মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 #Part_01 🍫থাপ্পড়🍫

0
1384

😏 # মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

#Part_01 🍫থাপ্পড়🍫

প্রথম পর্ব তাই পুরোটা পড়বার অনুরোধ রইলো

🌺

🍁হিয়াঃ আমাকে আর দুটো দিন সময় দেন খালাম্মা শুধু দুটো দিন,আমি আমি কথা দিচ্ছি টিউশনের টাকা টা হাতে পেলেই আমি আপনার বাকি টাকা টা পরিশোধ করে দেবো

🍁খালাম্মাঃ সে তো ক মাস ধরে শুনেই আসছি তা দিচ্ছো আর কোথায়,শোনো মেয়ে সালেহার কথা শুনে তোমাকে আমার বাড়িতে থাকার জায়গা দিয়েছি ঠিকি কিন্তু ঠিক মতো ভাড়া না পেলে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করতেও আমি দু মিনিট ভাববো না

🍁হিয়াঃ আমি কথা দিচ্ছি আপনাকে আর এরকম হবে না। আমি আপনার সব পাওনা পরিশোধ করে দিয়ে এখন থেকে ঠিক মতো বাড়ি ভাড়া টা দিয়ে দেবো

🍁খালাম্মাঃ তাই ভালো,টিউশনের টাকা না পেলে সামনে বাজার আছে দরকার পড়লে দেহ টা বিক্রি করে দিয়ে এসে সুদ সমেদ আমার টাকা টা দিয়ে যাবা,আমাকে নরম শরম পেয়ে সব কটা মেয়েই দেখছি ভাড়া দিতে সময় নেয় এখন

কথা টা বলেই বাড়িওয়ালা খালাম্মা হিয়ার হাত থেকে ১০০০টাকার তিনটে নতুন কচকচে নোট নিয়ে ওনার ঘরের দরজা টা দুম করে লাগিয়ে দেয়,হিয়ার কাছে এসব কথা নতুন না,তার গায়ে এখন এর চেয়েও বাজে বাজে কথা সহ্য হয়ে যায় এ আর এমনকি দেহ বিক্রিই তো,হিয়া মুখে একটা মেকি হাসি দিয়ে শ্রাবণের ছোট্ট হাত দুটো ধরে ওর ফ্লোরের দিকে পা বাড়ায়,শ্রাবণ বয়স ৭ ক্লাস টু তে পড়ে যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি চঞ্চল,আর এই শ্রাবনই হিয়ার এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন

হিয়া ওর ফ্লোরে এসে শ্রাবনকে নিয়ে ওর রুমে চলে যায়,হিয়া যেই ফ্লোরে থাকে ওটার মটে তিনটে রুম আর তিনটেতে দুটো দুটো করে মোট ছয়টা বেড,আপাতত একটা রুম পুরো ফাঁকা বাকি দুটোর একটায় যে দুটো মেয়ে থাকে তারা দুজনেই ব্যাংকার আর হিয়ার সাথে ওর রুমে যে মেয়ে টা থাকে সে হিয়ার মতোই একজন স্টুডেন্ট তবে বড় লোক বাবা-মা এর মেয়েরা যেরকম একটু আদুরে টাইপ হয় ওরকম,আপাতত সে নেই বড় ভাইয়ের বিয়ে বলে দেশের বাড়িতে,তাই রুম টার একরত্তি অধিপত্যে এখন হিয়া আর শ্রাবনের

রুমে এসেই হিয়া রাতের খাবারের জন্য হাড়ি তে চাল খুঁজতে যাবে ওমনি শ্রাবণ হিয়াকে থামিয়ে দেয়

🍁শ্রাবণঃ আচ্ছা আপু দেহ বিক্রি জিনিস টা কি?

