😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒
Part-27
৩দিন পর
পরীক্ষার রুমে বসে পরীক্ষা দিচ্ছিলো উজান কিন্তু এদিকে উজান কি রকম পরীক্ষা দিচ্ছে সেই টেনশনে পুরো অস্থির হয়ে ক্যাম্পাসের এদিক সেদিকে পায়চারি করতে ব্যাস্ত হিয়া
হিয়াঃ সবাই তো পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে,,কোথায় উনি,,ঠিক মতো পরীক্ষা দিতে পেরেছে তো!!__কি জানি এতো দেড়ি কেনো হচ্ছে ওনার বের হতে,,
হিয়ার চিন্তার অবসান ঘটিয়ে উজান সব ফ্রেন্ডের নিয়ে গল্প করতে করতে হেলেদুলে বের হয়ে সামনে আসতে থাকে,,উজানকে দেখে হিয়া দৌড়ে উজানের কাছে গিয়ে দাঁড় হয়
উজানঃ হিয়া তুমি!!বাড়ি যাওনি এখনো?
হিয়াঃ গিয়েছিলাম কিন্তু আপনার জন্য আবার আসলাম,,পরীক্ষা কেমন হলো??
সাব্বিরঃ ভাবির দেখছি ভাইয়ের পরীক্ষা নিয়ে সেই টেনশন হচ্ছে
তুষারঃ তাও ভালো ভাবি তাও ভাইয়ের পরীক্ষা জন্য কতো ভাবে আর আমার টাকে দেখ নিজের পরীক্ষা কেমন হয়েছে সেটা নিয়ে ব্যস্ত
রুপমঃ ইসস কি দুক্ক থাম,,সন্ধিইইই সন্ধিইইই এদিকে আয় দেখ তুষার কি জানি বলছে তোকে,,সন্ধি
তুষারঃ মারি ফেলতে চাইছিস নাকি তুই আমাকে,,চুপ চুপ,,চুপপপপ
উজানঃ তোরা যা তা বাসায়,,আমি হিয়াকে একটু সময় দেই,,দুদিন এমনিতেও ওর সাথে কথা হয়নি
সাব্বিরঃ আচ্ছা যা,,রাতে দেখা হবে
!
!
হিয়াঃ বলুন না পরীক্ষা কেমন হলো,,ঔ সিফাত ভাইয়ার থেকে ভালো হয়েছে তো,,ওনার রেজাল্ট কিন্তু আপনার থেকে ভালো হওয়া যাবে না,,কিছু বলছেন না কেনো,,কোনোভাবে সিফাত ভাইয়াকে ফাস্ট হতে দেওয়া যাবে না,,উনি কিন্তু ইচ্ছে করে এই কাজ টা করছে,,আপনি টিচার হয়ে জয়েন করবেন এটা মনে হয় উনি চাইছেন না,,আপনাকে কিন্তু ভালো করে ওনাকে এবারো দেখিয়ে দিতে হবে,,কি হলো বলুন না পরীক্ষা কেমন হলো??
