মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 Part-10

0
814

😏 # মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

Part-10

শ্রাবণঃ আমি ভালো ভাইয়া,,ভালো ভাইয়া আমি

হিয়াঃ তুই ভাইয়া ভাইয়া তুই কি

শ্রাবণঃ ভাইয়া আমি আমি আমি ভাইয়া মাঠে

হিয়াঃ শ্রাবণ,,

শ্রাবণঃ বলছি বলছি__একদিন একদিন যখন আমি মাঠে গেছিলাম খেলতে তখন ভাইয়া আমাদের টিমে এসে আমাদের সাথে খেলে গিয়েছিল,,তখন তখন আমার সাথে ভালো ভাইয়ার ভাব হয়ে যায় তখন তখন ভাইয়া আমাকে বলে তুই আর ভাইয়া নাকি একসাথে পড়িস___তারপর তারপর আমি আর ভাইয়া বন্দু(বন্ধু) হয়ে যাই,,তারপর তারপর ঔ ভালো ভাইয়া আমাদের মাঠে মাঝে মাঝে এসে………….

শ্রাবণের মুখে উজানের এসব পাগলামো শুনে হিয়া পুরো থ

হিয়াঃ আমি শুধু ওনাকে থাপ্পড় দিয়েছিলাম বলে উনি তার প্রতিশোধ তুলতে আমার বাড়ি অবধি এসে,,আমার ভাই কে অবধি____কাল যাই শুধু ভার্সিটি ওনার একদিন কি আমার একদিন___বললে তো বলে আমি নাকি ওনার শএু তা শএুর কোথায় কখন কি হলো ওনার কি তাতে, আজব___যাই শুধু,,বাজে লোক একটা,,স্যারদের সামনে ভালো মানুষ সাজা তো,,,উনি যে কতোবার ধরিবাজ কাল বুঝাবো আমি____
_____________

ঝড়ের শেষে পরের দিন অবহাওয়া টা নিতান্তই ঠান্ডা তবে আকাশ যথেষ্ট পরিষ্কার,,রোদের তীব্রতার সাথে বেড়ে উঠে কর্মমুখর মানুষের ব্যস্ততা,,

হিয়া আজ ভার্সিটি এসে মনে মনে ঠিক করে আজ যদি উজান ওকে নিয়ে কোনো রকম আদিক্ষ্যতা শুরু করে তাহলে ও উজানের সব চুল ছিড়ে দিবে,,শএুর উপর এতো দরদ কিসের ওর,,কিন্তু হিয়া কি উজানকে ঝারি দিবে তার আগে উজান ঝড়ের গতিতে এসে দুম করে হিয়ার হাত ধরে টেনে হিয়াকে নিয়ে একটা ফাঁকা ক্লাস রুমের ভেতর ঢুকে পড়ে,,

হিয়াঃ কি করছেননননন আপনিইইইই,,,ছাড়ুন আমাকেএএএ

উজান হিয়াকে দেওয়ালে ঠেসে ধরে পেছন দিক দিয়ে হিয়ার হাত চেপে ধরে

উজানঃ বেয়াদব মেয়ে,,কালকে তোমার জন্য আমি সারারাত ঘুমোতে পারি নি,,

হিয়াঃ আমি আবার কি করলাম!!

উজানঃ কি করো নি হ্যা,,পুরো বিছানায় শুইয়ে নিজের গায়ের গন্ধ মেখে রেখে আসছো,,শুতে গিয়েই আমার…….

