মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️ 🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒 Part-26

0
713

😏 #মেঘের_আড়ালে_রোদের_লুকোচুরি ❤️
🌈💙🎨😏❤️🥳🐦💐🍫🏩💒

Part-26

উজানের জন্মদিন টা খুব সুন্দর করে কেক কেটে উদযাপন করবার পর সবাই এক সাথে ফিরে যে যার বাড়িতে ব্যাক করে,,রাত তখন ১ টার কাছাকাছি,,হিয়া শ্রাবণকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে একটু চোখটা বন্ধ করেছে ঘুমোবে বলে,,ঘুম টা হালকা লেগেও এসেছিলো ওমনি ফোনের কিরিং কিরিং শব্দ বাজতেই হিয়া দুম করে উঠে বসে,,স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই হালকা বিরক্ত হয়ে একটা হাই টানে,,ফোন টা রিসিভ করে ঢুলুঢুলু চোখে,ঘুম জড়ানো ভাঙ্গা কন্ঠে কথা বলতে শুরু করতেই ওপাশের মানুষ টার বুক টা পুরো ভরে উঠে,,

হিয়াঃ আপনার কি ডিকশনারিতে ক্লান্তি বলে সত্যি কোনো শব্দ নেই,,আমার শরীর টা আজকে সত্যি খুব ছেড়ে দিয়েছে আমি ঘুমাবো____হ্যালো___কিছু বলছেন না কেনো___আমার সত্যি খুব ঘুম পাচ্ছে,,ভাইয়া

উজানঃ একটা কানের নিচে থাপ্পড় মারবো(ঝারি দিয়ে,,এখনো ভাইয়া!!ভাইয়া আমি তোমার এখন,,উজান বলো,,শুধু উজান___বলো?

হিয়াঃ আমি পারবো না আপনার নাম ধরে ডাকতে,,কি রকম যেনো লাগে একটা

উজানঃ কি রকম লাগে মানে,,এখন থেকে শুধু উজান,,আপনি না তুমি,,এসব আপনি ভাইয়া কিন্তু আমার সামনে চলবে না

হিয়াঃ আমি পারবো নাআআআ,,ওহ ভাইয়া আমার সত্যি খুব ঘুম পাচ্ছে আমি একটু ঘুমোই নাআআ

উজানঃ না আগে উজান বলো

হিয়াঃ নাআআআআআ

উজানঃ আজব তো,,বিয়ের পরো কি ভাইয়া ডাকবে নাকি,,মানে কি চাইছো কি তুমি আমার বাচ্চা কাচ্চা আমাকে বাবা ডাকার জায়গায় মামা বলে ডাকুক

হিয়াঃ হেই না না,,এসব কি কথা,,তা কেনো হতে যাবে__আমাকে একটু সময় দিন আমি আস্তে আস্তে উজানভাইয়া থেকে একটু একটু করে য়া-ই-ভা বাদ দিতে দিতে ভাইয়া টা ডিলিট করে দেবো খুশি

উজানঃ পাগলি একটা,,খুব কি ঘুম পাচ্ছে

হিয়াঃ খুববব

উজানঃ আর একটু কথা বলি

হিয়াঃ এই মাঝ রাতে আমি কি কথা বলবো আপনার সাথে?

উজানঃ যা খুশি বলো ঘুমের মধ্যে তোমার কন্ঠ টা শুনতে খুব ভালো লাগছে

হিয়াঃ আমার সত্যি খুব ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো,,কালকে কথা বলবো,,কালকে সারারাত কথা বলবো,এখন আমি ঘুমাআআআবোওওওওও

উজানঃ না আমি আজকেই এক্ষুনি কথা বলবো

হিয়া এবার কাঁথা মুড়ে দিয়ে ঘুমের ঘোরে কান্না করে দেয়,,হিয়ার এই আচমকা ছোট বাচ্চার মতো ঘুমন্ত কান্না শুনে উজানের পুরো মন টা নাড়া দিয়ে উঠে