উজানঃ কি বলবো,,তুমি সুযোগ দিলে না আমি কিছু বলবো
হিয়াঃ ওহ হ্যা,,আচ্ছা বলুন এবার
উজানঃ পরীক্ষা ভালো হয়েছে একদম ফাস্ট ক্লাস খুশি এবার,,
হিয়াঃ খুববব খুশি,,চলুন ঔ মাঠে লেক টার ওখানে গিয়ে বসি,,আপনি তো খাবেন এখন নাকি?আমি গরম গরম ভাত আর লাউশাক আলু দিয়ে মাখা মাখা করে রেঁধে আনছি,,আর কুমড়োর একটা ফালি কিনেছিলাম সকালে ওটা শুকনো লঙ্কা দিয়ে মেখে লাল লাল ভর্তা করে আনছি,,আসুন
উজানঃ কুমড়ো ভর্তাyummy,,,আমার মিষ্টি পিচ্চি,,এতো কেনো খেয়াল রাখো তুমি আমার ইসস
বলেই উজান হিয়ার গাল দুটো ধরে সবার সামনে টেনে দেয়
হিয়াঃ কি করছেন সবাই দেখছে,,ছাড়ুন,,আহ আমার গাল
____________________
লেক থেকে একটু দূরে ঘাসের উপর বসে আছে উজান আর হিয়া,,হিয়া এক হাতে উজানকে খাইয়ে দিচ্ছে আর উজান মন ভরে হিয়াকে দেখছে
হিয়াঃ কেউ এসে দেখুক আমি আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি খুব ভালো হবে তখন
উজানঃ এটা আমার এরিয়া হিয়া মুনতাসীর তোমার মনে হয় এখানে আমাকে কিছু বলার কারো কলিজা আছে
হিয়াঃ কলিজা না থাক কিন্তু কোনো স্যার বা ম্যাডাম এদিক দিয়ে গেলে কি হবে ব্যাপার টা তখন
উজানঃ এদিক দিয়ে স্যার ম্যাডাম রা কেউ যায় না হিয়া পাখি
হিয়াঃ আমি জানি যায় না আমি শুধু কথার কথাতে বললাম,,আচ্ছা যাই হোক,,আমি যেনো কি একটা আপনাকে বলবো ভাবছিলাম হ্যা,,আচ্ছা কোনোভাবে কি শ্রাবণকে ঔ স্কুল থেকে এনে আবার আগের স্কুলে ভর্তি করানো যায় না
উজানঃ মানে!!
হিয়াঃ আপনি আমার উপর রাগ করবেন না দেখুন আগের স্কুল টা বাড়ির কাছে ছিলো শ্রাবণ একা একা নিজে থেকে যাতায়াত করতে পারতো কিন্তু এখন ওকে আমি কি করে ভার্সিটি থেকে এসে এসে দিয়ে আসবো আবার নিয়ে আসবো,,আর আপনার বাসার ঔ রোড টা কি রকম নিরিবিলি শ্রাবণ ভয় পেয়ে যাবে
উজানঃ হিয়া আমি এতো বোকা না যে কিছু না ভেবে না বুঝে একটা ডিসিশন নেবো,,আমার যেদিন করে এক্সাম থাকবে না আমি গিয়ে ওকে নিয়ে এসে আবার তোমার বাড়িতে দিয়ে যাবো,,শুধু পরীক্ষার দিন গুলো তোমাকে ম্যানেজ করতে হবে আর তুমি না পারলেও আমি একটা ঠিক ব্যবস্থা করে নেবো
হিয়াঃ হ্যা কিন্তু,,,,বলছি কি
উজানঃ আমি আর খাবো না এবার বাকি টা তুমি শেষ করো,,
হিয়াঃ করছি কিন্তু তার আগে আপনি একটা কথা শুনুন আমার,,ঔ স্কুলে মান্থলি নাকি তিন হাজার ফি দিতে হবে আপনি বলুন সেটা কি আমার পক্ষে দেওয়া সম্ভব
উজানঃ হিয়া প্লিজ,,শ্রাবণের এই পড়াশুনার ব্যাপারে আমি আর কোনো কথা তোমার থেকে শুনতে চাই না,,এই ব্যাপারে পুরো দায়িত্ব আমার সো তুমি জাস্ট আমি যা বলবো তাই করবে,,(কাঠ কাঠ কন্ঠে)