হিয়াঃ আমার গায়ের গন্ধ মানে!!(কি সব বলছে ইনি ঘামে ভেজার গন্ধ বলছে না তো,,ছিঃ,,ইয়াক)

উজানঃ মাথায় কি শ্যাম্পু দেও এটা আমার বালিশ জুড়ে তোমার চুলের গন্ধ বের হচ্ছে শুধু,, নাম কি শ্যাম্পুর কি উগ্র গন্ধ

হিয়াঃ সান–সিল্ক–শ্যাম্পু–দেই

উজানঃ কোন বোতল কালো টা না গোলাপি টা

হিয়াঃ বোতল না দু টাকার মিনি প্যাকেট,,যখন যেটা পাই ওটা দেই

উজানঃ হুমমম,,,এখন যে আমি সারারাত ঘুমোতে পারলাম না এখন এটার কি করা উচিৎ

হিয়াঃ আমি কি করে জানবো,,আর আমি কি ইচ্ছে করে আপনার বিছানায় ঘুমিয়েছি নাকি আপনি তো আমাকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়ে আপনার বিছানায়

উজানঃ জানি তো,,নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারছি আমি,,আগামী দশ বারোদিনও যে আমি আর ঔ বিছানায় ঘুমোতে পারবো না সেটা আমি বেশ বুঝতে পারছি,,,কি আর করবো____আচ্ছা বাদ দেও ওসব,,কোথায় যাচ্ছ এখন

হিয়াঃ ক্লাসে

উজানঃ তারপর

হিয়াঃ ল্যাব আছে

উজানঃ ল্যাব শেষ হবে কখন

হিয়াঃ আড়াইটে

উজানঃ তারপর

হিয়াঃ তারপর কি আবার

উজানঃ তারপর কি করবা

হিয়াঃ টিউশনে যাবো

উজানঃ কোন টিউশনে রাইমাদের বাসা,,রিফাত দের না গুনগুন দের বাড়ি কোনটা

হিয়াঃ ,,,রি__ফাত__দের

উজানঃ আচ্ছা ওসব রিফাত সিফাতকে আজকে পড়াতে যেতে হবে না,,ল্যাব শেষে ক্যান্টিনে দাঁড়িয়ে থাকবে আমি তোমাকে নিতে আসবো

হিয়াঃ নিতে আসবো মানে (রাগে)

উজানঃ আস্তে,,চেঁচাচ্ছ কেনো

হিয়াঃ আরে চেঁচালাম আবার কোথায় আর আপনি আমাকে কেনো নিতে আসবেন

উজানঃ কিছু কাজ আছে

হিয়াঃ আমাকে দিয়ে এতো কি কাজ আপনার,,সারুন তো আমার ক্লাসের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে

উজানঃ ধরে রাখছে কে তোমাকে,,যাও ক্লাসে

হিয়াঃ সারুন নাআআআ

উজানঃ আচ্ছা সারলাম,,,,এসো কিন্তু আমি অপেক্ষা করবো

হিয়াঃ আমি আসবো নাআআআআআ

উজানঃ তুমি আসবে

হিয়াঃ না না না না আমি আসবো নাআআআআ

বলেই হিয়া উজানকে ধাক্কা দিয়ে রুমটা থেকে বেড়িয়ে এপাশ ওপাশ তাকিয়ে ক্লাসের দিকে হাঁটতে শুরু করে

_____________

ল্যাব শেষে হিয়া ঝিনুক সহ ক্যান্টিনের সামনের রাস্তা টা দিয়ে হাঁটতে থাকে,,তখন উজান ক্যান্টিনের সামনে আসতে বলেছিলো ওজন্য না কিন্তু আসলে ভার্সিটি থেকে বের হবার মেইন দরজা টা ক্যান্টিনের রাস্তা টা দিয়েই পড়ে তার জন্য,, ঝিনুক হিয়া গল্প করতে করতে হাটছে এমন সময় শ্রাবণ বুবু বুবু বলতে বলতে দৌড়ে এসে হিয়াকে জাপ্টে ধরে,,শ্রাবণ কে দেখে হিয়া তো পুরো শকড,,শ্রাবণ এখানে কি করছে আজব

হিয়াঃ এই এই এই তুই তুই কি করছিস এখানে,,কে তোকে এখানে নিয়ে আসলো,,তুই ঠিক আছিস তো ভাই,,,,কার সাথে এসেছিস কেউ তোকে বাড়িতে কোনো কিছু করে নি তো,,রিমা রিমা আপু কোথায়___এই ছেলে চুপ করে আছিস কেনো কথা বল

