মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 #Part_02 🎨Water🎨

0
1364

😏 # মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

#Part_02 🎨Water🎨

হিয়া শ্রাবণকে স্কুলে পাঠানোর জন্য তৈরি করছিলো,আর শ্রাবণ ওর টাই ধরে খেলা করা নিয়ে ব্যস্ত,

🍁শ্রাবণঃ বুবুনি তুই আজ বার্সিটি যাবি না

🍁হিয়াঃ যাবো তো কেনো সোনা

🍁শ্রাবণঃ রেডি হলি না যে এখনো

🍁হিয়াঃ এই হই,আচ্ছা শোন আমি টিফিনে আজ তোকে একটা ডিম সিদ্ধ দিছি পুরোটা খেয়ে নিবি কিন্তু হ্যা,আর এই দশ টাকা টা রাখ দরকার ছাড়া খরচ করবি না ঠিক আছে

শ্রাবণ মাথা নাড়িয়ে হিয়াকে জড়িয়ে ধরে ওর স্কুলের জন্য বেড়িয়ে পড়ে,স্কুল যেতে পাঁচ মিনিটের পথ হাঁটতে হয় তাই শ্রাবণ হেঁটে হেঁটেই ওর স্কুলে যায় শুধু শুধু রিক্সায় উঠে বিশটা টাকা খরচ করে কি লাভ,শ্রাবণ এই বয়সেই বোঝে তার বোনের কষ্ট টা

🍁হিয়াঃ মিতু আপু এখানে ৫০০টাকা আছে আর তোমার বাকি ৫০০ টাকা টা আমি আজকে বিকালে টিউশনের টাকা টা পেলেই দিয়ে দেবো

🍁মিতুঃ টিউশনের টাকা দিয়ে আর কার কার টাকা শোধ করবা হিয়া___একটা ভালো ওফার দিলাম সেটা তো শুনলে না

🍁বৃষ্টিঃ কি অফার দিয়েছিলি রে ওকে

🍁মিতুঃ আরে আমাদের যে ড্রাইভার টা সেদিন মা বললো বিয়ে করবে দেখে মেয়ে খুঁজছে তা আমি হিয়াকে বললাম বিয়ে করবা নাকি,খারাপ কিছু বলেছি বল এভাবে এক বেলা না খেয়ে থাকার চাইতে তো বিয়ে করে স্বামী সংসার করে নিলেই হচ্ছে,এমনিতেও তো ওর মতো অনাথ কে কেউ কোনোদিন ঘরে নিবে না

🍁বৃষ্টিঃ তোমাকে তো ভালোই প্রস্তাব দিলো মিতু,আর এতো পড়াশোনা করে কি করবা সামনে কতো খরচ আরো জানো,ভেবে দেখতে পারো কিন্তু হিয়া

হিয়া মুখে একটা মেকি হাসি দিয়ে জ্বী আপু বলে ওর রুমে চলে যায়,হিয়ার ইচ্ছে ছিলো ওদের দুজনকে কটা কথা বলার কিন্তু মিতুর কাছেই তো ও ঋনি হয়ে আছে এই মুহুর্তে,কি করেই বা তর্ক করবে সে মিতুর সাথে,চোখে আসা পানি গুলো মুছে হিয়া তৈরি হয় ভার্সিটি যাবার জন্য কিন্তু খাবে কি,বিস্কুট আছে এক প্যাকেট কিন্তু ওটা তো শ্রাবণের জন্য শ্রাবণকে রোজ সন্ধ্যায় দুটো করে খেতে দিবে বলে হিয়া এনেছে তাহলে,হিয়া তবুও ঔ প্যাকেট খুলে একটা বিস্কুটের টুকরা খেয়ে এক মগ পানি ঢকঢক করে গিলে বেড়িয়ে পড়ে,এই এক টুকরো বিস্কুট দিয়েই হিয়ার আজ পার হয়ে যাবে সারাদিন
______________