হিয়াঃ এ্যাআআআ,হ্যাএএএ আমি ঘুমাবো,,আমার ঘুম পাচ্ছে সারাদিনে এই রাতে আমি একটু ঘুমোই কিন্তু আপনি তখন থেকে সেই বক বক করছেন বক বক করে করে আমাকে আরো ইরিটেট করছেন আমার ঘুম ভেঙে দিচ্ছেন,,এ্যাআআআ,

উজানঃ পাগলি নাকি তুমি কাঁদতিসো কেন এ-রকম করে,,হিয়া

হিয়াঃ আপনি আমাকে ঘুমোতে দিচ্ছেন না তাই জন্য আমি কান্না করছি খুব খুব কান্না পাচ্ছে আমার,,এ্যা হ্যা,,

উজানঃ আরে এতো কান্না করলে তো ঘুম ভেঙে যাবে তোমার

হিয়াঃ আপনি তো চাইছেনই আমার ঘুম টা ভেঙে যাক,,এ্যা হ্যাআআআআ এ্যাএএএ,,আমি সারাদিন কতো কাজ করি আজকে কতো ঝড় গেলো আমার উপর দিয়ে এখন আমি ঘুমোতে চাইছি আর আপনি কি না আমাকে,,এ্যা হ্যা

উজানঃ আচ্ছা আচ্ছা ঘুমোও কিন্তু তার আগে বলো ভালবাসো আমাকে

হিয়াঃ বাসি তো ভালো,,আর কতো বলবো,,ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি,,

উজানঃ আচ্ছা আচ্ছা ঘুমোও,,ইডিয়ট একটা

উজান মুচকি হেঁসে ফোন থুইয়ে দিতে হিয়া গভীর ঘুমে আবার ঢ’লে পড়ে,,ওদিকে উজানের শরীর টাও বড্ড ক্লান্ত থাকায় উজান ওর গা টা বিছানায় মেলে দিতেই ঘুমের রাজ্যে হারিয়ে যায়,,
_______________

পরের দিন শ্রাবণকে স্কুলে পাঠিয়ে দিয়ে হিয়া বাহিরে দাঁড়িয়ে ভার্সিটির জন্য রিক্সা খুঁজ ছিলো,,সকালে পরিয়িড হয়েছে তলপেটে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে আর এ অবস্থায় আজকে তার পক্ষে কোনোভাবেই হেঁটে হেঁটে ভার্সিটি যাওয়া সম্ভব না,,এমন সময় ঝড়ের গতিতে উজান দুম করে বাইক নিয়ে এসে হিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে হেলমেট খুলে হাতে নেয়

উজানঃ ফোন টা ইউস করো কেনো তুমি,,ফোন টা তো এটলিস্ট মানুষ চেক করে,,সকাল থেকে কতো বার রিং করলাম

হিয়াঃ আমার ফোন টার সাউন্ডে সমস্যা হয়ে আছে কল আসলে শোনা যায় না,,আর তাড়াহুড়ো করে বের হতে গিয়ে চেক করা হয়ে উঠেনি

উজানঃ ওলয়েজ কিছু না কিছু এক্সকিউজ রেডি থাকে তোমার,,বসো এখন তাড়াতাড়ি

হিয়াঃ বসে?

উজানঃ ভার্সিটি যাবা না?

হিয়াঃ হ্যা যাবো,,তো?

উজানঃ তো মানে?বসো,,ভার্সিটি যাই

হিয়াঃ আমাকে আপনার বাইকে কেনো যেতে হবে,,রিক্সা নেই শহরে?

উজানঃ বড্ড বেশি কথা বলো তুমি,,আজ থেকে রোজ আমার সাথে ভার্সিটি যাবা,,আমি তোমাকে ড্রপ করে দিয়ে আসবো,,ইভেন ভার্সিটি শেষে আমি নিজে গিয়ে তোমায় টিউশনে দিয়ে আসবো

হিয়াঃ আর??

