শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক #পর্বঃ১১ #Arshi_Ayat

0
450

#শহরজুড়ে_প্রেম_নামুক
#পর্বঃ১১
#Arshi_Ayat

তারপর কেটে গেলো কিছুদিন।এরমধ্যে বেশ কয়েকটা ইন্টারভিউ দিয়েছে স্বর্ণ।এখনো কোনোটাতেই ডাক আসে নি।চাকরি হোক বা না হোক সামনের মাসেই অন্য একটা বাসা খুঁজবে।টিউশনির টাকায় হয়ে যাবে কোনোমতে।সবকিছু ভেবেই এখনো কাউকে কিছু বলে নি স্বর্ণ।সুমনকেও না আর ওর ভাই-ভাবীকেও না।আলাদা হয়ে যাওয়ার পর বলবে।এখন বলবে বাসাটাকে নরক করে ফেলবে।মা,মেয়ে কাউকেই শান্তি দেবে না দু’দন্ড।বেশ কিছু কারণ ভেবেই স্বর্ণ চুপচাপ তবে আরব বলেছিলো সবাইকে সবটা জানিয়ে দিতে,ওর সিদ্ধান্তের কথা জানাতে।ও একজন প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে এভাবে তো অন্যায় কিছু চাপাতে পারে না।স্বর্ণ তখন সায় দিয়ে বলেছিলো জানাবে কিন্তু বাসায় এসে চিন্তা ভাবনা করার পর মনে হলো না কাজটা করা ঠিক হবে তাই চেপে গেলো তবে আরব জিজ্ঞেস করতেই মিথ্যা বলে দিলো।মাঝেমধ্যে অপরাধ বোধ হয় স্বর্ণের।ও নিরীহ একটা ছেলেকে দিনের পর দিন ঠকাচ্ছে।মিথ্যে বলছে আর ছেলেটাও বিনাবাক্যে বিশ্বাস করছে।কেন এই মানুষগুলো দেরিতে আসে জীবনে?ভেঙেচুরে যাবার পরই কেনো আসে?দীর্ঘশ্বাস ফেলে স্বর্ণ।

লাস্ট টিউশনি’টা করিয়ে বের হতে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো।ছাত্রীর বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটতে লাগলো স্বর্ণ।দু-তিন মিনিট হাঁটলেই বাস স্টপ।কিন্তু কিছুটাদূর হাঁটতেই অদূরে সুমনকে দেখতে পেলো।ওর দিকেই আসছে।স্বর্ণ হাঁটা থামিয়ে দিলো।সুমন ওর সামনাসামনি এসে দাঁড়ালো।রুষিত স্বরে বলল,’তোমার ফোন বন্ধ কেন?কতবার কল করেছি আইডিয়া আছে?’
স্বর্ণ ইতঃস্তত স্বরে বলল,’চার্জ ছিলো না।’
‘চার্জ ছিলো না নাকি ইচ্ছে করে বন্ধ করে রাখো?’
স্বর্ণ অন্যদিকে চেয়ে বলল,’চার্জ ছিলো না আসলেই।’
এবার থমথমে মুখশ্রী ফুটিয়ে তুলে বলল,’চলো,এক জায়গায় যেতে হবে এখন আমাদের।’
‘কোথায়?’
‘অফিস পার্টি।’
‘হ্যাঁ তো আপনি যান।আমি কেন যাব?’
‘পুরো অফিস জানে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে।তাই আমার কলিগরা চাইছে হবু বউয়ের সাথে দেখা করতে।’
‘কিন্তু আমার যেতে মন চাইছে না।’
‘তোমার মতামত শুনতে চাই নি আমি।তুমি এখন যাবে মানে যাবেই।’
স্বর্ণ ভ্রু কুঁচকে অদ্ভুত নয়নে তাকালো সুমনের দিকে।এমন অধিকার ফলাচ্ছে কেন লোকটা?যেতে ইচ্ছে করছে না তাও নাকি যেতে হবে।স্বর্ণ বেশ শান্ত গলায় উত্তর দিলো,’দেখুন,সারাদিন ক্লাস করে প্রাইভেট পড়িয়ে আমার আর এতটুকুও শরীর কুলচ্ছে না।আমি যেতে পারবো না,সরি।’
কথাটা বলে স্বর্ণ দাঁড়ালো না।পাশ কেটে চলে যেতেই নিচ্ছিলো কিন্তু সুমন শক্তকরে ওর হাত ধরে ফেললো।কটমটিয়ে বলল,’তুমি যাবে।’
স্বর্ণ নিজের হাতটা ওর হাতের মুঠো থেকে ছিনিয়ে নিলো একপ্রকার।অতঃপর একরাশ ঘৃণার দৃষ্টি নিক্ষেপ করে জোর কদমে চলে গেলো বাস কাউন্টারে।লোকটা এত অসভ্য!কবে যে মুক্তি পাবে এর থেকে!