শ্রাবণের মুখে কথাটা শুনেই হিয়ার বুক ডুকরে উঠে,হিয়া সাথে সাথে ওর হাত থেকে চাল মাপার পোয়া টা ফেলে দিয়ে শ্রাবণকে জাপ্টে ওর বুকে আগলে নেয়

🍁হিয়াঃ এসব কথা বলতে হয় না সোনা,গোনাহ হয়

🍁শ্রাবণঃ তাহলে ঔ কুমড়ো আন্টি টা যে তখন তোমাকে বললো দেহ বিক্রি করে ওনার টাকা ওনাকে দিয়ে দিতে

🍁হিয়াঃ না সোনা উনি ওরকম বলেনি তুই কোথাও শুনতে ভুল করেছিস,দেহ আবার বিক্রি হয় নাকি,কোনোদিন শুনেছিস কেউ টাকা দিয়ে তোর শরীর কিনবে তখন না তাকে আবার তোকে আমার মতো চকলেট কিনে দিতে হবে হে হে

হিয়ার কথায় শ্রাবণ মাথা নাড়ায়,তার কাছে হিয়া মানেই সত্যি হিয়া মানেই সঠিক তাই তো হিয়ার রাজা রানির গল্পের মতো এই মিথ্যে গল্পোটাও সে অনায়সে বিশ্বাস করে নেয়

🍁শ্রাবণঃ তাই তো,আচ্ছা আপু তাড়াতাড়ি খেতে দাও না আজ,অনেক রাত হচ্ছে তো আমার ঘুম পাচ্ছে যে

🍁হিয়াঃ দিচ্ছি সোনা এক্ষুনি আনছি

হিয়া শ্রাবণকে একটা বই ধরিয়ে দিয়ে হাঁড়ি তে চাল নিতে যাবে কিন্তু দেখে হাড়িতে আর চাল নেই যা আছে তা দিয়ে শ্রাবণেরই পেট হয়তো ভরবে না,কি করবে এখন হিয়া,হিয়া ওটুকু চাল দিয়েই রান্না করে এনে গোল গোল লোকমা বানিয়ে শ্রাণকে খাইয়ে দিতে শুরু করে

🍁শ্রাবণঃ আপু তুই খাবি না

🍁হিয়াঃ খাবো তো আগে আমার মিষ্টু ভাই টাকে তো খাইয়ে দেই

🍁শ্রাবণঃ আপু জানিস আজ না স্কুলে একটা জিনিস খেতে দিয়েছিলো বড় ম্যাডামের জন্মদিন ছিলো তো তাই জন্য

🍁হিয়াঃ কি দিয়েছিলো শুনি

🍁শ্রাবণঃ কি যেনো বললো ওটাকে রক্তিম, থাম মনে করি হ্যা__পেছতি কেক কি মজাআআআ___তুই খেয়েছিলি কখনো পেছতি কেক

🍁হিয়াঃ না সোনা খাই নি,কেমন দেখতে ওটা

🍁শ্রাবণঃ ঔ তো ঔ মিতু আপুর জম্মদিনে তোকে আর আমাকে যে কি একটা কেক খেতে দিলো না ওরকম মজাআআআআ

🍁হিয়াঃ তাইইইই বাহ মজার জিনিস তো

হিয়া শ্রাবণকে খাইয়ে দিতে থাকে আর শ্রাবণ বরাবরের মতো তার কলিজার বুবুনির সাথে গল্প দিতে থাকে,হিয়া কখনো বা শ্রাবণের গল্প শুনছে কখনো বা নিজ চিন্তায় ডুবে যাচ্ছে,খালাম্মা তো রাইসার মার দেওয়া পুরো বেতন টা নিয়ে নিলো এখন আছে শুধু তন্নির টিউশনের টাকা ওটা দিয়ে কি ও মাস চালাবে না খালাম্মার পুরো টাকা টা শোধ করবো

শ্রাবণকে খাইয়ে হিয়া ওকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে বিছানার সাথে লাগানো জানালার পাশে গিয়ে বসে পড়ে__আজ ভরা পূর্নিমা চাদটা কিরকম আলো দিয়ে নিজেকে মেলে ধরেছে__রাতের এই মোনরোম জোৎস্নার দিকে হারিয়ে হিয়া নিজের এই কষ্ট গুলোর সীমানা গুনতে থাকে,পেটে আজ আর হিয়ার কিছু পড়েনি রাতে শুধু ঢকঢক করে এক মগ জল খেয়েই হিয়া ওর পেট টা ভরিয়ে নিয়েছে এটা অবশ্য নতুন না,হিয়ার কাছে এই এক মগ পানিই অনেক অমৃত