উজানঃ আপাতত এটুকুই মিস মুনতাসীর

হিয়া একটা ভেংচি কেটে রাগে গটগট করে উজানের পেছনে গিয়ে বসে যায়

হিয়াঃ এজন্য ঝিনুক ঠিকই বলে প্রেম করলে সব স্বাধীনতা ফুরৎ হয়ে যায়,,আগে আমি একা একা হেঁসে খেলে বের হতাম আর এখন এনার জন্য আমাকে,,দিন রাত ২৪ঘন্টা এখন এনার নজরদারি তে থাকো,,অসহ্য লোক একটা

হিয়া রাগে পেছন থেকে উজানের মাথার সব চুল খামচে ধরে

উজানঃ আহ হিয়া কি করছো কি,,লাগছে আমাররর

হিয়াঃ আপনি খুব খারাপ খুব,,খুব খুব

উজান হিয়াকে থামাতে একটা দুম করে জোরে ব্রেক কসলে হিয়া একবারে উজানের পিঠের উপর পড়ে উল্টে পাল্টে লেপ্টে যায়

উজানঃ আহ শরীর তো না জেনো হাড্ডি

হিয়াঃ কি খারাপ আপনি,,ছিঃ

উজানঃ আর রাস্তা ঘাটে এরকম করে চুল টানবা আমার

হিয়াঃ (উজানের পিঠে ধিম করে একটা বারি দিয়ে) চুল না এরপর থেকে হুটহাট এরকম করে ব্রেক কসলে আপনার দাঁড়ি গোঁফ সব টেনে ছিঁড়ে দেবো হু
_______________________

এভাবেই শুরু হয় এক সুতোয় বাঁধা দু’জন ভালোবাসার মানুষের পথ চলা,,হিয়া কে এখন ক্যাম্পাসের সবাই অন্য চোখে দেখে,,হিয়া নামের কাউকে র্যাগিং দিতেও সবাই আগে দেখে নেয় এটা কি উজান শাহরিয়ার এর হিয়া কি না,,ক্লাস রুম ক্যান্টিন সব খানেই উজান হিয়ার প্রেমের গুঞ্জন চলতে থাকে মানে ওদের যারা চিনে আরকি গুঞ্জন টা ঠিক তাদেরই মধ্যে,,এদিকে সাব্বির রুপম এরা তো হিয়াকে দেখলেই ভাবি বলে বলে হিয়াকে পুরো পাগল করে দেয় ওদিকে ঝিনুক আর শ্রাবণ তো তাদের জিজু বলতে অজ্ঞান,,দিন গুলো পেড়িয়ে উজানের ফাইনাল ইয়ারের পরীক্ষা টাও চলে আসে,,আর হিয়ার কড়া শাসন আর সারাক্ষণ পড়া পড়া পড়া নামক অত্যাচারে উজান যেনো বড়ই ক্লান্ত❤️
!
!
!
ভার্সিটি থেকে শুধু আজ দুটো ক্লাস করে বাড়ি ফিরে এসে হিয়া পুরো কেঁপে যায়,,কে বসে আছে ওর বিছানার উপর,,উজান!!উজান যে বললো ওর একটা কাজে নাকি ও ব্যস্ত কিন্তু এ-তো দেখছি!!

হিয়াঃ আপনি!!___আপনি আমার বাড়িতে এভাবে একা কি করছেন,,শ্রাবণ শ্রাবণ কোথায়??

উজানঃ শ্রাবণ ওয়াশরুমে পটি করে

হিয়াঃ আ আর রিমা, রিমা আপু কোথায়,,আপনাকে এভাবে কে ঢুকতে দিলো রুমে,,সর্বনাশ কোনোভাবে যদি বাড়ি ওয়ালা আন্টি জানতে পারে সাবলেটে আমি ছেলে নিয়ে এসে,,,আপনি আপনি বেরুন আমার বাড়ি থেকে,,কি কি চাইছেন আপনি আমার এই সীট টা সীট বাতিল হয়ে যাক,,ওদিকে মিতু আপুরা তো আমাকে কথা শুনাতে শুধু সুযোগের অপেক্ষায় থাকে,,ওরা ওরা কোথায় এখন,,ওরা এসে দেখলে

হিয়া দৌড়ে পুরো ফ্ল্যাট জুড়ে কেউ আছে নাকি খুঁজে আবার দৌড়ে নিজের রুমে এসে উজানের হাত ধরে টানতে শুরু করে

