ধারাবাহিক_গল্প #হ্যাঁ_তোমায়_ভালোবেসেছিলাম #শেষ_পর্ব #আসেফা_ফেরদৌস

0
511

#ধারাবাহিক_গল্প #হ্যাঁ_তোমায়_ভালোবেসেছিলাম
#শেষ_পর্ব
#আসেফা_ফেরদৌস

তুমি এবং তোমার সঙ্গে জুড়ে থাকা সবকিছুকে আপন করে নিয়েছি আমি, মিলেমিশে গিয়েছি এই সংসারের সঙ্গে! এবং ধীরে ধীরে উপলব্ধি করেছি, তুমি আমাকে প্রচন্ড ভালোবাস, যতটা ভালো আমি তোমাকে বাসি তারচেয়েও বেশি আসলে! এবং তখনই, তখনই আমি থমকে গেলাম। আমার অতীতটাকে তোমার সামনে আমি টেনে আনতে চাইনি সচেতনভাবেই, মনে হতো, যাকে তুমি এত ভালোবাস সে একসময় অন্য‌কাউকে প্রচন্ড ভালোবাসত, এই সত্যটা তুমি সহজভাবে নিতে পারবে না। জানা ছিল না তুমি ঠিক কীভাবে রিঅ্যাক্ট করবে তবে ভীষণ কষ্ট যে পাবে এটা আমি জানতাম! সেজন্যই কখনো ব্যাপারটা তোমাকে বলতে চাইনি।
তবে সত্য বোধহয় বেশিদিন চেপে রাখা যায় না। নয়ত দশ‌ বছরে যাকে কখনো দাবা খেলা ছেড়ে উঠতে দেখলাম না,সে সেদিন, সেসময়ই কেন উঠবে, কেন খুঁজতে আসবে আমাকে!
সে যাইহোক, দশ বছর অনেক লম্বা সময ফয়সাল, এরমধ্যে একসঙ্গে আমরা জীবনের অনেক উত্থান পতন দেখেছি, পরস্পরের আরও বেশি কাছে এসেছি, সহজ হয়েছি, আপন হয়েছি। সত্যি বলছি, এত হাসি, আনন্দ, প্রাপ্তি এবং ভালোবাসার মাঝে আমার অপূর্ণ স্বপ্নগুলোর জন্য খুব একটা হাহাকার আর ছিল না। সেজন্যই কথাগুলো তোমাকে বলা হয়নি। কেননা, বলতে গেলেই তোমার প্রশ্ন বাড়বে, যার উত্তরে কখনো না কখনো অন্তরের প্রসঙ্গ তো আসতেই, যেটা আমি চাইনি। আমার অতীত, অতীতের ভালোবাসা এসব বিষয়ে সোজাসুজি, কিংবা সরাসরি উত্তর আমি কখনোই দিতে পারিনি তোমাকে, তবে আজ মনে হয়, আমার উদ্দেশ্য যাই থাকুক কিন্তু ব্যাপারটা তোমার প্রতি অন্যায় হয়েছে। সরি!
যাইহোক, আগের কথায় আসছি। এই দশ বছরে জীবনের নানা অধ্যায় পেরিয়ে আসতে আসতে আমাকে ঘিরে তোমার আবদারও বেড়েছে বেশ। আর সত্যি বলতে জীবন তো শুধু আনন্দের নাম নয়, সুখ এবং ভালোবাসার পাশাপাশি এখানে না পাওয়া, হতাশা, কান্না, রাগ, অভিমান সবই থাকে। এতকিছুর ভিড়ে মাঝে মাঝে আমার মেজাজ ভীষণ খারাপ হতো তোমার উপর, মনে হতো, আশ্চর্য! একটা মানুষের এত আবদার, এমন ছেলেমানুষি থাকবে কেন, ওর চাওয়া পাওয়া, আনন্দ সুখই কি সব? আমারটা দেখবে কে! বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তোমার মধ্যে ভারিক্কি আসবে না এ কেমন কথা, সবসময় শুধু হাসি, ঠাট্টা, সবকিছু হালকাভাবে নেয়া, কী অদ্ভুত ব্যাপার! তারপরও সুখেই ছিলাম আমি। তবে খানিক অবসরে সবকিছু মিলিয়ে হিসেব কষতে বসলে ভাবতাম, জীবনে আমি কেমন মানুষ চেয়েছিলাম, কী আমার স্বপ্ন ছিল, যদি পড়াশোনা শেষ করতাম, ভালো একটা চাকরি করতাম, যদি অন্তর জীবনে আসত, তবে সেই প্রাপ্তিটা কেমন হতো? মানুষ মাত্রই স্বপ্ন আর বাস্তবের হিসাব মেলাতে গেলে সামান্য আক্ষেপ বা কিছু না কিছু প্রশ্ন তো থাকেই, আমার বেলায়ও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