বরাবরের মতো বাইক টা পার্কিং এড়িয়াতে সাইড করে সন্ধি দের পাশে গিয়ে বসে পড়লো উজান,আজকে গায়ে তার খয়েরী রঙের শার্ট আর নিচের দিকে একটা ওফ-হোয়াইট রঙের জিংকস,বোঝাই যাচ্ছে সবে গোসল করে আসলো সে,শার্টের এক পাশ সহ চুল গুলো এখনো হালকা ভেজা,আর এই ভেজা ভেজা চেহারা টা আরো একবার সব মেয়েদের জন্য ঘায়েল করতে যথেষ্ট

🍁উজানঃ হ্যা মা আমি আসবো এবার,তুমি ওসব নিয়ে ভেবো না

🍁বাসবিঃ আচ্ছা রাখছি তা আমি,পারলে একটা প্রেম কর বুঝলি মাস্টার্স টাও তো শেষ হবে সামনের বছর এখন থেকে মেয়ে রেডি থাকলে আমার একটু সুবিধে হয় বুঝিস না আর তোর যে আবদার আমি বাপু পারবো না তোর আবদারের মতো মেয়ে খুঁজতে

🍁উজানঃ মা প্লিজ আবার শুরু করো না সকাল সকাল,আমি রাখছি তুমি সময় মতো ঔষধ গুলো নিয়ে নিও

উজান ফোন রেখে সাব্বিরের কাছ থেকে সেভেন আপের বোতল টা নিয়ে এক চুমুক দিয়ে

🍁উজানঃ মেয়েটা আসে নি

🍁রুপমঃ ধুর না

🍁সন্ধিঃ কি সমস্যা তোর আজ অবধি কোনো মেয়ের দিকে তো তুই চোখ তুলে তাকাসনি তাহলে আজ কিসের জন্য হিয়াকে খুঁজছিস___ও নিজের যোগ্যতায় জিতেছে এতে ওর কি দোষ আজব😡

🍁উজানঃ ও জিতেছে ওর যোগ্যতাতে আমি তো এ ব্যাপারে ওকে কিছু বলিনি কিন্তু ও সামান্য কয়েকটা টাকার জন্য সবার সামনে আমার গায়ে এভাবে হাত তুলবে

🍁সন্ধিঃ ঔ সামান্য টাকাই অনেকের কাছে লাখ টাকার মতো উজান

🍁রাইসাঃ তুই চুপ কর তো কিসের লাখ টাকা, দেমাক দেখলে তো মনে হয় কোন না কোন কোটিপতির মেয়ে তাদের কাছে এই টাকা আবার কোনো ব্যাপার নাকি😏

🍁রুপমঃ এই রে আসছে পাখি দুটো তো মামা___তা দুটো কে কি র ্যাগিং দেই বল তো

🍁উজানঃ সাব্বির

উজানের সাব্বির বলা শেষও নেই তার আগেই সাব্বির দৌড়ে গিয়ে হিয়া আর ঝিনুক কে বলে ভাই ডাকছে,কি আর করার সিনিয়র দের গায়ে তুমি হাত তুলছো হিয়া রানি এবার তো ঠেলা তোমাকে বুঝতে হবে

হিয়া আর ঝিনুক গিয়ে ওদের সামনে দাড় হলে রুপম ওদের ছয় জনের ছটা এ্যাসাইনমেন্টের খাতা বের করে হিয়ার হাতে ধরিয়ে দেয়

🍁হিয়াঃ ভাইয়া কি এগুলো

🍁রুপমঃ এগুলো,এগুলো চকলেট সোনা খাবে

রুপমের কথায় সবাই হেঁসে দেয়

🍁রুপমঃ এগুলো মাস্টার্স এর এ্যাসাইনমেন্ট যেগুলো তোমাদের দুজনকে করতে হবে,আর আজকে রাতের মধ্যেই

🍁হিয়াঃ আপনাদের এ্যাসাইনমেন্ট আমরা কেনো করবো

🍁ঝিনুকঃ হেই মেয়ে চুপ কর,মাস্টার্স এর এ্যসাইনমেন্ট করে দিতে হয় এটা জুনিয়র দের ডিউটি