হিয়াঃ উঠুননন আপনি দেখুন এই সময় বাড়িতে কেউ নেই আপনি প্লিজ টপ করে বেড়িয়ে যান,,আপনাকে আমার ফ্ল্যাটে এভাবে একা দেখলে বড় কেলেঙ্কারি বেধে যাবে,,প্লিজ আপনি একটু বুঝুন

উজানঃ আস্তে,,হাত দুটো খুলে নেবার প্লান করছো নাকি তুমি আমার,,আর তুমি এমন ভান করছো যেনো সাবলেটে যারা থাকে তাদের ভাই বোন মামা খালা চাচা ফুফু কেউ তাদের সাথে মিট করতে বাড়িতে আসে না

হিয়াঃ আসে কিন্তু আপনি তো আর আমার ভাই বোন মামা খালা চাচা ফুফু না আর এভাবে একা বাড়িতে,,সবাই সেটা অন্য নজরে দেখবে আপনি কেনো বুঝতে চাইছেন না

উজানঃ দেখলে দেখবে,,কোথায় আজ প্রথম আমি তোমার বাড়িতে এভাবে একা এসেছি আমাকে একটু ঠিক মতো আপপায়ন করবে,চা কফি ওফার করবে তা না করে তুমি আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিচ্ছ হিয়া,,এটা কিন্তু তোমার থেকে এসপেক্টেবল ছিলো না সত্যি

হিয়াঃ না না আমি তো আপনাকে তাড়িয়ে দিচ্ছি না,,আপনি একটু বুঝুন আপনি যদি এই একা বাড়িতে এভাবে,,আপনি ঝিনুক সন্ধি আপু এদের নিয়ে আসুন তখন তখন সমস্যা হবে না ওতো টা কিন্তু এভাবে একা বাড়িতে

হিয়া আর একটা শব্দ মুখ দিয়ে বের করার আগে উজান হিয়ার হাত ধরে হিয়াকে হ্যাচকা টান মেরে নিজের বুকের উপর এনে ধাম করে বিছানায় ফেলে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে❤️

উজানঃ চুপ,,একটুতে অনেক বেশি ভয় পাও তুমি,,যদি বাড়িওয়ালা এই সামান্য কারণে তোমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় তো তুমি গিয়ে আমার বাড়িতে থাকবে,,আমার বাড়িতে অনেক জায়গা পড়ে আছে

হিয়াঃ ঠেকা আমার,,আমি বিয়ে না করে কি পরিচয়ে আপনার বাড়িতে গিয়ে থাকবো শুনি

উজানঃ দরকার পড়লে বিয়ে করে নেবো,so what!

হিয়াঃ খুব বিয়ে করার শখ তাই না,,সাব্বির তুষার আর সব ভাইয়াদের কি হবে,,ওরা তখন কোথায় গিয়ে থাকবে

উজানঃ আরে গাঁধি,,ওদের কি থাকার জায়গার অভাব নাকি আমি ঔ বিশাল ফ্ল্যাটে একা থাকি বলে ওরা এসে আমার সাথে থাকে,,তুমি আসলে কি আর ওরা ওখানে

হিয়াঃ বলা শেষ আপনার,,এখন আমাকে ছাড়ুন শ্রাবণ ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে এসে এভাবে জড়িয়ে থাকা দেখলে কিন্তু খুব বিশ্রী হয়ে যাবে জিনিস টা

উজানঃ আসুক আগে তারপর ছাড়বো নাহয়,,এখন একটু থাকো না এভাবে

হিয়াঃ না,,আর আপনি কি হ্যা তিন দিন বাদে আপনার পরীক্ষা আপনি পড়তে না বসে এখানে এসে এসব কি করেছেন টা কি

উজানঃ(হিয়ার মুখে আসা চুল গুলো কানের পাশে গুঁজে দিতে দিতে) পরীক্ষা শুরু হলে তো আর সময়ই পাবো না তোমাকে দিতে,,আজ একটু থাকি না সারাদিন এখানে😥