ঝিনুকঃ আরেএএ তুই থামলে তো বাচ্চা টা কথা বলবে,,,তোর না সবসময় একটু বেশি টেনশন___কিইইই রেএএ শ্রাবণ ভাইয়া নিয়ে এসেছে না তোকে এখানে

হিয়াঃ ভাইয়া কোন ভাইয়া

হিয়ার প্রশ্নের উত্তরে উজান পেছন থেকে এসে হিয়ার মাথায় একটা গাট্টা মারতেই হিয়া আউচ বলে চিৎকার করে উঠে যেই পাশ ফিরতে যাবে ওমনি উজান হালকা করে হিয়ার নাক টা টেনে ধরে

হিয়াঃ কি হচ্ছে কি

উজানঃ এতো প্রশ্ন কেনো হ্যা তোমার,,শ্রাবণ আমার সাথে এসেছে,,আমি গিয়ে শ্রাবণকে নিয়ে আসছি,,শান্তি

হিয়াঃ আপনি কেনো

উজানঃ এমনি ইচ্ছে হচ্ছিল তাই

হিয়াঃ আপনার ইচ্ছে কেনো,,শ্রাবণ বাড়ি চল,,আমি তোকে দিয়ে টিউশন পড়াতে যাবো

ঝিনুকঃ উমহুম আজ কোনো টিউশনে যেতে হবে না,,এখন তুই আমাদের সাথে ভাইয়ার ঔ ডক্টর আঙ্কেলের চেম্বারে মানে হসপিটালে যাবি ওখানে তোর প্রেসক্রিপশনে লিখে দেওয়া টেস্ট গুলো করানো হবে,,তারপর তারপর ভাইয়া আজ আমাদের দুপুরে লাঞ্চ করাবে,,ততোক্ষণে রিপোর্টো এসে যাবে তারপর আমরা রিপোর্ট তুলে ডক্টরকে দেখিয়ে একটু ঘুরেফিরে তারপরররর বাড়ি ফিরবো

হিয়াঃ পাগল তুই!!আমি আজ দুদিন ধরে কোনো টিউশনে যাই না আজ না গেলে ওরা নতুন টিচার খুঁজে আমাকে দরজা থেকেই তাড়িয়ে দেবে

ঝিনুকঃ দিলে দিবে,,এখন তো তোর জন্য আমাদের জিজু আছে না

হিয়াঃ হোয়াট জিজু,,,,তুই যা তো ঝিনুক বাড়িতে,,আমাকে এখন ফিরতে দে

ঝিনুকঃ মোটেই না,,এখন তুই আমাদের সাথে যাবি এটাই ফাইনাল

হিয়াঃ তুই কেনো বুঝতে চাইছিস না ঝিনুক,,টেস্ট গুলো করানোর মতো টাকা আমার নেই,,আর কোনোভাবে একটা টিউশন হাত ছাড়া হলে আমি কি দিয়ে চলবো একটু বুঝ

ঝিনুকঃ আরে তোকে কে টাকা দিতে বলছে,,,তুই কেনো খামোখা এতো পেইন নিচ্ছিস বল তো

উজানঃ আবার তোমাদের ফিসফাস শুরু হলো

হিয়াঃ ইয়ে মানে আমরা

উজানঃ ঝিনুক

ঝিনুকঃ হ্যা ভাইয়া

উজানঃ তুমি আর হিয়া এক রিক্সায় আসো,,আমি শ্রাবণকে নিয়ে বাইকে আসছি

হিয়াঃ ভাইয়া আপনি আমার কথা টা শুনুন

উজানঃ হিয়া শুনো একটা কথা বলি

হিয়াঃ জ্বী বলেন

উজানঃ সেদিন তোমার সাথে যা হয়েছিল তার পুরোটার সাথে আমি কোনো না কোনো ভাবে ইনভলভ ছিলাম,,তারপর আঙ্কেল তোমাকে দেখে বললো তোমার পেসার লো শরীর টাও ঠিক ভালো না তাই আমি চাইছি অন্তত টেস্ট গুলো করিয়ে

