতে নিয়ে কি করবে বুঝতে পারে না,,উজান হিয়ার হাত থেকে জুতো দুটো কেঁড়ে নিয়ে পাশে থাকা জঙ্গলের ভেতর ছুঁড়ে ফেলে

হিয়াঃ আরে আরে আরে কি করলেন আপনি,,মাথা ঠিক আছে আপনার,,আপনি আমার জুতো

উজানঃ ফেলে দিয়েছি,,হ্যাপি

হিয়াঃ হ্যাপি মানে,,আপনি আমার জুতো টা কেনো আমাকে না বলে

উজানঃ ঔ জুতো টার আর কি বাকি আছে হিয়া,,দেখেই বোঝা যাচ্ছে দশবারের বেশি সেলাই দেওয়া আর একবার সেলাই করেও দুদিনের বেশি পড়তে পারবা না তুমি ওটা

হিয়াঃ হ্যা কিন্তু ঔ দুদিনই না হয় চালিয়ে নিতাম আমি

উজানঃ আসো তো তুমি,,অহেতুক বেশি কথা বলো,,এখন দেড়ি হচ্ছে না টিউশনের জন্য

হিয়াঃ হ্যা কিন্তু

উজানঃ চুপ আর একটা কথা বললে কিন্তু

হিয়া দাঁত মুখ খিঁচে চুপ হয়ে যায়,,উজান আলতো করে হিয়ার বাহু বরাবর হাত টা চেপে ধরে দেখে শুনে হিয়াকে নিয়ে হাঁটতে শুরু করে,,দুজনে হাঁটছে,,কারো মুখে কথা নেই,,যদিও হিয়া মনে মনে উজানকে হাজারটা গালি দিতে ব্যাস্ত,,কিন্তু উজানের যে মনে মনে সেই গালি গুলোও শোনার সময় নেই,,

উজানঃ টিউশন করে কতো টাকা আসে তোমার

হিয়াঃ আসে,,ঔ চলে যাবার মতো হয়ে যায়

উজানঃ কতো আসে

হিয়াঃ আপনি শুনে কি করবেন

উজানঃ একটা প্রশ্নের উত্তর কি এক কথাতে তুমি দিতে পারো না হিয়া

হিয়াঃ না পারি না,,আমি টিউশন করিয়ে কতো টাকা পাই ওটা জেনে তো আপনার কোনো কাজ থাকার কথা না

উজানঃ তুমি বলবা কি

হিয়াঃ আহ,,আমার হাতে লাগছে

উজানঃ বলো তাহলে

হিয়াঃ এরকম কেনো আপনি

উজানঃ আমি এরকমই

হিয়াঃ খুব বাজে আপনি

উজানঃ তুমি কি,,বেয়াদব

হিয়াঃ আমি বেয়াদব তো আপনি কেনো এতো আমার পেছন পেছন এভাবে পড়ে থাকেন সবসময়,,আমাকে ভালোবাসেন????

উজানঃ (একটু থেমে গিয়ে) কি বললা,,আর একবার বলো

হিয়াঃ আমাকে ভালোবাসেন আপনি????

উজানঃ তোমাকে,,তোমার মতো একটা মেয়েকে ভালোবাসবে,,এই উজান শাহরিয়ার,,,,উজান শাহরিয়ার এর চয়েজ না এরকম পানসে না___আমি তোমাকে এর আগেও বলেছিলাম উজান শাহরিয়ার এর যে ওয়াইফ হবে সে হবে এই পৃথিবীর সবচাইতে মিষ্টি একটা মেয়ে,,আর তুমি,,তুমি তো একটা ধানিলঙ্কা একটু তেই যে ঝাঁঝিয়ে উঠো

উজানের কথা শুনে হিয়ার মন টা খারাপ হয়ে আসে হালকা,,হিয়া জানে তার প্রশ্নের উত্তরে হয়তো এই উওরটাই সে পাবে কিন্তু আজ কেনো জানি উজানের কথা গুলো তার মনের কোথাও গিয়ে হালকা কষ্ট দিয়ে ফেলে,,তবুও হিয়া নিজেকে সামলে নেয়,,সে নিজেকে বুঝিয়ে নেয় রুপকথার গল্পের মতো কোনো রাজকুমার তার প্রাপ্য না,,