বাড়িতে এসেই শুনলো ভাইয়া,ভাবি পার্টি এটেন্ড করতে গেছে।আর আজমাইনকে নিহারিকা খানমের কাছে রেখে গেছেন।প্রায় সময়ই ওরা বাইরে কোথাও গেলে আজামাইনকে বাসায় রেখে যায়।ছেলেটা প্রথম প্রথম কাঁদত,মন খারাপ করতো কিন্তু এখন কিছু বলে না চুপচাপ থাকে।এই ছোটো বয়সেই বুঝে গেছে কেঁদেকেটে লাভ নেই।

স্বর্ণ ফ্রেশ হয়ে খেয়ে ঘুমিয়ে নিলো ঘন্টাখানেক।ঘুম থেকে উঠে রাতের জন্য খিচুড়ি রান্না করলো আর ইলিশ ভাজলো।ভাই-ভাবী তো খেয়েই আসবে।শুধু ওদের তিনজনের জন্যই রাঁধবে।রান্না,খাওয়া শেষে আজমাইনকে ঘুম পাড়িয়ে ঘরে আসতেই দেখলো রাত সাড়ে এগারোটা বাজে।সবকিছু গুছিয়ে নিজের ঘরে এসে বসলো ক্লাসের নোটগুলো নিয়ে।নিহারিকা খানমের শরীরটা আজকে ভালো না বেশি তাই তিনি খেয়েই শুয়ে পড়েছেন।

নোটসগুলো দেখতে দেখতেই শুনতে পেলো ফোন বাজছে।স্ক্রিনে আরবের নাম।স্বর্ণ রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে আরব বলল,’খেয়েছো?’
‘হ্যাঁ,তুমি?’
‘হ্যাঁ একটু আগেই।কি করছো?’
‘নোটসগুলো দেখছিলাম।’
‘বাহ!জানো আমি কি করছিলাম?’
‘কি?’
‘ভাবছিলাম সংসার করতে কি কি লাগে!কারণ আমরাও তো করবো তাই আর কি আগেই ভাবা উচিত।’
আরবের এমন ছেলেমানুষী কথা শুনে স্বর্ণ হেসে ফেললো।বলল,’তো ভবেছো কি কি লাগবে?’
‘হ্যাঁ ভেবেছি তো!আসলে সংসার করতে তেমন কিছুই লাগবে না।শুধু তুমি’টা লাগবে।’
স্বর্ণ হাসলো।বিষন্ন হাসি!ছেলেটা কত স্বপ্ন দেখছে,আশা বুনছে!কিন্তু স্বর্ণ ওকে কিছুই দিতে পারবে না।ওর স্বপ্নগুলোর সঙ্গী হতে পারবে না।ছেলেটা এত পাগল কেন?কখনো কখনো ছেলেটার জন্য এত মায়া হয়!কেন ভালোবাসতে গেলো ওর মত মেয়েকে?
এরপর!এরপর আর কি?ছেলেটা স্বপ্নালু চোখে বুনতে লাগলো স্বপ্নদের ইন্দ্রজাল।আর মেয়েটা ওপর প্রান্তে দীর্ঘশ্বাস ফেলছে আর বারবার উদাস হচ্ছে।

একমুঠো নরম রোদের আলো মুখে পড়তেই ঘুমটা আলগা হয়ে এলো স্বর্ণের।কাল রাতে কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।এরপর আর কেউই কল কাটে নি!অপরপ্রান্ত হতে আরবের শ্বাস-প্রশ্বাসের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।কথা বলতে বলতে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে ছেলেটা।স্বর্ণ ফোন’টা কেটে দিয়ে ফ্রেশ হতে চলে গেলো।ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখলো ফোন বাজছে।স্ক্রিনে ভাইয়ার নাম্বার।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ভাইয়া ক্লান্ত গলায় বলল,’আমরা হাসপাতালে।সুমনকে কে যেনো প্রচুর মেরেছে কাল রাতে।রাস্তায় পড়েছিলো।’

চলবে……

(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।
কি মনে হয়?নতুন কেউ আসবে নাকি?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here