🍁হিয়াঃ ডিউটি মানে,আজব তো,

🍁ঝিনুকঃ র ্যাগিং এর কথা শুনিস নি কখনো এটাও এক রকমের র্যাগিং

🍁হিয়াঃ কিন্তু র ্যাগিং তো ভার্সিটিতে নিষিদ্ধ

🍁ঝিনুকঃ শোনো মেয়ের কথা,কার্যকর ভাবে নিষিদ্ধ হলে তো কথাই ছিলো

🍁হিয়াঃ আমি ভিপি কে গিয়ে বলে দেবো😡

🍁ঝিনুকঃ ভিপি উল্টে তোকে ঝারি দিয়ে বের করে দেবে,এখন চুপ কর তো ওরা যা বলছে শুনে নে,তোর চাইতে এসব ব্যাপারে আমার এক্সপিরিয়েন্স বেশি

🍁হিয়াঃ ভীতুর ডিম একটা😏তুই যে তোর বাসর ঘরে বর কে নিয়ে কি করবি কে জানে হু

🍁ঝিনুকঃ আরে আমার বাসর নিয়ে তোকে ভাবতে না ওদিন তো আমি তোকেও সাথে করে

ঝিনুক আর কিছু বলতে যাবে তার আগে উজান উঠে এসে

🍁উজানঃ ফিসফাস করা শেষ

🍁ঝিনুকঃ হ্যা মানে আমরা(কাঁপা কন্ঠে)

🍁হিয়াঃ আমরা কি করে মাস্টার্স এর এ্যাসাইনমেন্ট করবো,আপনারা ভালো করে জানেন এটা অসম্ভব,এক রাতে ছ টা খাতা

🍁উজানঃ (একটা ডেভিল মার্কা শয়তানি হাসি দিয়ে) এখন থেকে শুরু করো হয়ে যাবে

🍁হিয়াঃ কেনো আমাদের কি আর কাজ নেই আমরা কি আপনার মতো বেকার

🍁ঝিনুকঃ আহ হিয়া কেনো আবার তর্ক করছিস কি বলছে চুপচাপ শুনে যা না

🍁উজানঃ সম্ভব তো নাই তাহলে এক কাজ করো আসার সময় আমার বাইক টাতে না কাঁদা লেপ্টে এক পাশ নোংরা হয়ে আছে যদি এ্যসাইনমেন্ট করার হাত থেকে বাঁচতে চাও দেন ওটা গিয়ে পরিষ্কার করে দিয়ে আসো আধা ঘণ্টাও হয়তো সময় লাগবে না

🍁হিয়াঃ আপনি কি আমাকে আপনার বাইকের মেকানিং পেয়েছেন

🍁উজানঃ তোমার না সেই যোগ্যতাও নেই

🍁সন্ধিঃ কি হচ্ছে কি উজান

হিয়া কি করবে এখন ভার্সিটি থেকে বেড়িয়ে পর পর দুটো টিউশনি ওর তারপর বাসায় গিয়ে রান্না নিজের পড়া শ্রাবণ,এ্যাসাইনমেন্ট করবার সময় কোথায় ওর,আর ঝিনুককে দিয়েও তো ও করাবে না কারণ ঝিনুক কে তো ওর জন্যেই এমনিতে এতো সাফার করতে হচ্ছে,সব কিছু ভেবে হিয়া সিদ্ধান্ত নেয় ও উজানের গাড়ি টা পরিষ্কার করে দেবে,হিয়া যে সত্যি সত্যি উজানের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাবে এটা উপস্থিত কেউই আন্দাজ করতে পারে নি এমনকি উজানো না,র্যাগ যে হিয়াকে খেতে হবে এটা হিয়া সিউর এর চাইতে বেশি কিছু করতে দেবার চাইতে টপাটপ এটা পরিষ্কার করে দেওয়া টাই বেটার হুহ

হিয়া ওর ব্যাগ টা ঝিনুককে দিয়ে পাশে থাকা এক বালতি পানি নিয়ে খুব সুন্দর মতো উজানের বাইক টা পরিষ্কার করতে থাকে,আর ঝিনুক অসহায়ের মতো হিয়ার পাশে দাঁড়িয়ে__ওদিকে সন্ধি সমান তালে উজান কে বকা দিচ্ছে তো দিচ্ছেই কিন্তু উজানের কোনো হেল দোল নেই ও ওর ফোন নিয়ে ব্যস্ত___সন্ধি হিয়ার কাছে গিয়ে