হিয়াঃ তাহলে কেনো আপনি আমাকে নিয়ে সবসময় এতো চিন্তিত থাকেন

উজানঃ শ্রাবণের জন্য

হিয়াঃ শ্রাবণের জন্য!!____ঠিক বুঝলাম না

উজানঃ শ্রাবণের তো তুমি ছাড়া কেউ নেই,,তোমার কিছু হয়ে গেলে বাচ্চা টা তো পুরো নিঃস্ব হয়ে যাবে এই একলা পৃথিবীতে

হিয়াঃ (একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে)হুমমমম___আমার দেড়ি হয়ে যাচ্ছে আমি আসছি

উজান একটা রিকশা ডেকে নিয়ে হিয়াকে উঠে দিয়ে নিজেও উঠে পড়ে,,হিয়া বুঝতে পারে উজান হয়তো ওর জন্যেই রিকশা টা ডাকছে কিন্তু সে যে নিজেও এসেও রিক্সা টায় বসবে এটা হিয়া ভাবতে পারে নি

হিয়াঃ আপনি কোথায় যাবেন আবার

উজানঃ তোমাকে নামিয়ে দিয়ে আমি একটু সামনে যাবো

হিয়াঃ আপনি জানেন আমি এখন কোথায় টিউশন পড়াতে যাবো??

উজানঃ গুনগুন দের বাড়িতে যাবা তাই তো

হিয়াঃ হ্যা!!কিন্তু আপনি কি করে

উজানঃ মামা আপনি শাহবাগের দিকে নিয়েন

রিকশা চলতে থাকে নিজ গতিতে,,উজান হিয়াও নিশ্চুপ ভাবে বসে রিক্সার গতির সাথে সামনে চলতে শুরু করে,,বৃষ্টির পর আবহাওয়া টা নিতান্তই ঠান্ডা তার উপর হালকা বাতাস নিমিষে শরীর কে একটা অন্য রকম প্রশান্তি এনে দিতে সক্ষম,,এই প্রথম হিয়া কোনো ছেলের সাথে এভাবে এতো কাছাকাছি বসে রিক্সায় করে কোথাও যাচ্ছে,,হিয়ার নারী মনে এই পরিস্থিতি টা মুহুর্তেই একটা অন্য রকম শিহরণ জাগিয়ে তুলে,,হিয়ার চুল উড়ে গিয়ে ছুঁড়ে দেয় উজানের হাত কখনো বা উজানের গলা,,কিন্তু মুখ ছুঁতে একটু বেগ পেতে হয় উজান একটু বেশি লম্বা কি না,,উজান যত্ন করে গলার কাছে এসে জমা হওয়া হিয়ার চুল গুলো এক হাতে সারিয়ে দেয়,,বৃষ্টির ছাট এসে গায়ে জমা হয় দু’জনের,,উজানের মনেও হয়তো আকাশ পাতাল ঢেউ খেলছে এই সময়,,কিন্তু উজান সেই অনুভূতি টা হিয়ার সামনে গোপনই রাখে❤️

উজানঃ তুমি কিন্তু এখনো বললে না টিউশন করিয়ে মোট কতো টাকা আসে তোমার হাতে

হিয়াঃ আসে গুনগুনকে পড়িয়ে ৩আসে,,রিফাতের মা ২করে দেয় আর নিঝুম কে পড়িয়ে পাই সাড়ে তিন,,দেওয়ার মধ্যে নিঝুমের মাই বেশি দেয় রিফাত দের অবস্থা টা বেশি ভালো না তাই ওর থেকে ২করেই নেই,,এই তো মোটে সাড়ে আটের মতো

উজানঃ হয়ে যায় এই সামান্য কটা টাকায়??