যাইহোক, তো, সেদিন যখন আপু ফোন করে বলল, কুয়াকাটা যাবার ব্যাপারে দুলাভাইকে তুমি নিষেধ করে দিয়েছ, কষ্ট পেয়েছিলাম ভীষণ, ভাবছিলাম, দিনরাত এই সংসারে আমি পরিশ্রম করি, সময় দেই, তোমাদের সবার খেয়াল রাখি, দায়িত্বে কিংবা ভালোবাসায় আমি তো কখনো অবহেলা করি না, তাহলে তুমি এমন কেন! নিজের শখ হলে তুমি তো ঠিকই যেতে,আমার শখ দেখেই বোধহয় ফিরিয়ে দিয়েছ! হ্যাঁ আমার তো এমনটাই মনে হয়েছিল! রেগে গিয়েছিলাম খুব, মনে হচ্ছিল তুমি সবসময় এমনই। এরমধ্যে সবাই এলো, আমিও সাংসারিক হাজারটা কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম, অভিমান রাগ, আক্ষেপ সব চাপা পড়ে রইল মনের গহিন কোণে।
হিসেবনিকেশটা আরও একটু উলটে পালটে দিতেই বুঝি সামনে এসে দাঁড়াল অন্তর, ওর সঙ্গে সঙ্গে কিছুক্ষণের জন্য এক ধাক্কায় আমার না পাওয়ার পুরো অতীত যেন সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল! অন্তর, ওর অবস্থা, চেহারা, পরিস্থিতি, সবকিছু যেন চিৎকার করে একজন পরাজিত মানুষের গল্প শোনাচ্ছিল। তার সঙ্গে আমারও খানিকটা হাহাকার জুড়ল, হয়ত নিজের কিছুটা অজান্তেই জীবনের হতাশার গল্প করে বসলাম ওর কাছে। সাংসারিক চাপ, কয়েকদিনের মানসিক কষ্ট, আক্ষেপ, এবং অতীতের হাহাকার সবকিছুই সেদিন আমার শব্দ চয়নে প্রভাব ফেলেছিল বোধহয়। যাইহোক, অন্তর চলে গেল। আমিই চলে যেতে বলেছি। এক দুটো দিন একটু মন খারাপ হলো, কিন্তু যার বর্তমানে আনন্দের হাজারটা উপজীব্য থাকে অতীতের বেদনা তাকে খুব একটা টানে না বোধহয়, আমিও উপলব্ধি করলাম, অতীতের বেদনা অতীতেই সুন্দর! বর্তমানে তার কোনো ঠাঁই নেই!
কিন্তু ততদিনে তুমি কষ্ট পেয়ে বসে আছ, আমাকে সে কষ্টের কথা খুলেও বললে। বেশ আঘাত পেলাম, মনে হলো, আরে! কী এমন বলেছি আমি, আমি তো সবকিছু ঠিকই করতে চেয়েছিলাম, ও কেন এভাবে মন খারাপ করবে! বিষয়টা নিয়ে ভেবেছি বারবার, এভাবে ভাবতে গিয়েই একপর্যায়ে পরিস্কার বুঝেছি যে, যদি সত্যিই তোমার জায়গায় আমি থাকতাম, এতটা ভালোবাসতাম, এভাবে প্রাধান্য দিতাম এবং এরপর যদি বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ একদিন তোমার অতীত আমার সামনে এসে দাঁড়াত এবং তার কাছে যদি তুমি এভাবেই আক্ষেপ করতে তবে আমি হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলতাম! জানি না, কথাটা সবাইকে আমি বলে বেড়াতাম কিনা, তবে আঘাত পেতাম ভীষণ, চিৎকার চেঁচামেচি, কান্নাকাটি, করতাম, হয়ত কিছুটা দুর্ব্যবহারও করতাম তোমার সঙ্গে। আমি যে এমনই মানুষ! অথচ তুমি তো ঝগড়া করোনি, চিৎকার করোনি, আমার অতীত নিয়ে কিছুই জানতে চাওনি, তুমি যেন আমাকে ঠিক বুঝে নিয়েছ! তোমার কষ্টটা তো শুধু আমার বর্তমানের আক্ষেপ নিয়ে।
এ ব্যাপারটা যতই ভেবেছি মনে হয়েছে, আশ্চর্য! আমার আপন মানুষ এবং তার ভালোবাসায় এতটা গভীর উপলব্ধি কেন!