🍁সন্ধিঃ তুমি কিছু মনে করো না হিয়া__উজান আজ অবধি কখনো মেয়ের সাথে অসভ্যতামি করে নি আর এরকম করে অসম্মান করা তো দূরে থাক__কিন্তু কেনো যে ও তোমার সাথে ওর সব রাগ দেখাচ্ছে আমি তাই বুঝছি না

🍁হিয়াঃ বাদ দেন আপু আমার কপাল টাই এরকম এগুলো আমার সাথে ঘটবে এটাই নিয়ম🥰🥰

সন্ধি কে এক মুখ হাসি দিয়ে হিয়া বাইক পরিষ্কার করতে থাকে,আর বাইক পরিষ্কার করতে গিয়ে বাইকের চাকায় হাত লেগে হিয়ার হাতের এক পাশ টা হালকা কেটে যায়,কিন্তু হিয়া ঝিনুককে বুঝতে দেয় না,বাইক টা পরিষ্কার করা হয়ে গেলে হিয়া গিয়ে উজানের সামনে দাড়িয়ে পড়ে

🍁হিয়াঃ আর কিছু

উজান কিছু না বলে শুধু ফোনের দিকে তাকিয়ে বরাবরের মতো মুখ দিয়ে থাকে,কিছুক্ষন পর ফোন টা তুলে চোখ টা হালকা তুলতেই উজানের চোখ যায় হিয়ার হাতের দিকে,কি রকম চিলিক দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসছে আর হিয়ার হাত নড়তে থাকায় হলুদ রঙের জামা টায় গিয়ে মাখামাখি করছে সে রক্ত

🍁রুপমঃ না পাখি আজকে আপাতত আর কিছু না পরের টা না হয় কাল জানিয়ে দেবো

হিয়া আর কিছু না বলে ওখান থেকে বেড়িয়ে যায়,ক্লাস শেষ করে ঝিনুককে বিদায় দিয়ে হিয়া লাইব্রেরির দিকে গিয়ে একটা ওর্গানিক এসিডের বই নিয়ে পড়তে শুরু করে কারণ আপাতত এই বই টা কেনার সামর্থ্য হিয়ার নেই,পড়তে পড়তে কখন যে হিয়া টেবিলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে সে খেয়াল ওর নেই,কতোক্ষণ সে ঘুমিয়ে ছে সে জানে না,ঘুম থেকে উঠতেই হিয়া খেয়াল করে লাইব্রেরি পুরো ফাঁকা,হিয়া একটু নড়েচড়ে ঠিক হয়ে যেই বই টা টেবিল থেকে তুলতে যাবে ওমনি ওর হাতের দিকে তাকালে হিয়া খেয়াল করে ওর কেটে যাওয়া হাতে ব্যান্ডেজ করা❤️❤️❤️,হিয়া তো পুরো থ কে করে দিলো ওকে এই ব্যান্ডেজ!!️ভূত!! হিয়া ফাঁকা লাইব্রেরি তে কেমন আতকে উঠে কি শুনসান পরিবেশ ভূত টুত থাকলেও তো থাকতে পারে নাহলে হিয়ার মতো মেয়েকে কেই বা কেয়ার করতে যাবে__হিয়া কোনো রকম বই টা শেলফে থুইয়ে দৌড়ে বেড়িয়ে আসে আর নিজ মনে ভাবতে থাকে সে কি না এতো গভীর ঘুমে ছিলো যে ভূত এসে কখন ব্যান্ডেজ পড়িয়ে গেছে সে কিচ্ছু টের পেলো না ধ্যাত