হিয়াঃ না হওয়ার কি আছে,,আর আপনি এটাকে সামান্য বলছেন এই টাকা টাই আমার কাছে লাখ টাকার সমান ভাইয়া,,আপনি আর ঝিনুক তো বুঝতে চান না শুধু শুধু বিনা কারণে আমার টিউশন গুলো মিস করিয়ে দেন,,অথচ এই টিউশনের উপরই আমি টিকে আছি!!

হিয়ার কথায় উজানের মন টা কি রকম একটা খারাপ হয়ে আসে,,উজান একবার নিজের দিকে তাকিয়ে খেয়াল করে সে যে ঘড়ি টা পড়ে আছে সেটার দামই ১৫হাজারের বেশি,,তার পায়ের জুতো টা ৪হাজারের কাছাকাছি আর গায়ে দেওয়া শার্ট টা,,,,উজানের বুক টা শূন্য হয়ে আসে এই ভেবে হিয়া কি করে এতো সামান্য কটা টাকা দিয়ে নিজে চলে শ্রাবণকে বড় করছে,,কতো কষ্ট একা একা সহ্য করছে।

উজানঃ সব মিলিয়ে খরচ কতো হয় মাসে

হিয়াঃ ঔ হয়ে যায়,,আমি তো রিমা আপুর সাথে রুম শেয়ার করে থাকি এক বেড ২হাজার,,ভার্সিটিতে সব মিলায় প্রতি মাসে ২হাজার লাগে,,শ্রাবণের স্কুলের বেতন যাতায়াত খাবার খরচ সব মিলায় হয়ে যায়___গুনগুন কে তো নতুন পড়াচ্ছি আগে তো ঔ দুজনকে পড়িয়েই সব মেটাতে হতো,,তখন একটু চাপ হয়ে আসতো আর এখন হয়ে যায় ভালো ভাবেই

উজানঃ ( একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে) সামনে ভবিষ্যৎ এ কি করবা কিছু ভেবেছো

হিয়াঃ কি ভাববো কেবলই তো অনার্স শুরু করলাম,,চারটা বছর শেষ হতে দিন,,মাস্টার্স করে সরকারি কোনো প্রাইমারি বা হাই স্কুলে এস এ টিচার জয়েন করার খুব ইচ্ছে আছে

উজানঃ বিসিএস ট্রাই করার ইচ্ছে নেই

হিয়াঃ আছে আবার নেই,,আমাকে দিয়ে হয়তো বিসিএস হবে না

উজানঃ হবে না কেনো

হিয়াঃ মনে হয়,,এমনি

উজানঃ তোমার নিজের উপর কনফিডেন্টের খুব অভাব আছে তুমি জানো,,তুমি ট্রাই না করে কিভাবে বলছো তোমাকে দিয়ে হবে না

হিয়াঃ আমি তা বলি নি,,আসলে আমি

উজানঃ আসলে তুমি একটা ভীতু,,কিছু করতে ভয় পাও,,তোমার মাঝে যদি মেধা না থাকতো তাহলে তুমি এভাবে স্কলারশিপে ভার্সিটিতে পড়ার যোগ্যতা পেতে না হিয়া

হিয়াঃ আমি জানি,,কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে আমি একজন টিচার হবো,,সবাই কে শেখাবো,,সবাই আমার কাছে শিখতে পারবে জানতে পারবে,,আমাকে তাদের আদর্শ মনে করবে,,আমি এতেই অনেক অনেক অনেক খুশি

উজানঃ তারপর

হিয়াঃ তারপর আর কি,,আমার মাস্টার্স শেষ হতে হতে শ্রাবণ হয়তো এস এস দিবে,,তারপর ওকে একটা ভালো কলেজে ভর্তি করে দিয়ে ওর ফিউচার টা ওকে ঠিক করতে দেবো

উজানঃ আমি ওসবের কথা বলছি না

হিয়াঃ তাহলে

উজানঃ বিয়ে করবা না,,ওসব কিছু ভেবেছো

হিয়াঃ পাগল আপনি!!