হিয়াঃ হ্যা কিন্তু আমার কাছে ওসব টেস্ট ভিজিট এসবের জন্য বাড়তি কোনো টাকা নেই,,একটু বুঝুন

উজানঃ আমি কি চেয়েছি একবারো তোমার কাছে ওসব টাকা

হিয়াঃ চান নি কিন্তু আমিই বা আপনার থেকে অহেতুক টাকা নিতে যাবো কেনো

উজানঃ আচ্ছা বেশ আজ যা খরচ হবে তুমি পরে কোনো এক সময় আমাকে পরিশোধ করে দিও,,খুশি

হিয়াঃ তা হয় না ভাইয়া,,তার উপর আমার টিউশন

উজানঃ হিয়া প্লিজ এস এ সিনিয়র আমি তোমাকে রিকুয়েষ্ট করছি,,প্লিজ আজকের দিন টা একটু ম্যানেজ করে নেও,,প্লিজ

ঝিনুকঃ তুই এমন কেনো হিয়া,,ভাইয়া কিন্তু আজ অবধি কোনো মেয়ের কাছে এভাবে রিকুয়েষ্ট করে নি শুধু তোর কাছে সে রোজ রোজ কোনো না কোনো কারণে মাথা নত করে,, ছেলে টাকে একটু সম্মান কর

হিয়াঃ ঝিনুক আমি ওনাকে সম্মান করি,,যথেষ্ট সম্মান করি কিন্তু তাই বলে

ঝিনুকঃ হিয়া প্লিজ

হিয়াঃ না ঝিনুক এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে

ঝিনুকঃ হিয়া,,আমি তোকে রিকুয়েষ্ট করছি আমার রিকুয়েষ্ট টা রাখ অনন্ত

হিয়াঃ (একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে) ঠিক আছে,,কিন্তু এটাই লাস্ট এরপর আমি আর কখনো তোদের এই বাজে রিকুয়েষ্ট রাখবো না___আর ভাইয়া

উজানঃ ____

হিয়াঃ আজ যতোটুকু টাকা খরচ হবে আমি তার সব টুকু আপনাকে পরিশোধ করে দিবো,,তখন কিন্তু আপনি টাকা টা নিতে না করতে পারবেন না

উজানঃ ঠিক আছে সুদ সহ ফেরত দিও,,হ্যাপি

শ্রাবণঃ এই না না,,ভালো ভাইয়া তুমি জানো না সুদ নেওয়া তো হারাম,,আমাকে বুবু বলেছে ওটা পাপ কখনো কারো থেকে সুদ নিতে নেই

শ্রাবণের কথায় তিনজনে হেঁসে দেয়,,ঝিনুক হিয়াকে নিয়ে হসপিটালে আসে আর উজান শ্রাবণকে নিয়ে,,হিয়ার টেস্ট করানো হয় আর টেস্ট করাতে গিয়ে তিন সিরিঞ্জ রক্ত নিতেই হিয়া পুরো কাহিল,,শরীরে যা একটু রক্ত ছিলো সব বোধ হায় টেস্ট করাতেই চলে গেলো,,

নার্সঃ পেশেন্ট কে হয় আপনার

উজানঃ আমার ওয়াইফ!!

উজানের মুখে আমার ওয়াইফ কথা টা শুনেই শ্রাবণ আর ঝিনুক চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে উঠে,,

নার্সঃ আপনার ওয়াইফের নাম টা

উজানঃ হিয়া মুনতাসীর আহমেদ

নার্সঃ আপনার নাম আর ফোন নাম্বার

উজানঃ উজান শাহরিয়ার ফোন নাম্বার____

নার্সঃ সার নেম আলাদা আপনার শাহরিয়ার আপনার ওয়াইফের আহমেদ

উজানঃ জ্বী,,বিয়ে হলেই মেয়ে দের স্বামীর নাম ইউস করতে হবে এমনতো কোন রুল নেই তাই না

নার্সঃ না,,,আপনি এই কাগজ টা নিয়ে রিসিপশনে জমা দিয়ে বাকি টাকা টা পেমেন্ট করে দিন