হিয়া নিরুপায় হয়ে আর কিছু না বলে বাকি ভাত টুকু শেষ করে হাত ধুয়ে ওর ওরনা টা দিয়ে হাত মুছে নেয়,,এরপর ওরনা টা দিয়ে পরম যত্নে উজানের মুখ টা মুছে দিলে উজান হিয়ার পেটের কাছে মাথা রেখে একটা পা ভাঁজ করে আরেকটা পা সামনে মেলে দিয়ে নিজের বুকের কাছে হিয়ার হাত টা টেনে এনে রেখে শুইয়ে পড়ে❤️
উজানঃ হিয়া(অস্ফুটে)___তুমি তো কখনো আমার কাছে কিছু নেও না,,তোমাকে জামা কিনে দিতে চাইলে তুমি না বলো কিছু বাজার করে দিলে তুমি সেগুলো রান্না করে আমাকে ফেরত পাঠাও,,সেদিন সামান্য একটা শাড়ি কিনে দিতে চাইলাম তখনো তুমি আমার মুখের উপর না বলে দিলে,,কেনো করো এরকম আমার কষ্ট হয় না____তুমি আমার থেকে কিছু নিবে না ঠিক আছে এটলিস্ট শ্রাবণের জন্য আমি যা করি বা করতে চাই সেটাতে অনন্ত না করো না
হিয়াঃ আপনি আমাকে ভুল বুঝে মনে কষ্ট পুষে রাখবেন না আমি কিন্তু কারো কথা শুনে আপনার থেকে কিছু নিতে না করি এমনটা ভাববেন না,,সত্যি বলতে ঔ জিনিস গুলোর কোনো প্রয়োজন নেই আমার,,আমার যা আছে যে টুকু আছে আমি ওতেই খুশি
উজানঃ তোমাকে সত্যি বুঝিয়ে লাভ নেই হিয়া,,,,দেখি মাথার চুল গুলো একটু টানো তো জোরে জোরে আমি একটু ঘুমোই
হিয়াঃ আচ্ছা দিচ্ছি মাথা টিপে,,আপনি ঘুমোন একটু
হিয়া উজানের মাথার চুল গুলো পরমযত্নে দুহাতে মুঠ করে করে টেনে দিতে থাকে,,লেকের পানির কল কল ধ্বনি সাথে দমকা শীতল বাতাস,,আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা,,চারপাশে ঘাসের সবুজ,,দুজন প্রেমিক প্রেমিকার মনে সমুদ্রের উওাল ঢেউ এর মতো ঝড় তুলে দিতে যথেষ্ট
___________
কিছুদিন পর,,পরীক্ষা শেষে আজ হিয়ার কোনো খোঁজ খবর না পেয়ে উজান ব্যস্ত হয়ে ফোন করে হিয়াকে,,কিন্তু ফোন টা তুলে শ্রাবণ কেঁদে উঠে,,তার বুবুর খুব জ্বর বুবু নাকি তার কি রকম করে বমি করছে,,বুবু তার ঠিক হয়ে উঠবে কি না ভয়ে একদম বাচ্চা টা কেঁদে ফেলে
শ্রাবণঃ ভাইয়া বুবুর না খুব জর(জ্বর) আসছে,,কেমন করছে,,বমি করচে বারবার
উজানঃ হোয়াট!!,,বমি করছে মানে,,জ্বর,,কখন থেকে জ্বর,,কি কি করছে তোর বুবু এখন,,হিয়াকে ফোন টা দে দেখি,,বল ভাইয়া কথা বলবে
শ্রাবণঃ বুবু এই বুবু ভাইয়া কথা বলবে বুবু
হিয়াঃ তুই ওনাকে কেনো ফোন দিয়েছিস,,ওনাকে বল আমি ঠিক আছি,,ওনার পরীক্ষা কেমন হলো আজ??
উজানঃ ড্যাম ইউর পরীক্ষা,,পরীক্ষা ধুইয়ে কি আমি পানি খাবো,,শ্রাবণ একদম কাঁদবি না তুই,, তুই হিয়ার পাশে বসে থাক ওর কি লাগবে একটু দেখ আমি আমি এক্ষুনি আসছি,,
!
!
!