হিয়াঃ মাথা কি পুরোই গেছে আপনার,,কেউ এসে পড়লে কি হবে বুঝতে পারছেন

উজানঃ রিমা আসলে তো সমস্যা নেই আর যতোদূর খোঁজ নিয়ে জানলাম তোমার ঔ মিতুরা আজ আসবে না আসলেও রাত হবে,,আমি শুধু বিকেল অবধি থেকে তারপর যাবো প্লিজজজজ

হিয়াঃ আপনার জন্য না এবার সত্যি সত্যি আমাকে ফাঁসতে হবে,,দেখি ছাড়ুন আমাকে এখন,,দুপুরে খাবেন তো এখানে

উজানঃ হুম হুম

হিয়াঃ ভর্তা আর ভাত কিন্তু!

উজানঃ সেটা অন্য দিন খাবো,,আমি তো আজ বাজার করে আনছি এক ব্যাগ

হিয়াঃ মানে,,বাজার করে নিয়ে এসেছেন বলতে!!

উজানঃ রান্নাঘরে পোলার চাল আর মুরগী আছে গিয়ে রান্না করে আমাকে খেতে দেও,, কুইক,,পেট টা ক্ষুধায় সেই লেভেলের ডাকছে,,শুনো

উজান হিয়াকে পেটের কাছে এনে হিয়ার মাথা সহ কান টা ওর পেটের কাছে লেপ্টে ধরে,,উজানের সত্যি খুব খিদে পেয়েছে,, বেচারার ক্ষুধার চোটে পেট সত্যি গুড়গুড় ডাকছে

উজানঃ শুনতে পারলা কিছু??

হিয়াঃ হে হে কি গুরগুর করে ডাকছে,,দাঁড়ান না আর একটু শুনি মনে হচ্ছে পানি গড় গড় করে পড়ছে,,

উজানের পেটের এই গুড়গুড় ডাক হিয়ার ভীষণ ভালো লাগছে,,কেমন কল কল করছে!হিয়া মনের আনন্দে উজানের পেটের এই কল কল ধ্বনি শুনছে!!কিছুক্ষণ বাদে উজানের পেটের নিচের লোমগুলো দু বোতামের ফাঁক দিয়ে হিয়ার গালে এসে খোঁচা দিতে শুরু করলে হিয়ার হুঁশ ফিরে,,হিয়া খেয়াল করে সে উজানের পেটের নিচ বারবার কি রকম মুখ গুঁজে দিয়ে আছে আর লোম গুলো কি ভাবে ওর মুখে মিশে গিয়ে,,

হিয়াঃ ইসস কি বিশ্রি একটা ব্যাপার,,আমি কি রকম বেআক্কেলের মতো ওনার পেটে এভাবে ধুর

জিহ্বে কামড় দিয়ে হিয়া টপ করে উজানের উপর থেকে উঠে দৌড়ে রান্না ঘরে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তেই থ হ’য়ে যায়,,উজান এক ব্যাগ না দু ব্যাগ ভর্তি করে বাজার নিয়ে এসেছে,,চাল ডাল তেল আটা সবজি মশলা থেকে শুরু করে নাস্তা বিস্কুট সব,,এসব দেখে হিয়ার মাথায় এখন পুরো হাত!!

!
!

হিয়া ব্যাগ থেকে এক এক করে সব বের করতে গিয়ে হাঁপশে উঠে,,শ্রাবণ ভেজা হাত ভেজা মুখে ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে রান্নাঘরে হিয়ার অস্তিত্ব উপলব্ধি করে সোজা দৌড়ে এসে হিয়াকে পেছন দিয়ে জড়িয়ে ধরে❤️

শ্রাবণঃ বুবুউউ,,,,ভাইয়া আজ আসছে বাড়িতে দেখা করেছিস ওনার সাথে,,বাইয়া কিন্তু আজ আমাদের সাথে কাবে(খাবে),,মুরগী আনছি আমরা কিনে,,বাজারে গেছি কি মুরগী ভর্তি শুধু কক কক কক করে ডাকচিলো,,কি বড় মাচ(মাছ) দেখছি আজকে ওখানে,,মাছ টা একদম আমার সমান ছিলো এই দেখ আমার এতোদূর আসে,, হে হে