🍁হিয়াঃ আগে আগে এসে ভালো হয়েছে বল,সবটা কি রকম সামন থেকে দেখতে পারবো

🍁ঝিনুকঃ দেখতে পারবো না ছাই দেখছিস না ফাস্ট-এর সিট গুলোতে কি রকম রিজার্ভ লেখা

🍁হিয়াঃ তাই তো,কিন্তু এটা তো অন্যায় যে আগে আসবে সে আগে বসবে আগে এসেও যদি পরে বসতে হয় তাহলে লাভ কি হলো___যে দায়িত্বে আছে তাকে পেলে না আচ্ছা মতো কটা কথা শুনিয়ে দিতাম হুহ

হিয়া আর ঝিনুকের কথায় উজান সহ পুরো টিম পিছনে ফিরে তাকিয়ে উঠে

🍁রুপমঃ মামা পাখি তো না ধরতেই খাঁচায় এসে হাজির দেখছি আজ

রুপমের এরকম ব্যাঙ্গাত্বক কথা শুনে হিয়া ঝিনুক দুজনে সামনে তাকিয়ে আঁতকে উঠে,উজানের চোখে চোখ পড়তেই ঝিনুকের আবার কাপাকাপি শুরু হয়ে যায় নিমিষে,এই বুঝি ভয়ে বেচারির হার্ট খুলে হাতে চলে আসে আসে

হিয়া কিছু না বলে ঝিনুক কে নিয়ে পেছন ফিরে যেতে ধরবে ওমনি রাসেল রুপম রাইসা নীলিমা মিলে হিয়া আর ঝিনুক কে আঁটকে দেয়

🍁নীলিমাঃ কোথায় যাচ্ছ বাচ্চারা ফাংশন দেখবা না,নাচ হবে গান হবে একটু নাচবা না সবার সাথে

🍁ঝিনুকঃ জ্বী মানে আমরা নাচ পারি না

🍁রাইসাঃ সমস্যা নেই বেবি আমরা আছি কি করতে আমরা শিখিয়ে দেবো

ইতিমধ্যে উজান পাশে থাকা দুটো চেয়ারের একটায় গিয়ে বসে আর একটা চেয়ারে পা তুলে দিয়ে ওর চোখ থেকে সানগ্লাস টা খুলে হাতে নেয়

🍁নীলিমাঃ কি উজান কিছু তো বলো ফাংশনের আগে দুটা বাচ্চা মেয়ের একটা ধামাকাদার নাচ হলে মুড টা পুরো জমে যায় কি বলো

🍁রাইসাঃ কোন গান টা ছাড়ি বল তো সাকি সাকি না দিলবার দিলবার

🍁রুপমঃ আরে ওসব কি গান তার চেয়ে মুন্নি বাদনাম বাজা না আমরাও একটু লাইভ দেখি মুন্নি আসলে কি রকম করে বদনাম হয়

কথাটা বলেই রুপমের সাথে সাথে সবাই হেসে উঠে,ঝিনুক তো ভয়ে,লজ্জায় এই বুঝি কেঁদে উঠে,হিয়া যেন কিছু তে আর ঝিনুকের কাপাকাপি সহ্য করতে পারছে না,হিয়া বুঝে এদের কে বলে লাভ নেই এদের যে লিডার তাকে গিয়েই কিছু কথা বলতে হবে তবেই এরা থামবে,কারণ মূল সমস্যা টা সবার তাকে নিয়ে, আর এর জন্য কেনো অন্য কাউকে হেনস্তা হতে হবে আজব,হিয়া ওদের হাসি কে পাওা না দিয়ে উজানের সামনে গিয়ে দাঁড় হয়

🍁হিয়াঃ সমস্যা টা তো আমাকে নিয়ে তাহলে আমার ফ্রেন্ড কে এরকম করে ছোট করার মানে টা কি____আমাকে নিয়ে টানা হেঁচড়ে যা খুশি করুন কিন্তু আমার ফ্রেন্ডকে এভাবে অপমান করার রাইট আপনার নেই

🍁উজানঃ (হিয়ার কথা শেষ হলে উজান ওর আঙ্গুলের ইশারায় সবাই কে থামতে বলে)____ঝিনুক

🍁ঝিনুকঃ জ্বী জ্বী ভাইয়া

🍁উজানঃ বাড়িতে যাও

🍁ঝিনুকঃ ভাইয়া আমি বাড়িতে__ভাইয়া হিয়া আমি তো একসাথে

ঝিনুক আর কিছু বলতে যাবে তার আগে উজান চোখ তুলে ঝিনুকের দিকে তাকালে ঝিনুকের অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে,ঝিনুক আর কিছু না বলে হিয়ার দিকে তাকিয়ে ওখান থেকে চলে যায়