উজান সন্ধিকে নিয়ে যতো দূত সম্ভব হিয়ার বাড়িতে এসে উপস্থিত হয়,,বাহিরে তখন দমকা বাতাস বইছিলো একটুপর হয়তো ঝড় নামবে,,এর মধ্যে হিয়া অসুস্থ কি রকম একটা অজানা ভয় গ্রাস করতে থাকে উজানকে
সন্ধিঃ হিয়াআআ,,এই কি অবস্থা করছো নিজের,,দেখি দেখি জ্বর কেমন,,উজাননন,,এই এই দেখ কি অবস্থা,,শরীর তো জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে
সন্ধির অস্থিরতা দেখে উজান আরো ভয় পেয়ে কেঁপে ওঠে,,হাত পা কাঁপতে থাকে ওর,,হিয়াকে যে একটু ধরবে সেই শক্তি টাও যেনো ওর মাঝে এখন আর নেই,,
হিয়াঃ আপনি অস্থির হবেন না আমি ঠিক আছি,,আপনারা কেনো আপনাদের পরীক্ষা রেখে
উজানঃ তোমার,তো,তোমার এতো জ্বর তুমি একবারো আমাকে বলবা না,আমি সকালে যখন পরীক্ষা দিতে যাওয়ার আগে ফোন দিলাম তখনো তো একবার বলতে পারতা আমাকে যে,
সন্ধিঃ তুই এখন একটু থাম তো,,হিয়া কি খাইছো আপু দুপুরে কিছু কিছু খেয়েছো সোনা বোন আমার,,শ্রাবণ বুবু কি খেয়েছে দুপুরে?
শ্রাবণঃ কিছু খাচ্ছে না তো বুবু,,শুধু বলচে পেটে খুব ক্ষুধা লাগচে কিন্তু আমি আমি তো রান্না করতে পারি না,,বিস্কুট দিলাম বুবুকে ওগুলো খেয়ে আবার বমি করে দিলো
সন্ধিঃ তুমি কি খেয়েছ দুপুরে,,কিছু রান্না করা ছিলো?
শ্রাবণঃ না কালকের বাসি ভাত ছিলো বুবু ঔ উঠে আমাকে একটা ডিম ভেজে দিয়েছিলো আমি ওটা খেয়েছি,,কিন্তু বুবু কিছু খাচ্ছে না তো,,শুধু বলছে ক্ষুধা লাগছে পেটে ব্যাথা করছে
শ্রাবণের কথা শুনে উজান কেঁদে দিয়ে হিয়াকে বুকের মাঝে শোয়া অবস্থায় জড়িয়ে ধরে❤️
উজানঃ এই মেয়ে কে নিয়ে আমি কি করি বল তো,,এ-ই মেয়ে আমাকে শান্তি দিবে না,,এ-ই পিচ্চি টা বুঝে না এর কিছু হয়ে গেলে তো আমি পাগল হয়ে শেষ হয়ে যাবো,,একটু যদি আমাকে ভরসা করে,,
উজান এবার উঠে হিয়ার খাটের নিচ,হিয়ার কাবাড সব খুতে খুতে দেখতে থাকে দুটো খাবার পাওয়া যায় কি না,,সব বোয়ম ফাঁকা পেয়ে সব গুলো হাত দিয়ে নিচে ছুঁড়ে ফেলে রাগে,, একটা যাও টিনের কৌটা হাতে আসে ওটাতেও দুটো বিস্কুট ছাড়া আর কিচ্ছু নেই,,চালের ডিব্বায় আছে এক মুঠ চাল পাশে পড়ে আছে গাছ বের হওয়া কিছু আলু আর দুটো পেয়াজ,একটা লাল শাকের আঁটি তাও শাক গুলো এখন খাওয়ার অযোগ্য হয়ে মুছড়ে আছে,,এসব দেখে উজানের রাগ যেনো চটচট করে বহুগুণ বেড়ে ওঠে,,উজান ফ্লোর থেকে উঠে এসে হিয়াকে হ্যাঁচকা টেনে বিছানা থেকে তুলে
সন্ধিঃ কি করছিস কি,,পাগল হয়ে গেলি নাকি,,মেয়েটার লাগলো না
সন্ধির কথা পাওা না দিয়ে উজান হিয়ার এক বাহু চেপে ধরে হিয়াকে রাগ করতে শুরু করে
উজানঃ কি ভাবো কি নিজেকে তুমি,,সব পারো,,আমাকে কি টেনশন ছাড়া তুমি কিচ্ছু কোনোদিন দিতে পারবা না কিচ্ছু না