উজানঃ থ্যাংকস,,ঝিনুক আসো

উজান ঝিনুক আর শ্রাবণকে নিয়ে আগাতে ধরলে শ্রাবণ আর ঝিনুক খিলখিল করে হেঁসে উঠে

ঝিনুকঃ বাহ বা ভাইয়া গার্লফ্রেন্ডই বানাতে পারলেন না তার আগেই বউ বানিয়ে দিলেন

উজানঃ গার্লফ্রেন্ড!!এসব এখন ওল্ড ফ্যাশন শালি সাহেবা,,,আমি আর তোমার বেস্টি না হয় বিয়ের পরই প্রেম করবো

উজান রিসিপশনে টাকা জমা দিয়ে হিয়ার কাছে আসে,,হিয়া এতোক্ষণ ওর হাত ভাঁজ করে রিসিপশনের সামনের চেয়ার গুলোতে বসে বসে এদের তিনজনের হাসি তামাশা দেখছিলো

হিয়াঃ এই এদিকে আয় তো,,আয় বলছি

শ্রাবণঃ বুবুউউ

হিয়াঃ তখন তুই আর ঝিনুক আমাকে দেখে ওরকম করে হাসছিলি কেনো

শ্রাবণঃ কখন

হিয়াঃ একটা কানের নিচে থাপ্পড় বসাবো,,,বুবুর সাথে ঢং করিস,,

শ্রাবণঃ (টপাটপ গাল দুটো চিপে ধরে) বলছি বলছি,,তখন ঔ নাস(নার্স) টা বললো তুই ভাইয়ার কি হোস তো ভাইয়া বললো তুই নাকি ভাইয়ার,,,হে হে

হিয়াঃ হাসতিছিস কেনো বাঁদরের মতো এ-র কম করে,,এগুলো কি হাসি

শ্রাবণঃ ভালো ভাইয়া শিখাইছে

হিয়াঃ তোকে আর তোর ভাইয়াকে তো আমি,,,,,এখন বল ভাইয়া ঔ মহিলাটাকে কি বলেছে আমি কি হই ভাইয়ার

শ্রাবণঃ বলেছে ওয়াইপ(ওয়াইফ)হোস মানে বউ বউ

শুনেই হিয়া আঁতকে উঠে ভীষম খেতে শুরু করে,,ওকে ওয়াইফ হিসাবে পরিচয় দিয়েছে উজান,,উজানের মাথা ঠিক আছে তো,,কি করবে হিয়া এই লোকটাকে নিয়ে,,হিয়ার মতে উজান তো দিন দিন আরো খামখেয়ালি পনা হয়ে যাচ্ছে,,কখন কি করছে কি বলছে কোনো হুঁশ নেই

_______________

ঝিনুকঃ খা না একটা কিছু হিয়া,,এরকম করিস কেনো তুই সবসময়

হিয়াঃ জাস্ট মুখ টা বন্ধ করে তাড়াতাড়ি সব খাবার শেষ কর

শ্রাবণঃ বুবু খা না,,আমার খুব খুদা পেয়েছে তুই না খেলে আমি কি করে

হিয়াঃ বাসায় দিনের বেলা তো একা একা সব নিয়েই খাস,মনে কর এই রেস্টুরেন্ট টা তোর বাড়ি

ঝিনুকঃ মনে করে কি হবে,,সবাই তোর মতো নাকি,,খা না হিয়া,,দেখ ভাইয়া কি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তোর দিকে

হিয়াঃ ওনার চোখ উনি তাকিয়ে আছে তোর কি

ঝিনুকঃ তোর ভয় করছে না

হিয়াঃ উনি কি বাঘ না ভাল্লুক যে আমার ওনাকে ভয় করবে

ঝিনুকঃ তুই খাবি না তো,,তিন সিরিঞ্জ রক্ত নিলো একটু নিজের শরীর টার কথা ভাব

হিয়াঃ ঝিনুক প্লিজ,,,এমনিতে ওখানে বিল হয়ে আছে চার হাজারের কাছাকাছি আমি কিভাবে এতো গুলো টাকা ওনাকে শোধ করবো,,তার উপর এসব___ঝিনুক আমার লাইফ টা আর বাকি দশটা মানুষের মতো সাধারণ না,,এসব ট্রিটমেন্ট,,এতো দামি একটা রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া এসব আমার সাথে যায় না ঝিনুক___তুই আর ভাইয়া যে এসব করছিস না আমার এসবে একটুও ভালো লাগছে না,,তোদের এই অতিরিক্ত ভালোবাসা আমার অক্ষমতাটাকে আরো মনে করিয়ে দেয় সবসময়