হিয়া একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে শ্রাবণকে নিয়ে রুমে আসে,,রুমে এসেই শ্রাবণ উজানের কোলে লাফিয়ে উঠে

হিয়াঃ(হতাশ কন্ঠে) আপনি এসব কেনার আগে অনন্ত আমাকে একবার জিজ্ঞেস করতে পারতেন,,আমি এখন এতো গুলো খাবার কোথায় রাখবো,,সব তো পঁচে নষ্ট হয়ে যাবে,,এই মাছ গুলো বিকেলের মধ্যে ফ্রিজে বা রাখলে আর খাওয়া যাবে না,,আপনি জানেন আমি খাবার নষ্ট করা একদম পছন্দ করি না,,এই সবজি গুলো এতো গুলো

উজানঃ তোমাদের সাবলেটে এক্সট্রা কোনো ফ্রিজ দেয় নি?

হিয়াঃ না,মানে দিয়েছিল কিন্তু ওটা কিছু দিন আগে নষ্ট হয়ে আর কাজ করে না,,মিতু আপুদের দেখি বাড়িওয়ালা আন্টির ওখানে গিয়ে রেখে আসে কিন্তু সব তো রাখতে পারে না ঔ এক বাটি করে,,কিন্তু আমার তো এক বাটি দিয়ে কিচ্ছু হবে না

উজানঃ তাহলে এখন!!

হিয়াঃ আমি মাছ গুলো কেটে ভেজে রাখছি আর মাংস টা হলুদ লবন দিয়ে ভাপে রাখছি আপনি যাওয়ার সময় নিয়ে গিয়ে আপনার ফ্রিজে রাখবেন

উজানঃ আমি তোমার জন্য নিয়ে এসে এখন নিজে নিয়ে যাবো

হিয়াঃ আমি জানি না কি করবেন আপনি,,আমার পক্ষে ওগুলো রাখা সম্ভব না,,ফ্রিজ টা ঠিক থাকলে তাও কথা ছিলো,,এজন্য আমি আপনাকে সবসময় বলে এসেছি কিছু করতে গেলে আমার পারমিশন নিয়ে তারপর কাজ করবেন,,আমি এমনি এমনি রাগ করি না আপনার সাথে,,আজকে এসব কেনার আগে একটা বার আমাকে জিজ্ঞেস করলে হয়তো আমি

হিয়া হতাশ হয়ে বিছানায় বসে এক গ্লাস পানি ঢেলে খেতে থাকে,,উজান মিন মিন করতে করতে হিয়ার কাছে আসতেই হিয়া ভূ কুঁচকে উজানের দিকে তাকিয়ে উঠে

হিয়াঃ আবার কি গন্ডগোল পাকিয়েছেন শুনি,,

উজানঃ কি কি গন্ডগোল পাকাবো,,কিছু করি নি আমি বিলিভ মি

হিয়াঃ তাই!!কি বলতে চাইছেন সোজাসুজি বলুন

উজানঃ হিয়া পিচ্চি আমার সত্যি কিছু বলার ছিলো তোমাকে,,আমি আসলে আমি মানে আমি তোমাকে না জানিয়ে আরো একটা কাজ মানে

হিয়াঃ আমাকে না জানিয়ে আপনি কি??

উজানঃ বসো তুমি একটু শান্ত হয়ে,,বসো আমি বলছি

হিয়াঃ আপনি বলুন আমি শুনছি

উজানঃ দেখো শ্রাবণতো আমাদের কতো গুড স্টুডেন্ট যা পড়ানো হয় সব পাড়ে,,আমাদের উচিৎ নয় কি বলো ওর একটা বেটার ফিউচারের দায়িত্ব নেওয়া,,আমি আমি জানি তুমি যথেষ্ট করো শ্রাবণের জন্য কিন্তু তুমি শ্রাবণকে যেই স্কুল টাতে ভর্তি করে দিয়েছো এবার,,সেটায় আমি খোঁজ নিয়ে দেখেছি ওখানে পড়াশোনার মান খুব একটা ভালো না

হিয়াঃ আপনি করেছেন টা কি আমাকে সেটা বলুন!!