সন্ধিঃ শোন না উজান,দেখ বাহিরে মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে হবে কি রকম বাতাস দিচ্ছে তুই এখন আর মাথা গরম করিস না,,হিয়াকে আমাদের ইমিডিয়েট ডক্টরের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিৎ
হিয়াঃ না না আপু,,তার কোনো প্রয়োজন নেই আমার বছরে এরকম জ্বর এক দুবার প্রায়ই আসে আমাকে এক পাতা নাপা এনে দিলেই আমি কাল অবধি একদম সেরে উঠবো,,বিশ্বাস করুন
উজানঃ আবার আবার কথা বলছো তুমি,,এই জ্বর এই জ্বর নাপা দিয়ে যাবে,,লিসেন হিয়া আমি এতোদিন অনেক সহ্য করেছি কিন্তু আর না,,আমার আর জাস্ট দুটো পরীক্ষা আছে আমি ওগুলো শেষ করেই তোমাকে নিয়ে বাড়িতে শিফট করবো,,আর আমার কথা মানেই শেষ কথা,,কথা টা যেনো মাথায় থাকে তোমার
হিয়াঃ আরে আপনি একটা ছোট বিষয়কে কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন,,আচ্ছা আগে পরীক্ষা টা শেষ হোক
সন্ধিঃ দেখি তোরা এ-ই সব রাগারাগি ঝগড়াঝাটি পড়েও করতে পারবি উঠ এখন,,ডক্টর পড়ে চলে গেলে কিন্তু
উজানঃ না তুই হিয়াকে তুল আমি অটো বা ট্যাক্সি যা পাই নিয়ে আসছি
সন্ধিঃ যা জলদি
________________
উজান এই ঝড়ের রাতে অটো রিকশা কিচ্ছু খুঁজে না পেয়ে একটা ইমিডিয়েট উবার বুক করে,,দশমিনিটের মধ্যে উবার এসে হিয়ার বাড়ির সামনে হাজির হতেই উজান সন্ধি আর শ্রাবণকে বসিয়ে হিয়াকে কোলে করে নিয়ে এসে গাড়িতে বসিয়ে দেয়,,হিয়ার ভীষণ শীত করছে দেখে উজান গাড়ির এসি টা ওফ করতে বলে বাড়ি থেকে হিয়ার একটা কাথা এনে হিয়াকে মুড়ে দিয়ে দু হাতে জাপ্টে ধরে,,
হিয়াঃ আপনি না শুধু শুধু এতো ভাবছেন আমায় নিয়ে,,আমি ঠিক আছি বিশ্বাস করুন
উজানঃ পরীক্ষা জন্য আমি কিছু বলছি না,,পরীক্ষা টা ভালো করে না দিতে পারলেও নয়,,খারাপ হলে তো আবার ওদিকে__পরীক্ষা টা একবার শেষ হোক তোমাকে কিভাবে শাসনে রাখতে হয় আমি তাই দেখাবো
হিয়াঃ এমনিতে তো আপনার শাষণের চোটে সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়,,এরপর আরো কি টাইট দিবেন আমাকে শুনি,,শুনুন আমি কিন্তু এখনো আপনার বিয়ে করা বউ হইনি ঠিক আছে,,যে এক্ষুনি এটা করা যাবে না ওটা করা যাবে না বলে বলে আমার সব স্বাধীনতা আপনি আমার থেকে ছিনিয়ে নিবেন
উজানঃ গা দিয়ে তো পুরো গরমের ভাব বের হচ্ছে,,মনে হচ্ছে ১০৩/৪জ্বরে ভুগছো কিন্তু তবুও কথার পৃষ্ঠে কথা থামে না না তোমার
হিয়াঃ আমি আবার কি বললাম
উজানঃ বলবাও না,,এখন থেকে আমি যা বলবো তুমি শুধু তাই শুনবা
হিয়াঃ ঠেকা আমার,,
উজানঃ তোমার কি সত্যি জ্বর আসছে,,এতো জ্বর নিয়েও বক বক বক বক করেই যাচ্ছ তখন থেকে