🍁উজানঃ সাব্বির গান চালা

🍁সাব্বিরঃ ভাই বাদ দেন না বেকার শুধু

🍁হিয়াঃ (সাব্বিরকে থামিয়ে দিয়ে) সাব্বির ভাইয়া এক মিনিট____আমি মানছি জুনিয়র হয়ে আপনার গায়ে ওভাবে হাত তোলা টা আমার উচিৎ হয় নি তার জন্য আমি আপনার কাছে নিজে থেকে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি কিন্তু একজন সিনিয়র হিসাবে আপনিও যে খুব একটা দায়িত্ব বানের মতো কাজ করেছেন এমন টাও তো না

উজান এবার চেয়ার থেকে উঠে হিয়ার সামনে দাড়িয়ে যায়

🍁উজানঃ (শার্টের ফ্লোড করা হাতা গুলো আরো সুন্দর করে ফ্লোড করতে করতে)__দুদিন হয়েছে এই ভার্সিটিতে জয়েন করেছো আর দুদিনেই একজন সিনিয়র কে তার দায়িত্ব শেখাতে আসছো

🍁হিয়াঃ দায়িত্ব শেখাচ্ছি না শুধু তার ভুল টা তাকে ধরিয়ে দিচ্ছি

নীলিমা এসে সপাটে হিয়ার হাত পেছন থেকে মোচড়ে ধরে

🍁নীলিমাঃ মেয়ে টার মুখের জোর দেখছিস রাইসা,কি রকম তর্ক করে যাচ্ছে

🍁রাইসাঃ উজান ই বা চুপ করে কেনো সবটা শুনছে ঠাটিয়ে দুটো লাগিয়ে দিলেই তো হচ্ছে

🍁হিয়াঃ আপু আমার লাগছে আমার হাত টা ছাড়ুন,এরপর কিন্তু আমি ভিপি কে ডাকতে বাধ্য হবে

🍁রাইসাঃ ওলে লে লে লে বাচ্চা মেয়ে টা আমাদের হুমকি দিচ্ছে দেখি,এই রে ভয় পেয়ে গেলাম তো এখন ভিপি স্যার আসলে আমাদের কি হবে

🍁নীলিমাঃ বাচ্চা বলছিস কেনো ওকে, আমার তো মনে হয় তলে তলে অনেক কিছুই চলে ওর

উজান নীলিমার হাত থেকে হিয়ার হাত ছাড়িয়ে হিয়াকে ওর সামনে সোজা করে দাঁড়িয়ে রেখে

🍁উজানঃ সাব্বির আমি অনেকক্ষণ আগে তোকে একটা কাজ করতে বলেছি আর সেটা যদি না পারিস তো বলে দে ভাই আমি পারবো না

🍁সাব্বিরঃ না ভাই তা না আমি আসলে__যাচ্ছি আমি

সাব্বির দৌড়ে গিয়ে গান ছেড়ে দিলে প্রথমে বেজে উঠে একটা রবীন্দ্র সংগীত (সখি ভালোবাসা কারে কয় সে কি কেবলি যাতনাময় সখি ভালোবাসা কারে) এই মুহুর্তে এই গানে উজানের মেজাজ আরো বিগড়ে যায়,রাইসা সাব্বির কে ছেড়ে দিয়েই নিজে সাকি সাকি গানটা চালু করে দিয়ে আসে

🍁উজানঃ ঝিনুক কে তো ছেড়ে দিলাম তোমার কথা মতে,এবার নিজে নেচে আমাদের একটু এন্টারটেইন্ট করো দেখি___কামন___কি হলো ওভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো নাচতে বলেছি তোমাকে (হিয়াকে রাগানোর জন্য যদিও উজান কখনোই চায় না হিয়া এভাবে নাচুক)