উজানঃ পাগলের কি আছে এখানে,,সব মেয়েই তো ইচ্ছে থাকে সে বউ সাজবে,,তার বিয়ে হবে,,একটা গোছানো সংসার হবে,,সে মা হবে,,,,তোমার কোনো ইচ্ছে নেই এসব

হিয়াঃ আছে

উজানঃ তাহলে

হিয়াঃ আচ্ছা একটা কথা বলুন তো আমার মতো এই অনাথ কে কে বিয়ে করবে আপনি বলতে পারেন,,আর শুধু আমাকে বিয়ে করলে তো হবে না তাকে তো আমার সাথে আমার ভাই টারো দায়িত্ব নিতে হবে,,কোন ছেলে আছে যে এক্সট্রা করে অন্য একটা বাচ্চার দায়িত্ব নিতে চাইবে,,,কখনো যদি বিয়ের পর সেই মানুষ টা আমার ভাই টাকে তাড়িয়ে দেয় আমি তো সেটা সহ্য করতে পারবো না,,

উজানঃ সব ছেলেরা এরকম করবে কে বললো তোমাকে

হিয়াঃ পরিসংখ্যান তো তাই বলে

উজানঃ পরিসংখ্যান যাই বলুক তাই বলে তুমি সব ছেলেকে

উজান কিছু বলার আগে রিক্সা এসে থামে গুনগুন দের বাড়িতে,,হিয়া ব্যাগ থেকে ভাড়া টা বের করে সীটে থুইয়ে এক দৌড়ে পালিয়ে যায়,,উজানকে কিছু বলার সুযোগো দেয় না জানে যে সুযোগ দিলেই উজান টাকা টা ফেরত দিয়ে দিবে!!
___________

দুটো টিউশন পড়িয়ে হিয়ার ফিরতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসে,,বাড়ি ফিরেই হিয়া পুরো অবাক,,ওর বিছানার এক পাশে এসব কি জড়ো হয়ে আছে,,নাস্তার বিভিন্ন জিনিস থেকে শুরু করে বিভিন্ন ফল,,সাথে কতোগুলো মেডিসিন,,মেডিসিনের প্যাকেটে একটা প্রেসক্রিপশন,,তার পাশে একটা বাক্সের ভেতর এক জোড়া খুব সুন্দর জুতো

হিয়াঃ এসব কি শ্রাবণ,,কার এগুলো রিমা আপুর??

শ্রাবণঃ না তোর এগুলো

হিয়াঃ আমার মানে,,,কে দিয়ে গেছে এসব

শ্রাবণঃ ঝিনুক আপু এসে দিয়ে গেছে

হিয়াঃ ঝিনুক,,ঝিনুক দিয়ে গেছে মানে

শ্রাবণঃ হ্যা আপু বিকালে এসে আমাকে ডেকে এগুলো দিয়ে গেছে

হিয়াঃ ঝিনুক এই বাড়িতে এসেছিলো??

শ্রাবণঃ হ্যা এই ঘরে এসেছিল

হিয়াঃ কি বলছিস ভাই এসব তুই,,ঝিনুক আমার এই রুমে এসে এসব,,ঝিনুককে তো আমি কখনো বাড়ি নিয়ে আসি নি তাহলে ও কি করে,,আচ্ছা তুই ঝিনুককে বসতে দিয়েছিলি তো,,সুন্দর করে কথা বলেছিলি ওর সাথে,,কিছু খেতে বলিস নি ওকে

শ্রাবণঃ বলেছি বলেছি,,ঝিনুক আপু তোর ঔ বোয়াম থেকে বিস্কুট খুলে নিজে খেয়েছে,,,,আর যাওয়ার সময় আমাকে এতোওও গুলো চকলেট দিয়ে গেছে দেখ

হিয়াঃ ঝিনুক কেনো,,কতো গুলো টাকা খরচ করে,,শুনলাম আঙ্কেলের বেতন টাও নাকি এমাসে আঁটকে আছে ও কি করে কেনো এতো গুলো টাকা খরচ করে,,,এই মেয়ে টাকে নিয়ে না আমি আর সত্যি পারি না
________________