🍁হিয়াঃ হাতে আছে আর কিছু খুচরো টাকা,কি করবো এগুলো দিয়ে আমি না খাবারের জন্য বাজার করবো না শ্রাবণের স্কুলের বেতন টা দেবো__না না এভাবে কতোদিন ইন্টারের সার্টিফিকেট দিয়ে কি কোথাও একটা নূন্যতম বেতনের চাকরিও আমি পাবো না এতো কেনো সংকট চাকরির এই বাজারে__আমাকে যে শ্রাবণকে মানুষের মতো মানুষ বানাতে হবে ওর সব ইচ্ছে পূরণ করতে হবে ও ছাড়া আর কেই বা আছে আমার এই পৃথিবীতে,নাহ কালকে ভার্সিটি থেকে ফিরেই আগে একটা চাকরির কাগজ কিনে আনতে হবে,এভাবে আর কতোদিন চালাবো শ্রাবণ টাও তো দেখতে দেখতে বড়ো হয়ে যাচ্ছে

কথাটা বলেই একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে শ্রাবণের গায়ের চাদরটা ঠিক করে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো হিয়া,আসলেই কি সে ঘুমোচ্ছে এতো কষ্টে কি সত্যি কখনো নিশ্চিন্তে ঘুমোনো যায়
______________________

ভার্সিটির মেইন গেটের সামন দিয়ে একটা লাল কালো বাইকে করে এন্ট্রি নিচ্ছে এই ভার্সিটির Heartthrob___সাদা শার্ট নীল জিংকস চোখে দূর্দান্ত চশমা সাথে আছে বা হাতে একটা দামি ব্রান্ডের কোনো এক ঘড়ি,দেখতে যেমনি লম্বা তেমনি দুধে-আলতা গায়ের রঙ__সে শুধু প্রেম ভালোবাসার দিক দিয়ে সবার Heartthrob না সে সব কিছু দিয়ে All-rounder ভার্সিটিতে আজ অবধি প্রত্যেক সেমিস্টারে ৪ এর কাছাকাছি সিজিপিএ তোলা একমাত্র বান্দা আমাদের এই Lady Killer,যাকে ভার্সিটির ছোট বড় স্যার থেকে শুরু করে এক নামে চিনে ভার্সিটিতে ভীড় করা সব বয়সী দোকানদার__Junior দের আইডল, স্যার-ম্যাডামদের মধ্যমণি,আর মেয়েদের সেটা আর নাই বা বলি__একদিকে পলিটিক্স করে অন্য দিকে পড়াশুনা আবার সাথে পুরো ভার্সিটির ওল এক্টিভিটিতে তার থাকা চাই চাই ঔ যে কথায় আছে না সৃষ্টিকর্তা যাকে দেয় এক বারে সব উচলে দেয় সেই অবস্থা আরকি

তবে আজ অবধি এই নীলিমা রাইসা সন্ধি তিশা এই চারজন ছাড়া ভার্সিটির কোনো মেয়ের দিকে দরকার ছাড়া কথা বলা তো দূরে থাক চোখ অবধি সে তুলে তাকায়নি,মেয়ে গুলো কি রকম ওকে দেখলেই ঢলে পড়তে চায় যেটা খুবি বিরক্ত লাগে উজানের কাছে

বাইক টা পার্কিং এড়িয়াতে সাইড করে ফ্রেন্ডজোনে গিয়ে বসতে নীলিমা এসে উজানকে পেছন থেকে জাপ্টে ধরে,যদিও আশেপাশের মেয়েদের ওরকম চাহনি প্লাস নীলিমার এই কান্ডে উজান এই মুহুর্তে চরম বিরক্ত তবু নিজেকে সংযত করে নিয়ে প্রতিবারের মতো নিজেকে ফ্রী করে

🍁নীলিমাঃ আজ কিন্তু আমরা কেউ তোমাকে ছাড়ছি না,আজ ডিবেটে আমাদের টিম জিতলে টানা দশবারের মতো তুমি জিতবে ভাবা যায়।

🍁সন্ধিঃ নীলিমা কিন্তু আজ একদম কিছু ভুল বলছে না উজান,Can you imagine তুই যবে থেকে ডিবেটে জয়েন করেছিস কেউ আমাদের ডিপার্টমেন্ট কে হারাতে পারে নি___তবে তুই কিন্তু এবার প্রধান বক্তা হিসাবে তোর জায়গাটা শুধু শুধু রুপমকে দিয়ে দিলি।

🍁উজানঃ So What রুপম তো এর আগেও আমার জায়গায় ডিবেট করেছিলো তাতে কি আমরা হেরেছি নাকি কখনো,আজব।