🍁হিয়াঃ(একটা ব্যাঙ্গাত্বক হাসি দিয়ে হিয়া বলে উঠে)আসলে দোষ টা আপনার না দোষ টা আপনার শিক্ষার,কি বলুন তো আপনার মা কখনো হয়তো আপনাকে মেয়েদের কি করে সম্মান করতে হয় সেটা শেখাতে পারে নি তাই আজ আপনি এভাবে আমাকে সবার সামনে

🍁উজানঃ (হিয়ার কথা শেষ হবার আগে হিয়ার এক হাত খামচে ধরে) Don’t Cross your limit মিস হিয়া মুনতাসীর,তুমি কতোটুকু জানো আমার মা আমাকে কি শিক্ষা দিয়েছে সম্পর্কে

🍁হিয়াঃ জানার কি দরকার মেয়েদের কে নিয়ে যেই ছেলের কথাবার্তা এরকম সে আর কি করে,অবশ্য আমি এটা মানি যে মা তো মাই হয় আপনার মা হয়তো আপনাকে সম্মান নামক বস্তু টা শিক্ষিয়েছে কিন্তু আপনি হয়তো সেটা গ্রহন করতে পারেনি নি ,তা আপনি নিজেও কি আপনার মাকে সম্মান নামক জিনিস টা করেন নাকি বাড়িতে এরকম মা বোন দের গান চালিয়ে সামনে বসে নাচতে বলেন কোনটা

হিয়ার কথায় উজানের যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে মাথায়,তার মাকে শিক্ষা নিয়ে এতো বড় বড় কথা আজ অবধি কেউ ওকে বলেনি কিন্তু হিয়া কি না,উজানের রাগ চরম পর্যায়ে পৌঁছালে উজান পাশে থাকা ফুচকার স্টোল থেকে এক গ্লাস পানি এনে দুম করে ছিটিয়ে দেয় হিয়ার মুখে

🍁উজানঃ আমার মা আমাকে মেয়েদের কে সম্মান করতে শিখেয়েছে বলেই না আমার গায়ে হাত তোলার পরো আমি এখন অবধি তোমার গায়ে একটা আচড়ো লাগতে দেই নি কিন্তু কি জানো তোমার মতো কোনো বাজার থেকে উঠে আসা মেয়ে না সেই সম্মানের জন্য মোটেও যোগ্য না😡

কথা টা বলে উজান যেতে ধরলে হিয়া ফুচকার স্টোল থেকে জগ টা নিয়ে উজানের সামনে গিয়ে এবার উজানের গায়ে পুরোটা ঢেলে দেয়,আর হিয়ার এই কান্ডে উজান থেকে শুরু করে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকা সবাই পুরো থ

🍁হিয়াঃ কি জানেন আপনি আমার সম্পর্কে কতো সহজে একটা মেয়েকে বাজারের মেয়ে বলে দিলেন এই আপনার শিক্ষা

হিয়ার প্রশ্নের জবাবে উজান শুধু ফুঁসতে শুরু করে,কি এক অবস্থা,হিয়া আধা আধা ভিজলেও যে উজান এখন পুরো ভিজে চৌচির,এখন উজানের একটাই কাজ হিয়াকে ওর থেকে আরো ডবল ভিজিয়ে দিতে হবে,কিন্তু উপায়,উজান এপাশ ওপাশ তাকিয়ে ফুচকার স্টোলে এক হাড়ি পাতিল দেখতে পেয়ে অকপটে সেটা তুলে হিয়ার গায়ে ঢেলে দেয়

কিন্তু এবার ঘটে যায় দূর্ঘটন,পানি গুলো ঢালার সাথে হিয়া চিৎকার করে উঠে,গা পা কাঁপতে শুরু করে হিয়ার,কি রকম ছটফট করতে শুরু করে হিয়া,কি হলো হিয়া এরকম করছে কেনো,উজান হিয়াকে রাগে কিছু বলতে যাবে তার আগেই হিয়া সামনে ফার্মিসি ল্যাবের ওয়াশরুমের দিকে দৌড় শুরু করে,হিয়ার এরকম দৌড়ানি দেখে সবাই আবার থ