পরের দিন হিয়া ভার্সিটি এসেই ঝিনুককে একশো একটা বকুনি দিতে শুরু করে,,কেনো সে হিয়াকে না জানিয়ে কাল এতো বড় একটা কাজ করলো,,সে মোটেও কাজ টা ঠিক করে নি,,

ঝিনুকঃ আরে আমার কথা টা তো শোন

হিয়াঃ কি শুনবো আমি কি শুনবো,,তুই যদি আর কখনো এসব করিস আমি কিন্তু তোর সাথে আমাদের সব বন্ধুত্ব ওখানেই শেষ করে দেবো ঝিনুক

ঝিনুকঃ যা আমি তো ভয় পেয়ে গেলাম,,তুই পারবি এই কাজ টা করতে

হিয়াঃ হ্যা পারবো,,তোর আর ভাইয়ার এই অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি ইদানীং খুব খুব অসহ্য লাগছে আমার,,এসব আমার সাথে যায় না ঝিনুক,,আমি কখনো কারো থেকে সাহায্য নিয়ে চলি নি ঝিনুক কথা টা একটু বুঝ

ঝিনুকঃ একটা কথা বল তো হিয়া,,আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের শরীর টা খারাপ এটা শোনার পরো কি করে আমি

হিয়াঃ আমার কোনো শরীর খারাপ না ঝিনুক,,কেনো তোরা শুধু শুধু

ঝিনুকঃ রিপোর্টে তোর হিমোগ্লোবিন কতো কম আসছে তুই জানিস,,ডক্টর দেখেই বললো তোর এসময় বেশি করে খেয়ে খেয়ে হিমোগ্লোবিন টা গ্রো করতে হবে,,শরীরে ভিটামিন তো নেই বললেই চলে সব কিছুর কাউন্ট কতো কম কম করে আসছে কিছু খবর রাখছিস তুই

হিয়াঃ এসব ভাইয়া তোকে বলেছে তাই না

ঝিনুকঃ হ্যা বলেছে

হিয়াঃ তুই আর ভাইয়া গিয়ে কাল আমার জন্য ওসব কিনেছিস তাই তো

ঝিনুকঃ হ্যা মানে

হিয়াঃ সত্যি করে বল,,যদি নাই কিনতি তাহলে তুই কি করে জানলি আমার জুতো টা ছিঁড়ে গেছে আর এই নতুন জুতো টা

ঝিনুকঃ হ্যা মানে ভাইয়া আর আমি গিয়ে

হিয়া একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকে

হিয়াঃ ঝিনুক আমি অনাথ একটা মেয়ে আমার না ভাইয়াকে দেবার মতো কিছু নেই বিশ্বাস কর

ঝিনুকঃ হিয়া তুই

হিয়াঃ ভাইয়া যখন ভার্সিটিতে রোজ গেট দিয়ে এন্ট্রি করে না ওখান থেকেই মেয়ে দের লাইন শুরু হয়ে যায় ওনার পেছনে,,ওনার লাইফস্টাইল সম্পর্কে কোনো ধারণা আছে তোর,,আমি ছিলাম ওনার বাসায় গোটা একটা রাত গোটা একটা দিন,,আমি দেখেছি ওনাকে,,উনি যে রকম গোছানো পরিপাটি উনি যাকে ভালোবাসবে সেই মেয়েটাও সেই লেভেলেরই হবে ঝিনুক____তুই প্লিজ ভাইয়া কে আমার ব্যাপারে আর কখনো কোনো ইনফরমেশন দিবি না,,

ঝিনুকঃ ভাইয়া কিন্তু অনেক অন্য রকম হিয়া

হিয়াঃ তাই জন্য বলছি,,মানুষ টা খুব ভালো আর আমি মন থেকে ওনাকে অন্য রকম সম্মান করি কিন্তু আমি ওনার জন্য পারফেক্ট না