যাইহোক, তুমি নিজেকে একটু একটু করে গুটিয়ে নেয়ার পর বুঝেছি যে পৃথিবীতে এমনও কিছু মানুষ থাকে যারা প্রিয়জনকে গভীর মমতায় আগলে রেখে নিজের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে দেয় না। অস্তিত্বের রঙ বেরঙে, অপরিহার্য হয়ে মিলেমিশে যায় তাদের ভালোবাসার মমতা। তাই হয়ত ‌সেই মানুষটা একটু দূরে সরে গেলে কিংবা যেতে চাইলে জীবন স্বাভাবিকতা হারায়। ফয়সাল, তুমি তোমার আপন ভুবনে তোমার মতোই আছ, বলতে গেলে বেশ আছ, কিন্তু তোমার পাশে নিজেকে আমার যেন খুঁজে নিতে হচ্ছে! এভাবে খুঁজে নিতে গিয়ে আবিষ্কার করলাম, তোমার হাসি, ঠাট্টা, কিংবা সরব চঞ্চল উপস্থিতিকে আমি কতটা ভালোবাসি! তোমার অনর্গল গল্পগুলোকে কতটা ভালোবাসি, আমিও ভীষণভাবে চাই, আমার পেছন পেছন তুমি ঘুরঘুর করো, তোমার ছোটো ছোটো অভ্যাসগুলোকে আমি প্রচন্ড ভালোবাসি আসলে! বিশ্বাস করবে কিনা জানি না, নিজের অজান্তেই হলুদ রঙটা আমার প্রিয় হয়ে গিয়েছে! আমি হলুদ রঙের শাড়ি পড়তে ভালোবাসি, তোমার জন্য রাঁধতে ভালোবাসি, খুব চমৎকার করে সাজগোজের পর তুমি প্রশংসা না করলে আমার কাছে সাজটাই অর্থহীন মনে হয়! তবে তোমার ইচ্ছে করে হারিয়ে যাবার ইচ্ছেটা আমার একদম পছন্দ হয়নি,ভয় পেয়েছি ভীষণ! একই বাড়িতে একইসঙ্গে থেকেও আগের তোমাকে আমি ভীষণ মিস করি ফয়সাল! এতটা প্রগাঢ় উপলব্ধি আগে করিনি বলেই হয়ত কথাগুলো অন্তরকে বলা হয়নি। সরি! জানি, অনেক সময় শুধুমাত্র সরি কথাটা যথেষ্ট নয় যদিও, কিন্তু এছাড়া আর কীইবা বলার আছে আমার!
মনে মনে ভীষণ কষ্ট পাচ্ছি আমি বিশ্বাস করো, সবকিছুর সঙ্গে তাল মেলাতে পারছি না! এতদিন একটু অবসরে আমি অতীত নিয়ে ভাবতাম, আজকাল বর্তমান নিয়ে ভাবি! কে জানত, অতীত আক্ষেপের বেদনা এভাবে আমার বর্তমানকে স্থবির করে দিয়ে যাবে! অথচ, এতটা কষ্ট পেয়েও তুমি ঠিকই আমাকে ভালোবেসে চলেছ!
নয়ত, এতগুলো অভিযোগ তোলার ঠিক পরদিনই মা যখন বললেন,আজ দুপুরে বাড়িতে ছোটো মাছ রান্না হবে, তোমার শরীর ভালো নেই দেখে বাবলুকে তিনি বাজারে পাঠাতে চাচ্ছেন, তুমি রাজি হলে না কিছুতেই, হাজারটা বাহানা বের করে নিজেই বাজারে গেলে। হ্যাঁ ছোটোমাছ তুমি এনেছ ঠিকই, সঙ্গে বড়োসড়ো একটা রুই মাছও নিয়ে এসেছ।
মা যখন জানতে চাইলেন এটা কেন কিনেছিস,
তুমি একগাল হেসে বললে, ভীষণ খেতে ইচ্ছে করছে, রান্না কোরো মা!