হিয়াঃ আসে নি তো জ্বর শুধু শুধু আমাকে নিয়ে এই ঝড়ের মধ্যে বের হয়েছেন,,আমি বললাম এক পাতা নাপা এনে দিতে তা না উনি তো আবার সব জান্তা সব বুঝে আমাকে তো
হিয়া কিছু বলার আগে উজান হিয়ার মুখ চিপে ধরে,,সন্ধি আর শ্রাবণ ফিঁক করে হেঁসে দেয়,,হিয়া রাগে যেনো পুরো বোম হয়ে উঠে
____________________________
সন্ধিঃ কি রে কি বললো ডক্টর
উজানঃ বললো ঠান্ডা লেগে এরকম হয়েছে,,কিছু ঔষধ দিলো আর দুটো ব্লাড টেস্ট করিয়ে নিতে বললো
সন্ধিঃ তা দাঁড়িয়ে আছিস কেনো,,চল
উজানঃ ওর হাত টা ধর,,হিয়া আমি কি একটা হুইলচেয়ার এর ব্যবস্থা করবো তোমার জন্য
হিয়াঃ কি!!আমি এতো টাও অসুস্থ হয় নি যে আপনাদের হাত ধরে এটুকু হাঁটতে পারবো না,,বেশি বেশি
উজানঃ তুমি বেশি বেশি,,শরীরে তো ব্লাড নেই এক ফোঁটাও যেটুকু আছে ওতোটুকুও এবার বের হয়ে যাবে,,খুব ভালো লাগবে তখন
হিয়াঃ আপনি না(রাগে)
____________
হিয়াকে ব্লাড দিতে নিয়ে এসে শুরু হয় আরেক কান্ড,,উজান যে সত্যি আজ এরকম পাগলামি করবে হিয়া বুঝতে পারে নি,,উজানের কান্ডে উপস্থিত নার্স সহ শ্রাবণ সন্ধি সবাই হেঁসে ফেলে
উজানঃ নার্স একটু আস্তে ব্লাড টা নিয়েন,,ছোট মানুষ ব্যাথা পাবে নাহলে
হিয়াঃ কি!!আ আমি ছোট মানুষ
উজানঃ এ এই এতো বড় সিরিঞ্জ কেনো আর ছোট সিরিঞ্জ দিয়ে নেওয়া যায় না,,পিচ্চি টার লাগবে তো হাতে
নার্সঃ আপনি অস্থির হবেন না,আমি আস্তেই ওনার ব্লাড নেবো লাগবে না ওনার
উজানঃ হুম একটু দেখে নিবেন,,এই পিচ্চি শোনো এদিকে দেখো আমার দিকে ওদিকে তাকাতে নেই,,আরে একটা জাস্ট পিঁপড়া কামড় দেবার মতো ব্যাথা হবে এই এতোটুকু লাগবে দেখো
হিয়াঃ আপনি কি পাগল হয়ে গেলেন,,কি করেছেন এসব,,আন্টি টা কি ভাবছে বলুন তো
উজানঃ আরেএএ তুমি এতো কথা কেনো বলো,, তুমি শুধু শুনো আমার কথা,,হিয়া এদিকে দেখো,,see
হিয়াঃ শ্রাবণের গালে দুটো থাপ্পড় দিতে ইচ্ছে করছে আর কোনো মানুষ পেলো না এটা বলার যে আমার জ্বর,,এই আমি সুস্থ না হওয়া অবধি যে আরো কি কি করবে ইনি কে জানে
উজানঃ আন্টিইই আস্তে কিন্তু,,ওর শরীরে এমনিতে ব্লাড নেই একটু অল্প করে নিবেন যেটুকু না নিলে নয় কিন্তু বেশি না
সন্ধিঃ এই তুই চুপ করে ওনাদের কাজ করতে দে তো,,তোর জন্য রিপোর্টে গোলমাল হয়ে যাবে দেখিস
_____________
কোনোমতে ব্লাড নিয়ে উজান একটু শান্ত হয়ে সামনে যেতেই নার্স টা হেঁসে উঠে
নার্সঃ কে হয় আপনার উনি হাসবেন্ড?
হিয়াঃ উনি আমার আসলে
নার্সঃ বুঝেছি,,আমার হাসবেন্ড ও প্রেম করবার সময় এরকমই ছিলো আমার কোনো কষ্ট সহ্য করতে পারতো না এখনো পারে না,,আপনি ভাগ্য গুনে এরকম একজনের ভালোবাসা হতে পেরেছেন,,মানুষ টাকে যত্নে রাখবেন সবসময়
হিয়াঃ হুম,,
!