🍁মিন্টুঃ ভাই এটা আপনি কি করলেন

🍁উজানঃ কি করলাম মানে😒😒

🍁মিন্টুঃ ভাই আপনি একটু আগে আপামনির গায়ে যেই পানি টা ঢাললেন ওইখান তো গরম পানি আছিলো,আব্বা চটপটি সিদ্ধ কইরবো দেখি তার লগে আগে থেকে আমাক পানি গরম কইরা রাখবার কইছিলো

মিন্টুর কথায় উজান নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো হাড়ি টা ধরার সময় ওর হাত টাও কি রকম লাল হয়ে গিয়েছিলো কিন্তু তখন হুজুকের মাথায় থাকায় তার অনুভূতি টা প্রখর হয়নি__এই মুহুর্তে দুমড়ে মুচড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে জেনো উজান,নিজের কাছে নিজের কখনো এতো গিল্টি ফিল হয় নি উজানের যতো টা আজ হচ্ছে,কি হয় হিয়া ওর সামনে আসলে ও তো এরকম রাগ শুধু ওর মাকে দেখায় তাহলে হিয়াওকি ওর মায়ের মতো যার কাছে অনায়সে সে রাগ ঝারতে পারে আবার শাসন শেষে আদরে ভরিয়ে দিতে পারে❤️উজান আর কিছু ভাবতে পারে না কিছু ভাবার সময়ো যেই নেই এখন ওর আর,ওকে যে হিয়ার কাছে পৌঁছাতে হবে

🍁উজানঃ শীট!!কি করে আমি___পানি গুলো কতোক্ষণ আগে গরম করেছিলি ছোট

🍁মিন্টুঃ ভাই আধা ঘণ্টা তো পাড় হইবো আমি পানি ওতো টাও গরম করি নাই আর যা করছি তা হয়তো এতোক্ষণে ঠান্ডা হয়আও আইছিলো__ আপনি চিন্তা কইরেন না আপার গায়ে ওতো লাগে নি হয়তো

উজান একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে সামনে দৌড় শুরু করে

🍁রুপমঃ উজান শোন উজান কোথায় যাচ্ছিস উজান

উজান দৌড়ে ফার্মিসি ল্যাবের ওয়াশরুমে ভেতর গেলে বুঝতে পারে হিয়া ভেতরে বসে কাঁদছে,হিয়ার নিজেকে কোনোদিন এরকম হেল্পলেস ফিল হয় নি কেনো সে তর্ক করতে গেলো উজানের সাথে,আজ তর্ক না করলে হয়তো ঘটনা এতো দূর আগাতো না,হিয়া আর কিছু ভাবতে পারে না শুধু ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে,হিয়ার চোখের সামনে ভেসে আসে শ্রাবণের মুখ টা,হিয়ার শরীর পুড়ে যাচ্ছে কিন্তু হিয়ার সে দিকে মাথা ব্যাথা নেই শুধু ভাবছে শ্রাবণ পাশে থাকলে হয়তো ওকে এসময় বুকে জড়িয়ে বলতো বুবুনি কাঁদিস না কাঁদলে তোকে কি রকম প্যাচার মতো লাগে,সোনা বুবুনি আমার আর কাঁদে না

🍁উজানঃ হিয়া হিয়া দরজা টা খোলো হিয়া___হিয়া প্লিজ ওপেন দা ডোর__হিয়া বেশি দেড়ি করা ঠিক হবে না হিয়া তোমাকে ইমিডিয়েট ডক্টর দেখাতে হবে___হিয়া প্লিজ হিয়া লিসেন টু মি হিয়া____হিয়া তোমার আমাকে যা বলার যা শাস্তি দেবার প্লিজ বেড়িয়ে এসে দিও হিয়া প্লিজ ডক্টর দেখাতে হবে তোমাকে হিয়াআআআআ

🍁হিয়াঃ ডক্টর দেখার টাকা কোথায় আমার কাছে!!জ্বর হলেও তো নাপা কিনবার সাম্যর্থ নেই আমার আর আমি কি না দেখাবো ডক্টর

____🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒____

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here