ঝিনুকঃ হিয়া তুই একটু কথা টা শোন আমার আমি

ঝিনুক আর কথা বলার আগেই উজান কয়েকটা ছেলে সহ ক্লাস রুমে ঢুকে গিয়ে সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে মাউথ পীচ টা মুখে লাগিয়ে নিয়ে একটা কাশি দিলে সবাই যে যার জায়গায় শান্ত হয়ে বসে যায়,,আজকে উজান ডীপ সবুজ শার্টের সাথে হোয়াইট জিংকস পড়ে এসেছে,,হাতে সেই চিরায়ত ঘড়ি আর চুল গুলো বরাবরই নিয়ম করেই গোছানো,,হিয়া এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে উজানের দিকে,,মানুষ টার সব কিছুই হিয়ার মনে ভালো লাগতে শুরু করে,,উজানের কেয়ারিং উজানের ড্রেস আপ,,উজানের কথা বলার ভঙ্গি,,উজানের চাঞ্চল্যতা যদিও সেটা শুধু হিয়ার সামনেই প্রকাশ পায় বেশি,,উজানের হাসি,,উজানের আড় চোখে হিয়ার দিকে তাকানো উজানের সব কিছু আস্তে আস্তে কবে যে হিয়ার মনে জায়গা করে নিতে শুরু করছে এ ব্যাপারে হিয়া অজানা❤️💙🧡💚💛💜

উজানঃ ট্যুর হবে ২রাত ৩দিনের জন্য আর জনপ্রতি হাজার করে পড়বে,,তোমাদের যারা যারা ইচ্ছুক যেতে তারা সবাই কাল সাব্বির কে টাকা জমা দিয়ে আমার থেকে এসে টোকেন নিয়ে যাবে,,,,আর কোনো প্রশ্ন কারো কোনো____??_____ঠিক আছে,,,,

উজান সবাই কে কোন জায়গা কতো খরচ সব রুল বুঝিয়ে দিয়ে মাউথ পীচ টা খুলে হিয়াকে একবার দেখে নিয়ে বাহিরে বেড়িয়ে যায়,,পরের দিন ঝিনুক ওর পিকনিকের টাকা দিতে হিয়া সহ উজানের কাছে আসলে উজান ঝিনুক সহ হিয়ার হাতেও দুটো টোকেন ধরিয়ে দিলে হিয়া একটু অবাক হয়,,সে তো পিকনিকের টাকা দেয় নি তাহলে কেনো উজান ওকে,,এদিকে উজান আজ হিয়ার দিকে একবার তাকিয়ে ওর চোখ টা নামিয়ে নিয়ে হাতে থাকা পিকনিকের ফাইল টা ঘাঁটতে শুরু করে

ঝিনুকঃ তুই আর ভাইয়া কথা বল,,আমি একটু নিচ থেকে আসছি

হিয়াঃ ঠিক আছে তাড়াতাড়ি আসবি,,,,,,ভাইয়া

উজানঃ বলো আমি শুনছি

হিয়াঃ আমি তো টাকা দেই নি তাহলে আপনি কেনো আমাকে

উজানঃ তোমার টাকা লাগবে না

হিয়াঃ আমার টাকা লাগবে না,,মানে!কেনো টাকা লাগবে না

উজানঃ তুমি ভার্সিটিতে স্কলারশিপে পড়ো তাই তোমার ট্যুরের টাকা টা ভার্সিটি দিচ্ছে

হিয়াঃ এটা আবার কেমন রুল এরকম রুল আছে বলে তো আমি কখনো শুনি নি,,

উজানঃ বিশ্বাস না হলে মকবুল স্যার ক্লাসে আছে ওনাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে আসতে পারো

হিয়াঃ না না অবিশ্বাসের তো কিছু নেই,,আমি বিশ্বাস করি আপনাকে

উজানঃ তাহলে

হিয়াঃ না আমি আসলে

উজানঃ আর কিছু বলবে তুমি এখন হিয়া,,ল্যাব আছে না এখন তোমার যাও ল্যাবে সময় চলে যাচ্ছে

হিয়াঃ হুম ঝিনুক আসলে চলে যাবো,,,,,,বলছি কি ভাইয়া আপনি এই টোকেন দুটো রাখুন আসলে ভার্সিটি টাকা না দিলেও আমি এমনিতেও যেতাম না

উজানঃ কেনো??