!
!
সন্ধিঃ বলছি কি উজান এই ঝড়ের রাতে তুই আবার হিয়াকে নিয়ে ওর বাড়িতে ব্যাক করবি আর তোর বাড়ি তো এখান থেকে অনেক দূরে,,তুই চাইলে একটা কাজ করতে পারিস
উজানঃ কি?
সন্ধিঃ দেখ হিয়া শ্রাবণ তো সারাদিনে আবার তেমন কিছু খায় নি তুই তোর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ওদের কখন কি করবি তার চেয়ে বরং আমার বাড়িতে চল,,আমার বাড়ি আপাতত ফাঁকা মা বাবা দু’জনের আজ দাদু বাড়িতে যাবার কথা আর বড় ভাইয়া তো ভাবিকে নিয়ে কক্সবাজার ট্যুরে গিয়েছে বাড়িতে শুধু আমি আর বড় আপু আছি আর বড় আপুর ছোট বাচ্চা,,তুই চাইলে আমি
উজানঃ আইডিয়া টা তো খারাপ না,,এমনিতে তো আকাশের যা অবস্থা,,হিয়াকে তো ওর বাড়িতে আমি আজকে অনন্ত একা রাখতে পারবো না,,আর আমার বাড়িতেও তো,,আচ্ছা চল আজকে তোর বাড়িতে হামলা দেবো আমরা, কিন্তু তোর বড় আপু কিছু বলবে না তো আমি সাথে গেলে
সন্ধিঃ ধুর না আপু তোদের সবার কথা জানে,,ভাইয়া আর বাবাই যা ভেজাল করে কিন্তু ওরা তো এখন নেই
উজানঃ তাহলে ওয়েট আমি একটা উবার বুক করে নেই
সন্ধিঃ কর
!
!
এদিকে উজান হিয়াকে বাড়িতে নিয়ে এসে সন্ধি পুরো থ হয়ে যায়,,তার বাবা মা দাদু বাড়িতে যায় নি,,এখন কি হবে,,সন্ধি তো আবার ওর বাবাকে বাঘের মতো ভয় পায়,,এখন এই রাতে উজান কে নিয়ে সে এ বাড়িতে এসেছে শুনেই যদি ওর বাবা কিছু বলে দেয়
সন্ধির বাবাঃ এরা কে সন্ধি মা?
সন্ধিঃ বাবা এরা এরা এরা আমার ফ্রেন্ড তোমাকে বলেছিলাম না একবার আমার এক ফ্রেন্ড আছে এবার পরীক্ষা দিয়ে ভার্সিটি জয়েন করবে এস এ টিচার সেই সেই উজান আমার বন্ধু
সন্ধির বাবাঃ এই সেই উজান,, তোমার কথা অনেক শুনেছি ছোট মেয়ের কাছে,,পড়াশোনা করে যদি টিচারই হতে না পারলাম তাহলে আর লাভ কি,,নিজে শিক্ষায় আলোকিত হয়ে অন্য কে সেটা দান করার মাঝেই তো শিক্ষার সার্থকতা,,,তা সন্ধি হঠাৎ এরা এখানে এতো রাতে,,এই বাচ্চা টা কে?