🍁সন্ধিঃ না তা না তুই যা Training দিস আর Script লিখিস তাতে রুপমের জায়গায় আমাদের কেবলাকান্ত রাসেল ভাই থাকলেও ট্রফি নিয়ে ফিরবে হা হা।

চারজনের গল্পের মাঝে সাব্বির দৌড়ে এসে হাঁপাতে শুরু করে,সাব্বিরের অবস্থা দেখে বোঝা যাচ্ছে ডিবেট রুমে নিশ্চয়ই কোনো গন্ডগোল বাধছে এবার।

🍁সন্ধিঃ সাব্বির What’s wrong তুই এরকম করছিস কেনো?

🍁সাব্বিরঃ ভাই,ভাই এবার এবার মনে হয় আমরা জিততে পারবো না,ঔ অপজিট টিমের মেয়েটা এমন এমন পয়েন্ট রাখছে আর এমন সব প্রশ্ন দিচ্ছে রুবেল ভাই তো মুখ দিয়ে কিছু বের করতেই পারছে না

🍁সন্ধিঃ হোয়াট কি সব বলছিস

🍁সাব্বিরঃ ভাই আপনি ইমিডিয়েট ভেতরে চলেন,আপনি না গেলে ডাহা মান সম্মানে পড়বো আজ

🍁উজানঃ রিলাক্স__আজ অবধি এই উজান শাহরিয়ার কে কেউ ডিবেট তো দূরে থাক ভার্সিটির কোনো কারিকুলামে হারাতে পারেনি,এবারো পারবে না__চল

উজান সাব্বির কে নিয়ে ডিবেট রুমের দিকে আগালে সন্ধি আর নীলিমা ওদের পেছন পেছন আসে,আর ডিবেট রুমে আসতেই সবাই থ, সত্যি তো অপজিট টিমের মেয়েদের প্রশ্নের উওরে ওদের টিমের সবাই পুরো ভরকে আছে

উজান দূর থেকে সবাই কে চোখের ইশারায় চিয়ায় আপ করে যাচ্ছিলো কিন্তু কেউ ওর দিকে পাওাই দিচ্ছে না,এখন রুপমকে ছাড়িয়ে উজানই বা কি করে ডিবেটে পার্টিসিপেট করবে এরকম তো কোনো রুলস নেই,শেষে উজানের ইশারায় সাব্বির গিয়ে রুপম কে বলে সেন্সলেস হওয়ার অভিনয় করতে যাতে প্রধান বক্তার জায়গাটা বিচারক কে বলে উজান নিজে সে জায়গাটা ম্যানেজ করতে পারে,যেই বলা সেই কাজ রুপমের জায়গায় এবার প্রধান বক্তার জায়গায় উজান

হিয়া উজানের চোখাচোখি হলেও কেউ কাউকে এখনো চোখ মেলে দেখেনি,উজান ব্যস্ত বিগড়ে যাওয়া ডিবেট টাকে ওদের সাপোর্ট এ আনতে ওদিকে হিয়া ব্যস্ত তাকে যে করেই হোক ডিবেট টা জিততে হবে কারণ ডিবেট এ জিতলে পুরষ্কার স্বরুপ সম্মাননার পাশাপাশি বিজয়ে দল কে ৬,০০০/= আর যে ফাস্ট বক্তা হবে তাকে ১,০০০/= দেওয়া হবে আর হিয়া এই সুযোগ কিছুতেই মিস করতে চাইছে না এখন কেয়ামত আসলেও তাকে জিততে হবে এট এনি কস্ট হুহ

প্রধান বক্তার পজিশনে এবার হিয়া ওর সময় অনুযায়ী বিতর্কের বিপক্ষে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্তব্য,আলোচনা,পয়েন্ট উপস্থাপন এর পাশাপাশি উজানের দিকে প্রতি লাইনে হাজার টা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়,এদিকে উজান তো আজ পুরো বোল্ড আউট চার বছর অনার্স ক্যারিয়ার সেরে এখন মাস্টার্স এর কাঠ গড়াতে এসে তাকে কোনো মেয়ের কাছে এভাবে হেরে যেতে হবে এটা ভেবেই ওর মাথা ঘুরে আসছে,কি করবে ও এখন..!!