উজানঃ আমি শ্রাবণকে,,আমি মানে পিচ্চি,,আমি শ্রাবণকে আজ নিয়ে গিয়ে আমার বাড়ির রোডে যে-ই কিন্ডারগার্টেন টা আছে ওখানে ভর্তি করে দিয়ে এসেছি,,আমি জানি তুমি এটা শুনলে খুব রাগ করবে কিন্তু তুমি রাগ করলেও আমার কিচ্ছু করার নেই,,শ্রাবণ যেমন তোমার ভাই তেমনি শ্রাবণকে আমি নিজের ছেলের মতো দেখি,,সো শ্রাবণের ব্যাপারে এটুকু ডিসিশন নেবার রাইট আমার আছে,,আর তুমি রাগ করলেও এখন আর কিচ্ছু করার নেই আমি ভর্তি ফর্ম স্কুল ড্রেস বই খাতা সব কিনে একবারে এসেছি,,তাই এসব উইথড্র করার মতো কোনো ওয়ে এখন তোমার হাতে নেই,,হু

এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো শেষ করে উজান একটা ঢক গিলে হিয়ার পাশে বসে যায়,,হিয়ার হাত দুটো ধরে

উজানঃ Sorry

হিয়াঃ (কিছুক্ষন চুপ থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে) কতো খরচ পড়েছে মোট?

উজানঃ তুমি শুনে কি করবে?

হিয়াঃ বলুন!

উজানঃ এই কতো দশের কাছাকাছি

হিয়াঃ সত্যি কথা টা বলুন আমি জানি আপনি যেই কিন্ডারগার্টেন এর কথা বলছেন সেটাতে দশ দিয়েও কিচ্ছু হবে না

উজানঃ সত্যি বলতে সব মিলায় ২৫এর কাছাকাছি গেছে

হিয়াঃ ২৫হাজার টাকা টা নিশ্চয়ই আপনার বাড়ি থেকে দেওয়া

উজানঃ হ্যা মানে আমাকে দেওয়া আমি ওসব সেভিংস এ রেখে,,,,ওসব বাদ দেও শ্রাবণ একটা ভালো স্কুলে পড়লে তুমি খুশি হবে না বলো

হিয়াঃ যেদিন আপনি নিজে রোজগার করবেন সেদিন আমাকে ২৫টাকা দিয়ে একটা টিপের পাতা কিনে এনে আমাকে কপালে নিজ হাতে একটা টিপ পড়িয়ে দিয়েন আমি মন থেকে সেদিন খুব খুব খুব খুশি হবো কিন্তু আজ আপনি আমাকে না বলে যা সব করলেন সেটা সত্যি আমার মনের কোথাও একটুও ভালো লাগার মতো হয় নি,,তিল পরিমাণো না!!

ব’লেই হিয়া রান্নাঘরে গিয়ে রান্নার আয়োজন করতে থাকে,,এদিকে উজান একটা দীর্ঘ শ্বাস টেনে একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে শ্রাবণের সাথে হাই ফাইভ করে

উজানঃ যাগ,,একটু পর ম্যাডামের রাগ এমনিতে কমে যাবে,,রাগ করলেও বা কি আমার কাজ টা করে নিলাম
________________________

হিয়া কতো জলদি এক হাতে সব রান্না রেডি করে ফেললো তা দেখে উজান পুরো অবাক,,মানে এই মেয়ে সত্যি জাদুটাদু জানে নাকি

হিয়াঃ আপনাদের খেতে দিয়ে যাবো এখন,,গোসল না করা অবধি আমি খেতে পারবো না এ শরীরে

উজানঃ তুমি আসো তারপর একবারে খাই

হিয়াঃ কিন্তু আপনি যে বললেন আপনার নাকি খিদে পেয়েছে তাই জন্য তো আমি তাড়াহুড়ো করে

উজানঃ এখন আর পাচ্ছে না,,আজ সবাই মিলে একসাথে খাবো

হিয়াঃ আচ্ছা তাহলে আর একটু বসুন আমি এক্ষুনি আসছি

!
!