ঝিনুকঃ হিয়া আমি বা ভাইয়া কিন্তু কখনো সে ভাবে তোকে

হিয়াঃ আমি জানি ঝিনুক,,, একবার ঔ মেয়ে স্টাফ টাকে দেখ আমার চাইতেও দামি একটা মান সম্মত জামা পড়ে ডিউটি করছে আর আমার দিকে তাকা,,আমার তো ওড়না টারো এক পাশ টা পুরো ছিড়ে আছে___আমাকে এসব জায়গায় মানায় বল

ঝিনুকঃ হিয়া

হিয়াঃ প্লিজ ঝিনুক,,,,আমি বাহিরে ভাইয়ার বাইকের সামনে ওয়েট করছি তুই খেয়ে আয়

ঝিনুকঃ হিয়া শোন আমার কথা টা,,হিয়া,,হিয়া_____ভাইয়া এভাবে কি ভাবে হবে

উজানঃ__________ এভাবে হবে না,,হিয়াকে বুঝতে হবে হিয়া নিজে কি পারে,,মানুষ হিয়ার চাইতেও খারাপ পরিস্থিতি থেকে নিজেকে তৈরি করে ঝিনুক,,,আর হিয়ার সাথে তো আমি আছি এখন,,হিয়াকে আমি যতোটা যা পারি আগলে রাখবো,,এখন শুধু হিয়া একটু বুঝলে আমার শান্তি

ডক্টর আঙ্কেলের পর পর দুটো ওটি তাই উজান ঠিক করে রিপোট গুলো তুলে এনে কাল এসে দেখিয়ে যাবে,,উজান ঝিনুককে রিকশার তুলে দেয়,,আর হিয়াকে বাইকে ড্রপ করতে চাইলে হিয়া নিষেধ করে বলে সে শ্রাবণকে নিয়ে একা বাড়ি ফিরতে পারবে,,উজান বুঝে হিয়া একটু বেশি একরোখা টাইপ হিয়াকে ঘুতিয়ে কোনো লাভ নেই,,তাই উজানো রাজি হয়ে যায়,,কিন্তু হিয়ার রিক্সার পেছন পেছন এসে ঠিক হিয়াকে নজরবন্দি করে

____________________
একদিন পর
ক্লাস ছুটি হয় ঠিক দুটোর কাছাকাছি,সারারাত বৃষ্টির পর সকালের আবহাওয়া টা নিয়ম করে বেশ ভালোই ছিলো,রোদ ছিলো ঝলমলে,এই রোদ দেখে কেউ বলবে না এখন এই দুপুর টাইমে এরকম আচমকাই আবার আকাশ খারাপ করবে,বাতাস বইছে তুমুল বেগে,ভার্সিটি ক্যাম্পাসের উল্টোদিকের রাস্তা টা ধরে হাটছে হিয়া,যদিও উল্টোদিকের এই রাস্তা টায় সচারাচর কেউ যাতায়াত করে না তবে বড় বড় জিপ,মোটরবাইক আসে যায়,,,,

হিয়াঃ বাড়ি পাল্টে এই আরেক ঝামেলা হয়ে গেছে,এদিক দিয়ে গেলে ওদের বাড়িতে যেতে সময় লাগবে না,,,কিন্তু রাস্তা টা কি রকম ফাঁকা, গা তো হাঁটতেই শিউরে উঠছে,ধুর