অথচ খাবার সময় তুমি খাওনি, আমি জানি ছোটোমাছ তোমার ভীষণ পছন্দ! বাসায় কয়েক পদের ছোটোমাছ রান্না হলে সঙ্গে বড়ো মাছ বা অন্যকিছু তুমি খেতে চাও না! শুধু তুমি কেন, এ বাড়িতে সবাইই এমন। সেক্ষেত্রে, সোজাসুজি রান্নাটা হয়েছে আমার জন্য, মাও বুঝে শুনেই কাজটা করেছেন। কারণ আমি ছোটোমাছ খেতে পারি না! দৃশ্যটা বারবার চেষ্টা করেও ভুলতে পারিনি জানো!
তুমি অদ্ভুত মানুষ ফয়সাল, যে কিনা এতটা আঘাত পেয়েও আমার জন্য অসুস্থ শরীরে বাজারে যেতে পারো, ঝড়বৃষ্টি ডিঙিয়ে ঠিক সময়মতো বাড়ি ফিরতে পারো, আমাকে সারপ্রাইজ দেয়ার জন্য হাত পুড়িয়ে রান্না শিখতে পারো, খুব একটা ইচ্ছে না থাকলেও আমাদের বাড়ি গিয়ে বোর হতে পারো!
আজকাল মনে হয়, তোমার এই সাবলীল ভালোবাসাকে আমি সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে পারিনি বলেই হয়ত আজ এভাবে কষ্ট পেতে হচ্ছে! হ্যাঁ, আমি আঘাত পেয়েই বুঝতে শিখেছি কখনো কখনো, কারো কারো ক্ষেত্রে বোধহয় অবুঝ হবার নামই ভালবাসা!
কিন্তু আমি আর এভাবে আঘাত পেতে চাই না, তোমার সঙ্গে জীবনটা আমি উপভোগ করতে চাই, এবার আমি ধুমধাম করে তোমার জন্মদিনটা উদযাপন করতে চাই! তুমি হয়ত জেনে খুশি হবে যে ভেতরে ভেতরে আমি আশ্চর্য হয়েছি ভীষণ। হ্যাঁ, তুমি একদম নির্বাক করে ফেলেছ আমাকে!
কী ভাগ্য আমার বলো তো, তোমার জন্মদিনের সঙ্গে আমাদের প্রথম দেখার এমন একটা মিষ্টি স্মৃতি জুড়ে আছে, অথচ কথাটা আমি জানতামই না! দশ বছরেও জানতে পারিনি! গত কদিনে নিজেকে বারবার প্রশ্ন করেছি, ভেবেছি, মনের আনন্দ বেদনা অকপটে স্বীকার করা তুমি এই গল্পটা লুকিয়ে গেলে কেন, কী কারণে! ভাবতে ভাবতে একপর্যায়ে মনে হলো, হয়ত তোমার ভেতরে অভিমান জমেছে অনেক, সেদিন তোমাকে লক্ষ্য না করার অভিমান, ঘটনাটা আমি নিজেই না জানার অভিমান, তোমার আবেগকে তোমার মতো করে দেখতে না পারার অভিমান! কিংবা এতবছরে আমাকে কাছ থেকে দেখে তোমার মনে হয়েছে কথাটা বললে হয়ত তোমার ইমোশন সঠিক মূল্যায়ন পাবে না! সে যাইহোক, তোমার ঘটনাটা গোপন করে যাওয়ার কারণ যা ই হোক, এবার যখন জেনে গিয়েছি তখন তো উদযাপনটা তোমার একার থাকতে পারবে না! জেনেশুনে এ উদযাপনটা তো তোমাকে একা করতে দেয়া যায় না! উদযাপনটা যে আমারও! আমার প্রিয় মানুষটার জন্মদিন, কিংবা তার সঙ্গে প্রথম দেখার যে স্মৃতি সেই আনন্দের ভাগিদার যে আমিও হতে চাই! তুমি হয়ত বলবে যে, যেই ঘটনাটা আমি জানতামই না, তার আবার কীসের আনন্দ? আমি বলব, জানতাম না আগে, এখন তো জানি! এই জানাটারও একটা শিহরণ আছে, কিছুটা আক্ষেপ আছে, প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির খানিকটা গল্প আছে এবং আশ্চর্যবোধ আছে! আমি যতটা সম্ভব আক্ষেপ ঘুচিয়ে দিতে চাই!