হিয়াঃ আমি কিভাবে শ্রাবণকে রেখে,,শ্রাবণকে একা রেখে আমি কখনো কোথাও যায় নি তাই বলছি কি

উজানঃ আমি তোমাকে দুটো টোকেন দিছি হিয়া ভালো করে দেখো

হিয়াঃ ওমা তাই তো,,কিন্তু আপনি কেনো আমাকে দুটো টোকেন দিয়েছেন সবাই কে তো আপনি একটা করে

উজানঃ একটা তোমার আর একটা শ্রাবণের

হিয়াঃ শ্রাবণের মানে!!শ্রাবণ আমাদের সাথে ট্যুরে যাবে নাকি,,,অথোরিটি এটা এলাও করবে??

উজানঃ হ্যা শুধু শ্রাবণ না,,সন্ধির সাথে সন্ধির ছোট ভাই,,রাইসার বোন অনেকেই যাচ্ছে

হিয়াঃ যাচ্ছে বুঝলাম কিন্তু অথোরিটি এলাও করবে এসব,,আমি তো জানি যে

উজানঃ এবার রুল একটু পাল্টেছে,,আর কোনো প্রশ্ন আছে তোমার হিয়া

হিয়াঃ রুল কেনো পাল্টেছে,,আচ্ছা রুল পাল্টাক আর যা খুশি হোক আমি তারপরো যেতে পারবো না,,আমার টিউশন আছে আর তিনদিন টিউশন মিস দিলে এবার সত্যি সত্যি নিঝুমের মা আমাকে দরজা থেকে তাড়িয়ে,,,,

হিয়া আর একটা কিছু বলার আগে উজান রেগে উঠে দাঁড়িয়ে হাতে থাকা ফাইল টা টেবিলে ছুঁড়ে দেয়,,তারপর এক হাতে হিয়াকে হ্যাঁচকা সামনে টেনে এনে পেছনের হোয়াইট বোর্ডটার এক পাশে খুব শক্ত করে চিপে ধরে হিয়ার গলার নিচে বুকের কাছের তিল টার মধ্যে একটা লোভনীয় আলগা কামড় বসা ভেজা চুমু বেশ সময় নিয়ে এঁকে দেয়,,

উজানঃ জামার গলা এতো বড় পড়ছো কেনো তিল টা যাতে আমার চোখে পড়ে ওজন্য,,,,লোভ দেখাও আমাকে,,তখন থেকে বলছি কাজ করতিছি কাজ করতিছি পড়ে কথা বলবো,, এতটুকু বুঝো না তুমি কি হচ্ছিলো মনে আমার এতোক্ষণ,,,,আমি ছাড়া এই তিল টা অন্য কোনো ছেলে দেখে নিলে কি হতো,,ইডিয়ট,,কাল থেকে যেনো এভাবে ওড়না নিয়ে ভার্সিটিতে না আসা দেখি আমি,,,,,,কতো কষ্ট করে স্যারদের বলে নতুন এই রুল টা তৈরি করে শ্রাবণের জন্য টোকেন নিয়ে আসলাম আর ম্যাডামের এখন এই সমস্যা ঔ সমস্যা,,,,যাও আমার সামন থেকে পরশু ট্যুরের আগে আমার চোখের সামনে আর আসবা না,,বেয়াদব একটা,,

উজানের কথায় হিয়া পুরো সুইচড অফ,,কি করলো উজান এটা তার গলার কাছে!!হিয়ার হাত পা কাঁপছে,,উজান হিয়াকে ছেড়ে দিতেই হিয়া এক ছুটে শূন্য বুকে শুকনো কন্ঠে দৌড়ে বেড়িয়ে আসে রুম থেকে,,এসেই ওরনা টা পুরো নিজের গায়ে পেঁচিয়ে নিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টেনে একটু আগের ট্রমা টা বিশ্লেষণ করতে শুরু করে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here