হিয়া দ্রত পা চালিয়ে সামনে আগাতে শুরু করে,চারপাশে বড় বড় গাছ দিয়ে ভরা,তার উপর এই মেঘলা আকাশ,কি রকম এক অন্ধকার পরিবেশ,সাথে ঝড়ো বাতাস যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে,হিয়া তো মনে মনে শুধু একটাই দোয়া পড়ছে আগে যেনো সে বাড়িতে পৌঁছে তারপর যেন বৃষ্টি আসে,আগে যেনো সে বাড়িতে পৌঁছে তারপর যেন বৃষ্টি আসে,কিন্তু ঔ যে যেখানে বাঘের ভয় সেখানে সন্ধ্যাে হয়,শুরু হয় তুমুল বৃষ্টি,হিয়া কি করবে বুঝে উঠতে পারে না,সাথে আবার নেই কোনো ছাতাও,হিয়া ওভাবেই কোনোরকম দৌড়ে একটা ভাঙা বিল্ডিংএ গিয়ে আশ্রায় নেয়,ভার্সিটি ক্যাম্পাসের এই পেছনে এরকম পুরাতন অনেক ভাঙ্গা বিল্ডিং আছে,কেনো এই বিল্ডিং গুলো করা আর কেনোই বা এখন এগুলো পড়ে আছে হিয়া জানে না,জানবার প্রয়োজনো নেই তার

হিয়াঃ আরেএএ বৃষ্টি রে আর দশটা মিনিট পর তোর আসলে কি সমস্যা ছিলো ভাই,,একটু আর একটু আকাশে থেকে গেলে কি হতো না তোর,,আসছিস আসছিস টিউশনে যাবার আগে প্লিজ থেমে যা,,নাহলে ওর মা আমার টিউশনের টাকা এবার অর্ধেকেই কেটে নিবে প্লিজ প্লিজ

হিয়া নিজ মনে কথা গুলো বলতে থাকে আর দু হাতে নিজের গায়ে লেগে যাওয়া বৃষ্টির পানি গুলো মুছতে থাকে,হঠাৎই এমন সময় তিন চারটে নেশা করা টাইপ ছেলে কোথা থেকে বের হয়ে হিয়ার পেছনে এসে দাঁড়ালে হিয়ার অন্তরাত্মা কেঁপে উঠে নিমিষে

হিয়াঃ এই আপনারা কোথা থেকে এখানে আসলেন,,,,,কি চাই আমার কাছে আপনাদের,প্লিজ আগাবেন না,,,,,একদম না

ছেলে গুলো নোংরা নোংরা কথা বলতে শুরু করে,এর মধ্যে একটা ছেলে হাতে থাকা সিগারেট টা ফেলে যেই হিয়ার দিকে এগুতে ধরবে ওমনি হিয়া পালাতে চেষ্টা করে কিন্তু পারে না,পাশে থাকা আরেকটা ছেলে হিয়ার হাত ধরে হিয়াকে থামিয়ে দেয়,হিয়া ভয়ে কেঁদে উঠে কাকুতি মিনতি শুরু করে কিন্তু ওরা হিয়ার হাত ছাড়ে না,ছেলে গুলো আর বেশি কিছু করতে যাবে তার আগেই ঝড়ের বেগে হাজির হয় গল্পের নায়ক উজান,,,,,উজান এসে ওখানকার একজন কে উদুমে একটা ঘুষি বসিয়ে দিয়ে ছেলেটার কলার চেপে ধরে,পাশে থাকা ছেলে গুলো উজান কে দেখেই পিছিয়ে যায় মুহুর্তে

উজানঃ আমার পারমিশন ছাড়া যেখানে কেউ এই ক্যাম্পাসের মেয়েদের দিকে চোখ তুলে খারাপ নজরে তাকাতে পর্যন্ত ভয় পায়,,,,,জানোয়ারের বাচ্চা,সেখানে তুই কি না আমার কলিজার গায়ে হাত দিচ্ছিস,,