হিয়ার বলা শেষ হলে উজান তৈরি হয়,নিজের রাগ কে কন্ট্রোল করে বেশ গুছিয়ে সব টা বলার পাশাপাশি হিয়ার প্রশ্ন গুলোর উওর করতে থাকে কিন্তু বিচারক কারোরি আজ সেগুলো যুক্তিসংযত লাগে না

শেষে ২মিনিটের শেষ বক্তব্যে উজান হিয়া যে যার মতো করে সব টা বলে এখন বিচারকের রায়ের অপেক্ষায়

রায় অনুযায়ী বিজয়ী টিম হিসাবে হিয়াদের ডিপার্টমেন্ট জয়ী হয় আর পারফরম্যান্স অনুযায়ী সেরা বক্তার তকমাটা নিজের নামে করে নিতে সক্ষম হয় হিয়া

ক্যাম্পাসের মাঠে বসে নিজের চুল গুলো খামচে ধরে আছে উজান ৫বছর ভার্সিটি লাইফে তাকে আজ এভাবে হারতে হলো তাও আবার ফাস্ট ইয়ারের কোনো একটা বাচ্চা মেয়ের কাছে না না এটা কি করে সম্ভব,ভার্সিটির ছেলে মেয়ে গুলোও কিরকম ফিসফিস শুরু করছে ইতি মধ্যে,কি রকম করে তাকিয়ে হাসছে উজানের দিকে,রাইসা সন্ধি উজানকে বুঝিয়েই যাচ্ছে যা হয়েছে ভুলে যা,রুপম রাসেল এরা তো উজানের ৩৬০ ডিগ্রী এ্যাঙ্গেলের রাগ দেখে ভয়ে পুরো চুপ হয়ে আছে,এটা উজানের রেপুটেশন এর প্রশ্ন উজান কিছুতেই হিয়াকে এতো সহজে ছেড়ে দেবে না কিছুতেই না

এদিকে হাতে ৩০০০ টাকা পেয়ে হিয়া তো খুশিতে আজ গদগদ হয়ে উঠেছে,কে দেখে হিয়ার মনের আনন্দ,হিয়া ঝিনুক কে নিয়ে মুখে এক বালতি হাসি একেঁ ঝিনুকের হাতে হাত ধরে মাঠের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মেইন গেটের দিকে যাচ্ছিলো

🍁হিয়াঃ তোকে আজ আমি বলে বোঝাতে পারবো না ঝিনুকককক আমি আজ কত্তো খুশি

🍁ঝিনুকঃ হ্যা ঔ খুশি হো, কার সাথে পাঙ্গা নিয়েছিস সেটা যদি জানতি

🍁হিয়াঃ আমি কার সাথে পাঙ্গা নিলাম আবার আজব

🍁ঝিনুকঃ ডিবেটে আজ অবধি শুনেছি উজান ভাইয়াকে কেউ হারাতে পারে নি আর তুই কি না তাকে এভাবে আজ

🍁হিয়াঃ কে উজান!

🍁ঝিনুকঃ সে কি একটু আগে যার বিপক্ষে লড়ে এলি তাকে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলি

🍁হিয়াঃ ওহ ঔ লোক টা,হ্যা তো কি হয়েছে উনি আমার সাথে পেরে না উঠলে আমার দোষ___আচ্ছা ছাড় তো ওসব কথা কিছু বলতে আসুক একবার আমিও উল্টো কেলানি দিয়ে দেবো হুম___আজ আমি এই টাকা গুলো নিয়ে মিষ্টুর জন্য একটা মুরগী কিনবো ভাবছি ছেলে টাকে কতোদিন ধরে শুধু ডিম দিয়ে ভাত দিচ্ছি হে হে আজ আমি অনেক খুশি😍😍(টাকা গুলো হাতে নিয়েই)

______

🍁সন্ধিঃ হে ওয়েট মেয়েটা আসছে

🍁রাইসাঃ কোন মেয়েটা

🍁সন্ধিঃ আরে কি যেনো নাম হিয়া__হিয়া

হিয়া নাম টা শুনেই উজান ওর মুঠ করা হাত গুলো ছেড়ে মাথা টা তুলে ধরে,সন্ধি বুঝতে পারে এবার কিছু তো একটা বড়সড় ঝড় উঠবেই উঠবে