হিয়াঃ আর একটু ভাত দেবো আপনাকে

উজানঃ না আগে এগুলো শেষ করবো তারপর এগুলো তারপর শেষে ফিস ভাজা

হিয়াঃ এতো গুলো বাজার করলেন কুমড়োও কিনতে পারতেন আমি তাহলে কুমড়ো টা রান্না করে

উজানঃ ভালো কথা মনে করিয়ে দিয়েছো তো,,আচ্ছা আমি এতো কিছু কিনলাম আমার ফেবারিট জিনিস টা কি করে ভুলে গেলাম হাউ,,

হিয়াঃ কি লাগবে নিজে থেকে নিয়ে নিন,,দেখি শ্রাবণ খাইয়ে দেবো না নিজে খাবা

শ্রাবণঃ আমিও ভাইয়ার মতো হাত দিয়ে মেখে মেখে খাবো

হিয়াঃ আচ্ছা কিন্তু জামায় মাখাবা না,,আর জামা কিনে দেবো না তাহলে

উজানঃ তুমি খাচ্ছ না কেনো?

হিয়াঃ খাচ্ছি,,

উজানঃ কি এতটুকু করে ভাত খাও,,একটু বেশি করে খেতে পারো না

হিয়াঃ আমি এতটুকু করেই খাই

উজানঃ এজন্য তো শরীরে হাড্ডি ছাড়া কিছুই নেই,,একটু মোটা হবা জড়িয়ে ধরতে ফিল আসবে তখন,,এখন তো শুধু জড়িয়ে ধরলে তোমার হাড় হাড্ডির ঘুতো পাই শুধু (হিয়ার কানে ফিসফিস করে)

হিয়াঃ কিসব কি বলছেন আপনি,,আমি আপনাকে ঘুতো দেই মানে

উজানঃ তুমি দেও না তোমার এই হাড্ডি গুলো দেয়,,জড়িয়ে ধরতে একটুকু ফিল আসে না মনে হয় একটা খাম্বা ধরে দাঁড়িয়ে আছি,,একটু মোটা হবা গায়ে মাংস হবে তখনই না জড়িয়ে ধরতে মজা,,

হিয়াঃ ছিঃ কি অসভ্য আপনি,,আমাকে জড়িয়ে ধরলে তাহলে এ-সব উল্টো পাল্টা জিনিসও আপনার মাথাতে আসে,,আমি আর কখনো আপনাকে জড়িয়ে ধরবো না,,কখনো না

উজানঃ আরে এতো রাগ করছো কেনো তুমি আমি তো জাস্ট

হিয়াঃ এ-র পর থেকে আমি এতো এতো খাবো,, খেয়ে মোটা হয়ে গুদুম গাদুম হবো,,তখন আমাকে জড়িয়ে ধরলে মনে হবে মখমলের বালিশ জড়িয়ে আছেন কিন্তু আমি আপনাকে আমার কাছেই ঘেঁষতে দেবো না তখন দেখবো কি রকম লাগে হু

বলেই হিয়া প্লেট উচলে ভাত তুলে নিয়ে বিছানায় গিয়ে একা একা গপ গপ করে সব ভাত খেতে বসে

উজানঃ আমার এ-ই পিচ্চি টা সত্যি একটা হেবলি,,কি সুন্দর বোকা বানালেই বোকা হয়ে যায়,,প্রত্যেকদিন বেশি বেশি করে খাবে এবার থেকে,, বুঝেও না শরীরে ব্লাড কম সেটাকে গ্রো করতে হবে নিজে বুঝলে কি আমাকে তোমাকে বোকা বানাতে হয় ইডিয়ট

হিয়াঃ কেমন করে হাসছে দেখো,,অসভ্য একটা মুখে কিচ্ছু আটকায় না,,সবসময় আমাকে লজ্জা পাইয়ে দেয়,,বাজে লোক

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here