পাশে থাকা একটা ছেলে উজানের সামনে হাত জোর করে বলে ভাই ভুল হইছে এবারের মতো মাফ করে দেন,কিন্তু উজান কারো কথা শুনে না,ইচ্ছে মতো কিল বসিয়ে দেয় সব কটার শরীরে,শেষে হঠাৎই হিয়ার চোখের দিকে তাকাতে হিয়ার চোখ ভর্তি পানি দেখে উজান ওদের ছেড়ে দেয়,ছেলে গুলো পালিয়ে যায় এক ছুটে,তবুও উজানের রাগ কমে না,উজানের চোখের দিকে তাকানোর সাহস হিয়ার নেই এই মুহুর্তে,মাথা নিচু করেই হিয়া আলতো করে বলে উঠে থ্যাংকস,কিন্তু হিয়ার এই থ্যাংকসে উজানের কোন ভাবাবেগ হয় না,সে তখনো সেই রাগী রাগী চোখ দিয়ে গিলে খেতে থাকে হিয়াকে

উজানঃ কেনো এসেছো এদিকের রাস্তায়,নিজেকে বিলিয়ে দিতে(ঝারি দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে)

হিয়াঃ____

উজানঃ জানো না এদিকে সেরকম লোকজন থাকে না,,,,কিসের জন্য এসেছিলে,আমি না আসলে কি হতো কোনো ধারণা আছে

হিয়া তখনো মাথা অবনত করে কেঁদেই যাচ্ছে

উজানঃ খবরদার আমার সামনে এরকম ন্যাকা কান্না কানবা না,,,,কি মনে করো তুমি নিজেকে সব একাই সামলে নিতে পারবা,,পৃথিবীতে সব কিছু খুব সোজা তাই না

হিয়াঃ (চোখ মুছে তোতলে তোতলে)ঔ টিউশন পড়াতে যাবো বলে দেড়ি হচ্ছিলো তার উপর এই বৃষ্টি তাই আমি এ রাস্তা দিয়ে,,,,এদিক দিয়ে গেলে তাড়াতাড়ি হতো এই ভেবে

উজানঃ জাস্ট শেট আপ,তোমার এইসব ব্যাখা আমার মোটেও শুনতে ইচ্ছে করছে না

হিয়া আর কিছু বলে না,চুপচাপ পেছন ঘুরে বৃষ্টি থামার অপেক্ষায় বাহিরে তাকিয়ে থাকে,উজানো নিশ্চুপ,খুব রাগ হচ্ছে ওর হিয়ার উপর,এতো কেনো অযত্ন ওর নিজের প্রতি,কেয়ারলেস মেয়ে একটা

বৃষ্টি এখন হালকা কমে ঝিরিঝিরি পড়ছে,হিয়া কি বের হবে কি হবে না বুঝে উঠতে পারছে না,এদিকে তিনটে বাজতে হাতে শুধু দশমিনিট বাকি,রিকশাতে উঠলেও ১৫মিনিট লাগবে যেতে,এদিকে উজানো যে ক্ষেপে আছে,ধুর আর এই জ্বালা ভালোই লাগে না হিয়ার

হিয়া কাপাকাপা পায়ে এক পা আগাতেই উজান হিয়ার হাত মুঠ করে ধরে নেয়

উজানঃ কোথায় যাচ্ছ আবার(রাগে)

হিয়াঃ টিউশনে যাচ্ছি,সময় নেই,দেড়ি হয়ে গেলে তখন আবার আমার বাড়ি ফিরতে দেড়ি হয়ে যাবে

উজানঃ যেতে হবে না আজ পড়াতে,এখান থেকে একদম সোজা বাড়ি যাবা

হিয়াঃ এই না না,টিউশন মিস দিলে ওরা আমার

উজানঃ ওরা কি তোমার

হিয়াঃ কিছু না,প্লিজ আপনি এরকম অন্যায় আবদার করবেন না,আমার পড়াতে যাওয়া টা খুব জরুরি

উজানঃ জরুরি যখন তখন আমিও যাবো তোমার সাথে,,যাবো

হিয়াঃ পাগল আপনি

উজানঃ তাহলে চুপচাপ আমার সাথে আসো,,কাজ আছে আমার কিছু

হিয়াঃ আবার কাজ!!!!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here