🍁সন্ধিঃ উজান না____উজান দেখ মেয়েটার কিন্তু দোষ নেই কোনো এতে___আমি মানছি তোর রাগ করা টা স্বাভাবিক কিন্তু দেখ মেয়েটার এখানে___উজান শোন উজান__উজান ওয়েট উজান

সন্ধির কথা শেষ না হতেই উজান গিয়ে হিয়ার সামনে দাড়িয়ে হিয়ার হাত থেকে টাকা গুলো কেড়ে নিয়ে ওগুলো মোছড়ে নিচে ফেলে দেয়,সাথে সাথে সেখানে জড় হয়ে যায় মাঠের সবাই,উজানের চোখে মুখে লাল রঙের যে আগুন খেলছিলো সেটা যেনো এই মুহুর্তে নিমিষে ট্রান্সফার হয়ে হিয়ার শরীরে প্রবেশ করে,এটা ওর পরিশ্রম এর টাকা,এটা দিয়ে ও ওর শ্রাবণের স্কুলের বেতন দিতো,শ্রাবনের জন্য ভালো খাবার কিনে নিয়ে যেতো আর উজান কি না সেই টাকা টা কে এভাবে,হিয়ার সব সহ্য হয় কিন্তু শ্রাবণের ব্যাপারে কোনো তেড়িবেড়ি সে মোটেই টলেরেট করতে পারে না__উজানের এই ৩৬০°রাগ হিয়ার মাঝে কনভার্ট হবার সাথে সাথে হিয়া সবার সামনে সপাটে এক চড় বসিয়ে দেয় উজানের গালে মাঠে এতোক্ষণ আনাচকানাচে থেকে যে ফিসফিস করে শব্দ আসছিলো মুহুর্তে সেটা নীরব পরিবেশে রুপ নেয়

হিয়ার এই কান্ডে এখন সব চাইতে বেশি ভয়ে কাপাকাপি করছে ঝিনুক,কারণ ঝিনুকের বোন এই ভার্সিটিতে আগে থেকেই পড়ার সুবাদে সে জানে উজান আসলে এই ভার্সিটির কি,ঝিনুকের মাথা ঘুরে যাচ্ছে এরপর হিয়ার বান্ধবী হবার সুবাদে তার অনার্স লাইফ টাও যে পুরে নরকে কাটবে সেটা সে এই মুহুর্তে হারে হারে টের পাচ্ছে

🍁উজানঃ (হিয়ার বাহু খামচে ধরে) তোমার এতো বড় স্পর্ধা তুমি শাহরিয়ার উজানের গায়ে হাত তোলো__How dare you(গলার সব শক্তি দিয়ে চিৎকার করে)

🍁হিয়াঃ আমার টাকা গুলো তুলে আগে আমার হাতে দিন

🍁উজানঃ হোয়াট,হোয়াট ডিড ইউ সে

🍁হিয়াঃ কেনো আপনি কি বধির শুনতে পারেন না,না শুনতে পেলে বলুন বাজারে এখন অনেক ভালো ইয়ার মেশিন পাওয়া যায়__লাগবে

হিয়ার এরকম Don’t Care ভাব দেখে উজানের আরো রাগে গা গটগট করে কাঁপতে থাকে,ভার্সিটির সকলের সামনে গায়ে হাত তুলে এখন এই মেয়ে কি না উল্টে আবার তর্কও করছে,কি করে সাহস পেলো এই মেয়েটা এতো

🍁উজানঃ (হিয়ার বাহু আরো চেপে জোড়ে ধরে) ফাস্টইয়ার এই এতো তেজ শেষ দিন অবধি থাকবে তো

🍁হিয়াঃ আমার মাঝে সততা থাকলে শুধু ভার্সিটি কেনো জীবনের শেষ দিন অবধি আমার মাঝে এতোই তেজ থাকবে