সন্ধিঃ আসলে বাবা হিয়া ভাবি আর উজান না হাসবেন্ড ওয়াইফ আর শ্রাবণ শ্রাবণ হচ্ছে ওদের নিজেদের বাচ্চা,,কি বলো তো ভাবির না আজ শরীর টা ঠিক নেই,,আমি তাই ওদের সাথে এতোক্ষণ ডক্টরের ওখানে ছিলাম এই দেখো সব রিপোর্ট ওখানেই তো এতো দেড়ি হয়ে গেলো,,ভাবলাম ঝড়ের রাত বাড়ি ফিরতে গিয়ে যদি কোনো সমস্যা হয় তাই আমি ওদের নিয়ে বাড়িতে এসে
সন্ধির বাবাঃ আচ্ছা এতে এতো হেজিটেশনের কি আছে,,এনে ভালো করেছিস,,তা বাবা তুমি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করে নিলে আবার বাচ্চা,,আমার মেয়েটার জন্যও ওর মা বারবার বলছে বিয়ের কথা
উজানঃ হ্যা মানে আঙ্কেল ঔ গ্রামে তো বুঝেনই ছেলে মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেয় আমার আর হিয়ার ক্ষেএেও তাই এইস এস দেবার পর পরই
সন্ধির মাঃ দেখো সন্ধির বন্ধু বিয়ে করে বাচ্চার বাবা হয়ে আছে আর তুমি কি করছো কতো করে বলি মেয়ে টার জন্য একটা ভালো ছেলে দেখো ভালো ছেলে দেখো কিন্তু তুমি তো আমার কোনো কথাই কানে তুলো না
সন্ধির বাবাঃ এই যে শুরু হয়ে গেলো তো তোর মার,,আচ্ছা তোদের দেখে মনে হচ্ছে তোরা অনেক টার্য়াড,,রিফা তুমি ওদের খাবারের আয়োজন করো,,আর তুই ওদের কে তোদের ভাইয়ার রুমে থাকতে দে,,তুই গিয়ে তোর বোনের কাছে থাক ওর নাকি বাবু কে নিয়ে একা শুতে কি রকম ভয় লাগছে
সন্ধিঃ আচ্ছা বাবা,,ঠিক-আছে,,আমি তাই করছি
সন্ধির বাবা চলে যেতেই সন্ধির মা খাবার বাড়তে চলে যায়,,সন্ধি একটা বড় দম ফেলে,,উজান এসে সন্ধির মাথায় একটা দুম করে মারে
উজানঃ ঔ হেবলি মানুষের তো মিথ্যে বলার একটা লিমিট থাকে তোর মনে হয় আঙ্কেল এতো গাধা
সন্ধিঃ আমি জানি না এমনিতে ভাইয়া পালিয়ে বিয়ে করে আমাদের উপর এখনো ঝড় যাচ্ছে,,আর তুই তো বাবাকে জানিস বাবা এসব একদম
উজানঃ তুই তোর বাপ রে এতো ভয় পাইলে তুষারের কথা বাড়িতে বলবি কেমনে বোন
সন্ধিঃ পারবো নাই তো বলতে আমিও ভাইয়ার মতো পালিয়ে যাবো,,,,আচ্ছা শোন তুই হিয়া যেভাবে পারিস আজ এক রুমে ম্যানেজ করে নিস আমি তোদের জন্য ভাত বাড়ছি হিয়াকে আবার ঔষধ দিতে হবে রাতে,,এটা ভাইয়ার রুম এখানে আজ থাকবি তোরা,,হিয়া
হিয়াঃ হ্যা আপু
সন্ধিঃ তুমি একটু হাত মুখ ধুবা,,ফ্রেশ হও ভালো লাগবে,,আমি তোমাকে খাইয়ে দিয়ে ঔষধ দিচ্ছি দেখবে কালকে অবধি তুমি একদম ঠিক হয়ে যাবা,,উজান যা ওকে ফ্রেশ হতে হেল্প কর,,শ্রাবণ তুমি আসো আমি তোমাকে হাত মুখ ধুইয়ে দেই
সন্ধি শ্রাবণকে নিয়ে চলে যেতেই উজান একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে হিয়াকে আরো শক্ত করে ধরে কাছে টানে
হিয়াঃ এসব কি করছেন এটা মানুষের বাসা ছাড়ুন আমাকে,,আর এটা কি হলো আমি আপনার সাথে এক রুমে মানে!!
উজানঃ মানে আমি তুমি আর শ্রাবণ আজ এক রুমে দরজা লাগিয়ে এক বিছানায়,,তার উপর এরকম ঝড়ের রাত ঠান্ডা ঠান্ডা ওয়েদার,,সন্ধির আব্বুর গালে দুটো ইয়া বড় চুমু দিতে ইচ্ছে করছে,,লোকটা এতো ভালো কেনো!!
হিয়াঃ আপনাকে তো আমি
________________*_________________