তাছাড়া, তুমি তো কৌশলে মল্লিকাকে এড়িয়ে গিয়ে সবার সঙ্গে বেশ হাসিখুশিই আছ, অথচ জীবন থমকে গিয়েছে আমার। এতটা স্থবিরতার অভ্যাস নেই বহুদিন, আমি চাই না অভ্যাসটা ফিরুক, সত্যি বলছি আমি আবার তোমার সামনে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে চাই, জীবনে আমি আবার সাবলীল হতে চাই! আমি সবার সামনে মনের সব কথা বলতে পারি না, আর কষ্টের গল্প তো একদমই না! কিন্তু আজ আমার একান্ত ভালবাসার আপন মানুষটিকে বলতে চাই, ফয়সাল, আমার মনটা ভীষণ খারাপ, যা ভালো করতে তোমার একটা আশ্বাসই যথেষ্ট!

কাগজগুলো পড়া শেষে ভাঁজ করে রাখল ফয়সাল। ও শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হাসি পাচ্ছে ভীষণ, আশ্চর্য! মল্লিকা এত লম্বা চিঠি লিখেছে! সুন্দর চিঠি তো!
খানিকক্ষণ অপেক্ষার পর ছেলেটা হোয়াটসঅ্যাপে গিয়ে লিখল, তুমি না এত মেধাবী ছাত্রী, তারপরও চিঠিটা এখনো লিখতে শিখলে না! চিঠির শেষে ‌নাম লিখতে হয়।
উত্তর এলো প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই, মল্লিকা লিখেছে, ওসব ঠিকঠাক করার জন্যই তো তোমার কাছে পাঠালাম! তাছাড়া, আমি চিঠি লিখেছি কে বলল? মনের কথাগুলো তোমাকে বলতে চেয়েছি কেবল!
ও আচ্ছা! তা বলো, কী আশ্বাস চাও?
জানো না, আবারও বলতে হবে?
বলো আরেকবার, সমস্যা কী! আরো পরিষ্কারভাবে বুঝে নেই।
আচ্ছা, ভালোমতো বুঝে নাও তাহলে, তোমাকে আবার ঠিক আগের মতো দেখতে চাই!
আমি তো আগের মতোই আছি! খেয়াল করে তাকিয়ে দ্যাখো, তুমি অবশ্যই দেখতে পাবে।
ওহো, তাহলে তো বেশ! আচ্ছা শোনো, এবার তোমার জন্মদিনে হৈচৈ হবে ভীষণ, ছোটো মামি আর সোনালীকেও আসতে বলেছি। আপত্তি নেই তো?
-তুমি উদযাপন করতে চাইছ করো, আমি বাধা দেবো কেন!
উত্তরে বেশকিছু হাসির ইমোজি পাঠাল মল্লিকা।
এরপর খানিক্ষণ নীরবতা, হঠাৎ নোটিফিকেশন বাজল মল্লিকার ফোনটায়।
ফয়সাল লিখেছে, সব‌সময় আমি জিততে জিততে হেরে যাই, আর তুমি হারতে হারতে জিতে যাও এমনটা কেন? আমার ভালোবাসা এতটা অসহায় কেন?
যে উত্তরটা এসেছে তা হয়ত প্রশ্নের চেয়ে আরও বেশি সুন্দর, মল্লিকা লিখেছে, সবসময় জয় পরাজয়ের হিসেব খুব একটা কষতে নেই ফয়সাল, বরং আপন মূল্যবান সময়ের বিনিময়ে সুখ কিনতে হয়!
ফয়সাল হাসছে চুপচাপ। ভাবছে, সত্যি তো! সুখী হতে চাইলে জীবনে সব অঙ্ক মেলাতে নেই, সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে নেই, সব ব্যাখ্যা চাইতে নেই! জীবনে সুখী হওয়াটাই মুখ্য, অযথা দুঃখ লালন করে কী লাভ!

সমাপ্ত
কেউ লেখা কপি করবেন না।

যারা এতদিন ধৈর্য ধরে গল্পটা ‌পড়েছেন সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে আবার কোনো গল্প নিয়ে আসব ইনশাআল্লাহ। সবাইকে শুভেচ্ছা।

আগের পর্বের লিংক
https://www.facebook.com/groups/Anyaprokash/permalink/1521704728344549/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here