কথাটা বলেই হিয়া উজানের হাত দুটো নেমে দিয়ে নিচ থেকে ওর টাকা টা তুলে দাঁড়ালে, উজান হিয়ার হাত থেকে টাকা গুলো কেড়ে নিয়ে হিয়ারি চোখের সামনে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলে,এবার হিয়ার চোখ জুড়ে পানি চলে আসে কিন্তু হিয়া সেগুলো অনেক কষ্টে সামলে নেয়,হিয়ার চোখে মুখে রাগের আগুন, এই টাকাই ছিলো শ্রাবণের জন্য ক্ষনিকের হাসি কিনতে পারার এক অবলম্বন আর উজান কি না সে টা,হিয়া কিছু না ভেবে আবার উজানের গালে সপাটে একটা চড় বসিয়ে দেয়___চারপাশের পরিবেশ টা যদিও বা নড়েচড়ে একটু উঠছিলো আবার এরকম মার্কা মারা থাপ্পড় এর শব্দে মুহুর্তে নিশ্চুপ হয়ে যায়,একটা না পর পর দুটো থাপ্পড় সত্যি মেয়ের কলিজা আছে একটা,ঝিনুক কে দেখে এই মুহুর্তে সবার মায়া হচ্ছে বেচারি বোধহায় ভয়ে এবার কেঁদেই না উঠে

উজানের মুখ দিয়ে কিচ্ছু বের হচ্ছে না আর, ভার্সিটির প্রত্যেক মেয়ে যাকে কি না পারলে তুলে তুলে সব এগিয়ে দেয় সেখানে হিয়া ওকে এভাবে

🍁হিয়াঃ বাবা মায়ের টাকা আছে বলেই এভাবে আপনি অন্যের টাকা নষ্ট করবেন (চিৎকার করে)

চিৎকার করে কথাটা বলতেই হিয়ার দু চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে আর উজানের দৃষ্টি গিয়ে পড়ে সেই চিক করে উঠা পানি টার উপর,নীলিমা হিয়াকে কিছু বলতে যাবে কিন্তু কিসের এক টানে উজান হাত দিয়ে নীলিমা কে থামতে বলে

🍁সন্ধিঃ উজান ছেড়ে দে ফাস্ট ইয়ার,তোর সম্পর্কে কিছু জানে না তাই হয়তো

🍁উজানঃ না জানলেও ভার্সিটিতে পা রাখবার আগে ওর জেনে নেওয়া উচিৎ ছিলো উজান শাহরিয়ার আসলে কি জিনিস

🍁রাইসাঃ এই মেয়ে যাও তো এখান থেকে অনেক কাহিনি করছো,এরপর আর কখনো যেনো তোমাকে উজানের আশেপাশে না দেখি,বেয়াদব মেয়ে একটা ভার্সিটিতে এসে মস্তানি করা, সিনিয়র দের কি করে রেসপেক্ট দিতে হয় ওটুকুনিও জানে না

হিয়া কোনো রকম রাইসার কথা গুলো হজম করে ওখান থেকে বেড়িয়ে আসলো__এদিকে হিয়া চলে গেলেই উজান চিৎকার করে সাব্বির বলে ডেকে উঠলে সাব্বির রকেটের মতো ছুটে এসে তোতলাতে থাকে

🍁সাব্বিরঃ ভাই ভাই কিছু লাগবে বলেন আমাকে আমি আমি এনে দিচ্ছি

🍁উজানঃ নাম কি?

🍁সাব্বিরঃ ভাই বাদ দেন না

🍁উজানঃ সাব্বির?

🍁সাব্বিরঃ ভাই নাম হিয়া হিয়া মুনতাসীর আহমেদ ফা ফা ফাস্ট ইয়ার

🍁উজানঃ ডিপার্টমেন্ট?

🍁সাব্বিরঃ কেমিস্ট্রি

🍁উজানঃ কোন ভবন?

🍁সাব্বিরঃ ভাই হোস্টেলে থাকে না

🍁উজানঃ বাসা?

🍁সাব্বিরঃ ভাই জানা হয়নি,আমাকে একটা দিন সময় দেন বাড়ি থেকে শুরু করে ফোন নাম্বার সব এ্যারেন্জ করে দিচ্ছি আপনাকে।

🍁উজানঃ (চোখে সানগ্লাস টা পড়ে একটা ডেভিল মার্কা মুখ করে) Welcome to hell মিস হিয়া মুনতাসীর,তোমার এই চারটে বছর যদি আমি জাহান্নাম না বানিয়েছি তো আমার নামো উজান শাহরিয়ার না।
_______________😏❤️_________________

কিসের জন্য এতো কষ্ট হিয়ার,কিভাবে হারালো হিয়া ওর সবটা??__সব গল্পে তো হিয়া উজানের মেঘলা আকাশের রামধনু হয় এই গল্পে কি উজান পারবে হিয়ার মেঘলা আকাশটাকে রামধনু দিয়ে রঙীন করতে___!!🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here